জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

একুশ শতকের এজেন্ডা

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. ভূমিকা
  2. আমেরিকাঃ নাইন ইলেভেন এর পর
  3. থার্ড মিলিনিয়াম, উন্নয়ন ও বিশ্ব
  4. বাংলাদেশ সংস্কৃতির স্বরূপ সন্ধান
  5. মানবাধিকারের স্বর্ণযুগ
  6. আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন     
  7. একুশ শতকের এজেন্ডা
  8. ঊনবিংশ শতকের অনন্য জাতীয় উত্থান
  9. ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার পুনরুজ্জীবন
  10. সোনালী সূর্যের প্রত্যাশা
  11. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম
  12. বিশ শতকে মুসলিম জাগরনের সূচনা পর্ব
  13. পোপ, ক্রুসেডের পাপ ও পাশ্চাত্য
  14. পশ্চিমের তথ্য –সাম্রাজ্য
  15. নতুন বিশ্ব- ব্যবস্থার বিকল্প
  16.   সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির ইতিকথা
  17. দিকে দিকে পুনঃজ্বলিয়া উঠিছে
  18. সিপাহী বিপ্লবোত্তর মুসলিম রাজনীতি
  19. মুসলিম সংহতি – আন্দোলন
  20. দ্বিতীয় বঙ্গ বিভাগ
  21. স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি- দৃশ্য
  22. আধুনিক সভ্যতার সূতিকাগার
  23. অপরাধ দমনের দর্শন

মানবাধিকারের স্বর্ণযুগ

বাংলা ভাষায় ‘মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি’ বলে একটা প্রবাদ আছে। হঠাৎ মায়ের চেয়ে যখন মাসী বেশি দরদী হয়ে যান, তখন তার পেছনে একটা মতলব থাকে-এ কথা বলাই এ প্রবাদের লক্ষ্য। প্রবাদের এ বক্তব্যের সাথে পাশ্চাত্যের ওরিয়েন্টালিস্টদের আচরণের একটা মিল আছে। ওরা এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সাংঘাতিক প্রবক্ত সেজেছে। আর ইসলামকে মানবতাবিরোধী ও মধ্যযুগীয় এবং চরমপন্থী ও অসহিষ্ঞু বলা হচ্ছে। অথচ এই সেদিন মাত্র ১৯৪৮ সালে ওরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবাধিকার আইন পাস করায়। অন্যদিকে সেই ৬১০ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের মহানবী (স) ঘোষণা করেছেন যে, বংশ, জাতি, নির্বিশেষে সব মানুষই সমান। শুধু ঘোষণা করা নয়, তাঁর এবং খিলাফতে রাশেদার আমল এ ঘোষণা বাস্তবায়নের স্বর্ণযুগ ছিল। অহঙ্কারে অন্ধ ওরিয়েন্টালিস্টরা যুদ্ধবন্দীদের অধিকার সম্পর্কে বিশ শতকের মাঝামাঝি আইন বিধিবদ্ধ করে, অথচ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের মহানবী (স) বদর যুদ্ধের পর যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে বিধিনিয়ম নির্ধারণ করেন যে, বিজয়ী সৈনিকরা না খেয়েও যুদ্ধবন্দীদের খাওয়াবেন। মাত্র ১৮৬৩ সালে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ব প্রথা বন্ধ হয়। এ বন্ধ করার আইন পাস করতে যে গৃহযুদ্ধ লেগেছিল, তাতে সোয়া ৬ লাখ মানুষ নিহত হয়। অথচ সাড়ে তেরশ বছর আগে ইসলামের নবী(স) দাসপ্রথা বিলুপ্তির সূচনা করেন এবং দাসরা মুক্ত হতে থাকে। ইসলাম এও বিধান করে যে, একজন দাস মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার খাওয়া, পড়া ইত্যাদি সংক্রান্ত অধিকার তার মালিকের সমপর্যায়ে হবে। ১৮৩৫ সালে মার্কিন মেয়েরা তাদের জন্য প্রথম স্কুলে যাবার সুযোগ পায়। অন্যদিকে ইসলাম ১৪শ বছর আগেই মেয়েদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে। ১৮৪৮ সালে মার্কিন মেয়েরা সম্পত্তি ভোগের অধিকার লাভ করে। আর ইসলাম তার শুরুতেই পিতা, স্বামী প্রমুখ আত্মীয়ের সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সুনির্দিষ্ট করে দেয়। ভোটাধিকারও মার্কিন মেয়েরা পায় মাত্র ১৯২০ সালে। আর মুসলিম মেয়েরা এ রাজনৈতিক অধিকার পেয়েছে পুরুষদের সাথে সাথেই। এ হতচ্ছাড়া অবস্থা যে পাশ্চাত্যের, সেই পাশ্চাত্য আজ ইসলামকে মানবাধিকার শেখাতে চায়। পাশ্চাত্যের এ অজ্ঞতার কারণ পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবিদের সত্য গোপন। ওদের আন্তর্জাতিক আইন রচনার ইতিহাস শুরু গ্রিসের নগর রাষ্ট্র দিয়ে। তারপর রোমান সভ্যতার বর্ণনা দিয়ে তারা লাফ দিয়ে চলে আসে আধুনিক যুগে। মাঝখানের ইসলামি সভ্যতার অবদানের কথা তারা ভুলে যান অথবা সেদিক হতে তারা চোখ ফিরিয়ে রাখেন। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, গ্রীক ও রোমান সভ্যতায় ইসলামের মত আন্তর্জাতিক আইনের গণতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ছিল না। পাশ্চাত্যের এ অন্ধত্বতাড়িত প্রোপাগান্ডার কারণেই এবং মুসলিম দেশসমূহে ইসলামের পূর্ণ অনুশীলন না থাকার ফলেই ইসলামের মানবাধিকার ও অন্যান্য বিষয়ে বার বার আমাদেরকে নতুন করে কথা বলার জন্য চেষ্টা করতে হয়। চেষ্টা করতে হয় মানুষের জন্য স্রষ্টার মনোনীত শেষ জীবন বিধান ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে। অন্যান্য সব দিকের মত মানবাধিকার প্রশ্নেও ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ আসন দিয়েছে। খিলাফতে রাশেদার যুগ ছিল মানুষের এ অধিকার বাস্তবায়নের সোনালী যুগ।

খিলাফতে রাশেদা মহানবী (স) এর প্রতিষ্ঠিত শাসননীতি এবং শাসন কার্যক্রমেরই একনিষ্ঠ উত্তরাধিকার। নববী শাসনে মানুষের ইহজাগতিক কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যাভিসারী জীবন নীতি ও শাসন ব্যবস্থার যে কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছিল, খিলাফতে রাশেদার শাসনে সে ফুলই পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে ওঠে। শাসন কার্যক্রমের একটা মূল বিষয় হলো অধিকার, যেমন নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের অধিকার, রাষ্ট্রের ওপরে নাগরিকদের অধিকার। রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকতে পারে, বিদ্রোহীও থাকতে পারে। রাষ্ট্রের ওপর তাদের কি অধিকার থাকবে এবং তাদের উপর রাষ্ট্রের কি অধিকার থাকবে, এসবও শাসন কার্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া দুই রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ ও শান্তিকালীন পারস্পরিক কি অধিকার থাকবে তাও রাষ্ট্রের শাসন নীতির একটা অংশ। এসব অধিকারের ভিত্তিতেই একটি রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করে থাকে। কিন্তু ইসলামে এ অধিকারসমূহ ও আইনের উৎস শাসক বা সরকার নয়। আল্লাহর ওহী আল কোরআন এবং মহানবী (স) এর সুন্নাহ হলো এসব অধিকার নির্ধারণ ও আইনগত মূলনীতির উৎস। খিলাফতে রাশেদার শাসননীতি ও শাসন কার্যক্রমের মূল উৎস ছিল এ আল কোরআন ও সুন্নাহ। আইন বড় কথা নয়। আইনের অনুসরণ ও বাস্তবায়নের উপর অধিকারসমূহের সংরক্ষণ নির্ভর করে থাকে। আর আইনের অনুসরণ ও বাস্তবায়ন নির্ভর করে জবাবদিহিতার উপর। এ ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্র ও মুসলমানরা অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার সদা জাগরুক অনুভূতি এবং পরকালে পুরস্কারের আশা ও শাস্তির ভয় মুসলমানদেরকে আইনের অনুসরণ ও বাস্তবায়নে সঠিক পথে পরিচালিত করে। ধর্মহীন, ধর্মনিরপেক্ষ এবং নামমাত্র ধর্মানুসারীদের এই সুযোগ নেই বলে আইনের প্রণয়ন, অনুসরণ ও বাস্তবায়নে তারা চরম স্বেচ্ছাচারী হয়ে থাকে। ইসলামী রাষ্ট্র কল্যাণধর্মী হওয়ার এবং অনৈসলামিক রাষ্ট্র নিপীড়নমুখী হওয়ার এটাই মূল কারণ। খেলাফতে রাশেদা ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগ, তাই নাগরিক অনাগরিক, মুসলিম অমুসলিম, শত্রু মিত্র নির্বিশেষে মানবাধিকার বাস্তবায়নেরও স্বর্ণযুগ ছিল খিলাফতে রাশেদা।

মহান রাব্বুল আলামীনের গোটা সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু মানুষ। সৃষ্টির সব আয়োজন মানুষকে কেন্দ্র করেই। আকাশ-বাতাস, তৃণলতা, পশু পাখি, রোদ বৃষ্টি, গাছ পালা সব মানুষেরেই প্রয়োজনে। এ কারণেই মানুষ আল্লাহ খলিফা, আল্লাহর প্রতিনিধি, আল্লাহর পক্ষ হতে সৃষ্টি জগতের শাসক। খিলাফতের এ দায়িত্ব কোন বিশেষ মানুষের নয়, কোন বিশেষ গ্রুপের নয়, প্রতিটি মানুষের উপরে খিলাফতের এ দায়িত্ব ন্যস্ত। খলিফা হিসেবে প্রত্যেকে একে অপরের সমান। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এবং যোগ্যতা ও সুযোগের অসমতার কারণে মানুষের মধ্যে কেউ শাসক, কেউ শাসিত, কেউ ধনী, কেউ গরীব হতে পারে। কিন্তু মানুষ হিসেবে তার মৌলিক অধিকারগুলো পাওয়া এবং সকল ব্যাপারে সুবিচার লাভ করা তার অলঙ্ঘনীয় অধিকার। ইসলামি ব্যবস্থাতেই মাত্র মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। এ নিশ্চয়তার স্বর্ণযুগ খিলাফতে রাশেদার শাসনকাল।

মানুষের জন্ম ও পরিচয়ের দিকটি আবহমান কাল ধরে মানুষের অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে আসছে। আজও পাশ্চাত্যে বর্ণ, ভাষা, দেশভিত্তিক কৌলীণ্য কাউকে বড় করছে, আবার কাউকে ছোট করছে। কাগজে কলমে আজ পাশ্চাত্য দেশগুলো থেকে বর্ণবাদের উৎখাত ঘটলেও মন থেকে এর উৎখাত ঘটেনি। কিন্তু ইসলাম শুরু হতেই এ বর্ণ ও ভাষাবাদী পার্থক্যের অবসান ঘটায়। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের অধীনে প্রথম সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেন একজন কৃতদাসপুত্র, যার অধীনে হযরত ওমর (রাঃ) একজন সামান্য সৈনিক ছিলেন। ইসলাম শুধু বিলোপ করেনি বংশপরিচয়। তার কারণ ইসলাম মানুষের সামাজিক কাঠামোতে আত্মীয়তা এবং পরিবারের বন্ধনকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছে।

মানুষে মানুষে পার্থক্যের একটা বুনিয়াদ হলো জাতিগত কৌলীন্যবোধ। এ জাতিগত অহমিকা সহাবস্থানের অন্তরায়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার অহমিকা থেকে। আজও বুশ ব্লেয়ারের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ সন্ত্রাস দমনের জন্য নয়, বরং পাশ্চাত্যকে বিশেষত মার্কিনীদের সুপার পাওয়ার হওয়ায় জাতিগত অহমিকাকে বিশ্বে প্রভুর আসনে বসাবার জন্য। এ অহমিকার জন্ম পাশ্চাত্য সমাজে তাদের ইতিহাসের শুরু থেকে। গ্রিক সভ্যতার ঘোষণা হলো, ‘যারা গ্রিক নয় তারা গ্রিকদের ক্রীতদাস হবে এটাই প্রকৃতির ইচ্ছা’ আর পৃথিবীর তিরিশ ভাগের উপরও অধিকার বর্তায়নি সেই রোমকরাও বিশ্বাস করতো-তারাই পৃথিবীর মালিক, পৃথিবীর সব সম্পদ তাদের জন্যই। তারা নিজেদের পরিচয় দিত পৃথিবীর সব মানুষের প্রভু বলে। আর আজকের পাশ্চাত্যের বন্ধু ইয়াহুদীদের ঘোষণা হলোঃ ‘যখন তোমার পূজনীয় প্রভু কোন নগরকে তোমার অধীন করবেন, তখন নগরের প্রতিটি পুরুষকে তলোয়ারের তীক্ষ্মতায় হত্যা করো। তোমার শত্রুর সবকিছু তুমি ভোগ করবে।’ অন্যদিকে মুসলমানরা কল্যাণের প্রবক্তা হিসেবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি এবং তাদের কল্যাণ ও মুক্তির আদর্শ ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদর্শ একথা ঠিক, কিন্তু ইসলাম অন্য জাতির ন্যায্য অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সহাবস্থানকে স্বাভাবিক হিসেবে ঘোষণা করেছে। শত্রু হলেও শত্রু যেহেতু মানুষ তাই তাদের মৌলিক ও ন্যায্য অধিকারের সংরক্ষণ করেছে ইসলাম। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর সৈন্যবাহিনীকে শত্রু দেশে পাঠানোর সময় নির্দেশ দিতেন, “অর্থ অপহরণ করো না, তসরূপ করো না, প্রতারণা করোনা। শিশুকে কিংবা বয়োবৃদ্ধকে কিংবা স্ত্রীলোককে হত্যা করো না। খেজুর গাছ কাটবেনা বা দগ্ধ করবে না। কোন ফলের গাছ কাটবে না। গীর্জা ধ্বংস করো না, ফসল দগ্ধ করো না।” আর হযরত ওমর (রাঃ) এর নির্দেশ হলো, “যুদ্ধে ভীরুতা প্রদর্শন করো না। তোমার শক্তি থাকলেও কারো অঙ্গচ্ছেদ করো না, বিজয়ী হলে বাড়াবাড়ি করো না। বৃদ্ধ ও নাবালককে হত্যা করো না, বরং দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের সময় তাদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো।”

ইসলামে এ মানবিকতার শ্রেষ্ঠত্ব এবং পাশ্চাত্যের পৈশাচিকতার দৃষ্টান্ত ইতিহাস বহুবার প্রত্যক্ষ করেছে। ক্রুসেডের যুদ্ধে মুসলমানরা যখন জেরুজালেম দখল করে, তখন একজন খৃস্টান ইহুদীর গায়ে হাত দেয়া হয় নি। কিন্তু পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান বাহিনী জেরুজালেম দখল করার পর নগরীর ৭০ হাজার নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে তারা হত্যা করে। বিনা প্রমাণে, বিনা বিচারে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে যে গণহত্যা চালালো তা তাদের ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। আর মুসলমানদের আদর্শ ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হলো সহনশীলতা ও সহাবস্থানের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস। গ্রিক ও রোমান সভ্যতা যেখানে বলেছে অন্যসব মানুষকে দাস বানাবার জন্য, সেখানে হযরত ওমরের (রা) শাসনকালে সিরিয়ার একজন ধর্মজাযক ইউরোপের একজন বন্ধুকে লিখেছিলেন, “এই সব আরব যাদেরকে আল্লাহ এই যুগে প্রভুত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন, তাঁরা আমাদেরও প্রভু হয়েছেন। কিংবা তাঁরা খ্রিষ্ট ধর্মের সাথে আদৌ কোন সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না, বরং তাঁরা আমাদের ধর্ম রক্ষা করে, আমাদের ধর্মজাযক ও সাধুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং আমাদের গীর্জা ও মঠে চাঁদা প্রদান করে।” ইতিহাসে এমন কাহিনীর শেষ নেই। হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন আমলে একটি বিজিত দেশে হযরত ওমর (রা) একটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। কারণ মসজিদের স্থানটি একজন অমুসলিমের কাছ হতে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। হযরত ওমর মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পর ঐ জায়গা ঐ অমুসলিমকে ফেরত দেয়া হয়।

গ্রিক ও রোমান সভ্যতা এবং আজকের পাশ্চাত্য কোন দেশ দখল করলে সেখানকার মানুষকে দাসে পরিণত করেছে এবং তাদের সবকিছুকে ভোগের বস্তু হিসেবে ধরে নিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এর প্রমাণ দুনিয়ার মানুষ দেখেছে। অন্যদিকে ইসলাম বিজিত দেশের মানুষকে দেখেছে মানুষ হিসেবে। তাদের মৌলিক অধিকারকে পবিত্র জ্ঞান করেছে। খিলাফতে রাশেদার যুগে কোন নতুন ভূখন্ড মুসলমানদের দখলে এলে সেখানকার মানুষকে আর শত্রুর দৃষ্টিতে দেখা হতো না। মুক্ত মানুষ হিসেবে তাদের এ অধিকার দেয়া হতো যে, তারা একবছর সময়কালের মধ্যে যেন সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তাদের পছন্দমতো অন্য কোন দেশে চলে যাবে, না মুসলিম দেশের নাগরিক হিসেবে বসবাস করবে। মুসলিম দেশের নাগরিক হিসেবে থাকলে অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও যোগ্যতার ভিত্তিতে খিলাফতে রাশেদার অধীনে রাষ্ট্রের বড় বড় পদে তাদের নিয়োজিত করা হতো। যিযিয়ার প্রশ্নে পশ্চিমা ঐতিহাসিকদের মতে, অমুসলিমরা মুসলিম রাষ্ট্রে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হতো। এ অভিযোগ মিথ্যা। যিযিয়া কোন নিপীড়নমূলক বা বৈষম্যমূলক কর নয়। অমুসলিমরা যুদ্ধে না যাওয়ার বিনিময়ে এ নিরাপত্তা ট্যাক্স দিয়ে থাকেন।মুসলিম নাগরিকরা যুদ্ধে গিয়ে জীবন ও সম্পদের যে ঝুঁকি নেয়, সেই তুলনায় অমুসলিম নাগরিকদের এই নিরাপত্তা কর খুবই কম। বিজিত দেশের অমুসলমানদের সম্পদে হাত দেয়া হয় না, তাদের উপর যে জিযিয়া ধার্য্য করা হয় তাও তাদের সাধ্য অনুসারে এবং নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থের উপর কোন জিযিয়া আরোপ করা হয় না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যদি অমুসলিমদের নিরাপত্তা দিতে ইসলামি সরকার ব্যর্থ হতো, তাহলে জিযিয়া হিসেবে আদায়কৃত অর্থ অমুসলিমদের ফেরত দেয়া হতো। হযরত ওমর (রা) এর যুগে মুসলমানরা হেমস দখল করেছিল। পরবর্তীকালে সামরিক প্রয়োজনে মুসলমানদের যখন হেমস হতে সরে আসতে হলো, তখন মুসলিম সেনাপতি অমুসলিমদের হাতে তাদের জিযিয়া করের টাকা ফেরত দিয়ে বলেছিলেন, “আমরা তোমাদের হেফাজত করব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। যেহেতু আমরা তা পারছি না, তাই তোমাদের অর্থের উপর আমাদের অধিকার নেই”। অধীন বা বিজিত দেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি মর্যাদা দেয়ার, নাগরিকদের কাছ হতে আদায়কৃত টাকা ফেরত দেয়ার এমন দৃষ্টান্ত পাশ্চাত্যের গোটা ইতিহাসে খুঁজলে একটিও পাওয়া যাবে না। বরং পাশ্চাত্যের তো এটাই ঐতিহ্য যে, তাদের সেনাদল যখন কোন দেশ হতে পশ্চাতপসরণে বাধ্য হয়, তখন তারা পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করে এবং লু্ন্ঠন ও ধ্বংসের মাধ্যমে সে ভূখন্ডের মানুষকে সর্বস্বান্ত করে। রাশিয়ার পোড়ামাটি নীতির কাছেই জার্মান বাহিনীর পরাজয় ঘটেছিল। আফগানিস্তানে রুশ বাহিনী যে পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করেছে এবং আজ পাশ্চাত্য বাহিনী আফগানিস্তানে সে পোড়ামাটি নীতিই অনুসরণ করেছে, তার সাক্ষী আজ গোটা পৃথিবীর মানুষ। অদৃষ্টের পরিহাস, এই পাশ্চাত্যই আজ মুসলমানদের মানবাধিকার শেখাতে চাচ্ছে।

যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে আল্লাহর নবী (স) ও খিলাফতে রাশেদার যুগে মানবিকতার এক চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল। কোন যুদ্ধবন্ধীকে হত্যা করা মুসলিম আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। বলা হয়, বন্দীকে পর্যাপ্ত সুখাদ্য দিতে হবে। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। বন্দীদের উত্তাপ ও শৈত্য হতে রক্ষা করতে হবে। তারা কোন প্রকার কষ্ট অনুভব করলে, দ্রুত তা দূরীভূত করতে হবে। বন্দীদের মধ্যে কোন মাতাকে তার সন্তান থেকে, কোন আত্মীয়কে অন্য আত্মীয় হতে আলাদা করা যাবে না। বন্দীদের ব্যক্তিগত মান-মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। বন্দীদের কাছ হতে জবরদস্তি কোন কাজ নেয়া যাবে না। যুদ্ধবন্দী সংক্রান্ত এ নীতিমালা মুসলমানরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। মুসলমানরা নিজে না খেয়ে বন্দীদের খাইয়েছে। নিজেরা শীতে কষ্ট করে বন্দীদের আরামদায়ক পোশাক পরিয়েছে। যুদ্ধবন্দী সংক্রান্ত মুসলিম নীতিমালার মত এত বিস্তারিত নীতিমালা পাশ্চাত্যে নেই। বিশ শতকের মাঝামাঝি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রণীত যুদ্ধবন্দীদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি মুসলিম আইনের মতো এত মানবিক নয়। তবু যেটুকু আইন পাশ্চাত্য অবশেষে করেছে সেটুকুও তারা পালন করছে না। এই সেদিন আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী আফগান বন্দীদের পশুর মত হত্যা করেছে। কালা-ই-জাহাঙ্গীর দূর্গের নিরপরাধ কয়েক সহস্র মানুষের রক্তের দাগ মানুষের মন হতে মুছে যাবার নয় কোন দিনই। পণ্যবাহী কন্টেইনারে তুলে শত শত বন্দীকে যেভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু ইউরোপের রোমানদের মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। পাশ্চাত্যরা শিক্ষিত হয়েছে বটে , কিন্তু প্রকৃত মনুষ্যত্ব তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় নি। তারা মনের দিক থেকে এখনো সেই মধ্যযুগে অবস্থান করছে, যখন বন্দীকে হিংস্র ক্ষুধার্ত পশুর মুখে তুলে দেওয়া হতো। তথাকথিত আল কায়েদা ও তালেবান বন্দীদের ক্যারিবিয়ান সাগরের ‘গুয়ানতেনামো’ তে যেভাবে, যে পরিবেশে রাখা হয়েছে সেভাবে পশুকেও তার খোয়াড়ে রাখা হয় না। এক্ষেত্রে স্বৈরাচারী নিপীড়ক স্টালিনকেও হার মানিয়েছে গণতন্ত্রী বুশ। সোভিয়েত বন্দী শিবিরগুলোর অবস্থা আমেরিকার ‘গুয়ানতেনামো’ হতে অনেক ভাল ছিল। এ বুশরাই আবার মানবাধিকারের শ্লোগান দেয়। বুশও নিঃসন্দেহে একজন শাসক। খিলাফতে রাশেদার কাছে শিখুন মানবাধিকার কাকে বলে। তারপর তাদের মুখে মানবাধিকারের শ্লোগান মানাবে।

শত্রুতারও যে কিছু নীতিমালা আছে, শত্রুদেরও যে কিছু অধিকার আছে, তা ইসলামই মানুষকে উপহার দিয়েছে। রেডক্রস প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত হয় ১৮৬৪ সালে। যার ফলে যুদ্ধকালীন সময়ে পক্ষ নির্বিশেষে নিরপেক্ষ চিকিৎসা ও সেবার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ রেডক্রস প্রতিষ্ঠার সাড়ে ১২শ বছর পূর্বে ইসলাম ঘোষণা করে, চিকিৎসা পুরোপুরি মানবীয় সেবা। চিকিৎসক ও সেবাদানকারীদের কোন অনিষ্ট করা যাবে না। মহানবী (স) এবং খিলাফতে রাশেদার সময়ে সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক থাকতো যারা প্রয়োজনে অমুসলিম শত্রুদেরও চিকিৎসা করেছেন।

চরম শত্রুর ধন-সম্পত্তিকেও ইসলাম পবিত্র আমানত মনে করে। বিনা বিচারে এবং সঙ্গত কারণ ছাড়া শত্রু বা তার সম্পদের কোন ক্ষতি করাকে ইসলাম অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। বৈধ অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রীয় কোন কর্মচারী, এমনকি সর্বোচ্চ কর্মচারীও যদি শত্রু দেশ বা শত্রুপক্ষের সম্পদের ক্ষতি করে, তাহলে তার ক্ষতিপূরণ ইসলামি রাষ্ট্রের জন্যে অপরিহার্য্য হয়ে দাঁড়ায়। সিরাতে ইবনে হিশামে একটা দৃষ্টান্তের উল্লেখ আছে। বৈধ অনুমতি ছাড়া বনু জাযিমার প্রাণ ও সম্পদের কিছু ক্ষতি করা হয়েছিল। এ বিষয়টি ইসলামি সরকার জ্ঞাত হবার পর বনু জাযিমার প্রত্যেকটি প্রাণের বিনিময়ে যুদ্ধপণ দেয়া হয়েছিল। এমনকি নিহত কুকুরের জন্যও ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। মানবাধিকারের শ্লোগানে মুখর পাশ্চাত্যের ইতিহাসে এ ধরনের কোন মহৎ মানবিক দৃষ্টান্ত নেই। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী জীবন ও সম্পদের এমন কিছু ব্যাপক ক্ষতি করেছে যা নাকি ভুল করে সংঘটিত হয়েছে বলে তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে। কিন্তু এর জন্যে মার্কিন সরকার উপযুক্ত কোন ক্ষতিপূরণ দেয় নি। ইসলামি বিধান মতে যুদ্ধকালীন সময়েও শত্রুর ঋণ ও আমানত নষ্ট হয় না এবং তা তাদের পরিশোধ করতে হয়। ইসলামি সোনালি যুগে এর বিস্তর দৃষ্টান্ত রয়েছে। পাশ্চাত্যের আধুনিক মানবাধিকার আইনে এটা বড় কোন বিষয় নয়। এ কারণেই পাশ্চাত্য রাষ্ট্রগুলো শক্তির জোরে সুযোগ পেলেই অন্যের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিবাদকালীন অবস্থায় ইরাক ও ইরানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং সম্প্রতি সৌদি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের হুমকি দেয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের অনেক রাষ্ট্র তাদে শক্তির জোরে এই সুযোগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ ইসলামের সোনালি যুগে শক্তিশালি ইসলামি সরকার শত্রু ও পরাজিত শত্রুর পাওনার প্রতিটি পয়সা পরিশোধ করেছে।

বিদ্রোহীদের ব্যাপারেও মানবিক নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম এবং কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আত্মরক্ষা ব্যতীত অনাবশ্যকভাবে মারাত্মক অস্ত্রসমূহ বিদ্রোহীগণের বিরুদ্ধে প্রয়োগ না করা উচিত। এ সম্পর্কে হযরত আলী(রা) এর নির্দেশ হলো, “তোমরা যখন তাদের পরাজিত করো, তাদের মধ্যে আহতদের হত্যা করো না, বন্দীদের শিরোচ্ছেদ করো না। যারা দলত্যাগ ও ফিরে আসে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করো না। তাদের স্ত্রীদের দাসীতে পরিণত করো না। তাদের মৃতদের অঙ্গচ্ছেদ করো না, যা আবৃত রাখা দরকার তা অনাবৃত করো না”। আমাদের খিলাফতে রাশেদার এ মানবাধিকার নীতিমালার আলোকে বিশ্বের শীর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ এবং মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের দিকে একবার দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। সম্প্রতি আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন সব বিধ্বংসী ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে যা যুদ্ধে ব্যবহার নিষিদ্ধ। এসব বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের ফলে বহু জনপদে মানুষের জীবন্ত সমাধি হয়েছে এবং প্রাণঘাতি গ্যাস অস্ত্রে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। প্রায় নিরস্ত্র আফগানদের বিরুদ্ধে এসব অমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে গিয়ে মার্কিন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের গাঁয়ে একটুও আচরণ লাগে নি। কারণ তাদের মানবাধিকার শুধু তাদেরই অধিকার দেখতে পায়, আর কারোর নয়।

ইসলামি বিচার ব্যবস্থায় মানবাধিকার অনন্য বৈশিষ্ট্যের আসনে সমাসীন হয়েছে। এখানে মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য করা হয়নি। শাসন বিভাগ যাতে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য শুরু হতে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ আলাদা করা হয়েছে। অসামরিক বিচারপতিদের দিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হতো। খলিফা বিচারপতিদের নিয়োগ করতেন, কিন্তু তাঁরা বিচার কাজে খলিফা বা শাসনকর্তাদের অধীন হতেন না। খলিফা কিংবা শাসনকর্তারা অভিযুক্ত হলে সাধারণ আসামীদের মতই তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারের সম্মুখীন করা হতো। এমন বিচারের দৃষ্টান্ত ইসলামের ইতিহাসে ভরপুর। অনেক মামলায় নিরপেক্ষ সাক্ষীর অভাবে খলিফারা হেরেছেন েএবং এ হেরে যাওয়াকে তাঁরা মাথা পেতে নিয়েছেন। শীর্ষ গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার চর্চার দেশ হবার দাবিদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর পদে থাকা অবস্থায় তাদের বিচার হয় না। গণতন্ত্রের অধীনে জনপ্রতিনিধি হয়েও জনগণের চেয়ে তাদের অধিকার বেশি। কিন্তু ইসলামের মানবাধিকার আইনে সাধারণ মানুষ ও একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে পার্থক্য নেই। ইসলামের এ শ্রেষ্ঠত্ব যা খোলাফায়ে রাশেদার যুগ স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছিল, তা দুনিয়ার মানব রচিত সব সমাজ ব্যবস্থার শীর্ষে সমাসীন থাকবে চিরদিন।

ইসলামি বিচার ব্যবস্থার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো বাদী-বিবাদী ও বিচারক একই ব্যক্তি হতে পারবে না। এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানও এ দায়িত্ব পাওয়ার অধিকারী নন। কারণ এ ধরনের ব্যবস্থায় কোন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে পারে না। বাদী ও আসামীর অধিকার নিশ্চিত করতে বিচারক ও তাঁর তদন্ত কাজকে বাদী ও আসামীর সকল প্রকার প্রভাব হতে অবশ্যই মুক্ত থাকতে হবে। ন্যায়বিচারের অতি সাধারণ এ কথা আজকের মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসকরা জানলেও মানেন না। তাই দেখা যায় বিচারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে তারা বাদী ও বিচারক দুই দায়িত্বই কুক্ষিগত করেন। আফগানিস্তানের আল কায়েদা ও তালেবানের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ছিলেন বাদী, তদন্তকারী, বিচারক ও বিচারের রায় বাস্তবায়নকারী। এভাবে মানুষের অধিকারকে পদদলিত করতে তাদের বিবেকে একটুও বাধে নি। অথচ খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচার এভাবে হয় না। এর অর্থ মার্কিনীরা মনে করে, তাদের ক্ষেত্রে যে সুবিচার প্রযোজ্য, অন্যদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। বিচার ও আইনের ক্ষেত্রে পশ্চিমা এ ডাবল স্ট্যান্ডার্ডই বিশ্বের আজকের অনেক অশান্তি ও মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য দায়ী।

ইসলাম মানুষের যে অধিকার নিশ্চিত করেছে, খিলাফতে রাশেদার যুগে যা স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেছিল, তার আলোচনা এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা চলতে পারে। কিন্তু আমার সংক্ষিপ্ত আলোচনা আমি এখানেই শেষ করতে চাই। তবে শেষ করার আগে ইসলামী সরকার পরিচালনা ব্যবস্থায় সব পরিবেশের, সব যুগের সব মানুষের অধিকার কিভাবে নিশ্চিত হয়েছে সে সম্পর্কে দু’একটা কথা বলতে চাই।

আজকের পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের অধীন তাদের সরকার পরিচালনা ব্যবস্থাকে সবার জন্য সমান প্রযোজ্য বলে মনে করছে। এর অন্যথাকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের খেলাফ বলে মনে করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে এশিয়ান দেশগুলির প্রতিনিধিরা তাদের ব্যাংকক বৈঠকে উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করেছিল, “গণতন্ত্রের মৌলিক ব্যবস্থার অধীনে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা কেমন হবে তা নির্ণয়ের অধিকার প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে।” কিন্তু পশ্চিমারা এ ঘোষণাকে আমল দেয় নি। তাদের নকশা সকলকে গ্রহণ করতে হবে, এ তাদের অভিমত। কিন্তু ইসলাম এক্ষেত্রে ফ্লেক্সিবিলিটিকে গ্রহণ করেছে। চৌদ্দশ বছর আগে ইসলাম রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থাকে ‘পরামর্শভিত্তিক’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর স্থাপন করেছে, যার সার্বভৌমত্ব স্রষ্টার আয়ত্বে অর্পিত থাকে। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীন সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হওয়ার পর সরকার কাঠামো বা গঠনপ্রণালী দেশের পার্থক্যে, মানব ও সমাজ পরিবেশের পার্থক্যে এবং সময়ের পার্থক্যে আলাদা হতে পারে-মানুষের এ অধিকারকে বাস্তবতা হিসেবে ইসলাম স্বীকার করেছে। মহানবী(স) এবং ইসলামের চার খলিফার সরকার গঠনমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা হতে এ সত্য ও শিক্ষাই প্রতিভাত হয়। সবশেষে এ অধিকারের কথা আমি এজন্য তুললাম যে, আজকের আত্মমুখী পাশ্চাত্য সভ্যতা তার বিশ্বজয়ের হাতিয়ার হিসেবে শেকড়হীন এক গণতন্ত্র এবং নিয়ন্ত্রণহীন এক মুক্ত অর্থনীতি বিশ্বের সবার উপর চাপিয়ে দিতে চায়। তারা একটুও চিন্তা করে না, পাশ্চাত্য তিনশ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে গণতন্ত্র ও অর্থ ব্যবস্থার যে পর্যায়ে পৌছেছে, এশিয়া আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলো পরাধীনতার ক্লেদ তাদের শরীর থেকে না মুছতেই শিক্ষা ও সংস্কৃতি উন্নয়নের মাধ্যমে জাতিগঠনের প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রম না করতেই এবং অর্থনীতি তার নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াবার আগেই কি করে তারা পাশ্চাত্যের সেই পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে। প্রকৃতপক্ষে এশিয়া আফ্রিকার ঔপনিবেশ পীড়িত মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার খর্ব করারই এ আর এক প্রয়াস। হতে পারে এ এক নব্য উপনিবেশবাদ। খিলাফতে রাশেদার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আদর্শ এ বিশ্বায়নের খেলাফ। খিলাফতে রাশেদা মানুষের রাজনীতি ও অর্থনীতির পদ্ধতিগত স্থান কাল পাত্র ভিত্তিক যে সর্বজনীন অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি দিয়েছে, সেদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি আমার এ অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি।

 

 

 

 

 

 

 

 

Page 5 of 23
Prev1...456...23Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South