১১
জাতীয় পুনর্গঠনের সঠিক পন্থা
[প্রবন্ধটি সর্বপ্রথম ১৯৩৪ সালের জুলাই মাসে তরজমানুল কুরআন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। -সম্পাদক]
সংস্কার-সংশোধন ও বিপ্লব উভয়ের লক্ষ্যই বিকৃত অবস্থার পরিবর্তন সাধন। কিন্তু উভয়ের পেরণা ও কর্মপন্থায় রয়েছে মৌলিক পার্থক্য। সংস্কার প্রচেষ্টর সূচনা হয় চিন্তা ভাবনা থেকে। সেখানে শান্ত মনে ভেবে চিন্তে মানুষ অবস্থা পর্যালোচনা করে’ বিকৃতি ও বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করে, বিকৃতির চৌহদ্দি পরিমাপ করে, তার নিরসনের পন্থা উদ্ভাবন করে এবং তা দূর করার জন্যে যতোটা ধ্বংসাত্বক শক্তির প্রয়োগ একান্ত অপরিহার্য, কেবল ততোটুকু শক্তিই প্রয়োগ করে। পক্ষান্তরে বিপ্লবের সূচনা হয় প্রবল রোষাগ্নি ও তীব্র প্রতিহিংসা পরায়ণতা থেকে। তাতে এক বিকৃতির জবাবে অন্য এক বিকৃতি আমদানি করা হয়। যে অ-মিতাচারের ফলে বিকৃতির উদ্ভব হয়েছিলো, তার মোকাবিলা করা হয় অন্য অ-মিতাচারের দ্বারা যে অ-মিত্যাচার অকল্যাণের সাথে সাথে কল্যাণেকেও নিশ্চিহ্ন করে ছাড়ে। একথা নি:সন্দেহ যে, একজন সংস্কারবাদীকেও কখনো কখনো এমনসব কাজ করতে হয়, যা একজন বিপ্লববাদীর পক্ষে মানানসই। উভয়েই দেহের পচনশীল স্থানে অস্ত্রোপচার করে। কিন্তু পার্থক্য হলো, সংস্কারবাদী প্রথমেই অনুমান করে নেয় যে, বিকৃতি কোথায় এবং তার পরিধি কতোটুকু। অতপর বিকৃতি দূরীকরণের জন্যে যতোটা প্রয়োজন, ঠিক ততোটুকু পরিমাণেই সে অস্ত্র পয়োগ করে। পরন্তু অস্ত্রপচারের পূর্বে সে ঘা শুকাবার ওষধের ব্যবস্থা করে রাখে। কিন্তু বিপ্লববাদী তার ক্রোধের অতিশয্যে একেবারে অন্ধভাবে অস্ত্র চালাতে থাকে। এবং ভালো-মন্দ নির্বিশেষে সবকিছুই সে কেটে চলে যায়। এভবে যখন অনেক কাটা ছেঁড়া করা হয় এবং দেহে একটি বেশ সুস্থ অংশ বিলুপ্ত করার পর নিজের ভ্রান্তি অনুভব করতে পারে, তখনি হয়তো তার ঔষধের কথা মনে আসে।
সাধারনত যেখানে বিকৃতি মাত্রাতিক্রম করে যায়, সেখানেই লোকেরা ধৈর্য স্থৈর্য খুইয়ে বসে। বিকৃত পরিবেশ থেকে যে দুখ কষ্ট তারা ভোগ করে, তাতে শান্ত মনে, ভেবেচিন্তে সংস্কার প্রচেষ্টা চালানোর অবকাশই তারা পায়না। এ কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত সংস্কারবাদী আন্দোলনের পরিবর্তে বিপ্লববাদী আন্দোলনই তীব্রতা লাভ করে। রক্ষনশীল ও বিপ্লববাদী দলগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘাত দানা বেঁধে ওঠে। এর ফলে ক্রোধ ও প্রতিহিংসার আগুন আরো বেশি ইন্ধন লাভ করে। উভয় পক্ষই একগুঁয়েমী ও হঠকারিতার চরম প্রান্তে গিয়ে উপনীত হয়। উভয়ই সত্য ও সততার গলায় নির্মমভাবে ছুরি চালিয়ে দেয়। একপক্ষ সত্যের পরিবর্তে মিথ্যার প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে চরম শক্তি নিয়োজিত করে, অপর পক্ষ সত্য মিথ্যা নির্বিশেষে সবার ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। শেষ পর্যন্ত বিপ্লববাদীরা যখন জয়লাভ করে, তখন সত্য মিথ্যা, ভলো মন্দ নির্বিশেষে রক্ষণশীলদের প্রতিটি জিনিসকেই ধ্বংস করে ছাড়ে। বস্তুত বিপ্লব ঠিক বন্যার বেগে এগিয়ে চলে। ভাল মন্দ নির্বিচারে সবাইকে সে ভাসিয়ে নিয়ে যায়,ঠেলে দেয় বিলুপ্তির মুখে। অতপর অনেক ভাঙা চুরার পর যখন বিচারবুদ্ধি স্বস্তি ও স্থিতি লাভ করে তখন পুনর্গঠনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। কিন্তু বিপ্লবী মানসিকতা এখানেও অভিনব পন্থা কুঁজে বের করে। পুরনো রক্ষণশীলদের প্রতিটি জিনিসকেই সে বর্জন করার চেষ্ট করে। একটা জিনিস যতোই সঠিক হোক না কেন, কিন্তু প্রচিীন ব্যবস্থপনার সঙ্গে সেটি সম্পর্কযুক্ত ছিলো- বিপ্লবের দৃষ্টিতে এর চাইতে বড় দোষ আর কিছুই নেই। এভাবে বেশ কিছুকাল ধরে বিপ্লবী নীতির ওপর জীবনের ইমারত গড়ে তুলবার জন্যে প্রচেষ্টা চলে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ব্যর্থতার ফলে বিপ্লবী মস্তিষ্ক যখন অবসন্ন হয়ে পড়ে, তখন কোনো না কোনো দিক দিয়ে সে ভারসাম্যের পথে আসতে বাধ্য হয়, যা শুরু থেকেই সংস্কারবাদীদের সামনে ছিলো। অন্যকথায়, বুদ্ধিমান লোকেরা যা করে, নির্বোধ লোকেরাও তাই করে থাকে, তবে পানি অনেক ঘোলা করার পর।
বর্তমান যুগে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব। রাজতান্ত্রিক রাশিয়ায় যে চরম বিকৃত সমাজ-ব্যবস্থা বর্তমান ছিলো, তা যখন দেশবাসীর পক্ষে একবারে অসহনীয় হয়ে উঠল, তখন তার প্রতিক্রিয়ায় একটি বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে উঠে। ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক মতবাদগুলো রাশিয়ায় বিকাশ লাভ করতে থাকে। পক্ষান্তরে রাজবংশ এবং তাদের তাবেদার শ্রেণীগুলো নিজেদের অবৈধ স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে স্বৈরাচারী শক্তি ব্যবহার করে। এর ফলে শুধু রাজকীয় একনায়কত্ব এবং সম্পদের অসম বন্টনের বিরুদ্ধেই নয় বরং শতাব্দী কাল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে তামুদ্দুনিক ব্যবস্থা চলে আসছিলো তার বিরুদ্ধেই প্রবল রোষানল জ্বলে উঠে। অবশেষে কার্ল মার্কসের প্রেতাত্মা লেলিনের মূর্তি পরিগ্রহ করে। জার শাসনকে সমূলে উৎখাত করা হলো। সেই সঙ্গে যে সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, তামদ্দুনিক, নৈতিক ও ধর্মীয় নীতির ওপর বিপ্লব পূর্ব যুগের সমাজ ব্যবস্থ প্রতিষ্ঠিত ছিলো, যুগপৎ তা সবই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হলো। এই ব্যাপকতর ধ্বংসলীলার পর সম্পূর্ণ নতুন কম্যুনিস্ট নীতির ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গঠনের কাজ শুরু হলো। এই নতুন সমাজ প্রাসাদে বুর্জোয়া শ্রেণীর পরিত্যক্ত কোনো একটি জিনিসও যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে, তজ্জন্যে নয়া সংগঠকরা তাদের সমগ্র মানসিক শক্তি নিয়োজিত করল। এমনকি, আল্লাহকে পর্যন্ত সোভিয়েট রাশিয়া থেকে বেরিয়ে যাবার নোটিশ দেয়া হলো। কিন্তু দিন যতই অতিক্রান্ত হতে থাকে, গঠনমূলক বুদ্ধি ততই বিপ্লবী উম্মাদনার স্থান দখল করতে থাকে। এভাবে বিপ্লবের সূচনায় যে চরম বলশেভিকবাদ সক্রিয় ছিলো, ক্রমে ক্রমে তা ভারসাম্যের পথে ফিরে আসতে থাকে।
এই ধরনের প্রান্তিকধর্মিতা ফরাসী বিপ্লবকালেও দেখা দিয়েছিলো। তখনো বিপ্লবের ভাবোচ্ছাসে অতীতের সবকিছুই নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা চলছিলো এবং নতুন নতুন বিপ্লবী নীতি উদ্বাবন করে তার প্রবর্তন করা হয়েছিলো। কিন্তু এহেন চরম বিপ্লবী মানসিকতার ফলেই আজ পর্যন্ত ফ্রান্সের রাজনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক প্রকৃতিতে পুরোপুরি ভারসাম্য স্থাপিত হতে পারেনি। আজকে তার জাতীয় জীবনের কোনো একটি দিক ও বিভাগেই বৃটেনের ন্যায় স্থিতিশীনতা বর্তমান নেই।
এর আর একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে তুর্কী বিপ্লব। সেখানেও এমনি বিপ্লব মানসিকতাই একটি জাতিকেই যাদু বলে রাতারাতি ভিন্ন জাতিতে পরিণত করার প্রয়াস পেয়েছিলো। এই প্রচেষ্টাব্যাপদেশে ফোঁড়া ফুস্কুড়ির ওপর অস্ত্রপ্রয়োগের সাথে তুর্কী দেহের একটি বেশ সু্স্থ অংশও কেটে ফেলে দেয়া হয় এবং তার পরিবর্তে ইউরোপ থেকে কিছু নতুন অঙ্গপ্রতঙ্গ ধার করে এনে লাগিয়ে দেয়া হয়। এমনকি পুরোনো মস্তিষ্কের পরিবর্তে নতুন টুপিযুক্ত একটি নয়া মস্তিষ্কও সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু কালের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লববাদী তুর্কীরা ক্রমেই এই শিক্ষা লাভ করেছে যে, যে কোনো পুরোনো জিনিসই মন্দ এবং যে কোনো নতুন জিনিসকেই ভালো মনে করবার যে সাধারণ নীতি তারা গ্রহণ করেছিলো, তা মোটেও অভ্রান্ত নয়। তাই অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বারা প্রচুর ক্ষতি সাধনের পর তাদেরকে বাড়াবাড়ির পথ থেকে ভারসাম্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হচ্ছে।
এ কথাগুলো বলবার কারণ হলো, বর্তমানে ভারোতীয় মুসলমানদের মধ্যে এক চরম বিপ্লবী মানসিকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই চরমাবস্থার মন্দ পরিণতি দেখা দেবার আগেই আমরা প্রাচীন পন্থী ও বিপ্লবাবাদী উভয় দলকেই চিন্তা ভাবনা করবার আহবান জানতে চাই।
প্রকৃত পক্ষে তুরস্ক এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে যে বিকৃতাবস্থা বিরাজমান ছিলো এবং এখানো রয়েছে, এখনকার পরিস্থিতিও ঠিক তদ্রুপ। গত কয়েক শতক ধরে যে দলটির হাতে আমদের ধর্মীয় নেতৃত্ব করায়ত্ব রয়েছে, তারা ইসলামকে একটি অচল নিষ্ক্রিয় বস্তুতে পরিণত করেছেন। সম্ভবত হিজরী ছয় সাত শতকের পর থেকে তাদের কাছে কালের অগ্রগতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। তারা তাদের দর্শন ও ন্যায়শাস্ত্রের আলোচনায় অবশ্য এটাই পড়তেন এবং পড়াতেন যে, বিশ্ব পরিবর্তনশীল এবং প্রত্যেক পরিবর্তনই হচ্ছে একটি নতুন জিনিস। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বিশ্বের পরিবর্তন, যুগের বিবর্তন এবং কালের অগ্রগতি ও নতুনত্বের প্রতি তাঁরা চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। দুনিয়া পরিবর্তিত হয়ে কোথা থেকে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে; দুনিয়ার অবস্থা, ধ্যান ধারণা, ভাবধারা, মতাদর্শ ইত্যাদিতে কত কি পরিবর্তন ও রুপান্তর ঘটেছে। সামাজিক বিষয়াদি ও সমস্যাবলীতে কতো যে ওলট পালট হয়েছে! কিন্তু আমাদের ধর্ম নেতারা এখনো নিজেদেরকে সেই পাঁচ ছয়’শো বছর পূর্বেকার পরিবেশেই মনে করেছেন। তাঁরা যুগের অগ্রগতির সাথে কোনোই তরক্কী লাভ করলেননা! নিত্যনতুন পরিবর্তন থেকে তারা প্রভাবমু্ক্ত রইলেন! জীবনের নতুন সমস্যাবলীর সাথে তাঁরা কোনোই সম্পর্ক রাখলেননা। তাঁরা আপন জাতিকে ও যুগের সাথে এগিয়ে চলতে বাধা দেবার চেষ্টা করতে লাগলেন; বরং তাদেরকে ভবিষ্যত থেকে অতীতের দিকে টেনে নিয়ে চললেন। এমনি চেষ্টা কিছুদিনের জন্যই সফলকাম হতে পারত এবং তাই হয়েছিলো। কিন্তু চিরদিনের তরে এ ধরণের প্রচেষ্টার সাফল্য লাভ অসম্ভব ব্যাপার। দুনিয়ার সঙ্গে যে জাতির মেলামেশা ও সম্পর্ক সম্বন্ধ রয়েছে, সে কতদিন দুনিয়ার চিন্তাধারা ও জীবনের নতুন সমস্যাবলীর প্রভাবমুক্ত হয়ে থাকতে পারে? তার নেতৃবৃন্দ যদি অগ্রবতী হয়ে নতুন বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিবৃত্তিক ও বাস্তব ধর্মী পথে তাকে চালিত না করেন, তবে সে স্বাভাবিকভাবেই আপন ঘাড় থেকে তাদের নেতৃত্বের জোয়াল তুলে দূরে নিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হবে।
আসলে এই বিকৃতির মূল শিকড় হচ্ছে অন্য একটি জিনিস। আমাদের ধর্ম নেতারা খুঁটিনাটিতে এতদূর লিপ্ত হয়ে পড়েছেন যে, তার ফলে মূলভিত্তিই তাঁদের হাত ছাড়া হয়ে গেছে। অতপর খুঁটিনাটিই মূলনীতির জায়গা দখল করে নিয়েছে এবং তার থেকে আরো অসংখ্য খুঁটিনাটি বেরিয়ে এসেছে আর এগুলোই প্রকৃত ইসলাম বলে আখ্যা পেয়েছে। অথচ ইসলামে এগুলোর আদৌ কোন গুরুত্ব ছিলোনা। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী জাতীয়তার প্রাসাদটি এই ধারাক্রমের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো যে, প্রথমে কুরআন মজীদ, তারপর সুন্নতে রসূল (সা) এবং সর্বশেষে জ্ঞানী ও মনীষীদের ইজতিহাদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই ধারাক্রমকে সম্পূণ পাল্টে দেয়া হয় এবং এইভাবে নতুন ধারাক্রম রচনা করা হয় যে, প্রথমে একটি বিশেষ যুগের মনীষীদের ইজতিহাদ, পরে সুন্নতে রসূল (সা) এবং সবশেষে কুরআন মজীদ! এই নয়া ধারাক্রমেই হচ্ছে সমস্ত জড়তা ও ক্লীবতার জন্যে দায়ী, যা ইসলামকে একটি অকেজো ও নিস্ক্রিয় বস্তুতে পরিণত করেছে।
ফিকাহ্ শাস্ত্রকার, কালামশাস্ত্রবিদ, তফসীরকারক ও মুহাদ্দিস (রহ) গণের জ্ঞানগরিমা ও তাঁদের পদমযাদাকে কেউই অস্বীকার করতে পারেনা। কিন্তু তাঁরা মানুষ ছিলেন। তাঁদের জ্ঞান অর্জনের উপায় ও পন্থা সাধারণ মানুষের মতই ছিলো। তাঁদের কাছে ওহী আসতো না বরং আপন বিচার বুদ্ধি ও ব্যুৎপত্তির সাহায্যে কালামুল্লাহ ও সুন্নাতে রসূল সম্পকে চিন্তা গবেষণা করতেন। এভাবে যে সব মূলনীতি তাঁদের কাছে নির্ভুল বলে মনে হতো, তার ভিত্তিতেই আইন কানুন ও আকাইদের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তাঁরা নির্ধারণ করতেন। তাঁদের এই সকল ইজতিহাদ আমাদের পক্ষে সহায়ক ও পথ নিদেশক হতে পারে; কিন্তু এটাই মুলনীতি ও ভিত্তি হতে পারেনা। মানুষ নিছক তার বিচার বুদ্ধির সাহায্যে ইজতিহাদ করুক অথবা কোনো প্রত্যাদেশমূলক কিতাব থেকে আহরিত তথ্যের সাহায্যে ইজতিহাদ করুক কোনো অবস্থাতেই তার ইজতিহাদ দুনিয়ার জন্য স্থায়ী বিধান ও অটল নিয়মের মযাদা পেতে পারেনা। কারণ মানুষের জ্ঞান ও বিচার বুদ্ধি হামেশাই স্থান ও কালের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে।
স্থান ও কালের সমস্ত গন্ডি থেকে উদ্ধে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তাঁর কাছেই রয়েছে প্রকৃত জ্ঞান ভান্ডার। কালের আবর্তনে তাঁর জ্ঞান রাজ্যে অণু পরিমাণ পরিবর্তন ও সূচিত হয়না। সে জ্ঞানের প্রতিপলন ঘটেছে কুরআন পাকের আয়াত এবং তার ধারক ও বাহকের পবিত্র বক্ষদেশে। প্রকৃতপক্ষে এ হচ্ছে এমন এক জ্ঞান উৎস, যেখান থেকে প্রত্যেক যুগের মানুষই তার বিশেষ অবস্থা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে হামেশা জ্ঞান বিজ্ঞান, ধ্যান ধারণা ও বিধি ব্যবস্থা আহরণ করতে পারে। যতদিন আলিম সমাজ এই উৎস ও ভিত্তিমূল থেকে জ্ঞান আহরণ করেছিলেন এবং নির্ভুল চিন্তা শক্তি ও বিচার বুদ্ধি দ্বারা ইজতিহাদ করে আদর্শিক ও বাস্তব সমস্যাবলীর সমাধান করেছিলেন, ততদিন ইসলামও যুগের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছিলো। কিন্তু যেদিন থেকে কুরআন সম্পকে চিন্তা গবেষণা পরিহার করা হলো, হাদীসের সত্যানুসন্ধান ও বিচার বিশ্লেষণ বন্ধ হয়ে গেল, নির্বিচারে পূর্ববর্তী তফসীরকারক ও মুহাদ্দীসগণের অন্ধ অনুকরণ শুরু হলো, অতীতের ফিকাহশাস্ত্রকার ও কালাম শাস্ত্রবিদদের ইজতিহাদকে অটল ও চিরস্থায়ী বিধানে পরিণত করা হলো এবং কুরআন ও সুন্নাহর নীতিকে পরিত্যাগ করে বুজুর্গদের উদ্ভাবিত খুঁটিনাটিকেই মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হলো, সেদিনই ইসলামের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে গেলো। তার সম্মুখগতির পরিবর্তে পশ্চাদধাবন শুরু হলো। তার ধারক ও বাহকগণ জ্ঞান ও কর্মের নব নব ক্ষেত্রে দুনিয়ার পথ নিদেশের পরিবর্তে প্রাচীন বিষয়াদী ও জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণেই লিপ্ত হয়ে পড়লো। ছোটখাট খুঁটিনাটি বিষয়ে বাকবিতন্ডায় নিরত রইলো। নিত্যনতুন মাযহাব সৃষ্টি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিতর্কমূলক ব্যাপারে ফিরকা সৃষ্টি করে চললো। এমনকি, এর পরিণামে মুসলমানদের উপর মুক্ত হস্তে কুফরী ও ফাসিকীর ফতোয়া জারি হলো যে, দুনিয়ার মানুষ ——- (লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করছে) – এর পরিবতে – ———– (লোকেরা আল্লাহর দ্বীন থেকে দলে দলে বেরিয়ে যাচ্ছে) – এর তামাশা দেখতে পেলো। অপরদিকে ————- (কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং পরস্পরের প্রতি নম্র) – এর পরিবতে ————-(মুমিনরা কাফিরদের প্রতি নম্র এবং পরস্পরের প্রতি কঠোর) – এর দৃশ্য চারিদিকে প্রতিভাত হয়ে উঠলো। সর্বপরি মুনাফিক ও কাফিরদের সম্পকে ———– (তোমাদের মনে হবে তারা ঐক্যবদ্ধ, অথচ তাদের অন্তর পরস্পর থেকে বিছিন্ন) – এরে যে অবস্থার কথা বিবৃত হয়েছিলো, তা মুসলমানদেরই অবস্থার পরিণত হলো।
এ হচ্ছে উল্লেখিত আচরণের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা আজ আমরা এক ভয়াবহ বিপ্লবরূপে দেখতে পাচ্ছি। মুসলমানেরা যখন দেখছে যে, তাদের ধর্ম নেতারা তাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব আঙ্জাম দিচ্ছে না, বরং তাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার পরিবর্তে উল্টো পিছু টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তখনি তারা তাদের কতৃত্ব থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। অতপর একটি ছত্রভঙ্গ সৈন্যদলের ন্যায় তারা ইতস্তত বিচরণ করতে শুরু করেছে। একদল ধর্মের পতাকাবাহীদের সমস্ত ভ্রান্তি ও দুর্বলতার অভিযোগ খোদ ধর্মের ওপরই চাপিয়ে দিয়েছে। তাদের প্রগতির পথে ধমকেই সবচাইতে বড় প্রতিবন্ধক বলে ঘোষণা করেছে। ধর্মকে বজন করে ’উন্নতশীল‘ জাতিগুলোর অন্ধ অনুকৃতির কথা খোলাখুলি বলতে শুরু করেছে। অন্যদল আলিম সমাজ ও ধর্মনেতাদের গালাগাল করাকে নিজেদের অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে, যেন এই গালিগালাজ ও গলাবাজির মধ্যেই মুসলমানদের কল্যাণ ও উন্নতির চাবিকাঠি নিহিত রয়েছে। আর একদল উঠেই ধমের কাটছাঁট শুরু করে দিয়েছে। কেউ আবার ইমাম ও ফিকাহশাস্ত্রবিদদের সম্পকে কুৎসা রচনা আরম্ভ করেছে। আবার কেউ ফিকাহর সঙ্গে হাদীসকে ও একই পর্যায়ে ফেলে দিয়েছে। কেউ আবার কুরআনী শিক্ষা দীক্ষা ও বিধি ব্যবস্থায় সংশোধনের প্রয়োজনবোধ করেছে। আবার কেউ দীন ও দুনিয়াকে পৃথক করবার ওকালতি করেছে। এদের মতে, ধর্মের সম্পক থাকবে শুধু আকাইদ ও ইবাদতের সঙ্গে, আর পাথিব ব্যাপারে ধর্ম বা ধর্মীয় বিধি ব্যবস্থার কোন কতৃত্ব থাকবেনা।
এভাবে ঐ বিকৃতাবস্থার পরিবতনের জন্যই বিভিন্ন দল উপদল গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের আগ্রহ আকর্ষণটা সংস্কারের দিকে নয়, বরং বিপ্লবের দিকে। তারা শান্ত মনে চিন্তা করেই দেখেনি, আসল বিকৃতিটা কি? কোথায় তার উৎস? বিকৃতির পরিধি কতটুকু এবং তার নিরসনের সঠিক পন্থা কি? নিছক অনুমানের সাহায্যেই এটা ধরে নেয়া হয়েছে যে, বিকৃতির অস্তিত্ব রয়েছে। আর তা দূরীকরণের জন্যে উম্মতের দেহে অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে রোগের সঙ্গে রোগীর ও যে সবর্নাশ ঘটতে পারে, এটুকু তলিয়ে চিন্তা করা হচ্ছেনা।
স্বাধীন দেশগুলোতে অবশ্য একথা বলা যেতে পারে এবং বললে কতকটা সঙ্গতও হবে যে, বিপ্লবী কার্যক্রম ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই। কারণ সেখানে একটি মাত্র দলের হাতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা নিবদ্ধ থাকে। অন্য কোন দলের পক্ষে সে ক্ষমতার অবসান ঘটাতে হলে এক প্রচন্ড বিপ্লবী কার্যক্রম ছাড়া সাফল্য লাভ করা নাও যেতে পারে। সেই সঙ্গে এটাও লক্ষণীয় যে, বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের ওপর যখন কার্যত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়ে, তখন যুগের অভিজ্ঞতা খুব শীঘ্রই তাদের বিচার বুদ্ধিকে সংহত করে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাদেরকে বাড়াবাড়ির পথ বর্জন করে ভারসাম্যর পথ অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু এ কথা আমাদের ভুললে চলবে না যে, বর্তমানে[এটি ১৯৩৪ সালের কথা। তখনকার ব্রিটিশ – ভারত আর আজকের স্বাধীন বাংলা পাক-ভারতের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। – সম্পাদক] আমরা পরাধীনতার মধ্যে কালাতিপাত করছি। আমাদের পরিস্থিতি স্বাধীন দেশগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে প্রথমত কোনো বিপ্লবী কার্যক্রমের প্রয়োজন নেই। কারণ এখানে এমন কোন প্রচন্ড ও শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা নেই, যার মোকবিলায় একটি ভারসাম্যপূণ সংস্কার আন্দোলন সফলকাম হতে পারেনা। দ্বিতীয়ত, কোনো বিপ্লবী কার্যক্রম শুরু এবং তা সফলকাম হলে দীর্ঘকাল পযন্ত তার ভারসাম্যের পথে আসবার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। কারণ বিপ্লবের ঝান্ডাবাহীদের কোনোবাধ্য বাধকতা পূণ দায়িত্বভার ন্যস্ত হবে না, যা তাদের প্রান্তিকধমিতাকে ভারসাম্যের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। কাজেই এখানে কোনো বিপ্লবী কাযক্রম যথাথ নয়। বরং সত্য বলতে গেলে নানা ধরণের বিপ্লবী কাযক্রম বেশি দিন জারী থাকলে তার পরিণতি অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে দাঁড়াবে। ফলে যে ভিত্তি ভুমির উপর মুসলিম সমাজটি দাঁড়িয়ে আছে, তা টলমলিয়ে উঠবে এবং তার পরিবতে এমন কোনো সুদৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, যার ওপর একটি নয়া সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। পরন্তু যে জাতি আগে থেকেই পরাধীনতা ও নিবীযতার মধ্যে রয়েছে, তার সমাজ ব্যবস্থাকে এভাবে চুরমার করে ফেলা হলে নৈতিক অধপাতের কোন গভীর অতলে সে নিক্ষিপ্ত হবে, তাও ভেবে দেখবার বিষয়।
এ কারণেই আমরা কখনো কখনো রক্ষণশীলদের চাইতে ও বেশি কঠোরতার সাথে বিপ্লববাদীদের মোকাবেলা করতে বাধ্য হই। নচেত বিকৃতাবস্থার পরিবতনের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আমরাও তাদের সাথে একমত। ইসলামের মধ্যে যে জড়তা ও নিষ্কিৃয়তার সৃষ্টি করা হয়েছে, তাকে গতিশীলতায় রূপান্তরিত করতে আমরা ও ইচ্ছুক। কিন্তু আমাদের মতে, এই গতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ইসলামী রীতিনীতি বজন করে ফিরিঙ্গীপনা আকড়ে ধরা কোনো নিভুল পথ নয়; কিংবা কোনো জ্ঞান গবেষণা ও চিন্তা ভাবনা ছাড়াই অন্ধভাবে ধমের কাটছাট শুরু করে দেয়াও কোনো সঠিক পথ নয়। অথবা প্রাচীনকালের মুজতাহিদগণ কঠোর শ্রম মেহনত ও সংগ্রাম সাধনা করে যে বিশাল ইমারত গড়ে তুলেছিলেন, তাকে অযথা ভূমিস্মাৎ করে দেয়াও কোনো যথাথ পথ নয়; কিংবা হাদীসের গোটা ভান্ডারকে আগুনে নিক্ষেপ করা ও কোনো অভ্রান্ত পথ নয়। অথবা মদীনায় বিচার বুদ্ধি দ্বারা কালামে ইলাহীতে কোনোরূপ সংশোধন ও পরিবতন করাও সত্যিকার পথ নয়। বস্তুত এগুলো সংস্কারের কোনো পথই নয়; বরং এ হচ্ছে আগের চাইতে ও মারাত্মক বিপযয় সৃষ্টির পথ। এর সঠিক প্রতিকারের একমাত্র পথ এই যে, যে ধারাক্রমকে পাল্টে দেয়া হয়েছে, তাকে আবার সোজা করতে হবে। পূবে কুরআন যে নেতৃত্বের মযাদায় অভিষিক্ত ছিলো, সেই মযাদা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। নব্যুাতের যুগে রসূলে আকরাম (সা) এর সাহাবাগণ ও তাঁর পরিবারবগ তাঁর কথা ও কাজকে যে মযাদা দিতেন আজ হাদীসকে সেই মযাদা দান করতে হবে। ফিকাহ শাস্ত্রকার, কালাম শাস্ত্রবিদ, তফসীরকার ও মুহাদ্দিসগণ তাঁদের নিজস্ব কমকান্ডকে যে মযাদা দিয়ে গিয়েছেন, আমাদেরকেও কেবল সেই মযাদাই দিতে হবে।
মোটকথা, এদের সবার কাছ থেকেই উপকৃত হতে হবে। যে জিনিসগুলো বদলাবার প্রয়োজন নেই, সেগুলো যথারীতি বহাল রাখতে হবে। কিন্তু এটা কখনই ধারণা করা যাবেনা যে, মনীষীরা যা কিছু লিখে গিয়েছেন, তা অটল ও অপরবিতনীয় বিধান; কিংবা লিখিত কিতাবাদি আমাদেরক কুরআন মজীদ সম্পকে চিন্তা ভাবনা এবং হাদীসে রসূলের সত্যানুসন্ধান থেকে বে নিয়ায করে দিয়েছে। অথবা পর কুরআন ও সুন্নাহ থেকে সরাসরি জ্ঞান আহরণের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এই ধারাক্রম যদি আবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে ইসলামের নিশ্চল গাড়িও পুনরায় চলমান হতে থাকবে। কারণ নিশ্চলতার আসল কারণই হলো, ইঞ্জিনকে গাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করে পিছনে ফেলে রাখা হয়েছে। ড্রাইভারকেও ইঞ্জিন থেকে সরিয়ে নিয়ে পিছনের কোনো এক বগিতে বসিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সবচাইতে অগ্রবতী বগিটির ওপর এই ভরসা পোষণ করা হয়েছে যে, সে নিজেও যেমন চলবে, তেমনি সমস্ত গাড়িও চালিয়ে নেবে।
কিন্তু একাজে রোষাবেগের কোনো প্রয়োজন নেই। রোষ কেবল সেখানেই হতে পারে, যেখানে কেউ স্বেচ্ছায় যুলুম করেছে। কিন্তু এখানে যা কিছ হয়েছে, স্বেচ্ছাকৃতভাবে হয়নি। এ কথা কেউ বলতে পারবে না যে, আলিমরা কোথাও কোনো সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্ত করে ছিলেন যে, আমরা ইসলামের ওপর জড়তা ও নিষ্কিৃয়তা চালিয়ে দেব এবং তার চলমান গাড়িকে বাধা দান করাবো। প্রকৃতপক্ষে হিজরী ছয় সাত শতক থেকে মুসলিম জাতিগুলোর রাজনৈতিক, সামরিক, অথনৈতিক ও তামদ্দুনিক শক্তির সঙ্গে তাদের মানসিক, বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিতে ক্রমাগত যে অধপতন সূচিত হয়েছে, এ হচ্ছে শুধু তারই পরিণতি মাত্র। সে অধপাত মুসলমানদের জিহাদী ভাবধারাকে যেরূপ নিস্তেজ করে ফেলেছে, তেমনি তাদের ইতিহাস ও উদ্ভাবনী চেতনাকেও মরচে ধরিয়ে দিয়েছে। জীবনের গোটা সমস্যাবলী সম্পকে যেমন মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছে, তেমনি ধমীয় ও শিক্ষাগত ব্যাপারেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবতন ঘটেছে। ফলে ধীরে ধীরে অবচেতনভাবেই তাদের গোটা মানস শক্তির ওপর মৃত্যুর কালো ছায়া নেমে এসেছে। এর জন্য আলিম সমাজ বা তাদের অনুগামী কাউকেই অভিযুক্ত করা যায় না। এর জন্যে বড়জোর প্রকৃতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যেতে পারে। কিন্তু এ অভিযোগ করে যেমন কোনো ফলোদয় হবে না, তেমনি রোষানল ও ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তি দ্বারা ও কোনো কল্যাণ সাধিত হবে না। কল্যাণ বা সংস্কারের একমাত্র নিভুল পন্থা হলো, শান্ত মনে বিকৃতির কারণ এবং তার পরিধি নিণয় করতে হবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে বিকৃতির স্থলে সুকৃতিকে জাগিয়ে তুলতে হবে।