চতুর্থ পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়ের পরিশিষ্ট
এ অধ্যায়ে আরও কয়েকটি আলোচ্য বিষয় রয়েছে। কুরআন বুঝার বিদ্যায় সেগুলোর প্রয়োজন। তার একটি হল, হয্ফ (উহ্য) সমস্রা। অর্থাৎ বাক্যে কোন অংশ উহ্য রেখে বাক্যটির অর্থ অনিশ্চিত করে ফেলা। দ্বিতীয়টি হল এবাদল (পরিবর্তন)। অর্থাৎ এক বস্তুকে অপর বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করা। তৃতীয় তাকদীম-তাখীর (আগ-পিছ করা)। অর্থাৎ আগের উল্লেক্যকে পিছে ও পিছের উল্লেখ্য বস্তুকে আগে আনা। চতুর্থ হচ্ছে, মুতাশাবিহাত (রূপক) ও তা’রীজাত অল কিনরায়ত (ইংগিতময়) বাক্য ব্যবহার। অর্থাৎ মর্ম, তত্ত্ব ওমূল লক্ষ্যের এমন একটি বাস্তব ও বোধগম্য চিত্রদান যা আসল বস্তুর সাথে সম্পর্ক রাখে। আরবী পরিষাভায় এটাকে বলে ‘ইস্তেআরা বিল কেনায়াহ বা মাজাযে আকলী। এসব ব্যাপার এমন যে কখন ও মূল বস্তু বুঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। নিম্নে এর সবগুলোর আলাদা উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। ফলে জচিলতা দূর হয়ে কুরআন সহজবোধ্য হবে।
১। হযফ
(ক) মুযাফ (সম্বন্ধ পদ) উহ্য হওয়া।
(খ) মাউসূফ (যার দোষ-গুণ বলা হয়) উহ্য থাকা।
(গ) মূতাআল্লাকাত (সংশ্লিষ্ট-বাক্য) উহ্য থাকা।
(ঘ) এ ধরনের অন্য কিছু উহ্য থাকা।
এ সবের উদাহরণ দেখুন:
[এক] আয়াত (আরবী********)
“কিন্তু সত্যিকারের পূণ্য হল ঈমানদার হওয়া… ইত্যাদি। ” (সূরা বাকারা ১১৭)
এখানে ‘মান আমানা’-এর আগে বিররু’ শব্দ মাহযুফ রয়েছে। মূল বাক্যটি এই: আরবী************)
[দুই] আয়াত : (আরবী*******************)
“এবং আমি সামুদ জাতিদে দৃষ্টিদায়িনী উটনী দিলাম… ইত্যাদি। ” (সূরা বনী ইসরাঈল-৫৯)
এ আয়অতে মুবসিরাত’ –এর আগে ‘আয়াতান’ উহ্য আছে।
সেটার সাথেই মুবসিরাতান সম্পৃক্ত রয়েছে। নাকাহ্ শব্দের সাথে নয় সুতরাং উট শাবক এখানে দেখার অধিকারী নয়, বরং অপরের চোখ খুলে দেবার সে একটা নিদর্শন মাত্র।
[তিন] আয়াত : (আরবী*****************)
“তাদের অন্তরে বাছুর-প্রীতি জন্মানো হল… ইত্যাদি। ” (সূরা বাকারা -৯৩)
এ আয়াতে “আল ইজ্লা’ (বাছুর) শব্দের আগে হুববু (ভালবাসা) শব্দ উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ তাদের অন্তরে বাছুর-প্রীতি দানা বেঁধেছে।
[চার] আয়াত : (আরবী**************)
“তুমি কি হত্যা কা৮৮৮ নির্দোষ এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে… ইত্যাদি”।
এ আয়াতে একটি শব্দ উহ্য আছে। তা হচ্ছে ‘নফস্’ শব্দের আগে ‘কতল’ শব্দ।
[পাঁচ] আয়াত : (আরবী*****) এই আয়াত ‘ফাসাদা’ শব্দের আগে ‘বেগায়েরে’ শব্দ। অর্থ দাঁড়ায় সে না কাউকে হত্যা করেছে, সে না কোন দুর্বিপাকে সৃষ্টি করেছে। তবু তোমরা সে নিরাপরাধ লোকটিকে হত্যা করলে?
[ছয়] আয়াত: (আরবী**************)
“আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে…, ইত্যাদি। ”
এখানে এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘যে বস্তু আকাশে আছে এবং পৃথিবীতেও আছে। ’ অথচ এমন কিছু নেই যা আকাশ ও পৃথিবী দুজায়গায়ই বিদ্যমান। সুতরাং এখানে ‘ওয়াল আরদে’ শব্দের আগে ‘ওয়া মান ফী’ বাক্যাংশ উহ্য রয়েছে। তখন অর্থ হচে, ‘যা কিছু, আকাশে আর যা কিছু পৃথিবীতে আছে- সবই।
[সাত] আয়াত : (আরবী******************)
এ আয়াত ‘হায়াত’ ও ‘মামাত’ দুশব্দের আগে ‘আযাব’ শব্দ উহ্য আছে অর্থ দাঁড়াবে, ‘জীবনকালের শাস্তি ও বাড়বে আর মরণ কালের শাস্তিও বাড়বে। ’
[আট] আয়াত : আরবী****************)
“পল্লীকে জিজ্ঞেস কর। (সূরা ইউসূফ -৮২)
কিন্তু পল্লীকে তো আর জিজ্ঞেস করা চলে না। সুতরাং এখানে ‘কারিয়াহ্’ (পল্লী) শব্দের আগে ‘আহল’ (বাসিন্দা) শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ পল্লীবাসীকে জিজ্ঞেস কর। ’
[নয়] আয়াত : আরবী***********************
“তারা আল্লাহর দানকে কুফরীতে পরিবর্তিত করেছে। ” (সূরা ইবরাহীম ২৮)
আদতে “ফায়া’লু মকানা শুকরি নি’মাতিল্লাহি কুফরান” হবে অর্থ দাড়াবে “আল্লাহর দানের বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বদলে তারা কুফরী করেছে।
[দশ] আয়াত : আরবী**********************)
অর্থাৎ সে বস্তুর দিকে পথ দেখায় যা বেশী উপযোগী ও উত্তম। (সূরা বানী ইসরাঈল-৯) এখানে আল্লাতী শব্দের আগে খাসলাতান শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ সেই স্বভাবের দিকে পথ দেখায় যা বেশী উপযোগী ও উত্তম।
[এগার] আয়াত : (আরবী*********************)
এখানে আল্লাতী শব্দের আগে খাসলাতান শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ সেই স্বভাবের দ্বারা যা অধিকতর ভাল। (সূরা ফুসসিলাত-৩৪)
[বার] আয়াত : (আরবী*****************)
এখানে ‘আল হুস্না’ শব্দের আগে ‘আল কালিমা’ বা ‘আল ই’দাতু’ শব্দ উহ্য আছে। পূর্ণ বাক্যটি হবে, ‘আল কালিমাতুল হুস্সুনা’ বা ই’দাতু হুস্না।
[তের] আয়াত : (আরবী*******************)
এ আয়াতে ‘মূলক’ শব্দের আগে ‘আহদ’ শব্দ উহ্য আছে। বাক্যটি হবে ‘আলা আহদে মূলকে সুলায়মান’। অর্থাৎ সুলায়মানের রাজত্বকালে।
[চৌদ্দ] আয়াত : (আরবী*******************)
‘তুমি নিজ রসূলদের ব্যাপারে ওয়াদা করেছ’।
এখানে ‘রসূলিকা’ শব্দের আগে ‘আলসেনাত’ শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ তুমি নিজ রসূলদের মাধ্যমে ওয়াদা করেছিলে।
[পনের] আয়াত : (আরবী*******************)
এখানে হু সর্বনামের পূর্বে ‘আল কুরআন’ বিশেষ্য উহ্য আছে। কারণ আগে কোথাও বিশেষ্যের উল্লেখ নেই।
[ষোল] আয়াত : (আরবী*******************)
‘এমনটি পর্দার অন্তরালে লুকাল। ’ (সূরা ছদ-৩২)
এখানে ‘বিল হিজাব’ –এর আগে ‘ আশ শামসু’ শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ সূর্য পর্দার আড়ালে লুকাল।
[সতের] আয়াত : (আরবী*******************)
এ আয়াতে ‘হা’ সর্বনাম মূলত ‘কাসলাতুস সবরে’ শব্দের স্থলে ব্যবহৃত হয়েছে।
[আঠার] আয়াত : (আরবী*******************)
এখানে এর আগে ‘জা‘আলা মিনহুম’ বাক্যংশিটি উহ্য রয়েছে।
[ঊনিশ] আয়াত : (আরবী*******************)
এখানে ফাযা ‘আলাহু’ এর স্থলে হবে, ‘ফাজা’ আলা লাহু’।
[বিশ] আয়াত : (আরবী*******************)
‘মুসা নিজ সম্প্রদায়কে বেছে নিল। ’ (সূরা আ‘রাফ-১৫০)
এখানে কওমাহু’ শব্রে আগে ‘মিন’ অব্যয় উহ্য আছে। অর্থাৎ মুসা নিজ সম্প্রদায় থেকে কিছু লোক বেছে নিল।
[একুশ] আয়াত : (আরবী*******************)
“আদ সম্প্রদায় নিজ প্রভুকে অস্বীকার করল। ’
এখানে ‘রব্বাহুম’ শব্দের আগে ‘নি’মাত’ শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ স্বীয় প্রভুর নিয়ামত অস্বীকার করল।
[বােইশ] আয়াত : (আরবী*******************) এর স্থলে (আরবী****) যারা অর্থ সর্বদা।
[তেইশ] আয়াত : (আরবী*******************)
এ আয়াতে ‘মা না’বুদহুম’ –এর আগে অর্থাৎ আয়াত আরম্ভের আগে য়্যাকূলূনা’ শব্দ উহ্য আছে। অর্থাৎ ‘তারা বলত যে, আমরা প্রতিমা পূজা তো আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্যে করি।
[চব্বিশ] আয়াত : (আরবী*******************)
‘নিশ্চয়ই যারা বাছুরকে গড়ে নিল প্রভু। ’
এখানে ‘ইজরা’ শব্দের পরে ‘ইলাহান’ উহ্য আছে।
[পঁচিশ] আয়াত : (আরবী*******************)
এ আয়াতে ‘আনিল য়্যামান –এর পরে উহ্য আছে, আনিশ শিমাল।
অর্থাৎ ডান ও বাম উভয় দিক থেকে।
[ছাব্বিশ] আয়াত : (আরবী*******************)
এ আয়াতে ‘ইন্না লামুগারামুন-এর আগে ‘তাকূলূনা’ উহ্য আছে। অর্থাৎ তোমরা বলতেছ।
[সাতাশ] আয়াত : (আরবী*******************)
“যদি আমি ইচ্ছে করতাম, তোমাদের স্থলে ফেরেশতা নিয়োগ করতাম। ” (সূরা যুখরুফ ৬০)
এখানে ‘মিনকুম’ শব্দের আগে ‘বাদলাণ’ উহ্য আছে।
[আটাশ] আয়াত : (আরবী*******************)
যে ভাবে তোমার প্রভূ তোমাকে বের করে নিয়েছেন… ইত্যদি। (সূরা আনফাল)
এখানে (আরব**৮) শব্দের স্থঅলে (্=*****) ব্যবহৃত হয়েছে।
অন্যান্য ধরনের হজফ:
বাক্যের বিভিন্ন অংশ যথা (ইন্না)-এর খবর বিধেয় (কিংবা কোন শর্তের ‘জাযা’ ক্রিয়ার কর্ম) অথবা বাক্যের উদ্দেশ্যাংশ ইত্যাদি এ শর্তে অনুল্লেখ রাখা যেন পরবর্তী শব্দ বা বাক্যাংশে যে উহ্য অংশ ধরা পরেড়। কুরআনে এর ব্যপক অনুসরণ রয়েছে যেমন:
১। আয়াত : (আরবী*******************)
‘যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তোমাদের সবাইকে হিদায়াত করতে পারতামা… ইত্যাদি।
এখানে ‘ফালাও শা-আ’র ‘হিদায়াতকুম’ উহ্য আছে।
২। আয়াত : (আরবী*******************)
“সত্য সেটাই যা তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে আসে। ”
এ আয়াতের শুরুতে হাযা শব্দ উহ্য আছে।
৩। আয়াত : (আরবী*******************)
“তোমাদের যারা মক্কা জয়ের আগে ধনপ্রাণ উৎসর্গ করেছ তারা আর যারা পরে উসর্গ করেছ, দু’দল সমান হবে না। ”
এ আয়াতে ‘মান মিন কাবলি ফাতহে ওয়া কাতলা’-এর পরে ওয়া মান আনফাকা বা’দাল ফাতহে ওয়া কাতাল ‘ থাকা উচিত ছিল। কিন্তু শেষভাগের উলায়ীক আ’জামু ‘দারাজাতাম মিনাল্লাজীনা’ বাক্যাংশে সে মর্মের প্রকাশ ঘটেছে। অর্থাৎ জয়ের আগে যারা অর্থ দিয়েছে, যুদ্ধ করেছে আর যারা পরে করেছ তাদের দু’দলের মর্যাদা সমান হতে পারে না।
৪। আয়াত : (আরবী*******************)
“আর যখন তাদের বলা হয়, নিজ পরিবেশ থকে বেঁচে চল, আল্লাহর অনুগ্রহের উপযোগী হবে এবং যখন তাদের কাছে আল্লাহর কোন নিদর্শন আসতো, তারা ঘাড় ফিরিয়ে নিত। ” এ আয়াত ‘খালফাকুম’ –এর পরে ‘আরাযু শব্দ মাহ্যূফ রয়েছে।
যেখানে উহ্য অংশ তালাশ নিষ্প্রয়োজন
কুরআনের আরেকটি রীতি ঠিক এর কাছাকাঠি ধরনের এবং তাও স্মরণ রাখা দরকার। কিছু আয়াতে আছে যা, (***) শব্দ দ্বারা শুরু হয়। যেমন :
(আরবী**************)
“এবং যখন তোমাদের প্রভু ফেরেশতাদের বললেন… ইত্যাদি। ”
কিংবা- (আরবী******)
এবং যখন মুসা বলল… ইত্যাদি। ”
এসব জায়গায় (***) অধিকরণকারক হয়ে ক্রিয়ার অর্থ প্রকাশ করে কিন্তু যে সব স্থানে (***) দ্বারা আকস্মিকতা বা ভীতি প্রকাশ উদ্দেশ্য হয়, তখন এ শব্দটার কৃতিত্ব এরূপ দেয়া যায় যে, কোন ভয়াবহ বা আকস্মিক ঘটনা প্রকাশের কোনরূপ বাক্যাংশ ব্যবহার না করেও একাই তা ফুটিয়ে তোলে। শুধু মাত্র ‘ইয্’ শব্দটি ভাবনা-চিন্তাকে প্রভাবিত করে ফেলে। সুতরাং এরূপ স্থঅনে ‘আমেল’ খুঁজবার প্রয়োজন হয় না।
(***) “আননার পর ‘যার উহ্য রাখার রীতি ব্যাপক।
আরবরা সাধারণত (***) ধাতুর আগে ‘যের দায়ক’ অব্যয়কে উহ্য করে (***) এর অর্থে ব্যবহার করত। কুরআন শরীফেও কোন কোন স্থানে এ রীতিটি অনুসরণ করা হয়েছে।
কুরআনে কখনো কখনো শর্তমূলক বাক্যের শর্তোত্তর ভাগ উহ্য থাকে। যেমন:
‘লাও’ শরতিয়ার জাবর উহ্য রাখার রীতি ও ব্যাপক: (আরবী****************)
“এবং তকুমি যদি দেখতে যখন জালিমরা মরণের কোঠে ঢলে পড়বে… ইত্যাদি। ”
(আরবী****************)
“যদি জালিমরা জুলুমের শাস্তি দেখতে পেত!…. ইত্যাদি। ”
এ ধরনের আয়াতের শর্তোত্তর অংশ উহ্য থাকে। কিন্তু এ বাগধারাটি মূল অর্থে প্রকাশ না পেয়ে “বিস্ময়” প্রকাশার্থে ব্যবহৃত হযেছে। সুতরাং এখানেও উহ্য অংশ তালাশর প্রয়োজন থাকে না।
২। এবদাল:
এবদাল অর্থ হচ্ছে এক শব্দের স্থলে অন্য শব্দ বসানো। কুরআনে এর ব্যবহার প্রচুর। অবশ্য তার ধরন বিভিন্ন কখনেও ক্রিয়া দিযে ক্রিয়া, বিশেষ্য দিয়ে বিশেষ্য, অব্যয় দিয়ে অব্যয়, পূর্ণ বাক্য দিয়ে পূর্ণ বাক্য বদল করা হয়। তাছাড়া নির্দিষ্টকে অনির্দিষ্ট, পুলিংগকে স্ত্রীলিংগ, এক বচনকে বহুবচন দিয়েও পরিবর্তন করা হয়। নীচে বিস্তারিত আলোচনা দেয়া হল।
ক্রিয়াদ্বারা ক্রিয়া বদল:
এ রীতিটা খুবই ব্যাপক। এর উদ্দেশ্য অনেক ও বিভিন্ন। কিন্তু সে সব এ বইযের আলোচনা নয়। কুরআনে এর ব্যবহারের উদাহরণ হচ্ছে এই:
১। আয়াত : (আরবী****************)
“এ ব্যক্তিই কি তোমাদের প্রভুদের স্মরণ করত?” (সূরা আম্বিয়া০৩৬)
এখানে (****) ‘ক্রিয়াটি আদপে ছিল (***) কিন্তু ‘গালি দেয়া ক্রিয়াটি মার্জিত নয় বলে স্মরণ করা’ ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ধরনের বর্ণারীতির ব্যবহার আমাদের দৈনিন্দন জীবনে অহরহ ঘটে। যেমন, কারুর শরীর খারাপ হলে বলে, ‘অমুকের শরীর ভাল নয়। ’ আবার বলে ‘হযরতের আগমনে আমরা ধন্য’ ও ‘জনাবে ওয়ালা সব খবর রাখনে’- এ থেকে অর্থ নেয়া হয়, ‘আপনি এসেছেন’ ও ‘আপনি তো সব জানেন। ’ কুরআনেও এ ধরনর বর্ণনারীতি অনুসৃত হয়েছে। যেমন :
২। আয়াত: (আরবী*****************)
‘আমার থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হবে না” (সূরা আম্বিয়া -৪৩)
এখানে (****) ব্যবহৃতি হয়েছে। (****)-এর জায়গায়। যেহেতু সাহায্যের জন্যে সাহচর্য অপরিহার্য। তাই ‘সাহচর্য’ দিয়ে ‘সাহায্য’ শব্দ বদলে দেয়া হয়েছে।
৩। আয়াত : (আরবী*****************)
“আসমান- যমীনে যা কিছু নিহিত আছে। ” (সূরা আ’রাফ-১৮৭)
এখঅনে- (****) শব্দের বদলে (***) ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ যে বস্তু জ্ঞঅন অপরিজ্ঞাত আসমান-যমীনের বাসিন্দার কাছে তা দুর্বহ বোধ হয়। তাই এ পরিবর্তন ঘটল। এটা এমনে পরিবর্তন যার ভিতরে মূল শব্দের ইংগিত বিদ্যমান।
৪। আয়াত : (আরবী*****************)
‘তোমাদের প্রবৃত্তির কোন বস্তু অনুকুল হয়ে থাকে। ’ (সূরা নিসা-৪)
আসলে ছিল: (আরবী*****************)
কখনও বিশেষ্যকে বিশেষ্য দিয়ে বদলানো হয়। যেমন :
১। আয়াত : (আরবী*****************)
‘ভয়ে তার সামনে তাদের মাথা নূয়ে যাবে। ” (সূরা শুয়া’রা-৪)
এখঅনে (****) ব্যবহৃত হয়েছে (***) এর স্থলে।
২। আয়াত (আরবী*****************)
“এবং তারা ছিল ঐমান-আক্বীদায় পোক্ত। ” (সূরা তাহরীম-১২)
মূলত এখানে স্ত্রীলিংগ কর্তা (***) বিধায় হত।
৩। আয়াত : (আরবী*****************)
‘অনন্তর তাদের সহায়ক কেউ নেই। ” (সূরা আল ইমরান-২২)
এ আয়াতে এক বচন (***) হত।
৪। আয়াত : (আরবী*****************)
‘অতঃপর তোমাদের সে পথে কেউ অন্তরায় নয়। ’ (সূরা হাক্কাহ-৪৭)
এ আয়াতেও একবচন ‘(****) হত।
৫। আয়াত : (আরবী*****************)
‘আসরের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত। ” (সূরা আছর-১/২)
এ আয়াতে গোটা আদম জাতির জন্যে একবচন (***) ব্যবহৃত হয়েছে। আর তা জাতিবাচক বলেই হয়েছে।
৬। আয়াত : (আরবী*****************)
“হে মানুষ! তুমি তোমার প্রবুর দিকে প্রাণপণে এগোবার চেষ্টা করবে। ” (সূরা ইনশিকাক-৬)
এ আয়াতেও একই কারণে সমগ্র বনী আদমের স্থলে ‘ইনসান’ একবচনের ব্যবহার করা হয়েছে।
৭। আয়াত : (আরবী*****************)
‘এবং মানুষ তা ধারণ করল। ’ (সূরা আহযাব-৭২)
এ আয়াতেও সেই কারণে বনী আদমের সবাইকে ‘ইনসান দ্বারা বুঝানো হয়েছে।
৮। আয়াত : (আরবী*****************)
‘নূহের সম্প্রদায় নবীদের মিথ্যা ঘোষণা করল। ’ (সূরা শুয়ারা-১০৫)
এখানে “(****)” ব্যবহৃত হয়েছে। “(*****) এর স্থলে। কারণ সমগ্র নবীদের উল্লেখ থাকলেও উদ্দেশ্য শুধু হযরত নূহ (আঃ)।
৯। আয়াত : (আরবী*****************)
নিশ্চয় আমি তোকাকে বিজয় দান করেছি। (সূরা ফতাহ-১)
এখানে ফাতাহতু এক বচন উচিত ছিল। অথব বহুবচন ব্যাবহারিত হয়েছে।
১০। আয়াত : (আরবী*****************)
‘নিশ্চয়েই আমি ক্ষমতাবান। (সূরা মায়ারিজ-৪০)
এখানে (****) –একবচনের স্থলে বহুবচন ব্যাবহারিত হয়েছে।
১১। আয়াত : (আরবী*****************)
এবং আল্লাহ তাঁর রসূলদের জয়ী করেন। ’ (সূরা হাশর-৬)
এখানেও বহুবচনের ‘রসূলগণ’ ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ মর্ম নেয়া হয়েছে শুধু হযরত মুহাম্মদ (স)।
১২। আয়াত : (আরবী*****************)
‘যাদের উদ্দেশ্যে সবাই বলল। ’ (সূরা আল ইমরান-১৭৩)
এখান “(***)” শব্দটি ‘উরুয়াহ সাকাফী’র দলে ব্যবহৃত হয়েছে।
১৩। আয়াত : (আরবী*****************)
‘তাই আল্লাহ তাকে ক্ষুধার পোশাকের মজা দেখালেন। ’ (সূরা নাহল-১১২)
এ আয়াতেও “(***)” আসলে “(***)” শব্দের বদলে এসেছে। এর কারণ হচ্ছে, দুটোর ভেতরে বিশেষ ধরনের ঐক্য রয়েছে। অর্থাৎ ক্ষুধাও দেহকে দুর্বল করে সারা দেহে পোশাকের মত জড়িয়ে থাকে।
১৪। আয়াত : (আরবী*****************)
‘আল্লাহর রঙ’। (সূরা বাকারা -১৩৮)
এখানে ‘দীন’ –এর স্থলে ‘সিবগাহ্’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর একটি কারণ রয়েছে তা এই, কাপড়ে যেরূপ রং লাগে, তেমনি অন্তরে ধর্মের রং লাগে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ঈসায়ীদের বিশেষ পরিভাষার সাথে সংযোগ স্থাপন।
১৫। আয়াত : (আরবী*****************)
এখানে (***) একবচনের স্থালে সীনীন বহুহবচন ব্যবহার হয়েছে।
১৬। আয়াত : (আরবী*****************)
এই আয়াতে ইরিয়াস-এর স্থলে ‘ইল্য়াসীন’ ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ‘মুবাদ্দাল ও মুবাদ্দাল মিনহু” –এর ভেতের সামঞ্চ্য বিধান। দ্বিতীয়ত, এর ফলে বর্ণনায় গতির সৃষ্টি হয়েছে।
অব্যয় দ্বারা অব্য বদল:
১। আয়াত : (আরবী*****************)
‘তারপর যখন তার প্রভু পাহাড়টি আলোকোজ্জ্বল করলেন। ” (সূরা আ’রাফ-১৪৩)
এ আয়াত “(***)” এর সংগে (**) যেরদায়ক অব্যয় এসেছে। আর তা (***) অব্যয়ের পরিবর্তে এসেছে। অর্থাৎ] যেভঅবে প্রথম গাছের ওপরে জ্যোতির বিকাশ ঘটেছিল।
২। আয়াত : (আরবী*****************)
‘তারা সেদিকে এগিয়ে গেল। ’ (সূরা মুমিনূন-৬১)
এ আয়াতে (***) এসেছে (***) এর বদলে।
৩। আয়াত : (আরবী*****************)
‘আমার কাছে রসূলদের কোন ভয় নেই- একমাত্র আত্মপীড়ক ছাড়া। ’ (সূরা নমল ১০/১১)
এ আয়াতে (**) এসেছে। (***) এর পরিবর্তে।
৪। আয়াত : (আরবী*****************)
‘আমি অবশ্যই তোমাদের খেজুর শাখায় ফাঁসি দেব। ’ (সূরা ত্ব’হা-৭১)
আয়াতে (***) এর স্থলে (**) ব্যবহৃত হযেছে।
৫। আয়াত : (আরবী*****************)
‘তাদের কাছে কি সিঁড়ি আছে যাতে চড়ে তারা শুনতে পায়?’ (সুরা তুর-৩৮)
এ আয়াতে “(***) এর স্থলে (**) ব্যবহৃত হয়েছে।
৬। আয়াত : (আরবী*****************)
আকাশ তার ফলে বিদীর্ণ হবে। ’ (সূরা মুজ্জামিল -১৮)
এ আয়াতে (**) এর স্থলে (**) ব্যবহৃত হয়েছে।
৭। আয়াত : (আরবী*****************)
‘তা নিয়ে অহংকার করে। ; (সূরা মুমিনুন-৬৭)
এ আয়াতে (***) এর স্থলে (**) ব্যবহৃত হয়েছে।
৮। আয়াত : (আরবী*****************)
‘মর্যাদাবোধই তাদের পাপে লিপ্ত করল। ’ (সূরা বাকারা ২০৬)
এখঅনে (***) স্থলে (****) এবং (**) এর স্থলে (**) ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থ হবে, মর্যাদা ও ক্ষমতা তাকে পাপের দিকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
৯। আয়াত : (আরবী*****************)
এ ব্যাপারে কোন পরিজ্ঞাত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা কর। ’ (সূরা ফুরকান-৫৯)
এখঅনেও (***) এর স্থলে (**) এসেছে।
১০। আয়াত : (আরবী*****************)
‘নিজের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদ খেয়ে বসবে না। ’ (সূরা নিসা-২)
এখানে ও (**) এর স্থলে (***) এসেছে।
১১। আয়াত: (******) মূলে ছিল: (******) অর্থ দ্বারা দাঁড়াবে, কনুসহ। (সূরা মায়েতা-৬)
১২। আয়াত : (আরবী*************)
আল্লাহর বান্দা তা থেকে পানি পান করে। ’ (সূরা দাহর-৬)
মূলত হত: (আরবী*************)
‘আল্লাহর বান্দা তা থেকে পানি পান করে। ’
১৩। আয়াত : (আরবী*************)
যখন তারা বলে, আল্লাহ মানুষের কাছে কিছুই অবতীর্ণ করেননি; তখন তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না। (সূরা আনাম -৯১)
এ আয়াতে (***) এসেছে (***) অব্যয়ের বদলে।
বাক্যের বদলে বাক্য ব্যবহার:
কখনও পূর্ণ একটা বাক্য অনুল্লেখ রেখে তার বদলে আরেকটি বাক্য ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় বাক্য যদি পয়লা বাক্যের মর্ম ব্যক্ত করে ও তার অস্তিত্বের আভাস দেয়, তা হলেই এরূপ করা হয়। এতে মর্ম তো যথাযথ থাকে, কিন্তু বাক্যের কাঠামো সংক্ষেপ করে। যেমন:
১। আয়াত : (আরবী*************)
‘তোমরা যদি তাদের সাথে মিশ, তাহলে তারা তোমাদের ভাই হয়ে যাবে। (সূরা বাকারা -২২০)
আদতে ছিল এই: (আরবী**********************)
২। আয়াত : (আরবী*************)
‘আল্লাহর থেকে প্রাপ্ত পুরস্কার অবশ্যই এর চেয়ে উত্তম। ” (সূরা বাকারা-১০৩)
বাক্যটি এরূপ হতে: (আরব***************)
৩। আয়াত : (আরবী*************)
‘যদি সে চুরি করে থাকে, তাহলে এর আগে তার ভাইও চুরি করেছে। ’ (সূরা ইউসুফ-৭৭)
বাক্যটি এরূপ ছিল: (আরবী****************)
‘সে যদি চুরি করে থাকে, অবাক হবার কিছু নেই। কারণ তার ভাইও চোর। ’
৪। আয়াত : (আরবী*************)
‘যদি কেউ জিবরাঈলকে দুশমন ভাবে, তার মনে রাখা উচিত, আল্লাহই তাকে তোমার অ্তরে অবতীর্ণ করেছে। ’ (সূরা বাকারা-৯৭)
বাক্যটির মূল রূপ: (আরবী******************)
‘যে ব্যক্তি জিব্রাঈলের শত্রু, সে আল্লাহর শত্রু, সে আল্লাহর শত্রু। কারণ তিনিই তাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন। সুতরাং তার সাথে যে শত্রুতা করে সে আল্লাহর শত্রুতাই কামনা করে। ’
অনির্দিষ্ট শব্দকে নির্দিষ্ট শব্দ দ্বারা পরিবর্তন:
কখনও বাগধারা চায় যে, অনির্দিষ্ট শব্দকে নির্দিষ্ট করে ব্যবহার করা হোক। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্টতার চিহ্ন ও রীতি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মর্ম অনির্দিষ্ট থাকে। যেমন:
১। (আরবী************) এখানে (***) আসলে (**) ছিল। এ পরিবর্তনে বাক্যের সংকোচন ঘটেছে।
৩। (*****) আসলে (***) ছিল। কিন্তু (**) যোগ করা হযেছে, শুধু উচ্চারণের সুবিধার জন্যে।
লিংহ ও বচনের পরিবর্তন:
কখনও বাগধারার স্বাভাবিক চাহিদা মোতাবেক সর্বনাম স্ত্রীলিংগ, কখনও বা পুংলিংগ করা হয়। কখনও তাতে একবচন ব্যবহার দরকার হয়। এর পরিবর্তনের মূলে রয়েছে বাক্যে মূল অর্থের সংগতি বিধান। যেমন:
১। আয়াত : (আরবী*************)
‘যখন সূর্যকে চমকাতে দেখল, বলল এই আমার শ্রেষ্ঠ প্রভু। ’ (সূরা আনয়াম -৭৮)
এ আয়াতে ‘শামস্’ পূংরিংগের স্থলে ‘বাযিয়াতান’ এ সর্বনাম স্ত্রীলিংগ ব্যবহৃত হয়েছে।
২। আয়াত : (আরবী*************)
‘তাদের উপমা এই, যেন একদল আগুন জ্বালাল আর যখনই চারিদিকে আলোকিত হল, আল্লাহ্ তাদের দৃষ্টিশক্তি হরণ করলেন। ’ (সূরা বাকরা-১৭)
এ আয়াতে ‘আদাআত’ এ সর্বনাম বহুবচনের স্থলে এক বচন ব্যবহৃত হয়েছে। যথা:
১। আয়াত : (আরবী*************)
এ আয়াতে (***) ক্রিয়াটি একবচন। অথচ তার কর্তা আল্লাহ ও রসূল দু’জন। ঠিক (***) এর সর্বনামের ও সেই অবস্থা যেহেতু আল্লাহ ও রসূলের একই করণী ব্যাপার, তাই দ্বিবচনের জায়গায় একবচন নেয়া হয়েছে।
২। আয়াত : (আরবী*************)
‘যদি আমি আমার প্রভুর থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন পেয়ে থাকি এবং তাঁর থেকে রহমতও লাভ করি… ইত্যাদি। (সূরা হুদ-২৮)
এখানে (***) এর সম্পর্ক (****) ও (***) দুটোর সাথে। সুতরাং দ্বিবচনের (***) হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুটোরই অবস্থা এক বলে একবচন ব্যবহৃত হয়েছে।
বাক্যাংশের পরিবর্তন
বাগধারার চাহিদা অনুসারে কখনও শর্তমূলক ও প্রতিজ্ঞাবাচক বাক্যের শর্ত ভাগ ও প্রতিজ্ঞা ভাগ এবং জবাবের অংশ যথাযথই থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রেও একটি অংশ স্বতন্ত্র বাক্য করে নেয়া হয়। কারণ এ পরিবর্তন মর্মের সাথে সংযোগ রেখেই করা হয়। অবশ্য তাতে এরূপ কোন চিহ্ন থাকা চাই, যা কোন না কোনভাবে সে পরিবর্তনের ইংগিত দান করে। যেমন:
১। আয়াত : (আরবী*************)
কঠোরভাবে গ্রেফতারকারী সেই ফিরিশতাদের শপথ! যারা প্রাণকে বাঁধন মুক্ত করে ও তা নিয়ে বায়ু পথে সবার আগে দ্রুত চলে এবং বিভিন্ন কাজের তত্ত্বাবধান করে। যেদিন কাঁপন-সৃষ্টিকারী কাঁপিয়ে তুলবে। (সূরা নাযিআত-১-৬)
এ আয়াতে আগা-গোড়া শপথ নেয়া হয়েছে। অথচ শপথোত্তর বক্তব্যের উল্লেখ নেই। তা হচ্ছে ‘হাশর-নশর’ সত্য। কিন্তু তার বদেলে বলা হল, ‘ইয়াওমা তারজুফুর রাজিফাহ্’ এবং এ বাক্যটিই মূল বক্তব্য ব্যক্ত করেছে।
২। আয়াত : (আরবী*************)
‘কক্ষপথবিশিষ্ট আকাশের শপথ! অংগীকৃত দিনের শপথ! দর্শক ও দৃষ্টের শপথ। অগ্নিকুন্ডের মালিকরা নিহত হয়েছে। ’ (সূরা বুরুজ-১-৪)
এ আয়াতেরও শপথোত্তর বক্তব্য নেই। তা হচ্ছে, কর্মফল সত্য।
৩। আয়াত : (আরবী*************)
‘যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে তার প্রভুর আদেশে এবং এটাই তাহর হবার। যখন পৃথিবী সমতল ভূমি করা হবে ও তার ভেতরের সবকিছু বেরিয়ে আসবে তার প্রভুর আদেশে এবং এটাই তার হবার। হে মানব! নিশ্চয় তুমি কঠোর সাধনা করবে। ’ (সূরা ইনশিকাক-১-৬)
এ আয়াতের মর্ম হচ্ছে যে, কর্মফল দান ও হিসাব নিকাশ গ্রহণ সত্য। এখানেও শুধু শর্ত বলে যাওয়া হয়েছে। তার উত্তরে কিছু বলা হয়নি।
বর্ণনা রীতি বদল:
কখনও বাক্যের বর্ণনারীতির বদল হয়ে থাকে। বাক্য হয়ত চায় মধ্যম পুরুষের বক্তব্য পেশ হওয়া। সেখানে হয়ত তৃতীয় পুরুষের বক্তব্য পেশ করা হয়। যেমন:
আয়াত : (আরবী*********************)
‘এমনকি তোমরা যখন কিশতীতে থাক এবং সেগুলো মৃদৃ মলয়ের সাহায্যে ভেসে চলে। ’ (সূরা ইউনুস-২২)
এখানে (***)-এর মধম পুরুষে বহুবচন। সে চায় পূর্ণ বাক্য এ ঢঙে হবে। কিন্তু রীতি বদল হল। তৃতীয় পুরুষ করে (***) ব্যবহার করা হল।
এভাবে কখনো বাক্য রীতি পরিবর্তিত করে ‘ইনশা’ কে খবর ও খবরকে ইনশা করা হয়। তেমনি ক্রিয়া দ্বারা আবদ্ধ বাক্য ইনশা বাক্যে ও ইনশা-বাক্য ক্রিয়াভিত্তিক বাক্যে পরিবর্তিত করা হয়। যেমন:
১। আয়াত : (আরবী***************)
এখানে নির্দেশক পদ যা ইনশা বাক্যের অন্তর্ভুক্ত। অথচ মর্মের দিক থেকে এটা ছিল ক্রিয়া আবদ্ধ বাক্য। উক্ত পদের রূপ ছিল। (***) যা ঘটমান ক্রিয়া ছিল। (সূরা মুলক-১৫)
২। আয়াত : (আরবী*********************)
‘যদি তোমরা ঈমানদার হও। ’ (সূরা বাকারা -৯৩)
এখানে শর্তসূচক শব্দ দিয়ে বাক্য শুরু হওয়ায় এটাও ইনশা-বাক্য হল। অথচ মূল বাক্য খবর বাক্য বা ক্রিযা-আরদ্ধ বাক্য। তা হচ্ছে: (আবরী*************)
অর্থাৎ: তোমাদের ঈমানের এটাই চাহিদা।
৩। আয়াত : (আরবী*********************)
‘এই কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের ওপরে ফরয করেছি। ’ (সূরা মায়েদা-৩২)
বাক্যটি ছিল এই, ‘বনী আদমের অবস্থার ওপরে ভিত্তি কর কিংবা সেই উদাহরণ অনুসারে আমি বনী ইসরাঈলের ওপরে এটা ফরয করেছি। ’ অথচ ‘বনী আদমের অবস্থার ওপরে ভিত্তি করে কিংবা বনী আদমের অবস্থার উদাহরণ অনুসারে’ৎ -এ বাক্যাংশটি ‘এই কারণে’ (মিন আজালে যালিক) বাক্যাংশ দ্বারা পরিবর্তন করা হল। সাধারণত কিয়াস কোন কারণ ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। বললে কেবল বিশ্লেষণ দেয়া মাত্র। তা থেকে বেঁচে বাক্য সংকোচনের জন্যে এরূপ করা হয়েছে।
৪। (**) এটা প্রশ্নসূচক পদ। ‘দেখা শব্দ থেকে গড়া হয়েছে। কিন্তু এখানে সতর্ক করার জন্যে প্রশ্নসূচক পদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পরবর্তী বাক্যের প্রতি মন আকর্লণ করার জন্যে এরূপ করা হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এরূপ বলে থাকি। যেমন: আপনি দেখেছেন কি? শুনেছেন কি?
বাক্যাংশে আগ পিছ করা:
কখনও বাক্যের গাঁথুনীতে বাক্যাংশের আগের অংশ পেছনে ও পেছনের অংশ আগে আনা-নেয়া করা হয়। ফলে মূল অর্থ বুঝা দায় হয়। নীচের বিখ্যাত দুটা আরবী চরণ থেকে তা বুঝা যা যাবে: (আবরী*****************)
দুর অব্যায় :
কখনও শব্দের সম্পর্ক দূরবর্তী কোন শব্দ বিংবা ভাবের সাথে সংযুক্ত হয়। সে কারণেও বাক্যটি দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে।
এ ধরনের আরও অবস্থা রয়েছে অনেক। যার ফলে আয়াতের মর্ম বুঝা কঠিন হয়ে থাকে। যেমন ধারাবাহিক ‘ইল্লা’ (ব্যতীত) ব্যবহার।
১। আয়াত : (আরবী*********************)
‘লূত পরিবার ব্যতীত আমরা সবাইকে মুক্তি দিয়েছি, তাঁর স্ত্রী ব্যতীত। ’ (সূরা হিজর-৫৯)
এখঅনে এস্তেসনার পর আর এক এস্তেসনা প্রবেশের কারণে অর্থ দুবদ্ধ হয়েছে।
২। আয়াত : (আরবী*********************)
‘এর পরেও কোন বস্তু তোমাকে পরকালে অবিশ্বাসী করেছে? (সূরা ত্বীন-৭)
এ আয়াতে একেবারেই সংলগ্ন রয়েছে। (আরবী*******************)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষকে সুন্দর কাঠামোতে গড়েছেন। ’ (সূরা তীন-৪)
অথচ এ দু’আয়াতের অর্থে বাহ্যত কোনই মিল নেই। তাই দুর্বোধ্য হয়েছে।
৩। আয়াত : (আরবী*********************)
অর্থ দাঁড়াল, তার জন্যে ডাকছে যার ক্ষতিটা কল্যাণের চাইতে কাছাকাছি হয়েছে। আদতে মর্ম এই তাকেই ডাকছে, যার মংগলের চাইতে অমংগলটাই নিকটবর্তী। এখানে (***) শব্দের বদলে (**) আসায় মর্মোদ্ধারে অসুবিধা দেখা দিয়েছে। (সূরা হজ্জ-১৩)
৪। আয়াত : (আরবী*********************)
আয়াতের মূলরূপ ছিল: (আরবী************)
কিন্তু বর্ণনাভংগী বদলে যাওয়ায় শব্দেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, এ কারণেই অর্থ দুর্বোধ্য হয়েছে। (সূরা কাছাছ-২৬)
৫। আয়াত : (আরবী*********************)
‘এবং তোমাদের মাথা মুছ ও তোমাদের চরণগুলো…। এর শেষভাগে হবার ছিল: (আরবী***********)
এখানে দূর-অব্যয় ঘটিত দুর্বোধ্যতা দেখা দিয়েছে। (সূরা মায়েদা-৬)
৬। আয়াত : (আরবী*********************)
“যদি তোমাদের ভাগ্য আগে নির্ধারিত না হত ও নির্দিষ্ট মুহূর্ত, তা হলে পাকড়াও হতে। ” (সূরা ত্বহা-১২৯)
এখানে হওয়া প্রয়োজন ছিল: (আরবী***********)
বাক-বিন্যাসের ব্যতিক্রমে এ দুর্বোধ্যতা এল।
৭। আয়াত : (আরবী*********************)
“তা না করলে তোমরা বিপদে পড়বে। ” (সূরা আনফাল-৭৩)
এর সংগেই )(আরবী*********)
“অতঃপর তোমাদের ওপরে সাহায্য অপরিহার্য। ” (সূরা আনফাল-৭২)
আসায় পারস্পরিক সম্পর্কের অভাবে দুর্বোধ্যতা দেখা দিয়েছে।
৮। আয়াত : (আরবী***************)
‘ইব্রাহীমের বাক্য ছাড়া। ” সূরা মুমতাহিনা-৪)
এই আয়াতটির সংশ্লিষ্ট আয়াত হল: ((আরবী***************)
“ইবরাহমের ভেতরে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। ”
এ দুয়ের ঐক্য অস্পষ্ট বলেই দুর্বোধ্যতা দেখা দিয়েছে।
৯। আয়াদ : (আরবী***************) (সূরা আ‘রাফ-১৮৭)
এ আয়াতে বাক-বিন্যাসের ব্যতিক্রমের জন্যে দুর্বোধ্যতা এসেছে। আয়াতে ‘আনহা’ –এর স্থলে ছিল ‘য়্যাসয়ালুনাকা’ –এর পরেই। কিন্তু বাক্যে (***) ‘হাফিয়ান’-এর পরে আসায় শব্দের পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝতে অসুবিধা হয়েছে বলেই এ দুর্বোধ্যূতা দেখা দিল। ।
আয়াতটির রূপ হত এই:
বাক্যের মধ্যে অতিরিক্ত শব্দের কারণে:
কখনও বাগধারা বা বাক্য- বিন্যাসের ব্যতিক্রম ছাড়া আরও কয়েকটি কারণে আয়াতের দুর্বোধ্যতা দেখা দেয়। যেমন:
১। (ছিফাত) বিশেষণ ব্যবহারের ফলে-
(ক) আয়াত : (আরবী***************)
আর এমন পাখী নেই যা দু’ডানায় ভর দিয়ে উড়ে না। (সূরা আনআম-৩৮)
(খ) আয়াত : (আরবী***************)
“নিশ্চয়ই মানুষকে কোমলমতি গড়া হয়েছে। দুর্বিপাকে পড়লে তারা ভেংগে পড়ে ও সুখে থাকলে তারা মেতে ওঠে। ” (সূরা মাআরিজ-১৯-২১)
২। কোন বাক্যাংশের (বদল) পুনরুক্তির ফলে- (আরবী***************)
তাদের জন্যে যাতের দুর্বল ভাবা হল, তাদের জন্যে ঈমান আনল। (সূরা আ’রাফ -৭৫)
৩। কখনও আতফে তাফসিরী যৌগিক বাক্যের একটি অপরটির ব্যাখ্যা হলে: (আরবী***************)
এমনকি যখন পূর্ণবয়স্ক হল এবং চল্লিশ বছরে পৌছল। (সূরা আহকাফ-১৫)
৪। কোন অক্ষর তাকরার বা শব্দের পুনরুল্লেখ ঘটলে-
(ক) আয়াত : (আরবী***************)
যারা অনুসরণ করে আল্লাহ ছাড়া অন্য অংশীদার, তারা যা অনুসরণ করে, তা অনুমান ছাড়া আর কিছুরই অনুসরণ নয়। (সূরা ইউনুস-৬৬)
বাক্যের মূলরূপ এই: (আরবী***************)
(খ) আয়াত (আরবী***************)
“এবং যখন তাদের কাছে তাদের গ্রন্থকে স্বীকৃতিদানকারী গ্রন্থ এল, অথচ এর আগে তারা কাফিরদের ওপরে তার সাহায্যেই প্রাধান্য বিস্তার করত, আর সেটাই যখন এল, তখন চিনতে পারল না এবং তা অস্বীকার করে বসল। ” (সূরা বাকারা ৮৯)
এ আয়াতে (***) এর পুনরাবৃত্তি ঘটায় অর্থ দুর্বোধ্য হয়েছে।
(গ) আয়াত : (আরবী***************)
‘এবং তাদের ভয় করা উচিত আল্লাহকে যারা ভয় পায় নাবালেগ সন্তানদের ছেড়ে মারতে এই ভেবে যে, তাদের পরে কি উপায় হবে? অতএব তাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। (সূরা নিসা-৯)
এখানেও ‘আল্লাহ্-ভীতি’ দুবার উল্লেখ করারয় মর্ম অস্পষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫। আয়াত : (আরবী***************)
তোমাকে নব চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে? বলে দাও, তা হচ্ছে মানুষের জন্যে সময় নির্ধারক ও হজ্বের সময়- নিদর্শক। (সূরা বাকারা ১৮৯)
এখানে সংক্ষেপে হত: (আরবী***************)
“নব চাঁদ মানুষের জন্যে তাদের হজ্জের সময় নিদর্শক। ” কিন্তু (**) বলায় একটু বাড়লেও লাভ হয়েছে বেশী। মানে, চাঁদ তো শুধু হজ্জের সময় নির্দেশের জন্যেই নয়; মানুষের পঞ্জিকা ঠিক করার জন্যে। ”
৬। আয়াত: (আরবী***************)
“মক্কাবাসী ও তার পার্শ্ব বর্তীদের যেন সতর্ক কর এবং সতর্ক কর কিয়ামতের দিন সম্পর্কে। ” (সূরা শূরা-৭)
মূলরূপ হবে: (আরবী***************)
এখানে (**) এসে গোলমান বাধিয়েছে।
৭। আয়াত : (আরবী***************)
“তুমি পাহাড় দেখবে তো সুসংবদ্ধ বলেই মনে করবে। ” )সূরা নামাল-৮৮)
এখঅনে (**) অতিরিক্ত। (**) এর বিভিন্ন মর্মের ভেতরে এখানে (**) বুঝাবার জন্যে এসেছে। আর তার ফলে বাক্য জটিল হয়েছে।
৮। আয়াত : (আরবী***************)
“মানুষ এক জাতিই ছিল। তারপর আল্লাহ তাদের সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ দানের জন্যে নবীদের পাঠালেন এবং তাদের সাথে সত্য গ্রন্থ পাঠালেন যেন তা দিয়ে মানুষের পারস্পরিক বিরোধ মীমাংসা করা হয়। এর বিরুদ্ধে কেউ আপত্তি তোলেনি। শুধু পূর্ব গ্রন্থানুসারীরা, তাও নতুন গ্রন্থ অবতীর্ণ হবার পরে কেবল জিদের বশবর্তী হয়ে বিরোধী সেজেছে। আল্লাহ যাদের চান সরল পথ দেখিয়ে দেন। ” (সূরা বাকারা-২১৩)
ওপরের আয়তাটির প্রতিটি বাক্য সুবিন্যস্ত ও সুসংবদ্ধ। তথাপি মাঝখানে (*****) বাক্যাংশটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ জন্যে যে, (****) অংশটি সর্বনামটি সুস্পষ্ট হোক। অর্থাৎ এ কথাটা পরিস্কার হোক যে, পূর্বের ঐশীগ্রন্থ প্রাপ্তদের ভেতরকার যে অনৈক্য ও মতভেদের কথা বলা হয়েছে, গ্রন্থ হাতে পেয়েই তারা এসব মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে। তারা গ্রন্থের কিছু হুকুম মেনেছে, আর কিছু অস্বীকার করেছে।
বাক্যের মধ্যে হরফে যর বাড়ানোর কারণে:
কুরআন কোথাও কর্তা বা কর্মের সাথে যেরদায়তক হরফ ব্যবহার করে তাকে ক্রিয়া- পভাবক করে নিয়েছে। তাতে সংযোগ ও অনুসরণ অর্থ জোরদার হয়েছে। যেমন:
১। আয়াত (আরবী***************)
আদতে হত: (***)
২। আয়াত : (আরবী***************)
‘এবং তাদের পদঙ্ক অনুসরণের জন্যে আমি ঈসা ইবনে মরিয়মকে পেছনে পাঠিয়েছি। (সূরা মায়েদা-৪৬)
আদতে হত: (আরবী***************)
‘তাদের পরে আমি ঈসাকে পাঠিয়েছি। ’
“ওয়ায়ে’ এততে সাল অতিরিক্ত হওয়ার কারণে:
এখানে আরেকটি রহস্য খুলে ধরা প্রয়োজন। তা এই “ওয়াও” অক্ষরটি সাধারণত দুবাক্যে সংযোগ সাধনের কাজ দেয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনুসরণকে জোরদার করার কাজেও লাগে। যেমন:
(ক) আয়াত (আরবী***************) হইতে
(খ) (আরবী***************) পর্যন্ত
(গ) আয়াত : (আরবী***************)
(ঘ) আয়াত : (আরবী***************)
“ফা” –এর এত্তেসাল” বাড়ার কারণে
এভাবে কোথাও ‘ফা’ ব্যবহৃত হয়। তার স্বতন্ত্র অর্থ থাকে না। কেবল বাক্যের সৌন্দর্য বাড়ায়।
আল্লামা কুস্তালানী কিতাবুল হজ্জের ব্যাখ্যায় যেখানে এ নিয়ে আলোচনা করেছে যে, উমরার নিয়্যত বেঁধে যদি উমরা সেরে মক্কা ছেড়ে চলে, তখন বিদায়ী তাওয়াফ জরুরী কী না, সেখানে প্রসংগত লিখেছেন “যদি সিফাত ও মওসূফের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করা উদ্দেশ্য হয়, তা হলে এ দুয়ের মাঝে সংযোগক অব্যয় ব্যবহার বৈধ। যেমন:
আয়াত: (আরবী***********)
যখন মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ আছে তা বলে। (সূরা আনফাল ৪৯)
এখানে মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ আছে, একই মানুষ-সিফাত ও মওসূফ। শুধু বাক্যে জোর সৃষ্টি করার জন্যে “ওয়াও” ব্যবহার করা হয়েছে।
বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ সি্ওয়াই এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে লিখেছে, এ আয়াত ঠিক নিম্নের বাক্যটির মত : (আরবী***********)
‘আমি যায়েদ ও তোমার বন্ধর সাথে গিয়েছিলাম। ’
যদি এখানে তোমার বন্ধু বলতে যায়েদ হয়, তা হলে ‘যায়েদ’ মওসূফ ‘সাহেবেকা’ সিফাত। হবে। অথচ দুয়ের মাঝে রয়েছে সংযোজক অব্যয়।
আল্লামা যমখশরী নিম্নের আয়াত সম্পর্কে বলেন: (আরবী***********)
‘এমন কোন জনপদ আমি ধ্বংস করিনি, যার বাসিন্দাদের বিশেষ গ্রন্থ চিল না। (সূরা হিজর-৪)
এখানে (****) সিফাত এবং (**) মওসুফ দুয়ের মাঝে সংযোজক অব্যায় শুধু সিফাতে জোর সৃষ্টির জন্যে এসেছে। নীচের আয়াতে ঠিক এ রীতিই অনুসৃত হয়েছে।
‘এমন কোন জনপদ ধ্বংস করিনি, যার জন্যে সতর্ককারী ছিল না। ’ (সূরা শুরা-২০৮)
এখানে অব্যয়টি সিফাত ও মওসূফের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে এসেছে এখানেও সিফাতে জোর দেয়া উদ্দেশ্য। এ আয়াতটি নীচের বাক্যটির মতই: (আরবী***********)
এর স্থলে ‘যায়েদ এসেছে এবং তার দেহে পোশাক। ’
বাক্যের দুটি অংশের ভেতরে সংযোজক অব্যয় নাম মাত্র রয়েছে। অর্থে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করেনি। এখানে অব্যয় ছাড়াই চলত।
বিক্ষিপ্ত সর্বনাম:
কখনও সর্বনাম নির্দিষ্ট অসুবিধার জন্যে আয়তা দুর্বোধ্য হয়। কখনও একই শব্দ দুটি অর্থ প্রকাশ করায়ও অসুবিধা দেখা দেয়। যেমন:
১। আয়াত : (আরবী***********)
‘এবং নিশ্চয়ই তারা তাদের সঠিক পথ থেকে বিরত রাখে, আর তারা ভাবে যে, তারাই সুপথপ্রাপ্ত। (সূরা যুখরুফ-৩৭)
এ আয়াতে তিন সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে। তিনটিই অনির্দিষ্ট। তাই সরল পথ থেকে কারা ফিরায়, আর ভ্রান্ত পথে চলেও কারা নিজেদের সঠিক ভাবছে, তা বুঝা যায় না। যদি সর্বনাম নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, তাহলে আয়াত এরূপ দাঁড়ায়”
(আরবী***********)
‘নিশ্চয়ই শয়তানরা মানুষকে সুপথ থেকে ফিরায় এবং মানুষ ভাবে যে, তারা অবশ্যই সঠিক পথে চলেছে।
এবং (***) এ এক স্থানে অর্থ হচ্ছে শয়তান, অন্যখানে অর্থ হচ্ছে ফেরেশতা।
২। আয়াত : (আরবী***********)
‘তারা কাকে দান করবে তা তোমাকে প্রশ্ন করছে? বল, যা দান করবে তাই ভাল। ’ (সূরা বাকারা-২১৫)
৩। আয়াত : (আরবী***********)
‘তারা কি দান করবে তা তোমাকে প্রশ্ন করছে? বল, যা বেশী, তাই দান করবে। ’ (সূরা বাকারা ২১৯)
পয়লা আয়াতে জবাব এ জন্যে সঠিক হয়েছে য, তারা দানের পাত্র খুজেছে। তাই বলা হল ‘দান যেখানে যা-ই করুক উত্তম। ’ অথচ দ্বিতীয় আয়াতে জবাবের ধরনে বুঝা যায়, দানের পরিমাণ জানতে চেয়েছে। সুতরাং তাদের জন্যে এ জবাবেই সঠিক হল যে, ‘উদ্বৃত্ত সম্পদ দান করবে। ’
এভাবে কখনও “(***)” এবং “(**) এই জাতীয় বিভিন্ন শব্দের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশের ফলেও আয়াত দুর্বোধ্য হয়। যেমন: (ক) (**) শব্দগকে (***) অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন- (*****) আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, আঁধার ও আলো। (সূরা আনয়াম-১)
(খ) কখনও তা (***) অর্থা আকীদা অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : (আরবী******************)
‘আল্লাহ সম্পর্কে তাদের আকীদা এই যে, তিনিও তাদের দেখা কোন বস্তুর মতই কিছু। ’ (সূরা আনয়াম-১৩৬)
‘এভাবে (**) শব্দকে কখনও কর্তা, কখনও কর্ম ইত্যাদি রূপে ব্যবহার করা হয়। যেমন:
১। আয়াত : (আরবী******************)
অর্থাৎ তারা কি কোন কিছু ছাড়া এমনিই সৃষ্টি হয়েছে? (সূরা তূর-৩৫)
এখানে (***) দ্বারা (***) অর্থাৎ স্রষ্টা অর্থ নেয়া হয়েছে।
২। আয়াত : (আরবী******************)
‘এরূপ কোন ব্যাপারে তোমরা আমাকে প্রশ্ন করো না। (সূরা কাহাফ-৭০)
এখানে (***) দ্বারা সাধ্যাতীত বস্তু বুঝানো হয়েছে।
কখনও ‘খবর’ (বিধেয়) বলে তার থেকে ‘খবর’ সংশ্লিষ্ট ঘটনা বুঝানো হয়। যেমন : (*****) (বিরাট খবর) এখঅনে (***)( বলতে সেই ভয়াবহ সংশ্লিষ্ট ঘটনা বুঝানো হয়েছে, যার জন্যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
এভাবে (***) ও (***) বা তার সমার্থক শব্দ দ্বারা বিভিন্ন স্থঅনে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ নেয়া হয়। তাই অন্যান্য গুলোর মত এখানেও কখন কোন্ অর্থ হবে তা নির্ণয় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বিক্ষিপ্ত আয়াত:
আয়াত বিক্ষিপ্ত হলেও দুর্বোধ্যতা দেখা দেয়। কোন আয়াত এমন যে, সেটা মর্ম অনুসারে কোন কাহিনীর উপসংহার হিসাবে শেষে আসার কথা। অথচ আগেই এসে গেছে। তারপর নতুন করে আবার কাহিনী বর্ণনা চলেছে।
কখনও নাযিলের দিক থেকে অগ্রাধিকার পেয়েও কোন আয়াত পাঠের কালে পরে আসে। ফলে অর্থ ধরা মুশকিল। যেমন:
(আরবী******************)
অবশ্যই আমি তোমার বারংবার তাকানো লক্ষ্য করেছি। (সূরা বাকারা-১৪৩)
এ অংশটি আগে নাযিল হয়েছে।
এবং (*****) শীঘ্রই মুর্খরা বলবে। (সূরা বাকারা-১৪২)
পরে নাযিল হয়েছে।
অথচ পাঠের সময়ে বিপরীত হয়ে আছে।
কখনও এমন দেখা যায় যে, কাফিরদের বক্তব্য বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে তার জবাবও দেয়া হচ্ছে। এভঅবে প্রশ্নোত্তরে জগাখিচুড়ী করে আয়াত শেষ হয়েছে। এতেও দুর্বোধ্যতা সৃষ্টি হয়। যেমন:
(আরবী******************)
‘তোমাদের ধর্মানুসারী ছাড়া অন্য কারুর ওপরে আস্থা রেখো না। বলে দাও, নিশ্চয়ই হিদায়াত কেবল আল্লাহরই হিদায়াত। যদি কাউকে তা দেয়া হয়, তা তোমাদের মতই দেয়া হবে। ’ (সূরা ইমরান-৭৩)
এ আয়াতে (*****) হচ্ছে কাফিরদের বক্তব্যের জবাব। এর আগে ও পরের বক্তব্য গুলো হচ্ছে কাফিরদের।
মোটকথা, এ আলোচনা বড়ই দীর্ঘ। এসব প্রতিবন্ধক ও জটিলতা এক এক করে বলা সময়- সাপেক্ষ। ওপরে যতটুকু আলোচনা করা হল, জটিলতা দূর করার জন্যে তা যথেষ্ট। যদি কোন মেধাবী পাঠক এগুলো স্মরণ রাখতে পারে, তা হলে যে কোন জটিলতায় কিছুটা মাথা ঘামিয়ে সে সমাধান বের করে নিতে পারবে। যা বলা হল, আর যে সব উদাহরণ দেয়া হল, সেগুলো থেকে যা বলা হয়নি, আর যে সব উদাহরণ দেয়া হয়নি, সেগুলোও বুঝে নেয়া তেমন কঠিন ব্যাপার নয়।