একাদশ অধ্যায়ঃ উৎসব উদযাপন
ইসলামে উৎসব দুটিঃ ঈদুল ফিতর, রমজানে শেষ হওয়ার পরপরেই যা পালন করা হয় এবং ঈদুল আজহা (কোরবানীর উৎসব) যা জিলহজ্ব মাসের দশম দিবসে পালন করা হয়। ব্যক্তিগত ও সামাজিকভঅবে ধর্মীয় কর্তব্য পালনে তওফিক দেয়ায় খোদার শুকরিয়া আদায়ের জন্য এ দুটো উৎসব পালন করা হয়।
উৎসব পালন
১. দু’ঈদ উপলক্ষে গোসল করা প্রয়োজন। উৎসবের আগের দিন রাতেও; এই গোসল করা যেতে পারে।
২. ঈদের নামাজের জন্য রওয়ানা হওয়ার আগে উত্তম পোশাক এবং প্রসাধনী ব্যবহার উত্তম।
৩. ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার আগে খেজুর বা মিষ্টি খাওয়া প্রয়োজন। ***১
৪. ঈদুল আজহার নামাজের পূর্ব পর্যন্ত কোন কিছু না খাওয়া মোস্তাহাব। নামাজের বাড়ি ফিরে কুরবানী করার পর সেই গোশত থেকে তৈরি খাবার খাওয়া উত্তম।
৫. খুব বেশি দূরে না হলে ঈদের জামাতে হেঁটে যাওয়া উত্তম।
৬. বাদল-বৃষ্টি ছাড়া ঈদের নামাজ সাধারণতঃ মসজিদে পড়া হয়না। ঈদের নামাজ খোলা মাঠে পড়াই উত্তম।
৭. পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী ছাড়া অন্যন্য মুসলমানদের খোলা ময়দানে সমবেত হতে হবে। এর মধ্যে ঋতুবতী মহিলারা অন্তর্ভুক্ত। তারা ময়দানে হাজির থাকতে পারেন, তবে তাদের নামাজে শরিক না হলেও চলবে। [বাংলাদেশে সাধারণতঃ প্রথাগতভাবে মহিলারা ঈদের জামাতে অংশ নেয় না। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও মহিলাদের ঈদের নামাজ হয়ে থাকে।– অনুবাদক]
[***১ আমাদের দেশে সাধারণতঃ ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে সেমাই, পায়েস ইত্যাদি মিষ্টি খাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে – অনুবাদক।]
৮. ধীরস্থিরভাবে ইমামের খুতবা শুনা প্রয়োজন।
৯. ঈদের নামাজে যে পথ দিয়ে যাবে, ফেরার সময় সেই পথ ছেড়ে ভিন্ন পথ দিয়ে আসা প্রয়োজন। এর ফলে বহুসংখ্যক মুসলমানের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যায়।
১০. এ উপলক্ষে ‘তাকাবাল্লাহ মিন্না ওয়া মিনকুম’ (খোদা, তোমার জন্য যে এবাদত আমরা করেছি, তা তুমি কবুল কর) বলে মুসলমানদের অভিনন্দন জানানো যেতে পারে।
১১. ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আজহার তিনদিন রোজা রাখা হারাম।
১২. এ উপলক্ষে মুসলমানদের উচিত তাদের সন্তানদের উত্তম পোশাক পরানো, তাদের মিষ্টি তৈরি করা অথব কিনে আনা। এই উৎসব পালনের মাধ্যমে তাদের পারদর্শী করে তোলা। ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে তোলার জন্য এসব কাজে উৎসাহ দান আবশ্যক।
১৩. এ উপলক্ষে কোন মুসলমানের উচিত নয় এমন কাজ করা, যাতে তার পরিবার বিরক্ত হয় বাতাদের উত্তম ধ্যান-ধারণা ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের নির্দোষ আমোদ আহলাদ বিনষ্ট হয়।
১৪. পিতা এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এসময় ইসলামি আইন যাতে পালিত হয়, তার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। কেননা, এসব উৎসবের উদ্দ্যে হচ্ছে খোদার শুকরিয়া আদায় এবং তার বিরোধিতা করা নয়। এজন্য ঈদের সময় ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশাকে প্রশ্রয়। দেওয়া উচিত নয়, যদিও এ ধরনের উৎসবের সময় এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার হও যায়।
ঈদুল আজহার করণীয়
জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে কুরবানী দিতে হয় এবং ঈদুল আজহার মেয়াদ তারপর দু’দিন পর্যন্ত থাকে।
১. কেউ হজ্ব পালনরত অবস্থায় থাকলে অথবা হজ্ব না করলেও যে ব্যক্তি ‘সাহেবে নিসাব’ (যার উপর যাকাত ফরজ) তাকে পশু কুরবানী করতে হবে। কুরবানীর অর্থ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পশু আল্লাহর নামে জবাই করা।
২. কুরবানীর জন্য সুস্থ সবল পশু নির্বাচন করতে হবে। যে পশুর কান বা জিহবা ক্ষত বিশিষ্ট, যার কান ছেড়া অথবা যে পশু পঙ্গু, তা কুরবানীর জন্য নির্বাচন করা যাবেনা। পশুটি ছাগল বা ভেড়া হলে বয়স হতে হবে এক বছরের বেশি। গুরু, বা ষাঁড় হলে দু’বছরের বেশি এবং উট বা মাদীউট হলে তার বয়স হতে হবে পাঁচবছরের বেশি।
৩. কুরবানীর পশু সমপর্যায়মান দানের অর্থের বিনিময়ে বদালানো যায়না।
৪. কুরবানীর পশু গরু, ছাগল, ভেড়া মহিষ বা উটও হতে পারে। গরু মহিষ বা উচি সাতজনে যৌথভাবে দিতে পারে।
৫. ঈদুল আজহা থেকে ফিরে আসার পরপরই কুরবানী করা কর্তব্য। ঈদের আগে কুরবানী দেয়া পরিহার করতে হবে এবং সে কুরবানী হবেনা। নামাজের আগে একটি কুরবানী দিলে নামাজের পর আরেকটি কুরবানী করা যেতে পারে।
৬. কোন ব্যক্তি যদি নিজেই ভাল করে জবাই করতে পারে, তাহলে তার নিজের হাতে পশু জবাই করা উত্তম। নতুবা অন্র কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে পশু জবাই করার জন্য।
৭. কুরবানীর পশু জবাই করার ছুরি খু্ব ধারালো হতে হবে, পশুটিকে কাবামুখী করতে হবে এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে জবাই করতে হবে।
৮. নিজ বাড়িতেই কুরবানী করা যেতে পারে। ঈদের নামাজের স্থলে কুরবানী করা সম্ভব হলে সেখানেই করা ভাল।
৯. যে ব্যক্তি কুরবানী করবে, সে পশুর অংশ বিশেষ ভক্ষণ বা সংরক্ষণ করতে পারে। তবে বেশির ভাগ অংশ গরিব দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা উচিত। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনকেও কিয়দংশ বিলিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
১০. ঈদুল আজহার প্রথম দিনসহ ৪ দিন পর্যন্ত কুরবানী করা যেতে পারে। [ইমাম আবু হানিফার মতে কুরবানীর মেয়াদ তিন দিনে সীমিত]
ঈদুল ফিতরের জন্য বিশেষ নির্দেশ
১. রমজান মাসের রোজা পালন শেষে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানকে যাকাত বা সাদকা আল ফিতর দিতে হবে। [আমাদের দেশে এক ছা’ অর্থাৎ পৌনে দু’সের গম বা তার মূল্য দেওয়া হচ্ছে ফিতরা। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক সদস্যের জন্য ফিতরা দিতে হবে।]
২. একজন মুসলমানের প্রতিপাল্য অর্থাৎ স্ত্রী ও পুত্র কন্যদের ফিতরাও তাকে দিতে হবে।
৩. ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই গরিবদের মধ্যে ফিতরা দিতে হবে। এর ফলে গরিব মুসলমানরাও ঈদ উৎসবে শরিক হতে পারবে। তবে যদি কেউ ঈদের নামাজের আগে ফিতরা দেওয়ার কথা ভুলে যায়, তাহলে পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ফিতরা দিতে হবে।