ওয়ারারা বিন নওফেলের ভাষ্য
খাদীজার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ইবনে আসাদ ইবনে আবদুল উযযা ছিলেন পূর্বতন আসমানী কিতাবে ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন একজন খৃস্টান প-িত। পার্থিব জ্ঞানেও তিনি যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। হযরত খাদিজা মাইসারাহর নিকট থেকে খৃস্টান ধর্মযাজকের যে মন্তব্য শুনেছিলেন এবং মাইসারাহ নিজে দুইজন ফেরেশতা কর্তৃক ভাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছায়াদানের যে দৃশ্য অবলোকন করেছিল তা ওয়ারাকাকে জানালেন। ওয়ারাকা বললেন, “খাদীজা, এ ঘটনা যদি সত্যিই ঘটে থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো যে, মুহাম্মাদ এ যুগের নবী। আমি জানতাম, বর্তমান মানক বংশধরদের কাছে একজন নবীর আগমন আসন্ন হয়ে উঠেছে এবং তাঁর প্রতীক্ষা করা হচ্ছে। এটা সেই নবীরই যুগ।” একথা বলে ওয়ারাকা প্রতীক্ষিত নবীর আগমণ অনেক বিলম্বিত হওয়ায় আক্ষেপ করতেন। অধীর অপেক্ষায় অনেক সময় তিনি বলতেন, “আর কত দেরী হবে!” এবাবে তিনি আক্ষেপ করে নীচের কবিতাটি আবৃত্তি করতেন :
[আরবী ************]
“আমি অত্যন্ত নাছোড়বান্দা হয়ে এমন এবটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে স্মরণ রেখে চলেছি, যা দীর্ঘদিন যাবৎ অনেককে ফুঁপিয়ে কাঁদতে উদ্বুদ্ধ করেছে। (সে বিয়য়টির) অনেক বিবরণের পর নতুন করে খাদীজার কাছ থেকেও বিবরণ (পাওয়া গেল), বস্তুতঃ হে খাদীজা, আমার প্রতীক্ষা খুবই দীর্ঘায়িত হয়ে গেছে। আমার প্রত্যাশা, মক্কার উচ্চভূমি ও নিম্নভূমির মধ্য থেকে তোমার বাস্তব রূপ প্রতিভাত হওয়া দেখতে পাই, যে কথা তুমি ঈসায়ী ধর্মযাজকের বলে জানিয়েছ। বন্তুতঃ ধর্মযাজকদের কথা বিকৃত করা আমি পছন্দ করি না।”
[আরবী ************]
“মুহাম্মাদ অচিরেই আমাদের সরদার ও নেতা হবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধবাদীকে তিনি পরাজিত করবেন, আর দেশের সর্বত্র আলো ছড়াবেন, যে আলো দ্বারা সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে তিনি উদ্ভাসিত করে তুলবেন। যারা তাঁর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে তাদেরকে তিনি পর্যুদস্ত করবেন আর যারা তাঁর সাথে আপোষকামী হবে তারা হবে বিজয়ী। হায় আফসোস! যখন এসব ঘটনা ঘটবে তখন যদি আমি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে তোমাদের সবার আগে আমিই তাঁর দলভুক্ত হতাম।”
পবিত্র কা’বার পুনর্নিমাণ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন পঁয়ত্রিশ বছর তখন কুরাইশগণ পবিত্র কা’বার ভবন সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল পবিত্র কা’বার ছাদ তৈরি করা। কেননা ছাদ নির্মাণ না করলে দেয়াল ধসে যাওয়ার আশংকা ছিল। ঐ সময় কা’বার দেয়াল সাড়ে তিন হাতের সামান্য বেশী উঁচু ছিল এবং তাও শুধুমাত্র পাথরের ওপর পাথর সজিয়ে নির্মিত ছিল। কোন গাঁথুনি ছিল না। ঘটনাক্রমে ঐ নময় জনৈক রোমান ব্যবসায়ীর এক ব্যবসায়ীর একখানি জাহাজ সমুদ্রের প্রবাহের সাথে ভেসে জিদ্দার উপকৗলে এন আছড়ে পড়ে এবং ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায। এই জাহাজের তক্তাগুলো কুরাইশরা নিয়ে যায় এবং পবিত্র কাবার ছাদ তৈরীর কাজে ব্যবহার করার জন্য তা ছেঁটেকেচে ঠিকঠাক করে। মক্কায় জনৈক মিসরীয় রাজমিন্ত্রীরও আবির্ভাব ঘটে এবই সময়। পবিত্র কা’বার সংস্কার সাধনে তার দ্বারা কিছু কাজ নেয়া যাবে বলে কুরাইশগণ মনে মনে স্থির করে ফেলে। পবিত্র কা’বা সংলগ্ন কূপ থেকে তখন একটা সাপ প্রতিদিন উঠে আসতো এবং কা’বার দেয়ালের ওপরে বসে রোদ পোহাতো। যে কূপ থেকে সাপটা উঠে আসতো তার মধ্যে কা’বার জন্যপ্রতিদিন উৎসর্গীকৃত জিনিসসমূহ নিক্ষেপ করা হতো। সাপের কারণে কুরাইশগণ আতংকিত ছিল। কেননা সাপটা এমন ভয়ংকর ছিল যে, কেউ তার ধারেও ঘেঁষতে পারতো না। কেউ তার কাছে গেলেই ফনা বিস্তার করে সশব্দে চামড়ায় চামড়া ঘষে মোচড় খেতো এবং মুখ ব্যাদান করতো। এভাবে একদিন সাপটি যথন পবিত্র কা’বার দেয়ালের ওপর রোদ পোহাচ্ছিলো তখন আল্লাহ সেখানে একটা পাখী পাঠালেন। পাখী সাপটাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। তখন কুরাইশগণ আশ্বস্ত হয়ে বরলো : আশা করা যায় যে, আল্লাহ আমাদের ইচ্ছায় সম্মতি দিয়েছেন। আজ আমাদের কাছে একজন প্রীতিভাজন মিস্ত্রী রয়েছে, প্রয়োজনীয় কাঠের যোগাড় হয়ে গেছে। আর সাপের হাত থেকেও আল্লাহ নিষ্কৃতি দিয়েছেন।
অতঃপর তারা কা’বার দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে নির্মণের আয়েজন করলো। এই সময় আবু ওয়াহাব ইবনে আমর ইবনে আয়েয ইবনে ইমরান ইবনে মাখযূম উঠে কা’বার একটা পাথর বিচ্ছিন্ন করে হাতে তুলে নিল। কিন্তু পাথরটি তৎক্ষণাৎ তার হাত থেকে সটকে পড়লো এবং যেখানে তা ছিল সেখানে পুনঃস্থাপিত হলো। এ আশ্চর্য ব্যাপার দেখে সে বললো, “হে কুরাইশগণ, তোমরা এই কা’বার ভবন র্মিাণে শুধু তোমাদের বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ নিয়েজিত কর। এত ব্যভিচার, সুদ কিংবা উৎপীড়ন দ্বারা অর্জিত সম্পদ ব্যয় করো না।”
অতঃপর কুরাইশগণ কা’বার গৃহনির্মণের কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেল। দরজার অংশ নির্মাণের ভার বনু আবদ মানাফ ও যুহরার ভাগে, রুকনে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী অংশ নির্মাণের ভার বনী মাখযূম গোত্রের ভাগে এবং তাদের সাথে আরো কয়টি কুরাইশ গোত্র যুক্ত হলো, কা’বার মেঝে নির্মাণের ভার বরী জুমাহ ও বনী সাহামের ভাগে, আর হাজরে আসওয়াদ সংলগ্ন অংশ বনী আবদুদদার, বরী কুসাই ও বনী আসাদ ইবনে আবদুল উয্যা ও বনী আদী ইবন কা’বের ভাগে পড়লো।
এবার ভাঙ্গার কাজে হাত দেয়ার পালা কিন্তু এ কাজে হাত দিতে প্রত্যেকেই এক অজানা ভয়ে ভতি হয়ে পড়লো। তখন ওয়ালীদ ইবনুল মুগিিরা ঘোষণা করলো, “ আমিই ভাঙ্গার কাজ শুরু করছি। এই বলে সে কোদাল হাতে নিয়ে জীর্ণ ভবনের এক প্রান্তে গাঁড়িয়ে বরলো, “হে আল্লাহ, তোমার ধর্ম থেকে বিচ্যুত হইনি এবং আমরা যা করছি তা সদুদ্দেশ্যেই করছি।” অতঃপর রুকনে ইয়ামানী ও বুকনে আসওয়াদের কোণ থেকে খানিকটা ভেঙ্গে ফেললো। পরবর্তী রাত সবাই উৎকণ্ঠার সাথে কাটালো। সবাই কললো, “দেখা যাক, ওয়ালীদের ওপর কোন আপদ আসে কিনা। যদি তেমন কিছু হয় তাহলে ভাঙবো না। বরং যেটুকু ভাঙ্গা হয়েছে তা আবার জুড়ে সাবেক অবস্থায় বহাল করবো। অন্যথায় বুঝবো আল্লাহ আমাদের উদ্যোগে সন্তুষ্ট। অবশিষ্ট অংশও ভেঙ্গে ফেলবো।” ওয়ালীদ পরদিন সকালে স্বাভাবিকভাবে আরদ্ধ কাজে ফিরে এলো। এবং কা’বার দেয়াল ভাঙতে আরম্ভ করলো। তার সাথে অন্যান্য লোকেরাও ভাঙতে লাগলো। এ ভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নির্মিত ভিত পর্যন্ত গিয়ে থামলো। অতঃপর তারা সবাই উটের পিঠের কূজাকৃতির দুর্লভ সবুজ পাথর সংগ্রহ করতে গেল, যার একটা আর একটার সাথে লেগে থাকে।[১৮. কোন কোন বর্ণনায় বরা হয়েছে, পাথরগুলো বর্শার ফলকের ন্যায় সবুজ।]
অতঃপর কুরাইশ গোত্রগুলো কাবা পুনঃনির্মাণের উদ্দেশ্যে পাথর সংগ্রহ করলো। প্রত্যেক গোত্র আলাদা ভাবে সংগ্রহ করলো ও পুনঃনির্মাণের কাজ সমাধা করলো। হাজরে আসওয়াদের স্থান পর্যন্ত দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন হলে এবার তা যথাস্থানে কে স্থাপন করবে তা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ শুরু হরো। হাজরে আসওয়াদ তুলে নিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করার সম্মান লাভের বাসনা প্রত্যেকেরই প্রবল হয়ে উঠলো। এ নিয়ে গোত্রগুলো সংঘবদ্ধ হতে লাগলো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল।
বর্ণিত আছে যে, ঐ সময় সমগ্র কুরাইশ সম্প্রদায়ের প্রবীণতম ব্যক্তি আবু উমাইয়া ইবনুল মুগীরা নিম্নরূপ আহ্বান জানালেন, “হে কুরাইশগণ, এই পবিত্র মসজিদের দরজা দিয়ে যে ব্যক্তি প্রথম প্রবেশ করবে, তাকেই তোমরা এই বিবাদের মীমাংসার দায়িত্ব দাও।” সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হলেন। অতঃপর দেখা গেল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম প্রবেশ করলেন। তাঁকে দেখে সবাই একবাক্যে বলে উঠলো, “এতো আমাদের আল আমীন (পরম বিশ্বস্ত) মুহাম্মাদ তাঁর ফায়সালা আমরা মাথা পেতে নেব।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাদমান লোকদের কাছাকাছি গিয়ে উপনীত হলে সবাই তাঁকে তাদের বিবাদের বিয়য়টা জানালে তিনি করলেন, “আমাকে একখানা কাপড় দাও।” কাপড় দেয়া হলে তিনি তা বিছিয়ে হাজরে আসওয়াদ উক্ত কাপড়ের মধ্যস্থলে স্থাপন করে বললেন “প্রত্যেক গোত্রকে এই কাপড়ের চারপাশ ধরতে হবে।” সবাই তা ধরলো ও উঁচু করে যথাস্থানে নিয়ে রাখলো। অতঃপর তিনি নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ তুলে যথাস্থানে রাখলেন ও তার উপর গাঁথুনি দিলেন।
আরব গণক, ইহুদী পুরেহিত ও খৃস্টান ধর্মযাজকদের ভবিষ্যদ্বাণী
ইহুদী পুরেহিত, খৃস্টান ধর্মযাজক ও আরব গণকগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছিলেন যে, তাঁর আগমনের সময় ঘনিয়ে আসছে। ইয়াহুদ ও খৃস্টান যাজক সম্প্রদায় এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তাদের স্ব স্ব আসমানী কিতাবে বর্ণিত শেষ নবী ও তাঁর আবির্ভাবের সময়ের লক্ষণসমূহ বিচার করে এবং তাদের নবীগণ তাঁর সম্পর্কে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন তার নিরিখে আর আরব গণকের ভবিষ্যদ্বাণীর উৎস ছিল ফিরিশতাদের কথাবার্তা আড়ি পেতে শ্রবণকারী জিনদের কাছ থেকে পাওয়া খবর। তখনও উল্কাবাণ নিক্ষেপ করে শয়তানদেরকে বিতাড়িত করতেঃআড়িপাতা থেকে নিবৃত্ত করা হতো না। এই শয়তানরা গণক নারী-পুরুষদের কাছে আসতো। ফলে তারা মাঝে মাঝে শেষ নবীর আগমন সম্পর্কে কিছু কিছু পূর্বাভাস দিত। সাধারণ আরবরা এ সব পূর্বাভাসে তেমন কর্ণপাত করতো না। কিন্তু হযরতের আবির্ভাব ঘটার পর এবং আভাস দেয়া লক্ষণগুলো বাস্তবে সংঘঠিত হবার পর সকলেই তা জানতে ও উপলব্ধি করতে পালো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের সময় যখন আসন্ন হয়ে উঠলো তখন শয়তানদের আড়িপাতা বন্ধ করা হলো এবং যেসব ঘাঁটিতে বসে তারা আড়িপাততো সেসব ঘাঁটিতে তাদের আনাগোনা উল্কাবাণ নিক্ষেপ করে বন্ধ করা হলো। এতে জিনরা বুঝতে পারলো যে, এ পদক্ষেপ সৃষ্টিজগতে আল্লাহর কোন বিশেষ প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থা বলবৎ করার লক্ষ্যেই গৃহীত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহর (সা) দৈহিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
ইবনে হিশাম বলেন,
হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের পুত্র মাহাম্মাদের পুত্র ইবরাহীম থেকে গুফরার আযাদকৃত দাস উমার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৈহিক ও চারিত্র্রিক বৈশিষ্ট্যের নিম্নরূপ বর্ণনা দিয়েছেনঃ
আলী ইবনে আবু তালিব যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করতেন তখনই বলতেন, “তিনি অধিক লম্বা ছিলেন না, আবার খুব বেঁটেও ছিলেন না বরং তিনি উচ্চতায় মধ্যম আকৃতির ছিলেন। তাঁর চুল অত্যধিক কুঞ্চিত ছিল না আবার একবারে অকুঞ্চিতও ছিল না। বরং তা কিঞ্চিত কোঁকড়ানো। তিনি খুব বেশী স্থুল বা মোটা দেহের অধিকারী ছিলেন না। তাঁর মুখম-ল একেবারে গোলাকার ও ক্ষুদ্র ছিলনা। চোখ দুটো ছিল কালো। লম্বা ভ্রƒ-যুগল, গ্রন্থি’র হাড়গুলো ও দুই স্কন্থের মধ্যবর্তী হাড়টি ছিল উঁচু ও সুস্পষ্ট। বক্ষ থেকে নাভি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল ছিল হালকা লোমে আবৃত। হাত ও পায়েরপাতা ছিল পুষ্ট, চলার সময় পা দাবিয়ে দিতেন না, মনে হতো যেন কোন নিম্ন ভূমিতে নামছেন। কোনদিকে ফিরে তাকালে গোটা শরীর নিয়ে ফিরতেন। তাঁর দুই স্কন্ধের মাঝখানে নবুওয়াতের সীল বা মোহর লক্ষণীয় ছিল। বস্তুতঃ তিনি ছিলেন শেষ নবী, শ্রেষ্ঠ দানশীল, শ্রেষ্ঠতম সাহসী, অতুলনীয় সত্যবাদী, সবচেয়ে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন, সবচেয়ে অমায়িক ও মিশুক। প্রথম নজরে তাঁকে দেখে সবাই ঘাবড়ে যেতো।” তাঁর প্রশংসাকারী আলী (রা) বলেন, “তাঁর মত মানুষ তাঁর আগেও দেখিনি পরেও দেখিনি।”
ইনজীলে রাসূলুল্লাহর (সা) বিবরণ
ইবনে ইসহাক বলেন,
হযরহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঈসা আলাইহিস্ সালামের যে বিবরণ ও প্রতিশ্রুতি ঈসার সহচর ইউহান্না কর্তৃক সংকলিত ইনজীলে বর্ণিত হয়েছে যা স্বয়ং ঈসা আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত ওহী অনুসারে লিপিবদ্ধ করিয়েছেন, আমার জানা মতে তা এইঃ
“যে ব্যক্তি আমাকে হিংসা ও ঘৃণা করে, সে স্বয়ং আল্লাহকে ঘৃণা করে। যেসব কাজ আর কেউ কখনো করেনি, তা যদি আমি তোমাদের সামনে করে না দেখাতাম, তাহলে তাদের (অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের ) কোন দোষ হতো না। কিস্তু এখন তারা আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা ভেবেছে যে, এভাবে তারা আমাকে ও আল্লাহকে পরাজিত করতে পারবে। এসব ঘটেছে এজন্য যাতে খোদায়ী গ্রন্থের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়। বস্তুতঃ তারা অন্যায়ভাবে আমাকে ঘৃণা করেছে। ‘মানহামান্না’Ñযাকে আল্লাহ পাঠাবেন- যদি তোমাদের কাছে আসেন, তবে তিনিই আমার পক্ষে স্ক্ষ্য দেবেন। তিনি আল্লাহর নিকট থেকে আগত পবিত্র আত্না। আর তোমরাও অবশ্যই আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। কারণ প্রথম থেকেই তোমরা আমার সঙ্গে আছ। আমি তোমাদের কে এ সমস্ত কথা এজন্য বললাম, যাতে তোমরা অভিযোগ না করতে পার। [১৯.বাইবেল যোহন ১৫:২৩-৩৬ দ্রষ্টব্য।] সুরিয়ানী ভাষায় ‘মুনহামান্না’ অর্থ মুহাম্মাদ। আর রোমান ভাষায় এর প্রতিশব্দ হরো ‘বারাকলিটাস।’