ইসলাম ও পশ্চাদমুখিতা
কিছু সংখ্যক ভুলদর্শ ইসলাম বিরোধীকে বলতে শোনা যায়, ইসলাম জীবনব্যবস্থা আধুনিক যুগের প্রয়োজন ও চাহিদা মেটানোর জন্যে আদৌ যথেষ্ট নয়। এবং নয় বলেই এ যুগের লোকদের নিকট উহা গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। তাদের মতে ইসলামের আইন-কানুন কেবল সেই অতীতকালের জন্যেই প্রযোজ্য ছিল। এ যুগে উহার যে শুধা কার্যকারিতাই শেষ হয়ে গেছে তা-ই নয়, বরং উহা উন্নতি ও প্রগতির পথে দস্তুরমত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলে:
১. “তোমরা কি আজও সুদ নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষপাতী? (-অথচ আধুনিক যুগের অর্থনীতির জন্য উহার প্রয়োজন অপরিহার্য।)”
২. “তোমরা কি আজও এটা চাও যে, যাকাতের অর্থ যে এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হবে সেই এলাকার লোকদের কল্যাণের জন্যেই উহা ব্যয় করা হবে? প্রথমত, যাকাত একটি অনুন্নত পন্থা এবং উহা আধুনিক সরকারের কোন প্রয়োজন মেটায় না। দ্বিতীয়ত, কোন নগর বা এলাকার গরীব লোকদের মধ্যে যখন সে এলাকার ধনী লোকদের যাকাতর অর্থ বিতরণ করে দেয়া হয় তখন মানসিকভাবে তারা অত্যন্ত আহত হয়। কেননা তাদের জন্যে এই অর্থ ভিক্ষার চেয়ে উন্নতমানের কিছুই নয়।”
৩. “তোমরা কি মদ, জুয়া, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নাচ-গান, আনন্দ-স্ফূর্তি ও মিতালীর বিরুদ্ধেও বিধি-নিষেদ আরোপ করতে চাও –অথচ এর প্রত্যেকটিই বর্তমান সামাজিক জীবনের জন্য অপরিহার্য?”
অর্থনীতির জন্যে সুদকে অপরিহার্য বলা ভিত্তিহীন
ইসলাম সুদকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে একথা ঠিক। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন যে, অর্থনীতির জন্যে সুদ অপরিহার্য। বর্তমান যুগেও দু’টি জীবনব্যবস্থায় –ইসলাম ও সমাজতন্ত্রে সুদকে অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা বলে স্বীকার করে না। এ দু’টির মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, সমাজতন্ত্র স্বীয় চিন্তাধারা অনুযায়ী আমল করার এবং জনগণকেও সে অনুযায়ী জীবনযাপন করতে বাধ্য করার প্রয়োজনীয় শক্তি ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক এবং ইসলামের হাতে এরূপ কোন ক্ষমতা নেই। ইসলাম যদি এই ক্ষমতার অধিকারী হতো তাহলে উহা দেখিয়ে দিত: ইসলামী অর্থনীতির বাস্তবায়নে সুদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। সুদের ভিত্তিতে উহাকে রচনাই করা হয়নি। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামোকে যেমন করে সুদের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়নি, তেমনি করে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবেই ইসলামী অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি বিশারদদের সাক্ষ্য
সুদকে কোনক্রমেই আধুনিক যুগের অর্থনীতির অপরিহার্য অংগ বলে সাব্যস্ত করা যায় না। এর অপরিহার্য প্রয়োজনীযতা শুধু সেই সকল পুঁজিপতিদের জন্যে যারা একে বাদ দিয়ে পুঁজিপতিই হতে পারে না। পাশ্চাত্যের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা এই সুদের বিরোধী। তারা আমাদেরকে এই মর্মে সতর্ক কর দিচ্ছেন যে, সুদের বিরুদ্ধে বিধি-নিষেধ আরোপ না করা হলে ক্রমেক্রমে দেশের সমস্ত সম্পদই গুটিকতক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়বে এবং দরিদ্র জনসাধারণ অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস্তগ্রস্ত হয়ে পুঁজিপতিদের অধীন ও অসহায় দাসে পরিণত হবে। পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদের ইতিহাসে এরূপ অসংখ্য ঘটনা বর্তমান যাতে করে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের উপরোক্ত আশাংকবা সম্পূর্ণরূপেই নির্ভুল। ইসলাম সুদ ও ইজারাদারীকে –যা পুঁজিবাদের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আজ থেকে প্রায় দু’ হাজার বছর পূর্বে যখন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কোথাও কোন অস্তিত্ব ছিল না, সম্পূর্ণরূপেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলামী জীবনব্যবস্থার উপস্থাপক আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও অন্তর্যামী, যিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষের যাবতীয অবস্থা ও কর্মতৎপরতার প্রতি সর্বক্ষণ দৃষ্টি রাখছেন এবং তিনি জানেন, সুদে কি কি অনিষ্টতা বিরাজমান। সুদের মাধ্যমে কি কি অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হওয়া সম্ভবপর।
অপমানকর বাধ্যবাধকতা
যে দেশ বা জাতির অর্থনীতি ভিন দেশের অর্থ সাহায্যের উপর নির্ভরশীল তার জন্যে সুদ একটি অপমানকর বাধ্যবাধকতা বলে গণ্য হতে পারে, কিন্তু ইসলামী অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপেই নিরপেক্ষ ও স্বাধীন। স্বাধীন ও স্থায়ী ভিত্তির উপর উহাকে নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে উহার যাবতীয় সম্পর্ক নিছক সাম্যের ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয় –আনুগত্য বা গোলামীর নীতির ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয় না। অনুরূপভাবে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের দিক-নির্দেশনা ইসলামের সেই বিধান ও নীতির আলোকেই গ্রহণ করা হয় যার ভিত্তিতে সুদকে সম্পূর্ণরূপেই হারাম বলে গণ্য করা হয়েছে। এই নীতির আলোকে স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ইসলামী অর্থনীতির যে রূপরেখার সৃষ্টি করা হয়েছে তা সমগ্র দুনিয়ায় উন্নতি ও শ্রেষ্ঠত্বলাভের অনন্য মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়।
যাকাতের নির্ভুল অবস্থান
যাকাতের সম্পর্ক যতদূর বর্তমান সে সম্পর্কে আমরা পূর্বেই বলেছি যে, উহা গরীবের প্রাপ্য। দান-খয়রাত বা ভিক্ষা নয়; বরং এ হচ্ছে আল্লাহর স্পষ্ট বিধান। (সামাজিক কল্যাণ বিধানে) এ হচ্ছে এমন এক অধিকার যার হেফাযতের জন্যে স্বয়ং রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এখানে আমরা যাকাতের স্থানীয় নীতি অর্থাৎ যে এলাকা থেকে যাকাত আদায় করা হবে তা সেই এলাকার লোকদের মধ্যেই বিতরণ করার নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন।
বড়ই পরিতাপের বিষয়, আমাদের এখানকার বহু বিজ্ঞজন পাশ্চাত্য জগত থেকে আমদানী করা প্রতিটি ব্যবস্থা ও পদ্ধতিকে সভ্যতার চরম উৎকর্স মনে করে উহার ভক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ঐ জিনিসকেই যখন ইসলাম তাদের নিকট উপস্থাপিত করে তখন তারা উহাকে পশ্চাদমুখিতা ও মূঢ়তা বলে আখ্যায়িত করে।
আমেরিকার দৃষ্টান্ত
এই সকল বিজ্ঞজনকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States of America) পরিচালনা ব্যবস্থা পূর্ণাং বিকেন্দ্রীকরণ নীতির (Dicentralisation) উপর প্রতিষ্ঠিত। যে রাষ্ট্রগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হয়েছে ঐগুলোর সাধারণ ব্যবস্থাপনায় উহার প্রতিটি গ্রাম ও প্রতটি মহল্লা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকে একটি অখণ্ড পূর্ণাংক স্বাধীন ও এলাকা বলে বিবেচিত। এগুলোর মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল ই স্ব স্ব এলাকায় বসবাসকারী লোকদের উপর কর ধার্য করে, যথারীতি আদায় করে এবং পরে উহাকে উক্ত গ্রাম ও মহল্লার শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ এবং অন্যান্য সামাজিক প্রয়োজন মেটাবার কাজে ব্যয় করে। বিভিন্ন খাতে ব্যয় করার পরে কোন অর্থ উদ্বৃত্ত থাকলে উহাকে নগর বা রাষ্ট্রের উপরস্থ শাসকদের হাতে অর্পণ করা হয়। অন্যদিকে গ্রাম ও মহল্লাহর খাতওয়ারী ব্যয় যদি আয়ের চেয়ে বেশী হয়ে যায়, তাহলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ অর্থ পূরণ করে দেয়া হয়। নিসন্দেহে এটা একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনা। এতে বিভিন্ন মানবীয় প্রচেষ্টাকে এমনভাবে সুশৃংখলিত করা হয় যে, ব্যয়ের সমস্ত বোঝাকেই ভাগ করে দেয়া হয়। একা কেন্দ্রীয় সরকারকে ইহা বন্টন করা হয় সেহেতু তাদের প্রয়োজনের প্রতিও পুরোপুরি লক্ষ্য রাখা হয়। কেননা স্থানীয় লোকেরা এলাকার প্রয়োজনের কথা কেন্দ্রের চেয়েও সুন্দরভাবে অবগত থাকে।
তের শ’ বছর পূর্বে
আমাদের এখানকার বিজ্ঞজনেরা আমেরিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অথচ তারা ভুলে যান যে, ইসলাম তাদের গৃহীত ব্যবস্থাপনাকে আজ থেকে তের শ’ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিটি এলাকার শাসকবৃন্দ নিজ নিজ এলাকার কর সংগ্রহ করতেন এবং উহা দ্বারা স্থানীয় লোকদের যাবতীয় অভাব ও প্রয়োজন পূরণ করতেন। আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য দখা দিলে, হয়ত কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা করা হতো, নতুবা ঋণ আকারে প্রদান করা হতো।
যাকাত বন্টন সম্পর্কে কথা হলো: ইসলামী আইনে এমন কোন ধারা নেই যে, যাকাত অপরিহার্য রূপেই নগদ অর্থ বা সম্পদ আকারে লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে। যাকাতের অর্থ গরীবদের শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির ন্যায় সামাজিক প্রয়োজন মেটাবার জন্যেও ব্যয়িত হতে পার এবং বার্ধক্য, দুর্বলতা ও শৈশবের কারণে যারা কাজ করতে অক্ষম তাদেরকে নগদ অর্থ প্রদান করেও সাহায্য করা যেতে পারে।
আজ যদি আমরা আমাদের বর্তমান সমাজে ইসলামী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তাহলে আমাদের এতটুকু করলেই চলবে যে, আমাদের দেশে এমন ছোট ছোট স্বতন্ত্র ও একক ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি করতে হবে যা রাষ্ট্র, মুসলিম জাহান এবং গোটা বিশ্বের ব্যবস্থাপনার ভেতরে অবস্থান করেই স্থানীয় সমস্যাগুলোর সুষ্ঠূ সমাধান দিবে এবং স্থানীয় সকল মানুষের যাবতীয প্রয়োজন মেটাবার দায়িত্ব পালন করবে।
ইসলাম ও সামাজিক বিপর্যয়
তথাকথিত “উন্নতিকর্মীরা” মদ্যপান, জুয়া, নর-নারীর অবাদ মেলামেশা ইত্যাদি নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করে। ইসলাম এর প্রত্যেকটিরই ঘোর বিরোধী।
মদ্যপান: মদ্যপান প্রকৃতপক্ষে কোন না কোন সামাজিক বা ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের স্পষ্ট নিদর্শন। মদ এবং অন্যান্য নেশাকর জিনিসের প্রয়োজন কেবলমাত্র একটি রুগ্ন ও বিপর্যস্ত সমাজের জন্যেই হতে পারে। যে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে এতখানি দুস্তর ব্যবধান যে, একদিকে কিছু সংখ্যক লোক আরাম-আয়েশ ও বিলাস-ব্যসনে এতদূর ডুবে যায় যে, তাদের যাবতীয় মানবীয অনুভূতি বিনষ্ট হয়ে যায়। আর অন্যদিকে দেশের আপামর জনতা বঞ্চিত ও অসহায় অবস্থায় ধুকে ধুকে মরতে থাকে। বস্তুত এই অসহায় জনগোষ্ঠীরই সত্য থেকে পলায়নের পথ অনুসন্ধন করে এক নেশার জগতে আশ্রয় নিতে চায়। এ কারণেই ঐ সকল সমাজে মদ ও অন্যান্য নেশার ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে মানবীয় চিন্তার উপর নানা প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ করে উহার স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং যেখানে লোকেরা তাদের জীবন-জীবিকার প্রশ্নে এমনভাবে মশগুল হতে বাধ্য হয় যে, অন্য কোন বিষয়ের প্রতি তাদের কোন লক্ষ্যই থাকে না। অনুরূপভাবে ঐ সকল দেশেও এই মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে আধুনিক কল-কারখানা থাকার কারণে অনর্থক হুর-হাঙ্গামা ও হৈচৈর সৃষ্টি হতে থাকে।
ব্যধির আলামত, বৈধ হওয়ার কারণ নয়
কিন্তু সামাজিক কারণ যতই থাকুক না কেন, মদ্যপান বৈধ হওয়ার পক্ষে উহার কোন কারণ বলে স্বীকৃত হতে পারে না। অবশ্য যেহেতু মদপান হচ্ছে ব্যধির আলামত সে কারণে উহাকে নিষিদ্ধ করার পূর্বে উক্ত সমাজের সেই বিপর্যয়ের সংশোধন হওয়ার একান্ত প্রয়োজন। যে কারণে এই ব্যধিটির সৃষ্টি হয়েছে। ইসলাম উহাকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্যে এই সুষ্ঠু কর্মসূচীই গ্রহণ করেছে। উহা সর্বপ্রথম যে সকল অন্যায় ও পাপাচার মদ পানের জন্যে দায়ী ছিল তার সবগুলোকেই নির্মূল করে দেয়। এবং এদিক থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হওয়ার পরেই মদ পানকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। আধুনিক সভ্যতার ধ্বজাধারীরা ইসলামের প্রতি কটাক্ষ করর পরিবর্তে যদি উহার নিকট থেকে নিজেদের সামাজিক, রাজনৈতিক, মানসিক ও নৈতিক অবস্থা উন্নয়নের এবঙ মানুষের আত্মিক ব্যধিসমূহের চিকিৎসা পদ্ধতি শেখার জন্যে অগ্রসর হতো তাহলে এটা তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর হতো এবং তারাও ইসলামের নিকট থেকে অনেক উপকৃত হতো।
জুয়া সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছু বলা নিষ্প্রয়োজন। কেননা একমাত্র নির্বোধ ও বেকুফ ব্যক্তিরাই একে পসন্দ করতে পারে।
নারী–পুরুষের অবাধ মেলা–মেশা ও ইসলাম
নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশাকে কেন্দ্র করে আজকাল বড্ড উত্তপ্ত আলোচনা চলছে। আসুন, এই বিষয়টির প্রতি আমরাও দৃকপাত করি:
অনেক স্থুলদর্শী ইসলামকে শুধু এ জন্যেই প্রতিক্রিয়াশীল ধর্ম বলে মনে করে যে, উহা নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার উপর অযথা বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এই লোকেরা ফরাসী সভ্যতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেখানে আশেক-মামুক তাথা প্রেমিক-প্রেমাষ্পদের জুটিরা প্রকাশ জনপথে শত শত লোকের উপস্থিতিতে চুম্বন ও যৌন কেলিতে মেতে উঠতে পারে; কোন ব্যক্তিই কোন বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। বরং পুলিশ যদি এদেরকে যৌন কেলিতে বেহুশ অবস্থায় দেখতে পায় তাহলে পথচারীরা যাতে তাদেরকে বিরক্ত করতে না পারে সে জন্রে যথারীতি পাহারা দিতে থাকে। আর যারা এসব দৃশ্য দেখতে নারাজ তাদের প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপই করে না।
কিছু লোক এমন রয়েছে যারা আমেরিকার জীবন পদ্ধতিকেমনে প্রাণে ভালোবাসে। কেননা সেকানকার লোকেরা নিজেদেরকে কখনো ধোঁকা দেয় না। যৌন স্পৃহা চরিতার্থ করাকে তারা জীবনের জন্যে অপরিহার্য বলে মনে করে। সুতরাং এই প্রয়োজন মেটাবার যাবতীয় ব্যবস্থার প্রতিও তারা লক্ষ্য রাখে। বস্তুত এ কারণেই সেখানে প্রতিটি মেয়ের জন্যে থাকে বয় ফ্রেণ্ড (Boy Friend) এবং ছেলেদের জন্যে থাকে গার্লফ্রেণ্ড (Girls Friend)। সেখানকার লোকেরা তাদের বেশীর ভাগ সময়ই ব?্যয় করে বাইরের লোকদের সাথে মিলেমিশে। জনবসতির বাইরে তারা ব্যবস্থা করে বর্ণাঢ্য বনভোজনের। সেখানে তারা আদি কামরসে টুইটুম্বুর হয়ে খোলামেলাভাবেই যৌন কেলিতে ডবে যায়। এভাবে বনভোজন (Picnic) থেকে তারা এমন পরিতৃপ্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করে যে, এরপর পরিপূর্ণ মনোযোগের সাথে তারা পড়াশুনা বা অন্যান্য কাজ করতে থাকে। আর এতে করে দেশের ফসল ও উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায় এবং গোটা জাতির উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়ে যায়।
নৈতিক দেউলিয়াপনার মোহ
কিন্তু এই স্থুলদর্শী ব্যক্তিরা –যারা পাশ্চাত্যের নৈতিক দেউলিয়াপনার মোহে একেবারেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে –একথা ভুলে যান যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে জার্মানী যখন ফ্রান্স আক্রমণ করে তখন ফ্রান্স সামান্যতম প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে না পেরে সংগে সংগেই আত্মসমর্পণ করে। ফ্রান্সের এই অপমানকর পরাজয়ের কারণ সেনাবাহিনীর ত্রুটিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বা অস্ত্রশস্ত্রের অল্পতা ছিল না। বরং এর মূল কারণ ছিল: ফরাসীরা জৈবিক আনন্দ-উল্লাস, যৌন ব্যভিচার এবং নৈতিক অবক্ষয়ের করুণ শিকার হয়ে জাতীয় প্রেরণা একেবারেই হারিয়ে ফেলে এবং ভেতর থেকেই অন্তসারশূন্য হয়ে পড়ে। তখন তারা এই ভেবে শংকিত হয়ে উঠে যে, যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে প্যারিসের আকাশ চুম্বি অট্টালিকা, সাধের প্রেক্ষাগৃহ ও মনোরম পার্কসমূহ বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। পম্চিমা সভ্যতার মোহমুগ্ধ বিজ্ঞজনেরা তাদের এলাকায়ও কি এই নাটকের পুনরাবৃত্তি চায়?
আমেরিকার বিভ্রান্তিকর জীবনের আভ্যন্তরীণ অবস্থা জানার জন্যে স্বয়ং আমেরিকা সরকারের পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। তাতে দেখা যায়, মাধ্যমিক স্কুলগুলের শতকরা আটত্রিশজন অবিবাহিত মেয়েই গর্ভবতী। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচের স্তরসমূহের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার এই অনুপাত অনেকটা কম। কেননা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহেণের ক্ষেত্রে তারা স্কুল চাত্রীদের চেয়ে অধিকতর অভিজ্ঞ ও পারদর্শী।
শুভ উদ্দেশ্য, সুন্দর মাধ্যম
যৌন স্পৃহা চরিতার্থ করার সুযোগ লাভ নিসন্দেহে একটি নির্দোষ ও শুভ উদ্দেশ্য। ইসলাম এ জন্যেই এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। কেননা ইহা অবগত আছে যে, মানুষ যখন যৌন দিক থেকে অতৃপ্ত থেকে যায় তখন সে এমন এক অস্থিরতায় ভুগতে থাকে যে, অন্য কোন কাজের প্রতি লক্ষ্য দেয়ার যোগ্যতাই তার তাকে না। ফলে জাতীয় উন্নতি ও উৎপাদন সামগ্রিকভাবেই ব্যাহত হয়। কিন্তু এ সত্যকে কখনো অস্বীকার করা যায় না যে, শুভ উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্যে মাধ্যমকেও হতে হয় সুন্দর। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে সফল করার জন্যে গোটা সমাজের নৈতিকতাকে বিনষ্ট করা কিংবা যুবক-যবতীদেরকে জন্তু-জানোয়ারের মত একে অন্যের পেছনে ছুটে চলার স্বাধীনতা দেয়া নিশ্চয়ই কোন নির্দোষ পদ্ধতি নয়।
আমেরিকান জীবনের বাহ্যিক চাকচিক্য
কিছু সংখ্যক ভ্রান্তদর্শী বিজ্ঞজনদের ধারণা হলো: আমেরিকার যাবতয বিস্ময়কর উৎপাদন ও উন্নতির মূলে রয়েছে তাদের যৌন পিপাসা চরিতার্থ করার বল্গাহীন স্বাধীনতা। কিন্তু তাদের জানা উচিত যে, আমেরিকা আজ পর্যন্ত সমস্ত দুনিয়াকে যে উৎপন্ন দ্রব্যাদি দিয়েছে তা শুধু বস্তুগত উৎপাদন ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এ উৎপাদনের হার যদি বর্তমান গতিতেই চলতে থাকে তাহলে অতি শীঘ্রই মানুষের পরিবর্তে শুধু নিষ্প্রাণ মেশনিগুলোকেইকাজ করতে দেখা যাবে। বস্তুত এ কারণেই বস্তুগত উন্নতি সত্ত্বেও মানসিক ও মানবিক দিক থেকে আমেরিকা আজ এতদূর পেছনে যে, আজও সেখানে সে দেশেরই স্বাধীন নাগরিক হাবশীরা দাসদের চেয়েও ঘৃণিত অবস্থায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। শ্বেতাংগরা তাদের উপর যে পাশবিক জুলুম করছে তারও কোন নযীর দুনিয়ায় নেই। এ হচ্ছে তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা বহির্বিশ্বে তারা আজ উপনিবেশবাদের নির্লজ্জ পৃষ্ঠপোষক ও সহায়ক বলে পরিচিত। মোটকথা, আমেরিকানদের এই বল্গাহীন যৌন ব্যভিচার, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের পৈশাচিক উন্মা্দনা এবং হাবশীদের গোলামকরে রাখার অমানুষিক জেদ তাদের মানসিক ও আত্মিক অধপতনের এমন এক অভিব্যক্তি যার কোন তুলনা সভ্য দুনিয়ার কোথাও নেই।
যৌন উচ্ছৃংখলতার পরিণাম
আজকাল পুরুষেরা সাধারণত সেই সকল নারীদের সাথে প্রকাশ্যভাবে মেলামেশা করতে আগ্রহী যারা (উর্বশীর ন্যায়) সাজসজ্জা (Makeup) করে যত্রতত্র ঘুড়ে বেড়ায়। এর একমাত্র কারণ হলো: তাদের বৈধ অধিকার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার পরিবর্তে সব জায়গায় স্বাদ গ্রহন করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এটা মানুষের এক স্বাভাবিক দুর্বলতা বটে; কিন্তু প্রশ্ন এই যে, মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি শুধু কামপিপাসা চরিতার্থ করা এবং জৈবিক আনন্দ-উল্লাসে মত্ত হওয়া? কামপিপাসা চরিতার্থ করার যে আনন্দ পাওয়া যায় তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। বিশ শতকের জন্যে এ কোন নতুন প্রশ্নও নয়। আজ থেকে হাজার হাজার বছর পূর্বে গ্রীস, রোম ও ইরানের লোকেরাও একথা জানত এবং তারা আপাদমস্তক এর মধ্যে ডুবে গিয়েছিল। কিন্তু এই সীমাতিরিক্ত কামান্ধতা ও আনন্দ-স্ফূর্তি এই জাতিগুলোকে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে একেবারেই উদাসীন করে দিয়েছিল। ফলে ধীরে ধীরে তারা সরকার, ক্ষমতা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং একদিন তাদের সভ্যতার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে গিয়েছে।
আধুনিক পাশ্চাত্য জগত ও আমরা
আধুনিক পাশ্চাত্য জগতের নিকট জীবনের বস্তুগত উপায় অবলম্বন বহুল পরিমাণে বর্তমান। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার, অপরিমেয় উৎপাদন এবং কাজ-কর্মের অসংখ্য উপায় তাদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু এসব সত্ত্বেও জৈবিক ও পাশবিক প্রবৃত্তির দাসত্বের কারণে তাদের আংশিক পতনের সূত্রপাত ঘটেছে। কিন্তু আমরা –যারা বিগত দু’ শতকহ ধরে প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে পাশ্চাত্য জগতের বিপক্ষে সীমাহীন দূরবস্থার ভেতর দিয়ে কালাতিপাত করছি। সভ্যতা ও প্রগতির নামে কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল বলে ঠাট্টা-বিদ্রূপের ভয়ে ভীত হয়ে জৈবিক ও পাশবিক আনন্দে বিভোর হই, তাহলে পরিশেষে আমরা কি লাভ করবো? এর পরিণতি শুধু এই হবে যে, আমাদের অবস্থা অধিক হতে অধিকতর শোচনীয় হয়ে পড়বে, তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই। উহাকে কখনো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো না। আলোকপ্রাপ্ত চিন্তার দাবীদাররা চায় যে, আমরা আমাদের ঐতিহাসিক সুখ্যাতি ও ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। তারা মূলত উপনিবেশবাদী সাম্রাজ্যবাদের একনিষ্ঠ এজেন্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদীরা “আলোকপ্রাপ্ত” সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদদেরকে নানাভাবে ‘সাবাব’ দিয়েই চলেছে। কেননা সাম্রাজ্যবাদীরা ভালোরূপেই অবগত আছে যে, তারা নিজেদের জাতীয় চরিত্রে অবক্ষয় ঘটাতে এবং তরুণদের পাশবিক নেশায় উন্মাদ করে তুলতে পারলে তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যসমূহ অতি সহজেই সফল হতে পারবে।
পাশ্চাত্য নারীদের অভিজ্ঞতা –একটি প্রশ্ন
প্রতারিত ব্যক্তিদের অনেকেই বলেন: “পাশ্চাত্র সমাজের নারীদের অবস্থা দেখুন। তরা কত উন্নত? সকল সামাজিক অধিকারই তারা পুরোপুরি ভোগ করছে। সেখানকার সমাজ জীবনে তারা গভীরভাবে জড়িত।” নিসন্দেহে পাশ্চাত্য জগতে মহিলারা যথারীতি চাকুরী করছে এবং পুরুষদের সাথে অবাধ মেশার মাধ্যমে তারা যে ব্যাপক অভিজ্ঞতা লাভ করছে তা তারা গৃহের চার দেয়ালের ভেতরে থেকে সন্তানদের লালন-পালন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে কিছুতেই লাভ করতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, গৃহের বাইরে নারীরা এই যে অভিজ্ঞতা লাভ ক রছে তার সাথে তাদের নারীত্বের সম্পর্ক কতটুকু? এতে করে তাদের নারীত্বের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে কি? নতুন করে কোন কল্যাণ সাধিত হয়েছে কি? না, এতে করে নারীত্বের কোন অবমাননা হয়েছে?
আমরা দ্বিতীয়বার এই প্রশ্ন এভাবেও করতে পারি যে, নারীদের এই বাইরের অভিজ্ঞতার ফলে মানবীয় জীবনের সত্যিকার কোন লাভ হয়েছে কি? এতে করে মানবীয় জীবনের কোন শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে কি? না, এ কারণে পূর্ববরঈ কোন ভালো দিকের অবসান হয়েছে?
পাশ্চাত্য সমাজের সমীক্ষা
পাশ্চাত্য জগতে নারীরা আজ পুরুষের অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে উঠেছে। তারা তাদের মনোরঞ্জন করে যৌন স্পৃহা চরিতার্থ করে –এমনকি বহু ব্যাপারেই তারা তাদের সমান অংশীদার হিসেবে কাজ করে। -কিন্তু না তারা আদর্শ স্ত্রী হতে পারছে। না আদর্শ মা হতে পারছে। একথার বাস্তব প্রমাণ আমরা এখানেই পাই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তালাক বা দাম্পত্য বিচ্ছেদের সংখ্যা শতকরা চল্লিশে গিয়ে পৌঁছেছে। ইউরোপে তালাকের সংখ্যা এর চেয়ে সামান্য কম। কিন্তু সেখানে বিবাহিত দম্পত্তিদের জন্যে উপপত্নী রাখা এবং অন্য নারী-পুরুষের সাথে ‘এশক’ ও ভালোবাসার লীলা বা যৌন কেলিতে মত্ত হওয়া দোষের কিছু নয়। পাশ্চাত্যের নারীরা যদি আদর্শ স্ত্রী হতো এবং নিজ নিজ গৃহের কল্যাণের জন্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারতো তাহলে এতবড় বিরাট অংকের দাম্পত্য বিচ্ছেদ কখনো সংঘটিত হতো না এবং গৃহকে ‘বয়কট’ করে চলার এই মানসিকতাও কোনদিন ব্যাপক হয়ে দেখা দিতো না। একতাও এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আদর্শ মা তওয়ার জন্যে যে অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার প্রয়োজন, চাকুরীরতা নারীরা তার কিছুই অর্জন করতে পারে না। আদর্শ মায়ের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্যে তাদের হাতে সময়ও নেই এবং সেই প্রেক্ষিতে প্রস্তুত হওয়ার মত মানসিকতাও নেই।
বিপদের ঘন্টা ধ্বনি
অনস্বীকার্য যে, নারী-পুরুষের এই অবাধ ও বল্গাহীন মেলামেশার ফলে যৌন পিপাসার সাময়িক নিবৃত্তি ছাড়া মানবতার অনুকূলে আজ পর্যন্ত কোন কল্যাণ সাধিত হয়নি, বলা বাহুল্য, কিছু সংখ্যক নারীকে পার্লামেন্টের সদস্য-মন্ত্রী কিংবা কোন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োগ করলেই দুনিয়ার যাবতীয় সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এবং হাজার হাজার বা লাখ লাখ নারীকে কারখানা, দোকান বা শোরুমের শোভা বর্ধনের জন্যে ব্যবহার করলেও কোন কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। কোন সমাজে নারীদের কার্যকরী প্রভাব শুধুই কি পার্লামেন্টের লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দান এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নামে দিক নির্দেশনা পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ? কিছুতেই নয়। কেননা কোন বিবেকবান ব্যক্তিই মা হিসেবে নারীর শ্রেষ্ঠতম মর্যাদাকে অস্বীকার করতে পারে না; তাদের লালন-পালনের মাধ্যমে সমস্ত দুনিয়া আদর্শ নাগরিক লাভণ করতে পারে। হতে পারে কোন কোন নারী মুহূর্মুহ করতালি বা “ধন্য! ধন্য!!” আওয়াজের মধ্যে এই সত্যকে ভুলে যেতে পারে। কিন্তু এ সত্ত্বেও এই সত্যের অপলাপ করা কখনো সম্ভব নয় যে, মাতৃ স্নেহ বঞ্চিত মানবীয় প্রজন্ম যে স্নেহ ব্যতিরেকে মানুষ শৈশব থেকেই অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে –গোটা মানবজাতির মধ্যে মহাবিপদের ঘন্টা ধ্বনিতে পরিণত হয়; আর উহার বিপক্ষে শ্রুতিমধুর শ্লোগানসমূহের কোন মূল্যই থাকে না। বস্তুত গোটা দুনিয়ার মানুষই মায়ের এই অনুপম স্নেহ কেবল মায়ের কোলেই লাভ করতে পারে যে, তার সন্তানের কল্যাণের জন্যে দুনিয়ার সবকিছুই বিসর্জন দিতে সক্ষম।
সত্য অনুধাবনের তাগিদ
একথা ঠিক যে, নারীদের উপর এতখানি বোঝা চাপানোও সংগত নয় যে, যাবতীয় খুশী ও আনন্দ থেকে তারা পুরোপুরি বঞ্চিত হতে বাধ্য হবে এবং তার স্বকীয় ব্যক্তিত্ব বা মর্যাদা বলতে কিছুই থাকবে না। আবার নারী-পুরুষ কাউকেই মনগড়াভাবে জীবনযাপনের কোন অধিকারও দেয়া যাবে না। মোটকথা, আমরা যথেচ্ছভাবে যেমন জীবনযাপন করতে পারি না, তেমনি যা-ই ভালো লাগবে তার অনুসরণও করতে পারি না।
চিন্তার মুহূর্ত
চিন্তা করে দেখুন, দুনিয়ার সকল মানুষ যদি এই স্বার্থ প্রসূত চিন্তায় মেতে উঠে এবং পাশবিক আনন্দ ও জৈবিক লালসা চরিতার্থ করার পথে কোন অন্তরায়কে বরদাশত করতে না চায় তাহলে তার পরিণাম কি হবে। একটি পরিণাম তো এই হবে যে, আমাদের স্বার্থপরতা ও পদস্খলনের শাস্তি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নানাবিধ মসিবত ও দুঃখ-দুর্দশার আকারে অবশ্যই পেতে থাকবে। আর একথা অনস্বীকার্য যে, নারীরা স্বকীয় কল্যাণের জন্যেও এটা কামনা করে না যে, ভবিষ্যত প্রজন্মের নারীরা শুধু এ কারণই চিরকালের জন্যে দুঃখ ভোগ করতে থাকবে যে, একটি বিশেষ যুগের নারীরা যৌন আনন্দ ও জৈবিক লালসা চরিতারথ করার জন্যে উন্মাদ হয়ে উঠেছিল।
ইসলাম যে জীবনব্যবস্থা দিয়েছে তা বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সকল মানুষের জন্যেই। এটা এক প্রজন্মকে আরেক প্রজন্মের উপর প্রাধান্য দেয় না। কেননা উহার দৃষ্টিতে সকল মানুষই একটি একক ও অখণ্ড স্বত্বা। সকল প্রজন্মের সকল মানুষ নিয়েই এটা গঠিত। ইসলামের এই বৈশিষ্ট্যের জন্যে কখনো এটাকে অভিযুক্ত করা যায় না। অবশ্য ইসলাম যদি মানুষের প্রাকৃতিক চাহিদার বরখেলাফ হতো কিংবা উহা পাইকারীভাবে সকল খুশী ও আনন্দকে নিষিদ্ধ বলে গণ্য করতো তাহলে উহার বিপক্ষে প্রম্ন তোলা সংগত হতো। কিন্তু বিষয়টি কখনো এরূপ নয়।