গোসলের হুকুম
গোসলের প্রকার
গোসল তিন উদ্দেশ্যে করা হয়।
১. হাদাসে আকবার থেকে পাক হওয়ার জন্যে। এ গোসল ফরয।
২. সওয়াবের নিয়তে। এ গোসল সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
৩. শরীরকে ধুলাবালি ও ময়লা থেকে পরিস্কার করা। গরমের সময় আরাম লাভ করার জন্যে। এ গোসল মুবাহ।
গোসল ফরয হওয়ার অবস্থা
চার অবস্থায় গোসল ফরয হয়।
১. বীর্যপাত হলে।
২. পুরুষাংগের মাথা স্ত্রীর অংগে প্রবেশ করালে।
৩. হায়েয হলে।
৪. নেফাসের রক্ত বেরুলে।
গোসল ফরয হওয়ার প্রথম অবস্থা
কামভাবসহ পুরুষ বা নারীর বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হয়। বীর্যপাত অনেক ভাবে হতে পারে, যেমন-
- রাতে বা দিনে স্বপ্নদোষ হলে-স্বপ্নে কিছু দেখে হোক না দেখে হোক।
- কোন পুরুষ, নারী অথবা কোন প্রাণীর সাথে সাহবাসে বীর্যপাত হলে।
- চিন্তা ধারণার মাধ্যমে অথবা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী গল্প উপন্যাস পাঠ করে।
- হস্ত মৈথুন বা অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত হলে।
মোট কথা যেমন করেই হোক কামভাব ও কামেচ্ছাসহ বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হবে। [প্রকাশ থাকে যে এখানে যেহেতু গোসল ফরয হওয়ার ফেকাহর হুকুম বর্ণনা করা হচ্ছে সে জন্যে বীর্যপাতের বিভিন্ন অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। নতুবা আপন বিবির সাথে সহবাস এবং স্বপ্নদোষ (ইহতেলাম) ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত করা চরম অজ্ঞতা এবং গুনাহের কাজ।]
বীর্যপাত সম্পর্কে কিছু মাসয়ালা
১. কোন উপায়ে কিছুটা বীর্য বের হলো এবং সে ব্যক্তি গোসল করলো। তারপর আবার কিছুটা বীর্য বের হলো তার প্রথম গোসল বাতিল হবে, দ্বিতীয় বার গোসল করতে হবে।
২. এক ব্যক্তি ঘুমের ঘোরে স্বপ্নদোষে যৌন আস্বাদ উপভোদ করলো। কিন্তু ঘুম থেকে জাগার পর কাপড়ে বীর্যের কোন চিহ্ন দেখতে পেলো না। তার গোসল ফরয হবে না।
৩. ঘুম থেকে উঠার পর কেউ দেখলো তার কাপগে বীর্য লেগে আছে কিন্তু স্বপ্নদোষের (ইহতেলাম) কথা মনে পড়ে না। তার গোসল ওয়াজেব হবে।
৪. ঘুমের মধ্যে যৌন আস্বাদ পাওয়া গেছে কিন্তু কাপড়ে যে চিহ্ন বা আদ্রতা সে সম্পর্কে নিশ্চিত যে তা বীর্য নয়, মুযী বা অদী। তাহলে সকল অবস্থায় গোসল ফরয হবে।
৫. কারো খাতনা হয়নি এবং বীর্য বের হয়ে চামাড়ার মধ্যে রয়ে গেছে যা কেটে ফেলা হয়। তাহলেও গোসল ফরয হবে।
৬. কারো যে কোন উপায়ে যৌন আস্বাদ উপভোগ হয়েছে কিন্তু ঠিক বীর্যপাতের সময় লিংগ চেপে ধরে বীর্য বাইরে আসতে দেয়নি। তারপর চরম আনন্দ শেষ হওয়ার পর বীর্য বের হলো। (গোসল ফরয হবে)
গোসল ফরয হওয়ার দ্বিতীয় কারণ
পুরুষের পুংলিঙ্গ যদি কোন জীবিত মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাহলে গোসল ফরয হবে এ জীবিত মানুষ নারী হোক, পুরুষ হোক, মুখান্নাস বা হিজড়া হোক, দেহের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে হোক, বাহ্যদ্বার দিয়ে হোক, বীর্য বেরুক অথবা না বেরুক সকল অবস্থায় গোসল ফরয হবে।
কর্মকারী এবং যার উপর কর্ম করা হলো উভয়ে বালেগ ও সজ্ঞান হলে উভয়ের উপর গোসল ফরয হবে। নতুবা দু‘জনের মধ্যে যে বালেগ সজ্ঞান হবে শুধু তার উপর ফরয হবে।[এখানে যা কিছু বলা হচ্ছে গোসল ফরয হওয়ার হুকুম বলা হচ্ছে। নতুবা নিজের বিবির সামনের দ্বার ব্যতীত পেছন দ্বার (বাহ্যদ্বার) এবং অন্য মানুষের যে কোন দ্বারে নিজের লিংগ প্রবেশ করানো ভয়ানক গুনাহ।]
গোসল ফরয হওয়ার কতিপয় মাসয়ালা
১. কোন পুরুষ যদি তার পুরুষাংগ কোন অল্প বয়স্ক বালিকার অংগে প্রবেশ করায় এবং এ আশংকা না হয় যে, তার অগ্র পশ্চাৎ অংগ সে কারণে ফেটে একাকার হয়ে গেছে, তাহলে পুরুষের উপর গোসল ফরয হবে।
২. কোন মেয়ে লোক যদি কামরিপুর তাড়নায় অধীর হয়ে কোন কামহীন পুরুষের অথবা কোন পশুর বিশেষ অংগ অথবা কোন বন্তু প্রভৃতি তার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয় তাহলে তার বীর্যপাত হোক বা না হোক গোসল ফরয হবে।
৩. খাসি করা পুরুষের পুরুষাংগ যদি কোন নারী বা পুরুষের দেহে প্রবেশ করে তথাপি গোসল ফরয হবে। উভয়ে আকেল ও বালেগ হলে উভয়ের উপর, নতুবা যে আকেল ও বালেগ হবে তার উপর।
৪. কোন পুরুষ তার পুংলিঙ্গে কাপড়, রবার অথবা অন্য কিছু জড়িয়ে কারো দেহে প্রবেশ করালে গোসল ফরয হবে।
গোসল ফরয হওয়ার তৃতীয় কারণ
গোসল ফরয হওয়ার তৃতীয় কারণ বা অবস্থা হলো হায়েযের রক্ত। হায়েযের মুদ্দত কমপক্ষে তিন দিন তিন রাত। উর্ধপক্ষে ১০ দিন ১০ রাত। দু‘হায়েযের মধ্যে পাক থাকার মুদ্দত কমপক্ষে ১৫ দিন। অর্থাৎ তিন দিনের কম যদি রক্ত আসে তাহলে গোসল ফরয হবে না। এক হায়েয বন্ধ হওয়ার পর ১৫ দিনের পূর্বে এলে তাও হায়েয হবে না। সে জন্যে গোসল ফরয হবে না।
গোসল ফরয হওয়ার চতুর্থ কারণ
চতুর্থ কারণ হলো নেফাসের রক্ত। ঐ রক্তের উপর নেফাসের হুকুম হবে যা অর্ধেক বাচ্চা বের হওয়ার পর আসে। তার পূর্বে যে রক্ত আসবে তা নেফাসের নয়। তার জন্যে গোসল ফরয হবে না। নেফাসের মুদ্দত উর্ধপক্ষে ৪০ দিন ৪০ রাত। তারপর যে রক্ত আসবে তাতে গোসল ফরয হবে না। বাচ্চা পয়দা হওয়ার পর কোন মেয়েলোকের যদি মোটেই কোন রক্ত না আসে তাহলে গোসল ফরয হবে না। অবশ্য সাবধানতার জন্যে গোসল করা ভালো।
যে যে অবস্থায় গোসল ফরয হয় না
১. মুযী এবং অদী বের হলে এবং এস্তেহাযার রক্ত বেরুলে গোসল ফরয হবে না।
২. পুংলিঙ্গ তার মাথার কম পরিমাণ ভেতরে প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।
৩. স্ত্রী লিঙ্গে পুরুষের বীর্য সহবাস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।
৪. কারো নাভিতে পুরুষাংগ প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।
যে যে অবস্থায় গোসল সুন্নাত
১. জুমার দিন জুমার নামাযের জন্যে গোসল সুন্নাত।
২. দুই ঈদের নামাযের জন্যে গোসল সুন্নাত।
৩. হজ্ব অথবা ওমরার ইহরামের জন্যে গোসল সুন্নাত।
৪. হাজীদরে জন্যে আরাফাতের দিনে বেলা পড়ার পর গোসল সুন্নাত।
যে যে অবস্থায় গোসল মুস্তাহাব
১. ইসলাম গ্রহণের জন্যে গোসল করা মুস্তাহাব।
২. মুর্দা গোসল দেয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।
৩. মস্তিস্ক বিকৃতি ও সংজ্ঞাহীনতা দূর হওয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।
৪. শাবানের ১৫ই রাতে গোসল মুস্তাহাব।
৫. মক্কা মুয়াযযামা ও মদীনা শরীফে প্রবেশের আগে গোসল মুস্তাহাব।
৬. সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহনের নামাযের জন্য গোসল মুস্তাহাব।
৭. মুযদালফায় অবস্থানের জন্যে ১০ তারিখের ফজর বাদে গোসল।
৮. পাথর মারার সময় গোসল।
৯. কোন গুনাহ থেকে তওবা করার জন্যে গোসল।
১০. কো দ্বীনি মাহফিল বা অনুষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে এবং নতুন পোশাক পরার পূর্বে গোসল।
১১. সফর থেকে বাড়ী পৌছার পর গোসল।
যে যে অবস্থায় গোসল মুবাহ
ধুলাবালি ময়লা থেকে শরীর রক্ষা করার জন্যে, গরমের তাপ থেকে শরীর রক্ষা করে ঠান্ডা করার জন্যে শ্রান্তি ও ক্লান্তি দূর করার জন্যে গোসল করা মুবাহ।
গোসলের বিভিন্ন মাসয়ালা
১. কেউ যদি হাদাসে আকবারের অবস্থায় নদী-নালা বা পুকুরে ডুব দেয় অথবা বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে এবং তার সমস্ত শরীরে যদি পানি প্রবাহিত হয়ে যায় সে কুল্লিও করে, নাকে পানিও দেয় তাহলে তার গোসল আদায় হয়ে যাবে এবং হাদাসে আকবার থেকে পাক হয়ে যাবে।
২. কেউ যদি গোসলের পূর্বে অযু না করে তাহলে গোসলের পর আলাদা করে অযু করার দরকার নেই। কেননা, গোসলে ঐসব অংগই ধোয়া হয়েছে যা অযুতে ধোয়া ফরয ছিল। সে জন্যে গোসলের সাথে অযুও হয়েগেছে।
৩. গোসল করার সময় কুল্লি করা হয়নি তবে খুব মুখ ভরে পানি খেয়ে নিয়েছে যাতে সমস্ত মুখে পানি পৌছে গেছে। এমন অবস্থায় গোসল দুরস্ত হবে। কেননা, কুল্লি করার উদ্দেশ্যেই হলো মুখের সব স্থানে পানি পৌছানো এবং তা হয়ে গেছে।
৪. মাথায় খুব ভাল করে তেল মালিশ করা হয়েছে অথবা শরীরেও মালিশ করা হয়েছে। তারপর শরীরে পানি পড়ার পর পানি পিছলে পড়লো শরীরের লোম কুপে ঢুকলো না। তাতে কোন ক্ষতি নেই। গোসল দুরস্ত হবে।
৫. নখের মধ্যে আটা লেগে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে অথবা অন্য কোন সৌন্দর্য সামগ্রী লাগানো হয়েছে। তা উঠিয়ে না ফেললে নীচ পর্যন্ত পানি পৌছে না। এমন অবস্থায় তা উঠিয়ে না ফেললে গোসল দুরস্ত হবে না।
৬. রোগের কারণে মাথায় পানি দেয়া ক্ষতিকর হলে মাথা ব্যতীত সমস্ত শরীরে পানি দিলে গোসল হয়ে যাবে। ক্ষতির আশংকা না থাকলে মাথায় পানি দিতে হবে।
হাদাসে আকবারের হুকুমাবলী
১. হাদাসে আকবার অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। তবে অনিবার্য কারণে প্রবেশ করতে হলে তায়াম্মুম করে যাওয়ার অনুমতি আছে। যেমন কারো বাসস্থানের পথ মসজিদের ভেতর দিয়ে এবং বাইরে বেরুবার অন্য কোন পথ নেই এবং পানির ব্যবস্থাও মসজিদে। বাইরে কোন পানির কল, কুয়া বা পুকুর নেই। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করে মসজিদে যাওয়া যায়। কিন্তু কাজ সেরে তত্ক্ষণাৎ বাইরে আসতে হবে।
২. হাদাসে আকবার অবস্থায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা হারাম।
৩. কুরআন পাক তেলাওয়াতও হারাম, এক আয়াতই হোক বা না কেন।
৪. কুরআন পাক স্পর্শ করাও হারাম। অবশ্যি যেসব শর্তে হাদাসে আসগার অবস্থায় স্পর্শ করা জায়েয, সেসব শর্তে জাযেয হবে।
৫. যেসব কাজ হাদাসে আসগার অবস্থায় নিষিদ্ধ তা হাদাসে আকবারেও নিষিদ্ধ। যেমন নামায পড়া, সিজদায়ে তেলওয়াত, সিজদায়ে শোকর প্রভৃতি।
৬. হাদাসে আকবার অবস্থায় ঈদগাহ যাওয়া দুরস্ত এবং দ্বীনি তালীমের স্থনে যাওয়াও জায়েয।
৭. কুরআন পাকের ঐসব আয়াত তেলাওয়াত করা জাযেয যার মধ্যে হামদ, তাসবীহ এবং দোআ আছে, যেমন-
(আরবী****************১৩৮*******)
৮. দোয়ার নিয়াতে সুরায়ে ফাতেহা এবং দোয়া কুনুত পড়া জায়েয।
৯. হায়েয ও নেফাস অবস্থায় রোযা রাখা হারাম।
১০. হায়েয ও নেফাসের সময় বিবির সাথে সহবাস হারাম। অবশ্য সহবাস ব্যতীত চুমো দেয়া, আদর করা, একত্রে শয়ন করা প্রভৃতি জায়েয, বরঞ্চ এ অবস্থায় বিবির সাথে মেলামেশা বন্ধ করা মাকরুহ।
তায়াম্মুমের বয়ান
তাহারাত আসিল করার আসল মাধ্যম পানি যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ মেহেরবানীতে বান্দাদের জন্যে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে রেখেছেন। তথাপি এমন অবস্থার সৃষ্টিও হতে পারে যে, কোন স্থানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না, অথবা পাওয়া গেলেও পানি দিয়ে তাহারাত আসিল করা মানুষের সাধ্যের বাইরে, অথবা পানি ব্যবহারে ভীষণ ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা অতিরিক্ত মেহেরবানী এই যে, তিনি মাটি দিয়ে তাহারাত হাসিল করার অনুমতি দিয়েছেন। তার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন যাতে করে বান্দাহ দ্বীনের উপর আমল করতে কোন অসুবিধা বা সংকীর্ণতার সম্মুখীন না হয়।
কুরআনে আছে-
(আরবী*******************************১৩৯*************)
“আর তোমরা যদি পানি না পাও, তাহলে পাক মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তাতে হাত মেরে চেহারা এবং হাত দুটির উপর মুসেহ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে সংকীর্ণতার মধ্যে ফেলতে চাননা। বরঞ্চ তিনি তোমাদেরকে পাক করতে চান এবং চান যে তোমাদের উপর তাঁর নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিবেন যাতে তোমরা শোকরগোযার হতে পার“। (মায়েদাহ: ৬)
তায়াম্মুমের অর্থ
অভিধানে তায়াম্মুম শব্দের অর্থ হচ্ছে ধারণা ও ইচ্ছা করা। ফেকাহের পরিভাষায় এর অর্থ হলো মাটির দ্বারা নাজাসাতে হুকমী থেকে পাক হওয়ার এরাদা করা। তায়াম্মুম অযু এবং গোসল উভয়ের পরিবর্তে করা যায়। অর্থাৎ তার দ্বারা হাদাসে আসগার এবং হাদাসে আকবার উভয় থেকেই পাক হওয়া যায়। তায়াম্মুমের এ অনুমতি নবী পাক (সা) এর উম্মতের উপর এক বিশিষ্ট দান। যে উম্মতের কাজের পরিধি ও পরিসর গোটা দুনিয়ার মানবতা এবং যার সময়কাল কেয়ামত পর্যন্ত, তার এ সুবিধা (concession) লাভ করার অধিকার ন্যায়সঙ্গতভাবেই রয়েছে যাতে করে যে কোন যুগে যে কোন অবস্থায় এবং দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে দ্বীনি আহকামের উপর আমল করার ব্যাপারে উম্মাকে কোন সংকীর্ণতা বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।
কি কি অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয
১. এমন এক স্থানে অবস্থান যেখানে পানি পাওয়ার কোন আশা নেই। কারো কাছে জানারও উপায় নেই এবং এমন কোন নিদর্শনও পাওয়া যায়না যে, এখানে পানি পাওয়া যেতে পারে। অথবা পানি এক মাইল অথবা আরও দূরবর্তী স্থানে আছে এবং সেখানে যেতে বা সেখান থেকে পানি আনতে ভয়ানক কষ্ট হবার কথা। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
২. পানি আছে তবে তার পাশে শত্রু আছে অথবা হিংস্র পশু বা প্রাণী আছে, অথবা ঘরের বাইরে পানি আছে কিন্তু চোর-ডাকাতের ভয় আছে, অথবা কুয়া আছে কিন্তু পানি উঠাবার কিছু নেই, অথবা কোন মেয়ে মানুষের জন্যে বাইরে থেকে পানি আনা তার ইযযাত আবরুর জন্যে ক্ষতিকারক। এমন সব অবস্থাতে তায়াম্মু জায়েয।
৩. পানি নিজের কাছেই রয়েছে। কিন্তু পরিমাণে এতো কম যে, যদি তা দিয়ে দিয়ে অযু বা গোসল করা হয় তাহলে পিপসায় কষ্ট হবে অথবা খানা পাকনো যাবেনা, তাহলে তায়াম্মুম জায়েয হবে।
৪. পানি আছে কিন্তু ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধির আশংকা আছে, অথবা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে অবশ্য কোন কুসংস্কারবশে নয়, যেমন ধরুন, কোন ব্যক্তি শীতের দিনে গরম পানি দিয়ে অযু গোসল করতে অভ্যস্ত, তার অযু বা গোসলের প্রয়োজন হলে এবং পানিও আছে কিন্তু তা ঠাণ্ডা পানি। তার অভিজ্ঞাতা আছে যে, ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে তার অসুখ হয় অথবা স্বাস্থ্যের হানি হয়। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয। গরম পানির অপেক্ষায় নাপাক থাকা অথবা নামায কাযা করা ঠিক নয়, বরঞ্চ তায়াম্মুম করে পাক হবে এবং নামায ইত্যাদি আদায় করবে।
৫. পানি পাওয়া যায় কিন্তু পানিওয়ালা ভয়ানক চড়া দাম চায়, অথবা পানির দাম ন্যায়সংগত কিন্তু অভাবগ্রস্ত লোকের সে দাম দেয়ার সংগতি নেই, অথবা দাম দেয়ার মতো পয়সা আছে কিন্তু পথ খরচের অতিরিক্ত নেই এবং তা দিয়ে পানি কিনলে অসুবিধায় পড়ার আশংকা আছে এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
৬. পানি আছে কিন্তু এতো শীত যে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে প্রাণ যেতে পারে অথবা পক্ষাঘাত রোগ হতে পারে অথবা কোন রোগ যেমন নিউমুনিয়া প্রভৃতির আশংকা আছে, পানি গরম করার সুযোগও নেই এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
৭. অযু বা গোসল করলে এমন নামায চলে যাওয়ার আশংকা আছে যার কাযা নেই, যেমন জানাযা, ঈদের নামায, কসুফ ও খসুফের নামায, তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।
৮. পানি ঘরেই আছে কিন্তু এতো দুর্বল যে উঠে পানি নেয়ার ক্ষমতা নেই, অথবা টিউবওয়েল চালাতে পারবে না। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
৯. কেউ রেল, জাহায অথবা বাসে সফর করছে। যানবাহন ক্রমাগত চলতেই আছে এবং যানবাহনে পানি নেই, অথবা পানি আছে কিন্তু এতো ভিড় যে তাতে অযু করা সম্ভব নয়, অথবা যানবাহন কোথাও থামলে এবং নীচে নামাই গেল না এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
১০. শরীরের অধিকাংশ স্থানে যখম অথবা বসন্ত হয়েছে তাহলে তায়াম্মুম জায়েয।
১১. সফরে পানি সংগে আছে। কিন্তু সামনে কোথাও পানি পাওয়া না যেতে পারে যার ফলে পিপাসায় কষ্ট হবে। অথবা প্রাণ যাওয়ারই আশংকা আছে এমন অবস্থায় পানি সংরক্ষণ করে তায়াম্মুম করা জায়েয।
তায়াম্মুমের মসনুন তরীকা
বিসমিল্লহির রাহমানির রাহীম‘ বলে তায়াম্মুমের নিয়ত করবে তারপর দুহাতের তালু একটু প্রসারিত করে ধীরে পাক মাটির উপর মারবে। বেশী ধূলাবালি হাতে লেগে গেলে ঝেড়ে নিয়ে অথবা মুখ দিয়ে ফুঁক দিয়ে তা ফেলে দেবে। তারপর দুহাত এভাবে সমস্ত মুখমণ্ডলের উপর মৃদু মর্দন করবে যাতে চুল পরিমাণ স্থান বাদ পড়ে না যায়। দাঁড়িতে খেলালও করতে হবে। তারপর দ্বিতীয় বার এভাবে মাটির উপর হাত মেরে এবং হাত ঝেড়ে নিয়ে প্রথমে বাম হাতের চার আংগুলের মাথায় নিম্নভাগ দিয়ে ডান হাতের আংগুলের উপর থেকে কনুই পর্যন্ত নিয়ে যাবে। তারপর বাম হাতের তালু কনুইয়ের উপরের অংশের উপর মর্দন করে হাতের পিঠের উপর দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত নিয়ে যাবে এবং আঙ্গুলগুলোর খেলালও করবে। এভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মর্দন করবে। হাতে কোন ঘড়ি বা আংটি থাকলে তা সরিয়ে তার নীচেও মর্দন করা জরুরী।
তায়াম্মুমের ফরযগুলো
তায়াম্মুমের তিন ফরয :
১. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে পাক হওয়ার নিয়ত করা।
২. দুহাত মাটির উপর মৃদু আঘাত করে সমস্ত চেহারার উপর মর্দন করা।
৩. তারপর দু‘হাত পাটির উপর মৃদু আঘাত করে বা মেরে নিয়ে কনুই পর্য়ন্ত দুহাত মর্দন করা।
তায়াম্মুমের সুন্নাত
১. তায়াম্মুমের প্রথমে বিসমিল্লাহ বলা।
২. মসনূন তরীকায় তায়াম্মুম করা। অর্থাৎ প্রথমে চেহারা মুসেহ করা এবং তারপর দুহাত কনুই পর্যন্ত মুসেহ করা।
৩. পাক মাটির উপর হাতের ভেতর দিক মারতে হবে, পিঠের দিক না।
৪. হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা।
৫. মাটিতে হাত মারার সময় আংগুলগুলো প্রসারিত রাখা যাতে ভেতরে ধূলা পৌছে যায়।
৬. অন্ততপক্ষে তিন আঙ্গুল দিয়ে চেহেরা ও হাত মুসেহ করা।
৭. প্রথম ডান হাত পরে বাম হাত মুসেহ করা।
৮. চেহেরা মুসেহ করার পর দাড়ি খেলাল করা।
যেসব বন্তু দ্বারা তায়াম্মুম জায়েয না নাজায়েয হয়
১. পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয তো বটে, উপরন্তু মাটির ধরনের সকল বন্তু দিয়েই জায়েয। যে সব বস্তু আগুনে জ্বালালে ছাই হয়ে যায়না নরম হয়ে যায়না, মাটির মতই, যেমন সুরমা, চুন, ইট, পাথর, বাল কংকর মরমর পাথর অথবা আকীকা, ফিরোজা, প্রভৃতি এ সব দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয।
২. ঐ সব জিনিস দিয়ে তায়াম্মুম নাজায়েয যা মাটির ধরণের নয়, যা আগুনে দিলে জ্বলে ছাই হয়ে যায় অথবা গলে যায়। যেমন কাঠ, লোহা, সোনা, চাঁদি, তামা, পিতল, কাঁচ, রং, এবং সকল প্রকার ধাতব দ্রব্যাদি, কয়লা, খাদ্য শস্য, কাপড়, কাগজ, নাইলন, প্লাষ্টিক, ছাই এ সব দিয়ে তায়াম্মুম নাজায়েয।
৩. যেসব জিনিস তায়াম্মুম নাজায়েয তার উপর যদি এতোটা ধুলোবালি জমে যায় যে, হাত মারলে উড়ে যায়, অথবা হাত রেখে টানলে দাগ পড়ে, তাহলে তা দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয হবে। যেমন কাপড়ের থানের উপর ধূলা পড়েছে চেয়ার টেবিলে ধূলা পড়েছে, অথবা কোন মানুষের গায়ে ধুলা পড়েছে।
৪. যেসব জিনিস দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয, যেমন মাটি, ইট, পাথর, মাটির পাত্র প্রভৃতি, এসব যদি একেবারে ধোয়া হয় তার উপর কোনরূপ ধূলাবালি না থাকে, তথাপি তা দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয হবে।
যেসব জিনিসে তায়াম্মুম নষ্ট হয়
১. যেসব জিনিসে অযু নষ্ট হয় ঐসব দিয়ে তায়াম্মুম নষ্ট হবে। যেসব কারণে গোসল ওয়াজেব হয়, সে করণে অযুর বদলে তায়াম্মুম এবং গোসলের বদলে তায়াম্মুম উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়।
২. অযু ও গোসল উভয়ের জন্যে একই তায়াম্মুম করলে যদি অযু নষ্ট হয় তাহলে অযুর তায়াম্মুম নষ্ট হবে কিন্তু গোসলের তায়াম্মুম নষ্ট হবে না। তবে গোসল ওয়াজেব হয় এমন কোন কারণ ঘটলে গোসলের তায়াম্মুমও নষ্ট হবে।
৩. যদি নিছক পানি না পাওয়ার কারনে তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তাহলে পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম নষ্ট হবে।
৪. কোন ওযর অথবা রোগের কারণে যদি তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তারপর ওযর অথবা রোগ রইলো না, তাখন তায়াম্মুম নষ্ট হবে। যেমন কেউ ভয়ানক ঠাণ্ডার জন্যে অযু না করে তায়াম্মুম করলো, তারপর গরম পানির ব্যবস্থা হলো, তখনই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।
৫. পানির নিকটে কোন হিংস্র জন্তু, সাপ অথবা শত্রু থাকার কারণে অযুর বদলে তায়াম্মুম করা হয়েছে। এখন যেই মাত্র এ আশংকা দূরীভূত হবে, তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।
৬. কেউ যদি রেল, জাহায অথবা বাসে ভ্রমনকালে পানির অভাবে তায়াম্মুম করে, অতপর পথ অতিক্রম করার সময় পথে নদীনালা, পুকুর, ঝর্ণা প্রভৃতি দেখতে পায়। কিন্তু যেহেতু চলন্ত গাড়ী বা জাহাযে পানির ব্যবহার করার কোনই সুযোগ নেই, সে জন্যে তার তায়াম্মুম নষ্ট হবেনা।
৭. কোন ব্যক্তি কোন একটি ওযরের কারণে তায়াম্মুম করলো, শেষে ওযর শেষ হলো কিন্তু দ্বিতীয় একটি ওযর সৃষ্টি হলো। তথাপি প্রথম ওযর শেষ হওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে গেল। যেমন ধরুন, পানি না পাওয়ার জন্যে কেউ তায়াম্মুম করলো। কিন্তু পরে পানি পাওয়ার সাথে সাথেই সে এমন অসুস্থ হয়ে পড়লো যে পানি ব্যবহার তার পক্ষে সম্ভব নয়। তথাপি তার প্রথম তায়াম্মুম শেষ হয়ে যাবে যা পানি না পাওয়ার করণে হয়েছিল।
৮. কেউ অযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করেছিল। তারপর অযু করার পরিমাণ পানি পেয়ে গেল। তখন তার তায়াম্মুম চলে গেল। কেউ যদি গোসলের পরিবর্তে অর্থাৎ হাদাসে আকবার থেকে পাক হওয়ার জন্যে তায়াম্মুম করলো তারপর এতটুকু পানি পেলো যে তার দ্বারা শুধু অযু হতে পারে কিন্তু গোসল হবেনা। তাহলে গোসলের তায়াম্মুম নষ্ট হবেনা।
তায়াম্মুমের বিভিন্ন মাসয়ালা
১. কেউ পানির অভাবে তায়াম্মুম করলো এবং নামায পড়লো। নামায শেষে পানি পেয়ে গেল। এ পানি ওয়াক্তের মধ্যে পেয়ে গেলেও নামায দ্বিতীয় বার পড়তে হবেনা।
২. পানির অভাবে অথবা কোন রোগ বা অক্ষমতার কারণে যখন মানুষ তায়াম্মুমের প্রয়োজন বোধ করে, নিশ্চিত মনে তায়াম্মুম করে দ্বীনি ফারায়েয আদায় করবে। এ ধরনের কোন প্ররোচনা যেন তাকে পেরেশান না করে যে, শুধু পানির দ্বারাইতো পাক হওয়া যায়, তায়াম্মুমের দ্বারা কি হবে। পাক নাপাকের ব্যাপারে পানি বা মাটির উপর নির্ভর করেনা, আল্লাহর হুকুমের উপর নির্ভর করে। আর আল্লাহর শরীয়ত যখন মাটি দ্বারা পাক হয়ে নামাযের অনুমতি দিয়েছে, তখন বুঝতে হবে যে, তায়াম্মুমের দ্বারাও তেমন তাহারাত হাসিল করা যায় যেমন অযু গোসলের দ্বারাও করা যায়।
৩. কেউ যদি মাঠে ময়দানে পানির তালাশ করে তায়াম্মুম করে নামায পড়লো। তারপর জানা গেল যে, নিকটেই পানি ছিল। তথাপি তায়াম্মুম এবং নামায উভয়ই দুরস্ত হবে। অযু করে নামায দুহরাবার দরকার নেই।
৪. সফরে যদি অন্য কারো নিকটে পানি থাকে এবং মনে হয় যে, চাইলে পাওয়া যাবে, তাহলে চেয়ে নিয়ে অযুই করা উচিত। আর যদি মনে হয় যে, চাইলে পাওয়া যাবেনা, তাহলে তায়াম্মুম করাই ঠিক হবে।
৫. অযু এবং গোসল উভয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম দুরস্ত আছে। অর্থাৎ হাদাসে আসগার এবং এবং হাদাসে আকবার উভয় থেকে পাক হওয়ার জন্যে তায়াম্মুম করা দুরস্ত আছে এবং তায়াম্মুমের পদ্ধতি ঐ যা উপরে বয়ান করা হয়েছে। দুইয়ের জন্যে আলাদা আলাদা তায়াম্মুমেরও দরকার নেই। একই তায়াম্মুম উভয়ের জন্যে যথেষ্ট। যেমন, এক ব্যক্তির উপর গোসল ফরয হয়েছে। সে তায়াম্মুম করলো। এখন এ তায়াম্মুমে সে নামাযও পড়তে পারবে। অযুর জন্যে আলাদা তায়াম্মুমের দরকার নেই।
৬. তায়াম্মুমে এ বাধ্যবাধকতা নেই যে, এক তায়াম্মুমে একই ওয়াক্তের নামায পড়তে হবে। বরঞ্চ যতোক্ষণ তা নষ্ট না হয়, ততোক্ষণ কয়েক ওয়াক্তের নামায পড়তে পারবে। এভাবে ফরয নামাযের জন্যে যে তায়াম্মুম করা হবে তা দিয়ে ফরয, সুন্নাত, নফল, জানাযা, সিজদায়ে তেলাওয়াত। কিন্তু শুধু কুরআন পাক স্পর্শ করার জন্যে, মসজিদে প্রবেশ করার জন্যে, কুরআন তেলাওয়াতের জন্যে অথবা কবরস্থানে যাওয়ার জন্যে যে তায়াম্মুম করা হয় তার দ্বারা নামায প্রভৃতি পড়া দুরস্ত হবেনা।
৭. পানি আছে কিন্তু অযু বা গোসল করতে গেলে নামাযে জানাযা, ঈদের নামায, কুসুফ ও খসুফের নামায প্রভৃতি পাওয়া যাবেনা তাহলে এ অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামাযে শরীক হওয়া জায়েয। কারণ অন্য সময়ে এ সব নামাযের কাযা হয়না।
৮. কেউ যদি অক্ষম হয় এবং নিজ হাতে তায়াম্মুম করতে না পারে তাহলে অন্য কেউ তাকে মাসনূন তরীকায় তায়াম্মুম করিয়ে দেবে। অর্থাৎ তার হাত মাটিতে মেরে প্রথমে চেহেরা পরে হাত ঠিকমতো মুছে দেবে।
৯. কারো নিকট দুটি পাত্রে পানি আছে, একটিতে পাক পানি অন্যটিতে নাপাক পানি। এখন তার জানা নাই কোনটিতে পাক আর কোনটিতে নাপাক পানি। এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা উচিত।
১০. মাটির একটা ঢিলে একই জন কয়েকবার তায়াম্মুম করতে পারে। ঐ একটি ঢিলে কয়েক জনের তায়াম্মুমও জায়েয। যে পটিতে তায়াম্মুম করা হয় তার হুকুম মায়ে মুস্তা‘মালের (ব্যবহৃত পানির) মতো নয়।