১৫
মুসলমান শব্দের প্রকৃত মর্ম
[প্রবন্ধটি সর্বপ্রথম ১৯৩৩ সালের নভেম্বরে তরজমানুল কুরআন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। -সম্পাদক]
আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় প্রায়শ কতিপয় এমন শব্দ ও বাক্য ব্যবহৃত হয়, সে শব্দ ও বাক্যগুলো যদিও সবাই উচ্চারণ করে কিন্তু তার মর্ম বোঝে খুব কম লোকই। বহুল ব্যবহারের ফলে সেগুলোর একটা মোটামুটি অর্থ লোকদের অন্তর্নিবিষ্ট হয়েছে মাত্র। কথক লোক যখন ঐ শব্দগুলো উচ্চারণ করে, তখন তারা উক্ত ধরনের মর্মই মনে পোষণ করে। আর শ্রবণকারী যখন শোনে তখন তারা ঐ ধরনের মর্মই গ্রহন করে। কিন্তু যে ব্যাপক ও গভীর মর্মের জন্যে এই শব্দগুলো উদ্ভাবিত হয়েছে, তা অশক্ষিতি লোক তো দূরের কথা, অনেক বড় বড় শক্ষিতি লোকের পর্যন্ত জানা নেই।
দৃষ্টান্ত হিসেবে ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলমান’ শব্দ দু‘টির উল্লেখ করা যেতে পারে। কতো বিপুল ভাবে এই শব্দ দু‘টি উচ্চারণ করা হয়, আর কী ব্যাপকভাবেই না এরা আমাদের বাকশক্তির ওপর প্রভাব বি¯তার করে রয়েছে! কিন্তু কজন উচ্চারণ কারী এই শব্দ দু‘টি বুঝে শুনে বলে? আর ক‘জন শ্রোতাই বা এগুলোর প্রকৃত মর্ম, যে মর্মের জন্যে এদের উদ্ভাবন করা হয়েছে তা বুঝে? অমুসলিমদের কথা ছেড়েই দিন। খোদ মুসলমানদের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি লোক নিজেতে ‘মুসলমান’ বলে পরিচয় দেয় এবং নিজের ধর্মমত প্রকাশ করতে ইসলাম শব্দটি উচ্চারন করে, কিন্তু ‘মুসলমান’ হবার মানে কি ‘ইসলাম’ শব্দেরই বা প্রকৃত মর্ম কি? এটা তারা জানেনা। তাই এখানে শব্দ দু‘টির কিছুটা ব্যাখ্যা পেশ করা যাক।
ধর্ম বিশ্বাস ও আচারণের দিক থেকে লোকদের অবস্থা পর্যালোচনা করলে সাধারনত তিন শ্রেণরি লোক পাওয়া যায়ঃ
১. প্রথম শ্রেনীর লোক হচ্ছে মতামত ও কর্মের স্বাধীনতার দাবিদার। তারা প্রতিটি ব্যাপারে নিজস্ব মতের উপর ভরসা করে। নিজস্ব বিবেক বুদ্ধির ফয়সালাকেই নির্ভুল বলে মনে করে। তাদের নিজস্ব ধারণায় যে কর্ম পন্থা সঠিক সেটিই তারা অবলম্বন করে। কোনো বিশেষ ধর্মের অনবতনের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্রব নেই।
২. দ্বিতীয় শ্রেনীর লোকেরা দৃশ্যত কোনো ধর্মকে মানে বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার নিজস্ব ধ্যান ধারণার অনুসরণ করে চলে। তারা আকীদা বিশ্বাস ও কর্মবিধির জন্যে ধর্মের প্রতি মনোনিবেশ করেনা; বরং নিজস্ব মানস প্রকৃতি, ঝোঁক প্রবনতা বা স্বার্থ ও প্রয়োজনের প্রেক্ষেিত নিজেদের মন মগজে কিছু আকিদা বিশ্বাস বদ্ধমুল করে নেয়; কাজের কতিপয় মনগড়া পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং তারপর ধর্মকে সেই অনুসারে ঢালাই করবার প্রয়াস পায় – যেনো তারা ধর্মের অনুগামী নয়; বরং ধর্মই তাদের অনুগামী।
৩. তৃতীয় শ্রেণীর লোকেরা নিজস্ব বিচার বুদ্ধির সাহায্যে কোনো কাজ করেনা। তারা বিবেক বুদ্ধিকে নিস্ক্রিয় করে রাখে এবং চোখ বন্ধ করে শুধু অপরের- তা তাদের বাপ দাদা হোক, কি সমকালীন অন্য লোক-তকলীদ করতে থাকে।
প্রথম দলটি স্বাধীনতার নামে প্রাণপাত করে; কিন্তু তার সঠিক সীমারেখাটি কী, এটাই জানেনা। চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা কতকাংশে যথার্থ, সন্দেহ নেই। কিন্তু তা যখন নিজস্ব সীমা রেখা অতিক্রম করে যায়, তখন তা ভ্রান্তির হেতু হয়ে দাড়ায়। যে ব্যক্তি প্রতিটি ব্যাপারে নিজস্ব মতের ওপর নির্ভর করে, প্রতিটি বিষয়ে শুধু বুদ্ধিরই নির্দেশ মানে – সে প্রকৃতপক্ষে এই ভ্রান্তেিত লিপ্ত রয়েছে যে, তার বুদ্ধি জ্ঞান দুনিয়ার প্রতিটি বিষয়ই আয়ত্ব করে ফেলেছে, কোনো সত্য বা জটিলতা তার দৃষ্টি থেকে প্রছন্ন নয়, প্রত্যেক মনযিলের পথঘাট সম্পর্কেই সে অবহিত, প্রতিটি মতবাদের যৌাক্তকতা সম্পর্কেই সে সুবিদিত, প্রত্যেক পথের সুচনার মতো তার শেষ সীমা সম্পর্কেও সে পরিজ্ঞাত। এই জ্ঞান ও সচেতনতার ধারনা প্রকৃতপক্ষে একটি ভ্রান্ত ধারনামাত্র। মানুষ যদি বাস্তবিকপক্ষে তার বুদ্ধিবৃত্তিকে অনুজ্ঞা বানিয়ে নেয়, তবে খোদ খোদ বুদ্ধিবৃত্তিই বলে দেবে যে, তার অন্ধঅনুগামী তাকে যে গুণরাজিতে বভিূষিত মনে করে, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোতে সে বিভূষিত নয়। তাকে একমাত্র দিশারী মনে করে, কেবল তারই নিদের্শে যে পথ চলতে চায় – আঘাত, হোঁচট, বিচ্যুতি ভ্রাšিত ও ধ্বংসের হাত থেকে সে কিছুতেই বাচঁতে পারনো।
বাস্তুুত চিন্তা ও কর্মের এই ধরনের স্বাধীনতা তাহযীব ও তমদ্দুনের পক্ষওে মারাত্মক। স্বাধীনতার দাবিই হচ্ছে এই যে, ব্যক্তির নিজস্ব ধারনায় যে ধর্মবিশ্বাসটি নর্ভিুল মনে হবে, কেবল সেটিই সে পোষণ করবে – যে পথটি তার বুদ্ধিবৃত্তির দৃষ্টিতে সঠিক বলে বিবেচিত হবে, সেটিই সে অবলম্বন করবে। পক্ষান্তরে তাহযীব ও তমদ্দুনের দাবি হচ্ছে এই সমাজ ব্যবস্থার অধীনস্থ লোকেরা কতিপয় বুনিয়াদী প্রত্যয় ও চিন্তার ক্ষেেত্র একমত হবে এবং সমাজবদ্ধ জীবন সংগঠন ও পরিচালনার জন্যে নির্ধারিত বিশিষ্ট নিয়ম প্রণালীও বিধি ব্যবস্থা নিজেদের বাস্তব জীবনে অনুসরণ করবে। কাজেই চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা এবং তাহযীব ও তমদ্দুনের মধ্যে স্পষ্টত বিরোধ রয়েছে। স্বাধীনতা ব্যক্তির মধ্যে অহমিকা, অসংযম ও নৈরাজ্যের সুষ্টি করে। তমদ্দুন তার কাছ অনুগত্য, অনুসূতি এবং বাধ্যতা ও বশ্যতা দাবি করে। যেখানে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা থাকবে, যেখানে তমদ্দুন বা সমাজবদ্ধ জীবন থাকবেনা। আর যেখানে তমদ্দুন থাকবে, সেখানে ব্যক্তিকে চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা অনেকখানি বিসর্জন দিতে হবে।
দ্বিতীয় দলটির অবস্থা প্রথম দলটির চাইতেও নিকৃষ্ট। প্রথম দলটি শুধু ভ্রান্ত; দ্বিতীয় দলটি তার সঙ্গে মিথ্যাবাদী, মুনাফিক, প্রতারক এবং পরশ্রীকাতরও। যদি ব্যাখ্যা বশ্লিষেণরে সঙ্গত সীমার মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি তার ধর্ম, চিন্তাধারা ও ঝ্োঁকপ্রবনতার মধ্যে সামঞ্জস্য সৃষ্টি করতে পারে, তবে চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা নিয়েও সে ধর্মের আনুগত্য করতে পারে। যদি মানুষের ঝোঁক প্রবণতা ধর্মের প্রতিকূল হয় আর তা সত্ত্বেও সে ধর্মকে সঠিক ও নিজস্ব প্রবনতাকে ভ্রান্ত মনে করে – তবুও তার এ দাবিকে অনেকখানি সত্য বলা যাবে যে, সে নিজেকে যে ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করে, সে ধর্ম বাস্তবিকই মানে। কিন্তু ধর্মের স্পষ্ট
শিক্ষা ও অনুজ্ঞা থেকে তার বিশ্বাস ও আচারণ যদি সম্পূর্ণ ভিন্নতর হয় এবং সে নিজস্ব ধ্যান ধারণাকে সত্য ও ধর্মের শক্ষিাকে ভ্রান্ত মনে করে আর তার পরেও সে নিজেকে ধর্মের চৌহদ্দির মধ্যে আবদ্ধ রাখার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাকে নিজস্ব ধ্যান ধারণা ও রীতিনীতি অনুযায়ী ঢালাই করবার প্রয়াস পায় – তবে এমন ব্যক্তিকে আমরা নিবোর্ধ বলবোনা; কারণ নির্বোধ ব্যক্তি এতোটা সতর্কতামুলক কাজ কোথায় করতে পারে? আমাদের বাধ্য হয়েই তাকে বেঈমান বলতে হবে। আমরা এ-ও ধারনা করতে বাধ্য হবো যে, তার মধ্যে ধর্মের প্রতি প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করার মতো যথেষ্ট সৎ সাহসের অভাব রয়েছে; এ জন্যই সে মুনাফিকীয় পথে ধর্মের অনুগামী সেজেছে। নচেৎ যে ধর্মের শিক্ষা তার বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্তরে বিরোধী – তার প্রকৃত চিন্তা ও প্রত্যয়ের সর্ম্পূণ প্রতিকূল, সে ধর্মটি বর্জন করতে কোন জিনিসটি তার বাধ সেধেছে? আর যেসব পন্থায় চলতে সে ঐকান্তকি ভাবে আগ্রহশীল, সেসব পথে চলতে কে-ই বা তাকে বারণ করেছে?
তৃতীয় দলটি বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিতে সবচাইতে বেশি অপকৃষ্ট। প্রথম দল দু’টির ভ্রান্তি হচ্ছে এই যে, বুদ্ধিবৃত্তি যতোটা কাজ করতে অপারগ, তার কাছ থেকে ততোটা কাজই তারা গ্রহণ করতে চায়। আর এই দলটির ভ্রান্তি হলো, এরা বুদ্ধিবৃত্তিকে মোটেই প্রয়োগ করেনা অথবা করলেও তা না করারই সমান! একজন বুদ্ধিমান লোকের পক্ষে এর চাইতে লজ্জাজনক বিষয় আর কী হতে পারে যে, সে যে ধর্মমতের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে, তার সাপক্ষে এছাড়া আর কোনো প্রমাণ নেই যে, তার বাপ দাদাও এমনি বিশ্বাস পোষণ করতো অথবা অমুক উন্নতিশীল জাতিও এই ধর্মমতের প্রতি বিশ্বাসী? অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি তার ধর্মীয় বা পার্থিব ব্যাপারে কতক প্রক্রিয়া এ জন্যই অনুসরণ করে যে, বাপ দাদার আমল থেকে এমনি প্রক্রিয়া চলে আসছে কিংবা কতক প্রক্রিয়া এ জন্যই অবলম্বন করে যে, সমকালীন প্রতিপত্তিশীল জাতিগুলোর মধ্যে তা প্রচলিত রয়েছে, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে একথাই প্রমাণ করে যে, তার মাথার ভেতর সত্য মিথ্যা ও ভুল নির্ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার মতো কোনোই যোগ্যতা নেই। ঘটনাক্রমে সে হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করেছে বলেই হিন্দু ধর্মকে সঠিক মনে করেছে। এমনিভাবে মুসলমান পরিবারে ভুমিষ্ট হলে ইসলামকেই সত্যাশ্রয়ী বলে মানতো। আবার খ্রীষ্টানের সন্তান হলে খ্রীষ্টধর্মের জন্যেই সে প্রাণপাত করতো। অনুরূপভাবে ঘটনাচক্রেই তার আমলে ফিরিঙ্গি রীতিনীতিকে সভ্যতার মানদন্ড বলে মনে করেছে। যদি চীনারা ক্ষমতাশালী হতো তো নিশ্চিতভাবে চীনা রীতিনীতিই তার কাছে সভ্যতার মানদন্ড বলে স্বীকৃত হতো। আর আজকে দুনিয়ার নিগ্রোদের মনুষ্যত্বের মাপকাঠি ভাবতে শুরু করবে।
কোনো জিনিসের সত্য যথার্থ হবার জন্যে এটা কোনো প্রমাণ নয় যে, আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকেই এমনিভাবে চলে আসছে কিংবা দুনিয়ার আজকাল এমনই চলছে। দুনিয়ায় তো পূর্বেও অনেক নিবুদ্ধিতাজনক কাজ হয়েছে এবং আজো হচ্ছে। কেবল অন্ধভাবে সেইসব নির্বুদ্ধিতার অনুসরণ করা আমাদের কাজ নয়।
অথবা শুধু চোখ বন্ধ করে প্রাচীন বা আধুনিক কালের যে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে থাকা এবং যেকোনো পথিকের কাঁধে কাধ মিলিয়ে এগিয়ে চলাও – তা সে কাঁটাবনের দিকে নিয়ে যাক অথবা কোনো বিবাট গর্তের দিকে – আমাদের কাজ নয়। কারণ দুনিয়ার ভাল মন্দের মধ্যে পার্থক্য করা, নকল ও আসলের পরখ করে দেখা এবং কাউকে দিশারীরূপে গ্রহন করার আগে সে কোন্ দিকে চালিত করে তা খুব ভালমতো দেখে নেবার জন্যে আল্লাহ আমাদের বুদ্ধি-জ্ঞান দিয়েছেন। ইসলাম এই তিনটি দলকেই পথভ্রষ্ট বলে মনে করে।
প্রথম দলটি সম্পর্কে সে বলে, এরা যেমন কোনো আলোক প্রাপ্তকে নিজেদের দিশারী বলে মানেনা, তেমনি পথ চলার উপযোগী কোনো আলোকরশ্মিও এদের কাছ বর্তমান নেই। এদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির মতো, যে অন্ধকারে শুধু অনুমানে হাতড়িয়ে পথ চলছে। হয়তো কখনো সে সোজা পথে চলবে, আবার কখনো হয়তো গর্তে গিয়ে পড়বে। কেননা অনুমান কোনো নিশ্চিত জিনিস নয়। এতে ভুল ও নিভুল উভয়েরই সম্ভাবনা রয়েছে; বরং ভুলের সম্ভাবনাই অধিকঃ
وما يتبع الذين يدعون من دون الله شركاء ان يتبعون الا الظن وانهم ال يخرصون
অর্থঃ যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে খোদয়ীর অংশীদার বলে মনে করে এবং তাদেরকে ডাকে, তারা কিসের অনুগামী জানো? তারা শুধু অনুমান ও কল্পনার অনুগামী এবং নিছক আন্দাজে তারা পথ চলে’। (সুরা ইউনুসঃ ৬৬)
ان يتبعون الا الظن وان الظن لايغنى من الحق شيئا
অর্থঃ তারা শুধু অনুমানের ওপর নির্ভর করে চলে আর অনুমানের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তা অনু পরিমানও সত্যের পথ নির্দেশ করেনা” (সুরা নজম ঃ ২৮)
ان يتبعون الا الظن وما تهوى الانفس ولقد جاءهم من ربهم الهدى ط ام للانسان ما تمنى
অর্থঃ তারা অনুমান ও প্রবৃত্তির বাসনা ছাড়া আর কোনো জিনিসের অনুসরণ করে না। অথচ তাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে। মানুষের জন্যে কি তা-ই সত্য, যা সে প্রত্যাশা করে?’ (সুরা নজম ঃ ২৩-২৪)
افرءيت من اتخذ الهه هوه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوة فمن يهديه من بعد الله
অর্থঃ যে ব্যক্তি আপন প্রবৃত্তির বাসনাকে নিজের খোদা বানিয়ে নিয়েছে, তুমি কি তাকে দেখেছে? তার জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে গুমরাহ করে দিয়েছেন। তার কান ও অন্তকরণের ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। তার চোখের ওপর আবরণ টেনে দিয়েছেন। এখন আল্লাহর পর আর কে তাকে পথ নিদের্শ করবে?’ (সুরা জাসিয়াহ ঃ ২৩)
ومن اضل ممن اتبع هواه بغير هدى من الله ط ان الله لا يهدى القوم الظلمين
অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া হেদায়েতের পরিবর্তে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে, তার চাইতে অধিক গুমরাহ আর কে? এ ধরনের জালিম লোকদেরকে আল্লাহ কখনো হেদায়েত দান করে না’। (সুরা কাসাসঃ ৫০)
কুরআনের অবতরণকালে দ্বিতীয় দলের প্রতিভূ ছিলো বনী ইসরাঈল। তারা নিজেদেরকে মূসা আ. এর অনুগামী ও তওরাতের অনুবর্তী বলে দাবি করতো। কিন্তু তাদের প্রত্যয় ও আচরণের বেশির ভাগই ছিলো মূসা আ. এর অনুসৃত পন্থা এবং তওরাতে বিবৃত শক্ষিার পরিপন্থি। তদুপরি মজার ব্যাপার ছিলো এই যে, এহেন অন্যায়াচরণের জণ্যে এরা এতোটুকু লজ্জাবোধও করতোনা। এরা নিজেদের চিন্তা ও কর্মধারাকে তওরাতের শিক্ষা অনুযায়ী ঢালাই করার পরিবর্তে তওরাতের মধ্যেই শাব্দিক ও অর্থগত বিকৃতি ঘটিয়ে তাকে নিজেদের চিন্তা ও কর্মানুযায়ী ঢালাই করে দিচ্ছিল। তওরাতের প্রকৃত শিক্ষাকে গোপন করে নিজেদের ধ্যান ধারনাকেই তারা তওরাতের শক্ষিা বলে প্রচার করতো। এইসব গুমরাহী ও ভ্রাšিতকর আচরণের জন্যে আল্লাহর যেসব বান্দা তাদের কে সতর্ক করতেন এবং তাদের অভিলাষের বিরুদ্ধে খোদায়ী বাণীর অনুসৃতির জন্যে আহ্বান জানাতেন, তাদেরকে এরা গালিগালাজ করতো, মিথ্যাবাদী বলতো, এমনকি হত্যা র্পযন্ত করতো। তাই এদের সম্পর্কে কুরআনে বলেছেঃ
يحرفون الكلم من مواضعه ونسوا حظا مما ذكروا به ولا تزال تطلع على خائنة منهم الا قليلا منهم
অর্থঃ তারা শব্দাবলীকে তাদের নিজস্ব স্থান থেকে বিচ্যুত করে; আর তাদের প্রতি প্রদত্ত বহুতরো সদুপদেশকে তারা ভুলিয়ে দিয়েছে। তোমরা বরাবরই তাদের কোনো না কোনো চুরির সংবাদ পেতে আছো। এই খেয়ানত থেকে তাদের খুব কম লোকই বেঁচে রয়েছে।’ (সুরা মায়েদা ঃ ১৩)
يااهل الكتب لم تلبسون الحق بالباطل وتكتمون الحق وانتم تعلمون
অর্থঃ হে আহলি কিতাব! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করো আর কেনই বা বুঝে শুনে সত্যকে গোপন করো।’ (সুরা আলে ইমরানঃ ৭১)
كلما جاءهم رسول بما لاتهوى انفسهم فريقا كذبوا وفريقا يقتلون
অর্থঃ যখন কোনো নবী তাদের নফসের খায়েশের প্রতিকূল কোনো পয়গাম নিয়ে এসেছেন, তখন কাউকে তারা মিথ্যাপবাদ দিয়েছ আর কাউকে হত্যা করেছে।” (সূরা মায়েদাঃ ৭০)
অতপর তাদেরকে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছেঃ
(আরবী)
অর্থঃ তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক পথ পাবেনা, যতক্ষণ না তওরাত ও ইঞ্জিলকে কায়েম করবে এবং তোমাদের প্রভুর তরফ থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাব (অর্থাৎ কুরআন) – কে না মানবে।’ (সূরা মায়েদাঃ ৬৮)
তৃতীয় দল সম্পর্কে কুরআন বলছেঃ
(আরবী)
অর্থঃ যখনি তাদের বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহর দেয়া বিধান পালন করে চলো, তখন তারা এই জবাবই দিয়েছে যে, আমাদের বাপ দাদাদের যে পথে চলতে দেখেছি, আমরা কবেল সে পথেই চলবো। তাদের বাপ দাদারা যদি কিছু না বুঝে না জেনে থাকে এবং সৎ পথের সন্ধান ও না পেয়ে থাকে, তবু কি তারা আপন বাপ দাদারই অনুসরণ করবে? ’ (সূরা বাকারা ঃ ১৭০)
(আরবী)
অর্থঃ যখনি তাদের বলা হয়েছে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রসূলের দিকে এসো তারা এই জবাবই দিয়েছে যে, আমাদের বাপ দাদাদের যে পথে চলতে দেখছি, আমাদের জন্য তা-ই যথেষ্ট। কিন্তু তাদের বাপ দাদারা যদি কিছুই না জেনে থাকে এবং সৎ পথেরও সন্ধান না পেয়ে থাকে, তবু কি সেপথ তাদের জন্য যথেষ্ট?’ (সূরা মায়েদাঃ ১০৪)
(আরবী)
অর্থঃ তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের পায়রবী করো তাহলে তারা তোমায় আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যূত করে দেবে; তারা তো শুধু অনুমানের সাহায্যে পথ চলে। তাদের পথ হচ্ছে সম্পূর্ণ আন্দাজ ও অনুমাননির্ভরঃ।’ (সূরা আনয়ামঃ ১১৬)
যারা নিজেদের বিচার বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না, আসল ও নকলকে পরখ করে দেখেনা; বরং চোখ বুজে শুধু অন্যের তকলিদ করে যায় – কোরআন তাদেরকে অন্ধ, বোবা ও কালা বলে আখ্যা দিয়েছেঃ
(আরবী)
অর্থঃ তারা অন্ধ, বোবা, কালা। তাই তারা কিছুই বুঝেনা। ’ (সূরা বাকারাঃ ১৭১)
এবং জানোয়ারের সঙ্গে তাদের তুলনা করা হয়েছে, বরং তার চাইতেও নিকৃষ্টতর বলা হয়েছে। কারণ জানোয়ারের তো আদতেই বিচার বুদ্ধি নেই; কিন্তু তাদের বিচার বুদ্ধি থাকা স্বত্বেও তারা তা প্রয়োগ করে নাঃ
(আরবী)
অর্থঃ এদের উদাহরণ হলো পশু, বরং এরা তার চাইতেও নিকৃষ্ট এবং এরা অচেতন।’ (সূরা আ’রাফঃ ১৭৯)
এই তিনটি প্রান্তকিধর্মী দলকে নাকচ করে দেবার পর কোরআন এমন লোকদের নিয়ে একটি দল গঠন করতে চায়, যারা হবে একাত্মভাবে মধ্যমপন্থার অনুসারী (আরবী)। এই দলটি হামেশাই সুবিচার ও ন্যায় পরায়ণতার ওপর কায়েম থাকবে’ (আরবী)।
এই মধ্যম পন্থাটি কি? তাহলো এই যে, প্রাচীন রীতিনীতি ও আধুনিক শক্ষিা দীক্ষা লোকদের দৃষ্টিশক্তির ওপর যে আবরণ পেলেছে, তাকে ছিন্ন করতে হবে – সুস্থ বিচার বুদ্ধির স্বচ্ছ আলোয় চোখ মলেতে হবে এবং কোনটি সত্য ও কোনটি মিথ্যা তা তলিয়ে দেখতে হবে। বিচার করতে হবে যে, নাস্তক্যিবাদ ঠিক, না খোদায়ী মতবাদ?তাওহিীদ ঠিক, না শিরক?মানুষের সৎ পথে চলার জন্যে খোদায়ী বিধানের প্রয়োজন আছে কি নেই?আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যবাদী ছিলেন, কি (খোদা মাফ করুন) মিথ্যাবাদী?কুরআনের পেশকৃত জীবন পথ সোজা কি বাঁকা?লোকদের দিল যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস মানব প্রকৃতির স্বাভাবিক দাবি এবং প্রকৃতপক্ষে তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ যাঁর কোনো শরিক নেই, লোকদের বিবেক যদি স্বীকার করে যে, মানুষের সোজা পথে চলবার জন্যে আল্লাহ প্রদত্ত আলোর একান্তই প্রয়োজন এবং এই হচ্ছে সেই আলো যা মানব জাতির সাচ্চা দিশারী আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম নিয়ে এসেছেন; যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে পবিত্র জীবনধারা দেখে লোকদের বিস্বাস জন্মে যে, এমন উন্নত চরিত্রের মানুষ দুনিয়াকে কখনো ধোঁকা দিতে পারেননা এবং আল্লাহর রসূল হওয়া সম্পর্কে তাঁর দাবি নিঃসন্দেহে সত্য দাবি, যদি কুরআন অধ্যয়ন করার পর লোকদের বিচার বুদ্ধি এ সদ্ধিান্ত গ্রহণ করে যে, এই মহাগ্রন্থ যা কিছু পেশ করেছে, তা-ই হচ্ছে মানুষের মতবিশ্বাস ও আচরণের একমাত্র সোজাপথ – তাহলে সমগ্র দুনিয়ার নিন্দাবাদ ও বরিুদ্ধাচরণ থেকে নঃিশঙ্ক হয়ে এবং সর্ববিধ ক্ষতরি ভয় ও লাভের হাতছানি থেকে হৃদয় মনকে পবিত্র করে সেই বস্তুটির প্রতি- যার সত্যতা সর্ম্পকে লোকদের বিবেক সাক্ষ্যদান করছ-ে – ঈমান পোষণ করা একান্তই কর্তব্য।
পরন্তু সুস্থ বুদ্ধিরবৃত্তির সাহায্যে যখন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করে নেয়া হয়েছে এবং মিথ্যাকে ত্যাগ করে সত্যের প্রতি ঈমান পোষণ করা হয়েছে, তখন বুদ্ধিবৃত্তির যাচাই পরিক্ষা এবং তার সমালোচনার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। ঈমান পোষণের পর সিদ্ধান্ত গ্রহন ও নির্দেশ দানের ইখতিয়ার বুদ্ধিবৃত্তির হাত থেকে আল্লাহ্, তাঁর রসূল ও তাঁর কিতাবের হাতে চলে গিয়েছে। অতপর সিদ্ধান্ত গ্রহন করাটা লোকদের কাজ নয়: বরং তাদের কাজ শুধু আল্লাহ্ ও তার রসূলের প্রতিটি বিধানকে মাথা পেতে বরণ করা। তারা আপন বুদ্ধিবৃত্তিকে সেই বিধানের অনুধাবন, তার সূক্ষ্ণতা ও যৌক্তিকতা উদ্ঘাটন এবং তাকে নিজ জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রয়োগ করার ব্যাপারে ব্যবহার করতে পারে।কিন্তু কোনো খোদায়ী বিধানে এতোটুকু রদবদল করার অধিকার কারো নেই। কোনো বিধানের যৌক্তিকতা ও সমীচীনতা লোকদের বোধগম্য হোক আর না হোক, কোনো বিধান বুদ্ধিবৃত্তির মানদন্ডে উর্ত্তীণ হোক বা না হোক আল্লাহর নির্দেশ ও রসূলের ফরমান দুনিয়ার রসম রেওয়াজ ও রীতিনীতির অনুকূল হোক বা প্রতিকূল -– লোকদের কাজ হচ্ছে তার সামনে বিনাশর্তে আত্মসমর্পন করা। তারা যখন আল্লাহর মেনে নিয়েছে, রসূলকে আল্লাহর রসূল বলে স্বীকার করেছে এবং এ বিশ্বাস পোষণ করেছে যে, রসূল যা কিছু পেশ করেন আল্লাহর তরফ থেকেই করেন নিজের মনগড়া কোনো জিনিস তিনি পেশ করেননা। (আরবী) তখন এই বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের যুক্তিসঙ্গত দাবিএই যে, লোকেরা আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাহকে নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তির ওপর অগ্রাধিকার দেবে এবং সকল প্রত্যয় ও বিধিনিশেধ আল্লাহর পক্ষ থেকে তার রসূল বিবৃত করেছেন, সেগুলোকে নিজস্ব বুদ্ধিবুত্তি বিদ্যাবত্তা, অভিজ্ঞতা কিংবা অন্য মানুষের চিন্তা ও কর্মের মানদন্ডে যাঁচাই করা থেকে বিরত থাকবে। যে ব্যক্তি নিজেকে মুমিন বলে দাবি করে এবং সঙ্গে সঙ্গে খোদায়ী বিধানের অবাধ্যতা করে,সে নিজেই নিজ দাবির প্রতিবাদ জানায়। কারণ সে জানেনা যে, ঈমান ও অবাধ্যতার মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট বৈপরিত্য।তার এ কথাও জানা নেই যে, শৃঙ্খলা ও নিয়মানূবর্তিতা (আরবী) কেবল মানা ও আনুগত্য করার ফলেই প্রতিষ্টিত হয়। অবাধ্যতা হচ্ছে অরাজকতারই নামান্তর মাত্র। এই ভারসাম্য ও মধ্যপন্থার নামাই হচ্ছে ইসলাম। আর যারা এই পথ অনুসরণ করে চলে, তাদেরকেই বলা হয় মুসলিম।
ইসলামের মানে হচ্ছে আনুগত্য, আজ্ঞানুবর্তিতা ও মেনে নেয়া। আর যে ব্যাক্তি আদেশ দানকারীর আদেশ ও বারণকারীর বারণকে বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়, তাকেই বলা হয়-মুসলিম। কাজেই এ নামটি নিজেই এ সত্যের সন্ধান বলে দিচ্ছে যে, উল্লিখিত তিনটি দল এবং তাদের অনুসৃত কর্মপন্থা ছেড়ে এই চতুর্থ দলটিকে এক নতুন মতাদর্শ নিয়ে প্রতিষ্টিত করা হয়েছে। এই জন্যেই যে, এরা আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশকে মেনে চলবে এবং তার সামনে মাথা নত করবে। প্রত্যেক ব্যাপারেই কেবল নিজস্ব বিচার বুদ্ধির পায়রবী করা এ দলটির কাজ নয়। কিংবা আল্লাহর বিধানের যেটুকু তার স্বার্থের অনুকুলে, কেবল সেই টুকুই সে মেনে চলবে আর যেটুকু তার স্বার্থের বিরোধী, তাকে নাকচ করে দেবে, অথবা আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নত বর্জন করে মুর্দা জিন্দা নির্বিচারে সকল মানুষের অনুসরণ করবে- এ – ও কাজ হতে পারে না।
বস্তুত এ ব্যাপারে কুরআন মজীদের ব্যাখ্যা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কুরআন বলে, যে কোনো ব্যাপারে যখন আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশ আসে, তখন মুমিনদের তা মানা বা না মানার কোনো ইখতিয়ার বাকি থাকেনাঃ
(আরবী)
অর্থঃ কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর এ অধিকার নেই যে, যখন কোনো ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রসূল ফয়সালা করে দেবেন, তখন সে ব্যাপারে তারা নিজেরাও ফয়সালা করার ইখতিয়ার বাকি রাখবে; যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের হুকুম অমান্য করলো, সে স্পষ্ট গুমরাহীতে লিপ্ত হয়ে পড়লো” ’ (সূরা আহযাবঃ ৩৬)
সে বলে, আল্লাহর কিতাবের কতকাংশ রহিত করা দুনিয়া ও আখিরাতে চরম অবমাননাকরঃ
(আরবী)
অর্থঃ তোমরা কি (আল্লাহর) কিতাবের কতকাংশ বিশ্বাস করো আর কতকাংশ করো অবিশ্বাস? তোমাদের ভেতরে যে কেউ এরূপ কাজ করবে, তার শাস্তি এছাড়া আর কিছু নয় যে, দুনিয়ার জীবনে সে হবে চরম অপমানিত আর আখিরাতে এমন লোককে কঠিনতম শাস্তরি দিকে ঠেলে দেয়া হবে। তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন। ’ (সূরা বাকারাঃ ৮৫)
সে বলে, বিচার ফয়সালা লোকদের পসন্দনীয় হোক আর না-ই হোক, তা আল্লাহর কিতাব অনুসারেই হওয়া উচিতঃ
(আরবী)
অর্থঃ অতএব তাদের মধ্যে আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব অনুসারেই বিচার ফয়সালা করো এবং আল্লাহর কাছ থেকে আগত সত্যকে বর্জন করে তাদের খায়েশাতের অনুসরণ করোনা।’ (সূরা মায়েদাঃ ৪৮)
সে বলে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর কিতাব অনুসারে বিচার ফয়সালা করেনা, সে ফাসিকঃ
(আরবী)
অর্থঃ এবং আল্লাহর কিতাবের বিরোধী প্রতিটি ফয়সালাই হচ্ছে জাহেলী ফয়সালা।’ (সূরা মায়েদাঃ ৪৭)
(আরবী)
অর্থঃ তারা কি জাহেলী হুকুম – ফয়সালা চায়?অথচ বিশ্বাসীদের কাছে আল্লাহর ফায়সালার চাইতে উত্তম ফায়সালা আর কার হতে পারে?’ (সূরা মায়েদাঃ ৫০)
সে বলে, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং নিজেদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাসনকর্তার আনুগত্য করো। আর তোমরা যদি সত্যিকারভাবে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান পোষণ করো, তাহলে যে কোন ব্যাপারেই তোমাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হোক না কেন, তার মীমাংসার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকেই প্রত্যাবর্তন করো – এটাই হচ্ছে উত্তম পথ আর পরিণতির দিক থেকেও এটাই হচ্ছে উত্তম। (হে নবী!) তুমি কি ঐসব লোকদের দেখেছো, যারা দাবি করে যে, তারা ঈমান এনেছে তোমার প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি এবং তোমার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি; কিন্তুু তারা চায় আল্লাহর না – ফরমান লোকদেরকে নিজেদের ব্যাপারে বিচারক বানাতে; অথচ সেসব লোককে বর্জন করার জন্যেই তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আর শয়তান তো তাদের বভ্রিান্ত করে সত্য পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতেই চায়। যখনি তাদের বলা হয়েছে, আল্লাহর প্রেরিত কিতাবের দিকে এসো আর এসো রসূলের দিকে, তখন মুনাফিকদের দেখেছো যে, তরা তোমার পাশ কেটে চলে যায়। … আমরা যে রসূলই পাঠিয়েছি, তার উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, আল্লাহর বিধান অনুসারে তাঁর আনুগত্য করতে হবে। … নয়,তোমার পরোয়ারদিগারের শপথ! তারা আদৌ মুমিন নয়, যতোক্ষণ না তারা নিজেদের পারস্পারিক বিরোধে তোমাকেই বিচারক মানবে। শুধু এইটুকুই যথেষ্ট নয়; বরং যে ফয়সালাই তুমি করবে, সে ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনো দ্বিধাবোধ থাকবেনা এবং বিনা বাক্যব্যয়ে তার সামনে তাদের মাথা নতো করে দিতেই হবে।’ (সূরা আন নিসাঃ আয়াত ৫৯-৬৫)
এই ব্যাখ্যা বশ্লিষেণ থেকে ’ইসলাম’ ও ’মুসলিম’ নামকরণের যৌক্তকিতাটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এবার আমাদের – যারা আদম শুমারীর তালিকায় মুসলমান নাম লিখিয়েছি – তাদের প্রতি মুসলিম শব্দটি কতোখানি প্রযোজ্য হতে পারে এবং আমাদের আচরণ ও কর্মধারাকে ইসলাম নামে অভিহিত করা কতোটা সঙ্গত হতে পারে – তা সবারই গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।