রসূল আগমনের উদ্দেশ্য
আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার অর্থ হলো তাঁর দ্বীনে হককে মানুষের জন্য একমাত্র সত্য, সনাতন, সুন্দর ও মঙ্গলকর জীবন ব্যবস্থা হিসেবে বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম। বলা বাহুল্য নবী মুহাম্মদের (স) আগমন একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই হয়েছিল।
(আরবী পিডিএফ ৪০ পৃষ্ঠায়****************************)
তিনি ত সেই সত্তা, যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়েত এবং ‘দ্বীনে হক’ সহ পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য হলো এই যে, রসূল সে দ্বীনে হককে, অন্যান্য সমুদয় ‘দ্বীন’ বা জীবন বিধানের উপরে বিজয়ী করবেন মুশরিকগণের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও।
(সাফঃ ৯)
রসূল তাঁর জীবনের মিশনকে অর্থাৎ ‘দ্বীনে হক’ বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার কাজকে সাফল্যমণ্ডিত করতে গেলে, বাতিলের সঙ্গে সংগ্রাম-সংঘর্ষ যে অনিবার্য তার উপরের আয়াতে সুস্পষ্ট ইঙ্গি করা হয়েছে।
বাতিলপন্থী এটা কখনো মানতে রাজী হবে না যে, মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লহার ‘দ্বীন’ বা বিধান কায়েম হোক। তারা বড়ো জোর এমন এক সমঝোতায় ত নেমে আসতে পারে যে, আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব আনুগত্যর সাথে অন্যান্যদের দাসত্ব ও আনুগত্য চলুক। তারা চাইবে যে কোন দর্শন, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গীর উপরে তাদের ধর্মবিশ্বাস, চরিত্র ও তাহযিব তামাদ্দুনের ভিত্তি গড়তে। কিন্তু রসূলের উপরে নির্দেশ হচ্ছে তাদের সাথে সাথে কোন প্রকার সমঝোতা না করেই, যে হেদায়েত ও ‘দ্বীনে হক’ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে প্রেরিত হয়েছে, তা তিনি পরিপূর্ণ রূপে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করবেন। বাতিলপন্থী যতোই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক, রসূলকেএ কাজ করতেই হবে। এমনকি এর জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হলে তাও করতে হবে। এরশাদ হচ্ছেঃ
(আরবী পিডিএফ ৪১ পৃষ্ঠায়****************************)
-এবং তাদের বিরুদ্দে যুদ্ধ কর যতোক্ষণ না ফেৎনার উচ্ছেদ হয় এবং ‘দ্বীন’ (জীবন বিধান) পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর হয়ে না যায় (আনফালঃ ৩৯)।
এখন বুঝতে পারা গেল, নবীর প্রতি আরোপিত কর্তব্য হচ্ছে বাতিলের বিরুদ্ধে একটানা সংগ্রাম করে চলা। এ সংগ্রামকে কোন বিশিষ্ট যুগ বা কালের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয়নি। আল্লাহর এ নিগের্দশ মুসলামনদের জন্য এবং তা প্রযোজ্য কিয়ামত পর্যন্ত সকল কালের জন্য। যতোক্ষণ না আল্লাহর ‘দ্বীন’ পরিপূর্ণরূপে কায়েম হয়েছে, ততোদিন এ সংগ্রামের শেষ নেই, বিরতি নেই।
এ প্রসঙ্গে আরও বলে-
(আরবী পিডিএফ ৪১ পৃষ্ঠায়****************************)
তোমরা যারা ঈমান এনেছ, আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। (আছ ছফঃ ১৪)
‘আল্লাহর সাহায্যকারী হওয়ার অর্থ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কল দিক দিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোনকে সাহায্য করা। এখন বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, ‘দ্বীনে হক’ প্রতিষ্ঠার জন্য বাতিলের বিরু্ধে সংগ্রাম অনিবার্য, তার জন্য মুক্ত হস্তে অর্থ ও ধন-সম্পদ ব্যয় করা এবং দেহ ও মনের সকল শক্তি নিয়োজিত করাকেই আল্লাহর পথে ব্যয় ও আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য বলা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন অভিপ্রায়ে অর্থ ব্যয় করলে, তা যতো বেশী পরিমাণেই হোক না কেন এবং প্রকাশ্যত দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে দেয়া হোক না কেন, তাকে আল্লাহর পথে ব্যয় বলা যাবে না এবং সমুদয় অপচয়ের মধ্যেই শামিল হবে।
(আরবী পিডিএফ ৪২ পৃষ্ঠায়****************************)
-হে ঈমানদারগণ! লোকের কাছে প্রচার করে বেড়িয়ে অথবা গ্রহণকারীকে মনে পীড়া দিয়ে তোমাদের সদকা-খয়রাত বরবাদ করো না। ঠিক তারই মতন যে শুধু লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে। (বাকারাহঃ ২৬৪)
‘সদকা’ শব্দটি সিদক থেকে উদ্ভুত। তার অর্থ ‘সত্যতা’ এবং ‘আন্তরিকতা’। সদকা এ জন্য বলা হয়েছে যে তার দাতার ঈমানের সত্যতা ও আন্তরিকতা প্রমাণ করে।
আল্লাহর পথে ব্যয় যদি লোক দেখানোর জন্য অথবা কোন ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য হয়, (যেমন- বাহাদুরি বা নাম কেনার জন্য, অথবা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিস্ঠার পর কোন ব্যক্তিগত পদমর্যাদা লাভ অথবা সুযোগ-সুবিধা হাসিলের জন্য) এবং তা যতো পরিমাণে হোক না কেন, তা সমুদয় অপচয় ব্যতীত আর কিছুই হবে না। তার কোন বিনিময় আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে না। বরঞ্চ অসৎ অভিপ্রায়ের জন্য শাস্তিই পেতে হবে। উপরের বিশদ আলোচনায় কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেলঃ
• এ দুনিয়ার নবী মুহাম্মদের (স) আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো দ্বীনে হকের প্রতিষ্ঠা। তার জন্য বিরোধী বাতিল শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম-সংঘর্ষ অনিবার্য।
• নবী মুহাম্মদ (স) এবং তাঁর পরে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সর্বোতভাবে সাহায্য করা অর্থাৎ এ সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করা ঈমানের দাবী ও শর্ত।
• এ কাজের জন্য জীভন ও ধন-সম্পদ উৎসর্গ করা ঈমানের দাবী।
• জীবন ও ধন-সম্পদ বিসর্জণ দেয়ার ব্যাপারে নিয়ত পরিস্কার রাখতে হবে। উদ্দেশ্য হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। মানব জাতির সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর বন্দেগী বা দাসত্ব-আনুগত্য করা। এ দাসত্ব-আনুগত্য পরিপূর্ণতা লাভ করে যদি তা জীবনের সর্বক্ষেত্রে করা হয়। অন্য কথায় যাকে বলা হয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে দ্বীনে হক প্রতিষ্ঠা করা। এই হলো সৃষ্টির মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই আল্লহার অন্যান্য নির্দেশ এসেছে। কুরআনের প্রতিটি নির্দেশ ঐ একটি লক্ষ্য কেন্দ্রের দিকেই আবর্তিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য বান্দাহকে বহু কাজ অবশ্যই করতে হয়, যা না করলে কিছুতেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না।
•
(আরবী পিডিএফ ৪৩ পৃষ্ঠায়****************************)
-যারা ঈমান এনেছ তারা জেনে রাখ যে যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তাহলে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং বাতিলের মুকাবিলায় তোমাদের হকের উপর অটল রাখবেন। (মুহাম্মদঃ ৭)
এখানেও ‘আল্লাহর সাহায্য’ অর্থ আল্লাহর ‘দ্বীনে হক’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। নিজের অর্থ, ধন-সম্পদ, শ্রম, মেহনত, প্রতিভা, চিন্তা-ভাবনা সব কিছুই এ কাজে পরিপূর্ণরূপে নিয়োজিত করা। একজন মু’মিনের কাছে এ দাবীই করা হচ্ছে।