গায়ের ইসলামী আকায়েদ ও চিন্তাধারা
মুসলমান হওয়ার জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজন যে, ইসলামী আকীদাহ-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হয়ে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে তার উপর ঈমান এনে তার ভিত্তিতেই জীবনকে সংশোধিত করে গড়ে তুলতে হবে। ঠিক তদনুরূপ এটাও প্রয়োজন যে, ইসলাম ও ঈমানের পরিপন্থী গায়ের ইসলামী আকীদাহ-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা সম্পর্কেও পূর্ণ অবহিত হতে হবে। এসব আকীদাহ-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা থেকে মন মস্তিষ্ক ও পবিত্র করতে না পারলে ইসলামের দাবী পূরণ ও সত্যিকার ইসলামী জীবন যাপন কিছুতেই সম্ভব নয়।
নিম্নে সংক্ষেপে সে সব গায়ের ইসলাশী ধারণা বিশ্বাসের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যার থেকে একজন মুসলমান পূর্ণ অনুভূতি সহকারে নিজেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখতে পারে।
১. কুফরী চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ড পসন্দ করা, এতে গর্ববোধ করা এবং অপরকেও এর জন্যে উদ্বুদ্ধ করা ঈমানের একেবারে খেলাপ। এসব থেকে অতি সত্বর তওবা করতে হবে।
২. দ্বীন ইসলামের আসল আখলাক এবং তার নিদর্শনাবলীর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা। ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা, অবজ্ঞা ও ঘৃনা সহকারে এ সবের উল্লেখ করা। ইসলামের প্রতি নির্লজ্জ উক্তি এবং নিকৃষ্ট ধারনের মুনাফেকী। এ ধরনের কথা বার্তা বরদাশত করা, কথা ও কাজের দ্বারা এ সবের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ না করা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন করা হয়। দ্বীনের প্রতি আনুগত্যহীনতা প্রকাশ করা হয় এবং এর দ্বারা ঈমানের চরম দুর্বলতা প্রকাশ করা হয়।
৩. আল্লাহ ও তাঁর নবী পাক (সা) এর নিদর্শনাবলী অবগত হওয়ার পরেও বাপ-দাদার প্রথা এবং সামাজিক আচার অনুষ্ঠান পালনে অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ পালনকে অবমাননাকর মনে করা ইসলাম বিরোধী আকীদাহ-বিশ্বাস ও চিন্তাধারার ফল। ঈমানের সাথে ও সবের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই।
৪. আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম আহকাম নিজের ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করা, তার অর্থ বিকৃতি করে আপন স্বার্থের অনুকূল করা এবং আল্লাহ ও রসূলের আদেশ-নিষেধগুলো হুবহু পালন করা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা চরম মুনাফেকীর কাজ।
৫. আল্লাহ ও তাঁর রসূলের হুকুম-আহকামের সমালোচনা করা, তার মধ্যে ত্রুটি বের করা, সময়োপযোগী মনে না করা, এ ধরনের উক্তি করা যে, এসব অন্ধযুগের কাজ-কারবার। এসব কিছুই ভ্রান্ত চিন্তাধারার ফলশ্রুতি যার সাথে ঈমানের কোনই সম্পর্ক নেই।
৬. আল্লাহর অবিশ্বাসীরা হালাল-হারামের বাছ-বিচার না করে ধন-সম্পদ উপার্জন করে এবং আনন্দ মুখর জীবন যাপন করে। এসব দেখে কোন মুসলমান যদি তার ইমান সম্পর্কে লজ্জাবোধ করে এবং বলে আহা! যদি মুসলমান না হতাম তাহলে আমরাও দুনিয়াকে উপভোগ করতে পারতাম, তাহলে এসব চিন্তা, ধারণা ও উক্তি ইসলাম বিরোধী চিন্তাধারারই ফল বলতে হবে। এসব থেকে ঈমানকে রক্ষা করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
৭. শরীয়তের বাধা-নিষেধকে উন্নতির পথে প্রতিবন্ধকতা মনে করা, মহিলাদেরকে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করাতে গর্ববোধ করা, ঘরের সম্ভ্রান্ত মহিলাদেরকে পরস্পরের সাথে হাত মিলাতে, নিঃসংকোচে গল্প আলাপ করতে সম্পকর্ক স্থাপন করতে দেখে গর্ববোধ করা এবং এটাকেই প্রগতি মনে করা নির্লজ্জ ধরনের ধর্মহীনতা। এটা আত্মমর্যাদা এবং ইদানী মার্যাদাবোধের একেবারে খেলাপ।
৮. দ্বীনী শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণে ঔদাসীন্য, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞাতার শুধু নিশ্চিত থাকাই নয়। বরঞ্চ অজ্ঞতার কারণেই ইসলামের উপর আমল না করার জন্যে অক্ষমতা প্রকাশ ঔদ্ধত্যপূর্ণ চিন্তাধারা যা একজন মুসল মানের ঈমান আকীদাসহ নষ্ট করে দেয়।
৯. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে লাভ-লোকসান, সম্মান-অসম্মান, উন্নতি-অবনতি প্রভৃতির মালিক মোখতার মনে করা, তৌহীদী বিশ্বাসের বিপরীত।
১০. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্যে অন্তরে ভীতি পোষণ করা, কারো উপরে ভরসা করা, কারো উপরে আশা পোষণ করা, মানব জীবনের উত্থান-পতনের এখতিয়ার অন্য কারো আছে বলে বিশ্বাস করা ইমানকে বিনষ্ট করে।
১১. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক, কার্যসম্পাদনাকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রবণকারী, সাহায্যদাতা ও রক্ষাকর্তা মনে করা তৌহীদী আকীদার বিপরীত।
১২. ভবিষ্যত সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করা এবং তা বিশ্বাস করা ঈমান নষ্ট করে দেয়।
১৩. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে হাযের নাযের মনে করা যে, গোপন এবং প্রকাশ্য সব তার জানা আছে, ইসলামী আকীদার খেলাপ।
১৪. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্যে ডাকা, করো কাছে রুজি ও সন্তানাদি চাওয়া, করো নামে সন্তানের নাক কান ছিদ্র করার চুলের ঝুটি রাখা, কারো নামে মানত মানা পরিপূর্ণ শির্ক।
১৫. আল্লাহ ছাড়া কারো নামে পশু ছেড়ে দেয়া, পশু যবেহ করা, সন্তান বাচার জন্যে বেদআতি কাজ-কর্ম করা, নবপ্রসূত সন্তানকে রক্ষা করার জন্যে তার শিয়রে কোন অস্ত্র রাখা, সন্তানের জীবনের জন্যে অন্য কোন শক্তিকে ভয় করা প্রভৃতি শির্ক এবং তৌহীদের বিপরীত।
১৬. বিয়ে শাদী, সন্তানের জন্ম ও খাৎনার সময় এমন সব কাজ কর্ম অপরিহার্য মনে করা যা ইসলাম অপরিহার্য মনে করেনি, গায়ের ইসলামী চিন্তা ধারা ও কুসংস্কার।
১৭. রোগ ও মৃত্যুর জন্যে আল্লাহর উপর দোষারোপ করা, অসংগত ও গোস্তাখীপূর্ণ উক্তি করা, আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা ঈমান বিনষ্টকারী।
১৮. অসাধারণ বিপদ-আপদে পতিত হয়ে এবং বার বার বিপদ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রত্যাশা না করা এবং (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহকে দয়ামায়াহীন মনে করা কুফরী চিন্তা ধারার বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের শয়তানী অসঅসা মনের মধ্যে প্রকাশ পেলে সংগে সংগে খাঁটি দেলে তওবা করা উচিত।
১৯. কারো সামনে হাত বেঁধে দাঁড়ানো, কাউকে সিজদা করা, কারো সামনে মস্তক অবনত করা শির্ক।
২০. কবরে চুমো দেয়া, তার সামনে হাত বেঁধে দাড়ানো, কবরে কপাল ঠেকানো এবং এ ধরনের আর যত সব কর্মকাণ্ড সবই তৌহীদী আকীদার পরিপন্থী এবং চরম অবমাননা।
২১. কোন পীরের ছবি বরকতের জন্যে কাছে রাখা, তাতে ফুলের মালা পরানো এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন পুরোপুরি শির্ক।
২২. আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং এমন বিশ্বাসের ঘোষণা করা যে, অবস্থার পরিবর্তন করার ক্ষমতা তার আছে-একেবারে শির্ক।[কোন মৃত ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে যেতে তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্যে গাড়ী বা যানবাহন থামানো এবং সেই মৃত ব্যক্তি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারে বলে তার কবরে কিছু নযর নিয়ায দেয়া, না দিলে নারায হয়ে কোন বিপদে ফেলতে পারেন বলে বিশ্বাস করা ষোল আনা শির্ক- অনুবাদক।]
২৩. কারো আদেশ-নিষেধকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধের সমতুল্য মনে করা, তার নির্দেশকে অগ্রাধিকার দেয়া, শরীয়তের বিধানগুলোতে কমবেশী করার অন্য কারো অধিকার আছে বলে মনে করা, কাউকে শরীয়তের উর্ধে মনে করা অথবা কাউকে এমন মনে করা যে, শরীয়তের কোন বিধান সে মাফ করে দিতে পারে-একেবারে শির্ক।
২৪. কারো বাড়ী এবং কবরের তাওয়াফ করা, কোন স্থানকে কা’বা শরীফের মতো মনে করে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ইসলাম বিরোধী আকীদারই বহিঃপ্রকাশ।
২৫. আলী বখস, নবী বখশ, হোসেন বখশ, আবদুন্নবী প্রভৃতি নাম রাখা এবং কাউকে ইয়া গউসুল মদদ, ইয়া অলীউল মদদ প্রভৃতি নাম ধরে ডাকা তৌহীদি আকীদার খেলাপ।
২৬. আল্লাহর আইনের তুলনায় মানুষের তৈরী আইন সঠিক মনে করা, তা মেনে চলা, অপরিহার্য মনে করা, তা অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা-চরিএ করা, তার সমর্থক ও সাহায্যকারী হওয়া ঈমান ও ইসলামী চিন্তাধারার সম্পূর্ণ বিপরীত।
২৭. আখেরাতে নাজাতের জন্যে ঈমান ও আমলের পরিবর্তে পীর অলীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করাকে যথেষ্ট মনে করা এবং এমন মনে করা যে, তার সুপারিশে সব কিছু হয়ে যাবে অথবা আল্লাহর উপর তিনি এতোখানি প্রভাব খাটাতে পারেন যে, যেমন খুশী তেমন সিদ্ধান্ত করাতে পারেন-একেবারে ইসলাম বিরোধী আকীদাহ-বিশ্বাস।
২৮. নিজেকে পাপ অথবা পূণ্য করতে একেবারে বাধ্য মনে করা এবং মনে করা যে, বান্দার ভালো-মন্দ করার কোনই অধিকার নেই ভালো-মন্দ সবই আল্লাহ্ করান এবং বান্দাহ বাধ্য হয়েই তাই করে-একেবারে ইসলাম বিরোধী ধারণা বিশ্বাস। এ বিশ্বাসসহ আখেরাতের উপর বিশ্বাস অর্থহীন হয়ে পড়ে।
২৯. নিজেকে সকল কাজ করতে পরিপূর্ণ সক্ষম মনে করা এবং এমন মনে করা যে, মানুষ যা কিছু করে তাতে আল্লাহর করার কিছুই নেই, প্রত্যেক কাজ করার পূর্ণ এখতিয়ার মানুষের আছে-ইসলাম বিরোধী চিন্তাধারা। এমন চিন্তাধারা থেকে অন্তরকে পাক-পবিএ রাখা দরকার।
৩০. নবী-রাসূলগনকে নিষ্পাপ মনে না করা, কোন মন্দ কাজ তাঁদের প্রতি আরোপ করা অথবা তাঁদেরকে আসমানী কিতাবের প্রণেতা মনে করা ইসলাম বিরোধী আকীদাহ-বিশ্বাস।
৩১. সাহাবায়ে কেরাম (রা) এর সমালোচনা করা, তাঁদের দোষত্রুটি বের করা, তাঁদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা অথবা তাঁদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা ইসলাম বিরোধী চিন্তাধারা। এসব চিন্তাধারা থেকে তওবা করা উচিত।
৩২. আল্লাহ ও তাঁর রসূল দ্বীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় চিস্তারিত ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এখন কাশফ ও ইলহামের মাধ্যমে অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে কিংবা নিজের জ্ঞান বুদ্ধিতে দ্বীন সম্পর্কে নতুন কিছু আবিষ্কার করা, তা চালু করা ও তা প্রয়োজনীয় মনে করা বিদআত। বিদআত বাড়ো গুনাহ এবং গোমরাহী।
৩৩. বিপদ ও দুঃখ কষ্টে পড়ে নিজের ভাগকে ভালোমন্দ বলা, তাকদীরের বিরুদ্ধে উক্তি করা এবং এ ধরণের কথা বলা কি বলব, আমার তাকদীর মন্দ, আল্লাহ আমার কপালে এই রেখেছিলেন, আমার ভাগ্য কি এমন যে, সুখের মুখ দেখবো এ ধরনের উক্তি করায় আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা হয় এবং তাঁর শানে গোস্তাখী করা হয়। এ ধরণের ইসলাম বিরোধী ধারণা ও উক্তি থেকে নিজেকে পাক রাখা দরকার। আল্লাহর প্রত্যেকেটি কাজে সন্তুষ্ট থাকা এবং তাঁর প্রতিটি সিদ্ধন্ত সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া প্রকৃত ঈমানের আলামত।