কূপের মাসয়ালা ও হুকুম
কুপের পানি পাক করার বিস্তারিত হুকুম
কূপের মাসয়ালা এবং তা পাক করার নিয়ম-পদ্ধতি ও হুকুম-আহকাম বুঝতে হলে নিম্নের সাতটি বিস্তারিত হুকুম মনে রাখতে হবে:
১. কূপের সমস্ত পানি নাপাক হলে তা পাক করার জন্যে সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে। সমস্ত পানি তুরে ফেলার অর্থ এইযে, তাতে বালতি ফেললে যেন আধ বালতি পানিও না উঠে। এত পানি তুলে ফেলার পর কূপের সিঁড়ি, রশি, বালতি সবই পাক হয়ে যায়। আর যে কূপের সব পানি উঠানো সম্ভব নয়, তার থেকে তিনশো বালতি পানি উঠাতে হবে এবং তাতে কূপের পানি পাক হয়ে যাবে।
২. যে অবস্থায় কুপ পাক থাকে এবং অল্প পানিও তুলে ফেলার প্রয়োজন হয় না এমন অবস্থায় যদি কেউ তার মনে আশ্বস্তির জন্যে কোন সময়ে কূপ থেকে বিশ বাইশ বালতি পানি তুলে ফেলতে চায় তো তা শরীয়তের খেলাপ হবে না এবং এতে কোন দোষ নেই।
৩. কূপ নাপাক হওয়ার সময় নিশ্চিত করে যদি জানা যায় এবং জানার কোন সূত্রও পাওয়া না যায় তাহলে যখনই নাজাসাত দেখা যাবে তখন থেকেই নাপাক বলতে হবে। আর যদি কোন সূত্র পাওয়া যায়, যেমন কোন একটি জীব মরে ফুলে পচে উঠেছে তাহলে নিশ্চিত ধারণা এই করা হবে যে, কদিন পূর্বেই কুয়াতে পড়ে মরেছে। তার জন্যে তিন দিন তিন রাতর নামায পুনরায় আদায় করতে হবে এবং যেসব থারা ঘটিবাটি এবং কাপড় চোপড় ঐ পানিতে ধোয়া হয়েছে তা পুনরায় পাক করতে হবে। আর যা সংশোধন করা যাবে না তার জন্যে দু:খ করার দরকার নেই।
৪. যে কূপে যে বালতি বা ডোল ব্যবহার করা হয় সে কূপে পাক করার জন্যে সেই বালতির হিসাবই ধরতে হবে। যদি যথা সময়ে কোন বেশী বড়ো অথবা বেশী ছোট বালতি দিয়ে পানি তোলা হয় তাহলে মাঝারি ধরণের বালতির হিসাব ধরতে হবে। যত পানি তুলে ফেলার হুকুম, তা যদি কোন পাইপ দিয়ে বা অন্য উপায়ে উঠানো হয় তাতেও কূপ পাক হয়ে যাবে।
৫. কুপ পাক করার জন্যে সমস্ত পানি একেবারে উঠানো হোক অথবা থেমে থেমে উঠানো হোক, উভয় অবস্থাতেই কূপ পাক হবে।
৬. যে জিনিস কূপে পড়ার জন্যে পানি নাপাক হয়েছে তা যদি স্বয়ং নাপাক হয়, যেমন মরা ইঁদুর, বিড়াল প্রভৃতি। তাহলে প্রথমে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং পরে হুকুম মুতাবিক পানি উঠাতে হবে। আর সে মৃত প্রাণী না উঠিয়ে কূপের যতো পানিই উঠানো হোক তাতে কূপ পাক হবে না। আর যদি এ বিশ্বাস হয় যে, প্রাণীটি মরে পঁচে একেবারে মাটি হয়ে গেছে তাহলে তা উঠাবার দরকার নেই, হুকুম মুতাবিক পানি উঠালেই কূপ পাক হবে।
৭. যদি কূপের মধ্যে এমন জিনিস পড়ে যা স্বয়ং পাক, কিন্তু তাতে নাজাসাত ছিল, যেমন ফুটবল, জুতা, কাপড় ইত্যাদি, তাহলে তা উঠিয়ে ফেলা কূপ পাক হওয়ার শর্ত নয় শুধু হুকুম মুতাবিক পানি উঠালেই চলবে।
যে নাপাকির জন্যে সমুদয় পানি তুলে ফেলতে হবে
১. কূপের মধ্যে যে কোন নাজাসাত পড়ুক, তা খফিফা হোক বা গালিয়া অল্প হোক অথবা বেশী, সমস্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে এবং সমস্ত পানি তুলে ফেলা জরুরী হবে। যেমন মানুষের পেশাব পায়খানা পড়লে অথবা গরু-মহিষ, কুকুর, বিড়াল প্রভৃতির পেশাব পায়খানা অথবা রক্ত এবং মদের ফোটা যদি পড়ে তাহলে এর যে কোন অবস্থাতে কূপ নাপাক হয়ে যাবে।
২. কূপ যদি শুকর পড়ে-তা জীবিত হোক বা মৃত-সমস্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে। এ জন্যে যে শুকরের শরীর পেশাব পায়খানার মত নাপাক।
৩. যদি মানুষ কূপে পড়ে মরে যায় সে মুসলমান হোক অথবা অমুসলমান, সব পানি নাপাক হয়ে যাবে। ঠিক এমনি মরার পরে যদি কূপে পড়ে যায় তা সে বাচ্চা হোক বা বয়স্ক হোক সব পানি নাপাক হবে।
৪. কুকুর, ছাগল অথবা তার চেয়ে বড় পশু, যেমন গরু, মহিষ, উট, হাতী, ঘোড়া প্রভৃতি কূপে পড়ে মরলে সমস্ত পানি নাপাক হবে।
৫. রক্ত চলাচল করে এমন কোন প্রাণী আহত হয়ে কূপে পড়লে, মরে যাক বা জীবিত থাক সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।
৬. কোন নাপাক জিনিস, যথা কাপড়, ঘটিবাটি, জুতা প্রভৃতি পড়লে সব পানি নাপাক হবে।
৭. রক্ত চলাচল করে এমন কোন প্রাণী যতো ছোট হোক না কেন, কূপে পড়ে মরলে এবং পচে ফূলে গেলে, অথবা মরা-পচা-ফুলা অবস্থায় কুয়ায় পড়ে গেলে সব পানি নাপাক হবে। যেমন ইঁদুর, টিকটিকি, রক্ত চোষা প্রভৃতি পড়ে মরে ফলে গেলে সমস্ত পানি উঠাতে হবে।
৮. হাঁস-মুরগীর মল কূপে পড়লে সব পানি তুলতে হবে।
৯. যদি দুটি বিড়াল অথবা এতটা ওজনের অন্য কয়েকটি প্রাণী কুপে পড়ে মরে গেলে তাহলে সব পানি নাপাক হয়ে যাবে।
১০. যদি ইঁদুর অথবা গিরগিটি জাতীয় বহুরূপী লেজ কেটে গিয়ে কুপে পড়ে তাহলে সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।
১১. রক্ত চলাচল করে না এমন কোন প্রাণী, যেমন বিচ্ছু, ভোমর, বোলতা, বহুরূপী অথবা ডাঙ্গার ব্যাঙ প্রভৃতি যদি কূপে পড়ে মরে যায় এবং ফুলে ফেটে যায়, তাহলে সমুদয় পানি নাপাক হয়ে যাবে এবং সমস্ত পানি উঠাতে হবে।
যে নাপাকির জন্যে সমুদয় পানি তুলে ফেলা জরুরী নয়
১. বিড়াল, মুরগী, কবুতর অথবা তার সমান কোন প্রাণী যদি কূপে পড়ে মরে যায় কিন্তু ফুলে ফেটে না যায়, তাহলে ৪০ ডোল বা বালতি পানি তুলে ফেললে কূপ পাক হয়। তবে ৬০ বালতি তুলে ফেলা ভালো।
২. যদি ইঁদুর, চিড়িয়া অথবা তার সমান কোন প্রাণী কূপে পড়ে মরে যায় কিন্তু ফুলে ফেটে না যায়, তাহলে ২০ বালতি পানি উঠালেই কূপ পাক হয়। তবে ৩০ বালতি তুলে ফেলা ভালো।
বি: দ্র: কুপে কোন প্রাণী পড়ে যাওয়ার কারণে কূপের নাপাকীর আন্দাজ করার জন্যে ফেকাহশাস্ত্রে কষ্টিপাথর হিসাব তিন প্রাণী ধরা হয়েছে, ছাগল, বিড়াল এবং ইঁদুর।
ছাগলের সমান অথবা তার বড়ো প্রাণীর হুকুম বিড়ালের ন্যায়।
বিড়ালের সমান অথবা ছাগলের ছোট প্রাণীর হুকুম বিড়ালের ন্যায়।
ইঁদুরের সমান অথবা তার বড়ো বিড়ালের ছোটো প্রাণীর হুকুম ইঁদুরের ন্যায়।
৩. বড় গিরগিটি, যার মধ্যে প্রবাহমান রক্ত থাকে, যদি কুয়ায় পড়ে মরে কিন্তু ফুলে ফেটে না যায়, তাহলে ২০ বালতি তুলতে হবে। তবে ৩০ বালতি তুলে ফেলা ভালো।
৪. কোন কূপে মুরগী পড়ে মারে গেল। একজন পানি উঠাবার সময় বলা হলো যে কূপ নাপাক। সে পানি ফেলে দিল বটে কিন্তু সেই ভিজা বালতি অন্য পাক কূপে নেয়ার জন্যে ফেলল। তাহলে সে পাক কূপও নাপাক হয়ে গেল। তা পাক করার জন্যে নাপাক কূপের সমানই অর্থা** ৪০ বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে।
সে অবস্থায় কূপ নাপাক হয় না
১. রক্ত চলাচল করে না এমন প্রাণী যেমন বিচ্ছু, বোলতা, ডাঙ্গার ব্যাঙ প্রভৃতি কূপে পড়ে মরলে অথবা মরার পর পড়লে কূপ নাপাক হয় না।
২. পানির জীব, যেমন মাছ, কাঁকড়া, কুমীর প্রভৃতি কূপে পড়ে মরলে অথবা মরার পর পড়লে কূপ নাপাক হয় না।
৩. জীবিত মানুষ কূপে পড়লে এবং ডুবার পর জীবিত বের হয়ে আসলে কূপ নাপাক হবে না। তবে তার শরীরে কোন নাপাক লেগে থাকলে কুপ নাপাক হবে।
৪. শূকর ব্যতীত যে কোন হালাল বা হারাম প্রাণীর চুল, ক্ষুর অথবা শুকনো হাড় কূপে পড়লে কূপ পাক থাকবে।
৫. যে সব প্রাণীর ঝুটা পাক তা কূপে পড়ে যদি জীবিত বের হয়ে আসে তাহলে কূপ পাক থাকবে।
৬. যে সব প্রাণীর ঝুটা নাপাক [শুকর যদি কূপে পড়ে জীবিত বের হয়ে আসে তথাপি কূপ নাপাক হবে। তার শরীরের কোন অংশ পড়লেও নাপাক হবে।] অথবা সন্দেহ যুক্ত তারা যদি কূপে পড়ে জীবিত বের হয়ে আসে তাহলে কূপ নাপাক হবে না। শর্ত এই যে, তাদের মুখ পানিতে না ডুবে অথবা লালা পানিতে না পড়ে। তবে সাবধানতার জন্যে ২০/৩০ বালতি পানি তুলে ফেলা ভলো।
৭. হাঁস-মুরগী ব্যতীত অন্য কোন পাখীর মল কূপে পড়ে গেলে কূপ নাপাক হয় না।
৮. ছাগলের কিছুটা মল কুপে পড়লে নাপাক হবে না।
৯. যারা গরু মহিষ বাড়িতে রাখে তাদের কূপের গোবর থেকে রক্ষা করা কঠিন তাদের থালা বাটিও গোবর থেকে রক্ষা করা যায় না। যেহেতু গোবর থেকে পুরাপুরি সাবধান হওয়া তাদের জন্যে মুশকিল সে জন্যে অল্প অল্প গোবর কূপে পড়লে তা নাপাক হবে না।
১০. কোন অমুসলিম যদি কূপে পড়ে যায় অথবা যার গোসলের প্রয়োজন সে যদি কূপে নামে তাহলে কূপের পানি নাপাক হবেনা। শর্ত এই যে তার শরীরে কোন নাপাক লেগে না থাকে। তবে ২০/৩০ বালতি পানি তুলে ফেলা ভালো।
১১. এমন কোন জিনিস যদি কুপে পড়ে, যার নাপাক হওয়াটা নিশ্চিত নয়, যেমন বিলাতি ঔষুদ, যার সম্পর্কে সন্দেহ হয় যে, ততে মদ রয়েছে, তাহলে কুপে নাপাক হবে না।
১২. শহরে টাংকি থেকে পাইপের সাহায্যে পানি সরবরাহ করা হয়। এ হলো প্রবাহমান পানি। এতে নাজাসাত পড়লে তখনই নাপাক মনে করা হবে যখন পানির রং, গন্ধ এবং স্বাদ নষ্ট হবে।