বাদশাহ এবং আমীরদের নামে চিঠি
ষষ্ঠ হিজরীর শেষদিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হোদায়বিয়া থেকে ফিরে আসার পর বিভিন্ন বাদশাহ ও আমীরের নামে চিঠি প্রেরণ করে তাদের ইসলামের দাওয়াত দেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব চিঠি প্রেরণের ইচ্ছা করলে তাঁকে বলা হয় যে, চিঠিতে সীলমোহর দেয়া হলেই বাদশাহ তা গ্রহণ করবেন। এ কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রূপার আংটি তৈরী করেন, এতে মোহাম্মদ, রসূল ও আল্লাহ এই শব্দ তিনটি খোদাই করা হয়েছিলো। আল্লাহ ১ম, রসূল ২য় এবং মোহাম্মদ ৩য় লাইনে লেখা হয়।[ সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড ৮৭২,]
চিঠি লেখানের পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সাহাবাদের কয়েকজনকে চিঠিসহ বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন। খয়বর রওয়ানা হওয়ার কয়েকদিন আগে সপ্তম হিজরীর ১লা মহররম তারিখে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল দূত প্রেরণ করেন।[রহমতুল লিল আলামীন. ১ম খন্ড, পৃ. ১৭১] নীচে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা যাচ্ছে।
এক) হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশীল নামে-
নাজ্জাশীর প্রকৃত নাম ছিলো আসহাম ইবনে আলজাবার। আল্লাহর রসূল চিঠি লেখানে পর আমর ইবনে উমাইয়া জামরির হাতে ষষ্ঠ হিজরীর শেষে বা সপ্তম হিজরীর শুরুতে এটি প্রেরণ করেন। আল্লামা তিবরি চিঠির বক্তব্যও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চিঠির বক্তব্য ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, হোদায়বিয়ার সন্ধির পর লেখা চিঠি এটি নয়। মক্কয় অবস্থানকালে আল্লাহর রসূল হযরত জাফর তাইয়াবকে হাবশায় হিজরতের সময় যে চিঠি দিয়েছিলেন নাজ্জাশীকে দেয়ার জন্যে এটি মনে হয় সেই চিঠি। কেননা চিঠির শেষে মোহাজেরদের প্রসঙ্গ এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আমি আপনার কাছে আমার চাচাতো ভাই জাফরকে মুসলমানদের একটি জামাতের সাথে পাঠিয়েছি। ওরা আপনার কাছে পৌঁচুলে আপনি ওদের আপনার তত্ত্বাবধানে রাখবেন এবং কোন প্রকার জবরদস্তি করবেন না।
ইমাম বায়হাকী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে আরো একখানি চিঠির কথা উল্লেখ করেছেন সেটিও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজ্জাশীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। চিঠির বক্তব্য এরূপ: ‘এই চিঠি নবী মোহাম্মদের পক্ষ থেকে হাবশার বাদশাহ আসহামের নামে। যিনি হেদায়েরেত অনুসরণ করবেন এবং আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের উপর বিশ্বস স্থাপন করবেন তার ওপর সালাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক ও দ্বিতীয় আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত এবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই। তাঁর স্ত্রী পুত্র কিছু নেই। আমি একথাও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মোহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রসূল। আমি আপনাকে ইসলারেম দাওয়াত দিচ্ছি, কেননা আমি আল্লাহর রসূল। কাজেই ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। হে আহলে কেতাব, এমন একটি বিষয়ের প্রতি আসুন, যা আমাদের এবং আপনাদের মধ্যে সমান। আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো এবাদত করবো না। তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবো না, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে প্রভু হিসাবে স্বীকার করবো না। যদি কেউ এ বিশ্বাস গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তাকে বলূন যে, সাক্ষী থাকো, আমি মুসলমান। যতি আপনি এই দাওয়াত গ্রহণ না করেন, তবে আপনার ওপর আপনার কওমের নাছারাদের সমুদয় পাপ বর্তাবে।
প্যারিসের ডক্টর মোঃ হামিদুল্লাহ আরো একখানি চিঠির বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। সেটি সন্ধান পাওয়া গেছে। এ চিঠিখানি একটি শব্দের পার্থক্যসহ আল্লামা ইবনে কাইয়েমের লেখা গ্রন্থ যাদুল মায়াদ-এ উল্লেখ রয়েছে। ডক্টর সাহেব চিঠির বক্তব্যের সতত্যা নিরূপণের যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন।
বর্তমান যুগে প্রকাশিত এ চিঠির ফটোকপি ডক্টর হামিদুল্লাত তাঁর গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন। এর অনুবাদ নিম্নরূপ। পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
‘আল্লাহর রসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে হাবশার নাজ্জাশী আযরেম প্রতি। সালাম সেই ব্যক্তির ওপর যিনি হেদায়াতে অনুসরণ করেন। আমি আপনার কাছে মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। যিনি কুদ্দুস, যিনি সালাম, যিনি নিরাপত্তা ও শান্তি দেন, যিনি হেফাযতকারী ও ত্ত্বাবধায়নকারী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ঈসা ইবনে মরিয়ম আল্লাহর রূহ এবং তাঁর কলেমা। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পবিত্র ও সতী মরিয়মের ওপর স্থাপন করেছেন। আল্লাহর রূপ বেং ফুঁ-এর কারণে হযরত মরিয়ম (রা) গর্ভবতী হলেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে নিজের হাতে তৈরী করেছিলেন। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর আনুগত্যের প্রতি পরস্পরকে দাওয়াত দিচ্ছি। এছাড়া একতার প্রতিও দাওয়াত দিচ্ছি যে, আপনি আমার আনুগত্য করুন এবং আমি যা কিচু নিয়ে এসেছি, তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুন। কেননা আমি আল্লাহর রসূল, আামি আপনাকে এবং আপনার সেনাদলকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি তাবলীগ ও নসিহত করেছি। কাজেই আমার তাবলীগ ও নসিহত কবুল করুন। (পরিশেষে) সালাম সেই ব্যক্তির ওপর, যিনি হেদায়াতের আনুহ্য করেন।[রসূলুল্লাহর রাজনৈতিক জীবন, ডক্টর মোঃ হামিদুল্লাহ। পৃ. ১০৮, ১০৯, ১২২, ১২৩, ১২৪, ১২৫, যাদুল মায়াদ গ্রন্থে শেষ শব্দ যে ব্যক্তি হেদায়াতে আনুগত্য করেন-এর পরিবর্তে রয়েছে যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন।’ দেখুন যাদুল মায়াদ, তৃতীয় খন্ড, পৃ. ৬০]
ডক্টর মোঃ হামিদুল্লাহ দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন যে, এই চিঠিই সেই চিঠি, যা হোদায়বিয়ার সন্ধির পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজ্জাশীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। এই চিঠি সম্পর্কিত বর্ণনাসূত্রের প্রতি লক্ষ্য করেলে এ বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহের কোন কারণ থাকে না। কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হোদায়বিয়ার সন্থির পর এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন, এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং ইমাম বায়হাকি যে চিঠি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা) বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, তার সাথে অন্যান্য বাদশাহর চিঠির বিবরণ অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়। কেননা ইমাম বায়হাকি সঙ্কলিত চিঠিপত্রের সাথে কোরআনে ‘হে আহলে কেতাবরা’ সম্বোধন সম্বলিত আয়াত রয়েছে। এ ধরনের আয়াত অন্যান্য ইমামদের সংকলিত চিঠির মধ্যেও উল্লেখ রয়েছে। ইমাম বায়হাকি সঙ্কলিত চিঠিতে হাবশার বাদশাহর নাম আসহামা উল্লেখ রয়েছে। ডক্টর হামিদুল্লাহ সঙ্কলিক চিঠিতে কারো নাম উল্লেখ নেই। এমতাবস্থায় আমার ধারণা হচ্ছে যে, ডক্টর সাহেবের চিঠি প্রকৃতপক্ষে সেই চিঠি, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসহামের মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্তের নামে লিখেছিলেন। সম্ভবত এ কারণেই চিঠিতে কারো নাম ছিলো না।
এ বিষয়ে আমর কাছে কোন প্রমাণ নেই। বরং সেইসব অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যই হচ্ছে ভিত্তি, যা চিঠির বক্তব্য থেকে গ্রহণ করা যায়। তবে ডক্টর হামিদুল্লাহ সাহেব সম্পর্কে বিস্ময় জাগে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণিত বায়হাকির উদ্ধৃত চিঠিতে পূর্ণ নিশ্চয়তা সাথে আল্লাহর রসূলের সেই চিঠি বলে উল্লেখ করেছেন যে চিঠি আসহামার মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরীর নামে লিখা হয়েছিলো। অথবা আসহামাকে লেখা চিঠিতে সুস্পষ্টবাবে তার নাম লেখা রয়েছে।
মোটকথা, আমর ইবনে উমাইয়া জামারি আল্লাহর রসূলের চিঠি নাজ্জাশীর কাছে প্রদান করেন। নাজ্জাশী সেই চিঠি চোখে লাগান এবং সিংহাসন ছেড়ে নীচে নেমে আসেন। এরপর হযরত জাফর ইবনে আবু তালেবের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেরিত চিঠির জবাবে তিনি একখানি চিঠি মদীনায় প্রেরণ করেন। সেই চিঠির বক্তব্য নিম্নরূপ।
পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহর রসূল মোহাম্মদের নামে নাজ্জাশী আসহামার পক্ষ থেকে।
হে আল্লাহর নবী, আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ছালাম, তাঁর রহমত ও বরকত নাযিল হোক। সেই আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি ব্যতীত এবাদাতের উপযুক্ত কেউ নেই। অতপর, হে আল্লাহর রসূল, আপনার চিঠি আমার হাতে পৌছেছে। এ চিঠিতে আপনি হযরত ঈসা (রা) সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। আসমান ও যমিনে মালিক আল্লাহর শপথ, আপনি যা কিছু উল্লেখ করেছেন হযরত ঈসা (আ) এর চেয়ে বেশী কিছু ছিলেন না। তিনি সেইরূপ ছিলেন আপনি যেরূপ উল্লেখ করেছেন।[ হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে নাজ্জাশীর অর্থাৎ আসহামার এই বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাঁর উল্লেখিত আসহামার নামেই প্রেরিত হয়েছিলো।] আপনি আমার কাছে যা কিচু লিখে পাঠিয়েছেন, আমি তা জেনেছি এবং আপনার চাচাতো ভাই এবং আপনার সাহাবাদের মেহমানদারী করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর সত্য ও খাঁটি রসূল। আমি আপনার কাছে বাইয়াত করছি, আপনার চাচাতো ভাইয়ের বাইয়াত করছি এবং তাঁর হাতে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্যে ইসলাম কবুল করেছি।[ যাদুল মায়াদ, ৩য় খন্ড, পৃ. ৬১]
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজ্জাশীর কাছে একথাও দাবী করেছেন, তিনি যেন হযরত জাফর এবং হাবশায় অন্যান্য মোহাজেরদে পাঠিয়ে দেন। সেই অনুযায়ী নাজ্জাশ হযরত আমর ইবনে উমাইয়া জামরির সাথে দু’টি কিসতিতে করে সাহাবাদে দেশে পাঠানো ব্যবস্থা করেন। একটি কিসতিতে হযরত জাফর, হযরত আবু মূসা আশয়রী এবং অন্য কয়েকজন সাহাবা ছিলেন। তাঁরা প্রথমে খয়বরে পৌঁছে সেখান থেকে মদীনায় হাযির হন। অন্য একটি কিসতিতে অধিকাংশ ছিলো শিশু-কিশোর, তারা হাবশা থেকে সরাসরি মদীনায় পৌঁছে।[ যাদুল মায়াদ, ৩য় খন্ড, পৃ. ৬১]
উল্লেখ্য, নাজ্জাশী তবুক যুদ্ধের পর নবম হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহর রসূল নাজ্জাশীর ইন্তেকালের তারিখেই তার মৃত্যু সংবাদ সাহাবাদের জানান এবং গায়োনা জানাযার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে নাজ্জাশীর স্থলাভিষিক্ত বাদশাহর কাছেও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এককানি চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন কিনা,সেটা জানা যায়নি।[একই গ্রন্থ একই পৃ.]
দুই) মিসরের বাদশাহ মুকাওকিসের নামে-
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিসর ও আলেকজান্দ্রিয়ার শাসনকর্তা জোরাইজ ইবনে মাতা’র[ আল্লামা মননুরপুরী রহমতুল লিল আলামীন গ্রন্থের ১৭৮ পৃষ্ঠা তর প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। ডক্টর হামিদুল্লাহ তাঁর লিখিত রসূুল্লাহর রাজনৈতিক জীবন গ্রন্থে এই বাদশাহর নাম বনি ইয়ামিন বলে উল্লেখ করেছেন।] কাছেও একখানা চিঠি লিখেছিলেন। জুরাইজের উপাধি ছিলো মুকাওকিস। চিঠির বিবরণ নিম্নরূপ-
‘পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে মুকাওকিস আযম কিবতের নামে। তাঁর প্রতি সালাম, যিনি হেদায়াতের আনুগত্য করেন।
আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দু’টি পুরস্কার দেবেন। আর যদি ইসলাম গ্রহণ না করেন, তবে কিবতের অধিবাসীদের পাপও আপনা ওপর বর্তাবে। হে কিবতিরা, ‘এমন একটি বিষয়ের প্রতি এসো যা আমাদে এবং তোমাদের জন্যে সমন। সেটি এই যে, আমরা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো এবাদাত করবো না এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবো না। আমদের মধ্যে কেউ যেন আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকে প্রভু হিসাবে না মানে।’ যদি কেউ এই দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, তবে বলে দাও, সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলমান।’[যাদুল মায়াদ গ্রন্থের ৩য় খন্ডের ৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাছে অতীতে এই চিঠি আবিষ্কৃত হয়েছে। ডক্টর হামিদুল্লাহ মুদ্রিত ফটোকপির বিবরণে এবং যদুল মায়দ-এর উল্লিখিত বিধির বিবরণের মধ্যে মাত্র দুটি শব্দের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। রসূলুল্লাহর রাজনৈতিক জীবন পৃ. ১৩৬, ১৩৭ দেখুন।]
এই চিঠি পৌঁছানোর জন্যে হযরত হাতেব ইবনে আবি বালতাআকে মনোনীত করা হয়। তিনি মোকাওকিসের দরবারে পৌঁছার পর বলেছিলেন, এই যমিনে আপনার আগেও একজন শাসনকর্তা ছিলেন, যে নিজেকে রব্বে আ’লা মনে করতো। আল্লাহ তায়ালা তাকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী লোকদের জন্যে দৃষ্টান্ত করেছেন। প্রথমে তার দ্বারা অন্য লোকদের ওপর প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে এরপর তাকে প্রতিশোধের লক্ষ্যস্থল করা হয়েছে। কাজেই অন্যের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। এমন যেন না হয় যে, অন্যরা আপনার ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করবে।’
মুতাওকিস জবাবে বললেন, আমাদের একটি ধর্ম-বিশ্বাস রয়েছে সেই ধর্ম বিশ্বাস আমরা পরিত্যাগ করতে পারি না। যক্ষণ পর্যন্ত তার চেয়ে উত্তম কোন ধর্ম –বিশ্বাস পাওয়া না যায়।
হযরত হাতেব (রা) বলেন, আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। এই দ্বীনকে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী সকল দ্বীনের পরিবর্তে যথেষ্ট মনে করেছেন। ইসলামের অর্থাৎ আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের নবী মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে কোরায়শরা প্রধান শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। ইহুদীরাও শত্রুতা ও ষড়যন্ত্র শুরু করে। নাছারারা ছিলো কাছে কাছে। আল্লাহর শপথ, হযরত মূসা (আ) যেমন হযরত ঈসা (আ) সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছিলেন একই নিয়মে আমরা আপনাকে কোরআনের দাওয়াত দিচ্ছি, যেমন আপনারা তাওরাতের অনুসারীদের ইঞ্জিলের দাওয়াদ দিয়ে থাকেন। যে নবী যে কওমের জন্যে অত্যাবশ্যক হয়ে থাকে।
আপনারা নবাগত নবীর যমানা পেয়েছেন, কাজেই তাঁর আনুগত্য করওন। আপনাক আমরা দ্বীনে মসীহ থেকে ফিরে আসতে বলছি না, বরং আমরা মূলত সেই দ্বীনের দাওয়াতই দিচ্ছি।
মুকাওকিস বলেন, সেই নবী সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে আমি শুনেছি যে, তিনি কোন অপছন্দনীয় কাজের আদেশ দেন না এবং পছন্দনীয় কোন কাজ করতে নিষেধ করেন না। তিনি পথভ্রষ্ট যাদুকর নান, নিথ্যাবাদীন জ্যোতিষী নন। বরং আমি দেখেছি যে, তার সাথে নবুয়তের এ নিশানা রয়েছে যে, তিনি গোপনীয় বিষয়কে প্রকাশ করেন এবং অপ্রকাশ্য জিনিস সম্পর্কে খবর দেন। আমি তার দাওয়াত সম্পর্কে আরো চিন্তা-ভাবনা করবো।
মুকাওকিস আল্লাহর রসূলের চিঠি নিয়ে হাতীর দাঁতের একটি কৌটোয় রাখেন এরপর মুখ বন্ধ করে সীল লাগিয়ে তার এক দাসীর হাতে দেন। এরপর আরবী ভাষার কাতেবকে ডেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লারেম কাছে নিম্নোক্ত চিঠি লেখেন।
‘পরম করুণাময় ও অতি দয়ালুয আল্লাহর নাম শুরু করছি। মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর নামে মুকাওকিস আযিম কিবত-এর পক্ষ থেকে। আপনার প্রতি সালাম। আপনরার চিঠি পাঠ করেছি। আপনার চিঠির বক্তব্য এবং দাওয়াত আমি বুঝেছি। আমি জানি যে, এখনো এখনো একজন নবী আসার বাকি রয়েছে। আমি ধারণা করেছিলাম যে, তিনি সিরিয়া থেকে আবির্ভূত হবেন আমি আপনা দূতের সম্মান করেছি। আপনার খেদমতে দুইজন দাসী পাঠাচ্ছি। আপনার সওয়ারীর জন্যে একটি খচ্চরও হাদিয়া স্বরূপ পাঠাচ্ছি। আপনার প্রতি সালাম।
মুকাওকিস আর কোন কথা লেখেননি। তিনি ইসলামও গ্রহণ করেননি। তাঁর প্রেরিত দাসীদের নাম ছিলো মারিয়া বিতিয়া এবং শিরিন। খচ্চরটির নাম ছিলো দুলদুল। এটি মুয়াবিয়ার (রা) সময় পর্যন্ত জীবিত ছিলো।[যাদুল মায়াদ, ৩য় খন্ড, পৃ. ৬১] রসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারয়াকে নিজের কাছে রেখেছিলেন। মারিয়ার গর্ভ থেকেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুত্র ইবরাহীম জন্ম গ্রহণ করেন। শিরিনকে কবি হাস্সান ইবনে ছাবেত আনসারীকে দান করা হয়।
তিন) পারস্য সম্রাট খসরু পারভেযের নামে-
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পারস্য সম্রাট কিসরার কাছেও একখানি চিঠি প্রেরণ করেন, সেটি ছিলো নিম্নরূপ-
‘পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লারহ নামে শুরু করছি—
আল্লাহর রসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে পারস্যের পারভেযের নামে।’
সালাম সেই ব্যক্তির প্রতি, যিনি হেদায়াতের আনুগত্য করেন এবং আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস-স্থাপন করেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরিক নেই, মোহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রসূল। আমি আপনাকে আল্লাহর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ আমি সকল মানুষের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। যারা বেঁচে আছে, তাদেরকে পরিণাম সম্পর্কে ভয় দেখানো এবং কাফেরদের ওপর সত্য কথা প্রমাণিত করাই আমার কাজ। কাজেই, আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন যতি এসে অস্বীকৃতি জানান, তবে সকল অগ্নি উপাসকের পাপও আপনার ওপরই বর্তাবে।
এই চিঠি নিয়ে যাওয়ার জন্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হোযাফা ছাহমিকে (রা) মনোনীত করা হয়। তিনি চিঠিখানি বাহরাইনের শাসনকর্তার হাতে দেন। বাহরাইনের শাসনকর্তা কোন দূতের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠিয়েছিলেন নাকি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হোযাফাকেই প্রেরণ করেছিলেন, সেটা জানা যায়নি। মোটকথা, চিঠিখানি পারভেযকে পড়ে শোনানোর পর সে চিঠিখানি ছিঁড়ে ফেলে অহংকারের সাথে বলে, আমার প্রজাদের মধ্যে একজন সাধারণ প্রজা নিজের নাম আমার নামের আগে লিখেছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ খবর পাওয়ার পর বলেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তার বাদশাহী ছিন্ন ভিন্ন কর দিন। এরপর হয়েছিলো, যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন।
সম্রাট তার ইয়েমের গভর্ণর বাযানকে লিখে পাঠালো যে, তোমার ওখান থেকে তাগড়া দু’জন লোককে পাঠাও, তারা যেন হেজাজ গিয়ে সে লোককে আমার কাছে ধরে নিয়ে আসে। বাযান সম্রাটের নির্দেশ পালনের জন্যে দু’জন লোককে তার চিঠিসহ আল্লাহর রসূলের কা্যেছ প্রেরণ করে। প্রেরিত দু’জন লোক মদীনায় আল্লাহর রসূলের কাছে গেলো। তাদের একজন বললো, শাহনশাহ একখানি চিঠি লিখে বাযানকে নির্দেশ দিয়েছে আপনাকে যেন তার দরবারে হাযির করা হয়। বাদশাহ বাযান আমাদেরকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন কাজেই, আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন। সাথে সাথে উভয় আগন্তুক হুযমকিপূর্ণ কিছু কথাও বললো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শান্তভবে বললেন, তোমরা আগামীকাল দেখা করো।
এদিকে পারস্যের খসরু পারভেযের পারিবারিক বিদ্রোহ ও কলহ তীব্ররূপ ধারণ করলো। কায়সারের সৈন্যদের হাতে পারস্যের সৈন্যরা একের পর এক পরাজয় স্বীকার করে যাচ্ছিলো। পরিণমে বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে সম্রাটের পুত্র শিরওয়াই নিজের পিতাকে হত্যা করে নিজেই ক্ষমতা দখল করলো। সময় ছিলো মঙ্গলবার রাত্রি। সপ্তম হিজরীর ১০ই জমাদিউল আউয়াল [ফতহুল বারী, ৮ম খন্ড, পৃ. ১২৭ ] রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহীর মাধ্যমে এ খবর পেলেন। পরদিন সকলে দুই প্রতিনিধি আল্লাহর রসূলের দরবারে এলে তিনি তাদের এ খবর জানালেন। তারা বললো, আপনি এসব আবোল-তাবোল কি বলছেন? এর চেয়ে ছোট কথাও আমরা আপনার অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছি। আমরা কি আপনার এ কথা বাদশাহর কাছে লিখে পাঠাব! রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ লিখে দাও। সাথে সাথে এ কথাও লিখে দাও যে, আমার দ্বীন এবং আমার হুকুমত সেখানেও পৌঁছুবে, যেখানে তোমাদের বাদশা পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, বরং এমন জায়গায়ও পৌঁছুবে, যার পরে উট বা ঘোড়া যেতে পারবে না। তোমরা তাকে একথাও জানিয়ে দিয়ো যে, যদি সে মুসলমান হয়ে যায়, তবে যা কিচু তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেসব তাকে দিয়ে দেয়া হবে এবং তাকেই আমরা তার কওমের বাদশা করে দেবো।
উভয় দূদ এরপর মদীনা থেকে ইয়েমেনে বাযানের কাছে যায় এবং তাকে সবকথা জানায়। কিছুক্ষণ পর ইয়েমেনে এক চিঠি এসে পৌঁছায় যে, শিরওয়াই তার পিতাকে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করেছে। নতুন সম্রাট তার চিঠিতে ইয়েমের গভর্ণর বাযানকে এ নির্দেশও দিয়েছেন যে, আমার পিতা যার সম্পর্কে লিখেছেন পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিরক্ত করবেন না।
এই ঘটনার কারণে বাযান এবং তার পারস্যের বন্ধ-বান্ধব, যারা সেই সময় ইয়েমেনে উপস্থিত ছিলেন, সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান।[ মুহাদিরাতে খাযরমি, ১ম খন্ড, পৃ. ১৪৭, ফতহুল বারী, অষ্টম খন্ড, পৃ. ১২৭, ১২৮, রহমতুল লিল আলামিন]
চার) রোমক সম্রাট কায়সারের নামে-
সহীহ বোখারীতে একটি দীর্ঘ হাদীসে এ চিঠির বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। রসূল রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে যে চিঠি লিখেছেন, সে চিঠির বিবরণ নিম্নরূপ-
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে রোমের মহান হিরাক্লিয়াসের প্রতি।
সাল্ম সেই ব্যক্তির প্রতি, যিনি হেদায়াতের আনুগত্য করেন। আপনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে শান্তিতে থাকবেন। যদি ইসলাম গ্রহণ করেন, দুই রকমের পুরস্কার পাবেন। যদি অস্বীকৃতি জানান, তবে আপনার প্রজাদের পাপও আপনার ওপর বর্তাবে। হে আহলে কিতাব, এমন একটি বিষয়ের প্রতি আসুন, যা আমাদের ও আপনারেদ জন্যে একই সমান। সেটি হচ্ছে যে, আমরা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা আনুগত্য করবো না। আল্লাহ ব্যতীত আমাদের কাউকে শরিক করবো না। আল্লাহ ব্যতীত আমাদের কেউ পরস্পরকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করবো না। যদি লোকেরা অমান্য করে, তবে তাদের বলে দিন যে, তোমরা সাক্ষী থাকো, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।[ সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃ. ৪, ৫]
এই চিঠি পৌঁছানের জন্যে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত দেহিয়া খলীফা কারবিকে মনোনীত করেন। তাকে বলা হয়, তিনি যেন এই চিঠি বসরার শাসনকর্তার হাতে দেন। বসরার শাসনকর্তা সেটি সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে পৌঁছে দেবেন। এরপর যা কিছু হয়েছে, তার বিবরণ সহীহ বোখারীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, আবু সুফিয়ান ইবনে হারব তাকে বলেছেন যে, সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাকে কোরায়শদের একদল লোকের সাথে তাঁপর দরবারে আমন্ত্রণ জানান। হোদায়বিয়ার সন্ধির শর্তানুযায়ী এই কাফেলা ব্যবসায়ের মালামাল নিয়ে সিরিয়ার ব্যবসার জন্যে গিয়েছিলো। কাফেলা ইলিয়া অর্থাৎ বায়তুল মাকদেসে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের দরবারে হাযির হলেন।[ সেই সময় সম্রাট হিরাক্লিয়াস হামস থেকে বায়তুল মাকাদেশ গিয়োছিলেন। পারস্যের সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করায় আল্লাহ পাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যই সম্রাট বায়তুল মাকদেস গিয়েছিলেন। দেখুন সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃ. ৪-৫। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, খসরু পারভেজের হত্যাকান্ডের পর রোমকরা তাদের হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারের শর্তে পারস্য সম্রাটের সাথে সন্ধি করে। সেই ক্রুশও পারস্য ফেরত দেয় যার সম্পর্কে খৃষ্টানদের বিশ্বাস ছিলো যে, ঐ ক্রুশেই হযরত ঈসাকে (আ) ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিলো এই সন্ধির পর ফিরে পাওয়া ক্রুশ যথাস্থানে স্থাপন এবং বিরাট বিজয়ের প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাকের শোকরিয়া আদায়ের জন্যই সম্রাট হিরাক্লিয়াস ৬২৯ ঈসায়ী সপ্তম হিজরীতে ইলিয়া অর্থাৎ বায়তুল মাকদেস গমন করেন।]সম্রাট তাদের কাছে ডাকলেন। সে সময় দরবারে দেশের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
সম্রাট হিরাক্লিয়াস মক্কার বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে সামনে রেখে তার দোভাষীকে তলব করেন। এরপর দোভাষীর মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করেন যে, যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করেন তার সাথে বংশগত সম্পর্কের দিক থেকে তোমাদের সধ্যে কে কাছাকাছি? আবু সুফিয়ান বলেন, আমি তখন বাদশাহকে জানালাম যে, আমিই তার কাছাকাছি। হিরাক্লিয়াস তখন বললেন, ওকে আমার কাছাকাছি নিয়ে এসো। আর তার সঙ্গীদের তার পেছনেস বসাও। এরপর হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বললেন, এ লোকটিকে আমি সেই নবীর দাবীদার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবো। যদি সে কোন কথার জবাবে মিথ্যা বলে, তবে তার সঙ্গীদের বলে দাও, তারা যেন সাথে সাথে প্রতিবাদ করে। আবু সুফিয়ান বলেন, আল্লাগর শপথ, যদি মিথ্যা বলার দুর্নাম হওয়ার ভয় না থাকতো, তবে আমি তাঁর সম্পর্কে অবশ্যই মিথ্যা বলতাম।
আবু সুফিয়ান বলেন, সামনে এনে বসানোর পর হিরাক্লিয়াস সর্বপ্রথম আমাকে প্রশ্ন করেন যে, তোমাদের মধ্যে সে লোকটির বংশ মর্যাদা কেমন?
আমি : তিনি উচ্চ বংশ মর্যাদার অধিকারী।
হিরাক্লিয়াস : তিনি যা বলেন, এ রকম ততা কি তাঁর আগে তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ বলেছিলেন?
আমি : না।
হিরাক্লিয়াস : তার মহের মধ্যে কেউ কি সম্রাট ছিলেন?
আমি : না।
হিরাক্লিয়াস : বড়লোকেরা তার আনুহত্য করেছে, না দূর্বল লোকেরা?
আমি : দুর্বল লোকেরা।
হিরাক্লিয়াস : তাদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে?
আমি : বেড়েই চলেছে।
হিরাক্লিয়াস : এই ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণের পর কেউ কি ধর্মানরিত হয়েছে?
আমি : না।
হিরাক্লিয়াস : তিনি যা বলছেন এসব বলার আগে কেউ কি তাকে মিথ্যা বলার জন্যে কখনো অভিযুক্ত করেছে?
আমি : না।
হিরাক্লিয়াস : তিনি কি বিশ্বসঘাতকতা করেন?
আমি : জ্বী না। তবে বর্তমানে তার সাথে একটি সন্ধিসূত্রে আমরা আবদ্ধ রয়েছি। এ ব্যাপারে তিনি কি করবেন আমরা জানি না। আবু সুফিয়ান বলেন, এই একটি কথা ছাড়া আমি কোন কথা নিজে থেকে সংযোজনের সুযোগ পাইনি।
হিরাক্লিয়া : তোমরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছো?
আমি : হাঁ।
হিরাক্লিয়াস : তোমাদের এবং তার যুদ্ধ কেমন ছিলো?
আমি : যুদ্ধ আমাদের এবং তার মধ্যে বালতির মতো। কখনো তিনি আমাদের পরাজিত করেন, কখনো আমরা তাকে পরাজিত করি।
হিরাক্লিয়াস : তিনি তোমাদের কি কাজের আদেশ দেন?
আমি : তিনি বলেন, তোমরা শুধু আল্লাহর এবাদাত করো, তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না। তোমাদে পিতা-পিতামহ যা বলতেন সত্যবাদিতা, পরহেযগারি, পাক-পবিত্রতা পরিচ্ছন্নতা এবং নিকটাত্মীয়দের সাথে ভালো ব্যবহারের আদেশ দিয়ে থাকেন।
এরপর হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বললেন, এই লোকটিকে বলো যে, আমি যখন নবুয়তের দাবীদারের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তখন সে বলেছে, তিনি উচ্চ বংশ মর্যাদা সম্পন্ন। নিয়ম হচ্ছে যে, পয়গাম্বর উচ্চ বংশ মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের মধ্য থেকেই প্রেরিত হয়ে থাকেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, তাঁর আগে তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ এ ধরনের কথা বলেছিলো কিনা। সে বলেছে যে, বলেনি। যদি অন্য কারো বলা কথাই সে পুনরাবৃত্তি করতো, তবে আমি বলতাম যে, এই লোকটি অন্যের বলা কথারই প্রতিধ্বনি করছে। আমি জিজ্ঞাসা করেছি যে, তার বাপ-দাদাদের মধ্য কেউ বাদশাহ ছিলো কিনা? তুমি বলেছ না, ছিলো না। যদি তার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেউ বাদশাহ থাকতো তবে আমি বলতাম যে, এই লোক বাপ-দাদার বাদশাহী দাবী করছে। আমি জিজ্ঞাসা করেছি যে, তিনি যা বলছেন, এর আগে তোমরা তাকে মিথ্যাবাদী হিসাবে অভিযুক্ত করেছিলে কিনা? তুমি বলেছো, না, কাজেই মানুষের ব্যাপারে যিনি মিথ্যা কথা বলেন না, তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে মিথ্যা বলবেন এটা হতে পারে না। আমি একথাও জিজ্ঞাসা করেছি যে, বড়লোকেরা তার আনুগত্য করছে নাকি দুর্বল লোকেরা? তুমি বলেছ দুর্বল লোকেরা। প্রকৃতপক্ষে দুর্বল লোকেরাই পয়গাম্বরের আগে আনুগত্য করে। আমি জিজ্ঞাসা করেছি যে, তার ধর্ম-বিশ্বাস গ্রহণের পর কেউ ধর্মান্তরিত হয়েছে কিনা, তুমি বলেছো, না। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের সজীবতা অন্তরে প্রবেশের পর এরকমই হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞাসা করেছি যে, তিনি তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন কিনা। তুমি বলেছ, না। প্রকৃতপক্ষে পয়গাম্বর এরকমই হয়ে থাকেন। তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না, বিশ্বসঘাতকতা করেন না। আমি জিজ্ঞাসা করেছি যে, তিনি কি কি কাজের আদেশ দিয়ে থাকেন? তুমি বলেছো যে, তিনি তোমাদেরকে আল্লাহর এবাদাতের আদেশ করেন, তার সাথে কাউকে শরিক না করার আদেশ করেন, মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করেন এবং নামায, সত্যবাদিতা, পরহেজগারি, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার আদেশ দেন। তুমি যা কিচু বলেছো, যদি এসব সত্য হয়ে থাকে তবে তিনি খুব শীঘ্রেই আমার দুই পায়ের নীচের জায়গারও মালিক হয়ে যাবেন। আমি জানতাম যে, এই নবী আসবেন কিন্তু আমার ধারণা ছিলো না যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই আসবেন। আমি যদি তার কাছে পৌঁছার কষ্ট স্বীকার করতে সক্ষম হতাম, তবে তার কাছে থেকে তার দুই চরণ ধুয়ে দিতাম।
এরপর হিরাক্লিয়াস রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিঠি চেয়ে নিয়ে পাঠ করলেন। হিরাক্লিয়াস চিঠি পড়া শেষ করার পরই সেখানে শোরগোল শুরু হলো এবং উচ্চস্বরে কথা শোনা গেলো। হিরাক্লিয়াস আমাদের ব্যাপারে আদেশ দিলেন এবং আমাদের বাইরে বের করে দেয়া হলো। বাইরে এসে সঙ্গীদের আমি বললা, আবু কাবশার ১৬ পুত্রের ঘটনাতো বেশ সিরিয়াস হয়ে উঠেছে। ওকে তো দেখছি বনু আসফারের১৭ অর্থাৎ রোমীয়দের বাদশাহও ভয় পায়। এরপর আমি সব সময় এ বিশ্বাস পোষণ করতাম যে, রসূলুল্লাহ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীন বিজয়ী হবেই। আল্লাহ রব্বুল আলামীন এরপার আমার মাঝে ইসলামের আলো জ্বেলে দিয়েছেন।
রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি আল্লাহর রসূলের প্রেরিত চিঠির প্রভাবই ছিলো আবু সুফিয়ানের এই বিবরণী। এ চিঠির একটি প্রভাব এটাও ছিলো যে, সম্রাট হিরাক্লিয়াস রসুল সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পত্র বাহক হযরত দেহিয়অ কালবিকে (রা) বেশ কিছু ধন-সম্পদ ও মালামাল প্রদান করেন। হযরত দেহইয়া (রা) সেসব জিনিস নিয়ে মদীনায় ফেরার পথে হুসমা নামজ জায়গায় জোযাম গোত্রের কিছু লোক ডাকাতি করে সব কিছু নিয়ে যায়। মদীনায় পৌঁ হযরত হেইয়া (রা) নিজের বাড়ীতে না গিয়ে প্রথমে আল্লাহর রসূলের দরবারে গিয়ে সব কথা তাঁর কাছে ব্যক্ত করেন। সব শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত যায়েদ ইবনে হারেঝার (রা) নেতৃত্বে পাঁচশত সাহাবাকে হুসমা অভিযানে প্রেরণ করেন। হযরত যায়েদ (রা) জোযাম গোত্রের লোকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের বেশ কিছু লোককে হত্যা করেন। এরপর তাদের পশুপাল ও মহিলাদের মদীনায় হাঁকিয়ে নিয়ে আসেন। পশুপালের মধ্যে এক জাহার উট এবং পাঁচ হাজার বকরি ছিলো। বন্দীদের মধ্যে একশত নারী ও শিশু ছিলো।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং জোযাম গোত্রের মধ্যে আগে থেকেই সমঝোতা চুক্তি চলে আসছিলো। এ কারণে উক্ত গোত্রের একজন সর্দার যায়েদ ইবনে রেফায়া তড়িঘড়ি করে আল্লাহর রসূলের দরবারে গিয়ে প্রতিবাদ ও ফরিয়াদ জানান। যায়েদ ইবনে রেফায়া অনেক আগেই জোযাম গোত্রের বেশ কিছু লোকসহ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হযরত দেহইয়া কালবীর ওপর হামলা হলে তাঁরা তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। এ কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রতিবাদ ও ফরিয়াদ গ্রহণ করেন এবং গনীমতের মাল বন্দীদের ফেরত দেন। সীরাত রচয়িতাদের অনেকেই এ ঘটনা হোদায়বিয়ার সন্ধির আগে ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা ভুল। কেননা কায়সার হিরাক্লিয়াসের কাছে হোদায়বিয়ার সন্ধির পরই চিঠি প্রেরণ করা হয়েছিলো। এ কারণে আল্লামা ইবনে কাইয়েম লিখেছেন, এ ঘটননা নিঃসন্দেহে হোদায়বিয়ার সন্ধির পরের ঘটনা।[যাদুল মায়াত, ২য় খন্ড, পৃ. ১২২, হাশিয়া তালকিহুল ফুহুম, পৃ. ২৯]
পাঁচ) মুসযের ইবনে ছাদির নামে-
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুনযের ইবনে ছাদির কাছে একখানি চিঠি লিখে তাকেও ইসলামের দাওয়াত দেন। মুনযের ছিলেন ছিলেন বাহরাইনের শাসনকর্তা। এ চিঠি হযরত আলা ইবনে হাযরামির হাতে প্রেরণ করা হয়েছিলো। জবাবে মুনযের আল্লাহর রসূলকে লিখেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনার চিঠি আমি বাহরাইনের অধিবাসীদের পড়ে শুনিয়েছি। কিছু লোক ইসলামকে পছন্দ করেছেন ও পবিত্রতার দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আবা অনেকে পছন্দ করেননি। এখানে ইহুদী এবং অগ্নি উপাসকও রয়েছে। আপনি ওদের ব্যাপারে আমাকে নির্দেশ দিন। এর জবাবে রসূল (সাঃ) যে চিঠি লিখেছেন, তা নিম্নরূপ।
পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহর রসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে মুসযের ইবনে ছাদির নামে। আপনার প্রতি সালাম। আমি আপনার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করছি যিনি ব্যতীত এবাদাত পাওয়া উপযুক্ত কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মোহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।
অতপর আমি আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবেন, তিনি নিজের জন্যেই সেসব করবেন। যে ব্যক্তি আমার দূতদের আনুগত্য করবে এবং তাদের আদেশ মান্য করবে, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করেছে বলে মনে করা হবে। যারা আমার দূতদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে তারা আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে বলে মনে করা হবে। আমার দূতরা আপনার প্রশংসা করেছেন। আপনার জাতি সম্পর্কে আপনার সুপারিশ আমি গ্রহণ করেছি। কাজেই মুসলমান যে অবস্থায় ঈমান আনে, তাদের সেই অবস্থায় ছেড়ে দিন। আমি দোষীদের ক্ষমা করে দিয়েছি, আপনিও ওদের ক্ষমা করুন। আপনি যতদিন সঠিক পথ অনুসরণ করবেন, ততোদিন আপনাকে আমি বরখাস্ত করবো না। যারা ইহুদী ধর্ম-বিশ্বাসের ওপর রয়েছে এবং যারা অগ্নি উপাসনা করছে, তাদের জিযিয়া দিতে হবে।[ যাদুল মায়াদ, ৩য় খন্ড, পৃ. ৬১-৬২, এ চিঠি নিক অতীতে আবিষ্কৃত হয়েছে। ডক্টর হামিদুল্লাহ এ চিঠির ফটোকপি প্রকাশ করেছেন। যাদুল মায়াদ এবং ফটোকপির বিবরণের মধ্যে একটি শব্দের রদবদল রয়েছে। ফটোকপিতে রয়েছে ‘লা ইলাহা ইল্লা হুয়া’ যাদুল মাআদে রয়েছে ‘লা ইলাহা গায়রুহু’।]
ছয়) ইমামার শাসনকর্তার নামে-
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামার শাসনকর্তা হাওজা ইবনে আলীর কাছে নিম্নোক্ত চিঠি প্রেরণ করেন।
পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহর রসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে হাওজা ইবনে আলীর কাছে চিঠি।
সেই ব্যক্তির ওপর সালাম, যিনি হেদায়েতের অনুসরণ করেন। আপনার জানা থাকা উচিত যে, আমার দ্বীন উট ও ঘোড়ার গন্তব্যস্থল পর্যন্ত প্রসার লাভ করবে। কাজেই ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। আপনার অধীনে যা কিচু রয়েছে, যে সবকে আপনার জন্যে অক্ষূণ্ণ রাখা হবে।
এ চিঠি পৌঁছানোর জন্যে দূত হিসাবে সালীত ইবনে আমর আমেরিকে মনোনীত করা হয়। হযরত ছালীত সীলমোহর লাগানো এই চিঠি নিয়ে ইয়ামামার শাসনকর্তা হওযার দরবারে পৌছেন। হওযা তাকে নিজের মেহমান হিসাবে গ্রহণ করে মোবারকবাদ দেন। হযরত ছালিত চিঠিখানি শাসনকর্তাকে পড়ে শোনান। তিনি মাঝামাঝি ধরনের জবাব দেন। এরপর আল্লাহর রসূলের কাছে লিখিত জবাব দেন। জবাব নিম্নরূপ।
‘আপনি যে জিনিসের দাওয়াত দিচ্ছেন, তার কল্যাণময়তা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত। আরবদের ওপর আমার প্রভাব রয়েছে। কাজেই আপনি আমাকে কিছু কাজের দায়িত্ব দিন, আমি আপনার আনুগত্য করবো।’
শাসনকর্তা হওযা আল্লাহর রসূলের দূতকে কিছু উপঢৌকনও প্রদান করেন। মূল্যবান পোশাকও সেই উপঢৌকনের মধ্যে ছিলো। হযরত ছালীত সেইসব সামগ্রী নিয়ে আল্লাহর রসূলের দরবারে আসেন এবং তাঁকে সবকিছু অবহিত করেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ চিঠি পাঠ শেষে মন্তব্য করেন যে, সে যদি এক টুকরো জমিও আমার কাছে চায়, তবু আমি তাকে দেব না। সে নিজেও ধ্বংস হবে এবং যা কিছু তহার হতে রয়েছে, সেসবও ধ্বংস হবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয় থেকে ফিরে আসার পর হযরত জিবরাঈল (আ) তাঁকে খবর দিলেন যে, হাওযা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে।
রসূল সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতপর সাহাবাদের বললেন, শোনো, ইয়ামাময় একজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে এবং আমার পরে সে নিহত হবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসূল, তাকে কে হত্যা করবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি এবং তোমার সাথী।
পরবর্তীকালে আল্লাহর রসূলের কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছিলো।
সাত) দামেশকের শাসনকর্তা গাসসানির নামে-
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম দামেশকের শাসনকর্তা হারেছ ইবনে আবু শিমার গাসসানির কাছে নিম্নোক্ত চিঠি প্রেরণ করেন।
পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহর সূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে হারেছ ইবনে আবু শিমারের নামে।
সেই ব্যক্তির প্রতি সালাম, যিনি হেদায়াতে অনুসরণ করেন, ঈমান আনেন এবং সত্যতা স্বীকার করেন। আপনাকে আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপনের দাওয়াত দিচ্ছি, যিনি এক ও অদ্বিতীয় যাঁর কোন শরিক নেই। ইসলারেম দাওয়াত কবুল করুন। আপনার জন্যে আপনার রাজত্ব স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
এই চিঠি আছাদ ইবনে খোজায়মা গোত্রের সাথে সম্পর্কি সাহাবী হযরত সুজা ইবনে ওয়াহাবের হাতে প্রেরণ করা হয়। হারেছের হাতে এ চিঠি দেয়ার পর তিনি বলেন, আমার বাদশাহী আমার কাছ থেকে কে ছিনিয়ে নিতে পারে? শীঘ্রই আমি তার বিরুদ্ধে হামলা করতে যাচ্ছি। এই বদনসী ইসলাম গ্রহণ করেনি।
আট) আম্মানের বাদশাহের নামে
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম্মানের বাদশাহ যেফার এবং তার ভাই আবদের নামেও একখানা চিঠি লিখেন। তাদের পিতার নাম ছিলো জলনদি। চিঠির বক্তব্য নিম্নরূপ-
পরম করুণাময় ও অতি দয়ালূ আল্লাহর নামে শুরু করছি,
আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদের পক্ষ থেকে জলনদির দু্ই পুত্র যেফার ও আবদের নামে।
সালাম সেই ব্যক্তির ওপর, যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন । অতপর আমি আপনাদের উভয়কে ইসলামের দাওয়াদ দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। কেননা আমি সকল মানুসের প্রতি আল্লাহর রসুল। যারা জীবিত আছে, তারেদ পরিণামের ভয় দেকানো এবং কাফেরদের জন্যে আল্লাহর কথার সত্যতা প্রমাণের জন্যেই আমি কাজ করছি। আপনার উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করলে আপনাদেরকেই শাসন ক্ষমতা অধিষ্টিত রাখা হবে। যদি অস্বীকৃত জানান, তবে আপনার বাদশাহী শেষ হয়ে যাবে। আপনাদের ভূখন্ড ঘোড়ার খুরের নিচে যাবে। আপনারেদ বাদশাহীর ওপর নবুয়ত বিজয়ী হবে।’
এ চিঠি পৌঁছানোর জন্যে হযরত আমর ইবনুল আসকে মনোনীত করা হয়। তিনি বলেন, আমি রওয়ানা হয়ে আম্মান গেলাম এবং আবদের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবদ ছিলেন নেরম মেযাজের। তাকে বললাম, আমি আপনার এবং আপনার ভাইয়ের কাছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে দূত হিসাবে এসেছি। তিনি বললেন, আমার ভাই বয়স এবং বাদশাহী উভয় দিক থেকেই আমার চেয়ে বড় এবং অগ্রগণ্য। কাজেই আমি আপনাকে তার কাছে পৌছে দিচ্ছি, তিনি নিজেই আপনার আনীত চিঠি পড়বেন। একথার পর আবদ বললেন, আচ্ছা আপনার কিসের দাওয়াত দিয়ে থাকেন?
আমি : আমরা আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিয়ে থাকি। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁ কোন শরীক নেই। আমরা বলে থাকি যে, আল্লাহ ব্যতীত যার এবাদত করা হয়, তাকে ছেড়ে দিন েএবং এ সাক্ষ্য দিন যে, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল।
আবদ : হে আমর, আপনি আপনার কওমের সর্দারের পু্ত্র। বলুন, আপনার পিতা কি করেছিলেন? আপনার পিতার কর্মপদ্ধতি আমাদের জন্যে অনুসরণযোগ্য হবে?
আমি : তিনি মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের আগেই ইন্তেকাল করেছেন। আমার খুবই আফসোস হচ্ছে, যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ এবং আল্লাহর রাসূলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতেন, কি যে ভালো হতো। আমি নিজেও অবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে ইসলামের হেদায়াত দিয়েছেন।
আবদ : আপনি কবে থেকে তাঁর অনুসরণ শুরু করেছেন?
আমি : বেশী দিন হয়নি।
আবদ : আপানি কোথায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন?
আমি : নাজ্জাশীর সামনে। নাজ্জাশীও মুসলমান হয়েছিল।
আবদ : তার স্বজাতীয়দের ইসলাম গ্রহণের পর তার বাদশাহীর কি করেছে?
আমি : অক্ষুন্ন রেখেছে এবং অন্যরাও অনুসরণ করেছে।
আবদ : গীর্জার পাদ্রী ও অন্যরাও অনুসরণ করেছে?
আমি : হ্যাঁ, সবাই করেছে।
আবদ : হে আমর, ভেবে দেখুন, আপনি কি বলছেন। মনে রাখবেন, মিথ্যার চেয়ে বদগুণ একজন মানুষের জন্য কিন্তু আর কিছুই হতে পারে না।
আমি : আমি মিথ্যা বলছি না। মিথ্যা বলা আমরা বৈধও মনে করি না।
আবদ : আমি মনে করি, সম্রাট হেরাক্লিয়াস নাজ্জাশীর ইসলাম গ্রহণের কথা জানেন না।
আমি : অবশ্যই জানেন।
আবদ : আপনি বুঝলেন কি করে?¬
আমি :¬¬¬¬¬¬¬ নাজ্জাশী হেরাক্লিয়াসকে আয়কর পরিশোধ করতেন, কিন্তু ইসলামের মাধ্যমে তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যতা মেনে নেয়ার পর বললেন, আল্লাহর শপথ, এখন থেকে হেরাক্লিয়াস যদি আমার কাছে একটি দিরহামও চান তবু আমি তাকে দেব না। এ খবর হেরাক্লিায়াসের দরবারে পৌছার পর তার ভাই ইয়ানাক তাকে বলেছিলো, আপনি কি খারাজ দিতে নারাজ আপনার এমন ভৃত্যকে ছেড়ে দেবেন? আপনার ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করে অন্য একজনের ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণ করবে, এটাও কি আপনি মেনে নেবেন? হেরাক্লিয়াস বললেন, এই লোক একটি ধর্ম বিশ্বাস পছন্দ করেছে এবং তা গ্রহণ করেছে, আমি তাকে কি করতে পারি? খোদার কসম, রাজত্বের লোভে না হলে আমি নিজেও তাই করতাম, নাজ্জাশী যা করেছেন।
আবদ : আমর ভেবে দেখুন, আপনি কি বলছেন?
আমি : আল্লাহর শপথ, আমি সত্য কথাই বলছি।
আবদ : আচ্ছা বলুন, তিনি কি কাজের আদেশ দেন আর কি কাজ করতে নিষেধ করেন?
আমি : আল্লাহ তায়ালা এর আনুগত্যের আদেশ প্রদান করেন এবং তাঁর নাফরমানী করতে নিষেধ করেন। নেকী করার এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করার আদেশ প্রদান করেন। যুলুম, অত্যাচার, বাড়াবাড়ি, ব্যাভিচার, মদ পান, পাথর, মূর্তি এবং ক্রশ-এর উপাসনা করতে নিষেধ করেন।
আবদ : তিনি যেসব কাজের আদেশ করেন এর সবই তো ভালো কাজ। আমার ভাই যদি আমার অনুসরণ করবে বলে ভরসা পেতাম, তবে আমরা সওয়ার হয়ে মদীনায় ছুটে যেতাম এবং মোহাম্মদ (সা) এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতাম। কিন্তু আমার ভাই এর রাজত্বের ওপর প্রবল লোভ, তিনি রাজত্ব হারানোর ভয়ে অন্য কারো আনুগত্য মেনে নেবেন কনা, সন্দেহ রয়েছে।
আমি : যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে আল্লাহর রাসূল তাকেই বাদশাহীতে বহাল রাখবেন। তবে তাকে একটা কাজ করতে হবে যে, ধনীদের কাছ থেকে সদকা আদায় করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
আবদ : এটাতো বড় ভলো কাজ। আচ্ছা বলুনতো, সদকা কি জিনিস?
আমি বিভিন্ন দ্রব্যের উপর আল্লাহর রাসূলের নির্ধারণ করা সদকার বিবরণ উল্লেখ করলাম। উটের প্রসঙ্গ এলে তিনি বললেন, হে আমর, আমাদের ওসব পশুপাল থেকেও কি সদকা নেয়া হবে, যারা নিজেরাই চারণ ভূমিতে চরে বেড়ায়?
আমি : হাঁ।
আবদ : আল্লাহর শপথ আমি জানি না, আমাদের দেশের মানুষ দেশের বিশালতা এবং উটের সংখ্যাধিক্যের কথা ভেবে এটা মেনে নেবে কি না।
আমর ইবনুল আস বলেন, আমি রাজ দরবারের দেউড়িতে কয়েক দিন কাটালাম। আবদ তাঁর ভাইয়ের কাছে গিয়ে আমার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করলেন। একদিন আমাকে ডাকলেন, আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম। প্রহরীরা আমার বাহু আঁকড়ে ধরলো। আবদ বললেন, ছেড়ে দাও, ওরা তখন আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি বসতে চাইলে প্রহরীরা আমাকে বসতে দিলো না। আমি বাদশাহর দিকে তাকেলে তিনি বললেন, বলুন, কি করতে চান? আমি মুখবন্ধ খামের চিঠি তার হাতে তুলে দিলাম। তিনি খামের মুখ ছিঁড়ে চিঠিখানা পড়লেন। সব পড়ার পর তার ভাইয়ের হাতে দিলেন। আমি লক্ষ্য করলাম যে, বাদশাহর চেয়ে তার ভাই আবদ অপেক্ষাকৃত নরম মেজাজের মানুষ।
বাদশাহ জিজ্ঞাস করলেন, কোরায়শ কি ধরণের ব্যবহার করেছিলো, বলুন।
আমি : সবাই তার আনুগত্য মেনে নিয়েছে। কেউ দ্বীনের প্রতি ভালবাসার কারণে, আবার দু‘একজন তলোয়ারের ভয়ে।
বাদশাহ: তাঁর সাথে কি ধরণের লোক রয়েছে?
আমি : সব ধরনের লোকই রয়েছে। তারা ইসলামকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেছে। ইসলামকে অন্য সকল ধর্ম বিশ্বাসের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে। আল্লাহর হেদায়াত এবং বিবেকের পথ-নির্দেশনায় তারা বুঝতে পেরেছে যে, এ যাবত তারা ছিলো পথভ্রষ্ট। আমার জানামতে এই এলাকায় আপনিই শুধু এখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। আপনি যদি িইসলাম গ্রহণ না করেন এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ না করেন, তবে ঘোড়া ও উটের পিঠে সওয়ার হয়ে আসা লোকেরা আপনাকে তছনছ করে দেবে। আপনার সজীবতা নিশ্চিহ্ন করে দেবে। কাজেই ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকেই আপনার কওমের শাসনকর্তা হিসেবে বহাল রাখবেন। আপনার এলাকায় কোন হামলাকারী প্রবেশ করবেন না।
বাদশাহ বললেন, আপনি, আগামীকাল আমার সাথে দেখা করুন।
এরপর আমি বাদশাহর ভাইয়ের কাছ ফিরে এলাম।
আবদ বললেন, আমর, আমার ধারণা, বাদশাহীর লোভ প্রবল না হলে আমার ভাই ইসলাম গ্রহণ করবেন।
পরদিন পুনরায় বাদশাহর কাছে যেতে চাইলাম। কিন্তু ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিরেন না। ফিরে এসে তার ভাইকে সে কথা জানালাম। তার ভাই আমাকে তার কাছে পৌছে দিলো। বাদশাহ বললেন, আপনার উপস্থাপিত দাওয়াত সম্পর্কে আমি ভেবে দেখেছি। আমি যদি বাদশাহী এমন একজনের কাছে ন্যস্ত করি, যার সেনাদল এখনো পৌছেইনি, তবে আমি আরবে সবচেয়ে দুর্বল এবং ভীরু বলে পরিচিত হবো। যদি তার সৈন্যরা এখানে এসেই পড়ে, তবে আমরা তাদের যুদ্ধের সাধ মিটিয়ে দেব।
আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি আগামীকাল ফিরে যাচ্ছি।
আমার যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর বাদশাহ তার ভাইয়ের সাথে নির্জনে মতবিনিময় করলেন। বাদশাহ তার ভাইকে বললেন, এই পয়গাম্বর যাদের ওপর বিজয়ী হয়েছে, তাদের তুলনায় আমরা কিছুই না। তিনি যার কাছেই পয়গাম পাঠিয়েছেন তিনিই দাওয়াত কবুল করেছেন।
পরদিন সকালে পুনরায় আমাকে বাদশাহের দরবারে ডাকা হলো। বাদশাহ এবং তার ভাই উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করলেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলেন। সদকা আদায় এবং বাদী বিবাদীর মধ্যে ফয়সালা করতে আমাকে দায়ত্ব দেয়া হলো। এ ব্যাপারে তারা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করলেন। [যাদুল মায়াদ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৬২, ৬৩]
এ ঘটনার বিবরণ ও প্রকৃতি দেখে মনে হয়, অন্যান্য বাদশাহের পরে উভয়ের কাছে আল্লাহর রাসূল চিঠি প্রেরণ করেছিলেন। সম্ভবত মক্কা বিজয়ের পর এ চিঠি প্রেরণ করা হয়।
এ সকল চিঠির মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বে অধিকাংশ এলাকায় তাঁর দাওয়াত পৌছে দিয়েছিলেন। জবাবে কেউ ঈমান এনেছে, কেউ কুফুরীর ওপরই অটল থেকেছে। তবে এ সকল চিঠির প্রভাব এটুকু হয়েছে যে, যারা কুফুরী করেছে তাদের মনোযোগও এ দিকে আকৃষ্ট হয়েছে এবং তাদের কাছে আল্লাহর রাসূলের নাম এবং তাঁর প্রচারিত দ্বীন একটি পরিচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।