ইসলাম ও দান
সমাজতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদের মোহে যারা আচ্ছন্ন ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ হলো: ইসলাম জনসাধারণকে ধনীদের দান-খয়রাত নিয়ে বাঁচতে শিখায়; নিজেদের বাহুবলে বেঁচে থাকার উদ্যমকে নিঃশেষ করে দেয়। একটি ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা এই অপবাদ দিয়ে থাকে। তারা মনে করে যে, যাকাত এমন একটি ঐচ্ছিক দান যা ধনী ব্যকি্তিরা নিছক অনুগ্রত করেই দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়।
যাকাত ও ঐচ্ছিক দানের মধ্যে পার্থক্য
এই অভিযোগের সঠিক মর্ম অনুধাবন করার পূর্বে যাকাত ও ঐচ্ছিক দানের পারস্পরিক পার্থক্য নিরূপণ করা একান্ত প্রয়োজন। দান একটি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ব্যাপার। আইন বা প্রশাসন উহা দেয়ার জন্যে কাউকে বাধ্য করে না। পক্ষান্তরে যাকাত একটি আইনসম্মত বাধ্যাতামূলক বিধান। যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করে ইসলামী সরকার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে; এরপরেও যদি তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করে তাহলে সরকার তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বাধ্য হয়। কেননা এরূপ অস্বীকৃতির ফলে তারা আর মুসলমান থাকে না, ‘মুরতাদ’ (ধর্মত্যাগী বা Apostate) বলে পরিগণিত হয়। বলা বাহুল্য, দানের ক্ষেত্রে ইসলামী সরকার এ ধরনের কোন কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না; বরং একে মানুষের কল্যাণ কামনা ও পরার্থপরতার উপর ছেড়ে দেয়।
প্রথম নিয়মিত কর
অর্থনীতির ইতিহাসে যাকাতই হচ্ছে পৃথিবীর সর্বপ্রথম নিয়মিত কর। এর পূর্বে করের জন্যে সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম-কানুনও দুনিয়ায় ছিল না। তখনকার শাসকরা তাদের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কর ধারায করতো এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ ও দরকার মত তারা আদায় করে নিত। আর এই করের সমস্ত বোঝা ধনীদের নয়-কেবল গরীবদেরকেই বহন করতে হতো। ইসলাম এসে এই কর আদায়ের নির্দিষ্ট নিয়ম-পদ্ধতি চালু করে এবং সাধারণ অবস্থায় সর্বনিম্ন ও শতকরা হারে কর নির্ধারণ করে। আর ইসলামই সর্বপ্রথম গরীবদেরকে বাদ দিয়ে কেবল ধনী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উপর কর আরোপ করে।
ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগার
ইসলামী রাষ্ট্রের স্বয়ং সরকারই গরীব ও অভাবীদের মধ্যে যাকাতের অর্থ বন্টন করে দেয়। ধনী লোকেরা নিজেরা এটা করে না। এ যেন এমন এক প্রকার করা যা স্বয়ং সরকার আদায় করে এবং সরকারই উহা সাধারণ লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়। ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগারকে সেই সকল দায়িত্বই পালন করতে হয় যা বর্তমান সরকারগুলোর রাজস্ব মন্ত্রণালয়কে সম্পাদন করতে হয়। উহা এক দিকে বিভিন্ন অর্থ ও কর জনসাধরণের নিকট থেকে আদায় করে এবং অন্য দিকে তাদেরই সুখ-স্বাচ্ছন্ন্য ও কল্যাণের জন্যে উহার বিলি-বরাদ্দের দায়িত্ব পালন করে। যারা আয়-উপার্জনে অক্ষম, অথবা যাদের আয় অত্যধিক সীমিত বা অপর্যাপ্ত তাদের জীবন-জীবিকার প্রতিও উহাকে লক্ষ্য রাখতে হয়। স্মরণীয় যে, সরকার যে এই শ্রেণীর অক্ষম ও অভাবীদের সাহায্য প্রদান করে তাতে অনুগ্রহ বা এহবানের কোন প্রশ্ন নেই। তাই উহা গ্রহণ করার লাঞ্ছনা বা অবমাননারও অবকাশ নেই। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী –যারা চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেয়ার পরেও সরকারের নিকট পেনশন বা গ্র্যাচুয়িটি গ্রহণ করে –এবং যে সকল কারিগর কল্যাণ তহবিল থেকে বা স্যোসাল সিকিউরিটি স্কীমের আওতায় অর্থ সাহায্য লাভ করে তাদের সম্পর্কে তো কেউ এ ধারণা পোষণ করে না যে, তারা খয়রাত গ্রহণ করছে। তাহলে সেই সকল অসহায় শিশু, প্রতিবন্দী যুবক ও অক্ষম বৃদ্ধ লোকদের সম্পর্কে কেমন করে বলা যেতে পারে যে, তারা ভিক্ষা হিসেবে সরকারী সাহায্য পাচ্ছে? সরকার যখন তাদের অক্ষমতার কথা বিবেচনা করে আর্থিক সাহায্য মঞ্জুর করবে তখন তাতে অসম্মানের কী থাকতে পারে? কেননা সরকার তো জনগণের অর্থ জনগণের সেবায় ব্যয় করে মানবিক দায়িত্ব পালন করছে মাত্র।
সামাজিক কল্যাণব্যবস্থা ও ইসলাম
আজকাল কল্যঅণ তহবিল প্রতিষ্ঠার যে প্রথা চালু হয়েছে তার পশ্চাতে রয়েছে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার তিক্ত অভিজ্ঞতা, রয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও বে-ইনসাফীর এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। ইসলামের একচ্ছত্র গৌরবের একটি বড় প্রমাণ এই যে, ইসলাম এই সামাজিক কল্যঅণ ব্যবস্থা এমন এক যুগে চালু করেছে যখন গোটা ইউরোপ সামাজিক দিক থেকে ছিল গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত।কিন্তু যারা পাশ্চাত্য বা প্রাচ্যের ধার করা মতাদর্শের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের মানবিক গোলামীর বহর করে থাকে তবুও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ বা কুধারণা বিন্দুমাত্রও দূর হয় না। বরং উহাকে তারা বর্বরতা, কুসংস্কার বা প্রতিক্রিয়াশীলতা বলে গণ্য করতে থাকে।
যাকাতের বন্টন ও ইসলাম
ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে যাকাতের হকদার ব্যক্তিরা নিজেরাই যাকাতের অর্থ সংগ্রহ করতো। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত বন্টনের একমাত্র রীতি হলো: যাকাতের হকদাররাই ঘুরে ঘুরে যাকাতের অর্থ গ্রহণ করবে, অন্য কোন পন্থায় যাকাতের লেন-দেন হতে পারবে না। ইসলামী আইনে এমন কিছু নেই যাতে করে ইহা প্রমাণিত হতে পারে। ইসলামে যাকাতের অর্থ দ্বারা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান যেমন –শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থাপন করা যেতে পারে। পারস্পরিক সাহায্যের বিভিন্ন সংস্থা কায়েম করা যেতে পারে, কারখানা ইত্যাদির প্রতিষ্ঠাও হতে পারে, অন্য কথা, যাকাতের অর্থ সমাজ কল্যাণেল যে কোন কার্যেই ব্যয়িত হতে পারে। যাকাতের অর্থ থেকে দ্রব্যে বা নগদ সাহায্য কেবল অসুস্থ, বৃদ্ধ এবং শিশুদেরকে দেযা হয়। কিন্তু অন্যান্য লোকদের সাহায্য তাদের উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়ার কিংবা তাদের কল্যাণের জন্যে কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে হয়। কেননা ইসলামী সমাজই এমন একটি সমাজ যেখানে শুধু যাকাতের দ্বারা জীবিকা নির্বাহের কোন গরীব শ্রেণীর পৃথক অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায যাবে না।
ইসলামী সমাজের আদর্শ যুগ
হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ (রা)-এর খেলাফতকালও ইসলামী সমাজের আদর্শ যুগ বলে পরিচিত। সে যুগে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এতদূর উন্নত হয়েছিল যে, যাকাতের অর্থ আদায় করে যাকাত গ্রহীতাকে ঘুরে ঘুরে তালাশ করা হতো। কিন্তু যাকাত গ্রহণ করতে পারে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না। হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ (রা)-এর যাকাত বিভাগের কর্মকর্তা হযরত ইসয়াহিয়া ইবনে সাঈদ বলেন:
“হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ (রা) আমাকে যাকাত আদায় করার জন্যে আফ্রিকায় প্রেরণ করেন। আমি যাকাত আদায় করে গরীব ব্যক্তিদের খোঁজ করলাম। আমি কোন গরীব লোক পেলাম না এবং যাকাতের এমন কোন হকদারও পেলাম না যে যাকাত নিতে আসে। কেননা হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ (রা) লোকদের সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যের অধিকারী করে দিয়েছিলেন।”
এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে, প্রত্যেক সমাজেই গরীব ও অভাবী লোক থাকবে। সুতরং তাদের সমস্যার সমাধানের জন্যে যথোপযুক্ত আইনও থাকতে হবে। বিভিন্ন সময়ে ইসলামের সাথে যে সকল জাতি সংযুক্ত হতে থাকে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিভিন্ন ধরনের। কাজেই এটাই ছিল একান্ত স্বাভাবিক ও যুক্তিসংগত যে, ইসলাম এমনভাবে আইন রচনা করবে যাতে করে হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ (রা)-এর সময়কাল সমাজের ন্যায় আদর্শ সমাজ গঠিত হতে থাকবে।
দানের তাৎপর্য
এতক্ষণ আমরা যাকাত সম্পর্কে আলোচনা করেছি। ‘সাদাকাত’ বা দান যাকাত থেকে পৃথক একটি জিনিস। এ হচ্ছে এমন এক সম্পদ যা ধনী ও সচ্ছল ব্যক্তিরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ব্যক্তি কল্যাণ বা সমাজসেবার উদ্দেশ্যে প্রদান করে থাকে। ইসলাম ‘সাদাকাত’কে শুধু পসন্দই করে না বরং উহাকে উৎসাহিতও করে। ইসলাম এর জন্যে বিভিন্ন পন্থা নির্দেশ করেছে যেমন: পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করা, সাধারণ অভাবগ্রস্ত লোকদের অভাব মোচন করা। এখানেই শেষ নয়, সৎ ও মহৎ কাজ এবং স্নেহ-মমতা ও সহানুভূতিসূচক কথা-বার্তাও ‘সাদাকাত’ বলে গণ্য।
দানের মূল প্রেরণা
আমরা যদি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করি কিংবা তাদের সাহায্য করি তাহলে তারা কি মানকিভাবে আহত হবেন? তাদের আত্মসম্মানে কি আঘাত লাগবে? –কখনো না। আত্মীয়-স্বজনদের জন্যে ভালোবাসা। হামদর্দি ও স্নেহ-মমতা থাকলেই কেবল মানুষ এ ধরনের বাদান্যতা প্রদর্শন করতে পারে। অনুরূপভাবে কেউ যদি ভাইকে উপহার দেয় কিংবা কোন বন্ধুকে দাওয়াত দেয় তাহলে এতে করে কারুর এমন অমর্যাদা করা হয় না যে, অবশেষে এটাই এক সময়ে ঘৃণা বা শত্রুতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নগদ যাকাত
ইসলামের প্রাথমিক যুগে যাকাতের জন্যে যে বিধান ও নিয়ম চালু ছিল দানের অর্থ নগদ দেয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই চালু ছিল। তখন এমনই এক পরিবেশ ছিল যে, নগদ হাদিয়া (বা উপহার) হিসেবে অভাবী লোকদের নিকট উহা পৌঁছিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু ইসলামের এমন কোন বিধান ছিল না যার ভিত্তিতে একথা বলা চলে যে, দান ঐরূপ নির্দিষ্ট নিয়তেই সম্পন্ন করতে হবে। বরং সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে যে সকল প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কাজ করবে সেগুলোর পক্ষ থেকেও এটা আদায় করা যেতে পারবে। অনুরূপভাবে যাকাতের অর্থও ইসলামী রাষ্ট্রকে সমাজকল্যঅণমূলক বিভিন্ন ‘প্রজেক্ট’ ও ‘স্কীম’ বাস্তবায়নের জন্যে দেয়া যাবে। ইসলামের লক্ষ্যই হলো: যতদিন পর্যন্ত সমাজের কেউ গরীব থাকবে ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র সকল সম্ভাব্য উপায়ে অধিক হতে অধিকতর আর্থিক সুবিধাদানের ব্যবস্থা করতে থাকবে। তবে ইসলাম এটা কখনো চায় না যে, সমাজে গরীব ও অভাবীদের একটি শ্রেণী সর্বদা বর্তমান থাকুক, বরং চায় সমাজে গরীব বা অভাবী বলতে যেন কেউই না থাকে। বস্তুত ইসলামের আদর্শ সমাজে যাকাত বা দান গ্রহণের জন্যে অভাবী লোক তালাশ করা হয়, কিন্তু কাউকেই সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় না। হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ (রা)-এর আদর্শ যুগেই আমরা দেখতে পাই : যাকাত বা দান গ্রহণ করার মত কোন অভাবী লোক ইসলামী রাষ্ট্রের কোথাও নেই। গোটা সমাজ থেকে দারিদ্র ও অভাব-অনটন যখন নির্মূল হয়ে যায় তখন যাকাত ও দানের অর্থ সমাজসেবার বিভিন্ন কাজে এবং আয়-উপার্জনে অক্ষম সকল প্রকার প্রতিবন্দীদের সম্মানজনক জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়।
অনুগ্রহ নয়, অবশ্যকরণীয় কর্তব্য
ইসলাম মুসলমানদেরকে শুধু যাকাত ও দানের অর্থ প্রদান করেই ক্ষ্যান্ত থাকতে শিখায় না। উহা রাষ্ট্রকেই এই দায়িত্ব অর্পণ করে যে, রাষ্ট্রে বসবাসকারী ঐ সকল নাগরিকদের মানবীয় ও সম্মানজকন জীবনযাপনের ব্যবস্থা করবে যারা –যে কোন কারণেই হোক –উপার্জন করতে অক্ষম। অন্য কথায়, এদেরকে সাহায্য করে ইসলামী রাষ্ট্র কোন অনুগ্রহ প্রকাশ করে না, বরং ইসলাম কর্তৃক অর্পিত গুরুদায়িত্ব পালন করে মাত্র।
উপার্জনের পথ ও ইসলামী সরকার
ইসলামী রাষ্ট্রকে আরো একটি গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয় যে, যারা উপার্জন করতে সক্ষম তাদের সকলের জন্যেই কাজের সংস্থান করে দিতে হবে। হযরত বিশ্বনবী (স)-এর একটি হাদীস দ্বারাই ইসলামী রাষ্ট্রের এই দায়িত্ব প্রমাণিত হয়। উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে: “এক ব্যক্তি হযরত (স)-এর নিকট এসে কিছু সাহায্যের আবেদন করলো। তিনি তাকে একটি কুঠার ও এক গাছা দড়ি দিয়ে বললেন : জংগলে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করবে এবং উহা বিক্রয় করে দিনাতিপাত করবে। তিনি তাকে একথাও বললেন যে, কিছুদিন পরে যেন সে তার অবস্থার কথা তাঁকে জানায়।”
কেউ কেউ হয়ত এই হাদীসকে নিছক একটি ব্যক্তিগত ঘটনা বলে উড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমান বিংশ শতাব্দীর সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই তারাই এরূপ করতে পারে। কেননা এই হাদীসে একটি কুঠার, এক গাছা দড়ি এবং একজন দরিদ্র বেকার মানুষের কথাই বলা হয়েছে –অথচ আধুনিক যুগে আমরা সামনে দেখছি বড় বড় কারখানা, লক্ষ লক্ষ বেকার শ্রমিক, শৃংখলাপূর্ষণ সরকার এবং সাজানো-গুছানো কত বিভাগ-উপবিভাগ। সুতরাং মামুলি একটি হাদীসের অবতারণা নির্বুব্ধিতা ব ই কি? কেননা হরত বিশ্বনবী (স)-এর পক্ষে এ কাজ সম্ভপর ছিল না যে, তিনি সহস্রাধিক বছর পূর্বে দুনিয়ার বুকে যখন কল-কারখানার কোন অস্তিত্বই ছিল না –বড় বড় শিল্প বা কারখানা সম্বন্ধে কোন কথা বলবেন অথবা ঐগুলোর সংশ্লিষ্ট কোন আইন-কানুন রচনা করবেন। তিনি যদি এরূপ করতেন তাহলে ঐ সময়ে কোন লোকই এটা বুঝতে সক্ষম হতো না।
এরূপ পদ্ধতি অবলম্বনের পরিবর্তে শরীয়তের বিধানদাতা কেবল জীবন পদ্ধতির মূল ভিত্তিগুলোরই উপস্থাপিত করেছেন এবং বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান এই মূল ভিত্তির আলোকে বের করার দায়িত্ব ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
ইসলামী সরকারের কল্যাণকর ভূমিকা
পূর্বে যে হাদীসটির বরাত দেয়া হয়েছে তার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের নিম্নলিখিত দায়িত্বের উপর আলোকপাত করা হয়েছে:
(১) হযরত বিশ্বনবী (স) (অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান) এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন যে, বেকার লোকের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পিত।
(২) হযরত বিশ্বনবী (স) অবস্থা ও পরিবেশ অনুযায়ী সেই লোকের কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
(৩) হযরত বিশ্বনবী (সা) যখন ঐ ব্যক্তিকে ফিরে আসার এবং তার অবস্থা জানাবার হুকুম দেন তখন সে ব্যক্তিও নব (স)-এর দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হয়ে যায়।
রাষ্ট্রপ্রধানের এই দায়িত্ব সচেতনতা –যার উজ্জল দৃষ্টান্ত ইসলাম আজ থেকে চৌদ্দ শ’ বছর পূর্বে সমস্ত বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরেছে –সর্বাধুনিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জশীল।
ইসলামী রাষ্ট্র যদি বেকার নাগরকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারে তাহলে তাদের অর্থণৈতিক দূরবস্থা দূর না হওয়া পর্যন্ত তাদরে জীবন ধারনের যাবতীয় ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারী বায়তুলমালের উপর অর্পিত হয়। এর একমাত্র কারণ হলো: মুসলমানগণ তো নিজেদের ব্যাপারে হোক কিংবা রাষ্ট্র তথা অন্যান্য নাগরিকদের বিষয় হোক সকলের সাথে মহত্ব ও উদারতা প্রদর্শনের আদর্শই স্থাপন করে এসেছে।