তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ কুরআনের দুর্লভ স্থান সমূহ
কুরআনের দুর্লভ স্থানগুলোও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীস গ্রন্থে এই সমস্ত সূরা ও আয়াতের গুরুত্ব ও মর্যাদা বর্ণনার জন্যে ভিন্ন শিরোনামায় আলাদা অধ্যায়ে রচনা করা হয়েছে। এগুলো কয়েক ধরনের।
১। তাযকির বিআলাইল্লাহর আয়াতে দুর্লভ স্থান:
যে সব আয়াত আল্লাহর মহান নিদর্শন সম্পর্কিত, তার দুর্লভ স্থান হল আল্লাহর অনন্ত গুণাবলীর আলোচনা। যেমন, আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস, সূরা হাশরের শেষাংশ এবং সূরা মুমীনের প্রথম অংশ।
২। তাযকির বি আয়্যামিল্লার আয়াতে দুর্লভ স্থান:
যে সব আয়াতে কাহিনী ও ঘটনা রয়েছে, তার ভেতরে দুর্লভ স্থান হচ্ছে তাই যার আলোচনা করা হয়েছে, কিংবা জানা ঘটনার কেবল প্রয়োজনীয় আনুষংগিক বলা হচ্ছে, অথবা যে ঘটনায় যথেষ্ট কল্যাণ-প্রসু তত্ত্ব রয়েছে। যেমন, হযরত (স) মুসা ও হযরত খিযির (আ)-এর কিস্সা সম্পর্কে হযরত (স) বলেছেন: আমার আকংখা জাগে হযরত মূসা (আ) আরও কিছু সময় যদি হযরত খিযির (আ)-এর সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারতেন এবং আল্লাহ তাঁর সম্পর্কে আরও কাহিনী আমাদের শোনাতেন।
৩। তাযকির বিল মাওতের আয়াতে দুর্লভ স্থান:
যে সব আয়াতের সম্পর্ক রয়েছে মৃত্যূ পরকালের সাথে সেগুলোর ভেতরে যে সব স্থানে কিয়ামতের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, সেগুলোই দুর্লভ হয়ে থাকে। বস্তুত এক হাদীসে আছে। যে ব্যক্তি কিয়ামতের অবস্থানটি এভাবে জানতে চায় যে, কিয়ামতের অস্থা যেন সে স্বচক্ষে দেখছে, তাহলে সে যেন ‘ইজাস শামসু কুওভেরাত’ ইজাস সামাউন ফাতারাত” এবং ইজাস সামাউন শাক্কাত সূরাগুলি পাঠ করে।
৪। ইলমুল আহকামের দুর্লভ স্থান:
সংবধিান বিষয়ে দুর্লভ আয়াত বলতে আল্লাহ যে আয়াতে ((******) এর বিধানের নির্দেশ, কিংবা তার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছেন, সেগুলোকেই বুঝায়। যেমন, জেনার শাস্তি শত দোর্রা, কিংবা তালাক প্রাপ্তার তিনটি অপবিত্র ও তিনটি পবিত্র কাল অপেক্ষা করা মীরাস বন্টন-বিধি।
৫। ইলমুল মুজাদালার দুর্লভ স্থান:
যে সব আয়াতে অন্য মতাবলম্বীদের অভিযোগ ও তার জবাব অভিনব পদ্ধতিতে রয়েছে তাতে দুর্লভ স্থান গুলো যাতে সব প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত সুন্দর ভাবে ও নিত্যন্ত বিস্ময়কর পদ্ধতিতে দেয়া হয়েছে, কিংবা তাদের পুরো রূপ তুলে ধরা হয়েছে। যেমন:
(আরবী***************)
তাদের উদাহরণ তারই মত যে আগুন জ্বালিয়ে আলো করল। (সূরা বাকারা -১৭)
এ আয়াতে কাফিরদের যথার্থ চিত্রটি অত্যন্দ চমৎকারভাবে অংকিত করা হয়েছে। তেমনি মূর্তি-পূজার দোষ-ত্রুটি, স্রষ্টা ও সৃষ্টি, আর প্রভু ও ভৃতের ভেতরে যে তফাৎ দেখানো হয় এবং নতুন সুন্দর সুন্দর উদাহরণ দিয়ে তা বুঝঅনো হয়, সেগুলোও দুর্লভ আয়াত। এভাবে লোক দেখানো কাজ কিভাবে বরবাদ হয়, তার আলংকরিক বর্ণনাও দুর্লভ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।
ওপরে যা বলা হল, কুরআনের দুর্লভ ও চমকপ্রদ গুণ কেবল সেগুলোতেই সীমিত নয়। আরও এমন বহু স্থান রয়েছে, যেখঅনে তা চরম পূর্ণত্ব লাভ করেছে। কখনও শুধু সালংকার রূপ কিংবা বর্ণনাভংগির জন্যেও আয়াতে বমৎকারিত্ব দেখা দেয়। সূরা আর রহমানের সব আয়াতই এ ধরনের দুর্লভ ও চমকপ্রদ। তাই এক হাদীস একে ‘কুরানের দুলহান বলা হয়েছে। কখনও পাপী ও পূণ্যবানের আকর্ষণীয় চিত্র অংকিত হয়েও আয়াত দুর্লভ হয়ে উঠেছে।
কুরআনের পেট ও পিঠ
এক হাদীসে কুরআন সম্পর্কে বলা হয়েছে।
(আরবী***************)
কুরআনের প্রতি আয়াতের একটি বাইরের, আরেকটি হচ্ছে ভেতরের দিক।
বস্তুত কুরআনের বাহ্যিক দিক সম্পর্কি পাঁচটি বিদ্যা ওপরে আলোচিত হয়েছে। জাহের বা বাহ্যিক দিক বলতে বাক্য সাধারণভাবে যা প্রমাণ করে এবং সবাই তার যে মর্ম বুঝতে পায়, সেটাই। আর বাতেনে আয়াত নিম্নরূপ:
** তাযকীর বি আলাইল্লাহর বাতেন হচ্ছে গবেষণা। মানে আল্লাহর অবস্থঅন এবং তাঁর সত্তা নিয়ে ধ্যান ও গবেষণা করা।
** তাযকীর বি ইয়ামিল্লাহর বাতেন হচ্ছে আয়াতে বর্ণিত ঘটনাবলীর রহস্য অর্থাৎ যার ওপরে প্রশংসা বা নিন্দা করেছে সে কারণগুলো ভেবে দেখা ও তাতে যে সব তত্ত্ব ও উদ্দেশ্য রয়েছে, তার বাতেন থেকে উপদেশ হাসেল করা।
** তাযকির বিলজান্না আন্-নার এর বাতেন হচ্ছে মানুষের মনে আশা-আকাংখার ভাব সৃষ্টি হওয়া। এমন ভাব হওয়া যেন বেহেশত-দোযখ সে স্বচক্ষে দেখছে।
*** আহকাম সম্পর্কি আয়াতের আভন্তরীণ দিক হল, আয়াতের আকার-ইংগিত থেকে আয়াতের অন্তর্নিহিত বিধিবিধান জেনে নেয়া।
*** মুখাসিমা সম্পর্কি আয়াতের ভেতরের ব্যাপার হল এই, মূল বিচ্যুতি ও অন্যায়গুলো উপলব্ধি করে তার ভিত্তিতে যত অন্যায় সৃষ্টি হতে পারে, সবগুলো আয়ত্বাধীন আনা।
ওপরের হাদীসটির দ্বিতীং অংশে আছে, “প্রতিটি সীমানার িএকজন সতর্ককারী রয়েছে” (****) এখঅনে আয়াতের বাহ্যিক অর্থে ‘মুত্তলে’ বলতে আরবী ভাষা বুঝার কথা বলা হয়েছে। আর কুরআনের অর্থ বুঝার আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো বুঝানো হয়েছে।
(***) অর্থা আয়াতের আভ্যন্তরীণ অর্থে, মুত্তালে বলতে বুঝায় বুদ্ধির তীব্রতা, বিবেকের সুস্থতা, অন্তরের ঐজ্জ্বল্য আর আত্মার প্রশান্তি।