নামাযের অধ্যায়
নামাযের বয়ান
ঈমানের পর ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামায। উচিত হলো এই যে, আকায়েদের অধ্যায়ের পরেই নামাযের হুকুম ও মাসয়ালা বয়ান করা। কিন্তু যেহেতু নামায আদায় করার জন্যে সকল প্রকার নাজাসাত থেকে পাক হওয়া অপরিহার্য, সে জন্য তাহারাতের বিশদ বিবরণের পর নামাযের হুকুম ও মাসয়ালা বয়ান করা হচ্ছে।
নামাযের অর্থ
নামায আমাদের একটি সুপরিচিত শব্দ। কুরআনের পরিভাষায় ‘সালাতের‘ স্থলে নামায ব্যবহৃত হয়। সালাত صلوة এর আভিধানিক অর্থ কারো দিকে মুখ করা, অগ্রসর হওয়া, দোয়া করা এবং নিকটর্তীত হওয়া। কুরআনের পরিভাষায় নামাযের অর্থ হলো আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেয়া, তাঁর দিকে অগ্রসর হওয়া, তাঁর কাছেই চাওয়া এবং তাঁর একেবারে নিকট হওয়া। এ এবাদত পদ্ধতির আরকানের শিক্ষা কুরআন দিয়েছে এবং তার বিস্তারিত ও খুটিনাটি পদ্ধতি নবী পাক (সা) শিখিয়ে দিয়েছেন।
(আরভীঁ*********১৪৯**************)
“এবং প্রত্যেক নামাযে নিজের দৃষ্টি ঠিক আল্লাহর দিকে রাখ এবং আন্তরিক আনুগত্যের সাথে তাঁকে ডাকো।” (আ’রাফ: ২৯)
(আরবী************) এবং সিজদা কর এবং আল্লাহর নিকটবর্তী হও” (আলাক : ১৯)
হাদীসে আছে :
-বান্দাহ ঐ সময়ে তার আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়, যখন সে আল্লাহর সামনে সিজাদায় থাকে (মুসলিম)।
-তোমাদের মধ্যে যখন কেউ নামাযে রত হয়, তখন সে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে। (বুখারী)।
কিন্তু আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেয়া, তাঁর নিকটবর্তী হওয়া ও তাঁর কাছে চাওয়ার তরীকা কি? তার একটি মাত্র উত্তরই সঠিক। তা ছাড়া আর যতো উত্তর তা সব ভুল এবং পথভ্রষ্টকারী। নবী (সা) যে তরীকা বলে দিয়েছেন তাই হচ্ছে সঠিক, নির্ভরযোগ্য এবং গৃহীত। নামাযের আরকান, নামাযের আযকার, সময়, রাকয়াতাদি এবং বিস্তারিত পদ্ধতি নবী (সা) শুধু মুখ দিয়েই শিক্ষা দিননি, বরঞ্চ সারা জীবন তার উপর আমল করে দেখিয়েছেন। েএ ব্যাপারে তাঁর কথা ও আমল হাদীসে অতি নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলোতে সংরক্ষিত আছে। এ নিয়ম পদ্ধতিতে হরহামেশা গোটা উম্মত নামায আদায় করে সকল রকম সন্দেহ থেকে একে পবিত্র রেখেছেন।
নামাযের ফযীলত ও গুরুত্ব
ঈমান আনার পরে একজন মুসলমানের কাছে সবচেয়ে প্রথম দাবী এই যে, সে নামায কায়েম করবে। আল্লাহ তায়ালার এরশাদ হচ্ছে :- (আরবী***************১৫০******)
“নিশ্চয় আমি আল্লহ। আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অতএব শুধু আমারই বন্দেগী কর এবং আমার ঈয়াদের জন্যে নামায কায়েম কর। “(তাহা : ১৪)
আকায়েদের ব্যাপারে যেমন আল্লাহর সত্তা ও গুনাবলীর উপর ঈমান গোটা দ্বীনের উত্স, তেমনি আমলের ব্যাপারে নামায হচ্ছে গোটা দ্বীনের আমলের ভিত্তি। এটাই কারণ যে, কুরআন পাকে সকল এবাদতের মধ্যে নামাযের সব চেয়ে বেশী তাকীদ করা হয়েছে। এবং তা কায়েম কারার উপরে এত জোর দেয়া হয়েছে যে, তার উপরই যেন গোটা দ্বীন নির্ভরশীল।
নামায ব্যতীত অন্য এবাদতগুলো বিশেষ বিশেষ লোকের উপর বিশেষ বিশেষ সময়ে ফরয হয়। যেমন হজ্জ এবং যাকাত শুধু ঐসব মুসলমানদের উপর ফরয যারা মালদার। রোযা বছরে শুধু একমাস ফরয। কিন্তু নামায এমন এক আমল যার জন্যে ঈমান ছাড়া আর কোন শর্ত নেই। ঈমান আনার সাথে সাথেই প্রত্যেক বালেগ ও আকেল লোকের উপর নামায ফরয হয় সে নারী হোক বা পুরুষ হোক আমীর হোক বা ফকীর হোক, স্বাস্থ্যবান হোক অথবা রোগী এবং মুকীম হোক বা মুসাফির। দিনে পাঁচাবার নামায ফরযে আইন। এমন কি সশস্ত্র যুদ্ধ ক্ষেত্রে যখন দুশমনের মুকাবিলার প্রতি মুহূর্তে আশংকা হয়, ঠিক তখনও নামায শুধু ফরযই নয়, বরঞ্চ জামায়াতে পড়ার তাকীদ আছে। সালাতে খওফের নামাযও জামায়াতে আদায় করার পদ্ধতি স্বয়ং কুরআনে রয়ান করা হয়েছে।
নামাযের তাকীদ ও প্রেরণার সাথে সাথে তার গুরুত্ব মনে বদ্ধমূল করার জন্যে কুরআন ভয়ানক পরিণাম [দক্ষিণ হস্তের অধিকারী লোক ব্যতীত প্রত্যেক লোক তার আমলের পরিণামে জাহান্নামে আবদ্ধ হয়ে থাকবে। দক্ষিন হস্তধারী লোকেরা বেহেশতের বাগানে অবস্থান করবে এবং পাপীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে এলো? তারা জবাবে দেবে, আমরা নামায পড়তাম না (মুদ্দাসসের ৩৮)] এবং বিরাট লাঞ্ছনার [যে দিন ভয়ানক কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হবে (কেয়ামতের দিন), তখন তাদেরকে (বেনামাযী পাপীদেরকে) সিজদার জন্যে ডাকা হবে। তখন তারা সিজদা করতে পারবেনা। তাদের দৃষ্টি নিম্ন দিকে হবে এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে ছেয়ে ফেলবে। এরা ঐসব লোক যাদেরকে (দুনিয়ায়) সিজদা করার জন্যে (নামাযের জন্যে) ডাকা হতো তখন তারা সুস্থ থাকা সত্ত্বেও সিজদা করতো না (কলম : ৪২-৪৩)] এমন ভয় দেখানো হয়েছে, যা নামায পরিত্যাগকারীগণ ভোগ করবে।
নবী (সা) নামাযের অসাধারণ গুরুত্ব ও ফযীলত এবং তা ত্যাগ করার ভয়ানক শাস্তির উপর বিভিন্নভাবে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন:
-মুমেন এবং কুফরের মধ্যে নামাযই পার্থক্যকারী – (মুসলিম)।
-যে ব্যক্তি নিয়মিত ভাবে নামায পড়বে, কেয়ামতের দিন সে নামায তার জন্যে নূর এবং ঈমানের প্রমাণ হবে এবং নাজাতের কারণ প্রমাণিত হবে।
যে ব্যক্তি মনোযোগ সহকারে নামায আদায় করবে না, তাহলে সে নামায না তার জন্যে নূর এবং ঈমানের প্রমাণ হবে, আর না সে নামায তাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাবে। এমন লোক কেয়ামতের দিন ফেরাউন, কারুন, হামান, উবাই বিন খালফের সাহচার্য লাভ করবে- (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী)।
হযরত আবুযর (রা) বয়ান করেন, একবার শীতের সময় যখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল, নবী (সা) বাইরে তশরীফ আনলেন এবং একটি গাছের দুটি ডাল ধরে ঝাঁকি দেয়া শুরু করলেন, এবং ঝরঝর করে (শুকনো) পাতা পড়তে লাগলো। তখন নবী (সা) বললেন, হে আবু যর যখন কোন মুসলমান একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকতার সাথে নামায পড়ে, তার গুনাহ ঠিক এভাবে ঝরে পড়ে যেমন এ গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ছে- (মুসনাদে আহমদ)।
একাবার নবী পাক (সা) সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন, যদি তোমাদের মধ্যে কারো ঘরের পাশ দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হয় যার মধ্যে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তাহলে বল, তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবীগণ (সা) আরয করলেন, না তবে শরীরে কোন ময়লাই থাকবে না। নবী (সা) বললেন, এ অবস্থা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের। আল্লাহ তায়ালা এসব নামাযের বদৌলতে তার গুনাগুলো মিটিয়ে দেবেন- (বুখারী, মুসলিম)।
হযরত আলী (রা) বলেন, নবী পাক (সা)এর জীবনের শেষ মুহূর্তে তাঁর মুখ দিয়ে এ কাথাগুলো বেরয়-নামায, নামায- (আল-আদাবুল মুফরেদ)।
দ্বীনের মধ্যে নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত জানার জন্যে কুরআন ও সুন্নাতের এসব সুস্পষ্ট এবং তাকীদসহ হেদায়াতের সাথে সাথে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, স্বয়ং নবী পাক (সা) এর নামাযের সাথে কত গভীর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি নামাযে চোখের শীতলতা অনুভব করতেন। যেমন তেমন কারণে তিনি মসজিদে গিয়ে এতো বেশী নফল নামায পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত।
যা হোক, কুরআন ও সুন্নাতের এসব বিশদ বিবরণের পর এ সত্য সুস্পষ্ট হয়ে পড়ে যে, নামায ঈমানের এক অপরিহার্য নিদর্শন। ঈমান হলে সেখানে অবশ্যই নামায হবে এবং যেখানে নামায হবে সেখানে গোটা দ্বীন আছে বুঝতে হবে। যদি নামায না থাকে তাহলে সেখানে দ্বীনের অস্তিত্ব ধারণা করা যায়না। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক (রা) তাঁর সরকারের দায়িত্বশীলদের লিখিত হেদায়েত দিতে গিয়ে এ সত্যের দিকেই তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, ব্যাপার এই যে, আমার কাছে তোমাদের সকল সমস্যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো নামায। যে ব্যক্তি তার নামাযের পুরাপুরি রক্ষনাবেক্ষণ করলো, সে তার দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণ করলো। আর যে তার নামায নষ্ট করলো, সে অবশিষ্ট দ্বীনকে আরও বেশী করে নষ্ট করবে। (মেশকাত)।
একামতে সালাতের শর্ত ও আদব
উপরে যে ফযীলত ও গুরুত্ব বয়ান করা হলো তা কিন্তু ঐ নামাযের যা সত্যিকার অর্থে নামায, যে নামায সকল বাহ্যিক আদব লেহায ও আভ্যন্তরীণ গুণাবলীর প্রতি লক্ষ্য রেখে পূর্ণ অনুভূতির সাথে আদায় করা হয়। এ জন্যে কুরআন নামায আদায় করার জন্যে আদায় করার মতো সাদাসিধে প্রকাশভঙ্গি অবলম্বন করার পরিবর্তে একামাত [(আরবী***১৫৩**)- এবং নামায কায়েম কর। (বাকারাহ-৪৩)] (প্রতিষ্ঠা করণ) এবং মুহাফেযাত [(আরবী********)- এবং যারা তাদের নামাযের রক্ষণাবেক্ষন করে (মুমেনুণ-৯) ] (সংরক্ষণ) শব্দগুলো ব্যবহার করেছে। একামাত ও মুহাফেযাতের অর্থ এই যে, নামায আদায় করতে গিয়ে ঐ সব যাহেরী আদব লেহাযের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যার সম্পর্ক নামাযের বাহ্যিক দিক ঠিক করার সাথে। সাথে সাথে ঐসব বাতেনী গুণাবলীরও পুরাপুরি ব্যবস্থা করতে হবে যার সম্পর্ক নামাযীর অন্তর ও তার আবেগ অনুভূতির সাথে।
নিম্নে সংক্ষেপে এসব আদাব (শিষ্টাচার) ও গুণাবলী বয়ান করা হচ্ছে:
১. তাহারাত বা পবিত্রতা
শরিয়ত পবিত্রতার যে পদ্ধতি ও হুকুমাবলী শিক্ষা দিয়েছে। তদুনযায়ী শরীর ও কাপড় ভালভাবে পাক সাফ করে আল্লাহর দরবারে হাযেরি দিতে হবে-
আরবী****************১৫৩*****)
“ঈমানদারগণ, জেনে রাখ যে, যখন তোমরা নামাযের জন্যে দাঁড়াবে তখন তোমাদের মুখবণ্ডল এবং কনুই পর্যন্ত দুটি হাত ভালো করে ধুয়ে পরিস্কার করে নেবে, মাথা মুসেহ করবে এবং দুপা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলবে। আর যদি জানাবাতের অবস্থায় থাক, তাহলে খুব ভালো করে পাক সাফ হয়ে যাবে। (মায়েদাহ: ৬)
অন্য স্থানে এরশাদ হয়েছে (আবরী*************১৫৪)
“এবং তোমার লেবাস-পোষাক ভালো করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও পাক করে নাও। (মুদ্দাসসির : ৪)
২. সময়ের নিয়মানুবর্তিতা
অর্থাৎ ঠিক সময়ে নামায আদায় করতে হবে। এ জন্যে নামায সময় নিষ্ঠার সাথে ফরয করা হয়েছে
(আরবী****************১৫৪**)
“অতএব নামায কায়েম কর। বস্তুত: নামায মুমেনদের উপর সময় নিষ্ঠার সাথে ফরয করা হয়েছে“। (নিসা: ১০৩)।
নবী (সা) বলেন : সর্বোত্কৃষ্ট বান্দাহ তারাই যারা সূর্যের রোদ এবং চাঁদ তারকারাজির গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে যাতে করে নামাযের সময় বয়ে না যায়।– (মুস্তাদরাকে হাকেমা)।
৩. নামাযের সময় নিষ্ঠা
অর্থাৎ কোন নামায নষ্ট না করে ক্রমাগত হরহামেশা নামায পড়তে হবে। প্রকৃতপক্ষে নামাযী তাদেরকে বলা যেতে যারা সময নিষ্ঠার সাথে এবং কোন নামায বাদ না দিয়ে নামায আদায় করে।
(আরবী**********১৫৪)
“কিন্তু ঐসব নামায আদায়কারী যারা সময় নিষ্ঠার সাথে সর্বদা নামায আদায় করে।“- (মাআরিজ : ২২-২৩)।
৪. কাতার বন্দীর ব্যবস্থাপনা
নামাযের কাতার সোজা রাখার রীতিমত ব্যবস্থা করতে হবে। নামাযের কাতার দুরস্ত করা ভালভাবে নামায পড়ার অংশ।
হযরত নু‘মান বিন বশীর বলেন, বনী (সা) আমাদের কাতার সোজা রাখার এমন ব্যবস্থা করতেন যেন তার দ্বারা তিনি তীরের লক্ষ্য সোজা করবেন। তারপর তিনি অনুভব করতেন যে, আমরা কাতার সোজা করার গুরুত্ব বুঝে ফেলেছি। আর একদিন তিনি বাইরে তশরীফ আনলেন এবং নামায পড়াবার জন্যে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীর বলতে যাবেন এমন সময় তাঁর নজর এমন এক ব্যক্তির উপর পড়লো যার বুক কাতার থেকে একটুখানি সামনে বেড়ে গিয়েছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর বান্দাহ, কাতার সোজা এবং বরাবর রাখ। নতুবা আল্লাহ তোমাদের মুখ একে অপরের বিরুদ্ধে করে দেবেন। (মুসলিম)
-নামাযের মধ্যে কাতার সোজা এবং বরাবর কর। কারণ কাতার সোজা করা একামাতে সালাতের অংশ বিশেষ- (বুখরী)।
অর্থাৎ কাতার দুরন্ত না করলে নামায পড়ার হক ভালভাবে আদায় হয় না।
কাতার সোজা ও বরাবর রাখার সাথে সাথে কাতারবন্দীর ব্যবস্থাও করতে হবে। অর্থাৎ বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ ঈমামের নিকটবর্তী থাকবেন। এটা তখনই সম্ভব যখন আহলে এলম লোকদের প্রতি সমাজের শ্রদ্ধাবোধ জাগবে এবং তাঁদের নিজেদেরও বিশিষ্ট মর্যাদার অনুভূতি থাকতে হবে এবং আগেভাগেই মসজিদে হাযির হয়ে ইমামের নিকট স্থান করে নেবেন।
হযরত আবু সমউদ (রা) বলেন, নবী (সা) এসে আমাদের কাতার সোজা ও বরাবর করার জন্যে আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেন, সোজা হও, কাতার বরাবর কর, আগে পিছে হয়ো না। তা না হলে তোমার একে অপরের প্রতি নারাজ হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলতেন, যারা জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে তারা আমার নিকটে দাঁড়াবে, তারপর তারা যারা মর্যাদার দিক দিয়ে তাদের নিকটে, তারপর তারা যারা জ্ঞানবুদ্ধি দিক দিয়ে দ্বিতীয় দলের নিকটবর্তী। (বুখারী)
৫. মনের প্রশান্তি ও মধ্যবর্তীতা
অর্থাৎ নিশ্চিন্ত ও প্রশান্ত মনে থেমে থেমে নামায আদায় করা দরকার যাতে করে কেরায়াত, কেয়াম, রুকু, সিজদা ও নামাযের যাবতীয় রুকন প্রভৃতির হক আদায় করা যায়।
(আরবী************)
নামায না বেশী আওয়ায করে আর না একেবারে অল্প আওয়ায পড়বে। বরঞ্চ মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করবে-(বনী ইসরাঈল : ১১০)
হযরত আবু হুরায়ারা (রা) বলেন, একবার নবী পাক (স) মসজিদের একধারে বসেছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে এলো এবং নামায পড়লো। তারপর নবী (স)-এর কাছে এলো এবং সালাম করলো। নবী (স) সালামের জবাব দিয়ে বললেন, আবার গিয়ে নামায পড়, তুমি ঠিকমত নামায পড়নি। সে ব্যক্তি পুনরায় নামায পড়ে এসে নবীকে সালাম করলো। নবী (স) বললেন, আবার গিয়ে নামায পড়, তোমার নামায ঠিক হয়নি। সে ব্যক্তি তৃতীয়বার নামায পড়ে অথবা তারপর আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন কিভাবে নামায পড়বো। নবী (স) বললেন, যখন তুমি নামায পড়ার ইরাদা কর তখন প্রথমে খুব ভালো করে অযু কর। তারপর কেবলার দিকে মুখ কর। তারপর তাকবীর তাহরীমা বলে নামায শুরু কর এবং কুরআনের যে অংশ সহজে পড়তে পার তা পড়। (কোন বর্ণনায় আছে, সূরায়ে ফাতেহা পড় এবং তারপর যা চাও পড়)। তারপর তুমি নিশ্চন্তি মনে রুকুতে যাও। তারপর রুকু থেকে একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়াও। তারপর নিশ্চিন্ত মনে সিজদা কর এবং সিজদা থেকে নিশ্চিন্ত মনে সোজা হয়ে বস। পুরা নামায এভাবে নিশ্চিন্ত ও প্রশান্ত মনে আদায় কর। (বুখারী ও মুসলিম)
নবী পাক (স)-এর উপরোক্ত হেদায়াতের মর্ম এই যে, নামায মাথার কোন বোঝা নয় যে, মাথা থেকে কোন রকমে নামিযে ফেললৈই হলো এবং তাড়াহুড়া করে নামায শেষ করলো। বরঞ্চ এ হচ্ছে আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট এবাদত। তার হক এই যে, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়বে। যে নামায নিশ্চিন্ত ও প্রশান্ত মনে পড়া হয় না, নবী পাক (স)-এর নিকটে তা নামাযই নয়।
হযরত আয়েশা (রা) নবী (স) এর নামাযের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নবী (স) তাকবীর তাহরীমা বলে নামায শুরু করতেন এবং ‘আলহামদুল্লিাহি রাব্বিল আলামীন’ থেকে কুরআন পড়া শুরু করতেন।যখন তিনি রুকুতে যেতেন তখন মথা না উপরে উঠিয়ে রাখতেন আর না নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখতেন, বরঞ্চ মধ্যম অবস্থায় অর্থাৎ কোমর বরাবর সোজা রাখতেন, তারপর যখন রুকু’ থেকে উঠতেন তখন যতোক্ষণ না সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, ততোক্ষণ সিজদায় যেতেন না। তারপর প্রথমে সিজদা থেকে যখন মাথা উঠাতেন তখন যতোক্ষণ না একেবারে সোজা হয়ে বসতেন, দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন না। প্রতি দু’রাকায়াত পর ‘আত্তাহিয়্যাত’ পড়তেন। ‘আত্তাহিয়্যাত’ পড়ার সময় বাম পা বিছিয়ে রাখতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন এবং শয়তানের মতো বসতে নিষেধ করতেন। অন্য রেওয়াতে আছে, কুকুরের মতো বসতে নিষেধ করতেন। তিনি এভাবে সিজদা করতেও নিষেধ করেন যেভাবে হিংস্র পশু সামনের দু’পা বিছিয়ে বসে। তারপর তিনি (****) বলে নামায শেষ করতেন। -(মুসলিম)।
৬. জামায়াতে নামাযের ব্যবস্থাপনা
ফরয নামায অবশ্যই জামায়াতে পড়তে হবে। অবশ্যি যদি জান-মালের ক্ষতির আশংকা না থাকে। (আরী*************)
-রুকু’কারীদের সাথে মিলে রুকু’ কর-(বাকারাহ : ৪৩)
(আরবী*******************(
এবং (হে নবী) যখ আপনি মুসলমানদের সাথে থাকবেন তখন তাদের নামায পড়িয়ে দিবেন (নিসা: ১০২)
এ হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে নামায আদায় করা সম্পর্কে নির্দেশ। এ নাযুক পরিস্থিতিতেও যুদ্ধের সৈনিকগণ আলাদা আলাদা নামায পড়বে না। বরং নবী (স) নামায পড়িয়ে দেবেন। কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা নবী (স) –এর পেছনে জামায়াতে নামায পড়বেন।
নবী (স) বলেন:
যে ব্যক্তি জামায়াতে নামাযের জন্যে মুয়াযযিনের আযান শুনলো এবং তার আহবানে সাড়া দিতে তার কোন ওযরও নেই, তথাপি সে জামায়াতে নামাযের জন্যে গেলা না, একাকী নামায পড়লো, তাহলে সে নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলেন ‘ওযরের’ অর্থ কি? তিনি বলেন, জান মালের আশংকা অথবা রোগ (আবু দাউদ)।
হযরত আনাস (রা) বলেন, নবী (স) বলেন, যে ব্যক্তি বরারবর ৪০ দিন প্রত্যেক নামায এভাবে আদায় করলো যে, প্রথম তাকবীরে শরীক হলো, তাহলে দুটি জিনিস থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হবে। এক-দোযখের আগুন থেকে অব্যাহতি, দুই-মুনাফেকী থেকে অব্যহতি –(জামে’ তিরমিযী)
৭. কুরআন তেলাওয়াতে তারতীল ও চিন্তাভাবনা
নামাযে কুরআন তেলাওয়াতের হক আদায় হয় যদি তা পড়া হয় একটু থেমে থেমে, আন্তরিকতা এবং মনোযোগ বা মনের উপস্থিতি সহকারে এবং অতি আগ্রহের সাথে। তারপর এক এক আয়াতের উপর চিন্তাভাবনা করতে হবে। নবী পাক (স) এক একটি অক্ষর সুস্পষ্ট করে এবং এক এক আয়াত আলাদা আলাদা করে পড়তেন। (আরবী******************)
এবং কুরআন একটু থেমে থেমে পড়ুন-(মুজ্জাম্মিল : ৪) (আরবী**********)
এ কিতাব আপনার উপর নাযিল করেছি এবং তা বরকতপূর্ণ এ জন্যে যে, মানুষ যেন তার আয়াতগুলোর উপর চিন্তাভাবনা করে এবং জ্ঞানবান তার থেকে শিক্ষা লাভ করে। (সোয়াদ : ২৯)।
৮. আগ্রহ ও মনোযোগ
প্রকৃত নামায তাকেই বলে যার মধ্যে লোক মন-মস্কিষ্ক, আবেগ-অনুভূতি এবং চিন্তা-ভাবনার সাথে একনিষ্ঠ হয়ে আল্লঅহর দিকে মনোযোগ দেয় এবং তাঁর সাথে সাক্ষাত এবং তাঁর কাছে চাওয়ার আগ্রহ এমন বেশী হয় যে, এক নামায আদায় করার পর দ্বিতীয় নামাযের প্রতীক্ষায় অন্তর অধীর হয়ে থাকে। (আরবী***********************)
“প্রত্যেক নামাযের জন্যে নিজের কেবলা ঠিক রাখ এবং তাঁকে (আল্লাহকে)ডাক এবং আনুগত্য-দাসত্ব তাঁর জন্যে নির্দিষ্ট করে দাও” (আরাফ: ২৯)
“হে মুমেনগণ! যখন জুমার দিনে নামাযের জন্যে ডাকা হয়, তখন সকল কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে যিকিরের দিকে দৌড়াও –(জুমা: ৯)।
৯. শিষ্টাচার ও আত্মসমর্পণ
অর্থাৎ একজন অনুগত গোলামের মত নামাযী লোক অতিশয় বিনয় ও আত্মসমর্পনের প্রতীক হিসাবে আল্লাহর দরবারে দাঁড়াবে যেন অন্তর আল্লাহর মহত্ব ও পরাক্রমে প্রকম্পিত হতে থাকে এবং অঙ্গ প্রতঙ্গেও যেন বিনয় নম্রতার ছাপ পরষ্ফুট হয়।
(আরবী*********************)
“নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ কর, বিশেষ করে সর্বোৎকৃষ্ট নামাযের এবং আল্লাহর সামনে শিষ্টাচার ও আত্মসমর্পণের মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়াও।” (বাকারা: ২৩৮) (আরবী*******************)
“এবং (হে নবী) সুসংবাদ নি ঐসব লোকদেরকে যারা বিনয় ও শিষ্টাচর অবলম্বন করে এবং যাদের অবস্থা এই যে, যখন তারা আল্লাহর যিকির শুনে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, বিপদ আপদ অটল-অচল হয়ে বরদাশত করে এবং নামায কায়েক করে-(হজ্জ: ৩৪-৩৫)। (আরবী****************)
‘এবং আপনার রবকে সকাল সন্ধ্যায় স্মরণ করুন মনে মনে বিনয় গদগদ হয়ে এবং তাঁর ভয়ে এবং অনুচ্চস্বরে এবং গাফেলদের মধ্যে শামিল যেন না হন। -(আ’রাফ: ২০৫)।
হযরত ইমাম যয়নুল আবেদীন (র) যখন নামাযের জন্যে অযু করতেন তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো। ঘরের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন, অযুর সময় আপনার একি অবস্থা হয়? তিনি বলতেন, তোমরা জাননা, আমি কোন্ সত্তার সামনে দাঁড়াতে চাই? (এহইয়া্যুল উলুম)।
১০. বিনয় নম্রতা
বিনয় নম্রতা নামাযের প্রাণ। যে নামাযে বিময় নম্রতা নেই সে নামায নামায নয়। কুরআনে ‘খুশু’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- তার অর্থ ছোট হওয়া, দমিত হওয়া, নম্রতার সাথে ঝুঁকে পড়া। নামাযে এ ‘খুশু’ অবলম্বন করার অর্থ এই যে, শুধু শরীরই নয়, বরঞ্চ মন-মস্তিষ্ক সব কিছুই আল্লাহর সামনে হীন দীন হয়ে ঝুঁকে যাওয়া বা অবনত হওয়া। মনের মধ্যে আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব এমন ভয় সঞ্চার করে যে, মন্দ আবেগ, অনুরাগ ও অবাঞ্ছিত চিন্তাভাবনা মনে আসতে পারে না। শরীরের উপরেও তার ছাপ পড়ে। এমন এক অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ হবে যা হবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর মহ্ত্ব ও পরাক্রমের উপযোগী।
(আরবী****************)
ঐ সব মুমেন কল্যাণ লাভ করেছে যারা তাদের নামাযে নিনয় নম্র। (আল মু’মেনূন: ১-২)।
১১. আল্লাহর নৈকট্যের অনভূতি
নামা মানুষকে আল্লাহর এতোটা নিকটবর্তী করে দেয় যে, অন্য কোন আমল দ্বারা এতোটা নিকট হওয়ার ধারণা করা যেতে পারে না। নবী (স) বলেন, বান্দাহ ঐ সময় তার আল্লাহর অতি নিকট হয়ে যায় যখন সে সিজদায় থাকে (মুসলিম)।
একামাতে সালাতের গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত এই যে, নামাযীর মনে যেন নৈকট্যের অনুভূতি হয। তার অন্তরে েএ নৈকট্যের কামনা বাসনাও থাকে এবং সে এমনভাবে নামায পড়ে যেন আল্লাহকে দেখছে অথবা নিদেন পক্ষে এ অনুভূতি হয় যে, আল্লাহ তার দিকে দেখছেন। (আরবী***************)
এবং সিজদা কর ও তাঁর নিকট হয়ে যাও- (আলাক: ১৯)
১২.আল্লাহর স্মরণ
নামাযের সত্যিকার গুণই হলো আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহর ইয়াদের সার্বিক এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি নামায। এ জন্যে যে, এ হচ্ছে তাঁরই শিখানো পদ্ধতি যাঁর স্মরণ কাম্য। যে নামায আল্লাহর স্মরণের গুণ থেকে খালি তা মুমেনের নামায নয়, মুনাফেকের নামায। নামায কায়েমের উদ্দেশ্যেই তো হচ্ছে আল্লাহকে ইয়াদ করা। (আরবী**********)
এবং নাময কায়েম করুন আমাকে ইয়াদ করার জন্যে (তাহা : ১৪)
(আরবী***************)
(মনে রাখতে হবে এ আয়াত সিজদার আয়াত)।
আমাদের আয়াতের উপরে তো প্রকৃতপক্ষে তারাই ঈমান আনে, যাদেরকে এ সব আয়াতের দ্বারা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলে সিজদায় পড়ে যায় এবং নিজেদের প্রভূর প্রশংসা ও পবিত্রতা বয়ান করতে থাকে এবং তারা গর্ব অহংকার করে না –(আস-সিজদাহ: ১৫:)।
অর্থাৎ তাদের রুকু’ সিজদা অনুভূতির রুকু’ সিজদা হয়। তারা বেপরোয়া হয়ে শুধু মুখে তাসবীহ পাঠ করে না, বরঞ্চ যেসব কালেমাই উচ্চারণ করে তা আল্লাহর ইয়াদেই করে এবং তাদের নামায সরাসরি আল্লাহর হয়।
১৩. রিয়া থেকে দূরে থাকা
নামায রক্ষণাবেক্ষণের একটি বড় শর্ত এই যে, তা রিয়া, লোক দেখানো প্রদর্শনী অথবা অন্যান্য নীচতাপূর্ণ প্রবণতা থেকে দূরে রাখা হবে। নইলে তা হবে আন্তরিকতার পরিপন্থী, রিয়ার দ্বারা শুধু নামায নষ্টই হয়ে যায় না, বরঞ্চ এ ধরনের নামাযীও ধ্বংস হয়। (আরবী**************)
ধ্বংস ঐ সব নামাযীরেদ জন্যে যারা তাদের নামায থেকে গাফেল হয় এবং মানুষকে দেখাবার জন্যে নামায পড়ে (মাউন: ৪)।
হযরত শাদ্দাদ বিন উস (রা) বয়ান করেন, নবী (স) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখাবার জন্যে নামায পড়ে, সে শির্ক করলো- (মুসনাদে আহমদ)।
১৪. পূর্ণ আত্মসমর্পণ
একামাতে সালাতের শেষ এবং সার্বিক শর্ত এই যে, মুমেন নামাযে তার নিজকে পুরাপুরি তার আল্লাহর উপর সঁপে দেবে। যতোদিন সে জীবিত থাকবে আল্লাহর অনুগত গোলাম হয়ে থাকবে এবং যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হবে তখন মৃত্যুও হবে আল্লাহর জন্যে। (আরবী****************)
অবশ্য অবশ্যই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সবই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যে। তাঁর কোন শরীক নেই এবং এ জন্যেই আমাকে আদশে করা হয়েছে। এবং আমি সকলের প্রথমে নিজেকে আল্লাহতে সমর্পণকারী –(আনআম : ১৬৩-১৬৩)।
আয়াতটিতে এক বিশেষ ক্রমানুসারে চারটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে নামায এবং কুরবানী, তারপর নামাযের সাথে জীবন এবং কুরবানীর সাথে মৃত্যু উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নামায এবং কুরবানী দু’টি সার্বিক বিষয় যা মুমেনের গোটা জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। নামায আসলে এ সত্যেরই প্রতিফলন যে, মুমেন শুধু নামাযেই নয় বরঞ্চ নামাযের বাইরে তার গোটা জীবনেই একমাত্র আল্লাহর অনুগত বান্দাহ। কুরবানী এ সত্যেরই বাহিঃপ্রকাশ যে, মুমেনের জান-মাল সব কিছুই আল্লাহর পথে কুরবান হবার জন্যেই তার কাছে গচ্ছিত আছে।
পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের সাথে যে নামায পড়া হয়, তা হবে প্রকৃত নামায। গোটা জীবনের উপর তা এমন প্রভাব বিস্তার করবে যে, একদিকে নামাযী ব্যক্তি অনাচার অশ্লীতা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে অত্যন্ত সজাগ থাকবে- অনাচার করা তো দূরের কথা তার চিন্তা করতেও ঘৃষণা আসবে এবং অপরদিকে ভালো কাজ করার জন্যে বরং সবচেয়ে ভাল কাজ করার জন্যে উৎসাহী ও তৎপর হবে।
একামাতে সালাতের হক পুরাপুরি আদায় করার এবং নামাযকে সত্যিকার নামায বানাবার জন্যে উপরের চৌদ্দটি শর্ত মেনে চলতে হবে। সেই সাথে তাহাজ্জুদ, অন্যান্য নফল নামায এবং যিকির আযকারেরও নিয়মিত অভ্যাস করতে হবে যা মসনূন। উপরন্তু নিবৃত স্থানে সর্বদা আত্মসমালোচনা ও অশ্রু গদ গদ হয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করার অভ্যাসও করতে হবে।
নামায ফরয হওয়ার সময়কাল
নামায তো নবী (স) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা) শুরু থেকেই পড়তেন। তবে পাঁচ ওয়াক্তের নামায শবে মে’রাজে ফরয করা হয়। হিজরতের এক বছর পূর্বে নবী পাক (স) মে’রাজের মর্যাদা লা্যভ করেন এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে হাযির হন। এ সময়ে এ নামায উপহার দেয়া হয়। তারপর হযরত জিবরাইল (আ) এসে তাঁকে নামাযের ময় এবং পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। নামায যে ফরয তা কুরআনে সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে এবং সকল এবাদতের মধ্যে নামাযের জন্যে বেশী বেশী তাকীদ করা হয়েছ। নামায ফরয এ কথা যে অস্বীকার করে সে নিশ্চয় মুসলমান নয়।