মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস প্রোগ্রামের অধীনে ১৯৯৫ সালে ১৬ মে থেকে ১০ই জুন পর্যন্ত আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছি । সফরের মধ্যে ছিল ওয়াশিংটন ডিসি, কলরাডো স্টেটের ডেনভার, ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস, টিনেসি স্টেটের ন্যাসভিল, ইলিনয়ের শিকাগো স্টেটের ব্লুমিংটন ও প্লেনফিল্ড এবং নিউইয়র্ক । প্রোগ্রামে না থাকলেও আমরা জনৈক বাংলাদেশী ছাত্রের আমন্ত্রনে আমরা বাল্টিমোর যাই ।
সফরের বিষয় ছিল ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম’ । এই বিষয়ে জানার জন্যে ইসলাম, খৃষ্টান এবং ইহুদী ধর্মের বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ব্যক্তিত্বের সাথে সাক্ষাত ও আলোচনার ব্যবস্থা করা হয় । আলোচনার মধ্যে ব্যাপক বিষয় শামিল হয় । তাঁর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার্চ এবং স্টেট আলাদা হওয়া, মার্কিন সমাজে ধর্মের প্রভাব, মার্কিন পাবলিক স্কুলে ধর্ম শিক্ষা নিষিদ্ধ হওয়া এবং প্রার্থনার সুযোগ না থাকা, মানবাধিকার, ইসলাম ও গনতন্ত্র, ইসলাম ও সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও ইসলাম, বিশ্বশান্তি ও ধর্ম, খৃষ্টান- মুসলিম ডায়ালগ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, ধর্মীয় আদর্শ এবং আগামীর শতক, ধর্মহীনতা ও অপরাধ প্রবনতার সমস্যা ও ধর্ম, ইত্যাদি বিষয় ছিল । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর আমার জন্যে একটা বিরাট সুযোগ । এতে মার্কিন জনগণকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে । এর ফলে অনেকভাবে তাঁদেরকে জানার এবং বুঝার সুযোগ হয়েছে । দেখেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি মুক্ত সমাজ । মত প্রকাশ এবং সমিতি সংগঠন করার সকলের সমান অধিকার রয়েছে । আইনের চোখে সেখানে ধর্ম ও বর্ণের মধ্যে কোন বৈষম্য নেই । গণতন্ত্র যেন মার্কিন জনগনের ধ্যান এবং জ্ঞান । জনসমর্থন নিয়ে যাই আসুক সেটাই তাঁদের কাছে শিরোধার্য । তাঁদের ধারনা গণতন্ত্রের মাধ্যমে কোন মন্দ এলেও গণতন্ত্রের মাধ্যমেই তা দূর হয়ে যাবে ।
গণতন্ত্র মার্কিন বুদ্ধিজীবীদের জন্য একধরনের আফিমে পরিনত হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে । গণতন্ত্র যাই করুক তাতে তাঁদের কোন আপত্তি নেই । আলজেরিয়ার ব্যাপারে তাঁদের দ্বিমুখী নীতিতে তাঁদের কোন অনুশোচনা নেই । তারা পরিস্কার বলেছে, গণতন্ত্রের সিঁড়ি যারা গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করবে, তাঁদেরকে আমরা এ সিঁড়ি ব্যবহারের সুযোগ দিতে পারি না । এর উত্তরে যখন বলেছি, আপনাদের কথা যদি সত্যও হয় যে, তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করবে তবুও তাঁদের ক্ষমতায় যেতে দেয়া উচিৎ ছিল । তারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গেলে জনগণই তাঁদের আজ না হয় কাল ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিত । জনগনের যেটা দায়িত্ব সেটা আপনাদের হাতে তুলে নেয়া ঠিক নয় । তারা উত্তরে বলেছে, জনগন নামাবে সেটা একটা অনিশ্চিত ব্যাপার । গণতন্ত্র ধ্বংস করে কম্যুনিস্টরা ৭২ বছর ক্ষমতায় ছিল । মনে হয়েছে এক অতি গণতন্ত্র এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বল্গাহীনতা মার্কিন জনগনের মধ্যে তাঁদের জাতীয় লক্ষ্য ও আদর্শ সম্পর্কে একটা শূন্যতার সৃষ্টি করেছে । তাঁদের এই শুন্যতা বা লক্ষহীনতার সুযোগ গ্রহন করেছে ইহুদীরা ।
মার্কিন সমাজের আরেকটা বৈশিষ্ট্য আমাকে খুবই আকৃষ্ট করেছে, সেটা হল তাঁদের ইতিহাস প্রীতি এবং ঐতিহ্যপ্রীতি । তাঁদের জাতীয় নেতাদের তারা অসম্ভব ভালোবাসে । জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, জেফারসন- স্মৃতি সৌধে গিয়েছি । কোনটিতে বার কয়েক যাওয়া হয়েছে । প্রতিবারই সেখানে যা দেখেছি, তাঁকে অনেকটা ঈদ উৎসবের সাথে তুলনা করা চলে । বিশেষ করে কিশোর- তরুণদের উপস্থিতি খুবই বেশি । যাদুঘরগুলোতে দেখেছি এই দৃশ্য । আমেরিকানরা তাঁদের জাতীয় বীরদের, জাতির জন্য জীবন বিসর্জনকারী সৈনিকদের কেমন ভালোবাসে তাঁর জীবন্ত রূপ দেখেছি ভিয়েতনাম স্মৃতি সৌধ এবং অরলিংটন সমাধিভূমিতে গিয়ে । সেখানে ঈদ উৎসব ছিল না, ছিল শ্রদ্ধাবনত গর্বিত হৃদয় বালক- বালিকা, তরুন- তরুনী এবং বৃদ্ধ- যুবাদের মৌন জনস্রোত । দেখে আমার মনে হয়েছে নিহত সৈনিকরা যদি এই দৃশ্য দেখত, তাহলে তারা কৃতজ্ঞ এই জাতির জন্য একবার নয়, শতবার মরতে চাইতো । মার্কিনীদের এই ইতিহাস প্রীতি, জাতীয় নেতা এবং জাতীয় বীরদের প্রতি এই শ্রদ্ধা তাঁদের জাতীয় শক্তির এক অফুরান উৎস । এমন জাতির জীবনে নেতা ও বীরদের কখনো অভাব পরে না এবং জগত সভায় এমন জাতি তাঁদের অস্তিত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে চলে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের অবস্থা সম্পর্কে বলার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মের কি অবস্থা সে সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলা দরকার । আমাদের সফরের বিষয়ও ছিল এটা । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা শতকরা আশি ভাগেরও বেশি । কিন্তু কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না, এমন লোকের সংখ্যা সেখানে বাড়ছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার্চ ছাড়াও খৃষ্টান ধর্মীয় সংগঠনের সংখ্যা অসংখ্য । এর মধ্যে শত শত সামাজিক ও দাতব্য সংগঠনসহ ধর্মীয় বার্তা সংস্থা, ধর্মীয় রেডিও- টিভি নেটওয়ার্ক রয়েছে । আমরা একটি ধর্মীয় বার্তা সংস্থা, দুইটি ধর্মীয় রেডিও- টিভি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি । এর একটি রেডিও- টিভি নেটওয়ার্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ৩৩ টি দেশে এবং অপরটি ৪২ টি দেশে অনুষ্ঠান প্রচার করে । তারা দর্শকদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে ডোনেশন পেয়ে থাকে । তারা বলেছে, এটাই তাঁদের আয়ের মূল ভিত্তি ।
খৃষ্টান ধর্মীয় সংগঠনগুলো অত্যন্ত বিত্তশালী । কারো কারো মতে সরকারও এতো বিত্তশালী বা রিসোর্সফুল নয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খৃষ্টান বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে অনেক । তাঁর একটি আমরা পরিদর্শন করেছি । আমাদের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে তা সুন্দর সুসজ্জিত । খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিখ্যাত কিছু বুদ্ধিজীবী এবং সংগঠন রয়েছে, যারা চার্চ ও রাষ্ট্রকে আবার একত্র করতে চায় । তাঁদের মতে, রাজনীতি থেকে চার্চকে আলাদা করে রাখার ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রটাকে শয়তানরা এসে দখল করে নিয়েছে । ঐ শয়তানদের তাড়াতে হলে চার্চকে রাজনীতি করতে হবে । এদের সংখ্যা খুব নগণ্য । এদের সাথে আমাদের দেখা হয় নি । দেখা হলে বুঝা যেত, এদের সম্পর্কে যা শুনেছি তা সত্য কি- না ?
ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ- সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক মিঃ হেনরি এক প্রশ্নের উত্তরে আমাকে বললেন, মার্কিন সমাজ খুবই ধর্মভীরু, কিন্তু সামাজিক প্রতিকূলতার কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে । তাঁর মতে, তাঁদের ফাউন্ডিং ফাদারদের সামনে ছিল ইউরোপীয় অভিজ্ঞতা । ধর্ম ও রাষ্ট্রের রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বের রোমান অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে ফাউন্ডিং ফাদাররা চেয়েছিলেন রাষ্ট্র প্রশাসনকে ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে দূরে রাখতে । কিন্তু পরবর্তীকালে এর অপব্যাখ্যা, অপব্যবহার হয়েছে । শুধু ধর্ম থেকে রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ ঘটানো হয়নি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সবকিছু থেকেই ধর্মকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে । আমেরিকান খৃষ্টান ও খৃষ্টান ধর্মীয় গ্রুপগুলোও তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা চিন্তা করে না । তাঁদের প্রশ্ন করেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুলতঃ দুইটি পক্ষ, একটি ধর্ম অপরটি সেকুলার মতবাদ । সেকুলার মতবাদ নিজেই আজ এক ধরনের ধর্মে পরিনত হয়েছে । এই অবস্থায় রাষ্ট্র যেহেতু সেকুলারিজমের পক্ষে কাজ করছে সেহেতু বলা যায় রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে সেকুলার ধর্ম পালনকারীতে পরিনত হয়েছে । যার ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেকুলার হয়ে পড়ছে । এ অবস্থা চলতে থাকলে সমাজে ধর্মহীনতাই প্রবল হয়ে উঠবে না- কি? এ প্রশ্নের উত্তরে তারা স্পষ্টই বলেছেন, মানুষ যা চায় সেটাই হবে, গণতন্ত্রের এটাই আদর্শ । সেই সংগে তারা বলেছেন, রাষ্ট্র ধর্মের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যেমন কাজ করছে না, তেমনি ধর্মের বিরুদ্ধেও কাজ করছে না । রাষ্ট্র ও প্রশাসন যারা চালান তাঁরাও ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম পালন করেন ।
একটা মজার ব্যাপার হলো, মার্কিন চার্চ ও স্টেট আলাদা হওয়া এবং সেখানে সরকারী স্কুলে প্রার্থনার ব্যবস্থা না থাকার কারনে সেখানে বিবাজিত অবস্থা বিষয়ে এক সময় যে ধারনা পোষণ করতাম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তাঁর পরিবর্তন ঘটেছে ।
ধর্ম ও রাষ্ট্র আলাদা রাখার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খৃষ্টান, মুসলমান ও ইহুদীদেরকে মোটামুটিভাবে একমত দেখা গেছে । তবে কারন ভিন্ন ভিন্ন । মুসলমানরা মনে করে চার্চ ও স্টেট এক হয়ে গেলে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে এবং সংখ্যাগুরুর দয়ার পাত্র, এমনকি নির্যাতনের শিকারও তারা হতে পারে । অথচ চার্চ ও স্টেট আলাদা থাকায় সকল ধর্মের সমান অধিকার এবং সমান মর্যাদা রয়েছে । ইহুদীরাও এটাই ভাবে । আর খ্রিষ্টানদের যুক্তি হলো, তাঁদের ফাউন্ডার ফাদাররা ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতা সামনে রেখে রাষ্ট্র পরিচালিত ধর্মের নির্যাতন- নিপীড়ন থেকে নাগরিকদের রক্ষার জন্যই চার্চ ও স্টেট আলাদা রেখেছে । এর ব্যতিক্রম হলে দেশের ক্ষতি হবে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী স্কুলে ধর্ম শিক্ষা ও উপাসনার ব্যাপারে মিশ্র মতামত দেখা গেছে । খ্রিষ্টানরা সাধারনভাবে এর বিরুদ্ধে, খৃষ্টান কোয়ালিশন নামক একটি গ্রুপ এর বিরুদ্ধে নয় । সাধারনভাবে খ্রিষ্টানদের যুক্তি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুশোরও বেশি খৃষ্টান মত রয়েছে, এতো মতকে কোন শিক্ষা ব্যবস্থায় একোমডেট করা যায় না। মুসলমানরা স্কুলে ধর্ম শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষে, তবু সবাইকে এ ব্যাপারে খুব বেশি সিরিয়াস মনে হয় নি । অনেকে বলেছেন, এতে ধর্ম শিক্ষার প্রকার, প্রকৃতি, পরিমান ইত্যাদি নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দেবে, লাভের চেয়ে তাতে ক্ষতিই বেশি হবে । তারা বলেছেন, সানডে স্কুল এবং কমিউনিটি স্কুলগুলোতে ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা তারা করছে ।
এবার আসছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম প্রসঙ্গে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের আগমন ঘটে অনেকের মতে, প্রাথমিক ইউরোপীয় সেটলারদের সাথে । বিশেষ করে স্পেন ও আফ্রিকা থেকে তারা আসেন সৈনিক অথবা দাস হিসেবে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে আমাদের এসকোর্ট অফিসার ইরউইন কার্ণ ছিলেন নিউ মেক্সিকো অঙ্গ রাজ্যের মানুষ । তাঁর মতে স্পেন থেকে আসা ঐ ধরনের মানুষের বংশধর তাঁদের এলাকায় বেশ আছে । তাঁদের মুখে অপভ্রংশ আরবী শব্দ এখনো ব্যবহৃত হয় । তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন ইনশা’ল্লাহ শব্দ তারা ‘ওকালা’ শব্দের আকারে একই অর্থে ব্যবহার করে থাকে ।
যা হোক, পরবর্তীকালে আমেরিকায় মুসলমানদের আগমন শুরু হয় ১৮৭৫ সালের দিকে । উসমানীয় খিলাফত কালে সিরিয়া, লেবানন এলাকা থেকে মুসলমানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসে । তারপর ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচটি পর্যায়ে মুসলমানদের আগমন ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে । তাঁদের সাথে আজ যুক্ত হয়েছে ইসলাম গ্রহণকারী ব্লাক এবং হোয়াইট আমেরিকানরা । সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে আজকের মার্কিন মুসলিম সমাজ ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসলামের জন্যে উর্বর জমি বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে । মুসলমানরা আমেরিকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় । ১৯৭০ সালের পর মুসলমানদের সংখ্যা ও তৎপরতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । ১৯৮০ সালের পর এই বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত হয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতো মসজিদ আছে তাঁর শতকরা ৭৮% ভাগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৮০ সালের পরে । পক্ষান্তরে ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে ১৫% ভাগ মসজিদ, ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ৫% ভাগ এবং অবশিষ্ট ২% ভাগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৬০ সালের আগে । এ হিসাব থেকে বুঝা যায়, ইসলামের প্রচার ও প্রভাব ১৯৮০ সালের পরে কতো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের সংখ্যা বলা মুশকিল । অধিকাংশ মসজিদই গির্জা কিনে তৈরি করা হয়েছে । দোকান ভাড়া নিয়ে তাঁকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । এসবের অনেকগুলো মসজিদ হিসেবে রেজিস্টার্ড নয় । কিছু কিছু হিসাব মতে ৬০৮ টি মসজিদ রয়েছে। লস এঞ্জেলেসের বেলাল মসজিদ এবং শিকাগোর মুষ্টিযোদ্ধা মহাম্মাদ আলী মসজিদ বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে । ওয়াশিংটনের ইসলামিক সেন্টার মসজিদের কথা তো আমরা সকলেই জানি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রকাশনা রয়েছে ১৮ টি, অডিও- ভিডিও প্রকাশনা রয়েছে ১২ টি, ছেলে মেয়েদের ধর্ম শিক্ষার প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫০ টির বেশি, হাইস্কুল রয়েছে ৯৭ টি, কলেজ রয়েছে ২টি, দাওয়া ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৯ টি, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮ টি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু ভিত্তিক মুসলিম সংগঠন ( যেমন Coalition for free and independent Bosnia & Harzegovina, Democratic League of Kosovo. ) রয়েছে ২৫ টি, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন রয়েছে ৪১ টি, রিলিফ অর্গানাইজেশন রয়েছে ৪৫ টি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৫ টি । ইসলামিক যুব সংগঠন রয়েছে ২৫ টি এবং মহিলা সংগঠন রয়েছে ২১ টি । এছাড়া সেখানে আরও নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে মুসলমানদের ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের সংখ্যা ৭০ লাখ বলে মনে করা হয় । এর মধ্যে আফ্রো- আমেরিকান মুসলমান ২৯%, আরব মুসলিম ২১%, হিমালয়ান উপমহাদেশীয় মুসলিম ২৯%, উপমহাদেশীয় মিশ্র ১০% এবং অন্যান্য ১১% ভাগ ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে । লস এঞ্জেলেসে আফ্রো- আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটির নেতা আব্দুল করিম হাসান আমাদেরকে জানালেন, স্থানীয় নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানরা ব্যালেন্স অব পাওয়ার । স্থানীয় নির্বাচনে অনেক জায়গায় মুসলমানরা নির্বাচিত হচ্ছে । কিছুদিন আগে টেক্সাসের একটি শহরে একজন মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হন । নির্বাচিত উক্ত মেয়র বলেন, শহরে তাঁর পরিবারই একমাত্র মুসলিম পরিবার । মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আস্থাভাজন ভেবেই শহরের মানুষ তাঁকে ভোট দিয়েছে । স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা এ দেশে আরও ঘটেছে । অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার ব্যাপারে সেখানকার মুসলমানরা আশাবাদী । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত সমাজে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন । কথা প্রসঙ্গে ব্লাক মুসলিম নেতা আব্দুল করিম হাসান বিশেষভাবে জানালেন, মুসলিম দেশগুলোতে সন্ত্রাসমূলক কাজকে তারা খুব ভয় করেন । এই ধরনের কাজ মুসলমানদের খুব ক্ষতি করে, ইসলামের প্রচার কাজকে ব্যাহত করে এবং সুনাম ক্ষুন্ন করে । জনাব আব্দুল করিমের কাছে শুনে আমরা খুব খুশী হয়েছি যে, মুসলিম স্কুলগুলোর চরিত্র গঠনমূলক সুনামের কারনে অনেক খৃষ্টান বাবা-মা তাঁদের ছেলে-মেয়েকে মুসলিম স্কুলে পাঠায় । এমনকি ইহুদীদের ছেলে-মেয়ে পর্যন্ত মুসলিম স্কুলে পড়তে আসে ।
মুসলিম ও ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাধারন মার্কিনীদের কোন বিরূপ ধারনা নেই । তবে সম্প্রতি মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করায় তারা মুসলিম ও ইসলামী সংগঠনগুলোর ব্যাপারে সাবধান হচ্ছে ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবতাবাদী পরিচয়ের কিছু খৃষ্টান সংগঠন আছে, যারা সব ধর্মের মধ্যে একটা সম্প্রীতির চেষ্টা করছে । তারা চেষ্টা করছে তিনটি বৃহৎ ধর্মের ( খৃষ্টান, ইসলাম ও ইহুদী ) সাযুজ্যগুলোকে বড় করে তুলে ধরতে এবং তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে । যাতে করে এসব ধর্ম সম্পর্কে তাঁদের ভালো ধারনা হয় ।
ওয়াশিংটনের মিডল ইষ্ট ইনস্টিটিউটে এ ধরনের একটি ফিল্ম আমরা দেখেছি । এ ফিল্মটি ছাত্রদেরকে দেখানো হয় এবং এর উপর তাৎক্ষনিক একটা পরীক্ষাও নেয়া হয় । লস এঞ্জেলেসের ‘ক্রিস্ট্রাল ক্যাথেড্রালে’ গিয়ে এ ধরনের এর একটি সংগঠন দেখেছি । তাঁর নাম ‘খৃষ্টান এন্ড মুসলিম ফর পিস’ । এ সংস্থার যিনি ডাইরেক্টর তিনি কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনের উপর দুইটি বই লিখেছেন । কাশ্মীর গন নির্যাতনের উপর আপটুডেট এ্যাল্বাট তাঁর কাছে দেখলাম । মুসলমানদের ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহ আমাকে দারুনভাবে বিস্মিত করেছে ।
মার্কিন সমাজ খুবই গনতন্ত্রী, কিন্তু জাতীয় ব্যাপারে খুবই রক্ষনশীল । অকলাহামার ঘটনার প্রতিক্রিয়া থেকে প্রমান হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক ও শিক্ষিত জনগনের মধ্যেও দারুন উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব আছে । আরও প্রমান হয়েছে, মুসলমানদের সম্পর্কে তারা দারুন ভুল বুঝাবুঝির শিকার এবং এ কারনে তাঁদের কেউ কেউ মুসলমানদের প্রতি অধৈর্য হয়ে উঠছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের ধারনা ওক্লাহামার ঘটনায় কোন মুসলিম ধরা পড়লে বিভিন্ন জায়গায় রায়ট লাগতো । মুসলমানরা কর্মক্ষেত্রে যেতে পারতো না, মুসলিম ছাত্র- ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতো । ওকলাহামার ঘটনায় খ্রিষ্টানরা ধরা না পড়া পর্যন্ত অনেক জায়গায় মুসলমানরা প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল । মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে সংবাদ মাধ্যমের অপপ্রচার । অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, মার্কিন জনসাধারন সন্ত্রাসবাদকে খুবই ঘৃণা করে বিধায় তারা খুব সহজেই এ অপপ্রচারের শিকার পরিনত হয়েছে । বোধহয় এই কারনেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেখানেই মার্কিন মুসলমানদের সাথে কথা বলেছি, তাঁদের ভেতরে প্রবল সন্ত্রাসবিরোধী মনোভাব দেখেছি । তারা বলেছে, বিশ্বের কোথাও মুসলমানদের হাতে কোন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে মনে হয় আমরা এখানে দশ বছর পিছিয়ে গেলাম ।
ইসলাম গণতন্ত্রের পক্ষে নয়, মুসলমানরা গনতন্ত্রকে ক্ষমতায় যাওয়ার শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে, এই ধারনা মার্কিন বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে প্রবল । যাদের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে, তাঁদের আমরা এ ধারনা যে ভুল তা বুঝাতে চেষ্টা করেছি । ইসলামের প্রচার ও প্রসারের স্বার্থে তাঁদের এ ভুল ধারনা দূর করা দরকার ।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যাদের সাথে এবং যে সব খৃষ্টান সংগঠনের সাথে কথা বলেছি, তাঁদেরকে মুসলমানদের ব্যাপারে খুবই উদার দেখেছি । তারা বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত সমাজে মুসলমানদের সামনে এগুবার অনেক সুযোগ রয়েছে । অনেকের মধ্যে আবার ভুল বোঝাবুঝিরও কম নেই । যেমন নিউইয়র্কে আমাদের শেষ সাক্ষাৎকারটা ছিল ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব দি চার্চ অব ক্রাইস্ট ইন দি ইউ এস এ’ –এর কো ডিরেক্টর বি, এফ ব্রেইনারের সাথে । তিনি তাঁর অফিসে আমাদের আন্তরিকতার সাথে স্বাগত জানালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সংখ্যাধিক কমিউনিটি হিসেবে । কিন্তু আলোচনার এক পর্যায়ে বললেন, মুসলমানরা যেভাবে পশ্চিমকে শত্রু ভাবছে এবং যুদ্ধ ঘোষণা করছে, তাতে সৌহার্দ- সম্প্রীতির চেষ্টা সামনে এগুবে কি করে ?
সন্দেহ নেই ভুলবোঝাবুঝির এটা একটা বড় পয়েন্ট । এটা দূর করার চেষ্টা করেছি । আমি ব্রেইনারের জবাবে বলেছিলাম, ‘যুদ্ধ’ শব্দের এই ব্যবহার বোধ হয় ঠিক নয় । আর ‘শত্রু’ শব্দের বদলে ‘ভয়’, ‘অবিশ্বাস’, ‘বিক্ষুব্ধ’ ধরনের শব্দ ব্যবহার করাই মনে হয় সংগত হতো ।
তারপর তাঁকে বলেছিলাম, পশ্চিমকে ভয় করার, পশ্চিমকে অবিশ্বাস করার এবং পশ্চিমের উপর বিক্ষুব্ধ হবার মুসলমানদের যথেষ্ট কারন রয়েছে । প্রথম কারন হলোঃ আজকের পাশ্চাত্য মুসলিম ইস্টকে শাসন ও শোষণ করেছে । স্থানভেদে দেড়শ, দুইশ এবং আড়াইশো বছর পর্যন্ত । এই শাসন- শোষণের বেদনা মুসলমানরা ভুলে নি । ভুলতে পারেনি পশ্চিমেরই কিছু দেশের কিছু ভুমিকার কারনে । উপনিবেশ তারা ছেড়ে দিলেও শক্তি, অর্থ ও বিজ্ঞান- টেকনোলজির জোরে তারা আধিপত্যবাদী হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখে মুসলিম দেশগুলোর উপর । আরেকটি কারন বলেছিলাম, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, বসনিয়া প্রভৃতি ইস্যুতে পশ্চিম কার্যত হয় মুসলমানদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, নয়তো পশ্চিমের কারনেই সমস্যাগুলির সমাধান হয়নি অথবা সমাধান বিলম্বিত হয়েছে । স্লোভেনিয়া- সার্বদের মধ্যে যুদ্ধ তিন সপ্তাহ এবং ক্রোয়েশিয়া- সার্বদের মধ্যে যুদ্ধ তিন মাসের বেশি চলতে দেয়া হয়নি, অথচ বসনিয়ার যুদ্ধ আজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হচ্ছে না । এই জলজ্যান্ত ঘটনাগুলো পশ্চিমের বিরুদ্ধে মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে তুলছে । শেষ যে কারণটির কথা আমি মিঃ ব্রেইনার কে বলেছিলাম, সেটা মুসলিম দেশগুলোতে পশ্চিমের কিছু এন,জিও, এর ভূমিকা নিয়ে । দারিদ্রের সুযোগ গ্রহন করে তারা সাহায্যের নামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে । ঔপনিবেশিক শাসনের পুরানো জ্বালা- পীড়িত মানুষ একে নতুন এক ঔপনিবেশিক অভিযান বলে মনে করছে । মুলতঃ এসবই পশ্চিমের প্রতি মুসলমানদের ভয়, অবিশ্বাস এবং বিক্ষুব্ধতার জন্য দায়ী ।
মিঃ ব্রেনার এসব কারনের ব্যাপারে আমার সাথে একমত হয়েছিলেন, তবে বলেছিলেন, এর কোনটির জন্যই পশ্চিমের জনগন দায়ী নয়, দায়ী একশ্রেনীর সরকার ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখেছি, মুসলমানদের ব্যাপারে খৃষ্টান এবং ইহুদীদের দৃষ্টিভংগি একেবারেই পৃথক । ইহুদীদের আচরন অনেকটাই মারমুখো । আমরা নিউইয়র্কে ‘কাউন্সিল অব জুইফ্র এ্যাসোসিয়েসান্স’ এর নির্বাহী পরিচালকের সাথে দেখা করেছিলাম । তিন জায়গায় তিন বার বডি সার্চ করার পর আমাদেরকে তাঁর অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো । তিনি কথা শুরুর প্রথমেই অভিযোগ তুলেন । বলেন যে, মুসলমানরা সন্ত্রাসের জন্য আমেরিকায় অস্ত্র সংগ্রহ করছে এবং অর্থ যোগাড় করছে । তাঁর মতে, সারা বিশ্বে মুসলমানরাই প্রধান টেররিষ্টের ভূমিকায় আছে । এ অভিযোগের জবাব আমরা দিয়েছি । বলেছি, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিন্দানাও ইত্যাদির মতো জায়গায় যা ঘটছে তা মুলতঃ স্বাধীনতা যুদ্ধ, সন্ত্রাস নয় । আর এ যুদ্ধের সাথে মুসলমানিত্ব বা ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই । নিছকই ভু-খন্ডগত সংঘাত এগুলো । কিন্তু মনে হয়েছে, তারা সুপরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বদনাম ছড়াচ্ছে । কিন্তু কোন খৃষ্টান ব্যক্তি বা সংগঠনের মধ্যে এই মনোভাব আমরা দেখিনি । খ্রিষ্টানরা সব সময় মুসলমানদের সাথে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার কথা বলেছে, ফান্ডামেন্টালিজম শব্দটা মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য নয় তাও তারা বলেছে । উপরন্তু তারা ওকলাহামার ঘটনায় মুসলমানদের যে কিছু অসুবিধা হয়েছে, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে । খৃষ্টান অনেক নেতা বলেছেন, ওকলাহামার ঘটনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সময় তারা মুসলিম নেতাদের কাছে গিয়েছেন, তাঁদের সাহস দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে ওকলাহামার ঘটনায় মুসলমানদের অভিযুক্ত করার নিন্দা করেছেন ।
খ্রিষ্টানদের একটা মহলের মধ্যে প্রবল ইহুদী বিরোধী মনোভাব দেখেছি । টিনেসিতে থাকা কালে একদিন টিভিতে প্রাইভেট চ্যানেলে দেখলাম, একজন বক্তা টেলিভিশনের একটা প্রোগ্রামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য এককভাবে ইহুদীদের দায়ী করলেন । আরেকদিন প্রাইভেট চ্যানেলের একটা টিভি সাক্ষাৎকারে একজনকে বলতে শুনলাম, ‘ইহুদীরা আমাদের জেসাসকে হত্যা করেছে, আমাদের বাইবেলের তারা এক নম্বর শত্রু । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদীদের বাস করার অধিকার নেই ।’
আমার এই ছোট আলোচনা শেষ করার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই আমাদের সফরকালে ‘ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার একজন নেতা আমাদের জানালেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম সবচেয়ে দ্রুত প্রসারমান ধর্ম । ক্রমবর্ধমান হারে আমেরিকানরা ইসলামিক সেন্টারগুলোতে যাচ্ছে এবং ইসলামিক বইয়ের বিক্রিও তাঁদের মধ্যে বেড়েছে । ইসলামকে বিকৃত করে দেখানো এবং ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের উত্তেজনাকর খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃণমূল পর্যন্ত ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করছে । আরেকজন আমেরিকান মুসলিম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছেন, ২০ বছর আগেও একথা কল্পনার বাইরে ছিল যে, আমেরিকানদের একটা নতুন প্রজন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের পতাকা বহন করবে ।
ইউএস ইনফরমেশন সোসাইটির ওয়ার্ল্ড নেট, ডায়ালগে ইসলাম গ্রহণকারী আরেকজন আমেরিকান প্রফেসরও এই কথাই বলেছেন । তাঁর ভাষায়, “Islam tends to move itself. We have a rising class of Americans who are scholor , who are familiar with the religion.”
আনন্দের বিষয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় ও জাতীয় প্রশাসনের ভুমিকাও ক্রমে মুসলমানদের অনুকূল হয়ে উঠছে । মুসলমানদের জন্য অনুকূল সিটি ল’ প্রনীত হচ্ছে । সংবাদ মাধ্যমে মুসলমানদের হলিডের স্বীকৃতি আসছে ও প্রচার হচ্ছে । ঈদের নামাযের জন্য স্থান এবং গাড়ি পার্কের বিশেষ সুবিধা অনেকক্ষেত্রে মুসলমানরা পেতে শুরু করেছে । মার্কিন সিনেট এবং কংগ্রেসের উদ্বোধনের সময় কুরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা হয়েছে । ঈদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুসলিম সমাজের জন্য বানী দেন ।
এই ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ও মুসলমানরা মার্কিন সমাজ ও রাষ্ট্রের অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংগে পরিনত হচ্ছে ।
( প্রবন্ধটি ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে লিখিত )