‘ফাই’ অস্বীকার করা জাতীয় অপরাধ
সত্য কথা এইযে, মুসলমানদের মধ্যে অবশিষ্ট কিছু সংখ্যক পুঁজির মালিক ও সল্প সম্পদের মালিক যে হালাল বস্তু ইমাম আবু হানিফা (র)-এর ভাষায় পবিত্র উপার্জন, যাকে আমি ‘ফাই’ বা ‘ফাও’ বলে অভিহিত করেছি এবং যে সম্পর্কে কুরআনের হালাল হওয়ার সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে, তা গ্রহন না করে জাতীয় অপরাধ ও জাতীয় আত্মহত্যা করছে। মুসলমানদের যে মূলধন ব্যাংকে রক্ষিত আছে তার লাখো লাখো টাকার ‘ফাই’ যে অমুসলিম শক্তি বৃদ্ধির কারনে এবং মুসলমানদের জন্য অর্থনৈতিক পথ পরিবর্তন হলে সমস্ত ধনই যে অকেজো হয়ে যায়, তা কেনা জানে। উপরন্তু এইকথাও শুনা যায় যে, মুসলমানদের এই ফাই- এর আমদানি থেকেই তাদেরই শিশু, নারী ও দরিদ্রগনকে ইসলাম থেকে বিচ্যুত করে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স)-এর শিবির থেকে টেনে টেনে অন্যদের শিবিরে ভর্তি করা হয়।
(আরবী********)
“তোমরা ঈমান এনেছ বলে তোমাদের রাসুলকে এবং তোমাদরকে বহিস্কৃত করে দেবে”- প্রকাশ্যে এ আয়াতই কার্যকর করা হচ্ছে।
এটা আপন জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা নয় তো আর কি? ১ ১.[ সুদের টাকা ব্যাংকে ছেড়ে দিলে তার দ্বারা কাফেরদের শক্তি বৃদ্ধি করা হয়, একথা চন্তিাকরে সতর্ক আলেমগণ এ ফতোয়া দিয়েছেন যে, ব্যাংক থেকে সুদ নিয়ে সে অর্থ গরীব মুসলমানদেরকে সদকা হিসেবে দিতে হবে অথবা মুসলমানদের কোনো কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে। এ ফতোয়া অত্যন্ত ন্যায়সংগত। ফেকাহ গ্রন্থে নিষিদ্ধ মাল সম্পর্কে এরূপ ফতোয়া আছে যে, যদি তা বাধ্য হয়ে অথবা অন্য কোনো বিশেষ কারণে নেয়া হয়; তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। অতএব যে ক্ষিতির উল্লেখ মাওলানা করছেন তার থেকে বাঁচার জন্যে এর কোনো প্রয়োজন নেই যে, সুদকে ‘ফাই’ বলে অভিহিত করার চেষ্টা করতে হবে।- (মওদূদী)] আফসোস! মুসলমানদেরই চাঁদির ছুরি দিয়ে মুসলমানদেরকেই যবেহ করা কে জায়েয করে দিল? খোদা কি দেখছেন না? নবী (স) র্পযন্ত কি এ সংবাদ পৌঁছে যাচ্ছে না জগদ্বাসী! দেখ, মুহাম্মদ (সা) এর উম্মতকে সুদের জালে আবদ্ধ করে ইউরোপ, প্রাচ্য ও প্রতিচ্যের লোক মনের আনন্দে শিকার করছে। সুদ দাও অথবা ক্ষতে খামার দাও, ভূ-সম্পত্তি দাও অথবা ঘরবাড়ী দাও। নতুবা আরবের উম্মী নবী (সা)- এর আস্তানা ত্যাগ কর। এসব মোহরের দাবার ছকের উপর কেমন বেদনাদায়ক বাজি খেলা হচ্ছে।
ব্যাংকের সুদ
সত্য কথা এই যে, ব্যাংক হলো প্রধানত সুদখোরদের আইনসম্মত কতকগুলো কমিটির নাম। কিন্তু তার ব্যবস্থাপনা কাজের কর্মচারীগণ যদি এমন না হয়, যার থেকে মুসলমানদেরকে নিবৃত্ত করা হয়নি, তাহলে কারবার সে কমিটির সদস্যদের না হয়ে হবে একটি কোম্পানীর সাথে যে মানুষকে সুদে টাকা ঋণ দেয়। অতএব মুসলমানদের এমন পবিত্র ‘ফাই’ অস্বীকার করার কি কারণ হতে পারে? কোম্পানী কি কাজ করে? কাকে ঋণ দেয়? কার নিকট থেকে সুদ গ্রহণ করে? এ হচ্ছে তার নিজস্ব কারবার এবং একটি নতুন চুক্তি যার সাথে ঐ কারবারের কোনই সম্পর্ক নেই যা একজন মুসলমান ব্যাংকের মালিকদের সাথে করেছে। আন্তর্জাতিক আইনের যে ধারাগুলো ইসলামী আইনের দিক দিয়ে দেখা হয়েছে সেগুলো সামনে রাখার পর ব্যাংক মালিকদের কারবার যার সাথেই হোক না কেন, তা সংগত হয়ে যায়। এখন চিন্তা করে দেখুন। ২.[ ব্যাংকের সুদ নিষিদ্ধ হবার একটি কারণ এই যে, যে টাকা আমরা ব্যাংকে রাখি। ব্যাংক কতৃপক্ষ তা সমুদয় অন্যান্য কারবারের সাথে সুদী ঋণের কারবারেও লাগায়। যাদের এ সুদী ঋণ দেয়া হয় তাদের মধ্যে মুসলিম অমুসলিম সবই থাকে। এভাবে যে সুদ আমরা ব্যাংক থেকে পাই, তা শুধু অমুসলমানদের পকেট থেকেই আসে না বরঞ্চ মুসলমানদের পকেট থেকেও। অন্য কথায় আমরা মুসলমানদের কাছ থেকে সরাসরি সুদ খাই না খাই ব্যাংকের মাধ্যমে। মাওলানা এ প্রশ্নকে এই বলে উড়িয়ে দেন যে, হরবী ব্যাংকার আমাদের আমানতের টাকা যখন কোন মুসলমানকে ঋণ দিয়ে তার সুদ আদায় করে তখন বলতে গেলে আমরা হরবীর মাল হস্তগত করলাম যা আমাদের জন্যে হালাল। এই প্রশ্ন এই রয়ে গেল যে যখন এই অমুসলিম হরবী স্বয়ং আমাদের প্রদত্ত অস্ত্রেই মুসলমানদেরকে জবাই করে এবং তাদের গোশত থেকে কিছুটা আমাদেরকেও খেতে দেয়, তখন আমরা আমাদের অস্ত্র তাকে দেই কেন? মাওলানা এদিকে খেয়াল করেননি।- (মওদূদী) ]
হ্যাঁ, আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি এবং সবসময়েই বলব যে, যারা এরূপ করে তারা আপন দেশের স্বার্থে করছে না। দেশবাসীর, দেশের মজুর ও গরীব দুঃখীদের ভাল করছে না। কিন্তু যারা দেশের রক্ষক, যে সরকারের উপর দেশবাসীর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তারাই যখন এসব বিষয়কে দেশের মঙ্গল ও উন্নয়নের উপায় মনে করে এবং স্বয়ং দেশবাসীও এরূপই মনে করে, তখন দেশের আনুগত্যের প্রশ্নে কি মুসলমান আপন জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে?১ [এ মাসয়ালাই মাতৃভুমির আনুগত্যের বা বিশ্বাসঘাতকতার আদৌ কোন প্রশ্ন উঠে না|ঈমানদাররা সুদী কাজ হতে এ জন্য ফিরে থাকে যে আল্লাহ ইহাকে হারাম করে দিয়েছেন। আপনি এই প্রতিবন্ধকতাকে উঠায়ে নিয়ে যান দেখবেন আর কোন প্রমানের প্রয়োজন হবে না। সীমান্তের পাঠানদের মত হিন্দুস্থানের মুসলমানরাও সুদ গ্রহনের ব্যাপারে মাড়ওয়ারীদের থেকে দশ কদম অগ্রসর হয়ে যাবে|-(মওদুদী)] অথচ স্বদেশের কথা ছেড়ে দিলেও পারিবারিক অধিকারের ব্যাপারে জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা তাদের জন্য হারাম। কুরআনের সাধারন ঘোষনাঃ
“তোমাদের আত্মীয়স্বজন ও সন্তানাদী কিয়ামতের দিনে কোন কাজে আসবেনা। আল্লাহ তোমাদের ফায়সালা করবেন। এবং তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ দেখছেন। (সূরা মুমতাহিনাঃ ৩)
একথা ঠিক যে, আমাদের ধৈয্যশীল হতে বলা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধৈর্যশীল হতে বলা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করাই আমাদের জন্য শ্রেয়ঃ কিন্তু ধৈর্য ধারনের নীতির সাথে সমান প্রতিশোধের নীতিও কি কুরআন শিক্ষা দেয়নি?
“আর যদি তোমাদের উপর অত্যাচার করা হয় তাহলে তোমরাও ততটুকু করো যতটুকু তোমাদের উপর করা হয়েছে। আর যদি ধৈর্যধারণ করো তাহলে ধৈর্যশীলদের জন্য মংগল।- (সুরা আল নাহলঃ ১২৬)
কিন্তু ধৈর্যের কোন শেষ আছে কি? ধৈর্যের কোন সীমা আছে কি? যিনি ধৈয্যের শিক্ষা দিয়েছেন তিনি তো বলেছেনঃ
“আপন হাতে নিজেদের ধবংস টেনে এনো না”-(সূরা আল বাকারাঃ ১৯৫)
কন্সটান্টান্টিনোপলে মাটির তলায় শায়িত ইউরোপের গাজী আবু আইয়ুব আনসারী শব্দের যে ব্যাখা করেছেন, শুধু সাধারন নয়, বিশিষ্ট ব্যাক্তিগনও কি ভুলে গেছেন?
‘ফাই’ গ্রহন না করা জাতীয় অপরাধ
চিন্তাশীলগন বলেন যে, ফাই গ্রহন না করা শুধু আপন জাতির প্রতি নয়, বরঞ্ছ দেশবাসীর প্রতিও শত্রুতা করা। বিষ ভক্ষণকারীকে বিষ ভক্ষণ করতে দেখে শুধু মনে মনে দুঃখ করাই কি সত্যিকারের সহানুভুতি প্রদর্শন? অথবা সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার হাত থেকে বিষ কেড়ে নেয়া প্রকৃত মংগলাকাঙ্ক্ষা? ১.[বিষ কেড়ে নেয়া অব্যশই শুভাকাংক্ষের পরিচয়|কিন্তু কেড়ে নিয়ে নিজে তা ভক্ষন করা এবং অতপর এ বিষকে স্বর্ণ ভস্ম মনে করা শুভাকাংক্ষাও নয় এবং বুদ্ধিমত্তাও নয়। -(মওদুদী)]
“তোমাদের মাঝে কেউ যদি কাউকে মন্দ কাজ করতে দেখে তাহলে সে আপন হাত দিয়ে তা ঠেকিয়ে রাখবে। যদি তা না করতে পারে তাহলে সে মুখ দিয়ে বাধা দিব। যদি তা না করতে পারে, তাহলে সে অন্তর দিয়ে ধৃণা করবে। আর তা হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান। ”
হাদীসের সমস্ত গ্রন্থে এসব পড়া হয়ে থাকে। কিন্তু তথাপি ঈমানের দুর্বলতার বৃত্ত থেকে বাইরে আসার আর সাহস কারও হয় না। বিশেষ করে যখন এর ক্ষমতা থাকে। দেশের সরকার যদি তোমাদের সহযোগিতা করে এবং দেশবাসী এ ব্যাপারে তোমাদের সাথে একমত হয়, তাহলে বল এরপর আর কোন আপত্তি থাকতে পারে কি? যে অপরের গন্ডে চপেটাঘাত করে তার নিজের গন্ডে চপেটাঘাত না পড়া পর্যন্ত সেকি তার অপরাধের পরিনাম ২.[হিন্দু, ইয়াহুদি, ঈসায়ী সকলেই একে অপরকে চপেটাঘাত করছে এবং শতাব্দির পর শতাব্দী চলে আসছে। কিন্তু এ আঘাতের আস্বাদ গ্রহন করা ও করানো সত্তেও এর প্রতিক্রিয়া ও পরিনাম তারা বুঝতে পারছে না। তাহলে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, মুসলমানদের কয়েকটি মৃদু চপেটাঘাত তাদেরকে এমন সচেতন করে দিবে যে, তারা এ অপরাধ থেকে বিরত থাকবে? মাওলানা সম্ভবত মনে করেছেন যে, সুদ প্রদানকারী শুধু মুসলমান এবং অমুসলিমগন শুধু সুদ গ্রহন করে, দেয় না। এজন্য তার ধারনা এই যে, মুসলমান যখন সুদ খাওয়া শুরু করবে তখন অমুসলমান সুদখোর ঘাবড়ে যায় এবং অবশেষে ভারত গভর্নমেন্ট সুদের লেনদেন আইনত নিষিদ্ধ করে দিবে। কিন্তু ব্যাপার তা নয়, সমস্ত অমুসলিম সম্প্রদায় সুদ গ্রহণও করে এবং প্রদানও করে। মুসলমান তাদের কাছ থেকে সুদ নিয়ে নতুন কোন আস্বাদ গ্রহণ করতে পারবে না। অবশ্য তারা এক এক নতুন আস্বাদ নিশ্চয় গ্রহন করবে এবং তা সম্ভবত তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়ে ‘ফাও’এবং ‘অ-ফাও’ এর পার্থক্য ভুলিয়ে দিবে। অতঃপর মনে রাখতে হবে যে, মুসলমান এতো পুঁজিপতিও নয় যে, তারা সুদ নেওয়া শুরু করলে মাড়ওয়ারী ও সুদ মহাজনগ দেউলিয়া হয়ে যাবে এবং সকলে পরাজয় স্বীকার করে সুদ নিষিদ্ধকরনের জন্য উঠেপড়ে লাগবে। -(মওদুদী)] বুঝতে পারবে? যদি তা না পারা যায়, তাহলে তারা হতভাগ্য- দরিদ্র লোকদের কোমল চামড়াকে তাদের আংগুলের শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্র বানাবে। অতএব চিন্তা করুন।
হতে পারে যে, যে চপেটাঘাত আজ মুসলমানদের দেয়া হচ্ছে, তার অনুভুতি যখন অন্যেরও হবে, তখন সম্ভবত সরকার এ লেনদেন আইনত নিষিদ্ধ করবে। যদি তারা এমন করে, তাহলে এ আইন পালনের জন্য সর্বাগ্রে তাদের মস্তক অবনত হবে, যারা নবী (স) এর উম্মত এবং দুনিয়ায় সর্বোত্তম চরিত্রের প্রতিফলন যাদের কাজ। তখন ধর্মত আমরা অপরাধী হবো যদি আমরা আইন না মেনে চলি। আর সরকারও যদি কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করে, তাহলে আপনি কি আশ্চর্য হবেন যে, যে দুঃখ মুসলমানগন পেয়েছে, তা যদি অন্যান্যরাও পায় তাহলে দেশবাসী গলা ফাটানো ওয়াজের কোনোই পরোয়া করবে না। যেমন, লিখনীর মাধ্যমে বক্তৃতার প্রতি তারা উপহাস করে আসছে। ১.[তাদের উপহাস ও অট্রহাসি তখনো বন্ধ হবে না বরঞ্জ আরও বেড়ে যাবে। তারা বলবে যে, অর্থনৈতিক ব্যাপারে ইসলামের কোন নীতি যে চলতে পারে না, এটাই প্রমানিত হচ্ছে এবং সুদের নিষিদ্ধকরন বাস্তব জগতে সম্পূর্ন অচল। তালাক, উত্তরাধিকার, বিধবা বিবাহ প্রভৃতি মাসগুলোতে তারা যেসব ধর্মীয় আইনের সংশোধনী পাশ করেছে, তার যেমন আপনি প্রতিবাদ করেন, তেমনি তারাও ইসলামের দুর্বলতা প্রকাশ করা জন্যে সুদের ব্যাপারে আপনার পরিবর্তিত মতবাদকে একটা প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করবে। -(মওদুদী)] যদি তারা অগ্রসর হয় এসব কারবার রহিত করার জন্য কোন চুক্তি করে, তাহলে আল্লাহ কি মুসলমানদেরকে এ অনুমতি দেয়নি? যেমনঃ
এ ধরনের চুক্তিকে সর্বপ্রথম স্বাক্ষর তারা করবে। দুনিয়ায় মানব জাতির মঙ্গলের জন্য যাদের আবির্ভাব হয়েছিল, এসব কারবারকে অন্তরের সাথে আমরা খারাপ মনে করব, একথা মুখে বারবার বলব সরকারের দৃষ্টি এদিকে আকৃষ্ট করব এবং দেশবাসীকেও বলব। এ যাবত যেভাবে বলেছি, ভবিষ্যতেও বলবো এবং জোরগলায় বলবো এবং অবিরাম বলতেই থাকব। আমাদেরকে দেশান্তরিত করতে এবং গৃহ হতে বহিষ্কার করতে তারা যতোই পীড়াপীড়ি করুক না কেন, আমরা তাদের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা হ্রাস করব না। আর এ মঙ্গলাকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে মুখ থেকে অগ্রসর হয়ে হাত দিয়েও আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করব।
এ আল্লাহর বিধান ১.[(ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধাদান) আল্লাহর এ বিধান পালনের এ পন্থাতে বড়ই অদ্ভুত যে, যে মন্দ কাজ থেকে অপরকে আমরা বিরত রাখতে চাই, আমরা তার মধ্যেই লিপ্ত হয়ে পড়বো। যেমন ধরুন, কোন ব্যক্তি মদ পান করে দাংগা-ফাসাদ শুরু করে দিল। তারপর অনেক বুঝানোর পরও যখন সে মদ পান ছাড়লো না তখন আমরা নিজেরাও তার মত মদ খেয়ে দাংগা-ফাসাদ করে তাকে বলব, দেখ, মদ খাওয়া কত দুঃখজনক পরিণামঃ এখন তাহলে আমাদের সাথে চুক্তি কর যে না তুমি মদ খাবে, আর না আমরা খাব। তা যদি না হয় তবে মনে রেখো আমরা তোমার চেয়ে বেশী করে মদ খেয়ে ও দাংগা করে দেখিয়ে দিব। এ ধরনের নছিহতের দ্বারা মদ পরিত্যাগ করার চুক্তি হয়তো হবে না। তবে হবে এই যে, শরাবখানায় ধার্মিককে দেখে পাঁড় মদখোরেরা জ্বয়ধ্বনী করবে এবং চীৎকার করে বলবে, “শরাবীর দলে শায়েখকে খোশ আমদেদ জানাই।”-(মওদূদী)] পালনের জন্যে আমাকে পয়দা করা হয়েছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত না দেশবাসী ও প্রতিবেশীগণ এর অপকারীতা সম্পর্কে একমত হয়েছে ততোক্ষণ আমরা এ নির্দেশ পালন করে চলব। ভগ্ন হুদয় এবাবেই জোড়া লাগে এবং একদিন তা ইনশাআল্লাহ জোড়া লাগবে।
ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকারের বিধান
প্রসঙ্গ শেষ করার আগে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য কথা থেকে যাচ্ছে। তা কি করেই বা ছাড়া যায়? ইসলামী আইন যখন আমাদের হাত ধরে পথ দেখাবার জন্য প্রস্তুত, তখন প্রশ্ন জাগে যে, যেসব ইসলামী দেশে শরীয়তের আইন কোন না কোন কারণে রহিত হয়ে গেছে, সেখানে কি করা যায়? সেখানকার শাসক ও রাজা-বাদশা তো মুসলমান বটে। শামী গ্রন্থে এ সম্পর্কে ফতোয়া আছে যে, এসব দেশের মুসলমান শাসকগণ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি ইসলামী আইন জারী না করে, তাহলে এসব দেশ দারুল ইসলামই থাকবে।
“এর থেকে জানা গেল যে, সিরিয়ার তায়মুল্লাহ নামক পার্বত্য এলাকা জাবালে দুরুজ এবং তার অধীন অন্যান্য শহরগুলো সবই দারুল ইসলাম। কেননা যদিও সেখানে দুরুজ অথবা ঈসায়ীদের শাসন চলে, সেখানকার প্রশাসক ও বিচারক তাদেরই ধর্মাবলম্বী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের গালি দেয়, তথাপি তারা ইসলামী রাষ্ট্রের অধীন। তারা চতুর্দিক থেকে মুসলিম রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত। যখনই মুসলিম শাসনকর্তা ইচ্ছা করবেন, তখনই সেখানে ইসলামী আইন চালু করতে পারবেন।”
এর দ্বারা প্রচলিত হয় যে, যেসব দেশে মুসলিম শাসকগণ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন প্রবর্তন করতে অক্ষম, তারা আর দারুল ইসলাম থাকতে পারেনা।১.[মনে হচ্ছে মাওলানা একথা বলতে চান যে, ভারতের মুসলিম রাজ্যগুলোও দারুল হরবের সংজ্ঞায় পড়ে এবং সে সবের অমুসলিম প্রজাবৃন্দও হরবী যাদের সম্পদ হালাল। এ ধরনের ইজতিহাদের অন্তত হানাফী পিকায় কোন অবকাশ নেই। ফকীহগণের বিশদ ব্যাখ্যার জন্যে তাহাবী কর্তৃক দুররুল মুখতারের টীকা দ্রষ্টব্যঃ
(আরবী********)
“যে রাষ্ট্রে ইসলামী আইন ও শির্কের আইন প্রচলিত তা দারুল হরব নয়।”
ফাতওয়ায়ে বায্যায়াতে আছেঃ “যদি দারুল হরবের শকল শর্তই পাওয়া যায়, তাহলে তো দারুল হরব হবে। আর যদি দলিল শর্তসমূহ মধ্যে গরমিল দেখা যায়, তাহলে তা আগের মতোই থাকবে অথবা নিরাপত্তার জন্যে দারুল ইসলাম হবে।”
খাজানাতুল মুফতীন গ্রন্থে আছেঃ
(আরবী**********)
“যেসব কারণে দারুল ইসলাম হয়, তার সবগুলো বাতিল না হলে দারুল ইসলাম দারুল হরবে পরিণত হয় না। সুতরাং ইসলামের কিছুমাত্র অবশিষ্ট থাকলেই তা দারুল ইসলামের পক্ষেই গণ্য হবে।”
এসব ব্যাখ্যঅর পর কে বলতে পারে যে, হায়দরাবাদ, ভূপাল, জুনাগড় প্রভৃতি রাজ্যসমূহ দারুল হরব হয়ে গেছে এবং তার অমুসলিম প্রজাগণ হরবী। মাওলানা সম্ভবত জানেন যে, ইসলামী ফিকাহ অনুযায়ী দারুল হরব দারুল ইবাদাতের অপর নাম। এখানে ইসলামী আইনের অধিকাংশ কানুনই প্রয়োজনের তাকীদে শিথিল করে দেয়া হয়। এ সাময়িক শিথিলতা যদি স্থায়ী করে দেয়া হয়, তাহলে মুসলমানদের মুসলমান থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যেমন ধরুন, লর্ড ওয়েলেসলূর বাধ্যতামূলক মিত্রতায় শরীক হবার থেকে আলেমহণ যদি হায়দারাবাদকে দারুল হরব ঘোষনা করে দারুল ইবাদাত বানিয়ে দিতেন, তাহলে একশ ছত্রিশ বছরের মধ্যে এ রাজ্যের মুসলমান এতটা বিকৃত হয়ে পড়তো যে, মুসলমান দেশের কোন ব্যক্তি তাদেরকে মুসলমান বলে চিনতেই পারতো না।–(মওদূদী)] অবশ্য আল্লাহই এ সম্পর্কে ভাল জানেন।
এ ধরনের অনৈসলামিক রাষ্ট্রে জুমা, ঈদ, ইত্যাদি কিভাবে হতে পারে তাও শামী গ্রন্থে আছেঃ
(আরবী*********)
“যেসব শহরে কাফেরদের পক্ষ থেকেই মুসরিম শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়, সেখানে জুমা ও ঈদ জায়েয। সে রাজ্যে কর আদায় করা ও বিধবা বিবাহ দেয়া জায়েয।”
কিন্তু যে অনৈসলামিক রাষ্ট্রে সরকারের স্বীকৃত কোন মুসলিম শাসক না থাকে, সে সম্পর্কে নির্দেশ হচ্ছেঃ
(আরবী*********)
“যে রাষ্ট্রে শাসক কাফের সেখানে মুসলমানদের জুমা ও ঈদ জায়েয। তারা পরস্পরের পরামর্শ করে কাজী নিযুক্ত করবে। কিন্তু তাদের কর্তব্য হবে মুসলিম শাসনকর্তা দাবী করা।”