নফল নামাযের বিবরণ
পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের সাথে নবী (স) যেসব আমল করেছেন, উপরে পাঞ্জেগানা নামায প্রসংগে তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হযেছে। এসব ছাড়াও নবী পাক (সা) বিভিন্ন সময়ে বহু নফল নামায পড়তেন। হাদীসগুলোতে এসব নামাযের অনেক ফযিলত বয়ান করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে বেশী বেশী নফল এবাদতের মাধ্যমেই বান্দাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং বিরাট মর্যাদার অধিকারী হয়। মাকরুহ সময়গুলো ছাড়া যখনই কেউ নফল নামায পড়তে চায় এবং যত বেশী পড়তে চায় তা পড়লে তার জন্যে মঙ্গল ও বরকতেরই কারণ হয়। অবশ্যি কিছু বিশিষ্ট নফল নামায নবী (স) বিশেষ বিশেষ সময়ে পড়েছেন এবং সে সবের আলাদা ফযিলতও বয়ান করেছেন। নিম্নে সে সব বিশিষ্ট নফল নামাযের উল্লে করা হচ্ছে।
তাহাজ্জুদের নামায
তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত। নবী (স) হরহামেশা এ নামায নিয়মিতভাবে পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা) কে নিয়মিত আদায় করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করতেন। কুরআন পাকে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্যে বিশেষভাবে তাকীদ করা হয়েছে। যেহেতু উম্মতকে নবীর পায়রবি করার হুকুম করা হয়েছে সে জন্যে তাহাজ্জুদের এ তাকীদ পরোক্ষভাবে গোটা উম্মতের জন্যে করা হয়েছে।
(আরবী*************)
এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়তে থাক। এ তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন- (বনি ইসরাঈল: ৭)।
যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের আমল করে কুরআন তাদেরকে মুহসেন এবং মুত্তাকী নামে অভিহিত করে তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং আখেরাত চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করেছে।
(আরবী************)
নিশ্চয়ই মুত্তাকী লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়মিত তাদের প্রভু পরোয়ারদেগার তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। (কারণ) নিঃসন্দেহে তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো। (কেঁদে কেঁদে আল্লাহর মাগফেরাত চাইতো) (যারিয়াত : ১৫-১৮)
প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামায মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করার এবং সত্য পথে অবিচল থাকার জন্যে অপরিহার্য ও কার্যকর পন্থা।
(আরবী*****************)
বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দামিত করার জন্যে খুব বেশী কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির একেবারে যথার্থ। (মুয্যাম্মিল-৬)।
এসব বান্দাহদেরকে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাহ বলেছেন এবং নেকী ও ঈমানদারীর সাক্ষ্য দিয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ)
(আরবী**************)
আল্লাহর পিয়ারা বান্দাহ তারা….. যারা তাদের পরোয়ারদেগারের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। -(ফুরকান: ৬৩-৬৪)।
মুমেনদের এ বিশিষ্ট গুণ তাদেরকে কুফরের প্রবল আক্রমণের মুকাবিলায় অটল রাখতো এবং বিজয় মালায় ভূষিত করতো। বদরের ময়দানে হকের আওয়ায বুলন্দকারী নিরস্ত্র মুজাহিদগণের অতুলনীয় বিজয়ের বুনিয়াদী কারণগুলোর মধ্যে এটিও ছিল একটি যে, তাঁরা রাতের শেষ সময়ে আল্লাহর সামনে চোখের পানি ফেলে কাঁদতেন এবং গুনাফ মাফ চাইতেন।
(আরবী*************)
এসব লোক অগ্নি পরীক্ষায় অচল অটল, সত্যের অুসারী, পরম অনুগত, আল্লাহর পথে মাল উৎসর্দকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থী- (আলে ইমরান : ১৭)।
স্বয়ং নবী করীম (স) তাহাজ্জুদের ফযিলত সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা) বলেন, নবী (স) যখন মদীনায় তাশরীফ আনেন তখন প্রথমযে কথাগুলো তাঁর পাক যবান থেকে শুনি তা হলো:
“হে লোকগণ। ইসলামের প্রচার ও প্রসার কর, মানুষকে আহার দান কর, আত্মীয়তা অটুট রাখ, আর যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে তখন তোরা রাতে নামায পড়তে থাকবে। তাহলে তোমরা নিরাপদে বেহেশতে যাবে- (হাকেম, ইবনে মাহাজ, তিরমিযী)।”
হযরত সালমান ফারসী (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন-
“তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যবস্থাপনা কর, এ হচ্ছে নেক লোকের স্বভাব এ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট করে দেবে, গুনাহগুলো মিটিয়ে দেবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং শরীর থেকে রোগ দূর করবে।”
আর এক সময় তিনি বলেন-
ফরয নামাযগুলোর পরে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামায হলো রাতে পড়া তাহাজ্জুদ নামায- (সহী মুসলিম-আহমদ)।
নবী (স) আরও বলেন-
রাতের শেষ সময়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার দিকে নাযিল হন এবং বলেন, “ডাকার জন্যে কেউ আছে কি যার ডাক আমি শনব, চওয়ার জন্যে কেউ আছে কি যাকে আমি দেব, গুনাফ মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি যার গুনাহ আমি মাফ করব?। (সীহ বুখারী)।
তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্ত
তাহাজ্জুদের অর্থ হলো ঘুম থেকে উঠা। কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকী করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের মসূন সময় এই যে এশার নামায পর লোক ঘুমাবে তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে।
নবী (স) কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়অত পড়তেন। তারডপর মেসওয়াক ও অযু করে নামায পড়তেন। ঘুম থেকে উঠার পর তিনি নিম্ন আয়াতগুলো পড়তেন- (আরবী***************)
বস্তুত আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের আবর্তনের মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে ঐসব জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্যে যারা দাঁড়ানো, বসে থাকা এবং শুয়ে থাকা অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি নৈপূণ্যের উপর চিন্তা গবেষণা করে। অতপর তারা আপনা-আপনি বলতে থাকে, হে আমাদের রব। এসব কিছু তুমি অযথা পয়দা করনি। বেহুদা কাজ থেকে তুমি পাক, পবিত্র ও মহান। অতএব হে আমাদের রব, আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাও। তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ কর তাকে প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত লাঞ্ছনার মধ্যেই ফেল। তারপর এসব যালেমদের আর কোন সাহায্যকারী থাকবে না। হে প্রভু! আমরা একজন আহবানকারী শুনলা, যে ঈমানের দিকে আহবান করে নিজেদের রবকে মেনে নিতে বলে। আমরা তার দাওয়াত কবুল করলাম। হে আমার প্রবু। আমাদের গুনাফ মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব মন্দ কাজ আছে তা তুমি দূর করে দাও। এবং আমাদের শেষ পরিণতি নেক লোকদের সাথে কর। হে আল্লাহ! তুমি যেসব ওয়াদা তোমার রসূলদের মাধ্যমে করেছ, তা পূরণ কর এবং কিয়ামতের দিনে লাঞ্ছনায় ফেলো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা বরখেলাপ কর না। (আলে ইমরান)
তাহাজ্জুদের রাকায়াতসমূহ
তাহাজ্জুদের রাকয়াত সংখ্যা অন্তত পক্ষে দুই এবং উর্ধতম সংখ্যা আট। নবী পাক (স)-এর অভ্যাস ছিল দুই দুই করে আট রাকায়াত পড়া। সে জন্যে আট রাকায়াত পড়াই ভালো। তবে তা জরুরী নয়। অবস্থা ও সুযোগের প্রেক্ষিতে যতটা পড়া সম্ভব তাই পড়লেই চলবে।
তারাবীহর নামায
তারাবীহর নামায নারী পুরুষ উভয়ের জন্যে সুন্নাতে মুয়াক্তাদা। পুরুষের জন্যে তারাবীহ জামায়াত করে পড়া সুন্নাত। তারাবীহ বিশ রাকায়াত ****১
হযরত ওমর (রা) বিশ রাকয়াত তারাবীহ নামায পড়ার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীকালে খোলাফায়ে রাশেদীনও বিশ রাকায়াত পড়েন।
তারাবীহ পড়ার পদ্ধতি এই যে, দু’রাকায়াত তারাবীহ সুন্নাতের নিয়ত করে এইভাবে পড়ুন যেমন অন্যান্য সুন্নাত ও নফল পড়েন। প্রত্যেক চার রাকয়াত পর এতটুকু সময় বসুন যে সময়ে চার রাকায়াত পড়া যায়। বসাকালে কিছু তাসবীহ ও যিকির করা ভালো। চুপচাপ করে বসাও যায়।
তারাবীর ওয়াক্ত এশার নামাযের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত।
হাদীসগুলোতে তারাবীহ নামাযের অনেক ফযিলত বয়ান করা হয়েছে নবী পাক (র) এরশাদ করেন-
“যে ব্যক্তি ঈমানের অনুভূতিসহ আখেরাতের প্রতিদানের উদ্দেশ্যে রমযানের রাতগুলোতে তারাবীহ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (বুখারী মুসলিম)।
তারাবীহ নামাযের বিস্তারিত বিবরণ রোযার অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য।
১. আহলে হাদীসের নিকটে তারাবীহ আট রাকয়াত।
চাশতের নামায
চাশতের নামায মুস্তাহাব। যখন সূর্য ভালোভাবে বেরিয়ে আসবে এবং আলো ছড়িয়ে পড়বে তখন চাশতের ওয়াক্ত শুরু হয়। এবং বেলা গড়ার আগে পর্যন্ত থাকে। এ সময়ে কেউ ইচ্ছা করলে চার রাকায়াত অথবা তার বেশী নফল নামায আদায় করতে পারে। নবী (স) চার রাকায়াতও পড়েছেন আবার চারের বেশীও পড়েছেন। চাশত নামাযের নিয়ত এভাবে করবেন-
নবীর সুন্নাত চার রাকায়াত চাশত নামাযের নিয়ত করছি।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ
তাহিয়্যাতুল মসজিদের অর্থ হলো এমন নামায যা মসজিদে প্রবেশকারীদের জন্যে পড়া মসনূন। নবীর (স) এরশাদ হচ্ছে- তোমাদের মধ্যে যদি কেউ মসজিদে যায়, এ দু’রাকায়াত পড়ার আগে বসবে না। (বুখারী, মুসলিম)।
মসজিদ যেহেতু আল্লাহর এবাদতের জন্যে তৈরী করা হয়, এ জন্যে তার সম্মানের জন্যে প্রবেশ করার পরই আল্লাহর দরবারে মানুষের সিজদারত হওয়া উচিতি। যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করার পর ফরয নামায অথবা কোন ওয়াজেব, সুন্নাত ইত্যদি পড়ে তাহলে- তাই তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় হবে। তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু’রাকয়াতও পড়া যায় অথবা তার বেশী।
তাহিয়্যাতুল অযু
অযু শেষ করার পর অযুর পানি শুকাবার আগে দু’রাকায়াত নামায পড়া মুস্তাহাব। তাকে তাহিয়্যাতুল অযু বলে। চার রাকয়অত পড়লেও দোষ নেই। তাহিয়্যাতুল অযুরও ফজিলত হাদীসে বয়ান করা হয়েছে। নবী (স) বলেন-
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে দু’রাকায়াত নামায পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে পড়বে তার জন্যে বেহেশত ওয়াজেব হয়ে যায়” –(সহীহ মুসলিম)।
গোসলের পরেও এ দু’রাকায়াত পড়া মুস্তাহাব এ জন্যে যে, গোসলের সাথে অযুও হয়ে যায়।
সফরে নফল
সফরে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে দু’রাকায়াত নামায পড়া মুস্তাহাব এবং সফর থেকে বাড়ী ফেরার পর দু’রাকায়াত নামায মসজিদে আদায় করে বাড়ীতে প্রবেশ করা উচিত। নবী (স) যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন। প্রথমে মসজিদে পৌঁছে দু’রাকায়াত নামায পড়তেন (সহীহ মুসলিম)। তিনি বলেন, সফরের সময় দু’রাকায়াত নামায ঘরে পড়া হয়, তার চেয়ে কোন ভাল জিনিস লোক ঘরে ফেলে যায় না- (তাবারানী)।
সফরকালে যদি কেউ কোথাও অবস্থান করতে চায় তাহলে সেখানে প্রথম দু’রাকায়াত নামায আদায় করা মুস্তাহাব হবে( শামী প্রভৃত গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)।
সালাতুল আওয়াবীন
সালাতুল আওয়াবীন মাগরেব বাদ পড়া হয়। নবী (স) তার বিরাট ফযিলত বয়ান করেছেন এবং পড়ার জন্যে প্রেরণা দিয়েছেন। আওয়াবীন মাগরেব বাদ দু’রাকায়াত করে ছ’ রাকয়াত পড়তে হয়। এ নামায মুস্তাহাব।
সালাতুত তাসবীহ
এ নামাযকে সালাতুত তাসবীহ এ জন্যে বলা হয় যে, এর প্রত্যেক রাকয়াতে পঁচাত্তার বার এ তাসবীহ পড়া হয়-
(আরবী***********)
সালাতুত তাসবীহ মুস্তাহাব। হাদীসে তার অনেক সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। নবী (স) চার রাকায়াত এ নামায পড়েছেন। এ জন্যে একই সালামে চার রাকয়াত পড়া ভালো। তবে দু’রাকায়াত পড়লেও দুরস্ত হবে।
সালাতুত তাসবীহ পড়ার নিয়ম এই যে, চার রাকায়াত সালাতুত তাসবীহর নিয়ত করে হাত বাঁধুন। তারপর সানা পড়ার পর ১৫ বার এ তাবীহ পড়বেন।
তারপর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতেহা পড়ুন এবং কুরআনের কিছু অংশ। তারপর দশবার তাবীহ পড়ুন।
রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহর পর এ তাসবীহ দশবার, রুকু থেকে উঠে কাওমার সময় এ তাসবহী দশবার, সিজদায় ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লার’ পর দশবার, সিজদা থেকে উঠে জালসায় দশবার। দ্বিতীয় সিজদায় এভাবে দশবার পড়ুন।
অতপর দ্বিতীয় রাকয়াতে ঐভাবে সানার পর ১৫ বার, কেরায়াতের পর ১০বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে দশবার, দু’সিজদায় দশ-দশবার দু’সিজদার মাঝে ১০ বার পড়ুন।
অতপর ঠিক এমনি তৃতীয় ও চতুর্থ রাকয়াত পড়ৃন। অর্থাৎ প্রত্যেক রাকয়াতের ৭৫ বার এবং মোট ৩০০ বার তাসবীহ পড়ুন। তাসবীহ গণনার হিসাব রাখার জন্যে আংগুলের আঁকে গুণবেন না। বরঞ্চ আংগুলের উপর চাপ দিয়ে সংখ্যা হিসাব করুন। কোনখানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে অন্য স্থানে তা পূরণ করুন। যেমন ধরুন, জালসায় তাসবীহ ভুলে গেলে সিজদায় গিয়ে পূরণ করুন। সিজদায় তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে জালসায় তা পূরণ করবেন না। এ জন্যে যে সিজদা থেকে জালসা দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়। সে জন্যে অন্য সিজদায় তা পূরণ করবেন।
সালাতে তওবা
প্রত্যেক মানুষ ভুল করে, গুনা করে। যখন কোন গুনাহের কাজ হয়ে যায়, তখন লজ্জিত-অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেটে গুনাহ মাফের জন্যে দু’রাকায়াত পড়া মুস্তাহাব।
হযরত আবু বরক (রা) বলেন, নবী পাক (স) এরশাদ করেছেন-
কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে কোন গুনাহ হয়ে গেলে তার উচিত পাক সাফ হয়ে দু’রাকায়াত নফল নামায পড়া এবং আবল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চাওয়া। তাহলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন।
(আরবী*************)
এবং তাদের অবস্থা এই যে, যদি কখনও তাদের দ্বারা কোন অশ্লীল কাজ হয়ে যায় অথবা তারা কোন গুনাহ করে নিজেদের উপর যুলুম করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাদের আল্লাহর ইয়াদ হয় এবং তাঁর কাছে গুনাহ মাফ চায়। কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করতে পারে? এবং তারা তারেদ কৃত অপরাধের জন্যে জ্ঞাতসারে জিদ ধরে না। (আলে-ইমরান ১৩৫)
সালাতে কসূফ ও খসূফ ***১
কসূফ এবং খসূফের সময় দু’রাকায়াত করে নামায পড়া সুন্নাত। তবে তার জন্যে আযান একামতের প্রয়োজন নেই। মানুষ জমায়েত করতে হলে অন্যভাবে করবে।
নামাযে সূরা বাকারা অথবা আলে-ইমরানের মতো লম্বা সূরা এবং লম্বা লম্বা রুকু জিদা করা সুন্নাত। ****২ নামাযের পর ইমাম দোয়ায় মশগুল হবেন। এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলতে থাকবেন। তারপর গ্রহণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দোয়াও শেষ হবে। তবে গ্রহণ শেষ হবার আগে যদি কোন নামাযের ওয়াক্ত এসে যায় তাহলে দোয়া করা ছেড়ে দিয়ে সে ওয়াক্তের নামায পড়তে হবে।
খসূফে জামায়ত সুন্নাত নয়। প্রত্যেকে একাকী দু’রাকায়াত নামায পড়বে। নবী (স) এরশাদ করেন-
সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর দুটি নিদর্শন। কারে জন্ম অথবা মৃত্যুতে তাদের গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা দেখবে যে, সূর্য বা চন্দ্রে গ্রহণ লেগেছে, তখন তোমরা আল্লাহকে ডাক, তার কাছে দোয়া কর এবং নামায পড় যতোক্ষণ না গ্রহণ ছেড়ে গিয়ে সূর্য বা চন্দ্র পরিষ্কার হয়। ****৩
যেসব সময়ে নামায নিষিদ্, যেমন সূর্য উঠার সময়ে, ডুবার সময় এবং দুপুর বেলা, তখন যদি সূর্যগ্রহণ হয় তাহলে নামায পড়া যাবে না। তবে এসব নিষিদ্ধ সময় অতীত হওয়ার পরও যদি গ্রহণ থাকে তাহলে নামায পড়া যেতে পারে।
কসূফের নামাযে জোরে জোরে কেরায়াত পড়া সুন্নাত। এমনিভাবে ভয়-ভীতির সময়ে, বিপদ-মুসিবদ দুঃখ কষ্টের সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত।
***১ সূর্য গ্রহণকে কসুফ এবং চন্দ্র গ্রহণকে খসূফ বলে।
***২ প্রথম রাকয়াতে সূরা আনকাবুত এবং দ্বিতীয় রাকয়অতে সূরা রু পড়া ভালো। তবে তা পড়া জরুরী নয়
****৩ বুখারী, মুসলিম।
যেমন ধরুন ভয়ানক ঝড়-তুফান এলো, অবিরাম মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে থাকলো, ভূমিকম্প এলো, আকা থেকে বিদ্যুত পড়া শুরু হলো, মহামারী শুরু হলো, দুশমনের ভয় হলো, বিশৃংখলা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো- মোট কথা সকল বিপদের সময়ে নামায পড়া সুন্নত। এ নামায নিজ সুবিধা মতো একাকী পড়া উচিত।
সালাতে হাজাত
যখন বান্দা কোন বিশেষ প্রয়োজনের সম্মুখীন হবে তা সে প্রয়োজনের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে হোক যেমন পরীক্ষায় পাস করা কাম্য অথবা কোন বাড়ী বা দোকানের প্রয়োজন অথবা সে প্রয়োজনের সম্পর্ক অন্য কোন মানুষের সাথে হোক, যেমন কোন ইসলাম প্রিয় মেয়ের বিবাহ কাম্য, অথবা কারো অধীনে কোন চাকরির প্রয়োজন তখন তার জন্যে মুস্তাহাব এই যে, সে সালাতুল হাজাতের নিয়তে দুরাকায়াত নামায আদায় করবে। তারপর নিম্নের দোয়া পড়বে-
(আরবী*************)
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি বড়ো ত্রুটি বিচ্যুতি উপেক্ষাকারী ও বড়োই করুণাশীল। তিনি ত্রুটি-বিচ্যুটি তেক েপাক, বিরাট আরশের মালিক, প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি বিশ্ব জগতের মালিক-প্রতিপালক। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ঐসব জিনিস ভিক্ষা চাচ্ছি যার জন্যে তোমার রহম অপরিহার্য এবং যা তোমার বখশিশ ও মাগফিরাতের কারণ হয়। আমি প্রত্যেক মংগলের অংশীদার হওয়ার কামনা করি এবং প্রত্যেক পাপ থেকে নিরাপদ থাকার ইচ্ছা পোষণ করি। (আয় আল্লাহ) তুমি আমার গুনাহ মাফ করা ব্যতীত এবং আমার দুঃখ দৈন্য দূর করা ব্যতীত ক্ষান্ত হইও না এবং আমার যেসব প্রয়োজন তোমার পসন্দনীয় তা পূরণ না করে ছেড়ো না- হে অনুগ্রকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো অনুগ্রহকারী।
এ দোয়ার পর যা চাওয়ার তা চাইবেন। এ নামায প্রয়োজন পূরণের জন্য পরীক্ষিত।
একবার এক অন্থ নবী (স) –এর খেদমতে হাযির হলো। সে আরয করে বললো, হে আল্লাহর রসূল। আমার দৃষ্টিশক্তির জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। নবী (স) বললেন, তুমি ধৈর্য ধারণ করলে অনেক অনেক প্রতিদান পাবে। আর যদি বল তো দোয়া করি।
সে দোয়া করার জন্যে ইচ্ছ প্রকারশ করলে নবী (স) তাকে এ নামায শিক্ষা দেন- (ইলমুল ফেকাহ৯, ২য় খণ্ড)।
এস্তেখারার নামায
এস্তেখারা শব্দের অর্থ মঙ্গল কামনা করা। যদি এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি হয়, যেমন কোন বিযের ব্যাপারে পয়গাম এসেছে। এখন তা কবুল করা হবে, না প্রত্যাখ্যান করা হবে, যেমন কোন সফর যাওয়ার ব্যাপারে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্ন জাগলো, কোন কারবার মরু করার ব্যাপারে, অন্য কারো সাথে কোন ব্যাপারে জড়িত হওয়ার সম্পর্কে, কোন দোকান, বাড়ী বা জমি কেনা বেচার ব্যাপারে, অথবা কোন চাকরি করা বা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে, অর্থাৎ যে কোন ব্যাপারে কোন সমস্যা দেখা দিলে এসব ব্যাপারে মনস্থির করার জন্যে দু’রাকায়াত নফল নামায এবং এস্তেখারায় মসনূন দোয়া পড়া মুস্তাহব। এস্তেখারার পর যেদিকে মনে ঝোঁক প্রবণতা অনুভব করা যাবে তা অবলম্বন করলে আল্লাহর ফযলে সাফল্য লাভ করা যাবে।
নবী (স) বলেন, এস্তেখারাকারী কখনো ব্যর্থকাম হয় না, পরামর্শকারী কখনো অনুতপ্ত হয় না এবং মিতব্যয়ী কখনো অপরের মুখাপেক্ষী হয় না- (তাবারানী)।
হযরত সা’দ বিন আবি ওক্কাস (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন, আল্লাহর কাছে এস্তেখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহর মর্জির উপর রাজী থাকাও আদম সন্তানদের জন্যে সৌভাগ্। আদম সন্তানদের দুর্ভাগ্য এই যে, তারা আল্লাহর কাছে এস্তেখারা করে না এবং আল্লাহর ফায়সালার উপর অসন্তোষ প্রকাশ করে- (মুসনাদে আহমদ)।
এস্তেখারা করার নিয়ম পদ্ধতি
এস্তেখারা করার নিয়ম এই যে, নিষিদ্ধ সময়গুলো ব্যতীত সুযোগমত যে কোন সময়ে সাধারণ নফল নামাযের মতো দু’রাকায়াত এস্তেখারার নামায পড়ুন। তারপর আল্লাহর হামদ ও সানা এবং দুরুদ শরীফ পড়ুন। তারপর নবীর শেখানো এস্তেখারার দোয়া পড়ে কেবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এমনি সাত বার করা ভাল। তার পর মনের ঝোঁক প্রবণতা যেদিকে বুঝা যাবে তা আল্লাহর মর্জি মনে করে অবলম্বন করুন।
কোন কারণে যদি নামাযের সুযোগ না হয়, যেমন, কোন মেয়েলোক হায়েয বা নেফাসের অবস্থায় আছে, তাহলে শুধু দোয়া পড়াই যথেষ্ট হবে। তারপর মন যেদকে যায় তদনুযায়ী কাজ করা উচিত।
এস্তেখারার দোয়া
হযরত জাবের (রা) বলেন, নবী (স) যেভাবে আমাদেরকে কুরআন পাক শিক্ষা দিতেন, তেমনভাবে এস্তেখারর দোয়াও শিক্ষা দিতেন।
তিনি বলতেন-
তোমাদের কেউ যদি কোন সময়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড় তাহলে দু’রাকায়াত নফল নামায পড়ে এ দোয়া কর-
(আরবী*************)
আয় আল্লাহ! আমি তোমার এলেমের ভিত্তিতে তোমার নিকটে মংগল কামনা করছি এবং তোমার কুদরতের দ্বারা তোমার বিরাট ফযল ও করম ভিক্ষা চাচ্ছি। কারণ তুমি কুদরতের মালিক এবং আমি শক্তিহীন। তুমি সব জান, আমি জানি না এবং তুমি গায়েবের কথাও ভালভাবে জান।
আয় আল্লাহ! তোমার জ্ঞান মতে এ কাজ যদি আমার জন্যে, আমার দ্বীন ও দুনিয়ার জন্যে এবং শেষ পরিণামের দিক দিয়ে মংগলকর হয়, তাহলে তা আমার ভাগ্যে লিখে দাও। আমার জন্যে তা সহজ করে দাও এবং তা আমার জন্যে বরকতপূর্ণ করে দাও। আর যদি এ কাজ আমার জন্যে, আমার দ্বীন ও দুনিয়ার জন্যে এবং পরিণামের দিক দিয়ে অমংগলকর হয় তাহলে তা আমা থেকে দূরে রাখ েএবং আমাকে তার থেকে বাঁচাও এবং আমার ভাগ্যে মংগল লিখে দাও যেখানেই তা হোক এবং তারপর প্রতি আমাকে সন্তুষ্ট এবং অবিচল থাকার তাওফীক দাও।