জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

একুশ শতকের এজেন্ডা

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. ভূমিকা
  2. আমেরিকাঃ নাইন ইলেভেন এর পর
  3. থার্ড মিলিনিয়াম, উন্নয়ন ও বিশ্ব
  4. বাংলাদেশ সংস্কৃতির স্বরূপ সন্ধান
  5. মানবাধিকারের স্বর্ণযুগ
  6. আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন     
  7. একুশ শতকের এজেন্ডা
  8. ঊনবিংশ শতকের অনন্য জাতীয় উত্থান
  9. ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার পুনরুজ্জীবন
  10. সোনালী সূর্যের প্রত্যাশা
  11. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম
  12. বিশ শতকে মুসলিম জাগরনের সূচনা পর্ব
  13. পোপ, ক্রুসেডের পাপ ও পাশ্চাত্য
  14. পশ্চিমের তথ্য –সাম্রাজ্য
  15. নতুন বিশ্ব- ব্যবস্থার বিকল্প
  16.   সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির ইতিকথা
  17. দিকে দিকে পুনঃজ্বলিয়া উঠিছে
  18. সিপাহী বিপ্লবোত্তর মুসলিম রাজনীতি
  19. মুসলিম সংহতি – আন্দোলন
  20. দ্বিতীয় বঙ্গ বিভাগ
  21. স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি- দৃশ্য
  22. আধুনিক সভ্যতার সূতিকাগার
  23. অপরাধ দমনের দর্শন

  সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির ইতিকথা

সন্ত্রাস-দুর্নীতি যতো পুরনো, তার প্রতিকারের বিষয়টিও ততো পুরানো । তবে পুরানো বিষয় নিয়ে আলোচনা এই জন্যে যে, মানুষের সমাজ সভ্যতার মতো সন্ত্রাস-দুর্নীতিও বিবর্তনমুখী । আর সন্ত্রাস-দুর্নীতির মতো তার প্রতিকারও ইভোলিউশনারী এবং তাই হতে বাধ্য । কারন প্রকৃতি, মানব সভ্যতা, সব ক্ষেত্রেই ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া এক সাথেই কাজ করে থাকে । সন্ত্রাস- দুর্নীতি নামক সমাজদেহের এই ব্যক্তিক বা সামস্টিক ক্রিয়াটি সমাজ- সভ্যতার একটা মারাত্মক ব্যাধি । এই ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হলো প্রতিকার নামক নিরাময়তা । ব্যাধির পাশে নিরাময়তা এক সাথেই অবস্থান করে । এই নিরাময়তা বা প্রতিকার কিন্তু ব্যাধি বা সন্ত্রাস- দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ নিশ্চিত করা নয় । আল্লাহর পরিকল্পনাও সম্ভবতঃ এটা নয় । কারন তাহলে আইন আদালতের প্রয়োজন হতো না এবং বেহেশতের পাশে দোজখের অবস্থানের কোন অর্থ থাকতো না । প্রতিটি ব্যক্তিক বা সমষ্টিক সন্ত্রাস- দুর্নীতির প্রতিকার হতে হবে এটাই লক্ষ্য । এই প্রতিকার যদি হয়, তাহলে অপরাধের মাত্রা কমে যাবে । এটাই স্বাভাবিক এবং আইন ও সুশাসনের এটাই কাম্য । এর বিপরীত হলো সন্ত্রাস, দুর্নীতি বা বেড়ে যাওয়া বা না কমা । অথবা সন্ত্রাস বা দুর্নীতির প্রতিকার কঠিন ও জটিল হয়ে পড়া । আজ আমাদের অবস্থা এই শেষোক্ত পর্যায়ের বলেই আমাদের এই আলোচনা । আলোচনার আরও একটা কারন হলো, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অন্য কথায় আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেই আজ দেশের প্রধান সমস্যা বলে অভিহিত করা হচ্ছে । যতগুলো কারনে বিগত হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে, তার মধ্যে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিই ছিল সর্বাগ্রগণ্য বিষয় । সরকারের বদল হয়েছে, কিন্তু সন্ত্রাস- দুর্নীতি অবস্থার আকাংখিত পরিবর্তন ঘটেনি । তাই আলোচনার শুরুতেই সন্ত্রাস- দুর্নীতির সেদিন- এদিনকে আমরা সামনে আনতে চাই ।

একথা ঠিক যে, সন্ত্রাসকে সন্ত্রাস হিসেবেই দেখা দরকার । বেশি মন্দ কম মন্দ বলে এর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের কোন সুযোগ নেই । কিন্তু এর প্রকৃতি বা চরিত্র নির্ণয়ের সুযোগ অবশ্যই আছে । অথবা পাত্র এবং উৎসভেধে এর ভূমিকা অবশ্যই বিশেষভাবে বিচার্য । এই দৃষ্টিতেই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সেকাল- একালকে আমাদের পরখ করা প্রয়োজন ।

বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলের সন্ত্রাস দুর্নীতি ও বর্তমান সময়ের সন্ত্রাস- দুর্নীতির পার্থক্য নিরূপণ এক কথায় এইভাবে করা যায় যে, শেখ হাসিনা সন্ত্রাস- দুর্নীতির সরকারীকরণ করেছিলেন, আর এখন সন্ত্রাস- দুর্নীতির আবার বেসরকারীকরন হয়ে গেছে । সন্ত্রাস- দুর্নীতির সরকারীকরণ অর্থ হলো, সরকারী দলের দায়িত্বশীল, পাওয়ারফুল ও প্রভাবশালী লোকরা নিজ হাতে ও প্রকাশ্যে সন্ত্রাস পরিচালনা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থাকে এক সহায়ক শক্তিতে পরিনত করা । শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এটাই করেছিলো । করেছিলো কিভাবে তা প্রমানের জন্য ফেনীর, লক্ষীপুরের, নারায়নগঞ্জের এবং ঢাকা ও অন্যান্য এলাকার আওয়ামী গড ফাদারের উপর আমরা দৃষ্টিপাত করতে পারি । এরা প্রত্যেকেই এদের স্ব স্ব জেলায় সন্ত্রাস- দুর্নীতির কিংডোম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আর নিজেরা সেজে বসেছিলেন সন্ত্রাস- দুর্নীতির রাজা । জেলাগুলোর পুলিশ ও প্রশাসন তাঁদের হুকুমের দাসে পরিনত হয়েছিলেন । পুলিশের মামলা নেয়া, মামলা পরিচালনা, তদন্ত করা ও ধরপাকড়ের স্বাধীন গতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । আদালতে যাবার পথও সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না । ফেনীর জেলা কোর্ট বার বার চেষ্টা করেও তার ভবনে বিচার কাজ শুরু করতে পারেনি । জেলার বিচারালয় যদি পনবন্দী হয়ে পড়তে পারে, তাহলে সেখানকার মানুষের অবস্থা কেমন ছিল তা সহজেই অনুমেয় । আওয়ামী গড ফাদাররা তাঁদের এলাকা ও এলাকার মানুষকে এক সময়ের রাজা-বাদশাদের মতো পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিনত করেছিলো । ওদের হত্যা- নির্যাতনের প্রতিকার চাইবার, বিচার প্রার্থনার ক্ষমতা কারো ছিলনা । অবিবাহিত সুন্দরী তরুনী ও গৃহবধূ আছে এমন পরিবার নিরাপদ থাকেনি । ভয়ে অনেক পরিবারকে এলাকা ছাড়তে হয়েছে । প্রকাশ্যে ওদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ বাচতে পারেনি, যেমন বাঁচতে পারেনি লক্ষ্মীপুরের এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম ভয় ও আতংকে স্থানীয় সাংবাদিকদের কলম বন্ধ ছিল । লক্ষ্মীপুরের গড ফাদারের উক্তি ছিলঃ “তার বিরুদ্ধে লিখতে গেলে হাত পা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে ।” লক্ষ্মীপুরের ডিসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, “আমার চাকরি জীবনে এরকম ভয়াবহ অবস্থা দেখিনি ।” ঠিক আবু তাহেরের মতই নরসিংদী জেলার গড ফাদার বলেছিলেন, “যারা আমার কথা শুনবেনা, বিরোধিতা করবে, হ্যাগো ঠ্যাং আমি ভাইঙ্গা ফালামু । কোর্টে যাইবা ? তার আগেই তো কাম শেষ ।” পাট শিল্পের নারায়নগঞ্জের গড ফাদারের বাহিনী বেপরোয়া, উচ্ছৃঙ্খল, মারমুখী ও বিধ্বংসী । আর ফেনীকে ‘ভয় ও আতংকের’ নগরীতে পরিণত করা হয়েছিলো । ফেনীর মত প্রতিটি শহরেই গড়ে উঠেছিলো আওয়ামী গড ফাদারদের রাজত্ব । ময়মনশিংহের আওয়ামী লীগের এমপি সম্পর্কে প্রথম শ্রেনীর একটি দৈনিক লিখেছিল, “একজন গোলন্দাজের জিম্মি চার লাখ গফরগাঁও বাসী ।” এরকম হাজারো গোলন্দাজ সৃষ্টি করেছিলো আওয়ামীলীগ যাদের মাধ্যমে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির সরকারীকরণ করা হয়েছিলো । দেশের রাজধানী থেকে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দিয়েছে সন্ত্রাসের এই রাজাদের । লক্ষ্মীপুরের এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খুন হওয়ার পর লক্ষ্মীপুরের আবু তাহেরের বিরুদ্ধে যখন দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলো, তখন শেখ হাসিনা প্রতিবাদ করে বললেন, “শুধু কেন একজনকে নিয়েই লেখা হচ্ছে ?” আর জয়নাল হাজারীর সন্ত্রাসের কিংডম নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গর্ববোধ করতেন এবং বোধহয় তিনি চেয়েছিলেন মানুষের জীবন, সম্পদ, ইজ্জত- আব্রু সবকিছু তার দলীয় গড ফাদারদের আয়ত্তে আনতে । যেসব শহরে এবং এলাকায় অন্যান্য দল শক্তিশালী ছিল, সেসব এলাকা ছাড়া গোটা দেশই সন্ত্রাস- দুর্নীতি কবলিত হয়ে পড়েছিলো । অন্যান্য কারনের সাথে সাথে এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যও মানুষ ভোট দিয়ে দুই- তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী করেছিল চারদলীয় জোটকে ।

চারদলীয় জোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করার মাধ্যমে দেশের মানুষ সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির কবল থেকে মুক্তির জন্য যে আশা করেছিলো, সে আশা এখনো শতভাগ পূরণ হয়নি । তবে তাঁদের জন্য একটা খুশির বিষয় হলো, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির পট পরিবর্তন ঘটেছে । জোট সরকারের শাসনে রাজধানী সহ দেশের কোথাও কোন ধরনের গড ফাদার সরকারী দল থেকে সৃষ্টি করা হয়নি । দুর্নীতি এখনো আছে কিন্তু কোন গড ফাদারকে দেখা যাচ্ছেনা, যারা তাঁদের ছেলে সন্তান ও বাহিনী নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনকে আজ্ঞাবহ বানিয়ে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে । কুষ্টিয়া এলাকার একজন প্রতিমন্ত্রীর একজন ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো । তাকে সংগে সংগেই গ্রেফতার করা হয় । গত বছর ১৬ই অক্টোবর থেক এ বছরের ৯ই জানুয়ারী পর্যন্ত যে যৌথ অভিযান চলে, তাতে গ্রেফতারের অধিকাংশই প্রধান শাসক দল থেকে হয়েছে । বুয়েটে ছাত্রদের গোলাগুলিতে একজন ছাত্রী মারা যায় । এর জন্য দায়ী ছিল ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা । দ্রুত বিচার আইনে তাঁদের বিচার এবং শাস্তি দেওয়া হয়েছে । ঢাকা থেকে নির্বাচিত সরকারী দলের একজন এমপি- কে গ্রেফতার করা হয় একটি অভিযোগে । সন্ত্রাস এবং অপরাধী দমনে সরকারী আন্তরিকতার আরেকটি বড় প্রমান এতো দ্রুত বিচার এবং র‍্যাব বাহিনীর নিরাপক্ষ অভিযান । আওয়ামী আমলের মতো দুর্নীতির সরকারীকরণ থাকলে শাসক দলের উপরে এইভাবে আইন কার্যকরী হতে পারতো না, আওয়ামী লীগ আমলে তা পারেনি । কিন্তু আমি একথা বলছিনা যে, শাসক দল থেকে দুর্নীতি হচ্ছে না । রাজধানী সহ দেশের জেলা উপজেলায় অন্যান্যদের সাথে শাসক দলেরও হাজারো সদস্য নানা রকম সন্ত্রাস- দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছেন বা থাকতে পারেন । কিন্তু তাঁদের প্রতি সরকারী দলের সাহায্য প্রকাশ্য নয় । কোথাও প্রকাশ হয়ে পড়লে তা লুকাবারই চেষ্টা করা হচ্ছে, বুক ফুলিয়ে তাকে সমর্থন দেয়া হচ্ছেনা । আওয়ামী লীগের ফেনী, লক্ষীপুর, নারায়নগঞ্জের মত আজ কোথাও সন্ত্রাসের মুক্ত এলাকা গড়ে উঠেনি । গড়ে উঠেছে এমন কোথাও এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি । সন্ত্রাস- দুর্নীতির সরকারীকরণ না হওয়ার এটাও একটা প্রমান । সন্ত্রাসের সরকারীকরন এখন নেই এবং সন্ত্রাসের স্বাধীন কিংডম এখন কোথাও দেখা যাচ্ছেনা । তবে সন্ত্রাসের রাজারা না থাকলেও মনে হচ্ছে রাজার পাইক-পেয়াদারা মাঠে- ময়দানে খুবই সক্রিয় । তাঁদের সাথে অবশ্যই যুক্ত হয়েছে নব্য ক্ষমতা প্রাপ্ত নব্য পাইক- পেয়াদারা । নতুন পুরাতনের এই সম্মিলিত আগ্রাসনে দেশের আইন- শৃঙ্খলা অবস্থা এক সময় উদ্বেগজনক অবস্থায় উপনীত হয় । এ অবস্থা সামাল দেবার জন্যই প্রথমে র‍্যাট এবং পরে র‍্যাব গঠন করে সরকার ।  র‍্যাব এর পক্ষপাতহীন সন্ত্রাস দমন অভিযান সফল হচ্ছে । সন্ত্রাসের মতই দুর্নীতি গ্রাস করে ফেলেছে আমাদের সমাজকে । ঘুষ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, ফাইলবাজী ইত্যাদি মানব জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ । জোট সরকার সন্ত্রাস দমনে যতটা তৎপর, দুর্নীতি দমনে তাঁদেরকে ততটা তৎপর দেখা যাচ্ছে না । অপারেশন ক্লিন হার্ট সহ পরবর্তীকালে পরিচালিত সকল অভিযানই ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ।

গঠিত ‘র‍্যাট’ এবং ‘র‍্যাব’ এর মতো বিশেষ বাহিনী গুলোও সন্ত্রাস দমন এবং আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্যই । দুর্নীতি দমনের প্রচলিত আইন দুর্নীতি দমনে কার্যকরী হচ্ছেনা । এই ব্যর্থতাই আজ দুর্নীতিকে করে তুলেছে সর্বগ্রাসী এবং সর্বব্যাপী ।

সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির কারন খোঁজার আগে আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য, দুর্নীতি, দুরাবস্থা, অপরাধ প্রবনতা, দায়িত্বহীনতা, সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসী সম্পর্কে বিখ্যাত লোকদের কয়েকটি উক্তি এখানে তুলে ধরতে চাই ।

সাম্প্রতিক কালের একটি চাঞ্চল্যকর মামলা হলো ইটিভি মামলা । এই কেসে প্রমানিত হয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী এবং আমলারা জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অনাচারের ক্ষেত্রে কতো নীচে নামতে পারেন । এই মামলায় সুপ্রীম কোর্ট তার রায়ে বলেছেন, “সবকিছু বিশ্লেষণ এটা প্রতীয়মান হয় যে, ইটিভিকে লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম হয়েছে এবং লাইসেন্স গ্রহনের প্রতিটি স্তরে গোপন সমঝোতা হয়েছে । এ ছাড়া কিভাবে আইনকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী ক্ষমতাধারীরা দুর্নীতিপরায়ণ হতে পারে সেটাও ফুটে উঠেছে । এটাও প্রতীয়মান হয়েছে যে, আমলারা জন দায়িত্ব থেকে কিভাবে তাঁদের হাতকে দূরে রেখে আইনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা না রেখে দুর্নীতি গ্রস্থ হয়েছেন । এই মামলায় যা কিছু ঘটেছে তা প্রকাশিত হলে সরকার এবং জনগনের চোখ খুলবে যে, নির্বাহী ক্ষমতা কতো পরিমান অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে ।”

দ্বিতীয় উক্তিটি আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিচারপতি জনাব শাহাবুদ্দিন আহমেদের । এরশাদ সরকার পদত্যাগ করলে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন । তিনি ১৯৯১ সালের সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠান করান । ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তার তত্ত্বাবধানে ২০০১ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘জাতির সাথে বিশ্বাস ভংগ করার’ অভিযোগ আনেন এবং তার কাজ সম্পর্কে কিছু কুৎসিত মন্তব্য করেন । প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে পদ থেকে সরে যাবার পর স্বল্পভাষী এই সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিচারপতি শেখ হাসিনার জবাব হিসেবে যা বলেন, তা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এবং দেশের সন্ত্রাস দুর্নীতির মৌলিক কারন নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তিনি দুই পৃষ্ঠার এক আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদলিপিতে বলেন, “বিগত কয়েকমাস যাবত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যরা ( কয়েকজন আওয়ামী কলামিস্ট ) আমার সম্পর্কে স্পর্শকাতর মন্তব্য করে আসছেন এবং আমার ভূমিকা সম্পর্কে বিকৃত দৃষ্টি ভংগি পোষণ করছেন । —– আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ( বর্তমানে বিরোধী দলের নেত্রী ) একথা বলে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয় । আওয়ামী লীগ আমাকে বিশ্বাস করে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছিলো, কিন্তু আমি তাঁদের সে আস্থা রাখিনি । আমি কি এমন কোন মুচলেকা দিয়েছিলাম যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে ? শেখ হাসিনা নির্বাচনের কয়েকদিন আগে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন । তখন তিনি বলেছিলেন, আমি প্রেসিডেন্ট থাকায় তার সরকার মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে । নির্বাচনের পরে হাসিনা নাটকীয়ভাবে তার মত পরিবর্তন করে ফেললেন । আমাকে বিশ্বাস ঘাতক বলে অভিহিত করা হলো । আওয়ামী লীগ নেতাদের একটা গ্রুপ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে এবং প্রেসিডেন্টের তত্ত্বাবধানে নতুন করে নির্বাচন দিতে আমাকে অনুরোধ জনালো । আমি তাঁদের অনুরোধে সাড়া দেইনি । তাঁদের আকাংখা অনুযায়ী সব কিছু করা হলে আমি একজন ফেরেশতা । আর তা করা না হলে আমি একজন শয়তান——  ।”

তৃতীয় বক্তব্যটি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলের দুই সেক্রেটারি জেনারেলের । ২০০৩ সালের ৫ই জুন ‘জাতীয় নীতি পর্যালোচনা ফোরাম’—এর এক আলোচনা সভায় বিএনপি-এর সেক্রেটারি জেনারেল এবং এলজিআরডি মন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি জেনারেল জনাব আব্দুল জলিল দেশের আইন- শৃঙ্খলার উপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন । কতগুলো বিষয়ে দুইজনের শব্দ ও বাক্য গঠনে পার্থক্য থাকলেও বক্তব্য মূলত একই ছিল । দুইজনের একমত হওয়া বিষয়গুলোকে এইভাবে তুলে ধরা যায়, “দেশকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে হলে আগে রাজনৈতিক দলকে গড ফাদার মুক্ত করতে হবে । সন্ত্রাসী এবং গড ফাদাররা কোনদিন রাজনৈতিক দলের উপকারে আসেনি বা আসবেও না, বরং দলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় । রাজনীতি এখন দুরবৃত্তায়নের কবলে । রাজনীতি এবং সংসদ টাকাওয়ালারা এবং আমলারা দখল করে নিচ্ছে । এতে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা পেছনের কাতারে চলে যাচ্ছে । সন্ত্রাসী এবং গড ফাদারদের রাজনৈতিক দল থেকে বহিস্কারের পরস্পর অংগীকার করতে হবে । প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, বহিস্কার করলে কেউ কোন সন্ত্রাসীকে জায়গা দেবেন না । রাজনীতিবিদরাই রাজনীতির ক্ষতি করছে । রাজনীতিবিদদেরকে অবশ্যই দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে ।”

উপর্যুক্ত তিনটি বক্তব্যকে মর্যাদা, গুরুত্ব ও দায়িত্বশীলতার দৃষ্টি কোন থেকে জাতীয় আত্মস্বীকৃতি ( National Confession ) হিসেবে আমরা অভিহিত করতে পারি । এ বক্তব্য তিনটির মধ্য দিয়ে জাতির দুর্দশা- দুর্ভাগ্য যেন রোদন করে উঠেছে, চিহ্নিতও হয়েছে দেশের ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস- দুর্নীতির কারন । চিহ্নিত এই কারণগুলো নিম্ন বর্ণিত হতে পারেঃ

  • (ক) দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া । ইটিভি মামলার রায়ে দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ও সিনিয়র মন্ত্রী তার পছন্দের লোকদের স্বার্থে দেশের আইনকে নগ্নভাবে পদদলিত করেছেন, জাতীয় সংস্থা বিটিভির কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন অবলীলাক্রমে এবং সেই সাথে জাতীয় নিরাপত্তাকে খেয়াল খুশির বস্তুতে পরিনত করছেন ।
  • (খ) একশ্রেনীর আমলারা উপরের ইচ্ছা ও নিজেদের স্বার্থে অবিশ্বাস্যরকম জাল- জালিয়াতিতে আশ্রয় নেয় । ইটিভির রায়ে আরো দেখা যাচ্ছে, দেশের একশ্রেনীর আমলা রাজনৈতিক কৃতিত্বের ইচ্ছা পূরণ এবং মহল বিশেষকে অবৈধ সুবিধা দানের মাধ্যমে স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সরকারী দলিল ও সিদ্ধান্তের পরিবর্তন পরিবর্ধনের মতো যে কোন জাল- জালিয়াতি করতে পারেন ।
  • (গ) আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার মতো শীর্ষ রাজনীতিকরা চান ক্ষমতা, গণতন্ত্র নয় । দেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিক বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগ প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেখা যাচ্ছে প্রধান বিচারপতি জনাব শাহাবুদ্দিনকে প্রেসিডেন্ট করেছিলেন তার কাছ থেকে দলীয় সুবিধা নেয়া এবং সবশেষে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে । ২০০১ সালের সঠিক ও সুন্দর নির্বাচনকে প্রেসিডেন্ট দিয়ে বাতিল করিয়ে ম্যানেজড নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ ।
  • (ঘ) শেখ হাসিনার মতো শীর্ষ রাজনীতিকদের কাছে ভালো- মন্দের মানদণ্ড হলো- তাঁদের স্বার্থ । তাঁদের এই মানসিকতার কারনেই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট শাহবুদ্দিনের মতো লোকও শেখ হাসিনার কাছে শয়তান হয়েছেন ।
  • (ঙ) সব দলেই বিশেষ করে বড় দলগুলোতে প্রতিযোগিতা করে সন্ত্রাসী পালন করা হচ্ছে ।
  • (চ) রাজনীতির দুরবৃত্তায়ন হয়েছে । টাকাওয়ালারা টাকার পাহাড় গড়ার জন্য রাজনীতি এবং সংসদ দখল করে নিচ্ছে ।
  • (ছ) রাজনৈতিক সরকার ক্রিমিনাল রাজনীতিকদের শাস্তি দিতে ভয় পান অথবা নিরাপদ বোধ করেন না । এই জন্যেই দেখা যাচ্ছে খুনীরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক বলয়ের লোক হলে তদন্তের আড়ালে সে খুন চাপা পড়ে যায় । অবশ্য দ্রুত বিচার আইনে কিছু ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হচ্ছে । কিন্তু রাজনৈতিক ক্রিমিনালদের ক্ষেত্রে এটুকুও করা হচ্ছেনা । জোট সরকারের শ্বেতপত্রে দুর্নীতির যে ভয়াবহ চিত্র আঁকা হয়েছে এবং রাজনীতিক দুর্নীতিবাজদের মুখোশ যেভাবে খুলে দেয়া হয়েছে সেভাবে কিন্তু তাঁদের বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছেনা । দু’বছরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মাত্র একটি মামলার চার্জশীট দেয়া হয়েছে । এভাবে এগুলো শ্বেতপত্রে উল্লিখিত দুর্নীতির বিচার করতে কয়েক দশক লেগে যাবে । প্রকৃতপক্ষে এটা বিচার এড়ানোরই একটা প্রক্রিয়া । এ প্রেক্ষিতে জোট সরকার কর্তৃক স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে । এতে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে ।

উল্লিখিত সাতটি বিষয়, যেমন দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীরা সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া, একশ্রেনীর আমলারা উপরের ইচ্ছা এবং নিজেদের স্বার্থে অবিশ্বাস্য রকম জাল- জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া, শেখ হাসিনার মতো শীর্ষ রাজনীতিকরা গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ করে ক্ষমতা দখলে সচেষ্ট হওয়া, শেখ হাসিনার মতো শীর্ষ রাজনীতিকদের কাছে তাঁদের স্বার্থ ভালো- মন্দের মানদণ্ড হওয়া, রাজনৈতিক দলে আশ্রয় পাওয়া এবং নীতি আদর্শহীন একশ্রেণীর টাকাওয়ালার মাধ্যমে রাজনীতির দুরবৃত্তায়ন হওয়া, ইত্যাদি আমাদের এ পর্যন্ত চলে আসা দুর্ভাগ্য- দুর্দশার কারন । আর বর্তমানে চলা সন্ত্রাস দুর্নীতির মৌল হলো, রাজনৈতিক সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের সম্মুখীন করতে ভয় পাওয়া বা সংকোচ করা, দলকে সন্ত্রাসী এবং যারা নীতি ও দেশপ্রেমের বদলে টাকার জন্য রাজনীতি করে, তাঁদের কবল থেকে মুক্ত করতে না পারা ।

পুলিশ এবং লোয়ার লেবেলের আমলাদেরকেও সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির জন্য দায়ী করা হয় । কিন্তু আমি মনে করি আমাদের দেশ রাজনৈতিক  দুরবৃত্তায়ন থেকে মুক্ত হলে এবং যারা দেশ ও জাতিকে ভালোবেসে রাজনীতি করেন, তারা পুরো রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে যেতে পারলে পুলিশ ও আমলারা আপনাতেই ঠিক হয়ে যাবে । আজ সন্ত্রাস- দুর্নীতির যে মহামারী, তার বিস্তার ঘটেছে উপর থেকে, নিচ থেকে নয় ।

সন্ত্রাস- দুর্নীতির গোটা ব্যাপারটাই মানব মনের সাথে যুক্ত একটি বিষয় । মানুষের হাত দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সন্ত্রাসী হবার আগে তার মন সন্ত্রাসী ও দুরনীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে । তাই মানুষের মনকে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস মুক্ত করার মাধ্যমেই সমাজকে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির কবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব । কিন্তু এর কোন ব্যবস্থা আমাদের বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রে নেই । উপরন্তু মানুষের মনকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং অপরাধ অপরাধ প্রবনতার দিকে ঠেলে দেবার জন্য আমাদের মিডিয়া, শিক্ষানীতি ও পরিবেশ এবং চলমান সেকুলার জীবনধারা একযগে কাজ করছে । মানুষ আল্লাহর নীতি বিধান মুক্ত হতে গিয়ে শয়তানী নীতি-বিধানের হাতে আজ বন্দী হয়ে পড়েছে । এর ফলেই ইটিভির দুর্নীতি সম্ভব হয়েছে এবং সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান হয়েও তার পক্ষে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি নির্বাচন বাতিল করার জন্য প্রেসিডেন্টকে চাপ দিতে পারা । যিনি তার অবৈধ চাপে সম্মত না হওয়া একজন প্রেসিডেন্টকে বিশ্বাস ঘাতক বলতে পারেন, তিনি পরাজয়ের হিংসায় অন্ধ হয়ে একটি নির্বাচিত সরকারকে বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত করার জন্য তার দলের হাজার হাজার কর্মী সন্ত্রাসীকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমূলক অপকর্মে ঠেলে দেবেন তা খুবই একটা সাধারন লজিক । আজ হত্যা, সন্ত্রাস, ডাকাতি ইত্যাদির চরিত্র দেখলে এই লজিকটাই নিরেট সত্য হিসেবে সামনে এসে যায় ।

উপরে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির যে কারন আলোচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে সন্ত্রাস- দুর্নীতির প্রতিকারও নিহিত রয়েছে । সন্ত্রাস- দুর্নীতির কারন দূরীভূত হলে সন্ত্রাস- দুর্নীতিও দূর হয়ে যাবে । কারনের নিরিখে সন্ত্রাস- দুর্নীতির প্রতিকার নিম্নরূপ হতে পারেঃ

  • (এক) দেশের রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করতে হবে । দেশের রাজনীতি থেকে সন্ত্রাসীদের সমূল অস্তিত্ব উপরে ফেলতে হবে । টাকা বানাবার জন্য যেসব টাকাওয়ালারা রাজনীতিকে তাঁদের লাভজনক ব্যবসায় পরিনত করেছেন, সে টাকাওয়ালাদের রাজনীতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে । দেশের রাজনীতিকে পরিশুদ্ধকরনের এই কাজ খুবই কঠিন, কিন্তু খুবই সহজ হতে পারে যদি রাজনীতিকরা পরিশুদ্ধ হন ।
  • (দুই) কিন্তু সমস্যা হলো, রাজনীতিকরা পরিশুদ্ধ হবার কাজ রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করার চাইতে অনেক বেশি কঠিন । রাজনীতিকরা পরিশুদ্ধ হতে হলে নিম্ন লিখিত সংস্কারে তাদের অবশ্যই রাজী হতে হবে ——

(ক) রাজনীতিকদের ক্ষমতার লোভ থেকে পরিশুদ্ধ হতে হবে । তাঁদের মধ্যে এই মনোভাব তৈরি হতে হবে যে, তারা দেশ ও দশের সেবা করার জন্য রাজনীতি করছেন । রাজনীতিকদের মধ্যে এই মনোভাব তৈরি হওয়ার প্রমান হল যে, সে ভোট নেয়ার জন্য সন্ত্রাস করবে না, টাকাও খরচ করবেনা । অর্থাৎ সে জনগনের রায় ও ইচ্ছার উপরে পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করবে । জনগন তার সেবা চাইলে তাকে ভোট দেবে, না চাইলে ভোট দেবে না । জনগন যে রায়ই দেবে রাজনীতিকরা তাকে সম্মান করবে । শেখ হাসিনার মন যদি এই ধরনের গনতান্ত্রিক হতো, পরিশুদ্ধ হতো তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন সাহেবকে নির্বাচন বাতিল করার জন্য অবৈধ চাপ দেয়ার মতো অপরাধ করতেন না এবং তাকে বিশ্বাসঘাতকও বলতেন না । এই সাথে তিনি নির্বাচিত সরকারকে সম্মান করতেন এবং এই সরকারকে সন্ত্রাস- দুর্নীতির মাধ্যমে বিব্রত- ব্যতিব্যস্ত করার বদলে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতেন ।

(খ) রাজনীতিকরা নিজেদের মধ্যে এই নীতিবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর তাঁদের স্ব স্ব ডলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে । গ্রুপিং করে, টাকা খরচ করে, বল প্রয়োগ করে এবং দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে দলের পদ দখল থেকে তাঁদের বিরত থাকতে হবে । তাঁদের মধ্যে এই নীতিবোধও সৃষ্টি করতে হবে যে, দলের ভোটাররা তাকে যদি যোগ্যতা ও জনসেবায় সর্বাগ্রগণ্য মনে করে, তাহলে দল পরিচালনার দায়িত্ব তাকেই প্রদান করবে, যদি না করে তাহলে যাকে তারা দল পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করবে তাকেই সহযোগিতা দিতে হবে ।

(গ) রাজনৈতিক দলগুলোতে এভাবে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে দেশে গণতন্ত্র আপনাতেই প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে । তখন দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হবে । কোন দলই সন্ত্রাস করবেনা , সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করার তাই প্রয়োজনও হবেনা । ফলে সন্ত্রাসীও তৈরি হবেনা এবং তৈরি হওয়া সন্ত্রাসীরা আশ্রয় প্রশ্রয় লাভের অভাবে হয় ভালো হয়ে যাবে, নয়তো জেলে গিয়ে শাস্তি ভোগ করতে হবে । এই গনতান্ত্রিক পরিবেশে যে দলই নির্বাচিত হোক অন্যদলগুলো তাকে সম্মান করবে ও সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে ।

  • (তিন) রাজনীতিকরা এইভাবে পরিশুদ্ধ হলে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এইভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে এবং দেশে এইভাবে গনতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে বৈধ নির্বাচন বাতিল না করার জন্য প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিনকে আর বিশ্বাসঘাতক হতে হবেনা, যে দলই নির্বাচিত হোক শেখ হাসিনা তাকে সম্মান এবং শ্রদ্ধার সাথে মেনে নেবেন । শেখ হাসিনার মতো রাজনীতিকরা ইটিভির মতো দুর্নীতিও আর কোন দিন করবেন না এবং ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির শ্বেতপত্রও আর কোন দিন প্রকাশ করার প্রয়োজন পড়বে না । রাজনীতিক শেখ হাসিনারা এইভাবে ভালো হয়ে গেলে আমলা এবং পুলিশের মধ্যকার দুর্নীতির মড়ক তখন ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত হবে ।
  • (চার) রাজনীতিক, রাজনৈতিক দল এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের এই যে আইডিয়াল অবস্থার কথা আমি বলছি, এটা অবশ্যই অধিকাংশের কাছে একটা ‘ইউটোপিয়ান’ বা আকাশচারী চিন্তা বলেই মনে হবে । কিন্তু আমি বলবো এই আইডিয়াল অবস্থা অসম্ভব কিছু নয় । একে সম্ভব করার জন্য মাত্র দুটি কাজ করতে হবে । একটা হবে আশু করনীয়, দ্বিতীয়টা হবে দীর্ঘ মেয়াদী ।

(ক) আশু করনীয়টা হলো, এ পর্যন্ত সংগঠিত এবং দায়েরকৃত সকল অপরাধ এবং মামলার দ্রুত ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং রাজনৈতিক খেয়াল- খুশির কাধে সওয়ার হয়ে ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা হরতাল ও মিছিলের সম ঘটে তাকেও কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরে তার বিচার ও শাস্তি বিধান নিশ্চিত করতে হবে । দুর্নীতিবাজ বা অপরাধী ব্যক্তি পুলিশ, আমলা বা রাজনীতিক যেই হন না কেন তাকে গ্রেফতার এবং বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে । বিচার ব্যবস্থার আমূল সংশোধন প্রয়োজন । অতি দ্রুত বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে । দ্রুত বিচারকালীন সময়ে অপরাধ ও অবস্থাভেদে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে অজামিন যোগ্যভাবে জুডিশিয়াল কাস্টডিতে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ।

(খ) দীর্ঘমেয়াদী দ্বিতীয় করনীয় বিষয়টা হলো, মানুষের মন ও মননের পরিশুদ্ধি । এর আগে আমি বলেছি সন্ত্রাস হাত করেনা, মন আগে সন্ত্রাসী হয় । অপরাধমূলক কাজ মানুষ করা আগে তার মন অপরাধী হয়ে উঠার পর । মানুষের মন যদি পবিত্র থাকে, চিন্তা যদি তার পবিত্র থাকে, তাহলে তার সব কাজ এবং আচরণও পবিত্র হবে । মনকে পবিত্র রাখতে হলে বিবেকের রায়কে শানিত এবং শক্তিশালী করতে হবে । বিবেকের অপরোক্ষ ও অনির্দিষ্ট গতিকে প্রত্যক্ষ, সুনির্দিষ্ট, সার্বিক এবং চিরকল্যানমুখী করার জন্য তাকে স্রষ্টার আনুগত্যের অধীনে আনতে হবে । তার সামনে থাকবে ভালো কাজের নির্দেশ এবং মন্দকাজের নিষেধের অলংঘনীয় দায়িত্ব । এই দায়িত্ববোধকে সদা জাগরুক রাখবে তার প্রত্যেকটি কাজের জন্য পরকালে জবাবদিহিতার ভয় এবং অনন্ত জান্নাত কিংবা অনন্ত জাহান্নামের পরিনামের চিন্তা । ইসলামের এই জীবন পদ্ধতিই রাজনীতিক, রাজনৈতিক দল ও দেশের সার্বিক পরিবেশকে ‘আইডিয়াল অবস্থায়’ পৌঁছানোর ইউটোপিয়ান বা আকাশচারী চিন্তাকে বাস্তব রূপ দিতে পারে । সপ্তম শতাব্দীতে মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রে পৃথিবী এই বাস্তব রূপ প্রত্যক্ষ করেছে, যখন খাজাঞ্চিখানা অর্থে ভর্তি থাকলেও রাষ্ট্র প্রধান ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করেছেন এবং শীতের কষ্ট ভোগ করেছেন, যখন রাষ্ট্র প্রধান ব্যক্তিগত কাজে এমনকি রাষ্ট্রের বাতি ব্যবহার করতেন না, যখন রাষ্ট্র প্রধান আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করার ভয়ে তাড়িত হয়ে নিজের পীঠে আটার বস্তা বহন করে অভুক্তদের বাড়িতে পৌছাতেন, যখন রাষ্ট্র প্রধান সাক্ষীর অভাবে বিচারে পরাজিত হয়ে নিজের জিনিসের ন্যায্য দাবী ত্যাগ করে আদালত থেকে ফেরত আসতেন এবং যখন গভীর রাতে জেগে উঠা রাষ্ট্র প্রধান কোথাও কোন কুকুর অভুক্ত থাকলো কি- না এই ভয়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার আতঙ্কে রোদন করতেন । এই অপরূপ ব্যবহারকে ইসলাম আবার বাস্তব রূপ দিতে পারে । শুধু প্রয়োজন মানুষের মনের মানবিক এবং কল্যাণমুখী পরিবর্তন ।

সবশেষে বলবো, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির অস্তিত্ব ও বিস্তার মানসিক বিষয় । লোভ এর উৎস স্বেচ্ছাচারিতা এর বাহন । মনের লোভ ও স্বেচ্ছাচারিতা দমনের জন্য উপর্যুক্ত মানসিক চিকিৎসাই মুখ্যত প্রয়োজন । তবে আশু ব্যবস্থাও অপরিহার্য । সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিমুলক প্রতিটি কাজের করতে হবে আশু বিচার এবং এই বিচার থেকে প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত এবং কোটিপতি থেকে কুঁড়ে ঘরবাসী কেউ রক্ষা পাবেনা তা নিশ্চিত করতে হবে । এই বিচার যেমন ঘটে যাওয়া অপরাধের বিচার করবে, তেমনি প্রতিরোধ করবে অপরাধের বিস্তারকে । এইভাবে বিচার ব্যবস্থা অপরাধের মুখে লাগাম পড়াবে । আর মানসিক চিকিৎসা মানুষের মন থেকে করবে অপরাধের মূলোচ্ছেদ । আপসোস, আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা থেকেও না থাকার মত । আমাদের দেশে অপরাধের শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়, কিন্তু সে অপরাধগুলোর বিচার করা সম্ভব হয়না । আর মানুষের মন থেকে অপরাধ চিন্তা নির্মূলের আদর্শিক শিক্ষা এবং মটিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তো নেই-ই নেই বটে, কিন্তু হবেনা এ হতাশা অবশ্যই পোষণ করিনা । দেয়ালে পিঠ আমাদের ঠেকে যাচ্ছে । ঘুরে আমাদের দাঁড়াতেই হবে । শিষ্টের পালনের জন্য দুষ্টের দমনে বজ্রকঠোর হওয়া সহ স্বজাতির স্ব আদর্শে আমাদের ফিরে আস্তেই হবে ।

 

Page 16 of 23
Prev1...151617...23Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South