উমার ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ
আমর ইবনুল ’আস ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু রাবী’আ যখন মক্কায় কুরাইশদের কাছে ফিরে আসলো তখন কুরাইশরা জানতে পারলো যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদেরকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছেই, অধিকন্তু নাজাশী তাদেরকে অপ্রীতিকর কথাবার্তা বলেও বিদায় দিয়েছেন। এই সময় হযরত উমারও ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একরোখা ও দুঃসাহসী। তাঁর অসাক্ষাতেও কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে বা করতে সাহস করতো না। হামযা ও উমারের মত দুই বীরকে কিছু বলতে বা করতে সাহস করতো না। হামযা ও উমারের মত দুই বীরকে সাথী হিসেবে পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কাফিরদের যুলুম থেকে অনেকটা নিরাপত্তা লাভ করেন। বলতে গেলে তাঁরা শক্তি মত্তায় কুরাইশদেরকেও ছাড়িয়ে গেলেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রা) বলতেন, “খাত্তাবের পুত্র উমার ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমরা কা’বা ঘরে গিযে নামায পড়তে পারতাম না। উমার ইসলাম গ্রহণ করার পর কুরাইশদেরকে চ্যালেঞ্জ করে কা’বার সামনে গিয়ে নামায আদায় করেন এবং আমরাও তাঁর সাথে নামায পড়ি। কিছুসংখ্যক সাহাবা হিজরাত করে হাবশায় [আবিসিনিয়া] যাওয়ার পর উমার (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন।”
উমারের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটা এইরূপ : তাঁর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ও তার স্বামী সাঈদ ইবনে যায়িদ তখন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। ব্যাপারটা তাঁরা উভয়েই উমারের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলেন। বনী আদী ইবনে কা’ব গোত্রের নাঈম ইবনে আবদুল্লাহ নাহহামও গোত্রের লোকদের ভয়ে নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখেন। তিনি ছিলেন হযরত উমারেরই জাতিগোষ্ঠীভুক্ত। আরেকজন সাহাবী খাব্বাব ইবনুল আরাত ফাতিমা বিনতে খাত্তাবের কাছে মাঝে মাঝে তাঁকে কুরআন শরীফ পড়াতে আসতেন। একদিন উমার তলোয়ার হাতে নিয়ে বেরিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর গুটিকয়েক সাহাবীর সন্ধানে। তিনি পূর্বাহ্নে জানতে পেরেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চল্লিশজন নারাী পুরুষ সহচরকে নিযে সাফা পর্বতের নিকট একটি বাড়ীতে সমবেত হয়েছেন। সেখানে তাঁর সাথে হামযো ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা), আবু বাক্র সিদ্দক (রা) ও আলী ইবনে আবু তালিব (রা) সহ সেইসব মুসলমান ছিলেন যারা আবিসিনিয়া না গিয়ে মক্কাতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়েছিলেন। নাঈম উমারের (রা) মুখোমুখী দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাচ্ছ উমার?”
উমার বললো, “আমি ঐ বিধর্মী মুহাম্মাদের সন্ধানে যাচ্ছি, যে কুরাইশদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, তাদেরকে বেকুফ সাব্যস্ত করেছে, তাদের ধর্মের নিন্দা করেছে এবং তাদের দেবদেবীকে গালি দিয়েছে। আমি তাকে হত্যা করবো।”
নাঈম তাঁকে বললেন, “উমার, তুমি নিশ্চয়ই আত্মপ্রবঞ্চিত হয়েছো। তুমি কি মনে কর যে, মুহাম্মাদকে হত্যা করার পর বনু আবদে মানাফ তোমাকে ছেড়ে দেবে এবং তুমি অবাধে বিচরণ করতে পারবে? তুমি বরং নিজের ঘর সামলাও।
উমার বললেন, “কেন, আমার গোষ্ঠীর কে কি করেছে?”
নাঈম বললেন, “তোমার ভগ্নিপতি ও চাচাতো ভাই সাঈদ ইবনে যায়িদ ইবনে আমর এবং তোমার বোন ফাতিমা। আল্লাহর শপথ, ওরা উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তারা মুহাম্মাদের ধর্মের অনুসরণ করে চলেছে। কাজেই পারলে আগে তাদেরকে সামলাও।”[২৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন বিপন্ন হবার আশংকা বোধ করে উমারের মনযোগ অন্যদিকে চালিত করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। এতে করে ফাতিমা ও তাঁর স্বামীর নির্যাতিত হবার সম্ভাবনা থাকলেও সেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাশংকার তুলনায় অনেক হালকা ব্যাপার।]
এ কথা শোনামাত্রই উমার বোন ও ভগ্নিপতির গৃহ অভিমুখে ছুটলেন। তখন সেখানে খাব্বাব ইবনুল আরাতও উপস্থিত। তাঁর কাছে পবিত্র কুরআনের অংশবিশেষ ছিল যা তিনি সাঈদ দম্পতিকে পড়াচ্ছিলেন। ঐ অংশে সূরা ত্বাহা লেখা ছিল। তাঁরা উমারের আগমন টের পেলেন। খাব্বাব তৎক্ষন্ৎ একটি ক্ষুদ্র কক্ষে আত্মগোপন করলেন। ফাতিমা কুরআন শরীফের অংশটুকু লুকিয়ে ফেললেন। উমার গৃহে প্রবেশের প্রক্কালে শুনছিলেন যে, খাব্বাব কুরআন পড়ে তাঁদের দু’জনকে শোনাচ্ছেন। তিনি প্রবেশ করেই বললেন, “তোমরা কি যেন পড়ছিলে শুনলাম।” সাঈদ ও ফাতিমা উভয়ে বললেন, “তুমি কিছুই শোননি।” উমার বরলেন, “আল্লাহর শপথ, আমি শুনেছি, তোমরা মুহাম্মাদের ধর্ম গ্রহণ করেছো এবং সেটাই অনুসরণ করে চলছো।” এ কথা বলেই ভগ্নিপতি সাঈদকে একটা চড় দিলেন। ফাতিমা উঠে এসে স্বামীকে তার প্রহার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে লাগলেন। উমার ফাতিমাকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, তিনি আহত হলেন।
উমারের এই বেপরোয়া আচরণ দেখে তারা উভয়ে বললেন,“হ্যাঁ, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আল্লাহ ও তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি। এখন আপনি যা খুশী করতে পারেন।” উমার তাঁর বোনের দেহে রক্ত দেখে নিজের এহেন আচরণে অনুতপ্ত হলেন।
তারপর অনুশোচনার সুরে বোনকে বললেন, আচ্ছা, তোমরা যে বইটা পড়ছিলে, সেটা আমাকে দাও তো। আমি একটু পড়ে দেখি মুহাম্মাদ কি বাণী প্রচার করে?” এখানে উল্লেখ্য যে, উমার লেখাপড়া জানতেন।
তাঁর বোন বললেন, “আমাদের আশংকা হয়, বইটা দিলে তুমি নষ্ট করে ফেলবে।”
উমার দেবদেবীর শপথ করে বললেন, “তুমি ভয় পেও না। আমি ওটা পড়ে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব।” একথা শুনে বোনের মনে এই মর্মে আশার সঞ্চার হলো যে, তিনি হয়তো ইসলাম গ্রহণ করবেন। তাই তিনি বললেন, “ভাইজান, আপনি মুশরিক হওয়ার কারনে অপবিত্র। অথচ এই বই স্পর্শ করতে হলে পবিত্রতা অর্জন করা প্রয়োজন।”[২৯.কুরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতার শর্ত সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, ফরয। আবার কারো কারো মতে ফরয নয়-মুস্তাহাব।]
উমার তৎক্ষনাৎ গিয়ে গোসল করে পবিত্র হয়ে আসলেন। ফাতিমা এবার কুরআন শরীফ দিলেন। খুলেই যে অংশটি তিনি দেখলেন তাতে ছিল সূরা ত্বাহা। এথম থেকে কিছুটা পড়েই বললেন, “কি সুন্দর কথা! কি মহান বানী!” আড়াল থেকে এ কথা শুনে খাব্বাব বেরিয়ে এসে বললেন, “ উমার মনে হয়, ্আল্লাহ তার নবীর দোয়া কবুল করে তোমাকে ইসলামের জন্য মনোনীত করেছেন। গতকাল তিনি দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম অথবা ইমার ইবনুল খাত্তাবের দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি কর।’ হে উমার, তুমি আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও, তুমি আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও!”
উমার তখন বললেন, “হে খাব্বাব, আমাকে মুহাম্মাদের সন্ধান দাও। আমি তাঁর কছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করি।” খাব্বাব বললেন, “তিনি সাখা পর্বতের নিকট একটা বাড়ীতে কিছুসংখ্যক সাহাবার সাথে অবস্থান করছেন।”
উমার তাঁর তলোয়ার কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের সন্ধানে চললেন। যথাস্থানে গিয়ে দরজায় করাঘাত করলেন। আওয়াজ শুনে একজন সাহাবা উঠে এসে জানালা দিয়ে তাঁকে দেখলেন। সেখলেন উমার তরবারী হাতে দাঁড়িয়ে। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, উমার দরজায় তরবারী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।” হামযা রাদিয়ল্লাহু তা’য়ালা আনহু বললেন, “তাঁকে আসতে দাও। যদি ভালো উদ্দেশ্যে এসে থাকে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো আর যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এসে থাকে তবে তাঁর তরবারী দিয়েই তাকে হত্যা করবো।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাকে আসতে দাও।” তিনি উমারকে ভেতরে যেতে অনুমতি দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে উমারের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং কক্ষের ভেতরে তাকে সাক্ষাত দান করলেন। তিনি উমারের পাজামার বাঁধনের জায়গা অথবা গলায় চাদরের দুই প্রান্ত যেখানে একত্রিত হয় সেখানে শক্তভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলেন। তারপর করলেন, “হে খাত্তাবের পুত্র, কি উদ্দেশ্যে এসছো? আল্লাহর শপথ, আল্লাহর তরফ থেকে তোমার উপর কোন কঠিন মুসিবত না আসা পর্যন্ত তুমি সংযত হবে বলে আমার হয় না।”
উমার বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনার জন্যই এসছি।”
একথা শোনামাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন জোরে ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাদের সবাই বুঝতে পারলো যে, উমার ইসলাম গ্রহণ করেছে। হামযার পরে উমারের ইসলাম গ্রহণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের মনোবল বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেল। তাঁরা নিশ্চিত হলেন যে, এই দু’জন এখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মুশরিকদের যুলুম-নির্যাতন প্রতিরোধ করতে পারবেন এবং তারা সবাই ওদের দু’জনের সহযোগিতায় মুসলমানদের শত্রুদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন। এরপর সাহাবাগণ সেই স্থান থেকে নিজ নিজ অবস্থানে চলে গেলেন।
উমার রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর সেই রাতেই চিন্তা করতে লাগলাম যে, মক্কাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে কট্রর দুশমন কে আছে। আমি তার কাছে যাবো এবং আমার ইসলাম গ্রহণের কথা তাকে জানাবো। আমি স্থির করলাম যে, আবু জাহলই বড় দুশমন। অতঃপর সকল হতেই আমি তার বাড়ীতে গিয়ে দরজায় করাঘাত করলাম। আবু জাহল বেরিয়ে আমার সামনে আসলো। সে বললে, “ভাগ্নে, তোমাকে খোশ আমদেদ জানাচ্ছি। [৩০.উমারের (রা) মাতা হানতামা বিনতে হিশাম আবু জাহলের বোন ছিলেন।]
কি মনে করে এসছো?” আমি বললাম, “আপনাকে জানাতে এসেছি যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মুহাম্মাদের প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর আনীত বিধান ও বাণীকে মেনে নিয়েছি।” এ কথা শোনামাত্র সে আমার মুখের ওপর এই বলে দরজা বন্ধ করে দিল, “আল্লাহ তোকে কলংকিত করুক, যে খবর তুই এনছিস তাকেও কলংকিত করুক।”
চুক্তিনামার বিবরণ
কুরাইশরা দেখলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ একটা নিরাপদ ও নিরুপদ্রব স্থানে আশ্রয় পেয়েছে এবং নাজাশী তাঁর কাছে আশ্রয়প্রার্থীদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা দেখলো, উমার ইসলাম গ্রহণ করেছে।
ফলে উমার ও হামযার মত লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচরদের দলভুক্ত হয়েছে এবং ইসলাম মক্কার পার্শ্ববর্তী গোত্রসমূহের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এসব দেশে তারা পুনরায় মিলিত লো এবং এই মর্মে একটা চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করাার সিদ্ধান্ত নিলো যে, বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রের সাথে অবশিষ্ট কুরাইশগণ এখন থেকে আর কোন বিয়ে শাদী ও বেচাকেনা করবে না।
একটি সম্মেলন আহ্বান করে তারা এই চুক্তিনামা সম্পাদন ও স্বাক্ষর করলো। এরপর চুক্তিনামাটি কা’বা শরীফের ভেতরে ঝুলিয়ে রাখলো, যাতে তাদের মনে ওটার গুরুত্ব ও প্রভাব বেশী হয়।
মানসূর ইবনে ইকরামা এই চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদদোয়ায় তার কয়েকটি আঙ্গুল অসাড় হয়ে যায়।
এ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রের লোকগণ আবু তালিবের শরণাপন্ন হয়। তারা সবাই তার কাছে সমবেত হলো এবং সবাই আবু তালিবের সাথে তার গিরিবর্তে প্রবেশ করলো। অপরদিকে বনু হাশিম গোত্র থেকে আবু লাহাব বেরিয়ে গিয়ে বৈরী কুরাইশদের সাথে মিলিত হলো এবং তাদের পক্ষ সমর্থন করলো। সে বলতো. “মুহাম্মাদ আমাকে এমন সব বিষয় বলে যা আমি দেখতে পাইনে। সে বলে মৃত্যুর পরে আবার জীবন হবে। একথা বিশ্বাস করলে আমার হাতে আর কি থাকলো?” এরপর সে তার দ্ইু হাতে ফুঁক দেয় আর বলে, “তোমাদের উভয়ের ধ্বংস সাধিত হোক। (অর্থাৎ উভয় হাতের ) মুহাম্মাদ যা বলে তার কোনটাই আমি তোমাদের ক্ষেত্রে দেখি না।”(হাতে আমলনামা আসার ব্যাপারে নিয়ে উপহাস করাই সম্ভবতঃ তার উদ্দেশ্য।(অনুবাদক) এই এসঙ্গে আল্লাহ এই আয়াত নযিল করেন :
[আরবী *************]
“আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হোক এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক”
বনু আবদুল মুত্তালিব ও বনু হাশিম গোত্রদ্বয়ের গিরিবর্তে অবরোধ জীবন যাপন চলে দুই বা তিন বছর। এই সময় তারা অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করেন। দুই একজন সহৃদয় কুরাইশ আত্মীয়ের গোপন সহযোগিতা ছাড়া কিছুই তাদের কাছে পৌঁছতো না।
[৩১. কারো কারো মতে সূরা লাহাবের শানে নুযুল এইরূপ: আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘনিষ্ঠতম আত্মীয় স্বজনের নিকট ইসলামের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দেন তখন একদিন তিনি সাফা পর্বতে আরেহণ করে সমগ্র মক্কাবাসীকে ডাক দেন। সবাই সমবেত হলে তিনি বললেন, “আমি যদি তোমাদের বলি যে, পর্বতের অপর পাশে সমভূমিতে একটি সেনাদল তোমাদের ওপর হামলা করার জন্য ওত পেতে আছে, তাহলে তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে?” তখন সবাই এক বাক্যে বললো, “তোমাকে তো কখনো মিথ্যা কথা বলতে দেখিনি।” তখন তিনি বললেন, “আমি তোমাদের হুঁশিয়ার করছি এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে।” এই সময় আবু লাহাব বলে, “তুই মর! এই জন্য আমাদের ডেকেছিস?” এর জবাবে সূরা লাহাব নাযিল হয়।]
রাসূলুল্লাহর (সা) উপর কুরাইশদের নির্যাতন
আল্লাহর বিশেষ রক্ষা ব্যবস্থার কারণে আপন চাচা বনু আবদুল মুত্তালিব ও বনু হাশিম গোত্রের কার্যকর প্রতিরোধের মুখে শারীরিক কোন আক্রমন চালাতে পারেনি। তাই তারা অনন্যোপায় হয়ে তাঁকে নিন্দা, কটাক্ষ, উপহাস বিদ্রƒপ করা এবং তাঁর সএথ ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়ার পথ বেছে নেয়। কুরআন কুরাইশদের এ জাতীয় ক্রিয়াকলাপ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতামূলক আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা ও বিশ্লেষণসহ নাযিল হতে থাকে। এ জাতীয় আচরণকারীদের কারো কারো নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদের নাম উল্লেখ না করে কাফিরদের সম্পর্কিত সাধারণ বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কুরাইশদের মধ্য থেকে এ জাতীয় যেসব লোকের নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আবু লাহাব ইবনে আবদুল মুত্তালিব অন্যতম। তার স্ত্রী উম্মে জামীল বিনতে হারব ইবনে ইমাইয়কে “হাম্মালাতার হাতাব” অর্থাৎ কাঠ বহনকারিণী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা সে কাঁটা সংগ্রহ করে এনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যাতায়াতের পথে ছড়িয়ে রাখতো। এজন্যই আল্লাহ তাদের উভয়ের সম্পর্কে এই সূরা নাযিল করেন :
[আরবী *************]
“ভেঙ্গে গিয়েছে আবু লাহাবের দুই হাত, আর সে ব্যর্থ হয়েছে। তার সম্পদ ও অর্জিত কোন কিছুই তার কাজে আসেনি। অবশ্যই সে শিখাবিশিষ্ট আগুনে নিক্ষিপ্ত এবং তার সাথে তার স্ত্রীও- যে কাষ্ঠ বহনকারিনী। তার গলায় থাকবে খেজুর ছালের রশি।”
ইবনে ইসহাক বলেন, আমি শুনেছি, উম্মে জামীল যখন তার ও তার স্বামীর ব্যাপারে নাযিল হওয়া কুরআনের এই সূরার কথা শনলো, তখন হাতে একটা পাথর মুষ্টিবদ্ধ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের নিকট উপস্থিত হলো। এই সময় তিনি আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়ারøাহ তা’য়ালা আনহুর সঙ্গে কা’বা শরীফের পাশে মসজিদে হারামে বসে ছিলেন। সে সেখানে তাঁদের দু’জনের কাছে এসে দাঁড়াতেই আল্লাহ তা’য়ালা তার চোখ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অদৃশ্য করে দিলেন। ফলে সে আবু বাক্র ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলো না। সে বললো, “হে আবু বাক্র, তোমার সঙ্গী কোথায়? আমি শুনেছি, সে আমার নিন্দা করে। আল্লাহর শপথ, তাকে পেলে আমি এই পাথর তার মুখের উপর ছুড়ে মারতাম।” এ কথা বলে সে চলে গেল। আবু বাক্র (রা) বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি মনে করেন যে, সে আপনাকে দেখতে পেয়েছে?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে আমাকে দেখতে পায়নি। আল্লাহ আমাকে দেখবার শক্তি তার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।”
আর উমাইয়া ইবনে খালাফ ইবনে ওয়াহাব ইবনে হুযাফা ইবনে জুমাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলেই উচ্চস্বরে গালাগালি ও অস্ফুট স্বরে নিন্দা করতো। আল্লাহ তার সম্পর্কে সুরা হুমাযা নাযিল করেন :
[আরবী *************]
‘সামনাসামনি কটু কথা বলতে, অসাক্ষাতে নিন্দা করতে এবং ধনসম্পদ উপার্জন করে তা গুনে গুনে রাখতে অভ্যস্ত এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অনিবার্য ধ্বংস। সে মনে করে, তার সম্পদ তাকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে। কক্ষণো নয়, সে অবশ্যই চূর্ণবিচুর্ণকারী স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে। আর সেই চুর্ণ বিচূর্ণকারী স্থানটা কি, তাকি তুমি জান? সেটা আল্লাহর আগুন, যাকে উত্তপ্ত করা হয়েছে, যা অন্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয় তা তাদের ওপর ঢেকে বন্ধ করে দেয়া হবে, তা উঁচু উঁচু স্তম্ভে পরিবেষ্টিত থাকবে।”
আর একজন ছিল ’আস ইবনে ওয়ায়েল সাহামী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম সাহাবী খাব্বাব ইবনুল আরাত একজন কর্মকার ছিলেন। তিনি তরবারী বিক্রি করেছিলেন। এই সুবাদে ’আসের নিকট তার বেশ কিছু টাকা পাওনা ছিল। তিনি সেই টাকার তাগাদা দিতে গেলে ’আস বললো, “হে খাব্বাব, তোমাদের লোক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বাস করে যে, জান্নাতে যারা যাবে তারা যত খুশী সোনা, রূপা, পোশাক ও চাকর নফর পাবে, তাই না?” খাব্বাব বললেন, ‘হ্যাঁ।’ ’আস বললো, “তাহলে হে খব্বাব, আমাকে কিয়ামাত পর্যস্ত সময় দাও। আমি জান্নাতে গিয়ে তোমার পাওনা পরিশোধ করে দেবো। হে খাব্বাব, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তুমি ও তোমার সাথী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে আমার চেয়ে অগ্রগন্য হবে না এবং আমার চেয়ে এবং আমার চেয়ে বেশী সৌভাগ্যশালীও হবে না।” এ প্রেক্ষিতে ’আস সম্পের্কে আল্লাহ নাযিল করেন-
[আরবী *************]
“তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছো যে আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করে এবং বলে যে, আমাকে তো ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দিয়ে সমৃদ্ধ করা হতেই থাকবে। সে কি গায়েব জেনে ফেলেছে, কিংবা করুণাময় আল্লাহর কাছ থেকে কোন প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছে? কক্ষণো নয়! সে যা বলে আমি লিখে রাখবো এবং তাঁর শাস্তি আরো বাড়িয়ে দেবো? যে সন্তান ও ধন সম্পদের কথা সে বলে, তা শেষ পর্যন্ত আমারই অধিকারভুক্ত হবে এবং সে একাকীই আমার কাছে হাজির হবে।” (সূরা মারিয়াম)
অপর এক রেওয়ায়েত থেকে জানা যায় যে, আবু জাহল ইবন হিশাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করে বলে, “হে মুহাম্মাদ, আমাদের দেবদেবীকে গালাগালি করা তোমাকে বন্ধ করতে হবে। নচেত তোমার খোদাকে গাল দেবো।” এ প্রসঙ্গে আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন :
[আরবী *************]
“ওদের দেবদেবীকে তোমরা গাল দিও না। তাহলে ওরা শত্রুতা ও অজ্ঞতার কারণে আল্লাহকে গাল দেবে।” (আল আনয়াম)
নাদার ইবনে হারেস ইবনে কালাদা ইবনে আবদে মানাফ ইবনে আবদুদ্ দার ইবনে কুসাই ছিল এমনি আর একজন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বৈঠকে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দিতেন, কুরাইন তিলাওয়াত করতেন এবং কুরাইশদেরকে অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর ইতিহাস বর্ণনা করে তাদের অনুরূপ পরিণতির শিকার হওয়া সম্পর্কে সাবধান করে দিতেন এবং ঐ বৈঠকের শ্রোতদের কাছে পারস্যের বীর রুস্তম ও ইসফিন্দিয়ারের কাহিনী বলতো। তারপর সে বলতো, “মুহাম্মাদ আমার চেয়ে ভাল কাহিনী শোনাতে পারে না। মুহাম্মাদের কাহিনীগুলো তো প্রচীন যুগের কিচ্ছা কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। ওগুলো মুহাম্মাদ যেমন লিখে রেখেছে, তেমনি আমিও লিখে রেখেছি।” তার সম্পর্কে আল্লাহ নযিল করেন,
[আরবী *************]
“তারা বলেছে : এসব প্রচীন যুগের কিচ্ছা কাহিনী যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখিয়ে নিয়েছে। এগুলো তাকে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে শেখানো হয়। হে নবী, তুমি বল : এ বাণী তিনিই নাযিল করেছেন যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সকল গুপ্ত রহস্য জানেন। বস্তÍতঃ তিনি ক্ষমাশীল করুণাময়।” (আল কুরআন)
[আরবী *************]
“অবিশ্বাসীকে যখনই আমার আয়াত পড়ে শোনানো হয় অমনি সে বলেঃ এসব তো প্রাচীন কালের কিচ্ছা কাহিনী মাত্র।” (আল কালাম)
আরো নাযিল হয়,
[আরবী *************]
“এমন প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্যে ধ্বংস যার সামনে পঠিত আল্লাহর আয়াতগুলো শুনেও সে দাম্ভিকতার ওপর শক্ত হয়ে দাঁড়ায় এবং এমন ভান করে যেন শুনেনি। সুতরাং তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ জানিয়ে দাও।” (আল জাসিয়া)
আর এক ব্যক্তি হলো আখনাস ইবনে শুরাইক ইবনে আমর ইবনে ওয়াহাব সাকাফী। সে ছিল একজন গণ্যমান্য লোক। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নানা উপায়ে লাঞ্ছনা দিত এবং অকথ্য কথা বলতো। আল্লাহ তার সম্পর্কে সূরা আলা কালামে বলেন,
[আরবী *************]
“এমন ব্যক্তির আনুগত্য করো না যে অত্যধিক কসম খায়, যার কোন গুরুত্ব নেই, যে অতিমাত্রায় গালাগাল করে ও চোগলখুরী করে বেড়ায়, যে ভাল কাজে বাধা দেয়, সীমালংঘন করে, পাপ কাজে লিপ্ত থাকে, যে অতিমাত্রায় দুষ্কৃতিকারী, অত্যাচারী এবং সর্বোপরি যে পরিচয়হীন।”
ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা বলেছিল, “কুরাইশ গোত্রে আমার মত সরদার এবং সাকীফ গোত্রে আবু মাস’উদ আমর ইবনে উমাইর সাকাফী থাকতে ওহী নাযিল হলো কিনা মুহাম্মাদের ওপর আমরা দুই শহরের দুই প্রধান ব্যক্তিত্ব কিনা বাদ পড়ে গেলাম।”
এর জবাবে আল্লাহ নাযিল করেন সূরা যুখরুফের আয়াত,
[আরবী *************]
“তারা বলেছে : দুই শহরের[৩২. অর্থাৎ মক্কা ও তায়েফ] কোন একজন প্রধান ব্যক্তির ওপর কুরআন নাযিল হলেই ভাল হতো। তোমার প্রভুর অনুগ্রহ ওরাই বণ্টন করে থাকে? পার্থিব জীবনে তাদের জীবিকা আমিই তাদের মধ্যে বণ্টন করেছি এবং তাদের কিছু সংখ্যক লোককে অপর কিছুসংখ্যক লোকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি, যার ফলে একে অপরকে কাজে লাগাতে পারে। আসলে তারা যা সংগ্রহ করছে তার চেয়ে তোমার প্রভুর অনুগ্রহই উৎকৃষ্ট।”
উকবা ইবনে আবু মুয়াইত ও উবাই খালফ উভয়ে পরস্পরের অন্তরঙ্গ সহচর ছিল। একবার উকবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে বসেছিল এবং তাঁর কথা শুনেছিল। উবাই এখবর জানতে পেরে উকবার কাছে এসে বললো, “তুমি মুহাম্মাদের মজলিসে বসেছো এবং তার কথা শুনেছো তা কি আমি শুনিনি মনে করেছো?” অতঃপর সে কঠিন শপথ বাক্য উচ্চারণ করে বললো, “তুমি যদি মুহাম্মাদের মজলিসে বসে থাক এবং তার কথা শুনে থাক আর তার মুুখে থু থু নিক্ষেপ না করো তবে তোমার মুখ দেখা আমার জন্য হারাম হয়ে যাবে।” আল্লাহর অভিসম্পাত উকবার উপর! হতভাগা সত্যি সত্যি আল্লাহর দুশমন উবাইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করলো।
এ সম্পর্কে আল্লাহ নাযিল করলেন,
[আরবী *************]
“যেদিন যালিম নিজের আঙ্গুল কামড়ে অনুশোনা করবে এবং ভাববে, হায়! আমি যদি রাসূলের সহযোগিতা করতাম। হায়! আমি যদি অমুককে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। সে তো আমাকে বিপথগামী করে দিয়েছে আমার কাছে পথনির্দেশ আসার পর। বস্তুতঃ শয়তান মানুষকে হেয় করতে খুবই সিদ্ধহস্ত।”
একদিন উবাই ইবনে খাল্ফ একখানা জীর্ণপ্রায় পুরনো হাড় নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেল এবং সে বললো, “হে মুহাম্মাদ, তুমি কি বিশ্বাস কর যে, আল্লাহ এই ধ্বংসপ্রায় হাড়কে পুনর্জীবিত করবেন? অতঃপর সে ওটা নিজের হাতের ওপর গুড়ো করে বাতাসে ফুঁক দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে উড়িয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “ হ্যাঁ, আমি বলি আল্লাহ এ হাড়কে এবং তোমাকে জীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর পুনর্জীবিত করবেন। অতঃপর তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” এ প্রসঙ্গে আল্লাহ আয়াত নযিল করেন করলেন,
[আরবী *************]
“সে আমাকে দিয়ে দৃষ্টান্ত দেয় আর নিজের সৃষ্টির ব্যাপারটা ভুলে যায়। সে বলে, ‘এই অস্থিগুলো যখন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে, তখন কে এগুলোকে আবার জীবিত করবে?’ তুমি তাকে বল, ‘এগুলিকে তিনি পুনর্জীবিত কবেন যিনি প্রথমবার এগুলিকে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি সৃষ্টির সব কাজই জানেন। তিনিই সেই আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্য শ্যামল সবুজ গাছ হতে আগুন উৎপন্ন করেছেন আর তা দিয়ে তোমরা নিজেদের চুলো জ্বালাও।” (ইয়াসীন)
আর একদিন যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বার তাওয়াফ করছিলেন, তখন আসওয়াদ ইবনুল মুত্তালিব ইবনে খালফ ও ’আস ইবনে ওয়ায়েল সাহামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে ধরলো। তারা সবাই ছিল নিজ নিজ গোত্রের প্রবীণ ব্যক্তি। তারা বললো, “হে মুহাম্মাদ. এসো আমরা তোমার আল্লাহর পূজা করি আর তুমি আমাদের দেব-দেবীর পূজা কর। এভাবে আমরা পরস্পরের কাজে শরীক হয়ে যাই। যদি তোমার মাবুদ আমাদের দেব-দেবীর চেয়ে ভাল হয়ে থাকে তা হলে আমরা তার পুজার অংশ হয়ে গেলাম। আর যদি আমাদের দেবতা তোমার খোদার চেয়ে ভাল হয়ে থাকে তাহলে তুমিও তার অংশ পেয়ে গেলে।”এর জবাবে আল্লাহ নযিল করলেন,
[আরবী *************]
“হে নবী, তুমি বল : হে কাফিরগণ, তোমরা যার ইবাদাত কর আমি তার ইবাদাত করি না। আর আমি যাঁর ইবাদাত করি তোমরা তাঁর ইবাদাত কর না। আমি তার ইবাদাত করবো না যার ইবাদাত তোমারা করছো, আর আমি যাঁর ইবাদাত করি তোমরাও তার ইবাদাত করবে না। তোমাদের জন্য তোমাদের দীন আর আমার জন্য আমার দীন।” (আল কাফিরুন)
আল্লাহ্ কাফিরদেকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য যাক্কুম বৃক্ষের উল্লেখ করলে আবু জাহল ইবনে হিশাম বললো, “হে কুরাইশগণ, মুহাম্মাদ যে যাক্কুম বৃক্ষের ভয় দেখাচ্ছে, সেটা কি জান?” তারা বললো, ‘না’ তখন সে বললো, “মদীনার খেজুর যা মাখন সহকারে রাখা হয়। আল্লাহর শপথ করে বলছি, মদীনায় যদি বসবাস করার সুযোগ পাই তাহলে তৃপ্তি সহকারে ওটা খাবো।” এই প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করলেন,
[আরবী *************]
“যাক্কুম গাছ গুনাহগারের খাদ্য হবে, তেলের গাদের মত পেটের ভেতরে এমনভাবে উথলে উঠবে যেমন ফুটন্ত পানি টগবগ করে উথলে ওঠে।” (আদদুখান)
অর্থাৎ যাক্কুম সম্পর্কে আবু জাহল যা বলে আসলে তা নয়।
একবার ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করেন। তিনি ওয়ালীদের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন। এই সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতুম সেখানে গিয়ে হাজির হলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আলাপ শুরু করে দিলেন এবং তাঁকে এ কুরআন পড়ে শোনাতে বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর এ আগমন ও কথাবার্তা বিরক্তিকর বলে মনে হলো। কারণ তিনি ওয়ালীদের সাথে কথাবার্তায় তেমন মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। ফলে তার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে তিনি যে আশা পোষণ করছিলেন সেটা প- হয়ে যাবার উপক্রম হলো। আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমের কথাবার্তা অতিমাত্রায় বেড়ে যেতে আরম্ভ করেছে দেখে তিনি বিরক্তিভরে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তাঁকে কোন গুরুত্ব দিলেন না। তাই আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে নাযিল করলেন,
[আরবী *************]
“সে (রাসূল) ভ্রূ কুঁচকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল এ কারণে যে, তার কাছে অন্ধ লোকটি এসছিল। তুমি জান, সে হয়তো শুধরে যেত কিংবা উপদেশ গ্রহণ করতো এবং উপদেশ তার জন্য কল্যানকর হতো। পক্ষান্তরে যে লোক অনাগ্রহী তার প্রতি তুমি বেশ মনোযোগ দিচ্ছ। অথচ সে শুধরে না গেলেই বা তোমার কি আসে যায় আসে? আর যে লোক তোমার নিকট দৌড়ে এলো এবং যে পরিণাম সম্পর্কে ভয় করছিলো তুমি যে লোক তোমার নিকট দৌড়ে এলো এবং যে পরিণাম সম্পর্কে ভয় করছিলো তুমি তার প্রতি অনীহা দেখাচ্ছ। কক্ষণো নয়, এটা একটা উপদেশ-যার ইচ্ছা গ্রহণ করবে। সম্মানিত গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ, যা উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ও পবিত্র।” (সুরা ’আবাসা)
অর্থাৎ আল্লাহ বলেন : আমি তোমাকে সকলের জন্য সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী করে পঠিয়েছি এবং তোমাকে নির্দিষ্ট কারো জন্য পাঠাইনি। অতএব যে যা চেয়েছে তা থেকে তাকে বঞ্চিত করো না। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছুক নয় তাঁর জন্য লালায়িত হয়ো না।
যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর বাড়ীর চৌহদ্দিতেই কষ্ট দিত তারা হলো আবু লাহাব, হাকাম ইবনে আবুল ’আস, উকবা ইবনে আবু মুয়াইত, আদী ইবনে হামরা আস্ সাকাফী ও ইবসুল আসদা আল-হাযালী। এরা সবাই ছিল তাঁর প্রতিবেশী। হাকাম ইবনে আবুল ’আস ছাড়া এদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। বর্ণিত আছে, এসব লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায পড়তেন তখন তাঁর ওপর ছাগলের নাড়ীভুড়ি ছুড়ে মারতো। কেউ কেউ তাঁর বাড়ীতে রান্নার জন্য চড়ানো হাড়িতেও ঐ নাড়ীভুড়ি নিক্ষেপ করতো। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাধ্য হয়ে একটা দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে নামায পড়তে লাগলেন। তারা তাঁর শরীরে নাড়িভুড়ি নিক্ষেপ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা তা একটা লাঠির মাথায় উঠিয়ে বাড়ীর বাইরে যেতেন এবং সংশ্লিষ্ঠ লোকের ঘরের দরজায় গিয়ে বলতেন, “হে আবদে মানাফের জাতিগোষ্ঠি, এটা তোমাদের কোন ধরনের প্রতিবেশীসুলভ আচরণ? তারপর তিনি সেই নাড়ীভুড়ি রাস্তায় ফেলে দিতেন।”
আবিসিনিয় থেকে মক্কার লোকদের ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে মুহাজিরদের প্রত্যাবর্তন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব সাহাবী আবিসিনিয়ায় হিজরাত করেছিলেন, তাঁরা শুনলেন যে, মক্কাবাসীরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। একথা শুনে তাঁরা মক্কা অভিমুখে রওনা দিলেন। মক্কা নগরীর কাছাকাছি পৌঁছলে তাঁরা জানতে পারলেন যে, মক্কাবাসীরা ইসলাম গ্রহণ করেছে বলে যে কথা তাঁরা শুনেছেন তা ঠিক নয়। ফলে মক্কাবাসীদের কারো সহযোগিতা নিয়ে অথবা গোপনে ছাড়া কেউই নগরীতে প্রবেশ করলেন না। সর্বমোট ৩৩জন সাহাবী আবিসিনিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। উসমান ইবনে মাযউন ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার আশ্রয়ে এবং আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদ ইবু তালিব ও তার মাতা রাবাহ বিনতে আবদুল মুত্তালিবের আশ্রয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন।
চুক্তি বাতিল হওয়ার কাহিনী
বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবকে গিরিবর্তে অবরোধ করে রাখার লক্ষ্যে কুরাইশগণ যে চুক্তিনমায় সই করে, কুরাইশদের একটি দল অবশেষে তা বাতিল করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী কৃতিত্ব হিশাম ইবনে আমরের। কারণ, তিনি ছিলেন নাদলা ইবনে হিশাম ইবনে আবদে মানাফের মা-শরীক সৎভাই। হিশাম অবরুদ্ধ বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবের কাছে আসতেন ও তাঁদেরকে উটের পিঠে করে এনে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতেন। গিরিবর্তের প্রবেশ মুখে এস নিজের মাথা থেকে শিরস্ত্রাণ খুলে তা দিয়ে এক পাশে সজোরে আঘাত করতেন। তারপর গিরিবর্তের ভেতরে প্রবেশ করতেন। পুনরায় আসতেন এবং পোশাক দিয়ে যেতেন। এভাবে বিভিন্ন সময় দরকারী জিনিসপত্র সরবরাহ করতেন।
একদিন যুহাইর ইবনে আবু উমাইয়া ইবনে মুগীরার কাছে গেলেন। তিনি ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের কন্যা আতিকার ছেলে। গিয়ে বললেন, “হে যুহাইর, তুমি নিজে তো খেয়ে পরে ও স্ত্রী পরিজন নিয়ে দিব্যি সুখে আছ, অথচ তোমার মামারা কোথায় কিভাবে আছেন তাও তোমার জানা আছে। তারা বয়কট অবস্থায় রয়েছেন। কেউ তাদের সাথে বেচাকেনা করে না, বিয়েশাদী করে না। তুমি কি করে এ অবস্থ মেনে নিয়েছো? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, ওরা যদি আবুল হাকাম ইবনে হিশামের (আবু জাহল) মামা হতো, আর তুমি যদি তাদেরকে এভাবে বয়কটকরতে তাকে অনুরোধ করতে, তাহলে সে কখ্খনো তোমার অনুরোধ রক্ষা করতো না।” যুহাইর বললো. “ব্যস,হয়েছে। আর বলতে হবে না। শোনো হিশাম, আমি একা কি করতে পারি? আমার সাথে যদি আর একজন লোক হতো তা হলে এই চুক্তি বাতিল করার উদ্যেগ নিতাম।” হিশাম কললেন, “লোক তো একজন পেয়েছি।” যুহাইর বললো, “কে তিনি? ” হিশাম বললো, “আমি নিজে।” যুহাইর বললো, “আর একজন লোক খুঁজে বের কর।”
হিশাম মুতয়িম ইবনে ’আদীর কাছে গিয়ে তাকে বললো, “হে মুতয়িম, বনু আবদ মানাফের দুইজন লোক যদি অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়, তাহলে তুমি কি কুরাইশদের মন রক্ষা করার জন্য সে দৃশ্য নীরবে দেখবে? কুরাইশদেরকে যদি এভাবে সুযোগ দিতে থাক তাহলে তারা তোমাদের দিকেও দ্রুত ধেয়ে আসবে।” মুতয়িম বললো, “বেশ তো বুঝলাম। আমি একা কি করতে পারি?” হিশাম বললো, “তুমি তো আর একজন লোক পেয়ে গেছো।” মুতয়িম বললো, “সে কে?” হিশাম বললো, “আমি নিজেই সে ব্যক্তি।” মুতয়িম বললো, “তৃতীয়ি একজন লোক আমাদের খুঁজে বের করা দরকার।” হিশাম বললো, “তৃতীয় একজন লোকও পেয়ে গেছি।” মুতয়িম বললো, “কে সে?” হিশাম বললো, “যুহাইর ইবনে আবু উমাইয়া।” মুতয়িম বললো, “চতুর্থ আরেকজন খুঁজে বের কর।”
তখন সে বুখতারী ইবনে হিশামের কাছে গেল। তার কাছে গিয়ে সে মুতয়িমকে যা বলেছিল তারই পুনরাবৃত্তি করলো। আবুল বুখতারী বললো, “আমরা যদি এটা করতে যাই তাহলে আমাদের সাহায্যকারী কেউ হবে কি?। ” সে বললো, “হ্যাঁ।” সে বললো, “কে?” হিশাম বললো, “যুহাইর, মুতয়িম এবং আমি নিজে।” আবু বুখতারী বললো, “পঞ্চম আরেকজন লোক খুঁজে বের কর।”
তখন সে যাম’আ ইবনে আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিবের কাছে গেল। সে অবরুদ্ধদের সাথে তার আত্মীয়তা ও অধিকারের উল্লেখ করে তার সাথে বিষয়টা আলোচনা করলো। যাম’আ বললো, “তুমি যে কাজে আমাকে আহ্বান করছো আর কেউ কি তার পক্ষে আছে?” সে বললো, “হ্যাঁ।” অতঃপর সে তাকে সবার সাম বললো।
এরপর মক্কার উচ্চভূমিত হাজ্জন নামক পর্বতের পাদদেশে তারা সমবেত হবার একটা তারিখ নির্ধারণ করলো। যথাসময়ে তারা সেখানে জমায়েত হলো এবং চুক্তিনামাটা বাতিল করানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল। যুহাইর বললো, “আমি নিজে এ ব্যাপারে অগ্রণী হয়ে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করার দায়িত্ব নিলাম।”
পরদিন সকালে তারা সবাই কুরাইশদের সভাস্থলগুলোতে গিয়ে জড়ো হলো। যুহাইর জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে উপস্থিত হলো এবং সাতবার কা’বার তাওয়াফ করে সমবেত জনতার কাছে এসে বললো, “হে মক্কাবাসী, আমরা খাবো পরবো, আর বনু হাশিম অবরুদ্ধ অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাবে, কেউ তাদের সাথে কেনাবেচা করতে পারবে না-এটা কি করে চলতে পারে? আল্লাহর শপথ, এই সম্পর্ক-বিনাশী ও যুলুমের প্ররোচনা দানকারী চুক্তিনামা ছিঁড়ে ফেলার আগে আমি ক্ষান্ত হবো না।”
মসজিদে হারামের এক কোণায় উপবিষ্ট আবু জাহল বলে উঠলো, “তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহর শপথ, ওটা ছেঁড়া হবে না।” তখন যাম’আ ইবনে আসওয়াদ বললো “আল্লাহর শপথ, তুমি নিজে সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। এই চুক্তিনামা যখন লেখা হয়, তখন আমরা ঐ জিনিসটির ব্যাপারে সম্মত ছিলাম না।” আবুল বুখতারী বললো, “যাম’আ ঠিক বলেছে। এই চুক্তিতে যা লেখা হয়েছে আমরা তা মানি না কিংবা স্বীকারও করি না।”মুতয়িম ইবনে আদী বললো.“তোমরা দু’জন ঠিক বলেছো। এর বিপরীত কথা যে বলে সে মিথ্যুক। আল্লাহর কাছে আমরা এই চুক্তির সাথে আমাদের সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি এবং এতে যা লেখা হয়েছে তা অগ্রাহ্য করছি।” হিশাম ইবনে আমরও অনুরূপ কথা বললো। সব শুনে আবু জাহল বললো, “ব্যাপারটা রাতের অন্ধকারে স্থিরীকৃত হয়েছে এবং এ সম্পর্কে অন্য কোথাও পরামর্শ করা হয়েছে। ” আবু জাহল যখন একথা বলছিল তখন আবু তালিব মসজিদের এক কোণে কসে ছিলেন। মুতয়িম চুক্তি নামাটা ছিঁড়ে ফেলার জন্য এগিয়ে গেলো। কিন্তু ওটা হাতে নিয়ে দেখলো একমাত্র “বিসমিকা আল্লাহুম্মা” ( হে আল্লাহ তোমার নামে) এই শব্দটি ছাড়া সমগ্র চুক্তিনামাটা উই পোকায় খেয়ে ফেলেছে।
চুক্তিনামার লেখক মানসূর ইবসে ইকরামের হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল বলে কথিত আছে।
ইরাশ গোত্রের এক ব্যক্তির আবু জাহলের নিকট উট বিক্রির ঘটনা
ইবনে ইসহাক বলেন, আবদুল মালিক ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবু সুফিয়ান সাকাফী যিনি প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন, আমাকে জানিয়েছেন :
ইরাশ গোত্রের এক ব্যক্তি তার একটা উট নিয়ে একবার মক্কায় আসে। আবু জাহল তার কাছ থেকে উটটা খরিদ করে নেয়। কিন্তু তার দাম নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে।
ইরাশী লোকটা অনন্যোপায় হয়ে কুরাইশদের একটি সভায় গিয়ে হাজির হয়। সেখানে উপস্থিত সবাইকে সম্বোধন করে সে বলে, “হে কুরাইশগণ, আবুল হাকাম ইবনে হিশামের কাছ থেকে আমর পাওনা আপনারা কেউ কি আদায় করে দিতে পারেন?
দেখুন, আমি একজন বহিরাগত পথিক। আমাকে দুর্বল পেয়ে সে আমার পাওনা দিতে গড়িমসি করছে।” এই সময় মসজিদের একপাশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে ছিলেন। উপস্থিত কুরইশগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখিয়ে বললো, “ঐ যে লোকটা বসে আছে দেখছো, তার কাছে গিয়ে বল। সে তোমার পাওনা আদায় করে দেবে।” আসলে তারা বিদ্রƒপাচ্ছলেই কথাটা বলেছিল। আবু জাহল ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যকার বৈরী সম্পর্কের কথা তাদের অজানা ছিল না।
উট বিক্রেতা ইরাশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে হাজির হলো। তাঁকে বললো, “হে আল্লাহর বান্দা, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম তার দাপট দেখিয়ে আমার পাওনা নিয়ে টালবাহানা করছে। আমি একজন বহিরাগত পথিক। আমি এই লোকগুলির কাছে জিজ্ঞেস করলাম আমার হক কে আদায় করে দিতে পারে? তারা সবাই আপনাকে দেখিয়ে দিল। আপনি তার কাছ থেকে আমার পাওনা আদায় করে দিন। আল্লাহ আপনাকে রহমত করবেন।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমার সাথে এসো।” এই বলে তিনি তাকে সাথে নিয়ে চললেন। কুরাইশরা তাঁকে ঐ লোকটা সাথে যেতে দেখে এক ব্যক্তিকে পেছনে পেছনে পাঠিয়ে দিয়ে বললো, “যাও, দেখে এসো. মুহাম্মাদ (সা) কি করে।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু জাহলের বাড়ী চলে গেলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি দরজায় করাঘাত করলেন। সে ভেতরে থেকে বললো, “কে?” তিনি বললেন, “আমি মুহাম্মাদ, একটু বেরিয়ে এসো!” সে তখনই বেরিয়ে এলো। ভয়ে তার প্রাণ বেরিয়ে যাবার উপক্রম এবং চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বরলেন, “এই ব্যক্তিকে তার পাওনা দিয়ে দাও।” সে তৎক্ষনাৎ বললো, “আচ্ছা একটু অপেক্ষা কর, তার পাওনা দিয়ে দিচ্ছি।” এই বলে সে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে উট বিক্রেতাকে তার পাওনা দিয়ে দিল।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। উট বিক্রেতাকে বললেন, “এবার তুমি তোমার কাজে ফিরে যাও।” সে কুরাইশদের সেই সভায় গিয়ে হাজির হলো এবং উপস্থিত লোকদেরকে বললো, “আল্লাহ তাঁকে উত্তম পুরষ্কার দিন। তিনি আমাকে আমার পাওনা আদায় করে দিয়েছেন।” আর যে ব্যক্তিকে তারা পেছনে পেছনে পাঠিয়েছিল তাকে বললে,“এই, তুমি কি দেখলে?” সে বললো, “সে এক আশ্চর্য কান্ড! তাকে কিছুই করতে হয়নি। যেয়ে শুধু দরজায় করাঘাত করেছে, আর অমনি সে যেন আতংকিত হয়ে বেরিয়ে আসলো। সে তাকে বললো, এই ব্যক্তির পাওনা দিয়ে দাও। সে বললো, আচ্ছা, একটু অপেক্ষা কর। এক্ষুণি দিয়ে দিচ্ছি। এই বলে ভেতরে গিয়ে তৎক্ষনাৎ পাওনা এনে দিয়ে দিল।” কিছুক্ষণের মধ্যে আবু জাহল সেখানে উপস্থিত হলে সবাই তাকে বললো, “কি ব্যাপার, তোমার কি হয়েছে? আজ তুমি যে কা- করেছো, এমন তো আর কখনো করতে দেখিনি? ” আবু জাহল বললো, “এটা সত্য যে, মুহাম্মাদ আমার দরজায় কড়ানাড়া ছাড়া আর কিছু করেনি। আমি শুধু তার শব্দটা শুনেই ভয় পেয়ে যাই এবং পরক্ষণেই তার সামনে আসি। আমি দেখতে পেলাম. তার মাথার ওপর একটা ভয়ংকর আকারের উট। তার মত চুঁট, ঘাড় ও দাঁতবিশিষ্ট কোন উট আমি আর কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ, অস্বীকার করলে সে নিশ্চিত আমাকে খেয়ে ফেলতো।”
ইসরা বা রাত্রিকালীন সফর
একদিন রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় অর্থাৎ বাইতুল মাকদিসে নিয়ে যাওয়া হয়। [৩৩.সুহাইলী বলেন : ঘটনাটা মদীনায় হিজরাতের এক বছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল বলে কেউ কেউ উল্লেক করেছেন।] এই সময় কুরাইশ গোত্রের মধ্যে এবং অন্যান্য গোত্রের লোকজনের মধ্যে ইসলাম বেশ প্রসার লাভ করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বোরাক আনা হয়। এটি একটি চতুষ্পদ জন্তু। পুর্বতন নবীদেরকেও এই জন্তুর পিঠে সওয়ার করানো হতো। এটি এত দ্রুতগামী যে, সে দৃষ্টির শেষ সীমায় পা ফেলতো। তিনি সেই জানোয়ারে সওয়ার হলেন। তাঁর সঙ্গী (জিবরীল) তাঁকে সাথে নিয়ে রওনা হলেন। আকাশ ও পৃথিবীর অসংখ্য নিদর্শন দেখতে দেখতে তিনি এগিয়ে যেতে লাগলেন। এভাবে চলতে চলতে বাইতুল মাকদিস গিয়ে থামলেন। সেখানে নবীদের এক বিরাট সমাবেশ দেখতে পেলেন। তার মধ্যে ইবরাহীম (আ). মূসা (আ) ও ঈসাকেও (আ) দেখলেন। তাঁদের সবাইকে নিয়ে এক জামায়াতে নামায পড়লেন। তারপর তাঁর কাছে তিনটা পাত্র আনা হলো। একটিতে পানি, একটিতে মদ এবং একটিতে দুধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ঐ তিনটি পাত্র আমার সামনে রাখার পর শুনতে পেলাম কে যেন বলছেঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি পানি ভরা পাত্র গ্রহণ করেন তা হলে তিনি বিপথগামমী হবেন এবং তাঁর উম্মতও ডুববে। আর যদি মদের পাত্র গ্রহণ করেন তা হলে তিনি বিপথগামী হবেন এবং তাঁর উম্মতও বিপথগামী হবে। আর যদি তিনি দুধের পাত্র গ্রহণ করেন তা হলে তিনিও হিদায়াত লাভ করবেন এবং তাঁর উম্মাতও হিদায়ত লাভ করবে।” এ কথা শুনে আমি দুধের পাত্রটা নিলাম এবং তা থেকে দুধ পান করলাম। তখন জিবরীল (আ) আমাকে বললেন : “হে মুহাম্মাদ! আপনিও সুপথগামী হয়েছেন আর আপনার উম্মাতও।”
হাসান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি হাজরে আসওয়াদের কাছে ঘুমিয়ে ছিলাম। সহসা জিবরীল এলেন। তিনি আমাকে চিমটি কাটলেন। আমি উঠে বসলাম কিন্তু কোন কিছু না দেখে আবার শুয়ে পড়লাম। তিনি আবার এসে আমাকে চিমটি কাটলেন। আমি আবার উঠে বসলাম এবং কিছু না দেখে আবার শুয়ে পড়লাম। তিনি তৃতীয়বার এলেন এবং পুনরায় চিমটি কাটলেন। এবারে আমি উঠে বসতেই তিনি আমার বাহু ধরে টান দিলেন। সেখানে আমি একটা সাদা বর্ণের জন্তু দেখতে পেলাম। তা ছিল খচ্চর ও গাধার মাঝামাঝি আকৃতির। তার দুই উরুতে দুটি পাখা। পাখার সাহায্যে সে পা সঞ্চালন করে। আর হাত দুটিকে সে দৃষ্টির শেষ সীমায় দিয়ে রাখে। তিনি আমাকে ঐ জন্তুটির ওপর সওয়ার করালেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে রওনা দিলেন। দুজনের কেউ কাউকে হারিয়ে না ফেলি, এতটা পাশাপাশি আমরা চলতে লাগলাম।” হাসান (রা) তার বর্ণনায় বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলতে লাগলেন।আর তাঁর সাথে জিবরীলও চলতে লাগলেন। বাইতুল মাকদিস গিয়ে তাঁরা যাত্রাবিরতি করলেন। সেখানে দেখলেন নবীদের একটি দল সমবেত হয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা আলাইহিমুস্ সালামও উপস্থিত আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম হয়ে তাঁদের নিয়ে নমায পড়লেন। অতঃপর তাঁর কাছে দুটো পাত্র হাজির করা হলো। একটাতে মদ, অপরটায় দুধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ ভর্তি পাত্রচা নিলেন, তা থেকে কিছুটা দুধ পান করলেন এবং মদভর্তি পাত্রটা বর্জন করলেন। তা দেখে জিবরীল বরলেন, “হে মুহাম্মাদ! আপনি নিজেও ইসলামের পথে চালিত হয়েছেন আর আপনার উম্মাতও ইসলামের পথে চালিত হয়েছে। মদ আপনাদের ওপর হারাম হয়েছে।” এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে মক্কায় ফিরে গেলেন। পরদিন সকালে তিনি কুরাইশদের কাছে গেলেন এবং রাত্রের ঘটনা ব্যক্ত করলেন। অধিকাংশ লোক তা শুনে বললো, “আল্লাহর শপথ, এ এক আজব ও অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মক্কা থেকে সিরিয়া কত কাফিলা যায়। তাদের যেতে একমাস এবং আসতে এক মাস সময় লাগে। আর এত লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে মুহাম্মাদ কিনা একরাতেই সেখানে গেল আবার মক্কায় ফিরেও এলো!”
হাসান (রা) বলেন, “এই ঘটনা শুনে বহু সংখ্যক মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করলো। লোকেরা আবু বাক্রের (রা) কাছে গিয়ে তাঁকে বললো, “হে আবু বাক্র, তোমার বন্ধুকে কি তুমি বিশ্বাস কর? সে বলছে, সে নাকি গতরাতে বাইতুল মাকদাস গিয়েছিলো, সেখানে সে নামায পড়েছে, অতঃপর মক্কায় ফিরে এসেছে!”
আবু বাকর বললেন, “তোমরা কি তাকে অবিশ্বাস কর?” সবাই বললো, “হ্যাঁ, ঐতো মসজিদে বসে লোকজন এই কথাই বলছে।” আবু বাক্র (রা) বললেন, “আল্লাহর শপথ, তিনি যদি একথা বলে থাকেন তা হলে সত্য কথাই বলেছেন। এতে তোমরা আশ্চর্য হওয়ার কি দেখলে? তিনি তো আমাকে বলে থাকেন যে, তাঁর কাছে আল্লাহর কাছ থেকে ওহী আসে। আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত ওহী আসে মাত্র এক মুহূর্তের মধ্যে। তাঁর সে কথাও আমি বিশ্বাস করে থাকি। তোমরা যে ঘটনা নিয়ে চোখ কপালে তুলছো তার চেয়েও এটা বিস্ময়কর।” অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে হাজির হলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর নবী, আপনি কি জনগণকে বলেছেন যে, আপনি গত রাতে বাইতুল মাকদাস ভ্রমণ করেছেন?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আবু বাকর (রা) বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, বাইতুল মাকদাসের আকৃতি কেমন আমাকে বলুন। কেননা বাইতুল মাকদাস আমি গিয়েছি।” রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “এই সময় আমার সামনে বাইতুল মাকদাস তুলে ধরা হলো এবং আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বাকরকে (রা) তার আকৃতির বর্ণনা দিতে লাগলেন। আর তা শুনে আবু বাক্র (রা) বলতে লাগলেন, “আপনি ঠিক বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল।” বর্ণনা দেয়া শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু ব্ক্রাকে বললেন, “হে আবু বাক্র, তুমি সিদ্দীক।” সেদিনই তিনি আবু বকরকে (রা) সিদ্দীক তথা ‘পরম সত্যনিষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াভ (রহ) বলেন, “ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের কাছে হযরত ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা আলাইহিমুস সালামের দৈহিক গঠনের বর্ণনা দিয়েছিলেন। তিনি ঐ রাতে তাঁদেরকে দেখেছিলেন। তিনি বলেছেন, “দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) তোমাদের সঙ্গীর (অর্থাৎ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) সাথেই সর্বাধিক সাদৃশপূর্ণ। আর মূসা আলাইহিস সালাম বাদামী রঙের দীর্ঘাকায় একহারা গড়নের ও উন্নত নাসা সুপুরুষ ছিলেন। মনে হয় যেন শানুয়া গোত্রের কোন লোক। ঈসা (আ) মাঝারী গড়নের, লাল বর্ণের, নরম ও সোজা চুল এবং মুখে বহুসংখ্যক তিলবিশিষ্ট। দেখে মনে হয়, তাঁর চুল থেকে পানির বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে। সবে মাত্র হাম্মাম থেকে গোসল করে বের হয়েছেন। তোমাদের মধ্যে উরওয়াহ ইবনে মাসউদ সাকাফীর সাথে তাঁর দৈহিক সাদৃশ্য সর্বাধিক।”