মাইয়েত লাহোরে
লাহোর বিমান বন্দর। আশ্বিনের প্রখর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে। যে মর্দে মুমিন গত ২৬ শে মে এই বিমান বন্দরে দুঃখ ভারাক্রান্ত ইসলামী জনতাকে খোদা হাফেয বলে আমেরিকার উদ্দেশে রওয়ানা হন, কে জানতে এ ছিল তাঁর শেষ বিদায়? তিনি আর লাহোরে ফিরে আসতে পারলেন না। আল্লাহ তায়ালা তাঁর শেষ বিদায়? তিনি আর লাহোরে ফিরে আসতে পারলেন না। আল্লাহ তায়ালা তাঁর যে সব প্রিয় বান্দাহদের সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়ারাদু আনহু’- তাঁদের মধ্যে তিনি একজন এবং তিনি সন্তুষ্টচিত্তে তাঁর প্রভুর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। শুধু তাঁর অচেতন মাটির দেহখানি লাহোরে আজ ফিরে এসেছে। তাঁর মাইয়েতকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্যে জনস্রোত ছুটছে লাহোর বিমান বন্দরের দিকে। মাইয়েতসহ বিমানটি তিনটায় অবতরণ করার কথা।
এর মধ্যে লক্ষাধিক লোক বিমান বন্দরে জমায়েত হয়েছে। যারা বিমান বন্দর পর্যন্ত যেতে পারেনি, তারা বিমান বন্দর থেকে মাওলানার মাইয়েতকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্যে।
বিমান বন্দরে যাঁরা এসেছেন, তাঁর মধ্যে জামায়াত নেতৃবৃন্দ ছাড়া উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইসলামী আদর্শ কাউন্সিলের সভাপতি বিচারপতি আফজাল চীমা, জমায়াতে ইসলামী হিন্দের আমীর মাওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে শতাধিক লোকের প্রতিনিধি দল, জর্দান, থেকে ডাঃ লতিফের নেতৃত্বে আগত প্রতিনিধি দল এবং মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতগণ, জম্বু-কাশ্মীরের প্রতিনিধিবৃন্দ, ইসলামিক স্টুডেন্টস মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিগণ এবং আফগান মুজাহিদীনের নেতৃবৃন্দ।
রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন চৌধুরী জহুর এলাহী, মালিক কাসিম, খাজা কায়রুদ্দিন, সাহেবযাদী মাহমুদা বেগম, সরদার শওকাত হায়াত এবং, আরও অনেকে। আরও এসেছেন একটি কাল রঙের গাড়িতে মাওলানার পরিবারের মহিলাগণ। নিশ্চল প্রস্তর মূর্তির মত-শোকের মূর্ত প্রতীক। অশ্রু চোখের কোণায় জমাট বেঁধেছে।
ঠিক বেলা তিনটায় প্রতীক্ষিত বিমানখানা যখন বিমান বন্দরের আকাশে চক্কর দিতে থাকে, তখন অধীর জনতা প্রবল শোকাবেগে বিহ্বল হয়ে পড়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালেমায়ে শাহাদাত ও তাকবীর ধ্বনি গুঞ্জরিত হতে থাকে আকাশে বাতাসে।
তিনটা পাঁচ মিনিটে বিমানখানি অবতরণ করে ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। বিমানের জানালা ঘেষে একখানি পিআইএ’র ট্রাক গিয়ে দাঁড়ায়। মাইয়েত নামানোর জন্যে বিমানে উঠে পড়লেন-হুসাইন ফারুক মওদূদী চৌধুরী জহুর এলাহী, কাজী হুসাইন আহমদ এবং পিয়াসীর কর্মী মৌলভী রফিক আহমদ।
মাইয়েত ট্রাকে উঠানোর পর ধীর ও মন্থর গতিতে ট্রাকখানি চলল মাওলানার বাসভবনের দিকে। ট্রাকের সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের মিছিল চলেছে। খয়বর থেকে কোয়েটা, আযাদ কাশ্মীর থেকে মুলতান পর্যন্ত প্রতিটি শহর ও জনপদের লোক এসেছে-যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে। পথের দু’পাশ থেকে দালান কোঠার উপর থেকে অসংখ্য নরনারী এ শোক মিছিল দেখে অশ্রু বিসর্জন করছে এবং মাইয়েতের উপর পুষ্প বর্ষণ করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। ট্রাকের সাথে প্রাইভেট কার, স্পেশাল বাস, স্টেশন ওয়াগান, স্কুটার, অটোরিকশা, সাইকেল প্রভৃতির মাইলব্যাপী দীঘৃ সারি চলেছে এবং তার সাথে লক্ষ লক্ষ শোকাতুর মানুষ চলেছে পায়ে হেঁটে। কোথাও বিশৃঙ্খলা নেই, হৈ-চৈ হট্টগোল নেই। যে শৃঙ্খলার প্রশিক্ষণ এতদিন তারা পেয়ে এসেছে, তা পুরোপুরি বজায় রেখে সামনে এগিয়ে চলেছে জনস্রোত। পেছনে একটি গাড়ি থেকে লাউড স্পীকারে কালেমায়ে শাহাদাত ও তাকবীরধ্বনি করা হচ্ছে। সাড়ে তিনটায় এ কাফেলা চলা শুরু করেছে বিমান বন্দর থেকে। শাহেরাহে কায়েদে আযম, চেয়ারিং ক্রস, শাহেরাহে ফাতেমা জিন্নাহ, মুজাং চুঙ্গী হয়ে ফিরোজপুর রোড এবং তারপর ইছড়া মোড় পৌঁছে সন্ধ্যা ছ’টায়। অতঃপর বহুকষ্টে মাইয়েতসহ ট্রাক মাওলানার বাসভবনে পৌঁছে। চারদিকের মসজিদের মিম্বর থেকে মাগরিবের আযান ধ্বনিত হচ্ছে। চারপাশের কোন মসজিদে তিল পরিমাণ স্থান নেই লোক দাঁড়ানোর। এদিকে বালক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে অনেকেই শোকের আতিশয্যে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে।
মাগরিবের পর ঘোষণা করা হলো, রাত ন’টা পর্যন্ত শুধু মহিলারা মাইয়েতের শেষ দীদার লাভ করতে পারবে। অতঃপর রাত দশটা থেকে পরদিন সকাল আটা পর্যন্ত শুধু পুরুষদের জন্যে দীদার লাভের সুযোগ থাকবে। মাওলানার খাস কামরার সামনে উঁচু স্থানে মাইয়েত রাখা হয়েছে। একটি ফটক দিয়ে মানুষ ভিতরে প্রবেশ করবে, এক নজর মাইয়েতকে দেখবে-অন্য ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে মহিলাদের সারি চলেছে ৫/এ যায়লদার পার্কের ফটকের ভেতর এবং রাত ন’টা পর্যন্ত অবিরাম চলেছে এ স্রোত।
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীগণ তিনখানি বাস বোঝাই হয়ে এসেছে। তাদের সকলের কণ্ঠে শোকের কান্না। আকাশে বাতাসে যেন শুনা যাচ্ছে কান্নার রোল, কাদেঁ আল্লাহর ফেরেশতাগণ, কাঁদে কুল মাখলুকাত।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শেষ দীদারের জন্যে এলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। কিছুক্ষণ মহিলাদের থামিয়ে তাঁর দীদারের সুযোগ করে দেয়া হলো। মিঞা তুফাইল মুহাম্মদ জেনারেল জিয়াউল হককে সাথে করে মাওলানার বাসভবনে প্রবেশ করেন। পাকিস্তান-প্রেসিডেন্টের সাথে ছিলেন পাঞ্জাবের গভর্ণর জেনারেল সরওয়ার খান, চীফ সেক্রেটারী এবং অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা। তাঁদের সাথে আরও ছিলেন ইসলামী জমিয়তের প্রধান জনাব লিয়াকত বালুচ। জেনারেল জিয়াউল হক মাওলানার দীদার লাভ করার পর কিছুক্ষণ নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকেন এবং তাঁর দু’টি গণ্ড বেয়ে প্রবাহিত হয় প্রবল অশ্রুধারা।
জেনারেল জিয়াউল হক বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “এ যে একেবারে জ্যোতির্ময় মুখমণ্ডল।” তারপর মাওলানার সন্তানদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “মাওলানার তিরোধান এক অপুরণীয় ক্ষতি। এ ক্ষতি তাঁর পরিবারের নয়, পাকিস্তানের নয় বরং সারা মুসলিম বিশ্বের। তিনি যে মহান খিদমত করে গেলেন, তা আগামী কয়েক শতক পর্যন্ত মুসলমান জাতির পথ নির্দেশ করবে। আমি আশা করি মাওলানা হেদায়েতের যে দীপশিখা জ্বালিয়ে গেলেন, তাঁর সন্তানগণ তা আলোকিত রাখার চেষ্টা করে যাবেন।” মিনিট দশেক পরে তিনি বিদায় হন।
রাত সাড়ে ন’টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত হাজার হাজার লোক সারি বেঁধে ক্ষণিকের জন্যে হলেও মাওলানার শেষ দীদার লাভ করেন।
ঠিক বেলা ন’টার ভেতরে লোকের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং জানাযার জন্যে মাইয়েতকে পুনরায় ট্রাকে উঠানো হয়। ঠিক এ সময়ে আমি লাহোর বিমান বন্দরে অবতরণ করি। এর পরের বেদনাদায়ক দৃশ্যগুলো আগেই বর্ণনা করেছি।
সাতাশে সেপ্টেম্বর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্জুমানে ইত্তিহাদে তালাবার উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ফয়সল অডিটরিয়ামে এক শোক সভার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন মিয়া তুফাইল মুহাম্মদ। এখানে দেশ-বিদেশের বহু মনীষী ও পণ্ডিত মাওলানার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তৃতা করেন।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলেন সাইয়েদ মওদূদীর জানাযা ছিল একটি গণভোট। পাকিস্তানের জনগণে ইসলামের পক্ষে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বমুসলিম যুব সংসদের সহ-সেক্রেটারী জেনারেল ডঃ মুহাম্মদ আহমদ তুতুঞ্জী বলেন, মাওলানার চিন্তাধারা মন-মস্তিষ্ককে কিয়ামত পর্যন্ত আলোকিত করতে থাকবে। কুয়েতের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ইসলাম বিষয়ক বিভাগের ডাইরেক্টর শেখ আবদুল্লাহ আল আকীল বলেন, ইসলামকে মসজিদ-মাদরাসার চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখার ষড়যন্ত্র মাওলানা মওদূদী নস্যাৎ করে দিয়েছেন। সউদী আরবের সরকারী প্রতিনিধি ডঃ তাহা জাবির বলেন, সাইয়েদ মওদূদী বর্তমান শতকে আল্লাহর দ্বীনকে পুনর্জীবিত করেছেন। কুয়েতের জনৈক মনীষী আবদুল আযীয আল আলী আল মোতাওয়া বলেন, সাইয়েদ মওদূদী এমন এক জামায়াত প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, যা সারা দুনিয়ায় ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তৎপর। জামায়াতে ইসলামী হিন্দের আমীর মাওলানা ইউসুফ বলেন, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, মাওলানা মওদূদী তাঁর দায়িত্ব পুরোপুরি পারন করে গেছেন। আমি বলেছিলাম, মাওলানার সাহিত্য ও চিন্তাধারা কোটি কোটি মানুষের মধ্যে মানসিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। সিরিয়ার জনৈক মনীষী শেখ সাঈদ হাওয়া বলেন, মাওলানা মওদূদী পাকিস্তানের সুবাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ইসলামী জমিয়ত সভাপতি লিয়াকত বালুচ বলেন, মাওলানার সাহিত্য ও চিন্তাধারা এ দেশসহ মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি যুবককে ইসলামের জন্য উৎসর্গীকৃতপ্রাণ বানিয়েছে। আজ যদি তাদের প্রাণের বিনিময়ে মাওলানাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো, তা হলে তার জন্যে লক্ষ্ লক্ষ যুবক তাদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিল।
ইখওয়ানুল মুসলিমুন-এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ হাসানুল বান্না শহীদের পুত্র মিসরের আইনজীবী শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসানুল বান্না শহীদ হওয়ার পর ইখওয়ানের কর্মীগণ মনে করেছিল তাদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই। কিন্তু তারা অল্পকাল পরেই উপলব্ধি করল যে, এখন আল উস্তাজ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীই তাদের মুরশিদ-ই-আম, তাদের উস্তাদ ও পথ প্রদর্শক।
সভাপতির ভাষণে মিয়া সায়েব বলেন, মাওলানার চিন্তাধারার প্রাধান্য বিস্তারের জন্যে আমরা সর্বশক্তি নিয়োজিত করব।
তারপরেও পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি এবং লাহোরের বিভিন্ন স্থানে মাওলানার মৃত্যুতে কয়েকটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর প্রায় সবগুলোতে আমি আমন্ত্রিত হয়ে যোগদান করেছি।
মাওলানাকে বিগত বাইশ বছর ধরে জানবার চেষ্টা করেছি- জেনেছি এবং দেখেছি। সমগ্র হৃদয় দিয়ে তাঁকে জানবার এবং দেখবার চেষ্টা করেছি। আজ আমি সুস্পষ্ট অনুভব করছি যে, মাওলানাকে তাঁর জীবদ্দশায় যত বড় ও মহান দেখেছিলাম, মৃত্যু তাঁকে তার চেয়ে শত সহস্রগুণে বিরাট ও মহান বানিয়ে দিয়েছে। দেশ-বিদেশে তাঁর জন্যে যে সম্মান ও শ্রদ্ধার আসন ছিল, মৃত্যু তার সে সম্মান-শ্রদ্ধাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমি এবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে করাচী থেকে লাহোর, লাহোর থেকে পিন্ডি এবং পিণ্ডি থেকে পেশওয়ার ভ্রমণ করেছি। সর্বত্র আকাশে-বাতাসে পত্র-পল্লবে, সিন্ধু-রাবি-ঝিলাম-আটক নদ-নদীগুলোর কুলকুল নাদে প্রবাহিত তরঙ্গমালায়, পাহাড়ে-পর্বতে শুনেছি শোকের মর্সিয়া। সর্বত্র দেখেছি শোকের মূর্ত ছবি। শুনেছি লক্ষ লক্ষ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার কণ্ঠ মহররমের মাতমের মত ‘সাইয়েদী, মুরশেদী, মওদূদী, বিদায়-বিদায়’। বাফেলো থেকে নিউইয়র্ক ও লন্ডন, লন্ডন থেকে করাচী এবং করাচী থেকে লাহোর কত নদ-নদী, সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত, উপত্যকা-অধিত্যকা কত শহর, জনপদ ও মুরুভূমির উপর দিয়ে সারা বিশ্বকে অশ্রু-সাগরে ভাসিয়ে তাঁর মাটির অচেতন দেহখানি উড়ে এসেছে তাঁর চিরন্তন শয্যায় শায়িত হওয়ার জন্যে। তাই আজ তাঁর মৃত্যুতে-কাঁদে বিশ্বের মুসলিম আজি, গাহে তাঁরই মর্সিয়া।
আজ আমি উপলব্ধি করলাম জীবনের সবটুকু দিয়ে-জীবিত মওদূদী এবং এ ধুলির ধরা থেকে বিদায় নেয়া মওদূদীর মধ্যে পার্থক্য ঢের-আসমান ও যমীনের। মওদূদী আজ মৃত্যুঞ্জয়ী। তাঁর বিশ্বজনীন ইসলামী দাওয়াত, তাঁর অমূল্য সাহিত্য ভাণ্ডার, তাঁর স্বচ্ছ চিন্তাধারা তাঁকে অমর করে রাখবে চিরদিন। জীবদ্দশায় যাঁরা তাঁকে বাঁকা চোখে দেখেছেন। আজ তারা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আজ আইয়ুব আমলের আলতাফ গওহর বিসিসির মাধ্যমে মাওলানার জীবনের বিভিন্ন দিকে উপর আলোকপাত করে তাঁর হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন মাওলানার প্রতি। পিএনএ প্রধান মুফতী মাহমুদ বলেছেন, মাওলানা আবুল আ’লা মওদূদী ছিলেন কোরআন ও সুন্নাহর ‘সনদ স্বরূপ’।
মাওলানার ইন্তিকালে গোটা মুসলিম বিশ্ব শোকে অভিভূত। শহরে শহরে, মসজিদে মসজিদে গায়েবানা জানাযা ও শোকসভা হতে থাকে। বিভিন্ন মনীষী, জ্ঞানী-গুণী, সুধী, শিক্ষক, ছাত্র পত্র-পত্রিকায় মাওলানার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁদের অশ্রুস্নাত ও শোকসন্তপ্ত হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে থাকেন। এমনি যারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাঁদের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য হচ্চেন মেজর (অবঃ) মুস্তফা শাহীন, ডাঃ মুহাম্মদ কুতুব, সুদানের রাজধানী খার্তুমের প্রখ্যাত সার্জন ডাঃ আলী আলহাজ্জ, নাইরোবীর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন মন্ত্রী ইউসুফ হাশেম আর রাফায়ী, ফরাসী ভাষাবিদ অধ্যাপক হামীদুল্লাহ, হংকং বিসাসী নাযীর হাসান, আরব জাহানের অন্যতম মনীষী ডাঃ মুস্তাফা আয যারকা, সংযুক্ত আরব আমীরাতের প্রধান বিচারপ্রতি শেখ আবদুল আযীয আল-মুবারক, ইরানের আল্লামা আয়াতুল্লাহ এহিয়া নূরী, তুরস্কের ডাঃ ইবরাহীম আগাহ, আমেরিকার ডাঃ ইসমাইল রাজী আল-ফারুকী, ভারতের মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, জেদ্দার সাইয়েদ মাসউদ আলী রিজভী, রিয়াদের মুহাম্মদ আমীন, জাপানের হুসাইন খান, ভারতের মাওলানা সঈদ আহমদ আকবরাবাদী, মদীনা শরীফের আবদুল মুজিব, মাওলানা সদরুদ্দীন রাফায়ী মুজাদ্দেদী, আইনজীবী এ.কে ব্রোহী, আইন সম্পাদক মুযাফফর বেগ এবং আরব জাহানের সারওত সওলত। এমনি শোকাভিভূত সুধীদের সংখ্যা এত বেশী যে, তা পত্রস্থ করার জন্যে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনার প্রয়োজন।