অযুর বিবরণ
অযুর ফযীলত ও বরকত
অযুর মহত্ব ও গুরুত্ব এর চেয়ে অধিক আর কি হতে পারে যে, স্বয়ং কুরআনে তার শুধু হুকুমই নেই, বরঞ্চ তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অযুতে দেহের কোন কোন অংগ ধুতে হবে। আর এ কথাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, অযু নামাযের অপরিহার্য শর্ত।
(আরবী*****************১১১)
যারা তোমরা ঈমান এনেছো জেনে রাখো, যখন তোমরা নামাযের জন্যে দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখ-মণ্ডল ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের দু‘হাত কুনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং মাথা মাসেহ করবে এবং তারপর দু‘পা চাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলবে- (মায়েদাহ: ৬)।
নবী (সা) অযুর ফযীলত ও বরকত বয়ান করতে গিয়ে বলেন-
আমি কোয়ামতের দিন আমার উম্মতের লোকদেরকে চিনে ফেলবো। কোন সাহাবী জিজ্ঞাস করলেন- কেমন করে, হে আল্লাহর রসূল? নবী (সা) বলেন, এ জন্যে তাদেরকে চিনতে পারব যে, অযুর বদৌলতে আমার উম্মতের মখমণ্ডল এবং হাত-পা উজ্জ্বলতায় ঝকঝক করবে।
অন্য এক সময়ে নবী পাক (সা) অযুর মহত্ব বয়ান করতে গিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি আমার বলে দেয়া পদ্ধতি অনুযায়ী ভালোবাবে অযু করবে এবং অযুর পর এ কালেমা শাহাদাত পাড়বে-
(আরবী**********১১১)
তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর সে যে দরজা দিয়ে খুশী জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম)।
উপরন্তু তিনি আরও বলেন,
অযু করার কারণে ছোটো খাটো গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং অযুকারীকে আখেরাতে উচ্চ মর্যাদায় ভুষিত করা হব এবং অযুর দ্বারা শরীরের সমস্ত গুনাহ ঝরে পড়ে (বুখারী, মুসলিম)
আর একবার নবী (সা) অযুকে ঈমানের আলামত বলে অভিহিত করে বলেন, হকের রাস্তায় ঠিকভাবে কায়েম থাক, আর তোমরা কখনো সত্য পথে অটল থাকার হক আদায় করতে পারবে না। (সে জন্যে নিজেদের ভুলত্রুটি ও অক্ষমতা সম্পর্কে সজাগ থাক) এবং ভাল করে বুঝে রাখ যে, তোমাদের সকল আমলের মধ্যে নামায উত্কৃষ্টতম এবং অযুর পুরোপুরি রক্ষণাবেক্ষণ তো শুধু মু‘মেনই কারতে পারে- (মুয়াত্তায়ে ঈমাম মালেক, ইবনে মাজাহ)
অযুর মসনুন তরিকা
অযুকারী প্রথেমে মনে মনে এ নিয়ত করবে, আমি শুধু আল্লাহকে খুশী করার জন্যে এবং তাঁর কাছ থেকে আমলের প্রতিদান পাবার জন্যে অযু করছি। তারপর (আরবী*****১১২********) বলে অযু শুরু করবে এবং নিম্নের দোয়া পড়বে (আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ী)
(আরবী***********১১২)
হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ কর, আমার বাসস্থান আমার জন্যে প্রশস্ত করে দাও এবং রুযীতে বরকত দাও।– (নাসায়ী)।
হযরত আবু মুসা আশয়ারী বলেন, আমি নবী (সা) এর জন্যে অযুর পানি আনলাম। তিনি অযু করা শুরু করলেন। আমি শুনলাম যে, তিনি অযুতে এ দোয়া পড়ছিলেন (আরভী***********) আমি জিজ্ঞাস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহু! আপনি এ দোয়া পড়ছিলেন? তিনি বললেন, আমি দ্বীন ও দুনিয়ার কোন জিনিস তাঁর কাছে চাওয়া ছেড়ে দিয়েছি?
অযুর জন্যে প্রথমে ডানে হাতে পানি নিয়ে দু‘হাত কব্জি পর্যন্ত খুব ভাল করে তিনবার ঘষে ধুতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুল্লি করতে হবে। মিসওয়াকও করতে হবে। [নবী (সা) মিসওয়াককে অসাধারণ গুরুত্ব দিতেন। হযরত আয়েশা (রা) বলেন, নবী (সা) দিনে বা রাতে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন, তাঁর অভ্যাস ছিল, অযুর পূর্বে অবশ্যই মিসওয়াক করতেন (আবু দাউদ (আবু দাউদ)। হুযায়ফা (রা) বলেন, নবী (সা) যখন রাতে তাহাজ্জুদের জন্যে ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তাঁর অভ্যাস এই ছিল যে, মিসওয়াক দিয়ে ভাল করে মুখ দাঁত পরিস্কার করতেন তারপর অযু করে তাহাজ্জুদ নামাযে মশগুল হতেন।
নবী (সা) উম্মাতকে মিসওয়াকের জন্যে উদ্বুদ্ধ করে বলতেন, মিসওয়াক মুখ ভালোভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে এবং আল্লাহকে অত্যন্ত খুশী করে (বুখারী, নাসায়ী)।
নবী (সা) আরও বলেন, আমার উম্মতের কষ্টের প্রতি যদি খেয়াল না করতান, তাহলে প্রত্যেক অযুতে মিসওয়াক করার হুকুম দিতাম। (বুখারী, মুসলিম) ]
কোন সময়ে মিসওয়াক না থাকলে শাহাদৎ অঙ্গুরি দিয়ে ভালো করে ঘষে দাঁত সাফ করতে হবে। রোযা না থাকলে তিনবারই গড়গড়া করে কুল্লি করতে হবে। তার উদ্দেশ্যে গলদেশের ভেতর পর্যন্ত পানি পৌছানো। তারপর তিনবার এমনভাবে নাকে পানি দিতে হবে যেন নাসিকার ভেতর পর্যন্ত পৌছে। অবশ্য রোযার সময় সাবধানে কাজ করতে হবে। তারপর বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাক সাফ করতে হবে। প্রত্যেকবার নাকে নতুন পানি দিতে হবে। তারপর দু‘হাতের তালু ভরে পানি নিয়ে তিনবার সমস্ত মুখমণ্ডল (চেহেরা) এমনভাবে ধুতে হবে যেন চুর পরিমাণ স্থানও শুকনো না থাকে। দাঁড়ি ঘন হলে তার মধ্যে খেলাল করতে হবে যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌছে যায়। চেহেরা ধুবার সময় এ দোয়া পড়তে হবে
(আরবী***********১১৩)
হে আল্লাহ ! আমার চেহেরা সেদিন উজ্জ্বল করে দাও যেদিন কিছু লোকের চেহেরা উজ্জ্বল হবে এবং কিছু লোকের মলিন হবে।
তারপর দু‘হাত কনুই পর্যন্ত ভালো করে ঘষে ধুবে। প্রথম ডান হাত এবং পরে বাম হাত তিন তিনবার করে ধুতে হবে। হাতে আংটি থাকলে এবং মেয়েদের হাতে চুড়ি-গয়না থাকলে তা নাড়াচাড়া করতে হবে যেন ভালোভাবে পানি সবখানে পৌছে। হাতের আঙ্গুলগুলিতে আঙ্গুল দিয়ে খেলাল করতে হবে। তারপর দু‘হাত ভিজিয়ে মাথা এবং কান মাসেহ করতে হবে।
মুসেহ করার পদ্ধতি
মুসেহ করার পদ্ধতি এই যে, বড়ো এবং শাহাদাত আঙ্গুলি আলাদা রেখে বাকী দু‘হাতের তিন তিন অংগুলি মিলিয়ে অংগুলিগুলোর ভেতর দিক দিয়ে কপালের চুলের গোড়া থেকে পেছন দিকে মাথার এক চতুর্থাংশ মুসেহ করতে হবে। তারপর দুহাতের হাতুলির পেছন দিক থেকে সামনের দিকে টেনে মাথার তিন চতুর্থাংশ মুসেহ করতে হবে। তারপর শাহাদাত অংগুলি দিয়ে কানের ভেতরের অংশ এবং বুড়ো অংগুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মুসেহ করতে হবে। তারপর দু‘হাতের অংগুলিগুলোর পিঠ দিয়ে ঘাড় মুসেহ করতে হবে। গলা মুসেহ করতে হবে না। এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য এই যে, এভাবে কোন অংশ মুসেহ করতে হাতের ঐ অংশ দ্বিতীয় বার ব্যবহার করতে হয় না যা একবার ব্যবহার করা হয়েছে।
মুসেহ করার পর দু‘পা টাখনু পর্যন্ত তিন তিনবার এমনভাবে ধুতে হবে যে, ডান হাত দিয়ে পানি ঢালতে হবে এবং বাম হাত দিয়ে ঘষতে হবে। বাম হাতের ছোট আংগুল দিয়ে পায়ের আংগুলগুলোর মধ্যে খেলাল করতে হবে। ডান পায়ে খেলাল ছোট আংগুল থেকে শুরু করে বুড়ো আংগুলে শেষ করতে হবে। বাম পায়ে খেলাল বুড়ো আংগুল থেকে ছোট আংগুল পর্যন্ত করতে হবে। অযুর কাজগুলো পর পর কর যেতে হবে। অর্থাৎ একটার পর সংগে সংগে অন্যটি ধুতে হবে। খানিকক্ষণ থেমে থেমে করা যেন না হয়।
অযু শেস করে আসমানের দিকে মুখ করে তিন বার এ দোয়া পড়তে হবে।
(আরবী************************১১৪*********)
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহ, আমাকে ঐসব লোকের মধ্যে শামিল কর যারা বেশী বেশী তওবাকারী এবং আমাকে ঐসব লোকের মধ্যে শামিল করা যারা বেশী বেশী পাক সাফ থাকে।