জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. প্রকাশকের কথা
  2. ভুমিকা
    1. ওল্ড টেস্টামেন্ট : সাধারণ সীমানা
    2. বাইবেলের উৎস
    3. ওল্ড টেস্টামেন্টের বিভিন্ন পুস্তক
    4. তৌরাত বা পেন্টাটিউক
    5. ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহ
    6. নবীদের গ্রন্থ সমূহ
    7. কবিতা ও জ্ঞানের গ্রন্থ
    8. ওল্ড টেষ্টামেন্ট ও বিজ্ঞানঃ কতিপয় সাব্যস্ত সত্য
    9. দুনিয়া সৃষ্টি
    10. প্রথম বিবরণ
    11. দ্বিতীয় বিবরণ
    12. পৃথিবীর সৃষ্টি এবং সেখানে মানুষের আবির্ভাবের তারিখ
    13. আদম থেকে ইব্রাহীম
    14. ইব্রাহীমের নসবনামা
    15. ইবরাহীম থেকে ঈসা
    16. বন্যা ও প্লাবন
    17. বাইবেলের ভ্রান্তি সম্পর্কে খৃস্টান ভাষ্যকারদের বক্তব্য
    18. উপসংহার
  3. গসপেলঃ উৎস ও ইতিহাস
    1. ইতিহাসের স্মারকঃ ইহুদী খৃষ্ট ধর্ম ও সাধুপল
    2. চার গসপেলঃ উৎস ও ইতিহাস
    3. ম্যাথুর গসপেল (মথি লিখিত সুসমাচার)
    4. মার্কের গসপেল (মার্ক লিখিত সুসমাচার)
    5. লুকের গসপেল (লুক লিখিত সুসমাচার)
    6. জনের গসপেল (জোহান লিখিত সুসমাচার)
    7. গসপেলের উৎস
    8. ফাদার এম ই বয়েসমার্ড
    9. এবারতের ইতিহাস
    10. চার গসপেল ও আধুনিক বিজ্ঞান
    11. যিশুর নসবনামা
    12. ইব্রাহীমের পুত্র দাউদ তৎপুত্র যিশু খৃষ্টের নসবনামা
    13. পান্ডুলিপিতে ওল্ড টেস্টামেন্টের সঙ্গে মিলের পার্থক্য
    14. আধুনিক বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য ও মন্তব্য
    15. বিবরণের স্ববিরোধিতা ও অসম্ভাব্যতা
    16. নির্যাতনের বিবরণ
    17. জনের গ্রন্থে ইউকারিস্টের বিবরণ নেই
    18. মৃত্যুর পর যিশুর হাজির হওয়া
    19. যিশুর স্বর্গারোহণ
    20. যিশুর শেষ কথোপকথন ও জনের গসপেলের প্যারাক্লিট
    21. উপসংহার
  4. কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান
    1. ভূমিকা
    2. কুরআনের আসলত্ব, কিভাবে তা লেখা হয়
    3. আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি
    4. সৃষ্টির ছয় মেয়াদ
    5. কুরআনে দুনিয়া ও আকশমন্ডল সৃষ্টির কোন ক্রমিকতা দেয়া নেই
    6. জ্যোতির্মন্ডল গঠনের মৌলিক প্রক্রিয়া এবং তাঁর ফলে গ্রহ উপগ্রহের গঠন
    7. বিশ্বজগতের গঠন বিষয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের কতিপয় তথ্য
    8. তারকা, তারকাপুঞ্জ ও গ্রহ ব্যবস্থার গঠন ও বিকাশ
    9. বহু বিশ্বের ধারণা
    10. আন্ততারকা পদার্থ
    11. কুরআনের তথ্যের মুকাবিলায়
    12. কতিপয় আপত্তির জবাব
    13. কুরআনের জ্যোতির্বিদ্যা
    14. আকাশ সম্পর্কে চিন্তা ও ধারণার সাধারণ দিকনির্দেশ
    15. জ্যোতিষ্ক মন্ডলের প্রকৃতিঃ সূর্য ও চন্দ্র
    16. নক্ষত্র মন্ডল
    17. গ্রহমন্ডল
    18. নিম্নতম আকাশ
    19. জ্যোতির্মন্ডলের সংগঠন
    20. চন্দ্র ও সূর্যের কক্ষপথ
    21. চন্দ্রের কক্ষপথ
    22. সূর্যের কক্ষপথ
    23. মহাশূন্যে চন্দ্র ও সূর্যের নিজস্ব শক্তিতে চলার প্রসঙ্গ
    24. দিনরাত্রির ক্রমিকতা
    25. আকাশমন্ডলীর ক্রমবিকাশ
    26. বিশ্বজগতের সম্প্রসারণ
    27. মহাশূন্য বিজয়
    28. পৃথিবী
    29. সাধারণ বিবরণের আয়াত
    30. পানির বিবর্তনচক্র ও সমুদ্র
    31. সাগর
    32. পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ
    33. পৃথিবীর আবহাওয়া
    34. উচ্চতা
    35. আবহাওয়া মন্ডলে বিদ্যুৎ
    36. ছায়া
    37. প্রাণী ও উদ্ভিদ রাজ্য
    38. প্রাণের উৎপত্তি
    39. উদ্ভিদ রাজ্য
    40. উদ্ভিদ জগতে ভারসাম্য
    41. বিভিন্ন খাদ্যের গুণবৈচিত্র
    42. উদ্ভিদ জগতে বংশ বিস্তার
    43. প্রাণীর রাজ্য
    44. মৌমাছি
    45. মাকড়সা
    46. পাখী
    47. মানুষের বংশবিস্তার
    48. কতিপয় মৌলিক ধারণা
    49. কুরআনে মানুষের বংশবিস্তার
    50. শুক্রের উপাদান কি কি?
    51. কুরআন ও যৌনশিক্ষা
    52. কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনাঃ সাধারণ বৈশিষ্ট্য
    53. সাধারণ বিষয়ঃ কুরআন, গসপেল ও আধুনিক জ্ঞান
    54. সাধারণ বিষয়ঃ কুরআন ওল্ড টেস্টামেন্ট ও আধুনিক জ্ঞান
    55. নূহের আমলের প্লাবনঃ ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনা
    56. এ অভিমতের যুক্তিবাদ নিম্নরূপ
    57. প্লাবন বিষয়ে কুরআনের বর্ণনা
    58. মহাযাত্রা
    59. বাইবেল বর্ণিত মহাযাত্রা
    60. কুরআনে বর্ণিত মহাযাত্রা
    61. কিতাবের তথ্যের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানের মুকাবিলা
    62. মিসরে দুর্যোগ
    63. মহাযাত্রার পথ
    64. পানির অলৌকিক বিভক্ত
    65. ফেরাউনদের ইতিহাসে মহাযাত্রার স্থান
    66. শিলালিপির সমস্যা
    67. কুরআন হাদীস ও আধুনিক জ্ঞান
    68. সাধারণ উপসংহার

আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি

বাইবেলের বর্ণনার সঙ্গে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য

বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে ওল্ড টেস্টামেন্টে একটিমাত্র জায়গায় যেমন একটি দীর্ঘ একক বর্ণনা আছে, কুরআনে তেমন কোন একক বর্ণনা নেই। একটিমাত্র ধারাবাহিক বর্ণনার বদলে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক অনুচ্ছেদ আছে, যেখানে সৃষ্টির কতিপয় দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সৃষ্টির ক্রমবিকাশের পরবর্তী ঘটনাবলী সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য দেয়া হয়েছে। এ তথ্য কখনও বিস্তারিত কখনও সংক্ষিপ্ত। ঐ ঘটনাবলী কিভাবে বর্ণিত হয়েছে, সে সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে হলে বহুসংখ্যক সূরা থেকে আয়াত সংগ্রহ করে একত্রিত করা প্রয়োজন।

কেবলমাত্র বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কেই যে এ অবস্থা বিদ্যমান তা কিন্তু নয়। একই বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও প্রসঙ্গ বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই কুরআনে রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ পৃথিবী বা আকাশমন্ডল সম্পর্কিত নানা বিষয়, কিংবা মানবজাতি সম্পর্কিত বিবিধ বিষয়ের উল্লেখ করা যেতে পারে এবং এ বিষয়গুলি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকগণ আগ্রহী বা কৌতুহলী হতে পারেন। এ সকল বিষয়ের প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিশ্রম করে আয়াতগুলি একত্রিত করার চেষ্টা হয়েছে।

অনেক ইউরোপীয় ভাষ্যকারই মনে করেন যে, সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনা একই প্রকারের এবং এ কারণে তারা এ দুটি বর্ণনা পাশাপাশি উল্লেখ করে থাকেন। কিন্তু আমি মনে করি যে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কারণ বর্ণনা দুটির মধ্যে স্পষ্টতই অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে আদৌ গুরুত্বহীন নয়, এমন অনেক বিষয়ে কুরআনে বিবরণ আছে, কিন্তু বাইবেলের থেকে আদৌ গুরুত্বহীন নয়, এমন অনেক বিষয়ে কুরআনে বিবরণ আছে, কিন্তু বাইবেলে তাঁর কোন সমকক্ষ নেই। আবার বাইবেলেও এমন বিবরণ আছে, কুরআনে যার কোন সমকক্ষ নেই।

দু এবারতের দৃশ্যত সাদৃশ্যের ব্যাপারটি সর্বজনবিদিত। এ সাদৃশ্যের মধ্যে প্রথম দৃষ্টিতেই দেখা যায় যে, উভয় ক্ষেত্রেই সৃষ্টিকার্য ছয়টি পর্যায়ে সম্পাদিত হয়েছে বলা আছে। বাইবেলে ছয় দিনের কথা বলা হয়েছে, কুরানেও ছয় দিনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আসলে বিষয়টি অমন সহজ নয়, বেশ জটিল; সুতরাং একটু পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন আছে।

সৃষ্টির ছয় মেয়াদ

বাইবেলের বর্ণনা মুতাবিক সৃষ্টি ছয়দিনে সমাপ্ত হয় এবং সপ্তম সাব্বাথ, অর্থাৎ বিশ্রামের দিন ছিল। এ সাত দিন সপ্তাহের সাতটি দিনের অনুরূপ। বাইবেলের এ বর্ণনার কোন অস্পষ্টতা নেই। এখানে উল্লিখিত বর্ণনা বাইবেলের স্যাকারডোটাল সংস্করণ আছে এবং এ সংস্করণ সম্পর্কে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। ইয়াভিষ্ট সংস্করণের বর্ণনা এখন সংক্ষেপ করে মাত্র কয়েক লাইনের মধ্যে আনা হয়েছে। ফলে এ প্রসঙ্গে তা আদৌ বিবেচনার যোগ্য নয়। খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর পুরোহিতগণ এ বর্ণনা অনুসরণ করায় সাধারণ মানুষ সাব্বাথ পালনে উৎসাহিত হয়। ইশ্বর যেমন ছয়দিন পরিশ্রমের পর সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে ইহুদীগণও সাব্বাথ দিবসে (হিব্রু সাব্বাথ শব্দের অর্থ বিশ্রাম) বিশ্রাম গ্রহণ করবে বলে আশা করা হত।

বাইবেলে যেভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তাতে দুনিয়ার অধিবাসী একজন মানুষের কাছে দুটি সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময় বলতে যা বুঝায়, ‘দিন’ বলতে তাই বুঝানো হয়েছে। এ অর্থে দিন তাহলে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়নি, সূর্য সৃষ্টি হয়নি এবং পৃথিবীর নিজের বা সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হওয়ার কোন সুযোগই সৃষ্টি হয়নি, তখন ঐ ‘দিন’ এল কোথা থেকে? দিনের হিসাবই বা পাওয়া গেল কেমন করে? সুতরাং যুক্তি ও সঙ্গতির মুকাবিলায় বাইবেলের বর্ণনা আদৌ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ বইয়ের গোড়ার দিকেই

এ অসম্ভাব্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

কুরআনের অধিকাংশ তরজমা মিলিয়ে দেখলে দেখা যায় যে, বাইবেলের মত কুরানেও ছয়দিনে সৃষ্টি সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে। তরজমাকারীগণ যে সংশ্লিষ্ট আরবী শব্দটির অতি সাধারণ অর্থই গ্রহণ করেছেন, এজন্য তাদের বোধহয় তেমন দোষ দেয়া যায় না। কুরআনের ৭ নম্বর সূরার (আরাফ) ৫৪ নম্বর আয়াত সাধারণত এভাবে তরজমা করা হয়ে থাকেঃ

“তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছ’দিনে সৃষ্টি করেন।”

কুরআনের অতি অল্প সংখ্যক তরজমা ও ভাষ্যেই এ কথা পাওয়া যায় যে, ‘দিন’ বলতে আসলে ‘মেয়াদ’ বুঝতে হবে। আবার এমন কথাও বলা হয়ে থাকে যে, ইহুদী ও খৃষ্টানদের মধ্যে তৎকালে বহুল প্রচারিত বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়ানোর জন্যই কুরআনের এবারতে ‘দিনের’ কথা হয়েছে।

এ দৃষ্টিকোণ বাতিল না করেও আমরা বোধহয় খোদ কুরানেই সমস্যাটির সমাধান অনুসন্ধান করতে পারি এবং আরও সাধারণভাবে তৎকালে প্রচলিত ভাষায় শব্দটির অর্থ ও তাৎপর্য পরীক্ষা করে দেখতে পারি। বহু তরজমাকারী যে শব্দটির তরজমা করেছেন এবং এখনও করছেন ‘দিন’ বলে, আরবী ভাষায় সেই শব্দটি হচ্ছে ‘য়্যাওম’, বহুবচনে ‘আইয়াম।’

শব্দটির প্রচলিত সাধারণ অর্থ ‘দিন’। কিন্তু উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এ অর্থে একদিনের সূর্যাস্ত থেকে প্রদিনের সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় না বুঝিয়ে একদিনের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ই বেশী বুঝিয়ে থাকে। বহুবচনের আইয়াম শব্দটি কেবলমাত্র ‘দিনগুলি’ই বুঝায় না, ‘সূদীর্ঘ সময়’ ও বুঝিয়ে থাকে। অনির্দিষ্ট সময় বুঝায় বটে, কিন্তু সর্বদাই দীর্ঘ বুঝায়। শব্দটির অর্থে যে ‘সময়ের মেয়াদ’ এ তাৎপর্য আছে, কুরআনের অন্যত্র তাঁর নজীর পাওয়া যায়। ৩২ সূরার (সিজদা) ৫ আয়াত দেখুনঃ

“…… যে দিনের (য়্যাওম) দৈর্ঘ্য হবে তোমাদের হিসাবে সহস্র বৎসরের সমান।”

উল্লেখযোগ্য যে, ঠিক পূর্ববর্তী আয়াতেই ছয় মেয়াদে সৃষ্টি সম্পন্ন হওয়ার উল্লেখ আছে।

আবার ৭০ সূরার (মাআরিজ) ৪ আয়াত দেখুনঃ

“…এমন একদিনে (য়্যাওম) যাহা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান।” ‘দিন’ বলতে যা বুঝায় ‘য়্যাওম’ বুতে যে তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটি সময়ের মেয়াদ বুঝায়, আদি ভাষ্যকারগণ তা অনুধাবন করতে পারেছিলেন ; কিন্তু বিশ্বমন্ডল সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে আমরা এখন যা কিছু জানি, সেই জ্ঞান তাদের ছিল না। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় যে পৃথিবীর পরিক্রমণের ভিত্তিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে দিন বলতে যা বুঝায়, ষোড়শ শতাব্দীতে আবুস সুউদের সেই জ্ঞান থাকা সম্ভব ছিল না;  কিন্তু তবু তিনি মনে করেছিলেন যে, সৃষ্টিকার্যের সময়টি বিভিন্ন মেয়াদে বিভক্ত ছিল, কিন্তু দিন বলতে যাবুঝায়, ওই মেয়াদে তা ছিল না। বরং সৃষ্টির মেয়াদ বিভিন্ন ‘ঘটনায়’ (আরবী ভাষায় নাওবা) বিভক্ত ছিল।

আধুনিক ভাষ্যকারগণও এ একই অভিমত পোষণ করে থাকেন। সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কিত প্রত্যেকটি আয়াতের ব্যাখ্যায় ইউসুফ আলী তাঁর ভাষ্যে (১৯৩৪) বিশেষ জোর দিয়ে বলেছেন যে, ‘য়্যাওম’ শব্দটির তাৎপর্য ‘দিন’ বলে ব্যাখ্যা করা সঠিক নয়, প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে ‘অতি দীর্ঘ সময়, অথবা যুগ যুগ, এমনকি শত-সহস্রাব্দ কাল।’

সুতরাং বলা যেতে পারে যে, সৃষ্টি কার্যের জন্য কুরআনে ছয়টি সুদীর্ঘ কাল অতিবাহিত হয়েছে বলা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বমন্ডল সৃষ্টী ও গঠনের জটিল প্রক্রিয়ায় যে ছয়টি পর্যায় অতিক্রান্ত হয়েছে, আধুনিক বিজ্ঞানের অধিকারী মানুষের পক্ষে তা সাব্যস্ত করা সম্ভব না হলেও এ সত্য অতি অবশ্যই সাব্যস্ত হয়েছে যে, ঐ প্রক্রিয়ায় অতিশয় দীর্ঘ একাধিক মেয়াদের সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং ঐ মেয়াদের ‘দিন’ বলতে আমরা যা বুঝি সে অর্থে অনুমান করা হাস্যকর।

কুরআনের একটি অন্যতম দীর্ঘ অনুচ্ছেদে সৃষ্টিকার্য বিষয়ের বিবরণ দিতে গিয়ে পৃথিবী বিষয়ক কতিপয় ঘটনার পাশাপাশি আসমান বিষয়ক একটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ৪১ সূরার (হামিম আসসিজদা) ৯-১২ আয়াতে বলা হয়েছেঃ (আল্লাহ রসূলকে বলেছেন)

“বল, তোমরা কি তাহাকে অস্বীকার করিবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন দু দিনে এবং তোমরা তাহার সমকক্ষ দাড় করাইতে চাও? তিনি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক।”

“তিনি ভূপৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা স্থাপন করিয়াছেন এবং পৃথিবীতে রাখিয়াছেন কল্যাণ এবং চারদিনের মধ্যে ইহাতে ব্যবস্থা করিয়াছেন খাদ্যের, সমানভাবে সকলের জন্য যাহারা ইহার অনুসন্ধান করে। অতপর তিনি আকশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যাহা ছিল ধুম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি উহাকে ও পৃথিবীকে বলিলেন,”তোমরা উভয়ে আমার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত হও ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। ‘ উহারা বলিল, ‘আমরা তো আনুগত্যের সহিত প্রস্তুত আছি।’

অতঃপর তিনি আকাশ মন্ডল কে দুদিনে সপ্তাকাশে পরিণত করিলেন এবং প্রত্যেক আকাশের নিকট তাহার কর্তব্য ব্যক্ত করিলেন এবং তিনি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করিলেন প্রদীপমালা দ্বারা এবং করিলেন সুরক্ষিত। এ সব পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহ কর্তৃক সুবিন্যস্ত। ”

এ চারটি আয়াতে যে সকল বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা প্রয়োজন। বিশেষত জ্যোতির্মন্ডলের প্রাথমিক বাষ্পীয় প্রকৃতি এবং আকাশমন্ডলের সংখ্যা সাত হওয়ার প্রতীকী সংজ্ঞা বিশেষ অনুসন্ধানের দাবী রাখে। আমরা এ সংখ্যার অন্তর্নিহিত অর্থ ও তাৎপর্য জানতে পারব। আকাশ ও পৃথিবীর সঙ্গে আল্লাহর কথোপকথনও প্রতীকীধর্মী।

এখানে অবশ্য আকাশমন্ডল ও পৃথিবী গঠিত হওয়ার পর আল্লাহর হুকুমের কাছে তাদের নতি স্বীকার করার ব্যাপারটিই প্রকাশ করা হয়েছে।

সমালোচকগণ অবশ্য এখানে সৃষ্টির ছয় মেয়াদের সঙ্গে একটি বিরোধিতা দেখতে পেয়েছেন। তারা বলেন যে, পৃথিবী সৃষ্টির দু মেয়াদ, বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য বিতরণের চার মেয়াদ, এবং আকাশমন্ডল সৃষ্টির দুই মেয়াদ, মোট আট মেয়াদ হয়ে যায়। সুতরাং আগে যে ছয় মেয়াদের

কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে একটি স্পষ্ট বিরোধ দেখা যায়।

কিন্তু এ এবারত মানুষকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অনুধাবনের দিকে অনুপ্রানিত করে এবং এবারতটি আসলে দুভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগে পৃথিবী এবং দ্বিতীয় ভাগে আকাশমন্ডলের কথা বলা হয়েছে। এ দুটি ভাগ আরবী ‘ছুম্মা’ শব্দ দ্বারা সংযুক্ত করা হয়েছে। শব্দটির অর্থ ‘আরও’ হতে পারে, তদতিরিক্ত হতে পারে এবং ‘তারপর’ও হতে পারে। সুতরাং বর্ণিত ঘটনাবলী অথবা মানুষের অনুধাবনের ‘ক্রমিকতা’র দিক নির্দেশকও হতে পারে। আবার একইভাবে ক্রমিকতার কোন ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্য ছাড়াই নিছক ঘটনাবলীর বর্ণনাও হতেপারে। সে যাই হোক না কেন, আকাশমন্ডল সৃষ্টির দুটি মেয়াদের সঙ্গে অতি সহজেই একীভূত হয়ে থাকতে পারে। বিশ্বসৃষ্টির প্রক্রিয়া কুরআনে কিভাবে পেশ করা হয়েছে, তা আমরা একটু পরেই দেখতে পাব এবং আমরা পরীক্ষা ও তুলনা করে আরও দেখতে পাব যে, ঐ প্রক্রিয়া আকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির প্রত যুগ্মভাবে প্রযোজ্য এবং এ প্রক্রিয়াই আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ঐ চারটি আয়াতে বর্ণিত ঘটনাবলীর একই সময়ে একই সঙ্গে ঘটার ধারণা যে কতখানি যুক্তিপূর্ণ, আমরা তখন সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারব।

সুতরাং কুরআনের অন্যত্র ছয় মেয়াদে বিশ্বসৃষ্টির যে বিবরণ আছে, তার সঙ্গে এখানে উধৃত বিবরণের আদৌ কোন বিরোধ নেই।

কুরআনে দুনিয়া ও আকশমন্ডল সৃষ্টির কোন ক্রমিকতা দেয়া নেই

 উপরে উধৃত কুরআনের দুটি সূরায় সৃষ্টির প্রসঙ্গ আছে। সূরা আরাফের ৫৪ আয়াতে আকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে, পক্ষান্তরে সূরা হামীম আস-সিজদার ৯-১২ আয়াতে পৃথিবী ও আকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর কোনটির পর কোনটি সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্পর্কে কুরআনে কোন ক্রমিকতা দেয়া হয়নি।

যে কয়টি সূরায় প্রথমে পৃথিবীর উল্লেখ আছে, তার সংখ্যা খুবই কম, মাত্র দুটি। সূরা বাকারার ২৯ আয়াত, এবং সূরা ত্বাহার ৪ আয়াতে বলা হয়েছে,”তিনি, যিনি পৃথিবী ও উচ্চ আকাশমন্ডল সৃষ্টি করেছেন।” পক্ষান্তরে যে সকল সূরায় আকাশমন্ডলের কথা প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি, মোট নয়টি। সূরা আরাফের ৫৪ আয়াত, সূরা ইউনুসের ৩ আয়াত, সূরা হুদের ৭ আয়াত, সূরা ফুরকানের ৫৯ আয়াত, সূরা আস-সিজদার ৪ আয়াত, সূরা কাফের ৩৮ আয়াত, সূরা হাদিদের ৪ আয়াত, সূরা আন-নাযিয়াতের ২৭-৩৩ আয়াত, এবং সূরা আস-শামসের ৫-১০ আয়াত।

প্রকৃতপক্ষে সূরা নাযিয়াত ছাড়া অন্যত্র কোথাও সুনির্দিষ্ট কোন ক্রমিকতা দেয়া হয়নি। অন্যত্র ‘ওয়া’ অর্থাৎ ‘এবং’ শব্দ দ্বারা দুটি বিষয়ের সংযোগ সাধন করা হয়েছে; অথবা ‘ছুম্মা’ অর্থাৎ ‘তদুপরি বা আরও’ শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। ফলে শুধু সংযোগও বুঝা যেতে পারে, আবার ক্রমিকতাও বুঝা যেতে পারে।

আমার মনে হয় কুরআনের মাত্র একটি সূরায় সৃষ্টিকার্যের বিভিন্ন ঘটনার একটি নির্দিষ্ট ক্রমিকতা বর্ণিত হয়েছে। সূরা আন-নাযিয়াতের ২৭-৩৩ আয়াতে বলা হয়েছেঃ

“তোমাদের সৃষ্টি কঠিনতর, না আকাশের? তিনিই ইহা নির্মাণ করিয়াছেন; তিনি ইহাকে সুউচ্চ ও সুবিন্যস্ত করিয়াছেন।

তিনি রাত্রিকে করেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং দিবসে প্রকাশ করেন সূর্যালোক; অতঃপর পৃথিবীকে বিস্তৃত করেন; তিনি উহা হইতে উহার প্রস্রবণ ও চারণভূমি বহির্গত করেন এবং পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করেন; এ সমস্ত তোমাদের ও তোমাদের পশুদের ভোগের জন্য।”

মানুষের জন্য দুনিয়ায় আল্লাহর নিয়ামতের এ বিবরণ আরব উপত্যকার কৃষক ও বেদুইনদের উপযোগী ভাষায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর আগে আকাশমন্ডলের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা করতে আহবান জানানো হয়েছে। রাত্রি ও দিনের বিবর্তন সম্পন্ন করার পর আল্লাহ যে পর্যায়ে পৃথিবী বিস্তৃত ও উর্বর করলেন তা সময়ের ক্রমিকতায় খুবই সঠিক স্থানে সন্নিবেশিত হয়েছে। সুতরাং এখানে দু শ্রেণীর ঘটনাবলীর কথা বলা হয়েছে, একটি আকাশমন্ডল বিষয়ক এবং অপরটি দুনিয়া বিষয়ক, যার স্থান সময়ের ক্রমিকতায় নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। এখানে যেভাবে প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে তাতে বুঝা যায় যে, বিস্তৃত হওয়ার আগে নিশ্চয়ই দুনিয়ার অস্তিত্ব ছিল;  সুতরাং আল্লাহ যখন আকাশমন্ডল সৃষ্টি করেন তখন পৃথিবীর অস্তিত্ব ছিল। তাছাড়া আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর বিস্তৃতি ও পারষ্পরিক সংযুক্তি থেকেও তাদের সহ-অবস্থিতির একটি ধারণা সৃষ্টি হয়। সুতরাং কুরআনের আয়াতে পৃথিবী আগে সৃষ্টি হওয়ার অথবা আকাশমন্ডল আগে সৃষ্টি হওয়ার উল্লেখের মধ্যে কোন বিশেষ তাৎপর্য অনুসন্ধান করার প্রয়োজন নেই। সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত না হয়ে থাকলে শব্দের অবস্থানের কারণে সৃষ্টির ক্রমিকতা প্রভাবিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

জ্যোতির্মন্ডল গঠনের মৌলিক প্রক্রিয়া এবং তাঁর ফলে গ্রহ উপগ্রহের গঠন

জ্যোতির্মন্ডল সৃষ্টির মৌলিক প্রক্রিয়া বিষয়ক একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ কুরআনের দুটি আয়াতে দেয়া হয়েছে।

সূরা আম্বিয়া, ৩০ আয়াতঃ”অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যাহা ছিল ধুম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি উহাকে ও পৃথিবীকে বলিলেন, ‘তোমরা উভয়ে আমার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত হও ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। ‘ উহারা বলিল,”আমরা তো আনুগত্যের সহিত প্রস্তুত আছি।”

কুরআনে উল্লেখিত অন্যান্য জৈবিক সমস্যার সঙ্গে পানি খেতে প্রাণের উদ্ভব সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করব। বর্তমানে নিম্নবর্ণিত দুটি বিষয় স্মরণ রাখা প্রয়োজনঃ

(ক) ক্ষুদ্র ও সুক্ষ্ম কণা সম্বলিত ধুম্রপুঞ্জের উপস্থিতি সম্পর্কিত বিবরণ; আরবী ‘দুখান’ শব্দে ঐরূপ বস্তুই বুঝায়। ধুম্র সাধারণত একটি বাষ্পীয় উপবস্তুর দ্বারা গঠিত হয়। তার সঙ্গে সুক্ষ্ম কণাসমূহ ঝুলন্ত অবস্থায় মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে। বেশি বা কম তাপমাত্রায় এ কণাগুলি কঠিন এমনকি তরল অবস্থায়ও থাকিতে পারে।

(খ) যে একক ধুম্ররাশির উপাদান সমূহ প্রথমে একত্রিত (আরবী রাত্‌ক) করা হয়েছিল, তা পৃথক (আরবী ফাত্‌ক) করার প্রক্রিয়ার উল্লেখ। উল্লেখযোগ্য যে, আরবী ‘ফাত্‌ক’ শব্দ দ্বারা চূর্ণ করা, বিচ্ছিন্ন করা ও পৃথক করা বুঝায় এবং ‘রাত্‌ক’ শব্দ দ্বারা কোন একক বস্তু প্রস্তুত করার জন্য একাধিক উপাদান একীভূত বা দ্রবীভূত করা বুঝায়।

কুরআনের অন্যান্য আয়াতে গহ-উপগ্রহের প্রসঙ্গে একটি মূল বস্তুকে কতিপয় ভাগে ভাগ করার ধারণা পাওয়া যায়। কুরআনের শুরুতেই উদ্বোধণী স্মরণিকা ‘দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে’ – এর পরেই প্রথম সূরার প্রথম আয়াতেই বলা হয়েছে-”প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।”

এ ‘বিশ্বজগত’ শব্দটি কুরআনে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে আকাশমন্ডলও বহুবচনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা কেবলমাত্র সংখ্যাধিক্যের কারণেই নয়, প্রতীকধর্মী ৭ সংখ্যার কারণেও বটে।

বিভিন্ন সংখ্যাগত পরিমাণ বুঝানোর জন্য এ সংখ্যাটি (৭) কুরআনে ২৪ বার ব্যবহার করা হয়েছে। এটা প্রায়শ ‘বহু’ অর্থ বহন করে; কেন করে তা আমরা জানি না। অনির্দিষ্ট বহুবচনের সংখ্যা বুঝানোর জন্য গ্রীক ও রোমানগন ৭ সংখ্যা ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়। কুরানে ৭ সংখ্যা দিয়ে খোদ আকাশমন্ডলই (সামাওয়াত) বুঝানো হয়। এমনকি এ সংখ্যাটিই আকাশমন্ডল বুঝায়। আকাশমন্ডলের ৭ টি পথের কথা একবার উল্লেখ করা হয়েছেঃ

“তিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন, তৎপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং উহাকে সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন, তিনি সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৯)

“আমি তো তোমাদিগের উর্ধে সৃষ্টি করিয়াছি সাত রাস্তা এবং আমি সৃষ্টি বিষোয়ে অনবধান নহি।” (সূরা মুমিনুন, আয়াত ১৭)

“যিনি স্তরে স্তরে বিন্যস্ত সপ্তাকাশ সৃষ্টি করিয়াছেন, দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুত দেখিতে পাইবে না; আবার তাকাইয়া দেখ কোন ত্রুটি দেখিতে পাও কিনা? (সূরা মূলক, আয়াত ৩)

“তোমরা কি লক্ষ্য কর নাই আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টি করিয়াছেন সপ্তস্তরে বিন্যস্ত আকাশমন্ডলী এবং সেথায় চন্দ্রকে স্থাপন করিয়াছেন আলোকরূপে ও সূর্যকে স্থাপন করিয়াছেন প্রদীপরূপে? (সূরা নূহ, আয়াত ১৫-১৬)

(উল্লেখযোগ্য যে, বাইবেলে চন্দ্র ও সূর্য উভয়কেই ‘আলোক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু কুরআনে চন্দ্রকে বলা হয়েছে আলো (নূর) এবং সূর্যকে এ আয়াতে বলা হয়েছে আলো প্রদানকারী প্রদীপ (সিজার) । ‘পরে আমরা দেখতে পাব সূর্য সম্পর্কে অন্যান্য বিশেষণও প্রয়োগ করা হয়েছে) ।

“আমি তোমাদিগের উর্ধদেশে সুস্থিত সপ্ত-আকাশ নির্মাণ করিয়াছি, এবং প্রোজ্জ্বল দীপ সৃষ্টি করিয়াছি।” (সূরা নাবা, আয়াত ১২-১৩)

এখানে প্রোজ্জ্বল দীপ বলতে সূর্য বুঝায়। কুরআনের ভাষ্যকারগণ এ বিষয়ে একমত যে, ৭ সংখ্যা দ্বারা বহুবচন ছাড়া আর কিছু বুঝায় না। কুরান ছাড়াও মুহাম্মদের (সঃ) আমলের অন্যান্য এবারতেও ৭ সংখ্যা দ্বারা বহুবচন বুঝানো হয়েছে বলে দেখা যায়। তাছাড়া তাঁর আমলের পরের প্রথম শতাব্দী থেকে লিখিত হাদীসেও ঐ একই অর্থ পাওয়া যায়।

সুতরাং আকাশও অনেক আছে এবং পৃথিবীও অনেক আছে। কুরআনের পাঠক সেহেতু বিস্মিত হতে পারেন যে, আমাদের এ পৃথিবীর মত আরও পৃথিবী হয়ত থাকতে পারে। আমাদের আমল পর্যন্ত এ সত্য অবশ্য এখনও মানুষের দ্বারা প্রমাণিত হয়নি, তবে ৬৫ সূরার (তালাক) ১২ আয়াতে নিম্নরূপ আগাম খবর আছেঃ

“আল্লাহই সৃষ্টি করিয়াছেন সপ্তাকাশ এবং পৃথিবীও অনুরূপ ভাবে, আকাশ ও পৃথিবীর সর্বস্তরে নামিয়া আসে তাহার নির্দেশ; ফলে, তোমরা বুঝিতে পার যে, আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং সমস্ত কিছু তাহার জ্ঞানগোচর।”

যেহেতু আমরা আগেই দেখেছি যে, ৭ সংখ্যা দ্বারা অনির্দিষ্ট বহুবচন বা বহু সংখ্যা বুঝায়, সেহেতু এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব যে, কুরআনের বর্ণনায় আমাদের এ পৃথিবীর মত আরও অনেক পৃথিবী বিশ্বজগতে আছে বলে আভাস পাওয়া যায়।

বিংশ শতাব্দীর পাঠক আর একটি বিষয় দেখে অবাক হবেন যে, কুরানে তিনি শ্রেণীর সৃষ্টবস্তুর উল্লেখ করা হয়েছে- (১) আকাশমন্ডলের বস্তু (২) পৃথিবীর বস্তু এবং (৩) আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্তানের বস্তু।

এ প্রসঙ্গে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতগুলি লক্ষণীয়ঃ

“যাহা আছে আকাশমন্ডলীতে, পৃথিবী, এ দুয়ের অন্তর্বর্তীস্থানে ও ভূগর্ভে তাহা তাহারই।” (সূরা তা’হা, আয়াত ৬) ।

“তিনি আকাশমডলী, পৃথিবী ও উহাদিগের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিবসে সৃষ্টি করেন।” (সূরা ফুরকান, আয়াত ৯)

“আল্লাহ, তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উহাদিগের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু ছয় সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিনে।” (সূরা সিজদা, আয়াত ৪)

“আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদিগের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করিয়াছি ছয় দিনে; ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করে নাই।” (সূরা কা’ফ, আয়াত ৩৮)

[সৃষ্টিকার্য যে আল্লাহকে ক্লান্ত করেনি এ কথা বাইবেলের একটি বর্ণনার জবাবে বলে গণ্য হতে পারে। ঐ বর্ণনা বলা হয়েছে যে, ছয় দিন কাজ করার পর সপ্তম দিনে আল্লহ বিশ্রাম গ্রহণ করেন]

উপ্রোক্ত আয়াতগুলি ছাড়াও নিম্নবর্ণিত আয়াতগুলিতে ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু’ বিষয়ের উল্লেখ আছে-সূরা ২১ (আম্বিয়া) আয়াত ১৬; সূরা ৪৪ (দুখান) আয়াত ৭ ও ৩৮;  সূরা ৭৮ (নাবা আয়াত ৩৭; সূরা ১৫ হিজর) আয়াত ৮৫; সূরা ৪৬ (আহকাফ) আয়াত ৩;  এবং সূরা ৪৩ (জুখরুফ) আয়াত ৮৫।

আকাশমন্ডলীর বাইরে এবং পৃথিবীর বাইরে সৃষ্টবস্তুর কল্পনা খুবই কঠিন। এ আয়াতগুলির অর্থ উপলব্ধি করার জন্য সহজ থেকে জটিলের দিকে অগ্রসর হয়ে প্রথমে সৌরমন্ডল বহির্ভুত বস্তু সম্পর্কে মানুষ যা নির্ণয় করতে পেরেছে সে সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন এবং তারপর বিশ্বজগতের গঠনপ্রণালী বিষয়ে আধুনিক বিজ্ঞান যে ধারণায় উপনীত হয়েছে তাও জানা প্রয়োজন। পরে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।

বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক বিষয়ে যাওয়ার আগে সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআনে যে খবর আছে, সেদিকে আর একবার নজর দেয়া যেতে পারে। উপরে লিখিত আয়াতগুলি থেকে এ খবর পাওয়া যায়ঃ

১) সৃষ্টির জন্য সাধারণভাবে ছয়টি মেয়াদ আছে।

২) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়ে পরষ্পরের সংযোগ সাধন।

৩) একটি প্রাথমিক ধুম্ররাশি খন্ডীত হওয়ার পর তাঁর মধ্য থেকে বিশ্বজগত সৃষ্টি।

৪) আকাশ ও পৃথিবী বহুসংখ্যক হওয়া।

৫) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অন্তর্বর্তী স্থানে সৃষ্টবস্তু থাকা।

বিশ্বজগতের গঠন বিষয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের কতিপয় তথ্য

সৌরমন্ডল

সূর্যের চারদিকে ঘুর্ণায়মান পৃথিবী ও গ্রহমন্ডলী এমন একটি সুশৃঙ্খল বিরাট ব্যাপার যে, মানুষের পরিমাপে তা অতিকায় মনে হয়। অথচ পৃথিবী সূর্য থেকে মোটামূটিভাবে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ্য মাইল দূরে অবস্থিত। মানুষের হিসাবে এ দূরত্ব নিঃসন্দেহে খুবই বেশি, কিন্তু সূর্য থেকে দূরতম স্থানে অবস্থিত গ্রহের (প্লুটো) দূরত্বের তুলনায় অনেক কম। সূর্য থেকে প্লুটোর দূরত্ব ৩৬৭ কোটি ২০ লক্ষ্য মাইল, অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের প্রায় ৪০ গুণ বেশী। এ দূরত্ব দ্বিগুণ করা হলে সৌরজগতের সর্বাধিক বৃহৎ আকারের একটি আন্দাজ পাওয়া যায়। সূর্যের আলো প্লুটো গ্রহে পৌছতে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগে, অথচ ঐ আলর গতি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ্য ৮৬ হাজার মাইল। সুতরাং আমাদের জানা সৌরমন্ডলের প্রান্তদেশে অবস্থিত তারকারজির আলোক আমাদের কাছে পৌছতে কোটি কোটি বছর সময় লেগে যায়।

তারকারাজি

আমাদের এ পৃথিবী সূর্যের একটি উপগ্রহ মাত্র। সূর্য এবং তাঁর চারদিকে ঘুর্ণায়মান বিভিন্ন গ্রহ আকারে প্রকারে কোটি কোটি তারকার রাজ্যে খুবই ক্ষুদ্র। গরমকালের রাতে সমগ্র মহাশূন্য তারকায় পরিপূর্ণ বলে মনে হয় এবং এ তারকারাজি ‘ছায়াপথ’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এ ছায়াপথ বিরাটাকার ও অতিকায়। সৌরজগতে আলোর গতি যদি ঘন্টা হিসাবেও ধরা হয়, তাহলেসমগ্র তারকা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে ঘন তারকাগুচ্ছের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত আলো পৌছাতে প্রায় ৯০ হাজার বছর সময় লেগে যাবে। আমাদের পৃথিবী যে তারকা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত তা অবিশ্বাস্যভাবে অতিকায় বটে, কিন্তু তবুআকাশমন্ডলের তা একটি অতিশয় ক্ষুদ্র অংশমাত্র। তাছাড়া আমাদের তারকা রাজ্যের বাইরেও ছায়াপথের মত বহু তারকাপুঞ্জ আছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মাউন্ট উইলসনের মত সুক্ষ্ম ও শক্তিশালী টেলিস্কোপ নির্মিত হওয়ার পর মাত্র পঞ্চাশ বছরের কিছু বেশী সময় আগে ওই সকল তারকাপুঞ্জ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। এগুলি বিপুল সংখ্যক এবং এত বেশী বেশী দূরত্বে অবস্থিত যে, ঐ দূরত্ব পরিমাপের জন্য ‘আলোকবর্ষ’ নামে একটি বিশেষ হিসাব নির্ধারণ করতে হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ্য ৮৬ হাজার মাইল গতিতে ৩২৬ বছর চললে যে দূরত্ব পাওয়া যায়, তাকে আলোকবর্ষ বলা হয়।

তারকা, তারকাপুঞ্জ ও গ্রহ ব্যবস্থার গঠন ও বিকাশ

তারকারাজ্য বর্তমানে যে স্থান দখল করে আছে, সেখানে আদিতে কি ছিল? আধুনিক বিজ্ঞানে এ প্রশ্নের কোন জবাব নেই। বিশ্বজগতের বিকাশের ধারায় কিছুটা মেয়াদের কথা হয়ত বলা যেতে পারে। কিন্তু ঐ মেয়াদ আমাদের বর্তমান আমলের কতদিন আএ ছিল তা বলার কোন উপায় নেই।

আধুনিক বিজ্ঞান থেকে প্রাচীনতম যে খবর পাওয়া সম্ভব, তা হচ্ছে এই যে, বিশ্বজগত একটি বাষ্পরাশি থেকে গঠিত হয়েছে। প্রধানত হাইড্রোজেন এবং কিছু পরিমাণ হেলিয়াম দ্বারা গঠিত ঐ বাষ্পরাশি ধীরে ধীরে ঘুরছিল। পরে তা অতিকায় বহু খন্ডে খন্ডিত হয়ে যায়। পদার্থবিদগণ অনুমান করেছেন যে, এক একটি খন্ডের আকার সূর্যের বর্তমান আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৩ লক্ষ্য গুন। ওই খন্ডগুলি থেকেই তারকাপুঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে।

তারপর খন্ডগুলি পুনরায় খন্ডিত হয়ে এক একটি তারকার সৃষ্টি হয়। খন্ডগুলি ক্রমাগত দ্রুততর বেগে ঘুরছিল। এক সময় শীতল হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং চাপ, মাধ্যাকর্ষণচুম্বক ও বিকিরণ শক্তির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়। সংকুচিত হওয়ার ফলে এবং ঘুর্ণন শক্তি তাপশক্তিতে পরিণত হওয়ার ফলে তারকাগুলি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তারপর তাপ ও অনুশক্তির ক্রিয়া শুরু হওয়ায় হালকা অণুর সমন্বয়ে ভারী অণু গঠিত হয়। এভাবে বিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে হাইড্রোজেন থেকে হেলিয়াম পরে কার্বন ও অক্সিজেন এবং শেষ পর্যন্ত ধাতু ও ধাতুমল গঠিত হয়। এরূপে তারকাদের একটি নিজস্ব জন্ম-প্রক্রিয়া পায়া যায় এবং আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিবর্তনের বর্তমান পর্যায় অনুসারে তাদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়ে থাকে। তারকাদের আবার মৃত্যুও হয়ে থাকে। বিবর্তনেরশেষ পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পর অঙ্কে তারকার আভ্যন্তরিক বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে দেখা গেছে এবং তাঁর ফলে তারা প্রকৃতপক্ষে ‘লাশ’ হয়ে গেছে।

আদি বাষ্পরাশি পৃথক ও বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন গ্রহ এবং বিশেষত পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, একথা আগেই বলা হয়েছে। বিগত পচিশ বছরেরও বেশী সময় যাবত একটি ব্যাপারে আর আদৌ কোন দ্বিমত পোষণ করা হয়নি যে, সূর্য বাষ্পরাশির একটি একক খন্ডের অভ্যন্তরে ঘনত্ব লাভ করে এবং অন্যান্য গ্রহ তাঁর চতুর্দিকের খন্ড খন্ড বাষ্পরাশির মধ্য ঘন্ত্ব লাভ করে। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয়ের উপর খুবই জোর দেয়া প্রয়োজন এবং তা আলোচ্য বিষয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সূর্যের মত জ্যোতিষ্ক অথবা পৃথিবীর মত অজ্যোতিষ্কের গঠন প্রক্রিয়ায় কোন কালানুক্রম বা আগে পিছের কোন ব্যাপার নেই। উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি সমতা ও সমসাময়িকতা আছে।

এ সকল ঘটিনা কখন ঘটেছিল, সে সম্পর্কে বিজ্ঞান কিছু খবর দেয়ার চেষ্টা আছে। আমাদের তারকা রাজ্যের বয়স দশ হাজার কোটি বছর অনুমান করে নিয়ে বলা হয়ে থাকে যে তাঁর পাঁচ হাজার কোটি বছর পরে সৌরমন্ডল গঠিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের রশ্মিবিদ্যার পরীক্ষামতে পৃথিবী ও সূর্যের গঠন সাড়ে চার হাজার কোটি বছর। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, জ্যোতির্মন্ডলের সাধারণ গঠন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জ্যোতির্পদার্থবিদগণ যথেষ্ট উচ্চতর জ্ঞান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ জ্ঞানের সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে এই একটি ঘুর্ণায়মান বাষ্পরাশি ঘন ও সংকুচিত হয়েছে এবং তা খন্ড খন্ড হয়ে সূর্য ও বিভিন্ন গ্রহ গঠিত তাদের নিজ নিজ অবস্থান গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে আকাশের এ পৃথিবীও ছিল। চাদের ব্যাপারে এখন এ সম্ভাবনা সকলেই স্বীকার করে থাকেন যে, ঘুর্ণায়মান অবস্থা ধীরগতি হয়ে আসার সময় চাঁদ ক্রমে ক্রমে পৃথিবী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। আদি বাষ্পরাশি এবং তা থেকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত অসংখ্য তারকারাজির সৃষ্টি-প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞাণীগণ যে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন, তার ফলে একাধিক বিশে থাকার যৌক্তিকতা সম্পর্কে সন্দেহের আর কোন অবকাশ নেই। কিন্তু তাই বলে আমাদের এ পৃথিবীর মত আরও পৃথিবী আছে, তেমন কিছু কিছু নিশ্চিত বা প্রমাণিত হয়নি।

বহু বিশ্বের ধারণা

তবুও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিগণ মনে অরেন যে, পৃথিবীর মত আরও গ্রহ থাকা খুবই সম্ভব। তবে জ্যোতির্মন্ডলের সাধারণ অবস্থা বিবেচনা করে মনে করা হয় যে, সেখানে পৃথিবীর অনুরূপ পরিবেশ বিদ্যমান থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং অন্য পৃথিবীর অনুসন্ধান করতে হলে তা সৌরমন্ডলের বাইরেই করতে হবে এবং নিম্নলিখিত কারণে সেখানে অন্য পৃথিবী থাকা খুবই সম্ভব বলে মনে করা হয়।

বিজ্ঞানীগণ মনে করেন যে, আমাদের তারকা রাজ্যের দশ হাজার কোটি তারকার মধ্যে অন্তত অর্ধেকের ক্ষেত্রে সূর্যের মত উপগ্রহ ব্যবস্থা আছে। ঐ পাঁচ হাজার কোটি তারকা সত্য সত্যই সূর্যের মত আস্তে আস্তে ঘুরে থাকে এবং এ বৈশিষ্ট থেকে এ আভাস পাওয়া যায় যে, তাদের প্রত্যেকেরই একাধিক নিজস্ব উপগ্রহ আছে। তারকাগুলি পৃথিবী থেকে এত বেশী দূরে অবস্থিত যে, তাদের উপগ্রহগুলি দেখতে পাওয়া যায় না। তবে তারকাগুলির পরিক্রম পথ কিছুটা বক্র ও ঢেউয়ের আকারের হওয়ায় উপগ্রহ থাকা খুবই সম্ভব বলে মনে করা হয়। বার্ণাড তারকার অন্ততপক্ষে এমন একটি সঙ্গী উপগ্রহ আছে, যা জুপিটারের চেয়ে অনেক বড় এবং এমন কি দুটি উপগ্রহও থাকতে পারে। এ সম্পর্কে পি গুয়েরিন লিখেছেনঃ”সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে এ ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে, উপগ্রহ-ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বজগতেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। কেবলমাত্রসৌরমন্ডলে ও পৃথিবীতেই এ ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে তা নয়।” এবং তাঁর ফলে স্বাভাবিকভাবেই”প্রাণ লালনকারী গ্রহের মতই বিশ্বজগতের সর্বত্র প্রাণ ছড়িয়ে আছে। বিশেষত যে সকল স্থানে প্রাণের বিকাশের উপযোগী বস্তুগত ও রাসায়নিক পরিবেশ বিদ্যমান আছে।”

আন্ততারকা পদার্থ

আমরা আগেই দেখেছি যে, আদি বাষ্প ঘনীভূত ও খন্ড-বিখন্ড হয়ে তারকা, গ্রহ ও উপগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তারপরও যে বাষ্প ‘অবশিষ্ট’ ছিল তা এখুন বিভিন্ন তারকার মধ্যবর্তী স্থান দখল করে। ফলে তাঁর উপরে তারকার আলোক প্রতিফলিত হয়। কিছু বাষ্প আবার কালো এবং অপেক্ষাকৃত কম ঘন এবং তা জ্যোতির্বিদদের জরীপ কাজে বাধা সৃষ্টি করে থাকে বলে জানা যায়। এ পদার্থ বিভিন্ন তারকারাজির মধ্যে যোগসুত্র হিসেবে বহাল আছে। বিভিন্ন তারকারাজির মধ্যে বিরাট দূরত্ব আছে, তার কথা বিবেচনা করলে মনে হয় যে, এ পদার্থ অপেক্ষকৃত কম ঘন হলেও তাঁর মোট পরিমাণ সমগ্র তারকারাজির পরিমাণের চেয়ে সম্ভবত অনেক বেশী। এ বইকট এ পদার্থের পরিস্থিতির উপর খুবই গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন যে, একমাত্র এ ‘পদার্থের কারণে’ বিশ্বজগতের ক্রমবিক্কাশের ধারণা যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।

এখন আমরা এ আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে দুনিয়া জাহানের সৃষ্ট সম্পর্কে কুরআনের ধারণা বিবেচনা করে দেখতে পারি।

Page 7 of 13
Prev1...678...13Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South