মাওলানা মওদুদী (র)
আব্বাস আলী খান
প্রকাশের কথা
বিংশ শতাব্দীতে এ উপমহাদেশে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (র) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। তাঁর ইসলামী দর্শনভিত্তিক সাহিত্য ও তাফসীর সারা বিশ্বে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে ব্যাপকহারে প্রশংসিত ও সমাদৃত হয়ে আসছে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাওলানা মওদূদী জীবনীগ্রন্থ-এর পঞ্চম সংস্করণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন ষষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বলে আমরা মহান রাব্বুল আলামীনের অযুত শোকর আদায় করছি এবং সেই সাথে এ গ্রন্থের সম্মানিত লেখক মুহতারাম আব্বাস আল খান- যিনি এখন আর আমাদের মাঝে নেই, আমরা তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।
এছাড়া পূর্বের সংস্করণগুলোর প্রকাশক অধ্যাপক ইউসুফ আলীও দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে জান্নাতবাসী করুন- এই দোয়াই করছি।
অতীতের মতো এ সংস্করণটিও পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে বলে আশা পোষণ করছি। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের প্রচারের ক্ষেত্রে সার্বিক কোরবানী পেশ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
ঢাকা
১৬ এপ্রিল ২০০৫ |
বিনীত
মোঃ তাসনীম আলম |
চতুর্থ সংস্করণের ভূমিকা
মাওলানা মওদূদী (র.) জীবনীগ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণ শেষ হয়ে গেছে বৎসরাধিক কাল পূর্বে। এখন চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বলে আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। তৃতীয় সংস্করণে সাবধানতার কারণে যে সব ভুল-ত্রুটি রয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আশা করি সহৃদয় পাঠক তা ক্ষমার চোখে দেখবেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় প্রকাশনা বিভাগ বইখানা প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে তাঁদের কাছেও কৃতজ্ঞ রইলাম।
আশা করি পাঠক সমাজে এ গ্রন্থখানি আগের মতই সমাদৃত হবে। আল্লাতায়ালা আমার এ নগণ্য খিদমত কবুল করুন। আমীন।
বিনীত গ্রন্থকার
জুলাই- ১৯৯৬
দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
আজ থেকে প্রায় পনেরো বছর আগে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (র.) জীবনী ও কর্মসাধনার উপরে সংক্ষিপ্ত আলোকপাতসহ গ্রন্থখানির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় এটাই ছিল এ ধরনের প্রথম গ্রন্থ। গ্রন্থখানির প্রকাশকারে মাওলানা মরহুম জীবিত ছিলেন বলে সেটাকে তাঁর পূর্ণ জীবনী বলা চলে না। যা হোক বাংলাদেশ হওয়ার পূর্বেই তা নিঃশেষ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন স্থান থেকে পুনঃ প্রকাশের দাবি ও অনুরোধ আসতে থাকে। অতঃপর সম্প্রতি মাওলানা দুনিয়া ত্যাগ করে তাঁর আপন প্রভুর সান্নিধানে চলে যান।
মাওলানার জীবনী ও কর্মসাধনা সম্পর্কে নতুন করে কলম ধরতে এবার নিজের অক্ষমতা অযোগ্যতা আমাকে বারবার নিরুৎসাহিত করেছে। মুসলিম বিশ্বের সুধীমহলে মাওলানার স্থান এত উচ্চে, মুসলিম মিল্লাতের জন্যে ও তাঁর ভবিষ্যত বংশধরদের জন্যে রেখে যাওয়া অবদান এতো বিরাট ও বিশাল যে তার পূর্ণ চিত্র অংকন আমার সাধ্যের অতীত। মুসলিম মিল্লাত ও তার বংশধরদের জন্যে যা কিছু করার এবং বলার তার কোন কিছু্ তিনি ফেলে রেখে যাননি। তাঁর সাহিত্য ও চিন্তাধারা, বিশেষ করে তাঁর বিপ্লবী তাফসীর তাফহীমুল কোরআন ও সীরাতে সরওয়ারে আলম কয়েক শতাব্দীর জন্যে মুসলিম মিল্লাতের দিগদর্শনের কাজ করতে থাকবে। জীবন ও সমাজের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের জন্যে তিনি পুরোপুরি রাহনুমায়ী (পথ প্রদর্শক) করে গেছেন। যার জন্যে ইসলামী জগত এক বাক্যে তাঁকে ইসলামী জগতের নেতা ও শতাব্দীর সংস্কারক ও ইতিহাস-স্রষ্টা বলে স্মরণ করছে ও করবে।
মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর (র) দাওয়াত, বাণী ও আদর্শ ছিল যেহেতু আন্তর্জাতিক, বিশ্বব্যাপী ও বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্যে, তাই তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল না কেন ভৌগোলিক দেশভিত্তিক, বরঞ্চ আন্তর্জাতিক এবং সেজন্যে তিনি ছিলেন সকল আঞ্চলিকতা, স্বজনপ্রীতি ও একদেশদর্শিতার বহু উর্দ্ধে। তাই সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে সাইয়েদ মওদূদী একটা অতি প্রিয় নাম, সকলের আকর্ষণ ও শ্রদ্ধার পাত্র। এ গ্রন্থখানি এক ব্যক্তির শুধু জীবচরিত্রই নয়, বরঞ্চ একটি জীবন, একটি ইতিহাস ও একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন।
মাওলানর পূর্বপুরুষের আবাসভূমি ছিল দিল্লী। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ও লালিত-পালিত হন দাক্ষিণাত্যের হায়দারাবাদে। ইসলামের মহান আদর্শ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে জন্মভূমি চিরকালের জন্যে পরিত্যাগ করে কর্মস্থল হিসেবে বেছে নেন পূর্ব পাঞ্জাবের পাঠানকোটকে। ভারত বিভাগের পর হিজরত করেন লাহোরে। কোন আঞ্চলিক ভূখন্ডের মায়া তাঁকে আদর্শ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। জীবনের শেষ তেত্রিশ বছর লাহোরে কাটিয়ে তিনি লাহোরী বা পঞ্জাবী হয়ে যাননি। তিনি ছিলেন সারা জাহানের। তিনি ছিলেন বিশ্বমানবতার।
তিনি হর-হামেশা সত্যের প্রচার করেছেন। মিথ্যা, অবিচার, দূর্নীতি ও যুলুম নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। তাঁর সত্য ভাষণ কখনও অপ্রিয় করেছে আপনজনকে, অপ্রিয় করেছে বন্ধু-বান্ধবকে, অপ্রিয় করেছে অনেক বুযুর্গানে কওমকে।
তাঁর মাতৃভাষা ছিল উর্দূ, যার আজীবন তিনি সেবা করেছেন। সে ভাষাকে নতুন রূপ দিয়েছেন, নতুন অলংকারে ভূষিত করেছেন। কিন্তু তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন সকল ভাষার প্রতি এবং মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। উর্দূ তাঁর মাতুভাষা হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার সপক্ষে স্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
অখন্ড পাকিস্তান আমলে পূর্ব-পাকিস্তানের উপরে পশ্চিম-পাকিস্তানী শাসকদের যে অবিচার ও প্কষপাতমূলক আচরণ ছিল, তার তিনি তীব্র সমালোচনা করে সমাধান পেশ করেছেন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তানে বহিরাগত মুসলমানদের আচরণ সম্পর্কে, ভাষা সমস্যা, চাকরি সমস্যা ও দেশরক্ষা সমস্যা সম্পর্কে ন্যায়নীতিভিত্তিক সুস্পষ্ট মন্তব্য করেছেন। তিনি পূর্ব-পাকিস্তানকে তাঁর দেহের একটি অংশের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “পাকিস্তান আমার দেহ ও প্রাণের তুল্য। আমার দুটি হাতের মধ্যে যেমন আমি পার্থক্য করতে পারি না, তদ্রুপ পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি না। আমার দুই হাতের মধ্যে যেটি অসুস্থ হোক, তা পুরো শরীরের একটা রোগ। এর কারণ অনুসন্ধান করা ও সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আমার কর্তব্য। আর তা না করার অর্থ হচ্ছে নিজের সাথে শত্রুতা করা।”
তিনি মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণকালে সেখানকার জনসাধারণ ও সুধীবৃন্দের সামনে আরব জাতীয়তাবাদের নির্ভীক সমালোচনা করেন। অপরদিকে বিদেশে অবস্থানরত পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মচারীদের কর্মতৎপরতারও সমালোচনা করেন।
তাঁর চরিত্রের আর একটি মধুর বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি নিজেকে কখনও ভুলের উর্ধ্বে মনে করতেন না। তাই তিনি সর্বদাই জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে, কাউন্সিল অধিবেশনে (মজলিশে শূরা) নিজেকে সমালোচনা করার জন্যে পেশ করতেন। যাঁরা তাঁর জন্যে সদা প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকতেন, তাঁদেরকে তিনি পূর্ণ সুযোগ দিতেন, যদি তাঁর কোন ভুলত্রুটি তাঁদের চোখে ধরা পড়ে থাকে, তা দ্বিধাহীন চিত্তে যেন বলে ফেলতে পারেন। এভাবে তিনি বহুদিনের বদ্ধমূল কুসংস্কারকে (খাতায়ে বুযুর্গান গেরেফতান খাতস্ত-বুযুর্গদের ভুল ধরাও ভুল) ভেঙে চুরমার করেছেন।
তিনি দিবারাত্র দ্বীনের খেদমতে এমনভাবে নিমগ্ন থাকতেন যে, ঘর-সংসারের, সন্তানাদির এবং আপন স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়ার ফুরসতই ছিল না তাঁর। মিল্লাত ও বিশ্বমানবতার খেদমতের জন্যে তিনি নিজেকে করে রেখেছিলেন উৎসর্গীকৃত।
অতএব এ কথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যেতে পারে যে সাইয়েদ ও মুরশিদ মওদূদীর ব্যক্তিত্ব কোন একটি দেশের মধ্যে সীমিত ছিল না। তিনি ছিলেন না হিন্দুস্তানী, না পাকিস্তানী, ছিলেন না আরবী অথবা আজমী। বরঞ্চ তিনি ছিলেন মুসলিম বিশ্বের, বিশ্বমানবতার।
তাই বলছিলাম, মুসলিম মিল্লাতের শ্রদ্ধেয় মনীষী সাইয়েদ মওদূদীর ব্যক্তিত্বের উপর কলম ধরতে বার বার যেন নিজের অযোগ্যতাই অনুভব করেছি। তথাপি চারিদিকের ক্রমবর্ধমান দাবি ও অনুরোধের চাপে বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশের চেষ্টা করছি। তবে এর জন্যে যে সময় ও শান্ত পরিবেশের প্রয়োজন ছিল তা না থাকায় এ বিষয়ে কলম ধরার হক যে আদায় করতে পারিনি তা বিনা দ্বিধায় বলতে পারি। মাওলানার চিন্তাধারার বিভিন্ন দিকের উপর বিরাট গ্রন্থ রচিত হতে পারে এবং আলবৎ তার প্রয়োজনও রয়েছে। আমার বিশ্বাস যুগের দাবির প্রেক্ষিতে সুধীমহল এ কাজেও অবশ্যি হাত দেবেন এবং দিয়েছেনও অনেকেই।
বাংলাভাষী পাঠক সমাজের কাছে আবেদন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গিসহ মাওলানার সত্যিকার পরিচয় জানবার চেষ্টা করুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর সাহিত্য এত বেগবান, সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী যে, মনোযোগী পাঠকের হৃদয় মন আলোড়িত না হয়ে পারে না। পাঠকের কাছে আও অনুরোধ, মাওলানার অন্যান্য সাহিত্য একবার খোলা মন নিয়ে পাঠ করে দেখুন। তাঁর সাহিত্য পাঠের মাধ্যমেই তাঁর সত্যিকার পরিচয় হৃদয়-মনের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।
আমার একান্ত বাসনা ছিল, ছাপার দিক দিয়ে বইখানিকে যথাসম্ভব অতি উন্নতমানের করা। কিন্তু কাজের ব্যস্ততা এবং ঘন ঘন ঢাকা ও দেশের বাইরে গমনাগমনের দরুন ছাপার কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই ছাপার ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। সহৃদয় পাঠক আশা করি তা ক্ষমার চোখে দেখবেন।
নানাবিধ অসুবিধার মধ্যেও যে বইখানি প্রকাশ লাভ করতে পারল, তার জন্যে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য শুকরিয়া জানাই।
শেষ কথা এই যে, বইখানি যদি পাঠক মহলে কিঞ্চিৎ মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়, তাহলে আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। অবশ্য পারিশ্রমিকের আসল প্রাপ্য আখেরাতেই কামনা করি। হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বইখানি প্রকাশ লাভ করছে। তাই বিশ্বস্রষ্টার দরবারে আরয, বিশ্বব্যাপী ইসলামী পুনর্জাগরণের জলতরঙ্গে এ ক্ষুদ্র গ্রন্থখানি কিছু অবদান রাখতে সক্ষম হোক- আমীন।
বিনীত গ্রন্থকার
ঢাকা
মুহররম- হিঃ ১৪০০
ডিসেম্বর- ১৯৭৯
উৎসর্গ
যাঁর এ জীবন-আলেখ্য তাঁর জন্য এবং আমার মরহুম আম্মা, আব্বা, চাচার জন্যে উৎসর্গিত হলো এ গ্রন্থখানি। উপরন্তু তাঁদের জন্য, যাঁরা আল্লার পথে তাঁদের খুনে রক্ত-রাঙা করেছেন আল্লাহর এ যমীনকে।
গ্রন্থকার
ফাঁসীর কুঠরিতে জীবনের জয়গান
ঊনিশ শ’ তিপ্পান্ন সালের ৮ই মে পাকিস্তানের সামরিক আদালত মাওলানা মওদূদীকে মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রদান করে। এ আদেশ শ্রবণের পর নির্ভীক প্রশান্ত মর্দে মুজাহিদ এ ঐতিহাসিক উক্তি করেন:
“আপনারা মনে রাখবেন যে, আমি কোন অপরাধ করিনি। আমি তাদের কাছে কিছুতেই প্রাভভিক্ষা চাইব না। এমনকি আমার পক্ষ থেকে অন্য কেউ যেন প্রাণ ভিক্ষা না চায়- না আমার মা, না আমার ভাই, না আমার স্ত্রী-পুত্র-পরিজন। জামায়াতের লোকদের কাছেও আমার এই অনুরোধ। কারণ জীবন ও মরণের সিদ্ধান্ত হয় আসমানে- যমীনে নয়।”
ফাঁসীর মঞ্চে আরোহন যাঁর সুনিশ্চিত সেই বিপ্লবী যাত্রীর কাছে তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীগণ আবেদন জানালেন- “প্রাণ ভিক্ষা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত তো আপনার নিজস্ব। এ সিদ্ধান্ত যে জামায়াতকে মেনে নিতে হবে তার কোন মানে নেই। জামায়াত বাইরের পরিস্থিতির আলোকে বৃহত্তর স্বার্থে যা সিদ্ধান্ত করবে তা আপনাকে মানতেই হবে।”
“আমি জামায়াতের দৃষ্টিতেও আমার সিদ্ধান্ত সঠিক মনে করি। আমার এ সুস্পষ্ট ও সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত জামায়াত নেতৃবৃন্দকেও আপনাদের জানিয়ে দেয়া কর্তব্য।”
“আমি যদি বসে পড়ি,
তাহারে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?”
১৯৬৩ সালের অক্টোবর মাসে নিখিল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর একটি সম্মেলন লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন যাতে না হতে পারে সেজন্য সরকার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। পরে সারা পাকিস্তানে মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপরও বিনা মাইকে দশ বারো হাজার লোকের সম্মেলন শুরু হয়। পনেরো বিশ হাত পরপর একটি টেবিলে দাড়িয়ে মঞ্চ থেকে বক্তৃতার সাথে সাথে একই সময়ে ছাপানো বক্তৃতা উচ্চস্বরে পড়ে শোনানো হয়।
সভার কাজ শুরু হওয়ার মিনিট দশ পর সভার প্যান্ডেলে হঠাৎ কিছু গুন্ডার অনুপ্রবেশ দেখা গেল। মদের নেশায় তারা ছিল উন্মত্ত প্রায়। তারা সভার শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা শুরু করল। হঠাৎ শামিয়ানায় আগুন জ্বলে উঠলো, শামিয়ানার বাইরে হৈ হল্লা ও পিস্তলের গুলির শব্দ শুনা গেল। মাওলানাকে লক্ষ্য করেও কয়েকবার গুলি বর্ষিত হল। কিন্তু প্রত্যেকটি গুলিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এসময়ে চারিদিক থেকে একথা বলতে শুনা যায়- “মাওলানা বসে পড়ুন, মাওলানা বসে পড়ুন।” বক্তৃতারত মাওলানা দাঁড়িয়ে থেকেই শান্ত কণ্ঠে বল্লেন, “আমি যদি বসে পড়ি, তাহলে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?”…….. এভাবে তিনি তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতা শেষ করলেন।
জামায়ত কর্মীগণ অসীম ধৈর্য ও হিকমতের মাধ্যমে গোটা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আয়ত্বে রাখলেন ও পূর্ণ শৃঙ্খলা বজায় রাখলেন।
এভাষণ চলাকালেই ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের গুলিতে জামায়াত কর্মী আল্লাহ বখ্শ্ শহীদ হন।