পরিশিষ্টঃ তিন
সুদ সমস্যা ও দারুল হরব
জনাব মাওলানা মানাযির আহসান গিলানী মরহুম
(সুদ সম্পর্কে আলেমদের একটি দল আলোচনার এদিকটি ও তুলে ধরেছেন যে ভারত হচ্ছে দারুল হরব এবং দারুল হরবে হরবী অমুসলিমদের নিকট থেকে সুদ নেয়া জায়েয। জনাব গিলানী সাহেব নিম্নের প্রবন্ধে এদিকটা জোরালো ভাষায় তুলে ধরেছেন। পাঠকদের অবগতির জন্য তা আমরা এখানে উদ্ধৃত করেছি। পরবর্তী অধ্যায়ে এর পূর্ণ সমালোচনা আমরা করেছি। তবে কতকগুলো বিষয়ের জবাব যথাস্থানে পাদটিকায় দিয়েছি। এ আলোচনা পাঠ করার সময় মনে রাখতে হবে যে, এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতে ব্রিটিশ আমলে-১৯৩৬-৩৭ খ্রিস্টাব্দে।
অনৈসলামিক শক্তি কর্তৃক অধিকৃত দেশ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী
এ দেশ দুই ধরনের হতে পারে। এক হতে পারে এই যে, এদেশে ইসলামী হুকুমত কখনো কায়েম হয়নি অথবা হয়েছে কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দিতার ফলে এদেশে অনৈসলামী শক্তির অধিকার স্থাপিত হয়েছে। প্রথম অবস্থায়তো এরূপ দেশের অনৈসলামী অধিকারভুক্ত ও অমুসলিম রাজ্য হওয়া সম্মন্ধে কোনো সন্দেহ থাকতে পারেনা। অনৈসলামী রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র কে বলতে পারে? কিন্তু আলোচনা একটু অন্যভাবে শুরু হচ্ছে।
আব্বাসীয় রাষ্টের প্রধান বিচারপতি ইমাম আবু ইউসুফ এবং ফেকাহ প্রনেতা ইমাম শায়বানী এ সম্পর্কে নিম্ন ফতোয়া দিয়েছেন:
(আরবী**********)
দারুল ইসলামে কুফরী আইন জারি হলেই তা দারুল কুফর হয়ে যায়। ফতওয়ায়ে আলমগীরিতে অনৈসলামী আইন জারীর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ করা হয়েছে:
(আরবী**********)
অর্থাৎ প্রকাশ্য ভাবে সেই দেশে যদি ইসলামী আইন অনুসারে বিচার-শাসন না হয়।
এর অর্থ এই যে,যে দেশে আল্লাহ তায়ালার কালাম এবং শেষ নবী (স)- এর নির্দেশাবলী থেকে গৃহীত আইন কার্যকর না থাকে,সে দেশই হচ্ছে অনৈসলামী দেশ এবং সে রাষ্ট্রকে অনৈসলামী মনে করতে হবে। সে দেশে আদৌ কোনো আইন নেই,অথবা থাকলে ও তা অনৈসলামী জনমস্তিস্ক ও অনৈসলামী সূত্র প্রসূত আইন। মোটকথা,যে দেশ থেকে ইসলামী রাষ্টের আইন-কানুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং যেখানে অনৈসলামী আইনজারী হয়েছে,না তা আর ইসলামী দেশ থাকে, আর না সে রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র মনে করা যেতে পারে। এ হলো একটি মোটামুটি ব্যাখ্যা। ইমাম শ্রেষ্ঠ আবু হানিফা (র) অধিকতর বিশদভাবে অনৈসলামী রাষ্টের প্রকৃত ব্যাখ্যা নিম্নরূপ করেছেন:
(আরবী********)
“তিনটি শর্ত ব্যতীত দারুল ইসলাম দারুল কুফর হয়না। প্রথমত যদি কুফরী আইন সেখানে জারী হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, যদি সে দেশ কোনো দারুল কুফরের সাথে মিলিত হয়ে যায়। তৃতীয়ত, যদি সে দেশে মুসলমান অথবা জিম্মী পূর্বের মত নিরাপত্তার সাথে বাস করতে না পারে।”
এখন দুনিয়ার অধিকাংশ স্থানেই অনৈসলামী রাষ্ট্র রয়েছে। কিন্তু তাদের প্রকৃত অবস্থা আমার জানা নেই এবং তাদের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমার নিকটে শরীয়তের কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ও নেই। কিন্তু ভারত ১.[বিভাগ পূর্ব ভারত] আমাদের নিকট বর্তমান রয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ এদেশকেই ধরা যাক এবং দেখা যাক যে,ইমাম আবু হানিফা (র) অনৈসলামী রাষ্টের যে আইনানুগ ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা এদেশের উপর কতটা প্রযোজ্য।
এতো জানা কথা যে,এদেশে শরীয়তের আইন নয়,বরঞ্চ ব্রিটিশ আইন-কানুন ও শাসন প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর কালাম কুরআন মজীদ এবং নবী (স)-এর হাদীস থেকে যে ইসলামী আইন প্রণীত হয়, তা এখানে আদৌ প্রতিষ্ঠিত নেই। বরঞ্চ অনৈসলামী মন-মস্তিস্ক (তা সে এক জনের হোক অথবা অনেকের,ভারতীয়ের হোক বা অভারতীয়ের)প্রসূত আইন-কানুন এদেশে জারী আছে। এ দিক দিয়ে এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ইমাম সাহেবের উপরোক্ত সংজ্ঞার প্রথম কথা অনৈসলামী আইনের বাস্তবায়ন—সর্বতোভাবে এদেশের উপর প্রযোজ্য।
এভাবে দ্বিতীয় শর্ত ও যে এদেশের উপর প্রযোজ্য তাতে কে সন্দেহ পোষণ করতে পারে? ভৌগলিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে কে না জানে যে,ভারতের সীমান্তের অধিকাংশই অনৈসলামী দেশ ও রাষ্টের সাথে মিলিত হয়ে আছে। এমন ভাবে মিলিত যে,উভয়ের মধ্যস্থলে কোনো ইসলামী দেশ নেই। আলমগীরিতে আছে:
(আরবী**************)
“সংযুক্ত না হবার অর্থ এই যে, দারুল কুফর এবং দারুল ইসলামের মধ্যে কোনো ইসলামী শহর না থাকে (শামী থেকে বর্ণিত).”
এদেশের উত্তর এবং পূর্ব দিক তো স্থলসীমান্ত দ্বারা সীমিত। এখন রইলো সমুদ্র সীমান্ত। এ সম্পর্কে কথা এই যে, প্রথমত, আপাত দৃষ্ঠিতে গোটা সমুদ্রের উপর অনৈসলামী শক্তির পূর্ণ অধিকার বিদ্যমান। এমনকি এদের অনুমতি ব্যতিরেকে এসব সমুদ্রে আর কেউ তাদের জাহাজ চালাতে পারেনা। আর যদি এরূপ নয় বলে ও ধরে নেয়া যায়, তথাপি স্থলের সংযোগই তো শর্ত পূরণ করার জন্য যথেষ্ট। উপরন্তু ইসলামী ফকীহগণের সমুদ্র সম্পর্কে ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
(আরবী*********)
লবণাক্ত সমুদ্র অনৈসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হবে ১.[ ইসলামী ফকীহগণ একথা এমন এককালে বলেছিলেন, যখন সমুদ্রে জলদস্যুদের চরম উত্পাত চলছিল এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নৌ শক্তি তখন এতটা প্রবল ছিল না যে,সামুদ্রিক পথে পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। এটাকে একটা সাধারণ এবং স্থায়ী নির্দেশরূপে গণ্য করা কিছুতেই ঠিক হবেনা। আজ যদি সমুদ্রের উপরে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়,যেমন বৃটিশের আছে, তাহলে কেন আমরা তা হাতছাড়া করে পানিকে দারুল হরবের সাথে সংযুক্ত করবো।-(মওদুদী)]
মোট কথা যেভাবেই চিন্তা করুননা কেন,এ শর্তের ব্যাখ্যায় ও কোনো অস্পষ্টতা নেই। ইমাম সাহেবের উদেশ্য এই ছিল যে, যদি চারিদিক থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের দ্বারা পরিবেষ্টিত কোনো দেশে অনৈসলামী রাষ্ট্র অধিকার লাভ করে,তাহলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়না এবং এমন মনে করা যায় না যে, সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কঠিন। ফকীহগণ এর বিশদ ব্যাখ্যাও করেছেন। সামনে একটি প্রশ্নের আলোচনায় তার কিছুটা আসবে।
এখন তৃতীয় শর্তের কথা। এ কথা সত্য যে, বিভিন্ন আইন ও দন্ড বিধির অধীনে অন্যান্য জাতির সাথে মুসলমানদেরকে ও ফাঁসী দেয়া হয়। আর এ বিষয়ে আদৌ লক্ষ্য করা হয়না যে, ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে এ ব্যক্তি প্রাণদন্ডের যোগ্য কিনা। এভাবে এখানকার বিচারালয়গুলো বর্তমান আইন অনুযায়ী মুসলমানদের সম্পদ অন্যকে দিয়ে দিচ্ছে এবং এ বিষয়ে লক্ষ্য করা হচ্ছে না যে ইসলামী আইন অনুযায়ী সে ব্যক্তির সম্পদ অন্যকে দেয়া যায়না। আদালত থেকে প্রতিদিন লাখলাখো কোটিকোটি টাকা সুদের ডিক্রী জারী করা হচ্ছে। শুধুমাত্র সুদ কেন, অসংখ্য এমন বিষয় আছে যেখানে ইসলামী আইন অনুযায়ী একজন মানুষের সম্পদ নিরাপদ ও সুরক্ষিত মনে করা হয়। কিন্তু দেশের আইন এ সম্পদের হকদার অন্যকে বানিয়ে দেয়।
এতো গেল জান ও মালের নিরাপত্তার অবস্থা। এখন মান-সম্মানের নিরাপত্তার অবস্থা দেখুন। মুসলমানদের জেল, দীপান্তর,জরিমানা, বেত্রদন্ড প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার দন্ড বিভিন্ন আইনের ধারানুসারে দেয়া হয়। কিন্তু সে সময়ে এটা কি লক্ষ্য করা হয় যে,এসব ব্যক্তির মান-সম্মান ইসলামী আইন অনুসারে ভুলুন্ঠিত হবার যোগ্য ছিল কি? আমি একথা বলতে চাইনা যে,ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তা নেই। কিন্তু আমার বক্তব্য এই যে, তাদের ইসলামী নিরাপত্তা নেই। কারণ স্বয়ং ইমাম আবু হানিফা (র)নিপারত্তার নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করেছেনঃ
(আরবী********)
“সেই নিরাপত্তা যা মুসলমানদের আইন অনুযায়ী হয়।”
আলমগীরিতে এর ব্যাখ্যা বিশদভাবে করা হয়েছে:
(আরবী*********)
“অনৈসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে মুসলমানদের ইসলামের কারণে এবং জিম্মীদের দায়িত্বের চুক্তির কারনে যে নিরাপত্তা ছিল, তা আর নেই।”
প্রকৃত ব্যাপার ও তাই যে,যে দেশে অনৈসলামী শক্তির শাসন কায়েম হয়েছে এবং যে দেশে অনৈসলামী আইন চালু হয়েছে তাকে ইসলামী রাষ্ট্র হবার দাবি করা হাস্যকর মনে হয়। অন্যের দেশকে এবং অন্যের সরকারকে ইসলামী দেশ মনে করার অনুমতি মুসলমানদেরকে দুনিয়ার কোন সরকার দিতে পারে?
ইসলামী ফকীহগন কখনো কখনো এদেশ কে দারুল হরব বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সম্ভবত এর থেকেই ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত ব্যাপার এই, পূর্ববর্তী ওলামায়ে ইসলাম অধিকাংশ এ ধরনের দেশ সম্পর্কে দারুল ইসলামের বিপরীত দারুল কুফরের পরিভাষা ব্যাবহার করেছেন। এক্ষণি ‘বাদায়ে’ প্রণেতার উক্তির উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। তিনি তাঁর গ্রন্থে সাধারণত দারুল কুফরের পরিভাষা ব্যবহার করেছেন,যার সহজ সরল অর্থ হচ্ছে–যেখানে ইসলামী শাসন নেই। যেখানে ইসলামী শাসন থাকবেনা যে দেশ মুসলমানদের হস্তগত হবেনা, তাকে কি মুসলমানগণ মুসলমানদের সরকার এবং মুসলমানদের দেশ বলবে?
এ হলো প্রথম প্রশ্নের জবাব। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি।
অনৈসলামী রাষ্ট্রে মুসলমানদের জীবন পদ্ধতি
ইসলাম মুসলমানদের স্বাধীন বলে মনে করে এবং স্বাধীনতাকে স্বাভাবিক ও খোদা প্রদত্ত অধিকার বলে স্বীকার করে। সাময়িক ভাবে যদি কোনো মুসলমানদের অনৈসলামী রাষ্ট্রে গিয়ে বসবাস করার প্রয়োজন হয়, তাহলে সে রাষ্ট্রের অধিবাসীদের সাথে তার সম্পর্কের ধরনটা কি হবে—এ সম্পর্কে ইসলামী ফকীহগণ ইসলামী আইনের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। বলতে গেলে আইনের দিক দিয়ে তার উপায় একটি এই যে, সেই মুসলমান সে রাষ্ট্রের সাথে একটা চুক্তি করবে যে,সে সেই রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন মেনে চলবে। অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলার পরিপন্থী কিছু করবেনা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় এরূপ মুসলমানকে নিরাপত্তা মুসলমান বলে। কুরআন পাকে চুক্তি সম্পর্কে সাধারণ নিয়ম এইঃ
(আরবী*********)
“যারা তাদের আমানত ও তাদের ওয়াদা-চুক্তির রক্ষনাবেক্ষণ করে।”
(আরবী****)- চুক্তি পূরণ করে।-(সুরা মায়েদাঃ ১)
ইসলাম চুক্তিকে একটা বিরাট দায়িত্ব বলে ঘোষণা করেছে এবং তার জন্যে জবাবদিহি অপরিহার্য। এত হলো সাধারণ চুক্তি সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা। আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট আইন মুসলমানদের উপর নির্ধারিত করা হয়েছেঃ
(আরবী*********)
“যেসব মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি করেছ এবং তারা সে চুক্তির কোনো অংশই লংঘন করেনি এবং তোমাদের মুকাবিলায় অন্য কাউকে সাহায্য করেনি, এমতাবস্থায় তাদের চুক্তি পূরণ কর।”-(সুরা তাওবাঃ ৪)
কোনো চুক্তি না থাকলে অথবা অপরজাতি চুক্তি ভংগ করলে তার জন্য কি করতে হবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ এখানে নেই।এখানে ‘চুক্তি আইনের’ শুধু সেই ধারাটি আলোচনা করা হচ্ছে যার ভিত্তিতে চুক্তি পালন করা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়। যে মুসলমান চুক্তি ভঙ্গ করবে তার পরিণাম কি হবে সে বিষয়ে নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ
“চুক্তি ভঙ্গকারীদের জন্য কিয়ামতের দনে একটা নিশান উড়ানো হবে এবং বলা হবে এ অমুক ব্যক্তির চুক্তি ভঙ্গের নিশান।”
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ
“চুক্তি ভঙ্গকারীদের দেহের বিশিষ্ট স্থানে একটি নিশান প্রোথিত করা হবে। এ দ্বারাই কিয়ামতের দিনে তার পরিচয় পাওয়া যাবে।”
নবী (সাঃ) যখন সেনাবাহিনীকে বিদায় দিতেন তখন এরূপ উপদেশ দিতেনঃ
“তোমরা বিশ্বাস ভঙ্গ এবং চুক্তি ভংগ কিছুতেই করবে না।”
এজন্য ইসলামের আলেম সমাজ ‘চুক্তি ভংগ’কে সমবেতভাবে হারাম ফতোয়া দিয়েছেনঃ
“চুক্তি ভংগ সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।”
মুসলমানদের অতুলনীয় শান্তি প্রিয়তাঃ
‘চুক্তি আইন’এর তথ্য অবগত হবার পর যে মুসলমান কোনো অনৈসলামী রাষ্ট্রের সাথে শান্তি চুক্তি করে, তদানুযায়ী ‘নিরাপত্তা প্রাপ্ত (বা মুস্তামান)’ ব্যক্তি হিসেবে বসবাস করতে থাকে, তার দায়িত্ব যে কতটা কঠিন তা স্পষ্ট বোঝা যায়। হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ
“কোনো মুসলমান যখন কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রে প্রবেশ করে তখন তার জন্যে সেখানকার অধিবাসীদের জান ও মালে হস্তক্ষেপ করা তার জন্যে জায়েয হবে না। কারণ, (চুক্তির মাধ্যমে) সে এরূপ না করার নিশ্চয়তা দান করেছে এবং শান্তি চুক্তির পর এটা হয়ে পড়ে তার বিরাট দায়িত্ব।”
একথার অর্থ এই যে, যখন কোনো রাষ্ট্রের সাথে কোনো মুসলমান চুক্তি করার পর সেই দেশে যখন সে প্রবেশ করে, তখন ঐ রাষ্ট্র অপরের জান-মাল রক্ষার জন্যে যেসব আইন-কানুন জারী করেছে, তা ভঙ্গ করা তার জন্যে একেবারে নাযায়েয। সে অনৈসলামী রাষ্ট্র যেসব কার্যকলাপকে আইন বিরুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা করার কারণে সে শুধু আইনগত অপরাধীই হবে না, বরং চুক্তি আইন অনুযায়ী সে চুক্তি ভঙ্গের দায়ে অপরাধী হবে। কুরআন, হাদীস এবং সর্বসম্মত ফতোয়া অনুযায়ী যে কাজ হারাম করা হয়েছে, তা করে সে গোনাহগার হবে। কে আছে যে, তার ধর্মে অপর জাতির আইন-কানুন মেনে চলাকে এতোটা প্রয়োজনীয় বলে প্রমাণ করতে পারে? মুসলমানদের প্রতি শান্তি ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়ে থাকে। কিন্তু লোকদের জানা নেই যে, তাদের চেয়ে অধিকতর শান্তিপ্রিয় ও আইনের প্রতি আনুগত্যশীল জাতি দুনিয়াতে আর নেই। পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত আছেঃ
“উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো দল নিরাপত্তার অধিকতর অধিকারী, যদি তোমরা জানো (তো বলো)।”-(সুরা আন আমঃ ৮১)
কতিপয় আলেম সম্ভবত এর উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি ডাকযোগে চিঠি দেয়ার সময় নির্ধারিত ওজনের বেশীর জন্য অতিরিক্ত ডাকটিকেত লাগায় না, বা যে ব্যক্তি বিনা ভাড়ায় নির্ধারিত ওজনের বেশী মাল রেলে বহন করে, সে শুধু দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ীই অপরাধী হয় না, বরং আল্লাহর ও তার আপন ধর্মেরও নিকট অপরাধী।
আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
এখানে আইন সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের বিশদ ব্যাখা প্রয়োজন। সাধারণত তা উপলব্ধি না করার জন্যে বিভিন্ন প্রকার ভুল ধারণার প্রচলন আছে। সম্ভবত অন্যান্য আইন সম্পর্কেও এ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ইসলামী আইন এ প্রশ্নটি উত্থাপন করেছে। বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন সময়ে একে অন্যের প্রতি আক্রমণ চালায়। এক জাতি অন্য জাতির জান-মাল, ধন-সম্পত্তি ও অধিকৃত দেশের উপর আক্রম্পণ করে। এখন আমাদের আলোচনার বিষয় নয় যে, এ আক্রমণ বৈধ কই অবৈধ এবং বৈধ হলে কি উপায়ে? বরং এই সময়ে আমাদের প্রশ্ন এই যে, এক জাতি অন্য জাতির সম্পদের উপর যে আধিপত্য লাভ করলো তা কি সঙ্গত হলো? অর্থাৎ আইনত ও ধর্মত কি দখলদার জাতি তার মালিক হয়ে গেলো? মনে করুন, কোনো যুদ্ধে ইংরেজ-জার্মান অথবা অন্য কোনো জাতির সম্পদ লাভ করার পর তা মুসলমানদের কাছে বিক্রি করতে চায়। সাধারণত সে সময়ে আইনের প্রতি আনুগত্যশীল একজন পাকা দ্বীনদার মুসলমানের জন্যে এ প্রশ্নের সমাধান প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অন্য জাতির জন্যে এ বিষয়ে কোনো মাথা ব্যাথা হোক বাঁ না হোক, একজন মুসলমান কোনো অধিকারকে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়সঙ্গত মনে করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামী আইন তার ন্যায়সঙ্গত হবার ফতোয়া না দিয়েছে। তার জন্যে অপরিহার্য যে, সে তার শরীয়তের কাছে জানতে চাইবে যে, ইংরেজ-জার্মানবাসী সে সম্পদের মালিক হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার বিক্রি করা এবং আমাদের খরিদ করা ও খরিদ করে নিজের কাজে লাগানো ন্যায়সঙ্গত হবে। কিন্তু ইংরেজ যদি নিজেই অন্যায়ভাবে মালিক হয়ে থাকে, তাহলে তার বিক্রি করার অধিকার নেই। আর তার যদি বিক্রি করার অধিকার না থাকে, তাহলে আমি তা খরিদ করার পর কিরূপে তার মলিক হবো। মোটকথা, আন্তর্জাতিক আইনের এ একটা বড় মজার প্রশ্ন। ইসলামী ফকীহগণ এ সম্পর্কে তাঁদের গ্রন্থে অধ্যায় সন্নিবেশিত করেছেন এবং খুঁটিনাটি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সারকথা এই যে, এ প্রশ্নের কয়েকটি উপায় আছে। সেগুলো হচ্ছেঃ
একঃ তা হচ্ছে এই যে, কোনো অমুসলিম জাতির ১.[মনে রাখতে হবে যে, আমি অমুসলিম বলতে তাদেরকে বুঝিয়েছি যার মুসলমান নয় এবং কোনো ইসলামী রাষ্ট্র তাদের জান-মালের দায়িত্ব গ্রহণ করেনি] সম্পদ এভাবে দখল করা হলে ইসলাম এ দখলের পর দখলকারীকে ঐ সম্পদের ন্যায়সঙ্গত মালিক ঘোষণা করে। ফতহুল কাদীরেতে উল্লিখিত আছে যেঃ
“যদি তুরস্কের কাফেরগণ ইউরোপের কাফেরগণের উপর বিজয়ী হয় এবং তাদেরকে বন্দী করে তাদের ধন সম্পদ লুণ্ঠণ করে নেয়, তাহলে তারা তার মালিক হয়ে যাবে।” (-ফতহুল কাদীরঃ ৩য় খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা)
দুইঃ কোনো অমুসলিম জাতি কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের উপর পূর্ণ আধিপত্য লাভ করলো। এমতাবস্থায় ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ ও ইমাম আবু হানিফা প্রমুখ ইমামগণের ফতোয়া নিম্মরূপঃ
“আর যদি কাফেরগণ, খোদা না খাস্তা, আমাদের সম্পদ দখল করে বসে এবং তা তাদের নিজ দেশে নিয়ে যায়, তাহলে তারা তার অধিকারী হবে।” (-হেদায়া)
সুতরাং এমতাবস্থায় শুধু অমুসলিমই যে অমুসলিমদের সম্পদের ন্যায়সঙ্গত মালিক হয়ে যাবে তা নয়, বরং যদি মুসলমানদের সম্পদের উপরে কাফেরগণও পূর্ণ অধিকার লাভ করে, তাহলে ইসলাম এ অধিকারকেও সঙ্গত বলে স্বীকার করে নিয়ে কাফেরদেরকে এ সম্পদের মালিক মনে করে। এটা কি ইসলামের অসঙ্গত আচরণ?
রক্ষিত ও অরক্ষিত সম্পদ এবং তার বৈধতা ও অবৈধতা
যেহেতু শেষোক্ত প্রশ্নে অন্যান্য ইমামগণের সাথে ইমাম শাফেয়ী (র) দ্বিমত পোষণ করেছেন, সে জন্যে ইসলামী ফকীহগণ কুরআন, হাদীস এবং বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে এ আইনটির খাঁটি ইসলামী আইন হওয়া সম্পর্কে অত্যন্ত সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করেছেন। কিন্তু প্রবন্ধ দীর্ঘ হয়ে যায় বলে তা উদ্ধৃত করার প্রয়োজন নেই। আমি এখানে শুধু কুরআন হাদিস থেকে গৃহীত আইনগত সমালোচনারই উল্লেখ করছিঃ
“বৈধ মালের উপর কাফেরদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এজন্য এ অধিকার মালিকানার কারণ হবে।”
এর অর্থ এই যে, মুসলমানদের সম্পদ মুসলমানদের জন্যে তো নিসন্দেহে রক্ষিত। অপর কোনো মুসলমানের সম্পদ অন্যায় ভাবে গ্রহণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্যে নিষিদ্ধ। কিন্তু অপর জাতির জন্যে এ আইন চলে না। তাদের জন্য তো এ বৈধ হবে। শামী গ্রন্থে আছেঃ
“কারণ সম্পদের নিরাপত্তা তো একটি ইসলামী আইন। অনৈসলামী দেশের বাসিন্দাগণ এ আইনের আওতায় পড়ে না। এজন্য মুসলমানের সম্পদ তাদের জন্যে রক্ষিত নয়। অর্থাৎ তা তাদের জন্যে বৈধ। অতএব তারা তার মালিক হয়ে যাবে।” (–শামীঃ ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৭)
এখন স্বাভাবিকভাবেই তৃতীয় উপায়টি সামনে এসে যায়। তা এই যে, এভাবে যদি কোনো মুসলমান অমুসলিম দেশ ও সম্পদের উপর অধিকার লাভ করে, তাহলে সে তার মালিক হবে কিনা? এ আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতি অনুযায়ী এর জবাব অত্যন্ত সুস্পষ্ট। যদি অমুসলমান মুসলমানের সম্পদের মালিক হয়ে যেতে পারে তাহলে ধর্ম, দ্বীন, নৈতিকতা ও আইনের দিক দিয়ে এ অধিকার মুসলমানের কেনো হবে না? বাদায়েতে বলা হয়েছেঃ
“অর্থাৎ যে অমুসলমানের জান ও মালের দায়িত্ব কোনো ইসলামী রাষ্ট্র গ্রহণ করেনি, তার সম্পদ বৈধ। কারণ এ ধরণের অমুসলমানের সম্পদ রক্ষিত নয়।”
কি আশ্চর্যের কথা এই যে, যে জাতি নিজেদের জান ও মালের দায়িত্ব মুসলমানদের উপর অর্পণ করেনি, ইসলামের রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্ব যারা অস্বীকার করে, তাহলে ইসলাম তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করবে না তো কি করবে? তুমি যদি আল্লাহ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন কর তো আল্লাহ কেন তোমার জান-মালের দাতিত্ব গ্রহণে অস্বীকার করবে না? এজন্য কুরআনে উল্লিখিত আছেঃ
“মুশরিকদের দায়িত্ব থেকে আল্লাহ মুক্ত।” (–সুরা আত তাওবাঃ ৩)
দুনিয়ার সকল জাতিই যখন সুযোগ ও ক্ষমতা পেলে মুসলমানদের জান-মাল ও রাষ্ট্র দখল করে নেয় তখন এছাড়া আর কোনো উপায় হতে পারে কি? কুরআন যেমন স্বয়ং বলেছেঃ
“তারা যদি তোমাদের উপর বিজয়ী হয়, তাহলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যায়, তোমাদের উপর অত্যাচার করে ও কটূ ভাষা প্রয়োগ করে। তারা তো এটাই চায় যে, তোমরাও কাফের হয়ে যাও” (–সুরা মুমতাহিনাঃ ২)
এ কুরআনের সাক্ষ্য এবং প্রকৃত ঘটনার পরও যদি মুসলমানদের ধর্ম তাদেরকে এ অনুমতি না দিত, তাহলে তা কি অন্যায়? কুরআন অতপর এ নির্দেশ দেয়ঃ
“আহলে কেতাবদের মধ্যে যারে আল্লাহ এবং আখিরাতের উপর ঈমান আনে না এবং আল্লাহ ও তার রাসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না এবং যারা সত্য দ্বীনকে তাদের জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ কর।” (-সুরা আত তাওবাঃ ২৯)
তাহলে কি তাদের কল্যাণ ইসলামী ফকিহগণ কর্তৃক আলোচিত নীতি বহির্ভূত অর্থাৎ মুসলমানদের রাষ্ট্র ও সম্পদ যেরূপ অমুসলিমদের জন্যে স্বয়ং ইসলামী আইন অনুযায়ী বৈধ হবে তদ্রূপ তারা এবং তাদের সম্পদও আল্লাহ্ ও তার রসূলের শরীয়ত ও আইন অনুযায়ী বৈধ হবে। যদি মুসলমান তার উপর অধিকার লাভ করে তাহলে তারা তার সত্যিকার মালিক হবে এবং তা সকল প্রকার ব্যয় ও হস্তান্তরের অধিকার লাভ করবে।১.[সম্পর্কচ্ছেদ ও যুদ্ধ শুধু সেই সব অমুসলিমদের সাথে যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত। কিন্তু যেসব অমুসলমান মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করে না এবং যারা জিম্মীও নয় তাদের জন্য এ বিধান নয়; এরূপ মনে করা কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। (আরবী*******) এ বাক্যে আল্লাহ্ তায়ালা বেসামরিক বাণিজ্যিক কাফেলারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিনা? সাহাবাগণের ইচ্ছাও তাই ছিল। এমন করা যদি হারাম হতো, তাহলে কুরআনে এর প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়ে আবু বসীর সাহাবী এবং তাঁর বন্ধুদের জীবিকা নির্বাহ বেসামরিক বাণিজ্যিক কাফেলার অরক্ষিত সম্পদ দ্বারাই হতো, আবু যরও এক সময় এসব সম্পদই ভক্ষণ করতেন। মোটকথা সামরিক হোক অথবা বেসামরিক, আমীরের অনুমতি থাকুক বা না থাকুক, জিম্মী নয় এমন কাফেরের প্রাণ ও সম্পদ হালাল। আবু বকর জাসসান তার তাফসীরে বলেনঃ
(আরবী********) ফকীহগণের মধ্যে এমন কাউকে আমরা জানি না, যিনি যেসব মুশরিক আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করা ছেড়ে দিয়েছে, তাদের সংগে যুদ্ধ করতে নিষেধ করেন। সত্যিই মুসলিমের একটি হাদীস আছেঃ
(আরবী********) রসূলুল্লাহ (স) বলেন, তোমরা যে গ্রাম বা জনপদের উপরেই বিজয়ী হবে, তা তোমরা ভাগ করে নিবে- এতে তোমাদের অংশ আছে। আর আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যে গ্রাম বা জনপদ গনীমত স্বরূপ তোমাদেরকে দিয়েছেন, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্ ও তার রসূলের জন্যে এবং অবশিষ্ট তোমাদের। কাযী এযায এর ব্যাখ্যায় বলেন, গ্রাম অর্থ যা মুসলমানগণ ঘোড়া অথবা বাহন দ্বারা জয় করেনি। বরঞ্চ সেখানকার অধিবাসী গ্রাম ত্যাগ করে চলে গেছে ও সন্ধি করেছে। এতে ‘ফাই’-এর মতো তাদের অংশ থাকবে। -(গিলানী)
মাওলানা মওদূদীর মন্তব্যঃ- মাওলানার এখানে একটা বড় ভুল হয়েছে। তিনি যুদ্ধরত(Belligerent) এবং যারা যুদ্ধরত নয় (Non-beligerent) – এ দু এর মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা ভুলে গেছেন। যুদ্ধরত তো সে জাতি যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছে। এ জাতির কোন ব্যক্তি বা দল কার্যত যুদ্ধে লিপ্ত (Combatant) থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় তার সম্পদ বৈধ। আমরা তাদের বাণিজ্য কাফেলাগুলো আটক করতে পারি। তাদের লোকজন আমাদের হাতের মধ্যে এলে তাদেরকে ধরে ফেলবো। এবং তাদের সম্পদ হস্তগত করবো। মাওলানা গিলানী যতগুলো দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, তা সবই এই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। কিন্তু যে জাতি আমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত নয়, তাদের সাথে চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, তাদের সম্পদ আমাদের জন্য বৈধ নয়। কুরআনে এ সম্পর্কে বিশদভাবে বলা হয়েছেঃ
আরবী*********) “আল্লাহ্ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না তাদের সাথে সদ্ব্যবহার ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতে, যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের গৃহ থেকে বহিষ্কার করেনি- (মুমতাহিনাঃ ৮)।” এটা বিবেক ও ইনসাফের কথা। নতুবা মুসলমানদের জন্যে নিরংকুশভাবে যদি জিম্মী নয় এমন অমুসলিমদের সম্পদ বৈধ হতো, যেমন মাওলানার বিবরণে জানা যায়, তাহলে বিশ্বের জাতিসমূহের মধ্যে মুসলিম জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি(আরবী******) হবার পরিবর্তে একটি লুণ্ঠনকারী জাতি বলে গণ্য হবে। অপর জাতির উপর দস্যুবৃত্তি করাই তাদের জীবিকা বলে গণ্য করা হবে এবং তাদের অস্তিত্ব পৃথিবীর জন্য এক সাধারণ বিপদ হয়ে পড়বে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, অমুসলিম যদি মুসলমানদের সম্পদ অন্যায়ভাবে হস্তগত করে তার মালিক হতে পারে, তাহলে মুসলমান তাদের সম্পদ অধিকার করার অনুমতি লাভ করবে না কেন? প্রকৃতপক্ষে এ ব্যাপারটিও যুদ্ধাবস্থার সাথে সম্পর্কিত। শান্তির সময়ে ইসলাম স্বীয় প্রজাদেরকে যুদ্ধে লিপ্ত নয় এমন জাতির উপর দস্যুবৃত্তি করার অনুমতি দেয় না। তবে হ্যাঁ অন্য জাতির লোক যদি মুসলমানদের উপর দস্যুবৃত্তি শুরু করে, তাহলে তাদের মধ্যে এবং মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হবে মুসলমানদের জন্যে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ বৈধ হয়ে যাবে। কুরআনে যেখানে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে সুস্পষ্টভাবে একথা বলা হয়েছে (আরবী*******) অন্যায়ের সূচনা তাদের পক্ষ থেকে হয়েছে। সুতরাং মুসলমান লুণ্ঠন ও গ্রাস করার কাজ প্রথমে শুরু করবে না। বরঞ্চ সূত্রপাত যখন তাদের পক্ষ থেকে হবে, তখন চুক্তি অবস্থায় (আরবী*******) (তাদের দিকে তা সমানভাবে প্রত্যার্পণ করা) এ বিধানের উপরে এবং পূর্ব থেকে কোন চুক্তি না হয়ে থাকলে যুদ্ধ ঘোষণার উপরে কাজ করতে হবে। অতপর গোটা জাতি যুদ্ধরত বলে গণ্য করা হবে এবং তাদের জান ও মাল বৈধ হয়ে যাবে।]
মূল আলোচ্য বিষয়ে প্রত্যাবর্তন
মোটকথা আসল আলোচ্য বিষয় এই ছিল যে, অনৈসলামী দেশে একজন মুসলমানের জীবন পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত এবং সেখানকার আধিবাসীদের সাথে তার সম্পর্কের ধরনটা কিরূপ হবে? মাঝখানে অন্য একটি প্রশ্নের প্রসংগ এসে গেছে।
কথা তো অতি সাধারণ ছিল। কিন্তু ভুল ধারণা অপনোদনের জন্যে আমাকে আলোচ্য বিষয় থেকে একটু দূরে যেতে হয়েছিল। এখন আমি আমার আসল বক্তব্যের দিকে ফিরে আসছি। আমি বলছি যে, নিরাপত্তাপ্রাপ্ত মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে যে দেশে সে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা গ্রহণ করে প্রবেশ করেছে সে দেশের প্রচলিত আইন পুরোপুরি মেনে চলা। কারো জান-মাল ও ইজ্জত-আবরুর উপর হস্তক্ষেপ করে প্রচলিত আইন ভংগ করা হবে বিশ্বাসঘাতকতা আর বিশ্বাসঘাতকতা করা কুরআন-হাদীস ও সর্বসম্মত মতানু্যায়ী হারাম। মোটকথা, প্রচলিত আইন মেনে চলা তার ধর্মীয় কর্তব্য। আমি বলছি যে, দেশের আইন পরিপন্থী ডাকের খামে বিনা টিকেটে আধা আনা পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি করা এবং রেলে মাল পাঠানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট ওজনের ওপর বিনা ভাড়ায় এক পোয়া ওজন বৃদ্ধি করা জায়েয নয়। এ কারণেই মুসলমান অপেক্ষা অধিকতর শান্তি প্রিয় জাতি ধর্মের দিক দিয়ে আর কেউ হতে পারে না।
কিন্তু প্রশ্ন তখনই উঠে, যখন ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে একটি কাজ নাজায়েয হয়। যেমন ধরুন, সুদের বিষয়টি। সুদের মাধ্যমে অপরের অর্থ গ্রহণ করা ইসলামের লিখিতরূপে হারাম। শুধু জনসাধারণই এ কাজ করতে পারে না, বরঞ্চ সরকারও বিরাট আকারে বিভিন্ন উপায়ে সুদী লেনদেন করে। এ অবস্থাতে মুসলমানদের কি করা উচিত? একথা ঠিক যে, এ অবস্থায় যদি নিরাপত্তাপ্রাপ্ত মুসলমান সুদের মাধ্যমে সে দেশের অমুসলিম অধিবাসীদের সম্পদ লাভ করে, তাহলে চুক্তিভংগ, আইন ভংগ অথবা বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে সে অপরাধী হবে না। এ দিক দিয়ে ধর্মত সে চুক্তি আইনে কোনোমতেই অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে না।
এখন আলোচ্য এই যে, সে কি অন্যের কাছ থেকে এমন কোন সম্পদ হস্তগত করেছে যা দেশের আইন অনুযায়ী বৈধ হলেও ধর্ম ও আল্লাহ্ নিষিদ্ধ করেছেন? অথবা অন্য কথায় সে এমন সম্পদ হস্তগত করেছে যা আইনত না হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ, বরঞ্চ রক্ষিত। একটু আগেই আমরা জানতে পারলাম যে, শরীয়ত (ইসলামী আইন) অনুযায়ী এ ধরণের সম্পদ মুসলমানদের জন্য অরক্ষিত এবং বৈধ।১.[যদি মাওলানার এ আইনের ব্যাখ্যা মেনে নেয়া যায়, তাহলে তার অর্থ এই হবে যে, ভারতে কোন অমুসলিমের ধন-সম্পদ যদি লুণ্ঠন করা হয়, চুরি, ঘুষ অথবা আত্মসাৎ করে হস্তগত করা যায়, তাহলে এসব কাজ যে মুসলমান করবে, সে শুধু দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধী হবে। আর ধর্মের দিক দিয়ে তাকে গোনাহগার মনে করা হলেও শুধু এ কারণে যে, সে চুক্তি আইনের বিপরীত কাজ করেছে। তাকে এজন্য গোনাহগার মনে করা হবে না যে, সে ঐসব কাজ করেছেন যা ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। উপরন্তু যদি কোন অমুসলিম রাষ্ট্রে কোন মুসলিম নারী বেশ্যাবৃত্তি করে এবং অমুসলিমদের নিকট থেকে দেহ ব্যবসার বিনিময়ে (নাউজুবিল্লাহ) মূল্য গ্রহণ করে, তাহলে এ বেশ্যাবৃত্তি লব্ধ অর্থ তার জন্যে হালাল ও পবিত্র হবে। কারণ অমুসলিম রাষ্ট্রের আইন তার এ পেশাকে বৈধ মনে করে এবং এ বেশ্যাবৃত্তির জন্যে তাকে লাইসেন্সও প্রদান করে। অতএব সে চুক্তি আইন ভংগের অপরাধে অপরাধী হবে না এবং ইসলামী শরীয়ত যখন জিম্মী নয় এমন কাফেরের সম্পদ বৈধ বলে ঘোষণা করে, যে কোন উপায়েই সে সম্পদ হস্তগত করা হোক না কেন-তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতেও সে হারাম ভক্ষণের অপরাধে অপরাধী হবে না। সম্ভবত মাওলানা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না। কিন্তু তাঁর যুক্তি প্রদর্শনের ধরণ থেকে এ সিদ্ধান্তেই পৌঁছতে হয়।-(মওদূদী) ]
অতপর একজন মুসলমানের করণীয় কি হতে পারে? কুরআন এবং ধর্ম যাকে অরক্ষিত এবং বৈধ বলছে, সে কি আপন ধর্মের বিরোধিতা করে তাকে রক্ষিত ও অবৈধ বলবে? এ এক অবোধগম্য ব্যাপার যে, যে সম্পদকে আইন নাজায়েয বলছে না এবং শরীয়তও হারাম বলছে না, বরঞ্চ তা হস্তগত করার আদেশ করছে, হতভাগ্য মুসলমান সে জায়েযকে নাজায়েয এবং হালালকে হারাম কিরূপে করবে? সে কি রাষ্ট্রীয় আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে অথবা শরীয়তের নির্দেশ ভংগ করবে? এর পরে মুসলমানদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল আছে কি?
ইসলামী আইনের এ সংকটজনক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী শরীয়তের সবচেয়ে সতর্ক এবং কিছুসংখ্যক লোকের মত কঠোর ইমাম, ইমামকুল শিরমনী, ধার্মিক প্রবর, তাবেয়ী ও মুজতাহিদ ইমাম আবু হানিফ (র)-এর ফতোয়া ইমাম মুহাম্মদ সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তার ‘সিয়ারে কবীর’ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেনঃ
(আরবী********)
“যখন মুসলমান নিরাপত্তা চুক্তি করে দারুল হরবে১.[দারুল হরবের অর্থ হলো সেই অমুসলিম রাষ্ট্র যা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত, যার সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন চুক্তি নেই এবং যেখানে ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিকগণ যুদ্ধাবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে নিরাপদ বাণিজ্যের অনুমতিপত্র নিয়ে (Safe conducts of trade Licenses) যুদ্ধের সাথে সম্পর্কহীন (Non-hostile intercourses) এমন কাজ কারবারের জন্যে গমনকারী হানাফী আইনের এ ধারাকে এখন দারুল কুফরের প্রতি আরোপিত করা যায় না। যেখানে মুসলমানদের একটি দল যুদ্ধরত ও নিরাপ্ততাপ্রাপ্ত হিসেবে নয়, বরঞ্চ সে দেশের প্রজা বা নাগরিক হিসাবে বসবাস করে এর আপন সাধ্যমত ব্যক্তিগত আইন মেনে চলার অধিকার থাকে। মাওলানার দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক ভ্রান্তি এই যে, তিনি প্রত্যেক গায়ের জিম্মী কাফেরকে যুদ্ধরত (শত্রু) এবং প্রত্যেক অনধিকৃত দেশকেই দারুল হরব (Enemy country) মনে করেছেন। ইসলামের আন্তর্জাতিক আইনের এটা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা। অমুসলিমদের জান ও মাল শুধু মাত্র যুদ্ধাবস্থায় বৈধ হয় এবং তাও ইসলামী রাষ্ট্রের জন্যে সে অমুসলিম রাষ্ট্রের মুসলমান প্রজাদের জন্যে নয়, যে রাষ্ট্রকে আপনি হারবী যুদ্ধরত বলেছেন। হানাফী আইনের উদ্দেশ্য শুধু ততটুকু যে, যখন কোন মুসলমান নিরাপত্তা নিয়ে শত্রু দেশে যায়, তখন সে সেখানে অবৈধ চুক্তিতেও ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। দুটো কারণে এ অনুমতি দেয়া হয়। এক এই যে, দুশমনদের সম্পদ আসলে বৈধ। তা বলপূর্বক কেড়ে নেয়া যখন বৈধ। তা বলপূর্বক কেড়ে নেয়া বৈধ, তখন অবৈধ চুক্তি অনুসারে তো অধিকতর জায়েয হওয়া উচিত। দ্বিতীয় কারণ এই যে, যুদ্ধের অবস্থা একটি জরুরী অবস্থা (Emergency) এবং জরুরী অবস্থায় হামার হালাল হয়ে যায়।- (মওদূদী)] প্রবেশ করে তখন সেখানকার অমুসলিম অধিবাসীদের সম্মতিক্রমে যে কোন উপায়ে তাদের সম্পদ হস্তগত করলে তাতে কোন দোষ হবেনা। ২.[এ শব্দগুলোর সাধারণ অর্থবোধ হওয়াটা চিন্তার বিষয়। যদিও ইমাম মুহাম্মদ (র) এরূপ বলেছেন, কিন্তু তা বিনা শর্তে মেনে নেয়া যেতে পারে না। নতুবা মুসলমান দারুল হরবে গিয়ে মদের ব্যবসা করলে, বেশ্যালয় খুলে দিলে অথবা কোন মুসলিম নারী দেহব্যবসা করলে তা জায়েয হবে।-(মওদূদী)] কারণ সে চুক্তি ভংগ না করেই একটি বৈধ বস্তু গ্রহণ করেছে। অতএব এ সম্পদ বা বস্তু তার জন্যে হালাল এবং পবিত্র হবে।”
একথা সুস্পষ্ট যে, এ ফতোয়া এ অন্ধকার যুগের নয় যখন মুসলমান একটি বিজিত জাতি। যে সময়ে ইমাম (র) সাহেব শরীয়ত থেকে আইনের এ ধারাটি রচনা করেছিলেন, তখন কেউ ধারণাই করতে পারেনি যে, মুসলমানদের কাজকর্মে, আকীদা-বিশ্বাসে ও আচার-আচরণে এতটা অবনতি ঘটবে যা ইউরোপের রূপ নিয়ে হঠাৎ প্রকাশ হয়ে পড়বে।১.[সম্ভবত ইমাম আবু হানিফা (র)-এর ধারণা ছিলো না যে, যে বিধান তিনি শত্রু দেশে নিরাপত্তা সহকারে গমকারী ব্যবসায়ী অথবা ভ্রমণকারীদের জন্যে দিয়েছিলেন, তা অমুসলিম রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী কোটি কোটি মুসলমানদের উপর প্রযোজ্য হবে যারা মুসলিম রাষ্ট্রে এতটুকু স্বাধীনতা অবশ্যই ভোগ করে যাতে তাঁরা ইসলামের অর্থনৈতিক ও তামাদ্দুনিক বিধান মেনে চলতে পারে। ইমাম সাহেব যে আইন বর্ণনা করেছেন তা শুধু এমন দারুল হরব (যুদ্ধরত দেশ) সম্পর্কে, যেখানে দারুল ইসলামের কোন মুসলমান ব্যবসার উদ্দেশ্যে নিরাপত্তাসহ গ্রহণ করে। তার এ উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না যে, মুসলমান যেখানে অমুসলিম রাষ্ট্রের অধীনে বিরাট সংখ্যায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে সেখানে তাঁরা ইসলামের অর্থনৈতিক আইন থেকে বেপরোয়া থাকবে এবং যেসব অর্থনৈতিক লেনদেন ইসলাম হারাম করেছে, তা সেখানে কথা যেতে পারে। এখানে বরঞ্চ মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে যথাসম্ভব অনৈসলামিক অরথব্যবস্থা থেকে দূরে থাকা এবং প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তন করে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেদের সামগ্রিক শক্তি নিয়োজিত করা। কিন্তু মাওলানা (গিলানী) যেভাবে ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা করেছেন, তার মূল এই হবে যে ভারতের কয়েক কোটি মুসলমান নিজেদের জাতীয় শক্তি দেশের অর্থনৈতিক ও তামাদ্দুনিক সংস্কার সাধনে নিয়োজিত করার পরিবর্তে স্বয়ং এ ভ্রান্ত ব্যবস্থায় মিশে একাকার হয়ে যাবে। – (মওদূদী)] এমন কি মহৎ লোকগণ দাস জাতিকে দাসত্বের খোয়াড়ের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবার জন্যে নিজেদের উত্তরাধিকার গওসী ও কুতুবী উত্তরাধিকারে এমন সব বাঘ ছেড়ে দিয়েছেন, যারা সবার উপর অনুগ্রহ করলেও যাদের কর্তব্য ছিল ইবাদত করা তাদের জন্যে কোন অনুগ্রহ নেই এবং কোথাও নেই।
ফকীহগণ যখন এ বিষয়টির উল্লেখ করেন। যেমন ধরুন কোন মুসলিম দেশের উপর অনৈসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন মাঝখানে (আরবী*******) (খোদা না করুক, অর্থাৎ আল্লাহ্র কাছে মুসলমানদের এমন দুর্ভাগ্য থেকে আশ্রয় চাই) বাক্যটি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ এমনটি মনে করতেও তাঁরা ঘাবড়িয়ে যেতেন।
এমতাবস্থায় মনে করা যেতে পারে যে, ইমাম আযম কোনো সময়ে প্রয়োজনের সামনে নয়, বরঞ্চ শরীয়তের কঠোর বাধ্য-বাধকতার সামনে মাথা নত করেছেন। আর প্রকৃত ব্যাপার এই যে, শুধু কুরআনই নয় বরঞ্চ নবী মুস্তফা (স) থেকেও প্রামান্য সূত্রে এ ফতোয়ার সত্যতা প্রমাণিত হয়। আবু বকর সিদ্দিক (রা) রোম-ইরান যুদ্ধের সময় কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর উপর জোর দিয়ে একটি অনৈসলামিক সমাজে অর্থাৎ মক্কা শহরে (তখনও মক্কা ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়নি) কুরাইশদের নিকট এই বলে বাজি রেখেছিলেন যে, কুরাআনের ভবিষ্যৎবাণীই সত্যে পরিণত হবে এবং তা যখন সত্যে পরিণত হল, তখন স্বয়ং নবি করীম (সঃ) ঐ বাজির উট নিতে আদেশ দেন এবং তা ওয়ারিশদের নিকট থেকে আদায়ও করা হয়েছিল-(তিরমিযি)। ১.[তিরমিযিতে এইসব বিষয়ের বিশদ বিবরন রয়েছে যে,এ বাজি তখন ধরা হয়েছিল, যখন বাজি হারাম হওয়ার নির্দেশ জারি হয়নি। ইবনে জারিরের তাফসীরেও এর বিশদ বিবরন আছে।তাফসীরে বায়্জাবিতে আছে যে,হজরত আবু বকর (রা)এর বাজির মাল উবাই বিন খালফের নিকট থেকে নিয়ে নবীর খেদমতে পেশ করেন। নবী তা সদকা করে দিতে বলেন। এর থেকে বুঝতে পারা যায় যে,এ মাল ছিল মাকরূহ। দুশমনের কাছ থেকে নেয়া হল বটে। কিন্তু নিজের জন্য তা ব্যবহার করা সমীচীন মনে করা হল না।-(মওদুদী)]
ইসলামী ফকিহগণ এই ঘটনা থেকে এই আইনের সত্যতা ঘোষণা করেন। নতুবা এই কথা সুস্পষ্ট যে, এ ধরনের বাজি রাখা সুস্পষ্ট জুয়া-যার হারাম হওয়া কুরআন থেকে প্রমাণিত আছে।
দারুল হরবে সুদ হালাল নয় ‘ফাই’ হালাল
লোকের মধ্যে এই এক অদ্ভুত কথা প্রচলিত আছে যে,অনৈসলামিক রাষ্ট্রে সুদ হালাল হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসল সমস্যা বুঝতে এ ব্যাখ্যাই প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায়। নতুবা এই মাসয়ালাটির বুনিয়াদ কুরআনের যে আইনটি, তদনুযায়ী এই কথা বলা ভুল যে, যে জিনিস একদা হারাম ছিল তা হালাল হয়ে গেছে। অথচ ব্যাপার এইযে, যে জিনিস বরাবর হালাল ছিল তাই হালাল হয়েছে আল্লাহ যে বস্তুকে হালাল ও পবিত্র ঘোষনা করেছেন ইমাম আজম তাকেই পবিত্র বলেছেন। নতুবা একজন মুসলমানের কি অধিকার আছে যে, যে বস্তুকে কুরআন হারাম করেছে তাকে নিজের খেয়াল খুশি মত অথবা সাধারন আনুমানিক তথ্যের উপর নির্ভর করে হালাল করে দিবে? বিশেষ করে এমন এক ব্যক্তি যে ‘খবরে ওয়াহিদ’ (এক ব্যক্তির বর্ননা) এ নির্ভর করে কুরআনের সিদ্ধান্তের উপর কিছু বাড়িয়ে দেয়া কিছুতে জায়েজ মনে করে না। এজন্য আরবি (আরবী*******) (প্রচলিত আইনের বৈধকৃত যে কোনো পন্থায় সে মাল পাওয়া যাক না কেন) এ সাধারন নীতি ছাড়াও ইমাম আবু হানিফা শুধু সুদকেই নয় বরঞ্চ জুয়ার ওইসব পন্থায়ও সম্পদ লাভ বৈধ বলেছেন যা প্রচলিত আইনে বৈধ নয়। দৃষ্টান্তসরূপ জীবন বিমার কথাই ধরা যাক। ২.[হানাফি ফেকাহ মতে দারুল হরবের যেসব বিধান যুদ্ধ সম্পর্কিত তা ভারতের উপর আরোপ করে মাওলানা মারাত্তক ভুল করেছেন।তার অর্থ এই দাড়ায় যে,ভারতে জুয়া,ফটকাবাজি,লটারি,ঘোড় দৌড় প্রভৃতির মাধ্যমেও মুসলমান অর্থ উপার্জন করতে পারে আর এই লব্ধ অর্থ তার জন্য পবিত্র।এর উপরে যদি ফতোয়া হয়ে হয়,তাহলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মুসলমান অমুসলমানের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না এবং অর্থনৈতিক জীবনে ভারতের সকল মুসলমানঅমুসলমান হয়ে পড়বে। আসল ভুল এইযে,মাওলানা এমন প্রত্যেক অমুসলমানের সম্পদ বৈধ মনে করেছেন যার কোনো দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্র গ্রহন করেনি।অথচ এইরূপ ধারনার পেছনে কুরআন ও হাদিসের কোনো সমর্থন নেই।দ্বিতীয় ভুল এই যে,ইসলামী পরিভাষায়,যে দারুল কুফর দারুল হারব নয়,তাকে তিনি দারুল হরব বলছেন।এটা শুধু অপব্যাখ্যাই নয়।বরঞ্চ পরিনামের দিক দিয়ে মুসলমানদের জন্য জাতীয় জীবনে জন্য ধংসাত্মকও বটে।ভারত নিসন্দেহে সে সময় দারুল হরব ছিল,যখন ইংরেজ সরকার এখানে ইসলামী রাষ্ট্র বিনাশ সাধনের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। সে সময়ে মুসলমানদের কর্তব্য (ফরজ)ছিল,ইসলামী রাষ্ট্র রক্ষার জন্য জীবন বিসর্জন দেয়া অথবা অকৃত্কার্জ হওয়ার পর এখান থেকে হিজরত করে অন্যত্র চলে যাওয়া।কিন্তু যখন তারা পরাজিত হল,এখানে ইংরেজ সরকার প্রতিষ্ঠিত হল এবং মুসলমানগন তাদের ব্যক্তিগত আইন পালন করার স্বাধীনতাসহ এখানে বসবাস করা স্বীকার করে নিল,তখন এই দেশ আর দারুল হরব রইল না।বরঞ্চ এমন এক দারুল কুফর হয়ে গেল, যেখানে মুসলমানগন নাগরিক হিসেবে বসবাস করে এবং দেশীয় আইনের নির্ধারিত সীমা রেখার মধ্যে নিজেরদের ধর্ম-কর্ম মেনে চলার স্বাধীনতা ভোগ করে।এমন দেশকে দারুল হরব বলে ঘোষনা করা এবং দারুল হরবে মুসলমানদের জন্য নিছক জরুরী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সেসব এখানে প্রয়োগ করা ইসলামী আইনের মূলনীতির সম্পুর্ন পরিপন্থী ও অত্যন্ত বিপদজনকও। আর পরিনাম ফল এই হবে যে,অ দেশে ইসলামী আইন মেনে চলার যে যৎকিঞ্চিত অধিকার রয়েছে,তা তারা নিজেরাই ছেড়ে দেবে।শরিয়তের যে অবশিস্ট সীমারেখাটুকু তাদের জাতীয় সত্তাকে রক্ষা করে চলেছে,তাও আর টিকে থাকবে না।ফলে মুসলমান অনৈসলামিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে মিশে যাবে।যাদের কোনো সামাজিক ও সামগ্রিক শক্তি নেই এবং যারা চারদিক থেকে দুশমন কর্তৃক পরিবেষ্টিত, মুসলিম জাতির এরূপ বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় ইসলাম তার আইনের কঠোরতা শিতিল করে কিছু সুযোগ-সুবিধা দান করে।তার সাথে এই আদেশও দেয় যে, এ অবস্থায় তারা যেন নিশ্চিন্তে বসে না থাকে,বরঞ্চ যত শীগ্রই সম্ভব দারুল ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। মাওলানা এই সুযোগ-সুবিধাগুলোকে এমন এক জাতির জন্য সাধারন করে দিচ্ছে যারা সংখ্যায় কয়েক কোটি এবং এ দেশের স্থায়ী অধিবাসী।দারুল হরবের বিধান এই জাতির জন্য কিছুতেই প্রযোজ্য নয়। ইসলামী বিধানগুলোতে যেগুলো যত বেশী পরিমানে সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করাই শুধু তাদের উচিত নয় বরঞ্চ তাদের উচিত দারুল কুফরকে দারুল ইসলামে রুপান্তরিত করার জন্য সকল শক্তি নিয়োগ করা। -(মওদূদী)] আলেম সমাজের মতে এই হচ্ছে জুয়া, আর সুদের এক সংমিশ্রিত রূপ। কিন্তু সিয়ারে কবিরে ইমাম মুহাম্মদ আজমের বরাত দিয়ে বলেনঃ
(আরবী*******)
যদি অমুসলিমদের কাছ থেকে জুয়ার মাধ্যমে সম্পদ লাভ করা হয়, তাহলে তার সবটুকুই তার জন্য হালাল ও পবিত্র হবে।
সুদের খ্যাতির কারনে সম্ভবত ঈমাম মাকহুলের সেই মুরসাল হাদিস যা এই মাসালার সমর্থনে পেশ করা। মাকহুল মুহাদ্দিসগণের মতে একজন নির্ভরযোগ্য রাবী।তার বর্ণিত হাদিসটি এইঃ
(আরবী********)
“নবী করীম (স) বলেন যে, হরবী অমুসলমান ও মুসলমানের মধ্যে দাস বলে কিছু নেই।“
লোক এর কি অর্থ গ্রহন করে জানি না। নতুবা প্রকাশ্য শব্দ গুলার দ্বারা যা কিছু বুঝতে পারা যায় তাহচ্ছে এই যে, একজন মুসলমান ও জিম্মি নয় এমন একজন অমুসলমানের মধ্যে যদি সুদের লেন-দেন হয়, তাহলে তা সুদ হবে না। বরঞ্চ কুরআনের বৈধতা আইন অনুযায়ী এ মাল মুসলমানের জন্য হালাল ও পবিত্র।
মোটকথা, ইসলামী শরিয়ত,কুরআন,হাদিস ও সাহাবাগণের কার্যকলাপ অনুযায়ী এ এমন একটি সুস্পষ্ট আইন যা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। লোক মাকহুলের মুরসাল হাদিসটির বিশ্বস্থতা ও অবিশ্বস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উথাপন করে। অথচ এই সব তো (প্রসংগটির) সমর্থনে পেশ করা হয়। নতুবা ব্যাপার এই যে, এই ধরনের সম্পদের হালাল হবার বিধানতো কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। আল্লামা ইবনে হুমাম ঠিকই বলেছেনঃ
(আরবী********)
“পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্যাপার এই দাড়ায় যে,মাক্হুলের বর্ননা যদি উদ্বৃত না-ই হয়,তথাপি উপরে বর্ণিত চিন্তা-ধারা এর অনুমতি দেয়।”-(ফতহুল কাদির খঃ ৭ পৃষ্ঠা ১৭৮)
‘বাদাএ’ -র গ্রন্থাগারের উপর ভিত্তি করে ইমাম আবু হানিফা (র) এর মতের সঠিক ব্যাখ্যা নিন্মরূপ করেছেন:- (আরবী********)
“এর উপর ভিত্তি করে এই ফতোয়া যে, যদি কোনো মুসলমান অথবা জিম্মি দারুল হরবে শান্তি চুক্তি সহকারে প্রবেশ করে এবং কোনো অমুসলিমের সাথে সুদের কারবার করে অথবা এমন কোনো কারবার করলো যা ইসলামী আইন অনুযায়ী অবৈধ,তাহলে সে কারবার জায়েজ হবে।”
‘ফাই’ ও ‘ফাও’-এর পরিভাষা
এজন্য আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান মতে এধরনের সকল উপার্জিত অর্থ বা সম্পদ যা অনৈসলামী রাষ্ট্রে মুসলমানদের হস্ত গত হয়,তাকে সুদ জুয়া প্রভৃতি নাম অভিহিত করার পরিবর্তে তার একটি বিশিষ্ট নাম ‘ফাই’ রাখা যেতে পারে।
যার অর্থ এই যে, সে অর্থ বা সম্পদ কোনো প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ ব্যতিরেকেই অন্য জাতির নিকট থেকে শান্তিপুর্ন উপায়ে প্রচলিত আইন অনুযায়ী মুসলমানদের হস্তগত হয়। ১.[শামি গ্রন্থে আছেঃ
(আরবী********)
“যুদ্ধ না করে এবং বল প্রয়োগ না করে যাকিছুই তাদের (অমুসলমানদের) কাছ থেকে নেয়া হবে,যেমন,কর অথবা সন্ধির টাকা, তা গনিমতের মাল ও হবে না এবং ‘ফাই’ ও হবে না। কিন্তু তার উপরে ফাই-এর বিধান বর্তাবে।”
ফতহুল কাদিরে আছেঃ
(আরবী********)
“কাষ্ঠ সংগ্রহ করা এবং মাছ শিকার করা যেমনি জায়েজ, তেমনি এই ধরনের উপার্জিত মালও জায়েজ।”
সুবুলুস সালাম গ্রন্থে ‘ফাই’ এর সংজ্ঞা নিম্ন রূপ বর্ননা করা হয়েছেঃ
(আরবী*******)
“যুদ্ধবিগ্রহাদী ও জিহাদ না করেই মুসলমানগন কাফেরদের নিকট থেকে যে সম্পদ লাভ করে,তাহলো ‘ফাই’।”
বনী নজিরের ভূসম্পত্তি সম্পর্কে কুরআন বলেঃ
(আরবী********)
“যার জন্যে ঘোড়া এবং উটের সাহায্যে তোমরা চেস্টা-চরিত্র করনি।”
সমস্ত হাদিস গ্রন্থেই আছে যে, এই ফাই-এর অর্থ দ্বারাই নবী পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যয় বির্বাহ করা হতো। -(গিলানি) ] আমার মনে পড়ছে যে, হিন্দিতে ‘ফাও’ বলে একটি শব্দ আছে যার যার উচ্চারন প্রায়ই ‘ফাই’ এর মতো। আর সম্ভবত কিছুটা অর্থ সেই অর্থই প্রকাশ করে। বিশিষ্ট লোকেরাতো এইসব উপার্জনকে ফাই-এর উপার্জনই বলবে।কিন্তু সাধারন লোক (আরবী) অক্ষর উচ্চারন করতে না পারলে ‘ফাও’ বলবে। এ পরিভাষা নির্ধারন করার একটা বিশেষ প্রয়োজন ও আছে। কারন কতিপয় নির্ভরযোগ্য মুসলমানের পক্ষ থেকে এই মাসয়ালাটির ব্যপারে কিছু আশংকা প্রকাশ করা হয়। তাদের ধারনা এই যে, যদি এই মাসয়ালাটি ঘোষনা করা হয়, তাহলে সম্ভবত দীর্ঘদিন পরে মুসলমানগন এই কথা ভুলেই যাবে যে, সুদ, জুয়া, প্রভৃতি দ্বারা উপার্জন শরিয়তে হারাম ছিল কিনা। এজন্য আমার ধারনা এইযে, এসব লব্ধ অর্থের নাম ‘ফাই’ রাখা হোক। এই শব্দ দ্বারা বিজাতীয়দের সাথে মুসলমানদের কি সম্পর্ক তা তাদের স্বরন হবে। আর অনৈসলামিক রাষ্ট্রের সাথে শান্তি চুক্তি পুরন করা শরিয়ত অনুযায়ী কতটা বাধ্যতামূলক,সেটাও তাদের স্মরণ হবে। ১.[কুরআনের পরিভাষায় ‘ফাই’ শুধু মাত্র সেই মালকে বুঝায় যা যুদ্ধরত জাতির নিকট থেকে অস্ত্রের সহায্য ব্যতিরেকেই লাভ করা যায়।সুরায়ে হাশর পড়ে যান।দেখবেন যে, সমস্ত প্রসংগই যুদ্ধের অবস্থা সম্পর্কিত।বনি নজিরের উপর আক্রমন চালানো হলো।অস্ত্র ধারনের পূর্বেই তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং নির্বাসনদন্ড মেনে নেয়।অ অবস্থায় যে ধন-সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হয় তাকেই ‘ফাই’ বলে।শান্তির সময়ে যুদ্ধরত নয় এমন অমুসলিমদের নিকট থেকে সুদ,জুয়া,ফটকাবাজারী এবং অন্যান্য অনৈসলামিক পন্থায় উপার্জিত সম্পদের উপর ‘ফাই’ এর পরিভাষা কেন প্রয়োগ করা হবে?আর যদি একে ‘ফাই’ই বলা হয়, তাহলে জাতির ব্যক্তিগন একজন একজন করে পৃথকভাবে তা কি করে ভোগ করতে পারে?’ফাই’-এর সম্পদ সম্পর্কে কুরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে যে,তা সরকারী ট্রেজারিতে জমা করতে হবে এবং তা ব্যয়িত হবে ইসলামের সাধারন কল্যাণ মূলক কাজে :
(আরবী*******) “যা কিছুই (এসব জনপদের কাছ থেকে থেকে নিয়ে) আল্লাহ তার রাসুলকে দিচ্ছে,তা আল্লাহ,তার রাসুল,নিকট আত্মীয়দের, এতিম-মিসকিন এবং মুসাফিরদের জন্য।”-(হাশর-৭) (মওদূদী)] মোটকথা যেসব কারবারী লেনদেনে আল্লাহ নারাজ না এবং অপরদিকে আইন অক্ষুন্ন। সরকার সন্তুষ্ট,অর্থ দানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ে সন্তুষ্ট, সেসব অবলম্বনে মুসলমানদের কোনো কিছুর ভয় করা উচিত নয়।