একবিংশ অধ্যায়ঃ জীবজন্তুর প্রতি আচরণ
১. জীবজন্তুর সাথে আচরণের ক্ষেত্রে দয়া ও সহৃদয়তা প্রদর্শন করতে হবে।
২. জীবজন্তুর শক্তি ও সামর্থ্য অনুসারে তাদের উপর বোঝা চাপানো ন্যায়ঙ্গত।
৩. জবাই করার জন্য নির্ধারিত জীবজন্তুকে সতর্কতার সাথে নিয়ে যেতে হবে, যাতে করে তাদের প্রতি কোন প্রকজার নির্যাতন করা না হয়।
৪. সফর বিধির অধ্যায়ে আগেই বলা হয়েছে, জীবজন্তুর উপর আরোহন করে ঘাস ও পানির এলাকা দিয়ে অতিক্রমকালে সফরকারীকে ধীর গতিতে যেতে হবে। আবার অনুর্বর বা মরুভূমি এলাকা দিয়ে যাবার কালে দ্রুত চলে যেতে হবে।
৫. অপ্রয়োজনীয় অথচ অক্ষতিকর প্রাণী বা পতঙ্গ যেমন কীট বা ছোট পাখী হত্যা না করাই ভাল।
৬. দুধ বা ডিম উৎপাদনকারী প্রাণী জবাই যতদূর সম্ভব পরিহার করতে হবে।
৭. জীবজন্তুর খাসি করা বা প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
৮. মৌমাছি, পিঁপড়া, ব্যাঙ প্রভৃতি ক্ষতিকর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের প্রাণী হত্যা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
৯. নিম্নোক্ত চার শ্রেণীর প্রাণী হত্যার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হওয়া চলবেনা- বৃশ্চিক, ইঁদুর, সাপ ও টোৎঠেং।
১০. কুসংস্কারবশতঃ সাপ হত্যা থেকে বিরত থাকা দুর্বল ঈমানের লক্ষণ।
১১. খচ্চর উৎপাদনের জন্য ঘোড়া ও গাধার মিলন ঘটানো পরিহার করতে হবে।
১২. জন্তুর জীন বা লাগামে অথবা কুকুরের গলায় সোনা-রূপার ব্যবহার অথবা রেশম দিয়ে প্রাণী সাজানো নিষিদ্ধ; কারণ এগুলো অর্থের অপচয় মাত্র এবং এতে গর্ব ও অহংকার প্রদর্শিত হয়।
১৩. কোন জন্তুর মুখে উত্তপ্ত লোহার দাগ দেওয়া নিষিদ্ধ। জন্তুর দেহের অন্যান্য অংশে দাগ দেওয়া যেতে পারে, তবে তার কোন ক্ষতি করা চলবেনা এবং দাগ দেওয়া প্রয়োজনীয় স্থানেই সীমিত রাখতে হবে।
১৪. জন্তুকে প্রহারকালে মুখে আঘাত করা ঠিক নয়।
১৫. শুধু তামাসা বা অন্য কোন কারণে মোরগ, ষাঁড় বা ভেড়ার ন্যায় প্রাণীদের একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটা নিষ্ঠুর কাজ হিসেবে বিবেচিত।
১৬. এমন জন্তুর বেচাকেনা করা যাবেনা, যার এখনও তার মায়ের সহায়তা প্রয়োজন। এ ধরনের লেনদেন ইতোমধ্যেই হয়ে থাকলে, তা বাতিল করতে হবে।
১৭. পাখি ও প্রাণী শিকার কালে মায়ের উপর নির্ভরশীল তরুণ জীবজন্তু শিকার না করাই উচিত। অনুরূপভাবে যে জন্তুর বাচ্চা বা শাবক রয়েছে, সেগুলোর শিকার এড়িয়ে যাওয়া উত্তম; কেননা তার বাচ্চাটি তখন মারা যাবে।
১৮. হজ্ব বা উমরাহ করা কালে জীবজন্তু শিকার নিষিদ্ধ। হজ্ব বা উমরাহকালে কোন মুসলিম যদি জীবজন্তু বা প্রাণী শিকার বা হত্যা করে, তাহলে তার কাফফারা আদায় করতে হবে।
১৯. ময়লা আবর্জনা খেয়ে যেসব জীবজন্তু বেঁচে থাকে, সেগুলোর গোশত না খাওয়া উচিত এবং সেগুলোর উপর আরোচণ করা উচিত নয়। এসব জীবজন্তুকে খাঁচায় আবদ্ধ করে বেশ কিছুদিন পরিচ্ছন্ন খাবার না দেওয়া পর্যন্ত তাদের দুধ ব্যবহার করা যাবে না।
২০. কোন মুসলমানের গবাদিপশু, পাখি বা প্রাণী থাকলে আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে তাদের খাবার দেওয়া ও পরিচর্যা করতে হবে।
২১. বন্দুক বা তীরের সাহায্যে শুটিং এ দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাণীর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
২২. গাধার ডাক শুনে সমূহ অকল্যাণ থেকে খোদার কাছে আশ্রয় চাওয়া প্রয়োজন।
২৩. পোষা মোরগের ডাক শুনে মুসলমানের উচিত খোদার রহমত কামনা করা।
২৪. দুগ্ধ দোহন, আহরণ প্রভৃতি কতিপয় বিশেষ লক্ষ্যে যে সব জীবজন্তুর সৃষ্টি, সেইগুলোকে সেভাবেই ব্যবহার করতে হবে।
২৫. মৃত জন্তুর অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা নিষিদ্ধ।
২৬. জন্তুকে অভিশাপ দেওয়া উচিত নয়।
২৭. জন্তু দুই প্রকার : পরিষ্কার ও অপরিষ্কার। কুকুর ও শূকর হচ্ছে অপরিষ্কর জন্তু। এজন কুকুর কোন পাত্রে পানি পান করলে সেটা মাটি দিয়ে বার বার ঘষতে হবে।
২৮. দু’টি কারণ ছাড়া মুসলমানদের কুকুর পালন করা উচিত নয়:
ক) প্রহরী কুকুর।
খ) শিকারী কুকুর। এ ধরনের কুকুর বাড়ির ভেতরে নয়, বাইরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।