জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

সূদ ও আধুনিক ব্যাংকিং

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. ভূমিকা
  2. ইসলাম, পুঁজিবাদ ও কম্যুনিজমের নীতিগত পার্থক্য
    1. পুঁজিবাদী ব্যবস্থা
    2. কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা
  3. ইসলামী অর্থব্যবস্থা
  4. ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও তার মূলনীতি
    1. একঃ উপার্জন মাধ্যমে বৈধ-অবৈধের পার্থক্য
    2. দুইঃ ধন সঞ্চয়ের নিষেধাজ্ঞা
    3. তিনঃ অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ
    4. চার: যাকাত
    5. পাঁচঃ মীরাসী আইন
    6. ছয়: গনীমত লব্ধ সম্পদ ও বিজিত সম্পত্তি বণ্টন
    7. সাতঃ মিতব্যয়ীতার নির্দেশ
    8. একটি প্রশ্ন
  5. সুদ হারাম কেন
    1. ১ -নেতিবাচক দিক
      1. সুদের যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা
      2. প্রথম ব্যাখ্যা
      3. দ্বিতীয় ব্যাখ্যা
      4. তৃতীয় ব্যাখ্যা
      5. চতুর্থ ব্যাখ্যা
      6. ন্যায়সঙ্গত সুদের হার
      7. সুদের অর্থনৈতিক লাভ ও তার প্রয়োজন
      8. সুদ কি যথার্থই প্রয়োজনীয় ও উপকারী?
    2. ২-ইতিবাচক দিক
      1. সুদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতি
      2. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতি
      3. আর্থিক ক্ষতি
      4. অভাবী ব্যক্তিদের ঋণ
      5. বাণিজ্যিক ঋণ
      6. রাষ্ট্রের বেসরকারী ঋণ
      7. বৈদেশিক ঋণ
  6. আধুনিক ব্যাংকিং
    1. প্রাথমিক ইতিহাস
    2. দ্বিতীয় পর্যায়
    3. তৃতীয় পর্যায়
    4. ফলাফল
  7. সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান
    1. রিবার অর্থ
    2. জাহেলী যুগের রিবা
    3. ব্যবসায় ও রিবার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য
    4. ব্যবসা ও সুদের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য হচ্ছে নিম্নরূপঃ
    5. হারাম হবার কারণ
    6. সুদ হারামের ব্যাপারে কঠোর নীতি
  8. সুদের আনুসঙ্গিক বিষয়াদি
    1. রিবা আল ফযল এর অর্থ
    2. রিবা আল ফযলের বিধান
    3. আলোচিত বিধানসমূহের সংক্ষিপ্ত সার
    4. হযরত উমর (রা)-এর উক্তি
    5. ফকীহগণের মতবিরোধ
    6. পশু বিনিময়ের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি
  9. অর্থনৈতিক বিধানের পুনর্বিন্যাস ও তার মূলনীতি
    1. আধুনিকীকরণর পূর্বে চিন্তার প্রয়োজন
    2. ইসলামী আইনের পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন
    3. পুনর্বিন্যাসের জন্য অপরিহার্য শর্তাবলী
    4. প্রথম শর্ত
    5. দ্বিতীয় শর্ত
    6. তৃতীয় শর্ত
    7. চতুর্থ শর্ত
    8. কঠোরতা হ্রাসের সাধারণ নীতি
    9. সুদের ক্ষেত্রে শরীয়তের কঠোরতা হ্রাসের পর্যায়
  10. সংশোধনের কার্যকর পদ্ধতি
    1. কয়েকটি বিভ্রান্তি
    2. সংস্কারের পথে প্রথম পদক্ষেপ
    3. সুদ রহিত করার সুফল
    4. সুদ বিহীন অর্থ ব্যবস্থায় ঋণ সংগ্রহের উপায়
    5. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ
    6. বাণিজ্যিক প্রয়োজনে
    7. সরকারের অলাভজনক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
    8. আন্তর্জাতিক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
    9. লাভজনক কাজে পুঁজি বিনিয়োগ
    10. ব্যাংকিং-এর ইসলামী পদ্ধতি
  11. পরিশিষ্ট: এক
    1. বাণিজ্যিক ঋণ বৈধ কিনা?
  12. পরিশিষ্টঃ দুই
    1. ইসলামী সংস্কৃতি সংস্থার প্রশ্নমালা ও তার জবাব
  13. পরিশিষ্টঃ তিন
    1. সুদ সমস্যা ও দারুল হরব
      1. জনাব মাওলানা মানাযির আহসান গিলানী মরহুম
      2. অনৈসলামিক শক্তি কর্তৃক অধিকৃত দেশ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী
      3. অনৈসলামী রাষ্ট্রে মুসলমানদের জীবন পদ্ধতি
      4. আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
      5. রক্ষিত ও অরক্ষিত সম্পদ এবং তার বৈধতা ও অবৈধতা
      6. মূল আলোচ্য বিষয়ে প্রত্যাবর্তন
      7. দারুল হরবে সুদ হালাল নয় ‘ফাই’ হালাল
      8. ‘ফাই’ ও ‘ফাও’-এর পরিভাষা
      9. ‘ফাই’ অস্বীকার করা জাতীয় অপরাধ
      10. ব্যাংকের সুদ
      11. ‘ফাই’ গ্রহন না করা জাতীয় অপরাধ
      12. ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকারের বিধান
      13. মাওলানার দ্বিতীয় প্রবন্ধ
      14. সমালোচনা
      15. মাওলানার যুক্তির সংক্ষিপ্ত সার
      16. বর্ণিত যুক্তিসমূহের উপর সামগ্রিক মন্তব্য
      17. অবৈধ চুক্তি কি শুধু মুসলমানদের মধ্যেই নিষিদ্ধ?
      18. দারুল হরবের আলোচনা
      19. ইসলামী আইনের তিনটি বিভাগ
      20. বিশ্বাসমুলক আইন
      21. শাসনতান্ত্রিক আইন
      22. দারুল হরব ও দারুল কুফরের পারিভাষিক পার্থক্য
      23. বৈদেশিক সম্পর্কের আইন
      24. অমুসলিমদের শ্রেনী বিভাগ
      25. হরবীদের সম্পদের শ্রেণী বিভাগ ও তার বিধান
      26. গনীমত ও লুণ্ঠিত দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য
      27. দারুল হরবে কাফেরদের মালিকানার অধিকার
      28. পূর্ববর্তী আলোচনার সংক্ষিপ্তসার
        1. একঃ দারুল ইসলামের মুসলমান
        2. দুইঃ দারুল কুফর ও দারুল হরবে নিরাপত্তা প্রাপ্ত মুসলমান-
        3. তিনঃ দারুল কুফর এবং দারুল হরবের মুসলমান নাগরিক-
      29. শেষ কথা

ইসলাম, পুঁজিবাদ ও কম্যুনিজমের নীতিগত পার্থক্য

সামনে অগ্রসর হবার আগে দুনিয়ায় এ পর্যন্তকার সৃষ্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলোর নীতিগত পার্থক্য ও এ পার্থক্যের ফলে অর্থনৈতিক বিষয়াদির প্রকৃতির মধ্যে কোন ধরনের পার্থক্য সূচিত হয় তা আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে।

ছোটখাট মতপার্থক্যের কথা বাদ দিয়ে আমরা দুনিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলোকে তিনটি বড় বড় ভাগে বিভক্ত করতে পারি। আর প্রথমটি হচ্ছে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা (CAPITALISTIC SYSTEM), আর দ্বিতীয়টিকে বলা হয় কম্যুনিজম (COMMUNISM) এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, ইসলাম প্রদত্ত অর্থব্যবস্থা। নিম্নোক্ত আলোচনায় আমি উপরোল্লেখিত তিনটি অর্থব্যবস্থার নীতিগত পার্থক্য বর্ণনা করব।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থা

পুজিবাদী অর্থব্যবস্থার ভিত্তি যে মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত তার মূল কথা হচ্ছে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার স্বোপার্জিত সম্পদের মালিক। তার উপার্জিত সম্পদে কারও কানাকড়িও অধিকার নেই। নিজের সম্পদ সে ইচ্ছা মত ব্যয় করতে পারে। অর্থোপার্জনের সেসব উপায়-উপকরণ তার আয়্ত্তাধীন থাকে সেগুলো কুক্ষিগত করে রাখার এবং কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার না করে সেসব ব্যবহার করতে অস্বীকার করার অধিকার ও তার আছে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যে স্বার্থপরতা রয়েছে তা থেকে পুঁজিবাদের জন্ম। এর পরিপূর্ণ রূপটি এমন এক মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয় যা মানব সমাজের কল্যাণ ও উন্নতির অপরিহার্য গুনাবলিকে স্তিমিত ও নিস্প্রভ করে দেয়। নৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদ দিয়ে নিছক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিচার করলেও দেখা যাবে যে, এ মতবাদের অনিবার্য পরিনতিতে সম্পদ বন্টনের ভারসাম্য বিপর্যস্ত হয়েছে। সম্পদ আহরনের উপায়-উপকরণ সমূহ ক্রমাগতভাবে একটি অধিকতর ভাগ্যবান বা অপেক্ষাকৃত সতর্ক মানব গোষ্টির কুক্ষিগত হয়েছে। ফলে বাস্তবে সমাজ দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেঃ একটি হচ্ছে বিত্তশালী আর অপরটি হচ্ছে বিত্তহীন শ্রেণী। বিত্তশালী শ্রেণী সম্পদ আহরনের যাবতীয় উপায়-উপকরণ কুক্ষিগত করে কেবল মাত্র নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারে তা ব্যয় করে এবং নিজের সম্পদ অধিকতর বৃদ্ধি করার জন্য সমাজের সামগ্রিক স্বার্থকে ইচ্ছামত বিসর্জন দেয়। আর বিত্তহীন দরিদ্র হতভাগ্যের দল ধন-সম্পদের যাবতীয় অংশ ও সুযোগ সুবিধা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়। বিত্তবানদের স্বার্থের ঘানিটানার জন্য জীবনপাত করে দিনান্তে নিজের পেট পূর্তির জন্য সামান্যতম উপাদান সংগ্রহ করা ছাড়া তাদের গত্যন্তর থাকে না। এধরনের অর্থব্যবস্থা একদিকে সুদখোর মহাজন, কারখানা মালিক ও অত্যাচারী জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব ঘটায় এবং অন্যদিকে সৃষ্টি করে ঋণভারে জর্জরিত এবং অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক-মজুর-কৃষকদের এক সর্বহারা শ্রেনীর। এ অর্থব্যবস্থা যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে দয়া, মায়া, সহানুভুতি, সহৃদয়তা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিই সম্পূর্ণত নিজের ব্যক্তিগত আয়-উপার্জনের উপর নির্ভর করে জীবনযাপণ করতে বাধ্য হয়। সেখানে কেউ কারো সাহায্য করে না, কেউ কারো বন্ধু হয় না। অভাবি ও দরিদ্রের জীবন সংকীর্ণতর ও দুর্বিষহ হয়ে উঠে। সমাজের প্রত্যেক ব্যাক্তিই বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রতিহিংসামুলক প্রচেষ্টায় ও কর্মে অবতীর্ণ হয়। সর্বাধিক পরিমাণ অর্থ ও জীবনযাপনের সামগ্রী লাভ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সেগুলো কুক্ষিগত করে রাখে এবং কেবল মাত্র সম্পদ বৃদ্ধির কাজে সেসব ব্যবহার করে। আর যারা এ সম্পদ সঞ্চয় ও বৃদ্ধির অভিযানে ব্যর্থ হয় অথবা এতে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করা সক্ষম হয়না দুনিয়ার বুকে তাঁদের কোনো সহায় থাকে না। তাঁদের জন্য ভিক্ষাও সহজলভ্য হয় না। তাঁদের জন্য কারো মনে একবিন্দু করুণাও জাগে না। তাঁদের সাহায্যের জন্য একটি হাতও প্রসারিত হয় না। এর পর তাঁদের সামনে দুটি মাত্র পথ খোলা থাকে। জীবন যন্ত্রনা থেকে মুক্তিলাভের জন্য তাঁদেরকে হয় আত্মহত্যা করতে হবে, নয় তো অপরাধমূলক ও নৈতিকতা বিরোধী নিকৃষ্টতর বৃত্তি অবলম্বন করে ক্ষুধার জ্বালা নিবারন করতে বাধ্য হতে হবে। এছাড়া তৃতীয় কোনো পথ তাঁদের সামনে থাকে না।

পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় অনিবার্যভাবে মানুষের মাঝে সম্পদ সঞ্চয় ও তা মুনাফাজনক কাজে ব্যয় করার প্রবণতা জন্মে। ফলে সেখানে লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, ব্যাংক কায়েম করা হয়, প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা হয়, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমবায় সমিতি সমূহ গড়ে উঠতে থাকে। অর্থ উৎপাদনের এ সমস্ত পদ্ধতি ও ব্যবস্থার মধ্যে “আরও বেশি অর্থ উৎপাদন কর” নীতি ও প্রেরনাই কার্যকর থাকে। ব্যবসায়িক লেনদেন অথবা সুদী কারবার পরিচালনা করে – যে কোনোভাবেই এ অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে। পুঁজিবাদের দৃষ্টিতে সুদ ও ব্যবসায়িক লেনদেনের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। তাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এ দুটি কেবল পরস্পরের সাথে মিশ্রিত হয়েই যায় না। বরং ব্যবসায়-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এরা একটি অপরটির প্রতি পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ অর্থব্যবস্থায় ব্যবসায়ের জন্য সুদ এবং সুদের জন্য ব্যবসায় একান্ত অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। এদের একটি অপরটির সাহায্য ছাড়া উন্নতি করতে পারে না। সুদ বিহনে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমস্ত গ্রন্থিই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা

পুঁজিবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী আর একটি অর্থব্যবস্থা রয়েছে, তাকে বলা হয় কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা, এ অর্থব্যবস্থার মূলকথা হচ্ছেঃ অর্থ উৎপাদনের যাবতীয় উপায়-উপকরণ সমাজের সম্মিলিত মালিকানার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই কোন বস্তুকে ব্যক্তিগত মালিকানার অন্তর্ভুক্ত করে নিজের ইচ্ছামতো তা ব্যবহার করার ও তা থেকে ব্যক্তিগতভাবে মুনাফা অর্জন করার আধিকার কারোর নেই। সমাজের সম্মিলিত স্বার্থে ব্যক্তি যেসব কাজ করবে কেবল মাত্র সেই কাজগুলোরই সে পরিশ্রমিক পাবে। জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি সরবরাহ করার দায়িত্ব সমাজ গ্রহণ করবে এবং তার বিনিময়ে তাকে সমাজের নির্দেশ মতো কাজ করে যেতে হবে।

পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে এ মতাদর্শটি নতুনতর অর্থনৈতিক সংগঠন কায়েম করে। এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানার অস্তিত্বই স্বীকৃত নয়। কাজেই ব্যক্তির অর্থ সঞ্চয় করে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তা ব্যবসায় বিনিয়োগ করার অবকাশ কোথায়? নীতি ও আদর্শের বিরোধের কারণে এখানে পদ্ধতিরও পরিবর্তন হয়েছে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা কারখানা, ব্যাংকিং, ইনসিওরেন্স, জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানি ও এ ধরনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানাদি ছাড়া চলতে পারে না। অন্যদিকে কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থার গঠনাকৃতি ও তার কার্যক্রমের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের কেবল আবকাশই নেই তা নয় বরং এগুলোর প্রয়োজনও অনুপস্থিত। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার প্রকৃতির সাথে সুদের মিল যতোটা গভীর কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থার প্রকৃতির তার অমিলও ততোটাই সুস্পষ্ট। কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা সুদি লেনদেনের ভিত্তিমূলই ধ্বসিয়ে দেয়। এ অর্থনীতি কোনো অবস্থায় ও কোনো আকৃতিতে সুদকে বৈধ প্রতিপন্ন করে না। এ অর্থনীতিতে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তির পক্ষে একাধারে কম্যুনিস্ট থাকা ও সুদি লেনদেন করা কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়।

মনে রাখতে হবে, এখানে কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থার নিছক আদর্শিক দিকের আলোচনা করা হয়েছে। অন্যথায় কার্যত কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা রাশিয়ায় একটা বড় রকমের ডিগবাজি খেয়ে এবং তার চরমপন্থি মতাদর্শকে কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়ে পুঁজিবাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। কাজেই বর্তমানে সেখানে যারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে এবং তা থেকে সুদ গ্রহণ করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাদ ও কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা দু’টি চরমপন্থি ও পরস্পর বিরোধী মতাদর্শ। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ব্যক্তিকে অবশ্যই তার স্বাভাবিক অধিকার দান করে কিন্তু তার নীতি ও আদর্শের মধ্যে এমন কোন বিষয় নেই, যা ব্যক্তিকে সমাজের সম্মিলিত স্বার্থের সেবা করতে উদ্বুদ্ধ করতে বা অন্ততঃপক্ষে প্রয়োজনের সময় তাকে সে জন্য বাধ্য করতে পারে। বরং সে আসলে ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের স্বার্থান্ধ মনাসিকতা সৃষ্টি করে। এর ফলশ্রুতি স্বরূপ প্রতেকেই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারের জন্য সমাজের বিরুদ্ধে কার্যত সংগ্রাম করতে থাকে। এ সংগ্রামের কারণে ধন-বণ্টনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়। একদিকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ভাগ্যবান সমগ্র সমাজের অর্থনৈতিক উপকরাণাদি হস্তগত করে লাখপতি ও কোটিপতিতে পরিণত হয় এবং এ অর্থ বিনিয়োগে করে আরো বেশী পরিমাণ অর্থ জমা করে যেতে থাকে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের দৈন্য বেড়ে যেতে থাকে। ধন-বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদের অঃশ হ্রাস পেতে পেতে শেষ পর্যন্ত শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকে। অবশ্যি প্রাথমিক পর্যায়ে পুঁজিপতিদের ধন-সম্পদের মহত্তম অভিব্যক্তি মানবিক তমদ্দুনে এক চোখ ঝলসানো চাকচিক্যের সৃষ্টি করে সন্দেহ নেই। কিন্তু অসম ধন বণ্টনের চূড়ান্ত পরিণতি স্বরূপ অর্থনৈতিক জগতের দেহে রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, শরীরের বৃহদাংশ রক্তাল্পতার দরুন শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায় এবং অস্বাভাবিক রক্তচাপ হেতু প্রধান অংগগুলো ধ্বংসের সম্মুখীন হয়।

কম্যুনিস্ট ব্যবস্থা এ রোগের চিকিৎসা করতে চায়। কিন্তু একটি নির্ভুল উদ্দেশ্য লাভের জন্য, তা একটি ভ্রান্ত কর্মপন্থা অবলম্বন করে। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে ধন-বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করা। নিঃসন্ধেহে এটি একটি যথার্থ ও নির্ভুল উদ্দেশ্য। কিন্তু এজন্য সে যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তাকে সরাসরি মানব প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ বলা যেতে পারে। ব্যক্তি মালিকানা অধিকার থেকে ব্যক্তিকে বঞ্চিত করে তাকে সম্পূর্ণরূপে সমাজের একজন কর্মচারী ও দাসে পরিণত করা কেবলমাত্র অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রে নয় বরং অধিকতর ব্যাপকার্থে মানুষের সমগ্র তমদ্দুনিক জীবনের জন্যও ক্ষতি ও ধ্বংসের বার্তাবহ। কারণ এর ফলে অর্থনৈতিক কাজ কারবার ও তমদ্দুনিক ব্যবস্থার প্রাণপ্রবাহ ও তার মূল প্রেরণা শক্তি নিঃশেষিত হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও লাভই তাকে মানবিক তমুদ্দন ও অর্থব্যবস্থায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে কর্ম ও প্রচেস্টায় উদ্বুদ্ধ করে। প্রথমদিক আদর্শবাদের ক্ষেত্রে কমিউনিজম একথা অস্বীকার করেছিল। বরং তার চরমপন্থী দার্শনিক এতদূর বলেছিলেন যে, মানুষ কোনো প্রকার জন্মগত প্রবণতার অধিকারী নয়, সবকিছুই পরিবেশের সৃষ্টি ও শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের সাহায্যে ব্যক্তির মধ্যে এমন পর্যায়ের সামাজিকতা ও সমাজবদ্ধ মানসিকতা (SOCIAL MINDEDNESS) সৃষ্টি করা যেতে পারে যার মধ্যে ব্যক্তি স্বার্থ প্রবণতার লেশমাত্রও থাকবে না। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা কমিউনিস্টদের এ ভুল ভেঙ্গে দিয়েছে। বর্তমানে রাশিয়ার শ্রমিক ও কর্মচারিদের মনে কর্ম প্রেরণা সৃষ্টি করার জন্য তাদের ব্যক্তি স্বার্থ বোধকে উজ্জীবিত করার নিত্য নতুন পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে।

আসলে এটি মানুষের প্রকৃতিগত স্বার্থপ্রিয়তা। কোনো প্রকার যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে মানুষের মন- মস্তিষ্ক থেকে এ প্রবনতাকে উৎখাত করা সম্ভবপর নয়। মুষ্ঠিমেয় অসাধারণ ব্যক্তির কথা বাদ দিলে মধ্যম শ্রেনীর সাধারণ মানুষদের সম্পর্কে বলা যায় যে, তারা নিজেদের মন-মস্তিষ্ক, হাত ও শরীরের সর্বশক্তি কেবলমাত্র এমন কাজে ব্যয় করলেও করতে পারে যার সাথে তার ব্যক্তি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ স্বার্থ সম্ভাবনাটুকুই যদি অবশিষ্ট না থাকে এবং সে জানতে পারে যে, তার জন্য লাভ ও মুনাফা অর্জনের যে সীমা নির্ধারিত হয়েছে হাজার প্রচেষ্টা চালিয়েও তার বাইরে সে এক কানাকড়িও অর্জন করতে পারবে না, তাহলে তার সমূদয় চিন্তা ও কর্মশক্তি নিস্তেজ ও নিষ্প্রভ হয়ে পড়বে। সে নিছক এক শ্রমিকের মত কাজ করে যাবে। কাজ করা ও পারিশ্রমিক লাভ করা এ ছাড়া নিজের কাজের প্রতি অন্য কোনো প্রকার আগ্রহই তার থাকবে না।

এ হচ্ছে কমিউনিস্ট সমাজের আভ্যন্তরীণ দিক। এর বাইরের ও বাস্তব দিক হচ্ছে এই যে, সমাজের কয়েকজন ব্যক্তি পুঁজিপতিকে নির্মূল করে একজন মাত্র বৃহৎ পুঁজিপতির উদ্ভব ঘটানো হয়। সেই বৃহৎ পুঁজিপতি হচ্ছে কমিউনিস্ট সরকার। অ-কমিউনিস্ট সরকারের পুঁজিপতি ব্যক্তিদের মধ্যে নগণ্যতম পরিমাণ সুকোমল মানবিক বৃত্তি ও ভাবপ্রবণতা দেখা যায়, কমিউনিস্ট সরকার রূপ এ বৃহৎ পুঁজিপতির মধ্যে তার ছিটেফোঁটা দেখা যায় না। সে নিছক একটি নিষ্প্রাণ যন্ত্রের ন্যায় ব্যক্তির নিকট থেকে কাজ আদায় করে নেয় আবার যন্ত্রেরই ন্যায় একাধিপত্য ও স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের মধ্যে জীবন ধারণের উপকরণাদি বন্টন করে। দুঃখ-বেদনার স্বাভাবিক মানবিক সমবেদনাটুকু বা যোগ্যতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার কোনো প্রকার কদর স্বীকৃতির অবকাশই সেখানে নেই। সে মানুষের মতো নয় বরং যন্ত্রের কল-কব্জার মতো খাটায়। তাদের চিন্তা অ কর্মের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে হরণ করে নেয়। এ কঠোর নির্যাতন অ স্বৈরতন্ত্র ছাড়া কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে ও প্রতিষ্ঠিত থাকেতে পারে না। কারণ এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানব প্রকৃতি সর্বক্ষণ বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত থাকে। কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রের জনগণকে যদি চিরন্তন নির্যাতন ও স্বৈরতন্ত্রের লোহ শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা না হয় তাহলে ধীরে ধীরে তারা সমগ্র কম্যুনিস্ট ব্যবস্থাটিকেই ছিন্নভিন্ন করে দেবে। এ কারণেই বর্তমান বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে সোভিয়েত রাশিয়ার কম্যুনিস্ট সরকারকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় যালেম ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকাররূপে অবতীর্ণ হতে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার কম্যুনিস্ট সরকার তার জনগনকে এমন কঠিন লৈাহশৃঙ্গলে আবদ্ধ করে রেখেছে দুনিয়ার কোনো গনতান্ত্রিক বা ব্যক্তিতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যার কোনো নজির পাওয়া যাবে না। সোভিয়েত সরকারের এ যুলুম ও স্বৈরতান্ত্রিক নির্যাতন নিছক ঘটনাক্রমে স্তালিনের ন্যায় একজন একনায়কের শাসনের ফল নয় বরং আসলে কম্যুনিস্ট ব্যবস্থার প্রকৃতি ও আন্তরনিহিত শক্তিই মারাত্মক ধরনের একনায়কও্বের জন্ম দিয়ে থাকে।

ইসলামী অর্থব্যবস্থা

এ দুটি পরস্পর বিরোধী অর্থব্যবস্থার মাঝখানে ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা কায়েম করে। এ অর্থ ব্যবস্থার মূলনীতি হচ্ছে –ঃ ব্যক্তিকে অবশ্য তার পরিপূর্ণ স্বাভাবিক ও ব্যক্তিগত অধিকার দান করতে হবে এবং সঙ্গে ধন-বণ্টনের ভারসাম্যও বিনষ্ট হতে পারবে না। ইসলামী অর্থব্যবস্থা একদিকে ব্যক্তিকে ব্যক্তি মালিকানার অধিকার ও নিজের ধন-সম্পদ ইচ্ছামতো ব্যয়-ব্যবহার করার ক্ষমতা দান করে এবং অন্যদিকে ভিতর থাকে এসব অধিকার ও ক্ষমতার উপর কিছু নৈতিক বিধি-নিষেধআরোপ করে এবং বার থেকে এগুলোকে কতিপয় আইনের শৃঙ্খলে বেঁধে দেয়। এর ফলে কোনো স্থানে সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরনাদির অস্বাভাবিক কেন্দ্রীভূত হবার সম্ভবনা বিলুপ্ত হয়। ধন ও উৎপাদন উপকরনাদি হামেশা আবর্তিত হতে থাকে এবং এ আবর্তন এমনভাবে চলতে থাকে যার ফলে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি তা থেকে নিজের উপযোগী অংশটুকু লাভ করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে ইসলাম তার নিজেস্ব স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক সংগঠন কায়েম করে। ইসলামের এ অর্থনৈতিক সংগঠনের প্রাণসত্তা, নীতি ও কর্মপদ্ধতি পুজিবাদ ও কম্যুনিস্ট ব্যবস্থা থাকে সম্পূর্ণ আলাদা।

ইসলামের অর্থনৈতিক আদর্শের সংক্ষিপ্ত সার হচ্ছেঃ অর্থনৈতিক জীবনের প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সকল ব্যক্তির সমষ্টিগত স্বার্থ পরস্পরের সাথে গভীর সম্পর্কযুক্ত। তাই উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ ও বিরোধের পরিবর্তে সমঝোতা ও সহযোগিতা বর্তমান থাকা উচিত। ব্যক্তি যদি সামষ্টিক স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে সমাজের সম্পদ নিজের নিকট কেন্দ্রীভূত করে এবং তা আটকে রাখার বা ব্যয় করার ব্যাপারে নিছক নিজের ব্যক্তি স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রাখে তাহলে এর ফলে কেবলমাত্র সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেরও এ ক্ষতির শিকার হবে। অনুরূপভাবে সমাজ ব্যবস্থা যদি এমনভাবে গঠিত হয়ে থাকে যেখানে সমাজের স্বার্থে ব্যক্তি স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয় তাহলে সেখানে শুধু ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্থ বরং শেষ পর্যায়ে গিয়ে এর ক্ষতি সমাজকেও স্পর্শ করবে। কাজেই ব্যাক্তির সমৃদ্ধির মধ্যেই সমাজের কল্যাণ এবং সমাজের সমৃদ্ধির মধ্যেই ব্যাক্তির কল্যাণ। এ সংগে সমাজের ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে স্বার্থপরতা ও সহানুভুতির ভারসাম্য রক্ষিত হওয়ার ওপরই উভয়ের সমৃদ্ধি নির্ভর করে। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের সামর্থ অনুযায়ী ধন উপার্জন করতে পারে কিন্তু তার উপার্জিত সম্পদে অন্যের অধিকারও থাকবে। প্রত্যেক ব্যাক্তি নিজের সম্পদের বিনিময়ে অন্যের নিকট থেকে মুনাফা অর্জন করবে এবং অন্যকেও তার নিকট থেকে মুনাফা অর্জনের সুযোগ দেবে। এ মুনাফা বন্টন ও অর্থ আবর্তনের ধারাবাহিকতা জারী রাখার জন্য নিছক ব্যাক্তিদের হৃদয় অভ্যন্তরে কতিপয় নৈতিক গুণাবলী সৃষ্টি করে দেয়া যথেষ্ট হবে না বরং এ সংগে সমাজে এমন আইন প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে যার সাহায্যে অর্থ উপার্জন ও ব্যয় ব্যাবস্থাকে যথাযথ নির্ভুল ও ভারসাম্য পূর্ণ পদ্ধতিতে পরিচালিত করা যায়। এর অধীনে কাউকে ক্ষতিকর উপায়ে অর্থ উপার্জনের অধিকার দেয়া যাবে না। যে অর্থ ও সম্পদ বৈধ উপায়ে অর্জিত হয়েছে তাও এক স্থানে কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকবে না বরং তা ব্যায়িত ও দ্রুত আবর্তিত হতে থাকবে।

এ মতাদর্শের উপর যে অর্থনৈতিক সংগঠনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তার উদ্দেশ্য যেমন এক দিকে কতিপয় ব্যাক্তিকে কোটিপতি বানিয়ে অবশিষ্ঠ সবাইকে অভুক্ত রাখা নয় তেমনি অন্যদিকে কাউকেও কোটিপতি হতে না দিয়ে জোরপূর্বক সবাইকে তাদের স্বাভাবিক তারতম্য সত্বেও সমান অবস্থায় আসতে বাধ্য করাও তার উদ্দেশ্য নয়। এ উভয় প্রান্তিক অবস্থায় মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে ইসলামী অর্থব্যবস্থা কেবলমাত্র সকল ব্যাক্তির অর্থনৈতিক প্র্যয়োজন পূর্ন করতে চায়। যদি প্রত্যেক ব্যাক্তি অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে নিজের স্বাভাবিক সীমার মধ্যে অবস্থান করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে, অতপর নিজের উপার্জিত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা ও পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার প্রতি দৃষ্টি রাখে তাহলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে সমাজে যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয় তার কোনো সম্ভবনাই দেখায় যায় না। কারণ এ অর্থব্যবস্থা কোনো ব্যক্তিকে কোটিপতি হতে বাধা না দিলেও এর আওতাধীনে কোনো কোটিপতির সম্পদ তার হাজার হাজার ভাইয়ের আনাহারে দিন যাপন করার কারণে পরিণত হয় না। অন্যদিকে এ অর্থব্যবস্থা অবশ্যি আল্লাহর সৃষ্ট সম্পদ থেকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অংশ দিতে চায় না। কিন্তু এজন্য ব্যক্তির নিজের অর্থোপার্জনের শক্তি ও যোগ্যতার উপর সে কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করে না।

 

Page 2 of 19
Prev123...19Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South