মুক্তাদীর হুকুম
১. মুক্তাদীর নামায সহী হওয়ার শর্ত এই যে, তাকেও নিয়ত করতে হবে এই বলে, “আমি এ ইমামের একতেদায় নামায পড়ছি।”
নিয়তের জন্যে এ জরুরী নয় যে, সে মুখের দ্বারা তা প্রকাশ করবে। মনে মনে ধারণা করাই যথেষ্ট।
২. মুক্তাদীর জন্যে জরুরী এই যে, সে ইমামের পেছনে দাঁড়াবে। মুক্তাদী একজন হলে ইমামের বরাবর দাঁড়াবে, আগে দাঁড়ালে নামায হবে না।
এতটুকুতেই আগে দাঁড়ানো হবে যদি তার পা ইমামের পা থেকে এগিয়ে যায়।
৩. নামাযের যাবতীয় ফরয ও ওয়াজেবগুলোতে ইমামের অনুসরণ করা মুক্তাদীর জন্যে ওয়াজেব। তবে নামাযের সুন্নাতগুলোতে ইমামের মতো করা জরুরী নয়। অতএব এমাম যদি শাফেয়ী মতালম্বী হন এবং রুকুতে যেতে ও উঠতে ‘রফে’ ইয়াদাইন করেন, তাহলে হানাফী হানাফী মতাবলম্বী মুক্তাদীর এ সুন্নাতে ইমামের অনুসরণ ওয়াজেব হবে না। এমনিভাবে ফজরের নামাযের যদি দোয়া কুনুত পড়েন, তাহলে হানাফী মুক্তাদীর জন্যে তা পড়া জরুরী নয়। তবে বেতের নামাযের শাফয়ী ইমাম রুকুর পরে দোয়াকুনুত পড়লে হানাফী মুক্তাদীর জন্যেও রুকুর পরে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজেব হবে। এ জন্যে যে, বেতের নামাযে কুনুত পড়া ওয়াজেব।
৪. জামায়াতে একজন মুক্তাদী হলে এবং সে বালেগ অথবা নামালেগ ছেলে হোক, তাকে ইমামের ডান দিকে বরাবর অথবা একটু পেছনে হটে দাঁড়াতে হবে। ইমামের পেছনে অথবা বামে দাঁড়ালে মাকরুহ হবে। অবশ্যি মুক্তাদী কোন মহিলা হলে তাকে সকল অবস্থায় পেছনে দাঁড়াতে হবে।
৫. প্রথম কাতারে জায়গা থাকতে দ্বিতীয় কাতারে দাঁড়ানো মাকরূহ হবে। আর প্রথম কাতারে যদি জায়গা না থাকে তাহলে দ্বিতীয় কাতারে একা দাঁড়ানো মাকরুহ হবে [হযরত ওয়াবেসা বিন মা’বাদ (রা) বলেন, একবার নবী (স) দেখলেন যে, এক ব্যক্তি কাতারের পেছনে একাই দাঁড়িযে নামায পড়ছে। তখন নবী (স) তাকে পুনরায় নামায পড়তে বললেন- (তরমিযী, আবু দাউদ)।] এমন অবস্থায় মুক্তাদীর উচিত হবে আগের কাতার থেকে এমন এক ব্যক্তিকে পেছনে টেনে আনা- যার সম্পর্কে এ বিশ্বাস থাকে যে, সে খারাপ মনে করবে না। আর যদি আগের কাতারে এ ধরনের কোন লোক পাওয়া না যায়, তাহলে অগত্যা একাই দাঁড়াবে।
৬. মুক্তাদীর জন্যে জরুরী যে, সে কেরায়াত ব্যতীত সকল আরকানে ইমামের সাথে শরীক থাকবে। যদি কোন রুকনে শরীক না হয় তাহলে নামায দুরস্ত হবে না। যেমন, ইমাম রুকুতে গেলেন এবং তারপর রুকু থেকে উঠলেন। কিন্তু মুক্তাদী রুকু করলো না, অথবা ইমামের রুকু থেকে উঠার পর রুকু করলো, তাহলে মুক্তাদীর নামায হবে না। তবে যদি মুক্তিাদী কিচু বিলম্বে রুকুতে গেল অথবা একটু আগে গেল এবং তারপর ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হলো, তাহলে নামায সহীহ হবে।
মুক্তাদীর প্রকার।
জামায়াতে শরীক হওয়ার দিক দিয়ে মুক্তাদী তিন প্রকারের, যথা- মুদরেক, মসবুক, লাহেক।
মুদরেক
যে নামাযী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বরাবর ইমামের সাথে নামাযে শরীক রইল তাকে মুদরেক বলে।
মসবুক
এক বা একাধিক রাকয়াত হয়ে যাওয়ার পর যে নামাযী জামায়াতে শরীক হয় তাকে মসবুক বলে।
লাহেক
লাহেক এমন নামাযীকে বলে, যে জামায়াতে শরীক হলো বটে, কিন্তু শরীক হওয়ার পর এক বা একাধিক রাকয়াত নষ্ট হয়ে গেল-অযু যাওয়ার কারণ হোক, ঘুমিয়ে পড়ার কারণে হোক, পায়খানার জন্যে জামায়াতে শরীক থাকতে পারলো না অথবা কোন অসাধারণ কারণ বশত রুকু সিজদা করতে পারলো না।
মসবুকের মাসয়ালা
মসবুক জামায়াতে শরীক হয়ে প্রথমে ইমামের সাথে ঐসব বাকী নামায আদায় করবে যা সে ইমামের সাথে পাবে। তারপর ইমাম নামায শেষ করে সালাম ফিরবে, তখন মসবুক সালাম ফিরাবে না বরঞ্চ তার ছুটে যাওয়া রাকয়াতগুলো আদায় করার জন্যে উঠে দাঁড়াবে। তারপর ছুটে যাওয়া রাকায়াতগুলো এককী নামাযীর ন্যায় আদায় করবে। অর্থাৎ কেরায়াতও করবে এবং ভুল হলে সিজদা সহও করবে। এমন ক্রমানুসারে নামায পড়বে যে, প্রথমে কেরায়াত ওয়ালা রাকয়াত সে ইমামের সহিত পেয়েছে তার হিসাবে কা’দায় বসবে। যেমন ধরুন, যোহরের জামায়াতে এক ব্যক্তি তিন রাকয়াত হয়ে যাওয়ার পর শরীক হলে। তাহলে সে ইমামের সাথে এক রাকয়াত পড়ার পর উঠে দাঁড়াবে এবং ছুটে যাওয়া তিন রাকয়াত এমনভাবে পড়বে যে, প্রথম রাকয়াতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলিয়ৈ পড়বে এবং কা’দা উলা (প্রথম বৈঠক) করবে। এ জন্যে এ রাকায়াত তারপরও পুরা নামাযের হিসাবে দ্বিতীয় রাকায়। তারপর দ্বিতীয় রাকায়াতেও সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলিয়ে পড়বে এবং তারপর কা’দা করবে না। এজন্যে যে এ তার প্রাপ্ত রাকয়াতগুলোর মধ্যে তৃতীয় রাকয়াত হচ্ছে। তারপর তৃতীয় রাকয়াতে সূরা ফাতেহার সাথে কোন সূরা পড়বে না। কা’দায়ে আখীরায় (শেষ বৈঠক) বসে নামায শেষ করে সালাম ফিরাবে।
লাহেকের মাসয়ালা
লাহেক প্রথমে ঐ রাকয়াতগুলো আদায় করবে যা ইমামের সাথে পড়তে নষ্ট হয়েছে এবং এ রাকয়াতগুলো মুক্তাদীর মতো আদায় করবে। অর্থাৎ কেরায়াত করবে না, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। যদি কোন এমন ভুল হয় যার জন্যে সহু সিজদা ওয়াজেব হয় তাহলে তাও করবে। তার এ ছুটে যাওয়া নামাযগুলো আদায় করার পর জামায়াতে শরীক হবে এবং বাকী নামায ইমামের সাথ পুরা করবে। আর ইত্যবসরে ইমাম যদি নামায শেষ করেন, তাহলে লাহেক বাকী নামায আলাদা শেষ করবে। যেমন ধরুন এক ব্যক্তি প্রথম থেকে ইমামের সাথে জামায়াতে শরীক আছে। তারপর এক রাকয়াত পর তার অযু নষ্ট হয়ে গেল। তারপরও সে চুপচাপ গিয়ে অযু করলো। এর মধ্যে ইমাম আর এক রাকায়াত পড়ে ফেলেছেন। তাহলে এ সময়ে লাহেক তার ছুটে যাওয়া রাকয়াতগুলো এমনভাবে আদায় করবে যেমন মুক্তাদী করে। অর্তাৎ কেরায়াত প্রভৃতি পড়বে না। এর মধ্যে যদি ইমাম জামায়াত শেষ করে ফেলেন তাহলে লাহেক তার বাকী রাকয়াতগুলো আলাদা পড়ে নেবে।
নামাযে কেরায়াতের মাসয়ালা
১. কুরআন মজীদ সহী পড়া ওয়াজেব। সহীহ পড়ার অর্থঞ এই যে, প্রত্যেক অক্ষর ঠিক ঠিক উচ্চারণ করতে হবে অর্থাৎ (******) প্রভৃতি অক্ষরগুলো উচ্চারণে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়। চেষ্টা করেও যদি কোন অক্ষর সহীহ উচ্চারণ না হয় তাহলে অপরাগই থাকতে হবে। কিন্তু বেপরোয়া হয়ে ভুল পড়া এবং সহীহ পড়ার অভ্যাস না করা বড়ো গুনাহ।
২. পরয নামাযগুলোর প্রথম দু’রাকায়াতের সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা অথবা বড়ো এক আয়অত অথবা ছোট তিন আয়াত পড়া ওয়াজেব। বেতর, সুননাত ও নফল নামাযের সব রাকয়াতে সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা অথবা এক বড়ো আয়াত অথবা ছোটো আয়াত পড়া ওয়াজেব। ফরয নামাযের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকয়াতে সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা পড়া চলবে না। শুধু ফাতেহা পড়ে রুকুতে যাবে।
৩. ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকয়াত বাদে সকল নামাযের প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতেহা পড়া ওয়াজেব তা ফরয হোক, ওয়াবেজ, সুন্নাত অথবা নফল হোক।
৪. প্রথমে সূরা ফাতেহা এবং তারপর কোন সূরা অথবা তিন ছোটো আয়াত পড়া ওয়াজেব। যদি কেউ প্রথমে অন্য সূরা পড়ে এবং পরে সূরা ফাতেহা তাহলে ওয়াজেব আদায় হবে না।
৫. ফজর, মাগরেব, এশা, জুমা এবং দুঈদের নামায জাহরী। অর্থাৎ মাগরেব এবং এশার প্রথম দু’রাকায়াতের এবং বাকী সকল নামায ইমামের উচ্চস্বরে কেরায়াত করা ওয়াজেব। যদি ভুলে ইমাম আস্তে (কেরায়াত করে তাহলে সিজদা সহু করার দরকার হবে। আর ইচ্ছা করে আস্তে পড়লে নামায দ্বিতীয়বার পড়তে হবে।
৬. যোহর-আসর নামায ‘সিররী’ অর্থাৎ এ দু’নামাযে ইমাম এবং মুক্তাদির আস্তে আস্তে কেরায়াত করা ওয়াজেব। বেতরের নামাযেওর একাকী পাঠকারীর জন্যে আস্তে কেরায়াত ওয়াজেব।
৭. যদি কেউ ফজর, মাগরেব ও এশা একা পড়ে তার জন্যে উচ্চস্বরে কেরায়াত করা ভালো।
৮. ইমাম ফজর, মাগরেব ও এশার নামায কাযা পড়াচ্ছেন। তার জন্যেও উচ্চস্বরে কেরায়াত ওয়াজেব।
৯. যে সূরা প্রথম রাকয়াতে পড়া হয়েছে তা আবার দ্বিতীয় রাকয়াতে পড়া জায়েয। কিন্তু এমন করা ভালো নয়।
১০. সিররী নামাযেও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে কেরায়াত করা জরুরী। খেয়ল করে মুখ বন্ধ করে মনে মনে পড়লে হবে না।
১১. কেরায়াত খতম হওয়ার পূর্বে রুকুর জন্যে ঝুঁকে পড়া এবং ঝুঁকে পড়া অবস্থায় কেরায়াত করা মাকরুহ।
১২. ফরয নামাযে ইচ্ছা করে কুরআনের ক্রমিক ধারার বিপরীত কেরায়াত করা মাকরুহ। যেমন, কেউ ‘আল কাফেরুন’ প্রথম রাকয়াতে পড়লো এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে ‘আাম তারা’। ভুলে পড়লে মাকরুহ হবে না। নফল নামাযে ইচ্ছা করেও কেই ক্রমিক ধারা অবলম্বন না করলেও মাকরূহ হবে না।
১৩. একই সূরায় কয়েক আয়াত এক স্থান থেকে পড়া এবং দু’আয়াতের কম ছেড়ে দ্বিতীয় রাকয়াতে সামনে থেকে পড়া মাকরুহ। এভাবে যদি কেউ দ’সূরা এভাবে পড়ে যে, মাঝখানে এমন এক সূরা যার মধ্যে তিন আয়াত আছে তা ছেড়ে দিয়ে সামনের সূরা পড়ে তাহলে মাকরূহ হবে। যেমন প্রথম রাকয়াতে ‘সূরা লাহাব’ পড়লো এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে ‘আল ফালাক’ পড়লো মাঝখানে ‘কুলহু আল্লাহ ছেড়ে দিল, তাহলে মাকরুহ হবে। কিন্তু শুধু ফরয নামাযে এরূপ করা মাকরূহ –নফল নামাযে নয়।
১৪. এক রাকয়অতে দু’সূরা এমনভাবে পড়া যে, মাঝখানে এক বা একাধিক আয়াত ছেড়ে দেয়া হলো তাহলে মাকরূহ। কিন্তু এটাও ফরয নামাযে মাকরূহ হবে- নফলে নয়।
১৫. যদি কারো কুরআানেসর কোন আয়াত মনে না থাকে। যেমন কেউ নতুন মুসলমান হয়েছে এবং সবে মাত্র নামায শুরু করেছে এবং তার কুরআনের কোন সূরা বা আয়াত মুখস্ত হয়নি। তাহলে যতা তাড়াতাড়ি হোক তার মুখস্ত করা উচিত। এ সময় কেরায়াতের জায়গায় ‘সুবহানাল্লাহ’ অথবা ‘আলহামদুল্লিাহ’ প্রভৃতি পড়বে। কিন্তু কুরআনের সূরা –আয়াত মুখস্ত করতে অবহেলা করলে গুনাহগার হবে।
নামাযের মসনূন কেরায়াত
১. সফর অবস্থায় সূরা ফাতেহার পর যে কোন সূরা পড়া যায় কিন্তু সফর ব্যতী বাড়ীতে অবস্থানকালে ইমাম একাকী নামাযী উভযের জন্যে নামাযে কিচু বিশেষ পরিমাণে সূরা পড়া সুন্নাত।
** ফযর এবং যোহার নামাযে সূরা ‘হুজরাত’ থেকে সূরা ‘বুরুজ’ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্য থেকে পড়া সুন্নাত। এ সূরাগুলোকে ‘তোয়অলে মুফাসসাল’ (*****) বলে।
আসর এবং এশার নামাযে সূরা ‘তারেক’ থেকে সূরা বাইয়্যেনাহ’ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্যে পড়া মসনূন। এগুলোকে আওসাতে মুফাসসাল (*******) বলে।
** মাগরেবের নামাযে সূরা ‘যিলযাল’ থেকে সূরা ‘নাস’ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্য থেকে পড়া মসনূন। এগুলোকে বল ‘কেসারে মুফাসসাল।’ )(********)
২. কোন সূরা নিজের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে নেয়া শরীয়তের খেলাপ। অবশ্রি নবী (স) যেসব নামাযে যেসব সূরা অধিকাংশ সময়ে পড়তেন সেসব নামাযে সেসব সূরা মসনূন।
** ফজরের সুন্নাতে নবী (স) অধিকাংশ সময়ে প্রথম রাকয়াতে সূরা ‘কাফেলূণ” এবং দ্বিতীয় রাকয়অতে সূরা এখলাস’ পড়তেন।
**বেতের নামাযে নবী (স) প্রথম রাকয়াতে সূরা ‘আল আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে সূরা কাফেরুন এবং তৃতীয় রাকয়অতে সূরা ‘এখলাস’ পড়তেন।
** জুমার দিন ফজরের নামাযে তিনি প্রায়ই সূরা আলিফ লাম মীম সাজদাহ এবং সূরা আদ-দাহর পড়তেন।
৩. জুমার নামাযে নবী (স) প্রায়ই সূরা আল-আ’লা এবং সূলা আল গাশিয়াহ পড়তেন অথবা সলা আল জুমআ’হ এবং সূরা মুনাফেকুন পড়তেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, নবী (স) জুমার দিন ফজর নামাযে (****) এবং (******) আর জুমার নামাযে সূরা জুমআা এবং সূরা মুনাফেকুন পড়তেন।
৪. ফরয নামাযের প্রথম রাকয়াতে কেরায়াত দ্বিতীয় রাকয়াতের কেরায়াত থেকে লম্বা হওয়া উচিত। এ জন্যে নবী (স) দ্বিতীয় রাকয়অতে তুলনায় প্রথম রাকয়াতে লম্বা সূরা পড়তেন-(বুখারী)।
৫. ফজরের নামাযে সকল নামাযের কেরায়াত থেকে লম্বা কেরায়াত করা উচিত। কারণ সে সময়ে মন ধীরস্থির থাকে এবং একাগ্রতা হয়। উপরন্তু সকাল ও সন্ধায় ফেরেশতাদের সম্মেলন হয়। প্রথম রাকয়অতের কেরায়াত দ্বিতীয় রাকয়াতের দেড়গুণ হওয়া উচিত।
সিজদায়ে তেলাওয়াত
কুরআন পাকে এমন চৌদ্দটি স্থান আছে যা তেলাওয়াত করলে অথবা শুনলে এক সিজদা ওয়াজেব হয়ে যায়। নামাযে ইমামের নিক থেকে শুনা হোক, অথবা স্বয়ং কেউ পড়ুক, নামাযের বাইরে কেউ তেলাওয়াত করুক বা শুনুক এবং পুরা আয়অত পড়া হোক বা শুনা হোক, অথবা শুধু সিজদার আয়াত পূর্বাপর মিলে পড়া হো-সকল অবস্থায় সিজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজেব হবে। ****১
ইমামের পেছনে কেরায়াতের হুকুম
নামাযে ইমামের পেছনে মুক্তাদীর কেরায়াত দুরস্ত নয়। উচ্চ শব্দে ইমামের পেছনে কেরায়াত করা মাকরুহ তাহরীমি। এ জন্যে যে, এতে ইমামের কেরায়াত বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এবং নবী (স) তা করতে নিষেধ করেছেন।
একবার তিনি ফজরের নামাযের পর সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কেউ কি আমার পেছনে কেরায়াত করছিলে?
এক সাহাবী বললে, জ্বি হাঁ, আমি করছিলাম।
এরশাধ হলো- আমি জিজ্ঞাসা করি, তোমরা আমার সাথে কুরআন পড়তে ঝগড়া কর কেন?
ইমামের পেছনে নিঃশব্দে কেরায়াত করা মাকরূহ নয়, কিন্তু জরুরীও নয়। এ জন্যে যে, ইমামের কেরায়াত সকল মুক্তাদীর
***১ সিজদা তেলাওয়াতের বিস্তারিত বিবরণ এ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে দ্রস্টব্য।
কেরায়াত বলে গণ্য করা হয়। হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন-
যে ব্যক্তি কোন ইমামের পেছনে নামায পড়ছে তাহলে ইমামের কেরায়াত মুক্তাদীর কেরায়াত বলে গণ্য হবে।***১
ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা পড়া
ইমাম যখন উচ্চশব্দে কেরায়অত করবেন, যেমন ফজর, এশা ও মাগরেব প্রবৃতি জাহরী নামাযগুলোতে, তখন মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়া মাকরুহ। কিন্তু ইমাম যখন নিঃশব্দে কেরায়অত করবে, যেমন যোহর, আসর, তখন সুসমঞ্জস্য মতবাদ এই যে, মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়া মুস্তাহাব। ইমাম মুহাম্মদ (র) ও সাবধান্যতা স্বরূপ মুক্তাদীর জন্যে সূরা ফাতেহা পড়া ভালো বলেছেন। ****২ যেমন হেদায়া গ্রন্থকার উদ্ধৃতি দিযেছেন-
(আরবী******************)
***১ [হাদীরেস শব্দগুলো নিম্নরূপ: (আরবী************)
ইমাম মুহাম্মদ (র) তাঁর মুয়াত্তার এ হাদীস দুটি সনদে বর্ণনা করেছেন এবং উভয় রাবী অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। এক সনদে ইমাম আবু হানীফঅ (র) এং অন্যটিতে মুসা ইবনে আবী আয়েশা (র)। আল্লামা ইবনে হাম্মাম বলেন, এ হাদীস সহীহ এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী। আল্লামা আইনী বলেন, এ হাদীস সহীহ। এক তো আবু হানীফা, তিনিও আবু হানীফাই অন্যজন মুসা ইবনে আবী আয়েশা (র)। তিনিও অত্যন্ত পরহেজগার এবং নির্ভরযোগ্য লোকের মধ্যে একজন। ইমাম বুখারী ও মুসলিম তার নিক থেকে রেওয়ায়েত করেছেন।]
***২[ ইমাম মালেকের মতও তাই যে, সিররী নামাযগুলোতে মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়া মুস্তাহাব। ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্মল-সিররী, জেহরী উভয় নামাযেই মুক্তাদীল সূরা ফাতেহা পাড় ফরয বলেছেন। আহলে হাদীরেস অভিমতও তাই।)]