ইসলামে মানবাধিকার
মুহাম্মদ সালাউদ্দিন
মুহাম্মাদ আবুত তাওয়াম, বিকম (অনার্স), এমকম এম এম
মুহাম্মদ আবু নুসরত হেলালী, এম.এ. এম.এম.
পেশ কালাম
মুহতারাম সালাহুদ্দীন সাহেব, সম্পাদক ‘দৈনিক জাসারাত’ করাচী, তাঁর এই গ্রন্থে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এতটা পূর্ণাঙ্গ, বিস্তারিত ও তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন যে, সম্ভবত ইতিপূর্বে কেউ এই বিষয়ের উপর এইরূপ তথ্যবহুল আলোচনা করেননি। গ্রন্থখানির অধ্যয়ন এই বিষয়ের হৃদয়ঙ্গম করার জন্য ইনশাআল্লাহ অনেক উপকারী হবে। গ্রন্থখানি আরবী ও ইংরেজীসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হলে কতইনা ভালো হতো।
সম্মানিত গ্রন্থকারকে ইতিপূর্বেও তাঁর মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়েছিল এবং এই গ্রন্থ রচনাকালেও তাঁকে জননিরাপত্তা আইনে বন্দী করা হয়। এই অবস্থায় তাঁর গ্রন্থখানির প্রকাশ বুদ্ধিভিত্তিক দিক হতে উপকারী হওয়া ছাড়াও উপদেশ গ্রহণের উপকরণও হবে। যে ব্যক্তিই একদিকে এই বইখানি দেখবে এবং অন্যদিকে লেখককে তাঁর মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত দেখবে তখন সে নিজেই অনুভব করবে যে, ইসলামে ন্যায়বিচারের নীতিমালা এবং পৃথিবীভর ন্যায়বিচারের স্বীকৃত নীতিমাল কি, পক্ষান্তরে আমাদের দেশে কি জুলুম করা হচ্ছে।
আবুল আলা মওদূদী
লাহোর
২৭ অক্টোবর, ১৯৭২ ইং।
অনুবাদকের কথা
আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত। সালাত ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী এবং তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের উপর। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিচারে তার স্থার সকল সৃষ্টির উর্ধ্বে। সমাজবদ্ধ জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষের যেমন কতিপয় অধিকার প্রাপ্য আছে, তেমনি অপরের প্রতি তাঁর কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। একের জন্য যা দায়িত্ব ও কর্তব্য অন্যের জন্য তা অধিকাররূপে স্বীকৃত। আলোচ্য গ্রন্থে এ দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কেই আলোকপাত করা হয়েছে।
আদর্শ ও জীবন বিধান যতই উন্নত, ন্যায়সঙ্গত ও বাস্তবানুগ হোক, সমাজে তা কার্য্কর করার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত তারা যদি নিঃস্বার্থবান, উদার, যোগ্য ও মহৎ চরিত্রের অধিকারী না হয়ে বরং স্বার্থলোভী, চরিত্রহীন, অযোগ্য, পক্ষপাতদুষ্ট ও স্বৈরাচারী হয় তবে জনগণ অবশ্যই অধিকার বঞ্চিত হবে। অতএব এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের বিশেষতঃ মুসলিম শাসকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। বান্দার অধিকার সম্পর্কে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে।
উমার ইবনে আবদুল আযীয(রহ) তাঁর গভর্ণরগণকে এক রাষ্ট্রীয় ফরমানে বলেন, জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার কর এবং তাঁদের অধিকার পৌছে দাও, তবেই তারা সংশোধনের পথে ফিরে আসবে। শাস্তির দন্ড কার্য্কর করে জনগণের বিদ্রোহ সাময়িকভাবে দমন করা যেতে পারে কিন্তু স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা।
ইসলামে মানবাধিকার সম্পর্কে বাংলা ভাষায় এটাই প্রথম গ্রন্থ। এর দ্বারা পাঠকগণ উপকৃত হলে আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে। মহান আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করুন।
মহান আল্লাহর নামে
যিনি আমাকে এই গ্রন্থ রচনায় যোগ্যতা দান করেছেন
এবং
আল্লাহর কোটি কোটি অধিকার বঞ্চিত ও নির্যাতিত বান্দাগণের জন্য যারা স্বৈরাচারী ও একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থার যাঁতাকল থেকে মুক্তিলাভের এবং সম্মানজনক জীবন যাপনের রাস্তা তালাশ করছেন।
-গ্রন্থকার।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينًا [٤:١٧٤]فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِّنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا [٤:١٧٥]
-হে মানুষ! তোমার প্রভুর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের জন্য উজ্জ্বল আলো নাযিল করেছি যা তোমাদের সুস্পষ্ট পথ দেখায়। অতএব যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করবে তিনি তাদেরকে নিজের দয়া ও অনুগ্রহের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন এবং সঠিক পথে তাঁর দিকে পরিচালিত করবেন। (সূরা নিসাঃ ১৭৪-৫)।
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ [٦:٧٩]
-নিশ্চিত আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি পৌত্তলিকদের অন্তর্ভূক্ত নই। (সূরা আনআমঃ ৭৯)।