আল্লাহর পথে ব্যয়ের তাৎপর্য
এখন প্রশ্ন হলো এই যে, আল্লাহর পথে ব্যয়ের অর্থ ও তাৎপর্য কি এবং তার প্রয়োজনীয়তা-ই কি? আল্লাহর ত ধন-সম্পদের কোনই প্রয়োজন নেই। কারণ তিনিই ত সারা জাহানের স্রষ্টা ও মালিক। কেনই বা তিনি কুরআনের পাতায় তাঁরই ধন ব্যয় করার তাকীদ দিয়েছেন?
শুধু তাই নয়, তিনি তাঁর বান্দাহর কাছে ধন-সম্পদ ঋনস্বরূপ চেয়েছেন। যেমন- কুরআনে বলা হয়েছে-
(আরবী পিডিএফ ৩৭ পৃষ্ঠায়****************************)
এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ঋণ দান করবে উত্তম ঋণ? অতঃপর তিনি তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে ফেরৎ দিবেন শুধু তাই নয়, বরঞ্চ ঋণদাতার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিদানও রয়েছে। (হাদীদ-১৯)
(আরবী পিডিএফ ৩৭ পৃষ্ঠায়****************************)
এবং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং আল্লাহকে ঋণ দান কর, উত্তম ঋণ। (মুযাম্মিলঃ ২০)
এ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বিরাট মহানুভবতা যে মানুষ তাঁরই দেয়া সম্পদ তাঁরই পথে ব্যয় করে, তাহলে তিনি সেটাকে তাঁর জন্য ঋণ হিসেবে গণ্য করেন।ই বলে শর্ত এই যে তা হতে হবে উৎকৃষ্ট ঋণ (কর্জে হাসানা)। অর্থাৎ তা দিতে হবে খাঁটি নিয়তে এবং বিনা স্বার্থে।এ দেয়ার মধ্যে কোন প্রকার লোক দেখানোর মনোভাব, খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা লাভের কোন অভিলাষ যেন না থাকে। এ ঋণ দানে কারো প্রতি কৃপাপ্রদর্শন করা হয়েছে এমন মনে করাও চলবে না। নিছক আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তা যেন দেয়া হয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো প্রতিদান ও সন্তুষ্টি লাভ যেন অভিপ্রেত না হয়। এ ঋণ সম্পর্কে আল্লাহর দুটি প্রতিশ্রুতি। এক. এ ঋণকে কয়েকগুণ বর্ধিত করে প্রত্যাবর্তন করা হবে। দুই. উপরন্তু তিনি তাঁর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম প্রতিদান দেবেন।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে একটি হাদীসে বর্ণিত আছে। বলা হয়েছে যে, যখন এ আয়াত নাযিল হয় এবং সাহাবীগণ তাঁর পবিত্র মুখ থেথে তা শুনতে পান, তখন হযরত আবু দাহ দাহ আনসারী (রা) আরজ করেন, “হে আল্লাহর রসূল সত্যিই কি আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিকট থেকে ঋণ চাইছেন?”
নবী বললেন, “হ্যাঁ, আবুদ্দাহদাহ’ আবুদ্দাহদাহ বলেন, “আপনার হাত মুবারক আমাকে একটু দেখান”। নবী (স) তাঁর হাত তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
সাহাবী আবুদ্দাহদাহ নবীর হাত তাঁর হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন, “আমি আমার বাগান আমার প্রভুকে ঋণ দিলাম”।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেন যে, সেই বাগানে ছয়শত উৎকৃষ্ট খেজুর গাছ ছিল। সাহাবী আনসারীর বাড়ি ছিল সেই বাগানের ম্যেই এবং তিনি সেখানেই তাঁর পরিবারসহ বাস করতেন।
নবীকে উক্ত কথা বলার পর তিনি সোজা তাঁর বাড়ি গিয়ে পৌঁছলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে সম্বোধন করে বললেন, “দাহদাহর মা, বেরিয়ে এসো, বেরিয়ে এসো। এ বাগান আমি আমার প্রভুকে ঋণ দিয়েছি”।
তার স্ত্রী বললেন, “দাহদাহর বাবা, তুমি বেশ মোটা মুনাফার সওদা করেছো”।
এ কথা বলে তিনি তাঁর ছেলে এবং ঘরের আসবাবপত্রসহ বেরিয়ে পড়লেন। -(ইবনে আবি হাতেম)।
সত্যিকার মু’মিন সাহাবায়ে কিরামের (রা) চরিত্র, মন-মানসিকতা এবং আল্লাহর পথে ত্যাগ ও কুরবানী কতখানি ছিল তা এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারা যায়। এর তেকে এ কথাও বুঝতে পারা যায় সে ঋণ (কর্জে হাসানা) কি ছিল যা কয়েকগুণ বর্ধিত করে প্রত্যাবর্তন করার এবং অতিরিক্ত প্রতিদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ দিয়েছেন।
এমনি ঋণ দানের জন্য কুরআনে আরও কয়েক স্থানে আহবান জানানো হয়েছে। ঋণ দান অর্থ আল্লাহর পথে অকাতরে এবং মুক্ত হস্তে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা। ‘উত্তম ঋণ’ অর্থ পার্থিব কোন স্বার্থের আশায় নয়।
নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি অজনের নিয়তে। এখন ঋণ দানের প্রকৃত মর্মও আমাদের জানা দরকার।
এ বিষয়টি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে নবীজীবনকে ভালো করে জানতে বুঝতে হবে। আমরা যদি নবী মুহাম্মদ (স)-এর তেইশ বছরের জীবনকে সামনে রাখি, তাহলে আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাব যে, তাঁর তেইশ বছরের জীবন বাতিলের বিরুদ্ধে একটা একটানা সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রাসে অবশ্যি সাহাবায়ে কিরামও শামিল ছিলেন।
এ সংগ্রাম ছিল কিসের জন্য? এ ছিল আল্লহার কালেমাকে বুলন্দ করার সংগ্রাম। তাঁর বাণীকে সমুন্নত করার সংগ্রাম।