বাতিলের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা ঈমানের দাবী
একজন মু’মিনের জন্য এটাও অপরিহার্য যে, সে যখন ‘দ্বীনে হক’ প্রতিষ্ঠার একজন সেনিক, তখন তাকে যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য শত্রুকে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। তার শত্রু হলো বাতিলপন্থী। এ বাতিলপন্থীর সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাদের সাথে কোন প্রকারের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখা চলবে না।
(আরবী পিডিএফ ৪৪ পৃষ্ঠায়****************************)
-(হে মুহাম্মদ!) তুমি এমনটি কখনো পাবে না যে, যারা আল্লহ এবং আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, তারা বন্ধুত্ব রাখে এমন লোকের সাথে যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে। এ বিরোধিতাকারী পিতা হোক, পুত্র হোক, ভাই হোক অথবা আপন স্বজন হোক না কেন। তারা (ঈমানদারগণ) এমন, যাদের অন্তরের মধ্যে আল্লাহ ঈমান দৃঢ়ভাবে অংকিত করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তাঁর পক্ষ থেকে একটি আত্মা বা প্রাণশক্তি দান কের তাদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার করেছেন। তারাই হলো আল্লাহর দল। জেনে রাখ আল্লাহর দল অবশ্যই জয়যুক্ত হবে। (মুজাদিলাঃ ২২)
এ আয়াতে দুটি বিষয় বলা হয়েছে। একটি নীতিগত কথা। অপরটি সত্য ঘটনার উল্লেখ।
নীতিগত কথাটি অতি সুস্পষ্ট। তা হচ্ছে এই যে, দ্বীনে হকের উপর ঈমান এবং দ্বীনে হকের বিরোধী বাতিলের প্রতি ভালোবাসা দুটি পরস্পর বিরোধী জিনিস। এ দুটির একত্রীকরণ কিছুতেই সম্ভব নয়। কোন ব্যক্তির পক্ষে যেমন এটা কিছুতেই সম্ভব নয় যে, সে আপন সত্তাকেও ভালোবাসবে এবং তার শত্রুকেও ভালোবাসবে, তেমনি এটাও সম্ভব নয় যে, ঈশান এবং ইসলামের দুশমনের প্রতি ভালোবাসা একই হৃদয়ে পোষণ করবে। যদি এমন দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি ঈমানের দাবী করার সাথে সাথে এমন সব লোকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখে যারা ইসলামের দুশমন, তাহলে বুঝতে হবে তার ঈমানের দাবী মিথ্যা।
দ্বিতীয়তঃ এ আয়াতে উপরোক্ত মূলনীতি সুস্পষ্ট করে দেয়ার পর ঈমানের দাবীদারদের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ কিছু সত্য ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ এমন সুস্পষ্ট ঘটনা যা বদর এবং উহুদ যুদ্ধেল সময় সমগ্র আরববাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
সে সব সাহাবায়ে কিরাম মক্কা থেকে মদীনার শুধুমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর দ্বীনে হকের জন্য হিজরত করেছিলেন, তাঁরা আপন গোত্র ও পরিবারস্থ লোকদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র ধারণ করেছিলেন। কারণ তারা ছিল ইসলামের দুশমন।
হযরত আবু উবইদাহ (রা) তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ বিন জাররাহকে নিজ হাতে কতল করেন। হযরত মুসয়াব বিন উমইর (রা) তাঁর আপন ভাই ওবায়েদ বিন উমাইরকে কতল করেন। যহরত ওমর (রা তাঁর আপন ভাই ওবায়েদ বিন উমাইরকে কতল করেন। যহরত ওমর (রা) তাঁর আপন মামা আস-বিন –হিশাম বিন মুগিরাকে, হযরত আলী (রা) তাঁর নিকট আত্মীয় ওতবাবে, হযরত হামযাহ (রা) তাঁর আত্মীয় শায়বাকে এবং হযরত ওবাইদা বিন-হারেস তাঁর আত্মীয় অলিদ-বিন ওতবাকে কতল করেন। হযরত আবু বকর (রা) তাঁর আপন পুত্র আবদুর রহমানকে কতল করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
হযরত ওমর (রা) বদর যুদ্ধে বন্দীদের সম্পর্কে নবীর (স) কাছে আরজ পেশ করে বলেন, “এদেরকে কতল করা হোক এবং প্রত্যেকে তার আত্মীয়কে কতল করবে”।
বদর যুদ্ধের সময় হযরত সাময়াব বিন উমাইরের (রা) সহোদর ভাই আব্দুল আযীয বিন ওমাইরাকে জনৈক আনসার ধরে বেঁধে ফেলেছিলেন। হযরত মাসয়াব তা দেখে চিৎকার করে বললেন, “ওকে বেশ শক্ত করে বাঁধ। তার মা বড় মালদার। সে তোমাদের প্রচুর অর্থ দেবে ছেলের মুক্তির জন্য”।
আব্দুল আযীয বললো, “তুমি ভাই হয়ে অমন কথা বললে?”
হযরত মাসয়াব বললেন, “এখন আর তুমি আমার ভাই নও। সে আনসার তোমাকে বাঁধছে, সেই আমার ভাই।
এ যুদ্ধে নবী পাকের (স) জামাতা আবুল আস বন্দী অবস্থায় আনীত হলে, নবীর জামাতা বলে তার প্রতি কৃপা প্রদর্শন করা হয়নি। অন্যান্য বন্দীর মতোই তার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে সমগ্র বিশ্ব ভালোভাবে প্রত্যক্ষ করেছে সত্যিকার মু’মিন কেমন হয়ে থাকে এবং ‘দ্বীনে হকের’ সাথে তার সম্পর্ক কিরূপ।
কোন কোন দল বা জাতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিষিদ্ধ তা ভালো করে জেনে রাখা দরকার। নতুবা এ নিয়ে উভয় পক্ষে একটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। এ সম্পর্কে কুরআন মজিদে সুস্পষ্টরূপে ঘোষণা করা হয়েছে তা হলোঃ
(আরবী পিডিএফ ৪৬ পৃষ্ঠায়****************************)
-যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং তোমাদেরকে তোমাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করে দেয় অথবা বিতাড়নকারীকে সাহায্য করে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। এতসত্ত্বেও যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তারা জালেম।
পক্ষান্তরে যাদের আচরণ উপরোক্ত আচরণের বিপরীত, তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন ও ইনসাফ করতে নিষেধ করা হয়নি।
(আরবী পিডিএফ ৪৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে না এবং যারা তোমাদেরকে তোমাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করে দেয় না, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই ইনসাফকারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন”। (মুমতাহিনাঃ ৮)