নামায পড়ার বিস্তারিত নিয়ম পদ্ধতি
যখন কেউ নামায পড়ার এরাদা করবে তখন তাকে এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে হবে যে, নামাযের শর্তগুলোর মধ্যে কোনটা বাদ যায় নি তো। তারপর একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে ধারণা করতে হবে যে, সে আল্লাহর সামনে দাঁড়িযে আছেন। তারপর একনিষ্ঠ হয়ে পূর্ণ অনুভূতির সাথে নিম্নের দোয়া পড়ে নেবে।
(আরবী***************)
আমি পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আমার মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি আসান ও যমীন পয়দা করেছেন এবং আমি তাদের মধ্যে নই যারা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। বস্তুত আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু একমাত্র আল্লাহরই জন্যে যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের মালিক প্রভু। তাঁর কোন শরীক নেই আমার উপরে তাঁরই হুকুম হয়েছে এবং অনুগতদের মধ্যে আমিই সকলের প্রথম অনুগত। (আল-আনয়াম)
অতপর নামাযী সোজা হয়ে দাঁড়িযে নামাযের নিয়ত করবে। অ্থাৎ মনে এ এরাদা করবে যে, সে অমুক ওয়াক্তের এতো রাকয়াত নামায পড়ছে। নিয়ত আসলে মনের এরাদার নাম। আর এটারই প্রয়োজন। (তবে এ এরাদাকে শব্দের দ্বারা মুখে উচ্চারণ করা ভালো)। যেমন “আমি মাগরেবের তিন রাকয়াত ফরয নামায পড়ছি।” আর যদি ইমামের পেছনে নামায পড়া হয় তাহলে এ নিয়তও করতে হবে যে,“এ ইমামের পেছনে নামায পড়ছি।”[মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে নিয়ত করা ভালো। কিন্তু তার জন্যে এতটুকু বলাই যথেষ্ট “আমি অমুক ওয়াক্তের এত রাকয়াত নামায পড়ছি।” যেমন “যোহরের চার রাকয়াত ফরয পড়ছি” সুন্নাত অথবা নফল যদি হয় তাহলে বলবে, “যোহরের দু’রাকয়অত সুনআত বা নফল পড়ছি।”। এছাড়া সাধারণত নিয়তের যে লম্বা লম্বা কথাগুলো বলা হয় তা অনাবশ্যক। বরঞ্চ তাতে নামাযের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। যেমন কেউ শুরু থেকেই ইমামের পেছনে রয়েছে। একামত শেষ হতেই ইমাম তাকবীর তাহরীমা বলে নামায শুরু করলেন আর এ ব্যক্তি নিয়তের লম্বা চওড়া বাক্যগুলো বলতে থাকলো। ফলে সে ইমামের সাথে তাকবীরে উলাতে শরীক হওয়া থেকে বঞ্চিত হলো। অথবা মনে করুন, ইমাম রুকুতে রয়েছে, মুক্তাদী তাকবীর তাহরীমা বলে রুকুতে শরীক হতে পারতো, কিন্তু সে দাঁড়িয়ে মুখ দিয়ে লম্বা লম্বা নিয়তিই আওড়াচ্ছে। এ দিকে ইমাম রুকু থেকে উঠে পড়েছেন। মুক্তাদীর সে রাকয়াত আর পাওয়া হলো না। এ জন্যে এটিই মুনাসেব যে নিয়তের সংক্ষিপ্ত জরুরী কথাগুলো বললেই যথেষ্ট হবে। অযথা অপ্রয়োজনীয় কথা বাড়াতে গিয়ে নিজেকেপেরেশান করা ঠিক নয়।]
তাকবীর
দেহকে স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। দু’ পায়ের মাঝখানে অন্ততঃ চার আংগুল ফাঁক যেন অবশ্যই থাকে। দৃষ্টি সিজদার স্থানের উপর রাখুন এবং নিয়তের সাথে সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু’ হাত কানের গোড়া পর্যন্ত উঠান, যেন হাতুলি কেবলার দিকে থাকে এবং আংগুলগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় খোলা থাকে। তারপর দু’হাত নাভির নীচে এমনভাবে বাঁধুন যেন ডান হাতের হাতুলি বাম হাতের পিঠের উপর থাকে। ডান হাতের বুড়ো আংগুল ও ছোটো আংগুল দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরুন। ডান হাতের বাকী আংগুলগুলো বাম হাতের উপর ছড়িযে রাখুন। [আহলে হাদীসের নিয়ম এই যে, নারী পুরুষ উভয়েই বুকের উপর হাত বাঁধবে। তাঁরা আরও বলেন, নারী-পুরুষ উভয়ই কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।]
তারপর নিম্নের দোয়া বা সানা পড়ুন:- (আরবী***************)
তুমি পাক ও পবিত্র, হে আল্লাহ! তুমিই প্রশংসার উপযুক্ত। তুমি বরকতদানকারী এবং মহান। তোমার নাম ও মর্যাদা বহু উচ্চে। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। [আহলে হাদীসগণ নিম্নের দোয়া পড়েন। (আরবী****************)]
সানার পর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পুরা পড়ুন।
সূরা ফাতেহা ও কুরআন পাঠ
তারপর সূরায়ে ফাতেহা পড়ে আমীন বলুন। আর যদি আপনি মুক্তাদি হন তাহলে সানা পড়ার পর চুপচাপ ইমামের কেরায়াত শুনুন।[আহলে হাদীসগণ ইমামের পেছনে আস্তে আস্তে সূরা ফাতেহা পড়েন।] ইমাম সূরায়ে ফাতেহা শেষ করলে আস্তে আমীম বলুন। [যেসব নামায কেরায়াত উচ্চস্বরে পড়াহয় তাতে আহলে হাদীসগণ ইমামের পেছনে উচ্চস্বরে আমীন বলেন।] তারপর কুরআনের কোনো সূরা বা কয়েকটি আয়াত পড়ৃন অন্ত ছোট ছোট তিনটি আয়াত। আপনি মুক্তাদি হলে চুপ থাকতে হবে।
রুকু
কেরায়াত করার পর ‘আল্লাহ আকবার’ বলে রুকুতে যান।[আহলে হাদীসগণ রুকুতে যাবার সময় রুকু থেকে উঠার সময় দু’রাকয়াত পরে তৃতীয় রাকায়াতের জন্যে উঠার সময় ‘রফে ইয়াদাইন’ করেন। অর্থ্যাৎ কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠান।] রুকুতে হাত হাঁটুর উপর রেখে আঙ্গুল দিয়ে হাঁটু ধরুন। দু’হাত সটান সোজা রাখুন। রুকুর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, মাথা যেন কোমর থেকে বেশী নীচে নেমে না যায় অথবা উঁচু না হয়। বরঞ্চ কোমর এবং মাথা একেবারে বরাবর থাকবে। তারপর তিনবার নিম্ন তাসবীহ পড়বেন।
রুকুর তাসবীহ
(******) সমস্ত দোষত্রুটি থেকে পাক আমার মহান প্রভু।[আহলে হাদীসগণ পড়েন (আরব*ি*******) পাক ও মহান তুমি আয় আল্লাহ। আমার প্রভুর প্রশংসার অধিকারী। হে আমার প্রভু আমাকে মাফ করে দাও।]
এ তাসবীহ (*******) তিনবারের বেশী পাঁচ, সাত নয় অথবা আরও বেশ বার বলতে পারেন। যদি আপনি ইমাম হন তাহলে মুক্তাদীদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। এতো বেশী পড়বেন না যাতে তাঁরা পেরেশানী বোধ করেন। তবে যতোবারই পড়ৃন বেজোর পড়বেন।
কাওমা
কাওমা রুকুর পরে (আরবী***********) (আল্লাহ তার কথা শুনেছেন, যে তাঁর তারীফ করেছেন) বলে বিলকুল সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং বলুন (*******) (হে আমাদের রব, সমস্ত প্রশংসা তোমারই)। যদি আপনি মুক্তাদি হন তাহলে দ্বিতীয়টি পড়বেন। আর ইমাম হলে প্রথমটি পড়বেন[ এ অবস্থায় আহলে হাদীস বলেন (আরবী********)]
সিজদা
তারপর তাকবীর বলে সিজদায় যান সিজদা এভাবে করুন যেন প্রথমে দু’হাঁটু যমীনে রাখেন, তারপর দু’হাত, তারপর নাক এবং তারপর কপালে। চেহারা দু’হাতের মাঝখানে থাকবে। বুড়ো আংগুল কানের বরাবর থাকবে। হাতের আংগুল মেলানো থাকবে এবং সব কেবলামুখী থাকবে। দু’কনুই যমীন থেকে উপরে থাকবে এবং হাঁটুও রান থেকে আলাদ থাকবে এবং পেটও রান ধেতে আলাদা থাকবে। কনুই যমীন থেকে এতটা উঁচুতে থাকবে যেন একটা ছোট ছাগল ছানা ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। দু’পা আংগুলের উপর ভর করে মাটিতে লেগে থাকবে এবং আংগুলগুলো কেবলামুখী থাকবে।
সিজদায় অন্ততপক্ষে তিনবার থেমে থেমে (*****) পড়ুন।
জালসা
তারপর তাকবীর বলে প্রথমে কপাল তারপর তাহ উঠিয়ে নিশ্চিন্ত মনে বসুন। বসার পদ্ধতি এই যে, ডান পা খাড়া থাকবে এবং বাম পা বিছিয়ে তার উপর দু’জানু হয়ে বসুন। তারপর দু’হাত দু’জানুর উপর এমনভাবে রাখন যেন আংগুলগুলো হাটুর উপর থাকে। [জালসায় পড়ার জন্যে দোয়া হাদীসে বর্ণিত আছে। আহলে হাদীস এ দোয়া পড়ার তাকীদ করেন। (আরবী*********)
(হে আল্লাহ! আমায় মাফ কর, আমার উপর রহম কর, আমাকে পথ দেখাও, আমাকে সচ্ছলতা দান কর এবং আমাকে রুজি দান কর( আবুদ দাউদ)।]
তারপর তাকবীর বলে দ্বিতীয় সিজদায় যান।
প্রথম সিজদার মতো এ সিজদা করুন। দু’সিজদা করার পর তাকবীর বলে দ্বিতীয় রাকয়াতের জন্যে দাঁড়ান। [আহলে হাদীসের মতে, প্রথম এবং তৃতীয় রাকায়াতের সিজদা করার পর একটু বসে তারপর দাঁড়ানো উচিত। সিজদা থেকে সরাসরি উঠা ঠিক নয়।]তারপর বিসমিল্লাহ, সূরা ফাতেহা এবং কেরায়াত করে দ্বিতীয় রাকায়াত পুরা করুন।
কা’দা(***)
তারপর প্রথম রাকয়াতের মতো রুকু, কাওমা, সিজদা ও জালসা করুন এবং দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে কা’দায় বসে যান। কা’দায় বসার ঐ একই পদ্ধতি যা, জলসায় বসার বয়ান করা হয়েছে। তারপর নিশ্চিন্ত মনে থেমে থেমে তাশাহ্হুদ পড়ুন।
তাশাহহুদ
(আরবী*****************)
সমস্ত প্রশংসা এবাদত ও সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর জন্যৌ। হে নবী (স) আপনার উপর সালাম। তাঁর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক আপনার উপর। সালামতি (শান্তি) হোক আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড় ইলাহ নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (স) তাঁর বান্দাহ ও রসূল।
লা ইলাহা বলবার সময় ডান হাতের বুড়ো আংগুল এবং মধ্যমা আংগুল দিয়ে চক্র বানিয়ে অন্যান্য আংগুলগুলো বন্ধ করে শাহাদাত আংগুল আসমানের দিকে তুলে ইশারা করুন এবং ইল্লাল্লাহ বলার সময় আংগুল নামিয়ে নিন। সালাম ফেরা পর্যন্ত আংগুল গুলো ঐভাবে রাখুন।
যদি চার রাকায়াতওয়ালা নামায হয় তাহলে তাশাহুদ পড়ার পর তাকবীর বলে তৃতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়ান। তারপর ঐভাবে বিসমিল্লাহ ও সূরা ফাতেহা পড়ুন। যদি সুন্নাত বা নফল নামায হয় তাহলে তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা বা কয়েকটি আয়াত পড়ুন। যদি ফরয নামায হয় তাহলে তৃতীয় এবয় চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতেহার পর কুরআনের কোন অংশ পড়বেন না। শুধু সূরা ফাতেহা পড়ে রুকুতে চলে যান।
চতুর্থ রাকয়াতের উভয় সিজদা করার পর ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়ুন। তারপর নিম্ন দরুদ শরীফ পড়ুন
(আরবী*****************)
হে আল্লাহ! সালাম ও রহমত বর্ষণ কর মুহাম্মদ (স) ও তাঁর পরিবারের উপর যেমন তুমি রহমত নাযিল করেছ ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পরিবারের উপর। হে আল্লাহ! বরকত নাযিল কর মুহাম্মদ (স) ও তাঁর পরিবারের উপর যেমন তুমি বরকত নাযিল করেছ হযরত ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পরিবারের উপর।