সমস্ত অধিকার আল্লাহর
আইনগত ও নৈতিক অধিকারের পারষ্পরিক সংযোগ ও সম্পর্ক অনুধাবন করার পর এখন আমরা একটি ভিন্নতর দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিক অধিকার সমূহের মূল্যায়ন করব। আমাদের ফকীহগণ অধিকার সমূহকে আরও একভাবে শ্রেণী বিভাগ করেছেন: আল্লাহর অধিকার সমূহ ( হুকুকুল্লাহ) এবং বান্দার অধিকার সমূহ ( হুকুকুল ইবাদ)। এই শ্রেণী বিভাগ অনুযায়ী আকীদা-বিশ্বাস ও ইবাদত-বন্দেগী, যেমন নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি “আল্লাহর অধিকার” এবং মানুষের উপর মানুষের যেসব অধিকার রয়েছে তা ‘বান্দার অধিকার’। যেমন জানমালের হেফাজত, ওয়ারিসগণের স্বত্ব, স্ত্রীর মোহর ও ভরণপোষণ ইত্যাদি। কতগুলো অধিকার যৌথ। যেমন, যাকাত আর্থিক ইবাদত হিসাবে তা আল্লাহরও অধিকার এবং যেসব লোককে যাকাতের প্রাপক ঘোষণা করা হয়েছে সেই দিক থেকে বান্দারও অধিকার। অনুরূপভাবে কোরবানী- তা আল্লাহর নামে প্রদত্ত প্রাণীজ নজরানা হিসাবে আল্লাহর অধিকার এবং গোশত ও চামড়ার প্রাপকদের দিকে বান্দারও অধিকার। কিন্তু যেভাবে আল্লাহ তাআলার আদালতে একজন মুসলমানের জীবনের আইনগত ও নৈতিক পার্থক্য লুপ্ত হয়ে সমস্ত অধিকার আইনগত অধিকারে পরিণত হয়, ঠিক সেভাবে আল্লাহর অধিকার ও বান্দার অধিকারের পার্থক্যও সর্ব মূল্যায়নে পৌঁছে খতম হয়ে যায় এবং সমস্ত অধিকার আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হয়। নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই অধিকার উচ্চতর মর্যাদা লাভ করে, দুনিয়ার কোনও আইন ব্যবস্থায় বা নৈতিক ব্যবস্থায় তার এই মর্যাদা নাই।
আল্লাহর অধিকার ও বান্দার অধিকারের এই শ্রেণী বিভাগ আসলে কেবল মাত্র এসব অধিকার আদায়ের দিক নির্দেশনার জন্য করা হয়েছে। অর্থাত যেসব অধিকার আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য তা তো “আল্লাহর অধিকারের” তালিকায় আসে, আর যেসব অধিকার বান্দার প্রাপ্য তা “বান্দার অধিকারের” তালিকাভূক্ত হয়। কিন্তু এখানে একটি মৌলিক প্রশ্ন সম্পর্কে চিন্তা করুন যে, অবশেষে বান্দার অধিকারের আইনগত ও নৈতিক মর্যাদা কি এবং এর বৈধতাই বা কি আছে? মানুষ কি তার কোন ব্যক্তিগত যোগ্যতার কারণে এসব অধিকারের প্রাপক হয়েছে অথবা কোন দাবী, চেষ্ঠা সাধনা অথবা মঞ্জুর হওয়া দাবীনামার কারণে এসব অধিকার লাভ করেছে? তাদের অধিকার সমূহ কি কোন সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে, রাষ্ট্র ও জনগণের ঐক্যমতে সম্পাদিত কোন চুক্তির ভিত্তিতে, মানব রচিত কোন সংবিধানের সাহায্যে অথবা মানব জাতির পরষ্পরের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কোন সমঝোতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট হয়েছে? যদি তা না হয় তবে তার অধিকার সমূহের ভিত্তি কি? এ কথা সুষ্পষ্ট যে, এর ভিত্তি কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। তিনিই প্রত্যেক হকদারের হক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং এই হকদারদের মধ্যে অগ্রাধিকারের বিষয়টিও তিনিই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যাকাত সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
“এই সাদাকাত সমূহ ( যাকাত) মূলত ফকীর-মিসকীনদের জন্য, আর তাদের সাদাকা (যাকাত) সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত, তাদের জন্য যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য, সেই সঙ্গে তা গলদেশের মুক্তিদানে এবং ঋণে ভারাক্রান্তদের সাহায্যের জন্য, আল্লাহর পথে এবং পথিক-মুসাফিরদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য। তা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয, আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং তিনি সুবিজ্ঞ ও সুবিবেচক” ( সূরা তওবা: ৬০)।
এখানে যাকাত প্রাপকদের নির্দিষ্ট করার সাথে সাথে তাদের মধ্যে অগ্রাধিকারও নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শেষে বলা হয়েছে যে, এসব অধিকার আল্লাহর পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ যদি এই ফরয পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করে তবে তার জানা উচিত যে, তার কোন গতিবিধিই আল্লাহ পাকের দৃষ্টির অগোচরে নয়। অনুরূপভাবে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ওয়ারিসগণের অংশ নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ইরশাদ হচ্ছে:
فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
“এই অংশ আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ নিশ্চিতরূপেই সমস্ত তত্ত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল এবং সমস্ত কল্যাণ ও মঙ্গলময় ব্যবস্থা জানেন” (সূরা নিসা: ১১)।
উপরোক্ত আয়াতের পরে অন্যান্য ওয়ারিসের অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রসঙ্গটি নিম্নোক্ত আয়াতে শেষ করা হয়েছে:
وَصِيَّةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ
“বস্তুত এটা আল্লাহ তাআলারই নির্দেশ এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও পরম ধৈর্য্যশীল” (সূরা নিসা: ১২)
কোন সব মহিলার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক জায়েয এবং কোন সব মহিলার সাথে জায়েয নয়- সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান দেওয়ার পর বলা হয়েছে:
(আরবীঁ***)
“এটা আল্লাহর বিধান যা মেনে চলা তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে” (সূরা নিসা: ২৪)।
তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর অধিকার সমূহ নির্ধারণের পর মহান আল্লাহ বলেন:
وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
“ বস্তুত এটা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা, তা লংঘন কর না। যারা আল্লাহ নির্ধারিত সীমা লংঘন করে তারাই যালেম” (সূরা বাকারা: ২২৯)।
আমানত ও ন্যায় বিচার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ
“মুসলমানগণ! আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন-যাবতীয় আমানত তার প্রকৃত মালিকের নিকট সোপর্দ করতে। আর তোমরা যখন লোকদের মধ্যে (কোন বিষয়ে) ফয়সালা করবে তখন ইনসাফের সাথে করবে” ( সূরা নিসা: ৫৮)।
ধনী লোকদের সম্পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার ঘোষণা করে বলা হয়েছে:
(আরবীঁ***)
“তাদের সম্পদে গরীব ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে: (সূরা যারিয়াত: ১৯)।
মোটকথা আল্লাহর হক ও বান্দার হকের মধ্যে থেকে কোনও একটি হক সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদীস সমূহ অধ্যয়ন করলে পরিষ্কার অনুভব করা যায় যে, প্রতিটি হক (অধিকার) কেবল আল্লাহ তাআলার নির্দেশের ভিত্তিতে হক হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এবং তাঁর পক্ষ থেকেই এই হক পৌঁছে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা অধিকার সমূহ কেবল নির্ধারণই করেননি, বরং প্রত্যেক হকদারের স্থানে স্বয়ং নিজের সত্তাকে রেখেছেন, যাতে যে কোন ব্যক্তির উপর সংশ্লিষ্ট ফরয আরোপিত হলে সে যেন অনুভব করে যে, সে এই অধিকার কোন ব্যক্তিকে নয়, বরং স্বয়ং আল্লাহ তাআলাকে দিচ্ছে। ইরশাদ হচ্ছে:
(আরবীঁ***)
“তোমরা তাঁর উৎপাদন খাও যখন তা ফল ধারণ করবে এবং তাঁর হক প্রদান কর যখন এসবের ফল আহরণ করবে” ( সূরা আনআম: ১৪১)।
এখানে লক্ষ্য করুন, উৎপাদিত ফসলে নিজের বান্দাদের অংশ পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা এই অংশকে নিজের সত্তার সাথে সংযুক্ত করে এই কথা বুঝিয়ে দেন যে, তোমরা যা কিছু আমার বান্দাদের দেবে তা হবে মূলত আমার অধিকার। তা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিদান প্রদানেও তিনি নিজের জিম্মায় নিয়ে ঘোষণা করেছেন:
فَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٣٠:٣٨]
“অতএব ( হে ঈমানদার লোকেরা) আত্মীয়কে তার প্রাপ্য অধিকার পৌঁছিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরও দাও (তাদের অধিকার)। এটা উত্তম পন্থা সেই লোকদের জন্য যারা আল্লাহর সন্তোষ চায়। আর তারাই কল্যাণ লাভে সক্ষম হবে” (সূরা রূম: ৩৮)।
অর্থাৎ আপনি আল্লাহর হক আদায় করুন বা বান্দার হক তার অভিপ্রায় একই এবং তা হল আল্লাহর আনুগত্য, তাঁর সন্তোষ লাভ এবং আখেরাতে পুরষ্কার লাভের মাধ্যমে চিরস্থায়ী কৃতকার্যতা ও শান্তি লাভ। এক মুসলমান যদি তার অপর মুসলিম ভাইকে নিষ্ঠা ও মহব্বত সহকারে সালামও করে তবে এর দ্বারা কোন স্বার্থ লাভ তার অভিপ্রায় হতে পারে না, বরং আল্লাহ তাআলার একটি নির্দেশ পালনের মাধ্যমে স্বয়ং তাঁর সন্তোষ লাভই উদ্দেশ্য। সে যখন সম্পদের যাকাত পরিশোধ করে অথবা দান-খয়রাত করে তখনও তার দৃষ্টির সামনে এই একই উদ্দেশ্য বিরাজ করে। যাকাতের সামগ্রিক ব্যবস্থায় তার তো এটা জানাই থাকে না যে, তার দেওয়া অর্থের দ্বারা আল্লাহর কোন বান্দার উপকার হবে। সে তো কেবল আল্লাহর অধিকার মনে করে তা ইসলামী রাষ্ট্রের কাছে অর্পণ করে এবং সে তা আল্লাহর অভাবী বান্দাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়। হুকুকুল্লাহ ( আল্লাহর অধিকার সমূহ) ও হুকুকুল ইবাদ ( বান্দাদের অধিকার সমূহ) এর মধ্যে এটা হল সেই সম্পর্ক যার ভিত্তিতে আবু বাকর রা: যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন।
যেসব গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিল তারা অন্য সব ব্যাপারে ইসলামের অনুসারী ছিল। তারা নামায পড়ত, আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার করত। রসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিসালাতের উপর তাদের ঈমান ছিল, শুধুমাত্র নিজেদের সম্পদে আল্লাহর বান্দাদের হক আদায়ে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিল। এই ব্যাপারে অসংখ্য সাহাবী এবং স্বয়ং হযরত উমার রা:-র মত প্রবীণ, দৃঢ়চিত্ত ও দীনের মেজাজ অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম সাহাবীর পর্যন্ত এই মত ছিল যে, “আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনয়নকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মোটেই উচিত হবে না, বরং তাদেরকে সাথে নিয়ে মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া উচিত”। এই বিষয়ে হযরত আবু বাকার রা: ও উমার রা: এর মধ্যে যে বাক্য বিনিময় হয়েছিল তা থেকে এই সত্য প্রতীয়মান হয় যে, হযরত আবু বাকর রা:-র মতে আল্লাহর হক ও বান্দার হকের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না, কিন্তু হযরত উমার রা: এর মধ্যে পার্থক্য করছিলেন এবং পরিশেষে নিজের মত প্রত্যাহার করেন। হযরত আবু বাকর রা: সাহাবীদের সাথে পরামর্শ শেষে অত্যন্ত জোরালো ভাষায় বলেন: “আল্লাহর শপথ! যাকাত প্রত্যাখ্যানকারীরা যদি আমাকে একটি রশি দিতেও অস্বীকার করে যা তারা রসুলুল্লাহ সা: এর যুগে প্রদান করত, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব”।
যে হযরত উমার রা: আনহুর মতে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর মনে হচ্ছিল তিনিও উপরোক্ত বক্তব্য শুনার পর অনেকটা উত্তেজিত হয়ে সামনে অগ্রসর হলে বলেন:
“আমরা এসব লোকের বিরুদ্ধে কিভাবে অস্ত্রধারণ করতে পারি যেখানে রসুলুল্লাহ সা: সুষ্পষ্ট ভাষায় বলেছেন: লোকেরা যতক্ষণ কালিমা তায়্যিবা না বলবে ততক্ষণ আমাকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি মুখে উপরোক্ত বাক্য উচ্চারণ করবে তার জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব মুসলমানদের উপর বর্তাবে তবে তার উপর যে অধিকার প্রাপ্য হবে তা অবশ্যই তার নিকট থেকে আদায় করা হবে। কিন্তু তার নিয়াতের বিচার স্বয়ং আল্লাহ করবেন”।
কিন্তু হযরত আবু বাকর রা: তাঁর যুক্তিতে আশ্বস্ত হতে পারেন নি এবং তিনি বলেন, “আল্লাহর শপথ! আমি নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্যকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করব। কারণ যাকাত হচ্ছে সম্পদের প্রাপ্য এবং রসুলুল্লাহ সা: বলেছেন: ইসলাম গ্রহণকারী লোকদের দায়িত্বে যেসব অধিকার বর্তাবে তা সর্বাবস্থায় তাদের নিকট থেকে আদায় করে নেওয়া হবে”।
হযরত উমার রা: বলতেন: “এই জওয়াব শুনে আমার মনে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মাল যে, যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তাআলা আবু বাকর রা: এর বক্ষ প্রশস্ত করে দিয়েছেন এবং সত্য কথা তাই যা আবু বাকর রা: বলেছেন: ( মুহাম্মাদ হুসায়ন হায়কাল, আবু বাকর, উর্দু অনু: লাহোর ১৯৭৩ খৃ. পৃ. ১৩৫)।
এই ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর হুকুমে বান্দাদের যেসব অধিকার নির্ধারিত হয়েছে ইসলামে তার মর্যাদা কি এবং কিভাবে তা আল্লাহর অধিকারের অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের সমতুল্য। মহান আল্লাহর বাণী:
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
“সেই খোদাকে ভয় কর যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরষ্পরের নিকট থেকে নিজ নিজ অধিকার দাবী কর এবং আত্মীয় সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চিত জানিও, আল্লাহ তোমাদের উপর কড়া দৃষ্টি রাখছেন” (সূরা নিসা: ১)
উপরোক্ত আয়াতের পরপরই ইয়াতীম, নারী, পুরুষ, গরীব-মিসকীন, ওয়ারিস এবং আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের অধিকার সমূহের দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু সুচনাতেই বলে দেওয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তি আল্লাহর দোহাই দিয়ে নিজ নিজ অধিকার লাভ করেছে, এসব অধিকারের ব্যাপারে তিনিই তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক, তাকে ভয় কর এবং প্রাপকের অধিকার সঠিকভাবে পৌঁছে দাও, অন্যথায় আখেরাতে কঠোরভাবে গ্রেফতার করা হবে।
করযে হাসানা (যে ঋণের কোন উদ্বৃত্ত বিনিময় নেই) দান করে ঠেকায় পড়া আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করতে হবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই কর্য বান্দার পরিবর্তে নিজের সাথে সংশ্লিষ্ট করেছেন এবং সাথে সাথে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তা কয়েকগুণ বর্ধিত করে ফেরত দেবেন এবং এই উসিলায় গুনাহও মাফ করে দেবেন।
(আরবী**)
“তোমরা যদি আল্লাহকে উত্তম ঋণ (করযে হাসানা) দান কর তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন”- (সূরা তাগাবুন: ১৭)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:
(আরবী**)
“তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ ( করযে হাসান) দাও” ( সূরা মুযযাম্মিল: ২০)।
অনুরূপভাবে আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়ের ব্যাপারে লক্ষ্য করুন। কোন দুস্থ বান্দাকে আর্থিক সাহায্য প্রদানকে “ফী সাবীলিল্লাহ” (আল্লাহর পথে) ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা নিজেকে এর প্রাপক সাব্যস্ত করেন এবং সাহায্য দানকারীর সাথে উত্তম ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দেন।
“যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধনসম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তার কথা বলে বেড়ায় না এবং কষ্ট দেয় না তাদের প্রতিদান তাদের প্রভুর নিকট রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দু:খিত হবে না”- (সূরা বাকারা: ২৬২)।
এই একই কথা সূরা হাদীদের ১০ ও ১৮ নং আয়াতে, সূরা বাকারার ২৭২ নং আয়াতে এবং আরও অনেক আয়াতে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে অপর কোন ব্যক্তির সাথে মৌখিক অথবা লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তবে এ প্রতিশ্রুতি স্বয়ং আল্লাহর সাথেই অনুষ্ঠিত বলে গণ্য হয় এবং উভয় পক্ষের চুক্তির শর্তাবলী হেফাজতের ক্ষেত্রে তাদের আচরণের আল্লাহ তাআলা পর্যবেক্ষক হয়ে যান।
(আরবী**)
“এবং তোমরা আল্লাহকে তোমাদের যামিন করে শপথ দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ কর না। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন: (সূরা নাহল: ৯১)।
অনুরূপভাবে রসুলুল্লাহ সা: এর হাতে বাইআত ( আনুগত্যের শপথ) গ্রহণকে আল্লাহ তাআলা তার নিজের হাতে বাইআত হওয়া ঘোষণা করেছেন।
(আরবী**)
“যারা তোমার হাতে বাইআত হয়েছে তারা মূলত আল্লাহর কাছে বাইআত হয়েছে। তাদের হাতের উপর ছিল আল্লাহর হাত”। ( সূরা ফাতহ: ১০)।
মুফাসসির সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, “কোন ব্যক্তি যখনই দান খয়রাত ও যাকাত প্রদান করে, তা প্রাপকের হাতে পৌঁছার পূর্বেই আল্লাহর হাতে পৌঁছে যায় এবং তিনি তা প্রাপকের হাতে রাখেন। অত:পর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন। সূরা তওবা: ১০৪।
(আরবী***)
“তারা কি জানেনা যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং দান খয়রাত গ্রহণ করেন” ( ইবনে কাসীর, দুররুল মানছুর)।
এসব আয়াত অধ্যয়নে জানা যায় যে, আল্লাহর অধিকারই হোক বা বান্দার অধিকার, প্রতিটি অধিকার স্বীয় সত্তার সাথে সম্পৃক্ত করে আল্লাহ তাআলা তাকে এতটা উচ্চতর নৈতিক ও আইনগত মর্যাদা দান করেছেন যে, কোন মুসলমানের জন্য তাতে ফরযিয়াত ও গুরুত্বের দিক থেকে কোন পার্থক্য অবশিষ্ট থাকে না। যেখানেই কোন অধিকার পৌঁছে দেওয়া কারও জন্য বাধ্যতামূলক সেখানেই তা পৌঁছে দেওয়ার সময় তার সাথে স্বয়ং মহান আল্লাহর সত্তা উপস্থিত থাকেন। এই প্রসঙ্গে হাদীসসমূহও দেখা যেতে পারে।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রসুল সা: বলেন: “কিয়ামতের দিন মহামহিম আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম, তুমি আমার সেবা শুশ্রুষা করনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি কি করে আপনার সেবা শুশ্রুষা করতে পারি? আপনি তো বিশ্বলোকের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা রোগাক্রান্ত হয়েছিল? কিন্তু তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তার সেবা করলে তুমি আমাকে তার কাছেই পেতে? মহান আল্লাহ বলবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং তোমার নিকট খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। আদম সন্তান বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি কি করে আপনাকে আহার করাতে পারি, অথচ আপনি হচ্ছেন গোটা সৃষ্টিলোকের রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা খাবার চেয়েছিল? কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তাকে আহার করালে তুমি ঐ খাবার আমার নিকট পেতে? হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! আমি আপনাকে কিভাবে পান করাতে পারি, অথচ আপনি হচ্ছেন গোটা সৃষ্টিকূলের প্রতিপালক? মহান আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক পিপাসার্ত বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি যদি তাকে পান করাতে তবে সে পানি তুমি আমার কাছে পেতে” ( মুসলিম)।
যাকাত দেওয়া, ধার দেওয়া ও দান-খয়রাত করা, ক্ষুধার্তদের আহার করানো, তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো এবং কারও সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া এসবই বান্দার অধিকার। কিন্তু লক্ষ্যনীয় যে, প্রত্যেক হকদারের সাথে নিজের সত্তাকে সম্পৃক্ত করে আল্লাহ তাআলা কিভাবে সেগুলো নিজের অধিকারের আওতাভূক্ত করেছেন। প্রসিদ্ধ ফকীহ আল্লামা শাতিবী রহ: বলেছেন:
“অধিকার দুই প্রকারের: আল্লাহর অধিকার ও বান্দাদের অধিকার। যেগুলো বান্দার অধিকার সেগুলোর মধ্যে আল্লাহর অধিকারও লক্ষ্য করা যায়। আর যেসব অধিকার আমরা আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করি সেগুলোর সমস্ত কল্যাণ ও উপকারিতা বান্দাগণই লাভ করে থাকে” (শাতিবী, আল-মুত্তয়াফিকাত, কায়রো সংস্করণ, ৩ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৭)।
আমরা আরও অগ্রসর হয়ে বলতে পারি যে, সমস্ত অধিকার তো আল্লাহ তাআলারই প্রাপ্য এবং এসবই ইবাদত বন্দেগীর আওতায় এসে যায়। অবশ্য এর সমস্ত উপকারিতা (Benefits) বান্দারাই লাভ করে থাকে। মানুষ আল্লাহর অধিকার সমূহ পূরণ করে নিজেই লাভবান হয়। কারণ মানুষ আল্লাহর কোন উপকার করতে সক্ষম নয়। অন্য কথায় মহান আল্লাহর সত্তা মানুষের নিকট থেকে উপকার লাভের নয়। সে আল্লাহ পাকের যে ইবাদত করে তার মাধ্যমে সে নিজের আত্মার পরিশুদ্ধি, চরিত্র গঠন এবং মনুষ্যত্বের পূর্ণতা বিধানের আকারে নিজেই লাভবান হয় এবং সে মানুষের অধিকার পৌঁছে দিয়ে দ্বিবিধ উপায়ে উপকৃত হয়। সে অন্যের অধিকার পৌঁছিয়ে দিয়ে উন্নত চরিত্রের বাহক হওয়ার কারণে মান মর্যাদা এবং বিবেক ও অন্তরের প্রশান্তি লাভ করে, আবার আখেরাতের সাফল্য লাভ করে। অপরদিকে অধিকার আদায়কারী নিজের অধিকার লাভ করে সুখে- শান্তিতে জীবন যাপন করে, সমাজে পারষ্পরিক নিষ্ঠা ভালোবাসা, নি:স্বার্থপরতা ও সহানুভূতির সুদৃঢ় সম্পর্ক উত্তরোত্তর সবল হয় এবং এভাবে গোটা মানব সমাজ শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণের আবাসে পরিণত হয়।
এখন পরিশেষে এটাও লক্ষ্যণীয় যে, আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবীতে অধিকার সমূহের অগ্রাধিকার নির্ধারণের সাথে সাথে নিজের পরকালীন আদালতে এসব অধিকারের কি প্রাধান্য রেখেছেন। হযরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত হাদীসে রসুলুল্লাহ সা: বলেন:
“কিয়ামতের দিন আমলনামার তিনটি বিভাগ হবে। একাশেংর হিসাব আল্লাহপাক কড়ায় গন্ডায় নেবেন, একটি শব্দও বাদ দেবেন না, দ্বিতীয় অংশের বিচারে তিনি কোন পরওয়া করবেন না এবং তৃতীয় অংশের কোন কিছুই তিনি মাফ করবেন না। যে অংশের তিল পরিমাণও তিনি ক্ষমা করবেন না তা হচ্ছে শিরক (পৌত্তলিকতা)। যে অংশের বিচার অনুষ্ঠানে তিনি কৃতসংকল্প হবেন তা হচ্ছে যুলুম, যা মানুষ নিজের উপর করেছে এবং যা স্বয়ং সেই বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যেকার বিষয় ( যেমন সে নামায পড়েনি, রোযা রাখেনি ইত্যাদি)। আল্লাহ ইচ্ছা করলে কারও এ ধরণের অপরাধ ক্ষমাও করতে পারেন। কিন্তু যে অংশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশও বাদ দেওয়া হবে না তা হচ্ছে যুলুমের অপরাধ, যা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির উপর করেছে। নির্যাতিত ব্যক্তি ততক্ষণ ক্ষমা না করবে আল্লাহ পাক ততক্ষণ তা ক্ষমা করবেন না” (মুহাম্মাদ ইবনে সুলায়মান আল মাগরিবী, জুমউল ফাওয়াইদ, ২ খন্ড, পৃ.২৫৭, লায়ালপুর সংষ্করণ, মুসনাদে বাযযায এর বরাতে)।
উক্ত হাদীস মুসনাদে আহমাদ ও মুসতাদরাক হাকেম- এও হযরত আয়েশা রা:-র সূত্রে বর্ণিত আছে। হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিকহ গ্রন্থ আল হিদায়ায় হজ্জ সম্পর্কিত অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে:
“হজ্জ তখনই ফরয হয় যখন কোন ব্যক্তির নিকট হজ্জের পূর্ণ সফরকালীন সময়ের জন্য পরিবার-পরিজনের ব্যয়ভার বহনের মত সম্পদ তার হাতে থাকে। কারণ:
(আরবী***)
“বান্দাদের অধিকার অগ্রগণ্য আল্লাহর অধিকারের তুলনায়, আর এই অগ্রাধিকার আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক”। ( আল-মারগীনানী, আল-হিদায়া, করাচী সংষ্করণ, কিতাবুল হজ্জ, ১ খ. পৃ. ২৩৩)।
এখন প্রশ্ন হল, আল্লাহ পাক নিজের অধিকারের উপর বান্দাদের অধিকারের কেন প্রাধান্য দিলেন। তার কারণ এই যে, বান্দাহ আল্লাহর অধিকার আদায় না করলে তাতে তাঁর কোন ক্ষতি নেই, ক্ষতি বান্দারই। কিন্তু সে যখন অপর বান্দার কোন অধিকার আদায় না করে তখন সে তার একটি স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এতে বাস্তবিকই তার ক্ষতি হয় এবং এটাই হচ্ছে সেই যুলুম যা আল্লাহর নিকট ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, যতক্ষণ ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ তাকে ক্ষমা করে দিতে সম্মত না হবে আল্লাহ তার অপরাধের শাস্তি মওকুফ করবেন না।
এ হচ্ছে ইসলামে অধিকারের ইতিহাস এবং এর আইনগত ও নৈতিক মর্যাদা। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে অধিকারের এই ধারণা মুসলমানদের দৃষ্টি থেকে অন্তর্নিহিত হয়ে গেছে এবং তারা আল্লাহ নির্ধারিত অধিকারকে আইনগত ও নৈতিক এবং আল্লাহর অধিকার ও বান্দার অধিকার ইত্যাদি শ্রেণীতে বিভক্ত করে কতগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ এবং কতগুলোকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ সাব্যস্ত করে নিয়েছে যার দৃষ্টান্ত প্রথম যুগের মুসলমানদের মধ্যে পাওয়া যায় না। আনুগত্যের ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের চরিত্রে আচরণের এক অতুলনীয় ঐক্য লক্ষ্য করা যায়। তাঁরা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সম্পর্কে যতটা চিন্তা করতেন ঠিক তদ্রুপ চিন্তাই করতেন ওজন পরিমাপে বিশ্বস্ততা, কথা ও ওয়াদা রক্ষা করা, সাহায্যের মুখাপেক্ষী ভাইদের সহযোগিতা এবং জীবনের অন্যান্য ব্যাপারে। তাদের ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন খানায় বিভক্ত ছিল না, বরং ছিল পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের উজ্জল নমুনা। ইমাম শাতিবী আনুগত্যের এই প্রাণশক্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন:
“মুসতাহাব, সুন্নাত, ফরয, এবং মাকরূহ ও হারামের যে শ্রেণী বিভাগ রয়েছে, আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও অন্তরাত্মার পরিশুদ্ধির দিক থেকে এই শ্রেণীবিভাগের কোন গুরুত্ব নাই। কারণ আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মিক পরিশুদ্ধি, এই ব্যাপারে যা সহায়ক সেটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ, তা ফরযই হোক অথবা মুসতাহাব। আর যে জিনিস ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায় তা নিষিদ্ধ, চাই তা হারামই হোক অথবা মাকরূহ”। ( আল-মাওয়াফিকাত, পৃ.২৪১।
আল্লাহর একত্বে ঈমানের প্রাণশক্তি এই যে, “প্রতিটি কাজ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় এবং একান্তই আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে করতে হবে”। অধিকার সমূহের ক্ষেত্রেও এই একই নীতি ক্রিয়াশীল রয়েছে, তদনুযায়ী প্রতিটি “অধিকার” নির্ধারণ, কার্যকরণ ও ফলাফলের প্রতিটি স্তরে আল্লাহর সত্তার সাথে সম্পৃক্ত।