ষোড়শ অধ্যায়ঃ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে করণীয় আচরণ
মসজিদে
১. মসজিদে যাবার কালে মুসলমানদের সর্বোত্তম এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে, আতর বা প্রসাধনী ব্যবহার করা প্রয়োজন। জুতো পরিচ্ছন্ন কিনা- সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে।
২. পিয়াজ বা রসুন খেলে তার দুর্গন্ধ দূর হওয়ার ব্যাপার নিশ্চিত না হওয়ার পর্যন্ত কোন মুসলমানের মসজিদে যাওয়া যথোচিত হবে না। কারণ এর দুর্গন্ধে অন্যের বিব্রত হওয়ার করণ হতে পারে।
৩. তাড়াহুড়া না করে শান্তভাবে ও নীরবে মসজিদে প্রবেশ ও মুসল্লিদের সঙ্গে উপবেশন করা উচিত।
৪. মসজিদে প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় ঠেলাঠেলি বা ধাক্কাধাক্কি করা চলবেনা; ডান দিক থেকে প্রথমে প্রবেশ বা ত্যাগ করবে।
৫. মসজিদে প্রবেশ করতে হলে মুসলমানদের প্রথমে ডান পা ফেলে বলতে হবে “বিসমিল্লাহে আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা” (হে আল্লাহ, তোমার রহমতের দুয়ার আমার জন্য খুলে দাও।)।
৬. মসজিদের প্রবেশ করার পর দু’রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব।
৭. মসজিদে কথা বলা যেতে পারে, তবে নিম্নোক্ত বিধি মানতে হবে:
ক) মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা ঠিক নয়।
খ) মসজিদে শান্তভাবে কুরআ তেলাওয়াত করতে হবে। নতুবা যারা নামাজ পড়ছে বা কুরআন পড়ছে তারদের অসুবিধা হবে।
গ) মসজিদে কেনাবেচা অথবা অন্যবিধ খোদাবিমুখ আলোচনার স্থান নয়। সুতরাং যদি কাউকে দেখা যায় মসজিদে এ ধরনের আলোচনা করতে, তাহলে তাকে এ কাজে নিষেধ করতে হবে।
ঘ) মসজিদে যারা দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তাদের পাশে বসা উচিত নয়।
৮. জামাতে নামাজ পড়ার শুরুতে নামাজিদেরকে সোজা লাইনে দাঁড়াতে হবে- প্রথমে পুরুষ, তারপর শিশু, তারপর স্ত্রীলোক। লাইন সোজা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পাশাপাশি সোজা হয়ে দাঁড়াতে হতেব।
৯. ঋতুবতী মহিলা অথবা অপবিত্র অবস্থায় থাকা মহিলাদের মসজিদে প্রবেশ অবৈধ নয়। তবে তাদেরকে মসজিদে অবস্থান করতে বারণ করা হয়েছে।
১০. মসজিদ হচ্ছে পৃথিবীর উত্তম স্থান। সুতরাং মুসলমানদের নিয়মিতভাবে সেখানে যাওয়া উচিত। যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে মসজিদে যায়, সে উত্তম মুসলমান।
১১. নামাজরত কোন ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা অনুচিত। কেননা এর ফলে তার নামাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
১২. মসজিদ ত্যাগ করার সময় তাড়াহুড়া করা অনুচিত। মসজিদ ছেড়ে আসার সময় প্রথমে বাম পা ফেলতে হবে; বলতে হবে “আল্লাহুম্মা ইনি আসআলুকা মিন ফাদলিক” (হে আল্লাহঃ আমি তোমার অনুগ্রহ চাই)।
১৩. জামাতের নামাজে মুসল্লিদের উচিত ইমামের অনুসরণ করা। ইমামের আগে আগে রুকু, সেজদায় যাওয়া নিষেধ।
১৪. মসজিদের একই স্থানে মুসলমানদের নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়নি।
১৫. মসজিদকে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা অনুচিত।
কবরস্থান
১. কবরস্থান জিয়ারত করার ব্যাপারে মুসলমানদের দু’টি প্রধান উদ্দেশ্য থাকে। একটি হল মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা, অপরটি কেয়ামতের ব্যাপারে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।
২. কবর জিয়ারতকে উৎসাহিত করা হয়েছে। মহিলারাও করব জিয়ারত করতে পারে। তবে তারা হরহামেশা কবর জিয়ারত করুক- এটা কাঙ্ক্ষিত নয়।
৩. কবর জিয়ারত কালে বলতে হবে “ আসসালামু আলা আহলিদ দিয়ারী মিনাল মুমিনিনা ওয়া মুসলিমিন ওয়া ইয়ারহামুল্লাহ আল মুস্তাকদিমিনা ইনশাআল্লাহ্ বিকুম লা-লাহিকুন” (কবরস্থানের মুসলমান ও ঈমানদার বান্দাদের উপর সালাম যারা আমাদের আগে ইহধাম ত্যাগ করেছেন এবং যারা পরে যাবেন তাদের উপর খোদার রহমত বর্ষিত হোক। খোদার শপথ, আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে মিলিত হব।
৪. কবরস্থানে ইসলামি বিধান লংঘন নিষিদ্ধ।
৫.৩নম্বরে বর্ণিত মৃতের জন্য দোয়া করা ছাড়া কবরের উপরের কোন কিছু বলা যাবেনা।
৬. কবর থেকে কোন প্রকার বরকত পাবর প্রত্যাশায় সেটা স্পর্শ করা বা ছোঁয়া নিষিদ্ধ।
৭. কবরের উপর ফুল, পুষ্পমাল্য অর্পণ করা বিদেশী সংস্কৃতির অনুকরণ।
৮. কবরে মোমবাতি জ্বালানো বা লন্ঠনবাতি স্থাপন গর্হিত কাজ।
৯. কবর জিয়ারত কালে মহিলাদের ইসলামি বিধান লংঘণ করে অইসলামি পোশাক পরিধান অথবা বিলাপ করা নিষিদ্ধ।
১০. বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়ে সম্মিলিতভাবে উপাসনার জন্য কবর কোন স্থান নয়। কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য হচ্ছে: মৃত্যুর কথা স্মরণ করা, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবন ও আচরণে। কবরকে উপাসনার অথবা উৎসবের স্থান করা ইসলামে হারাম।
১১. কবরে বসা নিষিদ্ধ।
১২. কবর জিয়ারতের কোন নির্দিষ্ট দিন বা সময় নেই।
রাজপথে
সড়ক, রাজপথ ও গলি হচ্ছে জনগণের সম্পত্তি। এসব স্থানে আচরণ বিধি মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেসব বিধান মেনে চলা প্রগতি ও সভ্যতার ইংগিতবাহী; এগুলোর লংঘন অনগ্রসরতার শামিল:
১. সড়ক সংক্রান্ত ব্যক্তির আচরণের প্রধান নীতি হবে অন্যের ক্ষতি বা বিরক্তির কারণ এড়িয়ে যাওয়া।
২. সড়ক পরিষ্কার রাখা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
৩. সড়ক কোন বৈঠক বা বসার স্থান নয় এবং এজন্যে যাতায়াতের অসুবিধা করা উচিত নয়।
৪. ইসলামি রাষ্ট্রে সড়ক ও রাজপথে ইসলামের বিধান লংঘন করা খুবই মারাত্মক এবং সমাজে তার প্রভাব পড়ে। মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছেঃ যদি সে এমন দেখতে পায়, যা আপত্তিকর তা বর্জন করা, তা করার পরামর্শ দিতে হবে; তবে শর্ত হচ্ছে ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও সদাচরণের সাথে তা করতে হবে এবং ইসলামি নীতির সঙ্গে তা সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
৫. যারা ভুল পথে আছে তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা, বৃদ্ধ অথবা পঙ্গু লোকদের সাহায্য করা ইসলামের অন্যতম কাজ এবং এতে সদাচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
৬. সড়কে জনগণের জন্য ক্ষতিকর বা আক্রমণাত্মক অথবা বিরক্তিকর কিছু থাকলে তা অপসারণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যতম কর্তব্য।
৭. সড়কে দেখা পাওয়া বা সাক্ষাৎকারী কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা অনুচিত। মুসলমানদের অন্যদের ব্যাপারে সু-ধারণা থাকতে হবে।
৮. সড়কে স্বাগত সম্ভাষণের জবাব দেয়া সৌজন্যের শামিল।
৯. নারী পুরুষ সড়কে মিলেমিশে চলার অভ্যাস পরিহার করবে। মহিলারা সড়কের একপ্রান্ত দিয়ে চলাচল করবে।
১০. সড়কে মহিলাদের প্রতি প্রথম দৃষ্টি পড়ার পর তা পুনরায় তাকানো নিষিদ্ধ। সুতরাং পুরুষকে হয় দৃষ্টি অবনত করতে হবে নতুবা চোখ অন্যদিকে চোখ ফেরাতে হবে।
১১. যাদের নিজস্ব যানবাহন নেই, তাদের গাড়িতে লিফট দেয়াও একটি ভল কাজ।
১২. যানবাহনে চলাচলকালে নারী ও বৃদ্ধ লোকদের প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখাতে হবে।
১৩. পরিবহনে (Public Transport) যাতায়াতকালে মুসলমানদের প্রয়োজন হলেই কথা বলা উচিত এবং তা বলতে হবে নম্রসুরে। তাছাড়া ধুমপান বা সহযোগী যাত্রীদের কাছে বিরক্তিকর কারণ হওয় এমন কিছু করা অনুচিত।
১৪. জনপরিবহনে গদাগদি করা অথবা হুড়াহুড়ি করা সব্য আচরণ নয়। যানবাহনে উঠা এবং নামার সময় যথার্থ ব্যক্তিকে সুযোগ দিতে হবে।
১৫. রাস্তায় পিছন দিক থেকে কাউকে চিৎকার করে ডাকা বদঅভ্যাস। কথা বলার আগে তার কাছে যাওয়া উচিত।
১৬. রাস্তা বা সড়কে চলাফেরাকালে আহার করা, পান চিবানো ও ধুমপান ইত্যাদি বাজে অভ্যাস।
১৭. রাস্তায় কোন মুসলমানের চলাফেরার ধরন তার ইসলামি ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। এটা অন্যের প্রতি এবং নিজের প্রতি কতিপয় মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। সুতরাং হাঁটা এবং চলাফেরার ক্ষেত্রে কতিপয় নীতির সমন্বয় থাকতে হবে।:
ক) হাঁটার সময় হেলেদুলে বা নাচতুলে তাঁটা উচিত নয়। একইভাবে মেয়েলী স্বভাবে বা গর্বভরে দু’পা তুলে চলা, অথবা জড়সড় লাজনম্র হয়ে চলা পরিহার করতে হবে।
খ) একত্রে চলার সময় অন্যের কথা বিবেচনা করে খুব দ্রুত হাঁটা উচিত নয়।