ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ জন্ম
ঘোষণা
১. যদি এমন ব্যাপার হয় যে, কোন শিশুর জন্মের খবর বন্ধুর কাছে প্রথম নিয়ে যাবার সে-ই মাধ্যম হয়, তাহলে তাকে উদ্যোগ নিয়ে খবরটি তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
২. মেয়ে শিশুর জন্মের খবর ছেলে সন্তানের জন্মের খবরের ন্যায় স্বাগত জানাতে হবে এবং খোদার শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
৩. শিশুর জন্মের পর প্রথম করণীয় হলোঃ তার কানে আজান পৌঁছে দেয়া।
৪. দ্বিতীয় বিষয়টি (ফরজ না হলেও) হচ্ছেঃ একটি খেজুর চিবিয়ে চিবিয়ে নরম রস তৈরি করে শিশুর মুখে দেয়া এবং শিশুর জন্য দোয়া করা। এটা ‘তাহনিক’ নামে পরিচিত এবং রাসূল (সা.) কখনও কখনও এরূপ করেছেন।
৫. শিশুর জন্মের পরপরেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নামকরণ করতে হবে। নামকরণ সম্পর্কে ১৪ নং অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে।
৬. শিশুটি যদি উভয় লিঙ্গের হয়, তাহলে এমন নামকরণ করা উচিত, যা ছেলেমেয়ে উভয়ের বেলায় প্রয়োজ্য।
৭. মৃত সন্তান প্রসব হলে তার নাম দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
অভিনন্দন ও পরিদর্শন
১. নতুন শিশুর আগমনে পিতামাতাকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে এই শিশু জন্মের সাথে তাদের আনন্দের শরিক হওয়া। অভিনন্দন জ্ঞাপন যে কোন প্রকারে হতে পারে; শিশুর জন্মের জন্য পিতামাতার প্রতি রহমত আসুক – এই কামনা করাই সুন্দর অভিনন্দন।
২. ছেলে সন্তান জন্মের জন্য অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো এবং মেয়ে হলে না জানানো সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী আচরণ।
৩. অভিনন্দনের জবাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে হবে- “আল্লাহর আপনার প্রতি রহম করুন এবং আপনাকে আরো শিশু সন্তান দিন।”
সপ্তম দিনের উৎসব
শিশুর জন্মের সপ্তম দিবসে পরিবারের পক্ষ থেকে জন্ম উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবের দুটি অংশঃ একটি পশু জবাই করে আকিকা করা এবং শিশুর মস্তক মুণ্ডন করা।
পশু জবাই করা
খোদার রহমত কামনা এবং নতুন শিশুকে বালামুছিবত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে পশু জবাই করা হয়। এতে নিম্নোক্ত নিয়মকানুন মানা হয়ঃ
১. এ উপলক্ষে একটি পশু জবাই করা। ভিক্ষার আকারে এর মূল্য দিলে চলবে না।
২. পশুটি ছাগল, ভেড়া, গরু বা মাদী ও পুরুষ উট হতে পারে।
৩. এই জন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে কুরবানীর পশুর নির্বাচনের নিয়ম প্রযোজ্য (১১ নং অধ্যায় দেখুন)
৪. পশু জবাইকারী ব্যক্তি বলবে- “বিসমিল্লাহে আল্লাহুম্মা হাজা মিনকা ওয়া আলাইকা” (আল্লাহর নামে জবাই করছি। হে খোদা তোমার হুকুম তামিলের জন্য এটা করছি।)
৫. পশুর রক্ত দিয়ে শিশুর মাথা, দেয়াল বা অন্যকিছু রঞ্জিত করা নিষিদ্ধ।
৬. পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করা উচিত- একাংশ পরিবারের জন্য, অপর দু’অংশ আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশিী এবং দরিদ্রদের জন্য।
৭. পশুর চামড়া বা মাথা বিক্রি করা অথবা কসাই বা পাচককে ফি হিসেবে দেওয়া যাবেনা।
৮. কিছু সংখ্যক আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে ভোজনের জন্য দাওয়াত করা উচিত।
শিশুর মস্তক মুণ্ডন
জন্মের সাতদিন পর শিশুর মস্তক মুণ্ডন করতে হবে। মুণ্ডিত চুল ওজর করে তার সমপরিমাণ রূপা গরিব ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা উচিত। একইদিন মস্তক মুণ্ডনের পর সম্ভব হলে শিশুর মাথায় জাফরান ঘসে দিলে ভাল হয়। পরবর্তী পর্যায়ে মেয়েরা যাতে কানে রিং পরতে পারে, সেজন্যে মেয়ে শিশুদের কান ফোঁড়া করা যেতে পারে।
খতনা উৎসব
১. প্রত্যেক মুসলিম ছেলেকে খৎনা করতে হবে। ইসলামের এই ঐতিহ্য হযরত ইবরাহীম (আ) থেকে চালূ।
২. খৎনা কাজে পারদর্শী ব্যক্তিকে এই কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
৩. খতনা করার সময় লিঙ্গের অগ্রভাগ উন্মুক্ত করার জন্য অগ্রত্বক অবশ। অপসারণ করতে হবে। তবে লিঙ্গের অগ্রত্বক সম্পূর্ণ অপসারণ করা জরুরি নয়।
৪. অগ্রত্বক ছাড়া কোন শিশুর জন্ম হলে স্বাভাবিকভাবে তার খৎনা করার প্রয়োজন নেই।
৫. শিশুর স্বাস্থ্য যদি খৎনা করার উপযোগী না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে খৎনা করতে হবে।
৬. ইসলাম গ্রহণকারী নওমুসলিম যুবক বা বৃদ্ধ যাই হোক, স্বাস্থ্য বিপন্ন না হলে তার খৎনা করতে হবে।
৭. জন্মের পরপরই খৎনার কাজ সম্পাদন করা উচিত। তবে চিকিৎসাগত কারণে অপারেশন বিলম্ব করা উচিত বলে মনো করা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৮. ধর্মপিতামাতা এবং পবিত্র পানিতে সিঞ্চন করার মত অন্যান্য বিষয় ইসলামে নিষিদ্ধ।