কুনুতে নাযেলা
কুনুতে নাযেলা বলতে সেই দোয়া বুঝায় যা নবী পাক (স) দুশমনদের ধ্বংসকারীতা থেকে রক্ষার জন্যে তাদের শক্তি চূর্ণ করে তাদেরকে ধ্বংস করার জন্যে পড়েন। ***১ তাঁর পরে সাহাবায়ে কেরাম (রা) তা পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। ****২
আহলে ইসলাম যদি কোন সময়ে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়, দিন রাত ব্যাপী দুশমনের পক্ষ থেকে আসন্ন বিপদে এবং তাদের ভয় ও সন্ত্রাসে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে, যদি চারদিকে দুশমনের শক্তিমত্তা দেখা যায় তারা যদি মিল্লাতে ইসলামিয়াকে ধ্বংস করার জন্য এবং ইসলামের নূর নিভিয়ে দেয়ার জন্যে আহলে ইসলামের উপর অমানুষিক যুলুম করতে থাকে, এমন নৈরাশ্যজনক অবস্থা থেকে বাঁচর জন্যে দুশমনের শক্তি চূর্ণ করতে তাদেরকে ধ্বংস করতে আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করার জন্যে কুনুতে নাযেলা পড়া মসনূন।
কুনুতে নাযেলার মাসয়ালা]
দোয়ায়ে কুনুত
(আরবী*************)
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য প্রার্থী এবং তোমার কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী। তোমার উপর আমরা ঈমান এনেছি এবং তোমারই উপর ভরসা করি, তোমার ভালো ভলো প্রশংসা করি তোমার শোকর আদায় করি, তোমার না শোকরি করি না (কৃতঘ্নতা করি না), যারা তোমার নাফরমানী করে তাদের পরিত্যাগ করছি ও তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করছি। আয় আল্লাহ! আমরা তোমারই এবাদত করি, তোমারই জন্যে নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদা করি, তোমার দিকেই দ্রুত ধাবিত হই, তোমারই হুকুম মানার জন্যে প্রস্তুত থাকি, তোমার রহমতের আশা রাখি, তোমার আযাবকে ডরাই। তোমার আযাব অবশ্যই কাফেরদেরকে পেয়ে বসবে।
যদি তার সাথে নিম্নের দোয়া পড়া হয় তো ভালো হয়:
(আরবী**********)
আয় আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত দান করে হেদায়াত প্রাপ্ত লোকদের মধ্যে শামিল কর। তুমি আমাকে সচ্ছলতা দান করে সচ্ছল ব্যক্তিদের শামিল কর, তুমি আমার অভিভাকত্ব গ্রহণ করে তাদের মধ্যে শামিল কর যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছ। তুমি আমাকে যা দিয়েছ তার মধ্যে বরকত দাও, তুমি আমাকে ঐ অনিষ্ট থেকে রক্ষা কর যার তুমি ফায়সালা করেছ। কারণ তুমিই ফায়সালাকারী এবং তোমার উপর অন্য কারো ফায়সালা কার্যকর হয় না। তুমি যার অভিভাবকত্ব কর তাকে কেহ হীন লাঞ্ছিত করতে পারে না এবং সে কখনো সম্মান পেতে পারে না যাকে তুমিতোমার দুশমন বানিয়েছ। তুমি খুবই বরকতওয়ালা, হে আমার রব, সুউচ্চ ও সুমহান, দরুদ ও সালাম হোক পিয়ারা নবীর উপর, তাঁর বংশধরদের উপর।
আহলে হাদীসের লোক বেতরে এ দোয়া পড়েন।
দোয়া কুনুত যদি মুখস্ত না থাকে, তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব মুখস্ত করতে হবে। যতদিন মুখস্ত না হবে ততদিন দোয়া কুনুতের স্থলে নিম্নের দোয়া পড়তে হবে।
(আরবী*************)
হে আল্লা! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও। এবং আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।যদি এটাও মনে না থাকে তাহেল (***) তিনবার পড়বেন। বেতর নামাযের সালাম ফেরার পর এ দোয়া পড়া মুস্তাহাব (****) এ দোয়া তিনবার পড়তে গিয়ে তৃতীয়বার উচ্চ শব্দ করে পড়বেন *****।
বেতর নামাযে সূরা ফাতেহার পর যে কোন সূরা পড়তে পারবেন। তবে প্রথম রাকায়াতে (****) দ্বিতীয় রাকয়াতে (****) এবং তৃতীয় রাকায়াতে (*(****) পড়া ভালো।
আবু উবাইদ বিন কা’ব বলেন, নবী (স) বেত এ তিন সূরা পড়তেন।
১. উচ্চশব্দে পড়া সকল নামাযে কুনুতে নাযেলা পড়া জায়েয। ****৩ বিশেষ করে ফজরের নামাযে পড়র ব্যবস্থা করা উচিত।
****১ হযরত আবু হুরায়রায়হ (রা) বলেন, নবী (স) মুসলমান কায়েদীদের উদ্ধার এবং কাফেরদের ধ্বংসের জন্যে অনবরত একমাস পর্যন্ত এশার নামাযে এ কুনুত পড়তেন। আবু হুরায়রা (রা) বলেন, একদিন নবী (স) এ দোয়া পড়লেন না। তখন আমি নবী (স) কে না পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি কি দেখছ ন যে, মুসলমান কয়েদীরা খালাস হয়ে এসেছে? –(আবু দাউদ)
****২ হযরত আবু বকর (রা) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি মুসায়লাম কায্যাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এ কুনুতে নাযেলা পড়েন। এমনি হযরত ওমর (রা), হযরত আলী (রা) এবং আমীর মুয়াবিয়া (রা) যুদ্ধের সময় কুনুতে নাযেলা পড়েন। (গানিয়াতুল মাস্তামলী)।
****৩ আল্লামা তাহাবী শুধু পযর নামাযে কুনুতে নাযেলা পড়ার উল্লেখ করেছেন। শামী কেতাবের লেখক এ উক্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
২. যদি মুক্তাদীদের দোয়া কুনুতে নাযেলা মনে থাকে, তাহলে ইমামও আস্তে আস্তে পড়বে এবং সকল মুক্তাদীও আস্তে আস্তে পড়বে। কিন্তু আজকাল যেহেতু সাধারণ মুক্তাদীদের দোয়া মনে থাকে না সে জন্যে উত্তম এই যে, ইমাম উচ্চশব্দে ***১ থেমে থেমে পড়বে এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলতে থাকবে।
৩. শেষ রাকায়াতে রুকু থেকে উঠার পর ইমাম এবং মুক্তাদী সকলে হাত বাঁধবে ***২ ইমাম কুনুত পড়বে এবং মুক্তাদী আস্তে আস্তে আমীন বলছে। ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম আবু ইউসুফের নিকট হাত বেঁধে কুনুতে নাযেলা পড়া মসনূন।
৪. একাকী নামায পাঠকারীও কুনুত পড়তে পারে। নারীগণও তাদের নামাযে পড়তে পারে।
কুনুতে নাযেলার দোয়া
(আরবী***************)
আয়নী, শরহে হেদায়া উচ্চশব্দে পড়া সকল নামাযে পড়ার বিশ্লেষণ করেছেন। আয়নী শরহে হেদায়ার শব্দগুলো হচ্ছে
(আরবী*********)
যদি মুসলমানদের উপর কখনো বিপদ এসে পড়ে, তাহলে ইমাম উচ্চশব্দে পড়া নামাযগুলো কুনুত পড়বে। অধিকাংশ ওলামা এবং ইমাম আহম বিন হাম্বলেরও এই মত। দেখুন কুনুতে নাযেলা এবং তৎসংশ্লিষ্ট মাসায়ালাসমূহ মুফতী মুহাম্মদ কেফায়েতুল্লাহ মরহুম।
***১ আবু হুরুয়রা (রা) বলেন, নবী (স) কুনুতে নাযেলা উচ্চস্বরে পড়তেন। (বুখারী)।
***২ যদি কেউ হাত বাঁধার পরিবর্তে হাত তুলে দোয়া করে অথবা হাত ছেড়ে দিযে পড়ে যেমন ইমাম মুহাম্মদের উক্তি রয়েছে তা হলে হাদীসের আলোকে তা করার অবকাশ এছ। এই জন্যে যে, এসব বিষয়ে তর্কবিতর্ক ও ঝগড়া ফাসাদ করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হেদায়েত দান করে তাদের মধ্যে শামিল কর যাদেরকে তুমি হেদায়েত দান করেছ। তুমি আমাদের সচ্ছলতা দান করে তাদের মধ্যে শামিল কর যাদেরকে তুমি সচ্ছলতা দান করেছ। আমাদের অভিভাকত্ব করে তাদের মধ্যে শামিল কর যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছ। তুমি আমাদেরকে যা দান করেছ তাতে বরকত দাও। আমাদেরকে তুমি সেই অনিষ্ট থেকে রক্ষা কর যার ফয়সালা তুমি করেছ-কারণ ফয়সালা তুমিই করে থাক এবং তোমার উপর কারো ফয়সালা কার্যকর হয় না। তুমি যার অভিভাবক্ত কর সে কখনো হীন লাঞ্ছিত হতে পারে না। তুমি যাকে দুশমন বলে আখ্যায়িত কর সে কখনো সম্মান পেতে পারে না। তুমি বড়ো বরকতওয়ালা। হে আমাদের রব! সুউচ্চ ও সুমহান, আমরা তোমার কাছে মাগফেরাত চাচ্ছি তোমার কাছে তওবা করছি। আল্লাহর রহমত হোক নবী (স)-এর উপর।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে মাফ কর। মুমেন নারবী-পুরুষ এবং মুসলিম নারী-পুরুষকে মাফ কর, তাদের অন্তরকে পরস্পর মিলিত করে দাও, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে দাও, তোমার এবং তাদের দুশমরে মুকাবিলায় আমাদের মদদ কর।
আয় আল্লা! তুমি ঐ সব কাফিরদের উপর লানত কর যারা মানুষকে তোমার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে সরিয়ে দেয়, যারা তোমার রসূলগণকে মিথ্যা মনে করে, যারা তোমার প্রিয় লোকদের মতানৈক্য সৃষ্টি করে দাও, তাদেরকে ভীত প্রকম্পিত করে দাও এবং তাদের উপর তোমার এমন আযাব নাযিল কর যা তুমি তোমার পাপদের জন্যে রহিত কর না।