পঞ্চম পরিচ্ছেদঃ মুকাত্তা’আত আয়াতের সমাধান
আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার নগণ্য মগজে যে সব জ্ঞঅন অবতীর্ণ হয়েছে তার ভেতরে অন্যতম হচ্ছে, মুকাত্তা’আত আয়ারেত সমাধান ও মর্ম অনুধাবন শক্তি। কিন্তু মূল বিষয়বস্তু আলোচনার আগে কিছুটা ভূমিকা দরকার।
ভূমিকা: বাক্য ও শব্দ যে বর্ণমালার ওপরে নির্ভরশীল, তার প্রতিটি অক্ষরের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। আর সে অর্থও িএত মূল্যবান যে, দু’ এক কথায় তা বুঝানো যায় না। তাই সংক্ষেপে হলেও কিছুটা বলে দেয়া উচিত।
আরবী বর্ণমালার বৈশিষ্ট্যগুলোর অন্যতম হচ্ছে যে, সব অক্ষরের মূল পরস্পর ঘনিষ্ঠ ও সাদৃশ্যমূলক, সেগুলোর অর্থ এক। পূর্ণ এক না হলেও কাছাকাঠি হবেই। সুধী ও বিজ্ঞ সাহিত্যিকরা এ রহস্যটি বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। তাদের ব্যাখ্যা অনুসারে যখন কোন শব্দে ‘নুন’ ও ‘ফা’ একত্র হয় তখন যেভাবেই হোক ‘বের হওয়া’ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন, নফর, নফস, নফহ, নফখ, নফক, নফদ, নফজ- এ সব শব্দ কোন না কোন কিছুর ‘ভেতর থেকে বের হয়ে আসা’ বুঝায়। হোক, বৃক্ষ থেকে বা হাত থেকে বের হওয়া। মোট কথা সব ক’টি শব্দেরই ভিত্তি বের হওয়া।
এভঅবে যখন ‘ফা’ ও ‘লাম’ কোন শব্দে মিলিত হয়, তখন ফেটে বা ভেঙ্গে যাবার অর্থ দেয়। যেমন, ফালাক, ফালাহ, এবং ফালাজ শব্দগুলোর ভেতরে প্রত্যেকটিই কোন না কোন কিছু ফাটা বা ভাঙ্গার অর্থ দেয়। হোক তা পা ভাঙ্গা অন্ধকার বিদীর্ণ হওয়া বা বীজ ফেটে অঙ্কুর বের হওয়া।
আরবী বর্ণমালা সম্পর্কে চিন্তাশীল সাহিত্যিকরা যে সিদ্ধান্তে পৌছেছেন তার ভেতরে একটি হচ্ছে এই, একটি শব্দের সব ক’টি অক্ষর এক এক করে অদল বদল কর হয়, আর সেগুলোর উৎস ও উচ্চারণ যদি পরস্পর সন্নিহিত হয় তা হলে একই শব্দকে অসংখ্য অর্থে ব্যবহার করা চলে। আরবরা এ ধরনের ব্যবহার প্রচুর দেখিয়েছেন। শব্দের অক্ষরগুলোকে এক এক করে উলট পালট করে নিয়ে একই শব্দকে তাঁরা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন, (**) এর (**) কে (**) এ বদল করে (**) এর (**) কে (**) তে বদল করে (**) ব্যবহার আরবী ভাষার ব্যাপক দেখা যায়। এরূপ বহু উদাহরণ দেয়া চলে। কিন্তু যেহেতু আমার উদ্দেশ্য হল বর্ণমালার এ বৈশিষ্ট্যের দিক দৃষ্টি আকর্ষণ মাত্র, আর তা এতেই পূর্ণ হতে পারে। তাই তার ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন নেই।
যদিও বর্ণমালার এ বৈশিষ্ট্য আরবী ভাষা ও অভিধান সংশ্লিষ্ট, তথঅপি এটা ঠিক যে, প্রাচীন আরবরা এ সব জানত না। অন্তত বিস্তারিতভাবে এগুলো জানত না। সাধারণ আরবদের তো কথাই নেই, বড় বড় ভাষাবিদও তা বুঝতে অক্ষম রয়েছেন। বস্তুত ‘জিন্স’ –এর সংজ্ঞা কিংবা তার মর্ম জিজ্ঞেস করলে অথবা বিভিন্ন বাক-বিন্যাসের বিশেষত্ব জিজ্ঞেস করলে, তার ওপরে আলোকপাত করলে তাঁরা ব্যর্থ হবেন। সেক্ষেত্রে সে সবের মূল তত্ত্ব বলা তো আরও কঠিন হবে। অথচ স্বভাবসুলভভাবে তাঁরা তা ব্যবহার করে যাচ্ছেন। তার মূল তত্ত্বের দিকে খেয়াল দেবার প্রয়োজন মনে করেন নি।
তা ছাড় আরবী ভাষায় যাঁরা ভাষাতত্ত্ব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতেন, তাঁদের চিন্তার গভীরতার পরিমাপও সমান ছিল না। কেউ কেউ তো তাঁদের এত গভীর পন্ডিত ছিলেন যে, অনেকে সে সম্পর্কেই খবর রাখত না। এ বিদ্যা যদিও আরবী ভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট, তথাপি এ স্তরে পৌঁছুতে অনেকেই অক্ষম ছিল।
মূল আলোচনা:
এতটুকু ভূমিকা দেবার পর হরুফে মুকাত্তআত সম্পর্কে আলোচনা শুরু করার স্তরে পৌঁছে গেল। এখঅনে সবার আগে এ সাত্যটি মনে রাখা চই যে, তার মর্যাদা যে সূরার গোড়ায় এসেছে, তার সাথেই যুক্ত হয়েছে। বস্তুত যে সব কথা সূরাটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, মোটামোটিভাবে তা গোড়ার অক্ষর কটায়নিহিত থাকে। যেমন, কোন গ্রন্থ লিখে তার একটা নাম রাখা হয়, আর সে নামের সাথে গ্রন্থের বিষয়বস্তুর একটা যোগ থাকে, যাতে করে নাম শুনেই বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা মোটামোটি ধারণা জন্মে। যেমন, আল্লামা বুখারী তাঁর সংকলিত হাদীস গ্রন্থের নাম রেখেছেন, ‘জামেউস সহীহুল মসনদ ফী আহাদীসে রাসূলাল্লাহে (স) আর এ নাম শোনামাত্র আমরা বুঝতে পাই যে এ গ্রন্থে রসূল (স) –এর সহীহ হাদীসগুলো সংকলিত হয়েছে।
(***) (আলিফ, লাম, মীম) : বস্তু এ হচ্ছে সূরার শিরোনাম। এর অর্থ হচ্ছে, ‘অদৃশ্য জগতের সেই গুপ্ত সত্য যা স্বস্থঅনে নির্দিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও দৃশ্য জগতে অনির্দিষ্ট ছিল, এখন থেকে তা নির্দিষ্ট হয়ে গেল। (**) –এর যে অর্থ বলা হল, তার ভিত্তি হল এই, ‘হামযাহ’ ও ‘হা’ এ দু’টি বর্ণমালা অদৃশ্য বস্তুর অর্থ প্রকাশ করে। অবশ্য দু’য়ের ভেতরে তফাৎ এতটুক যে, ‘হা’ এর এ সম্পর্ক এ দুনিয়ার অদৃশ্র বস্তুর সাথে ‘হামযার’ সম্পর্ক এ সৃষ্টি জগত থেকে অদৃশ্য বস্তুর সাথে।
(***) (হামযাহ্) : অন্যান্য বর্ণ মালার ভেতরে হামযার সম্পর্ক এমন অদৃশ্য বস্তুর সাথে যা অনির্দিষ্ট। তার প্রমাণ এই, সাধারণ কথাবার্তায় যখন এমন কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় যা এখনও অনির্দিষ্ট, তখন ‘হামযাহ্’ ব্যবহার করা হয়। প্রশ্নসূচক বাক্যের প্রারম্ভে তাই ‘আম’ তথা হামযাহ্ ব্যবহৃত হয়। আর এ ধরনের প্রশ্নসূচক বাক্য যখন অন্য কোন বাক্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়, তখনও ‘আম’ ব্যবহার করা হয়। তার প্রথম অক্ষর হামযাহ্। এ সংযোগ দ্বারা প্রমাণ করা হয় যে, যেই অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তা এখনও অনির্ধারিত রয়েছে।
বস্তুত এ ইস্তেফহাম’ (প্রশ্নসূচক) ও ‘আতফ’ (সংযোগমূলক) বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি প্রমাণ দেয় যে, যে বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হছ্ছে, তা আমাদের জ্ঞানের এখনও বাইরে রয়েছে। ’ তা অদৃশ্র ও অপরিজ্ঞাত। এ অনিশ্চয়তাই আমাদের মনে জাগায়। তখন ‘। ’ ব্যবহার করা হয় বাক্যের শুরুতে। তা প্রমাণ দেয়, যে অদৃশ্য ব্যাপার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হচ্ছে, তার একটা অস্পষ্ট ধারণা প্রশ্নকারীর রয়েছে আর তা অমুক বস্তু সম্পর্কিত।
(হা): সর্বনাম ও ইস্তেফহামের মতই। উভয়ের সংযোগ গায়েব বা অদৃশ্য বস্তুর সাথে। ইস্তেফহাম অজানা বস্তুর জন্য হয়ে থাকে। সর্বনামেও এমন কোন বস্তু বা শব্দের স্থলাভিষিক্ত হয় যা অদৃশ্য অর্থাৎ বাক্যে অবর্তমান। সর্বনামের জন্য হা ব্যবহৃত হয়। যার অর্থিই হচ্ছে অদৃশ্যের সাথে হা –এর সম্পর্ক নির্দিষ্ট অদৃশ্যের সাথে। সর্বনাম, স্পষ্ট বা অস্পষ্ট যে ভাবেই হোক নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। এর অর্থ দাড়াল এই, হামযার সম্পর্ক দুনিয়া থেকে অদৃশ্য, অনির্দিষ্ট বস্তুর সাথে আর হা-এর সম্পর্ক দুনিয়ার ভেতরকার নির্দিষ্ট অদৃশ্যের সাথে।
(লাম) : ‘হামযাহ’ ও হা যে ভাবে অদৃশ্যের প্রমাণ দেয়, তেমনি লাম যার সাথে যুক্ত হয় সেটাকে নির্দিষ্ট করে দেয়। তাই যখন কোন অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্ট করতে হয়, তখন সে শব্দের সাথে (**) যুক্ত করতে হয়।
(**) (মীম): মীমের সাথে যখন হামযাহ্ ও লাম মিলিত হয়, তখন তা এমন এক বাস্তব সত্ত্বার প্রমাণ দেয়, যার ভেতরে বিভিন্ন বস্তু সত্ত্বার সমাবেশ ও বন্ধন ঘটে। আর তা শূন্য জগত ছেড়ে এই দৃশ্য ও বাস্তব জগতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
মোটকথা, এ তিন বর্ণমালার আলোচিত বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে একত্রে (**) (আলিফ লাম মীম) –এর অর্থ দাঁড়ায়, সেই অসীম প্রেরণা যা এতদিন শূন্য জগতেই আবদ্ধ ছিল, এখন তা সে জগত ছেড়ে এ দৃশ্যমান জগতে আশ্রয় নিল এবং এ জগতের রীতিনীতি ও মানবিক জ্ঞান অনুসারে নির্দিষ্ট হল। মানবতার কাঠিন্য ও কুটিলতা দূর করার কাজে নিয়োজিত হল। তাদের অবৈধ কাজ ও অন্যায় কথাকে সে শাস্তির ভয় দেখিয়ে দূর করতে চায়।
‘আলিফ-লাম-মীম’ এর যে অর্থ বলা হল, যদি সম্পূর্ণ সূরাটি অনুধাবন করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, তার আগাগোড়াই এর অর্থের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে ভরপুর।
(***) (আলিফ-লাম-রা) : দু’আয়াতে কেবল ‘রা’ ও ‘মীম’ এ তফাত। তাই এও প্রায় ‘আলিফ’ ‘লাম’ ‘মীম’ এর বিশ্লেষণ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ‘আলিফ-লাম-রা’ পুনরাবৃত্তি ও বার বার অর্থও প্রকাশ। সে হসেবে এর অর্থ দাঁড়ায়- যেই অদৃশ্য একবার এ দুনিয়ায় নিশ্চিত হয়েছিল, সে অন্য দলের সাথে মিলে পুনরায় দুনিয়ায় এসে নতুনভাবে নিশ্চিত হল।
কুরআন (***) দ্বারা সে বিদ্যাই বুঝায় যা বনী আদমের অন্যায় কাজ ও পাপাচার দূর করার জন্য হয়ে থঅকে। এ ব্যাপারে একের পর এক নবীরা হিদায়াত ও সংস্কারের জন্যে শিক্ষা ও কর্মপন্থা অনুসরণ করেন তা সব কিছুই এ বিদ্যার অন্তুর্ভুক্ত।
(****) তোয়া ও সোয়াদ: এ দুটো অক্ষরও কাছাকাছি অর্থবোধক। তা হল, উন্নতির দিকে পদক্ষেপ-অর্থাৎ এ জড় জগত থেকে উর্ধ্ব জগতে আরোহণ। তফাত এ, ‘তোয়া’ এর সম্পর্কে মানুষ্য গুনাবলী সহ উর্ধ্ব জগতে আরোহন তার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠতার সাথে আর ‘সোয়াত-এর উন্নয়ন হল পবিত্রতাও সুক্ষতার সাথে, অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য।
(**) (সীন: এ হরফ প্রমাণ করে যে, অপার্থিব জগতের যে অদৃশ্য শক্তি পার্থিব জগতে রূপ পেয়ে নির্দিষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছিল, এখন তা গোটা সৃষ্টি জগতে ছড়িয়ে গেছে।
(**) (তোয়া-হা) ‘তোয়া-হা’ ও মুকাত্তা’আত আয়াত। ওপরে যে সব অক্ষরের বিশেষত্ব সম্পর্কে হয়েছে, তার ভেতরে দুটো অক্ষর ‘তোয়া ও ‘হা’ পার্থিব উন্নয়ন ও মর্যাদা প্রমাণ করে। এ দুয়ে মিলে এমন এক স্থান নির্দেশ কর, যা নবীদের জন্যেই নির্দিষ্ট। অর্থাৎ নবীদের অপার্থিব জগতের দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার ফলে এমন এক অদৃশ্য অবস্থার সৃষ্টি হওয়া, যার ভেতরে সব সত্তার জ্ঞান মোটামোটি ভাবে মজুদ থাকে। অন্য কথায় ‘তোয়া-হা’ বলাতে নবীরা যে মর্যাদা বলে অপার্থিব জগতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অনেক অজানা কথা জানতে পায়, তাকেই বুঝায়। আর সে সব বিদ্যা তাঁরা আল্লাহর তরফ থেকে যে গ্রন্থ পান, তাতে লিপিবদ্ধ থাকে।
(***) (তোয়া-সীন-মীম) এ তিন অক্ষরের ভেতরে ‘তোয়া পার্থিব উন্নতি ও মর্যাদা, ‘সীন’ সৃষ্টি জগতে ছড়িয়ে যাওয়া ও ‘মীম’ নির্দিষটতা বুঝায়। এ তিনে মিলে নবীদের একটি বিশেষ স্তর বুঝায়। অর্থাৎ পার্থিব অপার্থিব জগতের দিকে পদক্ষেপের ফলে তাঁরা যে তত্ত্ব লাভ করেন, তা দ্বারা সেই তত্ত্ব বিদ্যা পার্থিব জগতে প্রকাশ ও ব্যাপ্তি লাভ বুঝায়। যেন তোয়া-সীন-মীম বলতে নবীদের লব্ধ জ্ঞান সারা জগতে প্রকাশ পেল ও ছড়িয়ে গেল।
(**) (হা)-এর অর্থ ও ‘**) এর মত অদৃশ্য বস্তু। তফাত এতটুকু যে, (**) যে অদৃশ্য বস্তু নির্দেশ করে তাই নেহাতই অদৃশ্য থাকে। পক্ষান্তরে (**) এমন অদৃশ্য বস্তুর দিকে ইংগিত করে যাতে আলোর ঝলক, প্রকাশের আভাস ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সুতরাং যেখানে ‘**’ আসবে, সেখানেই প্রকাশ ও বিশিষ্টতার দিকে ইংগিত করবে।
(***) (হা-মীম) : এ আয়াতের অক্ষর দুটি প্রায়ই কাছাকাছি অর্থবোধক। ‘মীম’ তো সংকোচন ও অনুসন্ধানের প্রমাণ দেয়। আর ‘হা’ যদিও অদৃশ্যের দিকে ইংগিত দেয়, তথঅপি তাতে আলোর ঔজ্জ্বল্যও প্রকাশ অভিলাষ নিহিত রয়েছে। তাই (***) দ্বারা এমন এক অদৃশ্য তত্ত্বেও দিকে ইংগিত করা হচ্ছে, যাতে আলোজ্জ্বল প্রকাশ মহিমা রয়েছে। আর তা পার্থিব জগতের বৈশিষ্ট্য এ জন্যে অর্জন করেছে যে, মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও অন্যায় কাজগুরে সংশোধন করবে। এর থেকে কুরআনের সেই তত্ত্বটির দিকে ইংগিত করা হয়েছে যোতে বিভ্রান্তদের কথাগুলো প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং তাদের অভ্যাস ও রীতি-নীতি এবং সর্বাধিক দ্বিধা সংশয়ের সমালোচনা করে সত্যের আলো প্রকাশ করা হয়েছে।
(**) (আইন) : এ অক্ষরটি উজ্জ্বল দ্যুটির প্রকাশ ও তার নির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহের প্রমাণ দেয়।
(**) কাফ) : মর্মের দিক থেকে এ অক্ষরটি ‘মীম’ এর সাথে সাদৃশ্য রাখে। এটাও বিশেষত্ব ও নির্দিষ্টতার প্রমাণ দেয়। পার্থক্য শুধু এই, বিশেষত্ব ও নির্দিষ্টতার চরমত্ব বুঝায়। তার সব রূপই এতে ঠাঁই পেয়েছে। এ হিসেবে (***) এর পূর্ণ এই, আল্লাহর যে প্রেম বিন্দু বিন্দু প্রকাশ পাচ্ছিল, তা পুরোপুরি পার্থিব জগতে ছড়িয়ে পড়ল।
(***) (নূন) : এ অক্র দ্বারা আঁধারে আলোর বিকীরণ বুঝায়। অর্থাৎ ‘নূন’ আলো আঁধারের সেই অবস্থাটা প্রকাশ করে যা প্রত্যুষে বা সন্ধায় দেখা দেয়। ঠিক সেরূপ না হলেও কাছাকাঠি বুঝায়।
(**) : ‘ইয়া’ ও ‘নূন’ একই অর্থবোধক। তফাত এই, নূন’ অর্থে আলোর প্রকাশ ততটুকু জোরালোভাবে বুঝায়, এখানে ঠিক ততখানি নয়। সংগে সংগে (**) এর অর্থের সাথেও এর সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানেও পার্থক্য এই যে, ‘হা’ এর অর্থে নির্দিষ্টতা বেশী বুঝায়। ‘ইয়া’ মোটামুটি কম আলো ও নির্দিষ্টতা বুঝায়।
(***) (ইয়া-সীন) ‘ইয়া’ ও ‘সীন’ মিলে কিছুমাত্রার নির্দিষ্ট আলো ছড়িয়ে যাওয়া বুঝায়। এ হিসেবে এর থেকে সেই তত্ত্ব ও মর্ম জুভায়, যা গোটা সৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়ে।
(**) (সোয়াদ) : এ পর্যন্ত যা সৃষ্টি হয়েছে এ অক্ষরটি তার বিশেষ অবস্থা ও কার্যক্রম প্রকাশ করে। তখন নবীরা নিখিল সৃষ্টির প্রতিপালকের দিকে আকৃষ্ট হন, হোক তা প্রকৃতিগত কিংবা অর্জিত, তখনকার অবস্থানটিও প্রকাশ পায় এ অক্ষরে।
(কাফ) : (**) ও (**) এ দু’ অক্ষরে যে সমতা ও অসমতা রয়েছে, তাদের অর্থেও ঠিক তাই দেখা যায়। (**)-এর উচ্চারণ অপেক্ষাকৃত হাল্কা ও নরম। তাই কিছুটা স্বল্পতা ও দুর্বলতা নিয়ে সে (**) এ অর্থ প্রকাশ করে। অর্থাৎ কম শক্তি ও কম কাঠিন্য।
(***) (কা-হা-ইয়া-আইন-সোয়াদ) : এ আয়াতটি এমন পাঁচটি অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত যার ভেতরে সাধারণ শক্তি ও কাঠিন্য, নির্দিষ্ট অদৃশ্য বস্তু দ্যুটি, ঔজ্জ্বল্য, প্রকাশ, সূক্ষ্মতা ও পবিত্রতা ইত্যাদি সব একত্র হয়েছে। তাই এ আয়াত দ্বারা এমন এক বাস্তব অন্ধকার জগত বুঝায় তযার ভেতরে এমন কিছু জ্ঞান সুস্পষ্ট ও উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে এবং কিছু জ্ঞান অস্পষ্ট ও অনুজ্জ্বল বিরাজ করছে।
সার কথা, মুকাত্ত’আত আয়াতের তত্ত্বও-জ্ঞানের এক বিরাট জগত লুকিয়ে আছে। কেবল আগ্রহ ও অনুভূতি শক্তিই তা অর্জনে সহায়তা করতে পারে। সেই সংক্ষেপ মর্মকে লেখা কিংবা আলোচনা দ্বারা যদি প্রকাশ করার কোন পথ থাকে, তা এ পুস্তকে অনুসৃত হয়েছে। এর চাইতে বেশী বলা বা বর্ণনা করা মানুষের সাধ্যাতীত।
এটাও সত্যি যে, যা কিছু বলা হল তা সে শব্দ ও বাক্যগুলোর মর্মের সাথে ষোল আনা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার যথার্থ মর্মও প্রকাশ পায়নি। কোন কোন দিক থেকে বরং মূল অর্থের পরিপন্থিও হয়েছে। কিন্তু আগেই স্বীকার করা হয়েছে, এর চাইতে বেশী বলা মানুষের সাধ্যাতীত। শুধু যা বলা সম্ভবপর ছিল তাই বলেছি এবং কোন্টা সঠিক তা আল্লাহ তায়ালাই বেশী জানেন।
— সমাপ্ত —