ইসলাম ও শ্রেণীপ্রথা
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন: (আরবী***********)
“এবং আল্লাহ রিযকের ক্ষেত্রে তোমাদের কতক লোকক কতক লোকের চেয়ে অধিক মর্যাদা দান করেছেন।” –(সূরা আন নাহল: ৭১)
(আরবী*************)
“আর আমরা তাদের কতককে কতকের চেয়ে বিভিন্ন স্তরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” –(সূরা আরয যুখরুফ: ৩২)
সমাজতন্ত্রীদের প্রশ্ন হলো: কুরআনে এরূপ স্পষ্ট বাণী থাকা সত্ত্বেও কোন মুসলমান একথা বলতে পারে কি যে, ইসলামে কোন শ্রেণী প্রথা নেই?
শ্রেণীপ্রথার অর্থ
উক্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যে সর্বপ্রথমেই দেখা যাক, শ্রেণীপ্রথা বলতে কী বুঝায়? এরপরেই আমরা এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভংগী কি তা জানতে পারবো এবং ইসলামী আইনে উহা বৈধ কি না তাও অবগত হতে পারবো।
ইউরোপীয় সমাজের তিনটি প্রাচীন শ্রেণী
মধ্য যুগের ইউরোপ স্পষ্টরূপে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল, যথা (১) অভিজাত, (২) পাদরী এবং (৩) জনসাধারণ। পাদরীদের বিশেষ নিদর্শন ছিলতাদের পোশাক-পরিচ্ছদ। শক্তি ও ক্ষমতার দিক থেকে এরা ছিল বড় বড় বাদশাহ বা সম্রাটের সমকক্ষ। গীর্জাসমূহের অধিনায়ক পোপকে খৃস্টান জগতের সকল রাজা-বাদশাহর নিয়োগ ও বরখাস্তের একচ্ছত্র অধিকারী বলে গণ্য করা হতো। এই অবস্থা রাজা-বাদশাহদের জন্যে কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। এবং ছিল না বলেই তারা গীর্জা ও পোপের আওতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে সর্বতোভাবে চেষ্টা চালাতো। গীর্জার অর্থনৈতিক অবস্থা এতদূর সচ্ছল ছিল যে, তারা নিজ দায়িত্বে সেনাবাহিনী রাখারও ব্যবস্থা করতে পারতো।
অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা আভিজাত্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বাপ-দাদা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করতো। নিজেদের ব্যক্তিগত আমল-আখলাকের সাথে এর কোন সম্পর্ক ছিল না। তাদের মতে অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা জন্মসূত্রে অভিজাত বলে গণ্য হতো। অধিক হতে অধিকতর ঘৃণ্য ও নোংরা কাজ করলেও তারা অভিজাতই থাকতো; এতে করে তাদের জন্মগত আভিজাত্য বিন্দুমাত্রও ক্ষুণ্ণ হতো না।
আইন রচনার একচেটিয়া অধিকার
সামন্ত যুগ এই অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা তাদের জায়গীরে বসবাসকারী লোকদের উপর নিরংকুশ ক্ষমতার মালিক ছিল। বিচার ও পরিচালনার অধিকার একমাত্র তাদের হাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এবং মুখের কথাই আইনের মর্যাদা লাভ করতো। এই সময়ে এদের ভেতর থেকেই পরিষদ সদস্যরা মনোনীত হতো। ফলে এরা যে আইন রচনা করতো তাতর লক্ষ্য থাকতো তাদের ব্যক্তিগত লাভ ও সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। আর এই ব্যবস্থাকে এমন নির্দোষ ও পবিত্র বলে গণ্য করা হতো যে, উহার বিরুদ্ধে কেউ কিছু চিন্তাও করতে পারতো না।
সাধারণ মানুষের করুণ অবস্থা
সাধারণ মানুষ ছিল সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অধিকার বলতেও তাদের কিছু ছিল না। দারিদ্র, দাসত্ব আর লাঞ্ছনা-গঞ্ছনা তারা বাপ-দাদা থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করতো এবং তাদের সন্তান-সন্ততিরাও জন্মসূত্রে এই বঞ্চনা ও অবমাননার বোঝা বহন করে চলতো।
বুর্জোয়া শ্রেণীর জন্ম
পরবর্তীকালে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে ইউরোপে বুর্জোয়া শ্রেণীর আবির্ভাব হলো। এবং সম্মান ও আধিপত্যের দিক থেকে তারা অভিজাত শ্রেণীর স্থান দখল করে নিল। এই শ্রেণীর নেতৃত্বেই সাধারণ মানুষ ফরাসী বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়। বাহ্যত এই বিপ্লবই শ্রেণীপ্রথার বিলোপ সাধন করে এবং স্বাধীনতার ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের বাণী ঘোষণা করে।
আধুনিক যুগের পুঁজিবাদী
আধুনিক যুগে প্রাচীন আভিজাত শ্রেণীর স্থান পুঁজিবাদীরা দখলকরে নিয়েছে। অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও অবচেতনভাবে এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রগতির সাথে সাথে অন্যান্য ক্ষেত্রেও বহু পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন-পরিবর্ধন যা-ই ঘটুক না কেন, মৌলিক নীতির ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য ঘটেনি। আজও অর্থ-সম্পদ, শক্তি-ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা পুঁজিবাদী শ্রেণীর হাতে। নিজেদের খেয়াল-খুশী অনুযায়ী তারা সরকার যন্ত্রকে ব্যবহার করেছ। গণতান্ত্রিক দেশগু?লোর নির্বাচনে বাহ্যত মনে করা হয় যে, জনগণ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে অনেক চোরা দুয়ার। এর মাধ্যমেই পুঁজিপতিরা সংসদ, সরকার এবং সরকারী অফিসগুলোর কাঁধে সওয়অর হয়ে বৈধ-অবৈধ পন্থায় নিজেদের অসাধু উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে থাকে।
বৃটেন
স্মরণীয় যে, আধুনিক যুগে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় মোড়ল হচ্ছে বৃটেন। অথচ আজও সেখানে ‘হাউস অফ লর্ডস’ নামে একটি আপার হাউস বর্তমান। আজও সেখানে প্রাচীন সামন্ত আইন বলবৎ রয়েছে। সে আইনে জ্যেষ্ঠ পুত্রই মৃত ব্যক্তির যাবতীয় সম্পদের উত্তরাধিকারী। অন্যান্য পুত্র-কন্যারা পরিত্যক্ত সম্পদকে গুটিকতক লোকের হাতে সীমাবদ্ধ করে রাখা। যাতে করে পরিবারের বিত্তসম্পদ অন্য কোথাও বিস্তৃত হয়ে না পড়ে এবং এমনি করে মধ্য যুগে সামন্তবাদীরা যে অর্থনৈতিক মর্যাদা ভোগ করতো সে মর্যাদা নিয়েই পরিবারগুলো চলতে পারে।
শ্রেণীপ্রথার ভিত্তি
এরূপ একটি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীপ্রথাকে চালু করা হয়েছে যে, সম্পদই হচ্ছে মূল শক্তি। এ কারণে যে শ্রেণীর হাতে সম্পদ থাকে, অপরিহার্যরূপে সেই শ্রেণীই রাজনৈতিক ক্ষমতারও মালিক হয়ে বসে। দেশের আইন রচনায়ও তারা সক্রিয় হয়ে যায়। এবং মুখ্য বা গৌণভাবে এমন আইন রচনা করে যার লক্ষ্য থাকে তাদের স্বার্থ ও কল্যাণের নিরাপত্তা বিধান করা এবং অন্যান্য শ্রেণীর হক বিনষ্ট করে তাদেরকে অধীন করে রাখা।
শ্রেণী প্রথার এই সংজ্ঞার আলোকে পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথেই বলা যায় যে, ইসলামে এই ধরনের শ্রেণীপ্রথার আদৌ কোন অবকাশ নই। এবং ইসলামের ইতিহাসে এই প্রথার কোন চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। নিম্নবর্ণিত তথ্যের আলোকে এই সত্যটি একেবারেই পরিস্ফুট হয়ে উঠে:
সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ
গোটা সম্পদ যাতে করে গুটিকতক লোকের হাতে পুঞ্জিভূত হতে পারে এমন কোন আইন ইসলামে নেই। পবিত্র কুরআনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে:
(আরবী**********)
-“যাতে করে সম্পদ তোমাদের সম্পদশালীদের মধ্যেই আবর্তিত হতে না পারে।” –(সূরা আল হাশর: ৭)
এ কারণেই ইসলাম যে জীবন বিধান প্রদান করেছে তার লক্ষ্য হলো সম্পদ যেন অব্যাহতে গতিতে বন্টিত হতে থাকে। ইসলামের উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি তার সমস্ত উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হয়ে যায় –তাদের সংখ্যা যত অধিকই হোক না কেন সে দিকে বিন্দুমাত্রও লক্ষ্য করা হয় না।
ইমলামে সম্পত্তির উত্তরাধিকার কখনো এক ব্যক্তি হয় না। এর সামান্য ব্যতিক্রম শুধু তখনই হয় যখন মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন কিংবা অন্য আত্মীয়-স্বজন কেউই না থাকে। এই ব্যতিক্রমের মধ্যেই ইসলাম চায়; সমস্ত অর্থ-সম্পদ যেন একই ব্যক্তির হাতে না যায়। বরং তার আত্মীয়দের মধ্যে অন্যান্য হকদাররাও যেন কিছু অংশ অবশ্যই পায়। বর্তমান যুগে যে “উত্তরাধিকার কর” দেখা যায় তা এরই এক প্রাথমিক রূপ মাত্র। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
(আরবী************)
-“আর যখন (উত্তরাধিকারীদের মধ্যে পরিত্যক্ত সম্পত্তি) বন্টনের সময়ে (দূরের) আত্মীয় থাকবে, থাকবে ইয়াতিম ও দরিদ্র লোক তখন তাদেরকেও এই (পরিত্যক্ত) সম্পত্তির কিছু অংশ প্রদান কর এবং তাদের সন্তোষজনক কথা বল।” –(সূরা আন নিসা: ৮)
সম্পদ পুঞ্জিভূত হওয়ার ফলে যে সমস্যা দেখা দেয় তার সমাধান ইসলাম দিয়েছে। ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে সম্পদ কোন বিশেষ শ্রেণীর হাতে সীমাবদ্ধও হতে পারে না। বরং মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হয়ে যায় এবং তাদের মৃত্যুর পর আবার এই সম্পদই পুনরায় তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হয়। এরূপে পুরুষানুক্রমেই সম্পত্তি বন্টিত হতে থাকে। ইতিহাসও সাক্ষ্য দেয় যে, ইসলামী সমাজে সম্পদ কখনো মুষ্টিমেয় লোকের হাতে জমা হতে পারে না। বরং গোটা সমাজেই উহা অব্যাহত ধারায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
আইনগত অগ্রাধিকারের বিলুপ্তি
ইসলামের এই মানসিকতা আমাদেরকে উহার আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাহলো : ইসলামে আইন প্রণয়নের অধিকার নির্দিষ্ট কোন শ্রেণীর হাতে অর্পিত নয়। ইসলামী ব্যবস্থায় কোন ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশীমত কোন আইন রচনার অধিকার রাখে না। কেননা ইসলাম সকল মানুষকে কেবল এমন একটি ‘ইলহামী’ আইনের অধীন বানাতে চায় –যা স্বয়ং আল্লাহ মানুষের জন্যে অবতীর্ণ করেছেন এবং যাতে মানুষের মধ্যে পার্থক্য করার বা কারুর উপর কাউকে অগ্রাধিকার দেয়ার কোন অবকাশ নেই।
শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থা
ইসলামী সমাজ একটি শ্রেণীহীন সমাজ। কেননা শ্রেণীর অস্তিত্ব ও আইনের অগ্রাধিকার –এ দু’টো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেখানে আইনের অগ্রাধিকার নেই এবং নেই বলে কোন শ্রেণীই তাদের মনগড়া আইনের সাহায্যে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে আইনের ক্ষতি করতে সক্ষম না হয় সেখানে শ্রেণী প্রথাও চালু হতে পারে না।
কুরআনের আয়াতের সঠিক মর্ম
এখন আসুন, এই অধ্যায়ের প্রথমে যে দু’টি আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে তার সঠিক মর্ম আমরা অনুধাবন করি। কেননা উহার যে নিছক অনুবাদ করা হয়েছে তার বিশ্লেষণ একান্ত প্রয়োজন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
(আরবী************)
“আর আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারুর উপর রিযকের ক্ষেত্রে মর্যাদা প্রদান করেছেন।: -(সূরা আন নাহল: ৭১)
(আরবী************)
“আর আমরা তাদের কাউকে কারুর উপর বিভিন্ন স্তরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” –(সূরা আয যুখরুফ: ৩২)
আয়অতে কেবল একটি বাস্তব সত্যেরই বিবরণ দেয়া হয়েছে। সে সত্যটি ইসলামী অনৈসলামিক সকল সমাজেই বর্তমান। ঘটনা শুধু এতটুকু যে, মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও মান-মর্যাদার দিক থেকে এক প্রকার পার্থক্য প্রতিনিয়তই বর্তমান। রাশিয়ার কথাই ধরুন। সেখানে কি সকল লোককে একই পরিমাণ পারিশ্রমিক দেয়া হয়? না কাউকে বেশী দেয়া হয় এবং কাউকে কম দেয়া হয়? যাদেরকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হয় তাদের সবাইকে কি একই প্রকার পদ (Rank and Post) দেয়া হয়? –না কাউকে উচ্চপদে এবং কাউকে নিম্নপদে নিয়োগ করা হয়? মানগত এই পার্থক্য যদি সেখানেও থাকে, তাহলে উহাকে মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? উপরোক্ত আয়াতসমূহে মানুষের ভেতরকার এই স্বাভাবিক মানগত তারতম্যের কথাই বলা হয়েছে। তারতম্যের কোন কারণের প্রতি ইংগিত করা হয়নি। বলা হয়নি যে, এর ভিত্তি হচ্ছে সম্পদ, সমাজবাদ বা ইসলাম। এই তারতম্য বা অগ্রাধিকার ইসলামী মানদণ্ডে সুবিচার ভিত্তিক না অবিচার ভিত্তিক সে সম্পর্কেও কিচু বলা হয়নি। আয়াতে এ সকল দিকের প্রতি লক্ষ্য না করে, বাস্তবে যা হয় শুধু সেই কথাই বলাহয়েছে যে, মর্যাদা বা মানের এই তারতম্য দুনিয়ার সর্বত্রই বিরাজমান। আর এটা সত্য যে, দুনিয়ায় যা কিছু হয় তা আল্লাহ ভালোরূপেই অবগত আছেন।
গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য
এখন এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে, ইসলামী সমাজে শ্রেণী প্রথার অস্তিত্ব নেই এবং মানুষে মানুষে তারতম্য করার কোন আইনও বর্তমান নেই। কেননা পার্থিব সাজ-সরঞ্জাম ও ধন-ঐশ্বর্যের পার্থক্য কোন আইনগত কিংবা ব্যক্তিগত মান-সম্মানের রূপ পরিগ্রহ না করবে সে পর্যন্ত কোন শ্রেণী প্রথা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। কেননা আইনের দৃষ্টিতে যদি সকল মানুষ দর্শনের ক্ষেত্রে নয়- বরং বাস্তব কাজের ক্ষেত্রেই সমান বলে স্বীকৃতি পায় তাহলে ধন-দৌলতের এই পার্থক্য কস্মিনকালেও শ্রেণীপ্রথার জন্ম দিতে পারে না।
একথাও স্পষ্ট যে, ইসলাম ব্যক্তিকে ভূমির মালিক হওয়ার যে অধিকার দিয়েছে তার ফলে মালিকারা এমন কোন বিশেষ সুবিধা বা অধিকার লাভ করতে পারে না যার ফলে তারা অন্যকে গোলাম বানাতে যা নিজেদের হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্যে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। সুষ্ঠু ইসলামী ব্যবস্থায় যদি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সূচিত হতো তাহলে সেখানেও এই একই অবস্থার সৃষ্টি হতো। কেননা ইসলামকে শাসকদের শাসন ক্ষমতা পুঁজিবাদী শ্রেণীর প্রভাব বা দয়া-দাক্ষিণ্যের কোন তোয়াক্কা করে না; বরং গোটা জাতির সহযোগিতা ও নির্বাচনের মাধ্যমেই শাসকরা ক্ষমতায় আসেন এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করাই তাদের অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। অনস্বীকার্য যে, দুনিয়ায় এমন কোন সমাজ নেই যেখানকার সমস্ত লোকই সম্পদের দিক থেকে পরস্পর সমান। একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজেও এর কোন অস্তিত্ব নেই। এর স্বপক্ষে তারা যে গালভরা বুলি আওড়ায় তা একেবারেই ভিত্তিহীন। তাদের যাবতীয় কীর্তিকলাপের সার হলো এই যে, তারা ছোট ছোট পুঁজিপতিকে খতম করে শাসকদের এমন একটি নতুন শ্রেণীর জন্ম দিয়েছে যা অন্যান্য সকল শ্রেণীকেই নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে।