জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

ইসলামে মানবাধিকার

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. পেশ কালাম
  2. অনুবাদকের কথা
  3. ভূমিকা
  4. মৌলিক মানবাধিকারের অর্থ
  5. মৌলিক অধিকারের ইতিহাস
  6. অধিকারের পাশ্চাত্য ধারণা
  7. অধিকারের সমাজতান্ত্রিক ধারণা
  8. মৌলিক অধিকারের রক্ষাকবচ
  9. মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র
  10. ব্যর্থতার কারণসমূহ
  11. মৌলিক অধিকারের ইসলামী ধারণা
    1. ঐতিহাসিক দিক
    2. আইনগত দিক
    3. নৈতিক দিক
    4. সমস্ত অধিকার আল্লাহর
  12. ইসলামে মৌলিক অধিকারের গ্যারান্টিসমূহ
    1. ক. সার্বভৌমত্বের ধারণার পরিশুদ্ধি
      1. ১. সার্বভৌমত্বের ধারণা
      2. ২. আমানতের ধারণা
      3. ৩. দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রাধান্য:
      4. ৪. উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ঐক্য
      5. ৫. ব্যক্তির মর্যাদা
    2. খ. নেতৃত্বের পরিশুদ্ধি
      1. ১. তাকওয়া
      2. ২. যোগ্যতা
      3. ৩. আদল
      4. ৪. বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা
    3. গ. ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য স্থাপন
      1. ১. প্রতিনিধিত্বমূলক কর্তৃত্ব
      2. ২. স্থায়ী সংবিধান
      3. ৩. চিরন্তন শাসনের স্বরূপ
      4. ৪. বিচার বিভাগের প্রাধান্য
      5. ৫. আনুগত্যের সীমা
      6. ৬. পারষ্পরিক পরামর্শের বাধ্যবাধকতা
      7. ৭. উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকারের বাধ্যবাধকতা
    4. ঘ. নেতৃত্বের জবাবদিহি
      1. ১. আখেরাতের জবাবদিহি
      2. ২. আদালতের মাধ্যমে জবাবদিহি
      3. ৩. শূরার ( পরামর্শ সভা) মাধ্যমে জবাবদিহি
      4. ৪. জনগণের কাছে জবাবদিহি
      5. ইসলামী ব্যবস্থা কি মাত্র ত্রিশ বছর প্রতিষ্ঠিত ছিল?
  13. ইসলাম প্রদত্ত মৌলিক অধিকার
    1. ১. জীবনের নিরাপত্তা
    2. ২. মালিকানার নিরাপত্তা
    3. ৩. মান-ইজ্জতের নিরাপত্তা
    4. ৪. ব্যক্তিগত জীবনের নিরাপত্তা
    5. ৫.ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সংরক্ষণ
    6. ৬. একজনের কার্যকলাপের জন্য অপরজন দায়ী নয়
    7. ৭. অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার
    8. ৮. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
    9. ৯. বিবেক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা
    10. ১০. সমান অধিকার
    11. ১১. ন্যায় বিচার লাভের অধিকার
    12. ১২. অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অধিকার
    13. ১৩. পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার অধিকার
    14. ১৪. সংগঠন ও সভা -সমাবেশ করার অধিকার
    15. ১৫. রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার
    16. ১৬.স্থানান্তর গমন ও বসবাসের স্বাধীনতা
    17. ১৭. পারিতোষিক ও বিনিময় লাভের অধিকার
  14. মুসলমানদের বিশেষ অধিকার
  15. যিম্মীদের বিশেষ অধিকার
  16. পরিশিষ্ট
    1. বিদায় হজ্জের ভাষণ
  17. গ্রন্থপঞ্জী

ক. সার্বভৌমত্বের ধারণার পরিশুদ্ধি

১. সার্বভৌমত্বের ধারণা

সার্বভৌমত্বের ধারণার পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলাম তার সংস্কার কর্মসূচীর সূচনা করেছে। “আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র তোমাদের সৃষ্টিকর্তা, অধিকর্তা, রিযিকদাতা ও পালনকর্তাই নন, বরং তিনি তোমাদের শাসক ও বিধানদাতাও বটে”। কুরআনের এই ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে মানবীয় সার্বভৌমত্বের মূলোচ্ছেদ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলাকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মেনে নেওয়ার তাৎপর্য এই যে, মানুষের মধ্যে শাসক ও শাসিতের শ্রেণী বিভাগ চিরতরে খতম হয়ে গেল। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে উচ্চতম পদে অধিষ্টিত শাসনকর্তা পর্যন্ত সকলেই সমান মর্যাদার অধিকারী হিসাবে স্বীকৃত হল। মানুষ তার মতই অন্য যে কোন মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করল এবং যারা তাদের রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের পৃষ্ঠপোষক হলেন তারা আহকামুল হাকেমীন-রাজাধিরাজ আল্লাহর সামনে জবাবদিহি এবং আখেরাতের শাস্তির ভয়ে পরাভূত হয়ে নিজেদের আনুগত্য করানোর পরিবর্তে স্বয়ং কুরআন ও সুন্নাতের পথের অনুসারী হল। সার্বভৌমত্বের এই ধারণার অধীনে না থাকবে কোন মানুষের পক্ষে একনায়কত্বের পথে পা বাড়ানোর কোন সম্ভাবনা, আর না নাগরিকদের ঘাড় এতটা নরম হতে পারে যে, তারা কোন একনায়কের সামনে আনগত্যের মস্তক অবনত করে দিবে। না পারবে কোন শাসক কিংবা নেতা সাধারণের অধিকার আত্মসাতের ধারণা করতে আর না জাতি কাউকে এসব অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দিতে পারে- যা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহ তাদের দান করেছেন।
সার্বভৌমত্বের এই ধারণা মানুষের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। এটা সেই সার্বভৌমত্বের ধারণার বিস্ময়কর বহি:প্রকাশ যা প্রথম খলীফা হযরত আবু বাকর সিদ্দীক রা: তার খিলাফতের বায়আত অনুষ্ঠানের পর সর্বপ্রথম ভাষণে বলেছিলেন:
“তোমাদের মধ্যকার দূর্বল ব্যক্তি আমার নিকট শক্তিশালী, যতক্ষণ না আমি তার প্রাপ্য দেওয়াতে পারি। ‍আর তোমাদের মধ্যকার সবল ব্যক্তি আমার নিকটে দূর্বল যতক্ষণ না তার থেকে তার নিকট প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে পারি” ( মুহাম্মাদ হুসায়ন হায়কল, আবু বাকর রা:, উর্দু অনু: লাহোর ১৯৭৩ খৃ:, পৃ. ৮৬)।
এতো ছিল মানবাধিকারের বিষয়। এর যথার্থ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের দায়িত্বানুভূতি তাঁকে তাঁর সোয়া দুই বছরের খিলাফতকালে “ক্ষমতা ও আরাম আয়েশের স্বাদ” কতটা আস্বাদন করার সুযোগ দিয়েছিল! এই প্রসঙ্গে মৃত্যুশয্যায় অত্যন্ত বিষন্ন ভঙ্গীতে তিনি বলেন:
“হায়! যদি আমি বনু সায়েদার দিন খিলাফতের দায়িত্বভার উমার রা: অথবা আবু উবায়দার উপর অর্পণ করতাম। তাদের মধ্যে কেউ যদি শাসক হত আর আমি তার উযীর হতাম” ( ঐ, পৃ. ৪৫৪)।
তার অন্তিম উপদেশের মধ্যে অন্যান্য বিষয় ছাড়াও নিম্নোক্ত পথনির্দেশনাও অন্তর্ভূক্ত ছিল:
“আমি আমার খিলাফতকালে বায়তুল মাল থেকে যে ভাতা গ্রহণ করেছি তা ফেরত দিবে এবং এই উদ্দেশ্যে আমার অমুক জমি বিক্রি করে তা থেকে লব্ধ অর্থ বায়তুল মালে জমা দিবে” ( ঐ, পৃ. ৪৫৫)
সুতরাং তার অন্তিম উপদেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হযরত উমার রা: ভূমিখন্ড বিক্রি করে তার মূল্য বাবদ প্রাপ্ত অর্থ বায়তুল মালে জমা করিয়ে দেন। হযরত আবু বাকর সিদ্দীক রা: তাঁর দাফন-কাফন সম্পর্কে অসীয়ত করলেন যে, তাঁকে যেন সেই দুই প্রস্থ কাপড়ে কাফন পরানো হয় যা তিনি সাধারণত পরিধান করতেন। কেননা “ নতুন বস্ত্র পরিধানের উপযুক্ত হকদার হল জীবিত ব্যক্তি” ( ঐ, পৃ. ৪৫৭)।
যেখানে মানুষের অধিকার প্রসঙ্গে এই দৃঢ় সংকল্প ও দায়িত্বানুভূতি এবং স্বয়ং নিজের অধিকারের বেলায় ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কোরবানীর এই আবেগ-অনুভূতি কার্যকর রয়েছে সেখানে স্বৈরাচারী এক নায়কত্বের সুযোগ কোথায়!
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমার রা: খিলাফতের আসনে অধিষ্টিত হওয়ার পর উদ্বোধনী ভাষণে বলেন:
“আমি যদি জানতাম যে, খিলাফতের এই গুরু দায়িত্ব বহন করার মত আমি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি আছে তাহলে এই পদ গ্রহণ করার চাইতে আমার শিরচ্ছেদ করাকে অধিক শ্রেয় মনে করতাম” (তানতাবী, উমার ইবনুল খাত্তাব, উর্দু অনু: আব্দুস সামাদ সারিম, লাহোর ১৯৭১ খৃ. পৃ. ৭০)।
এতো ছিল “ক্ষমতা লাভের আকাংখার” বিষয়। এবার অধিকার পূরণের ব্যাপারটি লক্ষণীয়:
“হে লোক সকল! আমি তোমাদের যাবতীয় বিষয়ের প্রতিনিধিত্বমূলক উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, এখন আমার কঠোরতা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অবশ্য যালিম ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে তা পূর্ববত শক্তিশালী থাকবে। তবে যারা ন্যায়পরায়ণ ও পরহেযগার তাদের প্রতি আমি অত্যন্ত কোমল ও বিনয়ী। কাউকে আমি কারো উপর অত্যাচার করতে দেব না যতক্ষণ না আমি তার এক গন্ডদেশ ভূপাতিত করে অন্য গন্ডদেশে আমার পা রাখব। অবশেষে সে সত্য ন্যায়ের সামনে মাথা নত করে দেবে। এই কঠোরতা সত্ত্বেও আমি আমার গন্ডদেশ বিশুদ্ধচিত্ত ও ন্যায়পরায়ন লোকদের জন্য ভূলুণ্ঠিত করব” ( ঐ, পৃ. ৭৪)।
পরিশেষে ক্ষমতার কল্যাণ সবিস্তারে লক্ষ্যণীয়! শাহাদাতের সময় খলীফা তাঁর পুত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আব্দুল্লাহ! আমার উপর কত ঋণ আছে দেখতো”। হিসাব করে দেখা গেল তাঁর ঋণের পরিমাণ প্রায় আশি হাজার দিরহাম। তিনি বললেন, “যদি উমারের পারিবারিক সম্পদ দ্বারা তা পরিশোধ করতে পার তাহলে পরিশোধ করে দেবে, অন্যথায় আদী গোত্রের নিকট আবেদন করবে। এতেও যদি ঋণ পরিশোধ না হয় তবে কুরাইশদের নিকট আবেদন করবে। এদের ছাড়া অন্য কারো নিকট চাইবে না”।
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা: বললেন, “বায়তুল মাল থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করে দাও না কেন?
হযরত উমার রা: বললেন, আল্লাহ পানাহ! আমার মৃত্যুর পর তোমরা ও তোমাদের বন্ধুরা যেন এ কথা বলতে না পারে যে, আমরা নিজেদের অংশ উমারের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। তোমরা এভাবে আমার উপর বোঝা চাপাবে এবং এমন বিপদে নিক্ষেপ করবে যে, আল্লাহ যদি নিষ্কৃতি দেন তবেই মুক্তি পাব” ( ঐ, পৃ. ৫৫৬)।
এই গৌরবময় কীর্তিকলাপের মূল উপাদান কি ছিল? এতো ছিল সেই আখেরাত বিশ্বাস ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে জবাবদিহির অনুভূতি। শেষ নি:শ্বাসের মুহুর্ত, অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং ভয়ে আতংকে থরথর করে কাঁপছিলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: শান্তনা দিলে তিনি বলেন, “আল্লাহর শপথ! যদি আমার কাছে পৃথিবীপূর্ণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে আল্লাহর শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পূর্বেই তা উৎসর্গ করে দিতাম। (ঐ, পৃ. ৫৫২)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: তাঁর খিলাফতকালে প্রশংসা করলে তদুত্তরে তিনি বলেন, “আপনি কি আমার খিলাফত ও নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছেন? আমি রসুলুল্লাহ সা: এর পবিত্র সাহচর্যে থাকাকালে তিনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। হযরত আবু বাকর রা: এর সাথে থাকাকালে তাঁর ওফাত পর্যন্ত তাঁর অনুগত ছিলাম। তোমাদের এই খিলাফত ও নেতৃত্ব সম্পর্কে আমি আশংকাবোধ করছি” (ঐ. পৃ. ৫৫৪)।
এতো ছিল সেই আচরণ যা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর ঈমানের ভিত্তিতে গড়ে উঠে এবং শাসকবর্গকে মানবতার জন্য অভিশাপের পরিবর্তে দয়া ও অনুগ্রহের উৎস করে পরিপূর্ণভাবে একনায়কত্বের দ্বার চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়।

২. আমানতের ধারণা

ইসলামী রাষ্ট্রে মানবাধিকারের দ্বিতীয় বড় হেফাজতকারী হচ্ছে সরকা। সরকার সম্বন্ধে ইসলামের ধারণা এই যে, তা একটি আমানত এবং এর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি (প্রেসিডেন্ট/ প্রধানমন্ত্রী) হলে আমীন, অর্থাৎ আমানতদার। আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার এই কথা ও স্বীকারোক্তির পরে নিম্নোক্ত বাণী:
(আরবী***)
অর্থ: হে রসূল! বলুন, আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে নিবেদিত” (সূরা আনআম: ৬২) এবং
( আরবী***)
“আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ খরিদ করেছেন জান্নাতের বিনিময়ে” ( সূরা তাওবা :১১১) দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলমানের প্রতিটি জিনিস আল্লাহ প্রদত্ত একটি পবিত্র আমানত হিসাবে পরিগণিত। আর সে তার স্বাধীন ইচ্ছাও বল্গাহীন এখতিয়ারের সাহায্যে নয়, বরং প্রকৃত মালিকের মর্জি এবং তাঁর দেয়া পথনির্দেশ মাফিক ব্যবহার করতে বাধ্য হয়ে গিয়েছে। এটা হচ্ছে সেই আমানতের ধারণার অনিবার্য পরিণতি যে, কোন ব্যক্তি যখন অন্য ব্যক্তির উপর যুলুম -নির্যাতন করে তখন আল্লাহ তাআলা তাকে “নফসের খেয়ানতের” অপরাধী সাব্যস্ত করেন। সুতরাং বনী যাফর গোত্রের তু’মা ইবনে উবাইরিক্ব যখন এক ইহুদীর উপর বর্ম চুরির মিথ্যা অপবাদ আরোপ করল তখন মহানবী সা: কে সম্বোধন করে নাযিল হল:
“যারা নিজেদের প্রতারিত করে তাদের অনুকূলে বাদ-বিসম্বাদ কর না” (সূরা নিসা: ১০৭)।
বান্দা যে জীবন তার প্রভুর হাতে বিক্রি করেছে সে যদি তার অপব্যাবহার করে তাহলে সে যেন আমানতের খেয়ানত করল। নফসের আমানতের দাবী এই যে, বান্দা সদা সত্য কথা বলবে এবং ন্যায়পরায়ণতার পথ অবলম্বন করবে। মিথ্যাচার, প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির দ্বারা অন্য কারো ক্ষতি হয় না, বরং এই অপরাধে অপরাধীই অধিকতর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কেননা সে তার প্রকৃত মালিকের দৃষ্টিতে খেয়ানতকারী প্রতারক হিসাবে গণ্য হয় এবং তাঁর আদালতে কঠিন শাস্তির যোগ্য বিবেচিত হয়। যুলুমের এই বাস্তব পরিণতির প্রতি ইশারা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
(আরবী***)
অর্থ: “যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘন করে সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে” ( সূরা তালাক:১)।
অর্থাৎ যালিমের যুলুমের প্রথম লক্ষ্যবস্তু হয় সে নিজেই। তার যুলুমের দ্বারা অন্য কারো ক্ষতি হোক বা না হোক, তা তার নিজের ধ্বংসের অনিবার্য কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমানতের এই ধারণার প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক ব্যক্তির উপরই আমানতের পরিমাণ মাফিক দায়িত্ব ও জবাবদিহি অর্পিত হয়। যার কাছে যে পরিমাণ ধন -দৌলত, অর্থকড়ি, বিষয়-সম্পত্তি, উপায়-উপকরণ এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বর্তমান আছে তাকে ঐ অনুপাতে তার প্রভুর ‍সামনে আপন কৃতকর্মের জবাবদিহি করতে হবে। খোলাফায়ে রাশেদীন রা: ও সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে আমানতের এই ধারণার পরিপূর্ণ অনুভূতি ও চেতনা বিদ্যমান ছিল। এ জন্যই তাঁরা কোন দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণের ক্ষেত্রে পেছনে থাকতেন এবং যখন জাতির দাবী কিংবা শাসকের নির্দেশে তারা কোন পদে সমাসীন হতে তখন তার কর্তব্য পুরোপুরি আদায় করতেন। তাদের মধ্যে জবাবদিহির ভয় এতটা ছিল যে, সমাজে তাদের চাইতে অধিকতর খোদাভীরু আর কাউকে পাওয়া যেত না।
হযরত আবু বাকর রা: বলেছেন: “যিনি শাসক হবেন তাকে সর্বাপেক্ষা কঠিন হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। তিনি সর্বাপেক্ষা কঠিন শাস্তির ভয়ে শংকিত থাকবেন। আর যে ব্যক্তি শাসক নয় তাকে সহজতর হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। তার সহজতর হিসাবের ভয় থাকবে। কেননা মুসলমানদের উপর যুলুম নির্যাতনের সর্বাপেক্ষা বেশী সুযোগ ঘটে শাসকদের বেলায় এবং যারা মুসলমানদের উপর যুলুম করে তারা প্রকারান্তরে আল্লাহর সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে” ( ঐ, খন্ড, হাদীস ২৫১২)
হযরত উমার ফারুক রা:-র মধ্যে যখন আমানতের দায়িত্বানুভূতি কঠিনভাবে জাগ্রত হত তখন তিনি যমীন থেকে মাটি উঠিয়ে তা মুঠোর মধ্যে ঘর্ষণ করে বলতেন, “হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম, বরং যদি কিছুই না হতাম। হায়! আমার জননী যদি আমাকে প্রসবই না করতেন”। ( ঐ, ৬ খন্ড, বাব ফাদাইল আল ফারুক)।
হযরত আবু বাকর রা: হযরত উসমান রা: ও হযরত আলী রা:-র অবস্থাও তদ্রুপ ছিল। একবার হযরত উমার ইবনে আব্দুল আযীয রহ: সারা রাত জায়নামাযে বসে কাঁদতে থাকেন। সকালবেলা তাঁর স্ত্রী এই অস্বাভাবিক দুশ্চিন্তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন: “আমি নিজেকে এই উম্মাতের সাদা কালো সকলের যিম্মাদার হিসেবে পেলাম। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসহায় পথিক, নি:স্ব ভিখারী, অভাবী দারিদ্র ক্লিষ্ট মানুষ, মযলুম ও নির্যাতিত বন্দী এবং এই পর্যায়ের অবহেলিত মানুষের কথা এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ে গেল। আমি অনুভব করলাম যে, আল্লাহ তাআলা এদের সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং হযরত মুহাম্মাদ সা: এদের পক্ষে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করবেন। আমার ভয় হচ্ছে যে, আল্রাহর সামনে আমার কোন জোর খাটবে না এবং মহানবী সা: কে কোন যুক্তি বলেই আমি আশ্বস্ত করতে পারব না। এ কারণে আমার মন কেঁপে উঠেছে এবং নিজের সম্পর্কে আমি বড়ই শংকিত‘( ইমাম আবু ইউসুফ, কিতাবুল খিরাজ, উর্দু অনু: করাচী, ১৯৬৬ খৃ. পৃ: ১৪০।
একজন মুসলামনের জন্য এমনিতেই তার জান মাল এবং তার কর্তৃত্বাধীন প্রতিটি জিনিস আল্লাহর আমানত, কিন্তু খেলাফত ও রাজকার্যের ক্ষেত্রে তো বিশেষ করে “আমানত” শব্দটি একটি রাজনৈতিক পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। হযরত আবু যার গিফারী রা: একবার আকাংখা ব্যক্ত করলেন, আমাকে কোন এলাকার আমীর (শাসক) নিয়োগ করা হোক। তখন মহানবী সা: ইরশাদ করেন: “তুমি তো দূর্বল প্রকৃতির মানুষ এবং প্রশাসন একটি আমানত। কিয়ামতের দিন তা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। তবে যে ব্যক্তি এর যোগ্যতা রাখে এবং ‍তা গ্রহণ করে এতদ সম্পর্কিত সমস্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করতে পারে তার জন্য কোন লজ্জা ও অনুতাপের আশংকা নেই” ( ঐ, পৃষ্ঠা: ১২০)।
অনুরূপভাবে তিনি অন্যত্র বলেছেন: “যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন বিষয়ে এমন ব্যক্তিকে গভর্ণর বা শাসক নিয়োগ করল যার তুলনায় অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন ও উত্তম মুসলমান বর্তমানে রয়েছে তাহলে সে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল” ( ইমাম ইবনে তাইমিয়া, সিয়াসাতে শারীআ, উর্দূ অনু. পৃ. ৮৫, কালাম কোম্পানী, করাচী)।
অপর হাদীসে রসুলে করীম সা: ইরশাদ করেন: “যখন আমানত ধ্বংস হতে দেখবে তখন তোমরা কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে। আরয করা হল, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমানত ধ্বংসের অর্থ কি? তিনি বলেন: যখন নেতৃত্ব ও রাষ্ঠ্রীয় ক্ষমতা অযোগ্যদের উপর অর্পণ করা হবে তখন তোমরা কিয়ামতের অপেক্ষা করবে” ( হযরত আবু হুরায়রা রা: সনদে বুখারী)।
আমানতের এই ধারণা মানবাধিকার রক্ষা এবং এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং অধিকার খর্ব করার পথে একটি বিরাট প্রতিবন্ধক ( Deterent).

৩. দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রাধান্য:

ইসলাম তার চিন্তা ও কর্মের ব্যবস্থায় অধিকার অর্জনের পরিবর্তে ফরয অর্থাৎ অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদনের প্রতি ‍অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। প্রকৃতপক্ষে অধিকারের প্রসঙ্গটি কর্তব্যের তুলনায় মর্যাদার মাপকাঠিতে দ্বিতীয় স্তরের। অপরিহার্য কর্তব্য সঠিকভাবে পালিত হলে অধিকারের প্রশ্ন উঠতেই পারে না। যখনই ফরয কার্য সম্পাদন স্থগিত হয় তখনই অধিকারের প্রশ্ন উঠে। যার উপর কোন দায়িত্ব অর্পিত হয় সে দানকারীর ( Giver) পর্যায়ভুক্ত এবং যার অধিকার প্রাপ্য হয় সে আদায়কারীর (Recepient) পর্যায়ভূক্ত। এখন যদি ফরয (দায়িত্ব ও কর্তব্য) যথাযথভাবে পালিত হতে থাকে তবে অধিকার আদায়ের দাবী ( Claim) উত্থাপনের প্রয়োজনই হয় না।
পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যেহেতু রাষ্ট্র স্বয়ং সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, তাই সে নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী। যাবতীয় ক্ষমতা, এখতিয়ার ও কর্তৃত্বের মালিক সে নিজেই। সে (রাষ্ট্র) কোথাও কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের আকারে একই বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত, আবার কোথাও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের (Division of power) আওতায় আমেরিকার ন্যায় রাষ্ট্রসমূহে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগে বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু যাই হোক নিরংকুশ এখতিয়ার (Final authority) রাষ্ট্রের হাতেই রয়ে গেছে। এই অবস্থার যৌক্তিক পরিণতি এই দাড়িয়েছে যে, নাগরিকদের ভূমিকা আত্মরক্ষামূলক হয়ে গেছে। তাদের নিরাপত্তার চিন্তা সেখানে অধিকারকে অস্বাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। আর দায়িত্ব ও কর্তব্যের উপর এ জন্য তাগিদ করা হয়নি যে, কে তা আদায় করিয়ে নেবে? এমন কোন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী কেউ আছে কি যে রাষ্ট্রকে কর্তব্য পালনে বাধ্য করতে পারে? রাষ্ট্র যদি কোন অধিকার হরণ করে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সর্বশক্তি নিয়োগ করে বড়জোর বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস কিংবা সীমিত করার শক্তি থেকে বঞ্চিত এবং নিজের যাবতীয় এখতিয়ার সর্বশক্তিমান আল্লাহর বিধান ও তাঁর নির্ধারিত সীমা অনুযায়ী ব্যবহার ও প্রয়োগ করতে বাধ্য, তাই এখানে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপর সার্বিকভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।
কুরআনুল করীম মানব সম্প্রদায়কে, বিভিন্ন জাতিকে, নবী রসুলগণকে, ব্যক্তিগণকে, কাফের, মুশরিক ও মুমিনদের যেখানে সেখানে সম্বোধন করেছে সেখানেই তাদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এবং এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ভিত্তিতেই দুনিয়া ও আখেরাতের কৃতকার্যতা ও উন্নতি লাভের অঙ্গীকার করেছে। সমগ্র কুরআনের প্রথম আয়াত থেকে সর্বশেষ আয়াত পর্যন্ত কোথাও অধিকারের প্রাপকদের সম্বোধন করে এই পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়নি যে, উঠো, ঐক্যবদ্ধ হও, গোষ্ঠীবদ্ধ হও, সংঘবদ্ধ হও এবং আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ো, নিজেদের অধিকার আদায় কর। এই ধরণের উৎসাহ প্রদানের কোন প্রয়োজন এজন্য নেই যে, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলাকারীদের ক্ষমতাচ্যূত করা, তাদের পতনের ব্যবস্থা করা এবং তাদের উপর ধ্বংসাত্মক শাস্তি অবতীর্ণ করা, পৃথিবীতে তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা, ইতিহাসের পাতা থেকে নাম নিশানা মুছে ফেলা, এবং আখেরাতে জাহান্নামের প্রজ্জলিত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করার কাজটি খোদ সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর দায়িত্বে রেখেছেন। উপরন্তু এই উৎসাহ প্রদানের আবশ্যকতা এজন্যও নাই যে, আল্লাহর প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র বা সরকার প্রকৃতপক্ষে হকদারদের অভিভাবক ও পৃষ্ঠাপোষক সরকার। তার আসল কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শক্তি কাজে লাগিয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা এবং হকদারদের অধিকার পৌঁছে দেওয়া। যাকাতদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বাকর সিদ্দীক রা:-র যুদ্ধ ঘোষণা ইসলামী রাষ্ট্রের সেই মেজাজ ও ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি। তাঁর নিকট যাকাতের হকদারগণ না কোন দাবী তুলেছিল যে, আমাদের প্রাপ্য আমাদের দেওয়ার ব্যবস্থা করুন, আর না এই প্রসঙ্গে তার সামনে কোন ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। তিনি তো আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পক্ষ থেকে এই কাজের জন্য আদিষ্ট ছিলেন যে, যার উপর কোন দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তাবে তাকে তা পালনে বাধ্য করতে হবে এবং আল্লাহ যার অধিকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা তার কাছে পৌঁছাতে হবে।
আজ যাকাতের আটজন হকদারের মধ্যে কারো এই আইনগত অধিকার নেই যে, সে আদালতে কোন যাকাতদাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তার সম্পদ থেকে নিজের অংশ আদায় করে নিবে। হকদারগণ তাদের দাবী কেবল সরকারের নিকট পেশ করতে পারে। এখন এটা তো সরকারের দায়িত্ব যে, সে বায়তুল মালের যাকাত খাত থেকে তাদের হক পূরণ করবে কিংবা বিত্তবান লোকদের থেকে যাকাত আদায় করে হকদারদের পৌঁছিয়ে দেবে।এক্ষেত্রে সরকারই হকদারদের তরফথেকে প্রকৃত দাবীদার এবং তার ‍যাবতীয় শক্তিই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন কিংবা অধিকার আদায়ের মাধ্যম।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ: সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন: “বিলায়াত ও ইমারতের ( প্রশাসনের) প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টির সেবা ও সংশোধন। মানুষ দীন ত্যাগ করলে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে এবং তাদেরকে প্রদত্ত জাগতিক নিয়ামত ও সুযোগ-সুবিধা তাদের জন্য মোটেই উপকারী ও কল্যাণকর প্রমাণিত হবে না। দুনিয়া থেকে তারা প্রকৃত প্রাপকদের মধ্যে বন্টন করা, দ্বিতীয়ত, যারা বাড়াবাড়ি করে এবং অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা” ( ঐ, পৃ. ১০৯)।
এভাবে দেখার বিষয় এই যে, যে সমাজে ইবাদত বন্দেগী, ওয়াজ- নসীহত, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, প্রচার মাধ্যম, এবং সরকারের বিভিন্ন এজেন্সী, প্রতিষ্ঠান, ও তার যাবতীয় এখতিয়ার ও উপায় উপকরণের সমিলিত শক্তি একত্র হয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপ প্রয়োগ করছে সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়টি কি পরিমাণ উত্থিত হতে পারে?

৪. উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ঐক্য

ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব লাভের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ভাষ্য হচ্ছে:
“আমরা এদেরকে (মুমিনদেরকে) পৃথিবীতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করলে তারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয়, সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে” ( সূরা হজ্জ ৪১)
মুসলিম উম্মাহর আবির্ভাবের মূখ্য উদ্দেশ্যও তাই। ইরশাদ হচ্ছে:
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
অর্থ: “তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির (সংশোধন ও পথ নির্দেশ দানের জন্য) তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান কর, অসৎ কার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ” ( সূরা আল ইমরান: ১১০)
মুসলমানদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন এবং তাদের রাষ্ট্র ও সরকারের উদ্দেশ্য একই। আর তা হচ্ছে- নিজেও ভালো কাজ করবে এবং অন্যদেরও তা করাবে, অসৎ কাজ থেকে নিজেও বিরত থাকবে এবং অন্যদেরও বিরত রাখার চেষ্ঠা করবে। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনের উদ্দেশ্য এক হওয়ার তাৎপর্য এই যে, একজন সাধারণ মুসলমান হোক কিংবা তাদের শাসক হোক, সবাই একই পথের পথিক এবং একই মনযিলের মুসাফির। সকলের গন্তব্যস্থল এক। সবাই নিজ নিজ যোগ্যতা ও সামর্থ্য মোতাবেক একই কাজ সম্পাদনে নিয়োজিত আছে। কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভ করলে সে তা সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যয় করছে। কারো শুধু দেহ প্রাণ ছাড়া আর কিছু না থাকলে সে সম্পদ নিয়েই স্বীয় উদ্দেশ্য পূরণের জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়।
যেখানে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের এই ঐক্য বিদ্যমান সেখানে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মধ্যে কলহ বিবাদ হবে কিসের জন্য? ইসলামে রাষ্ট্রপতির শাসকের মর্যাদা নয়, বরং তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবকের, নেতা ও প্রজাগণের সম্পর্ক শাসক ও শাসিতের নয়, বরং পারষ্পরিক সহযোগিতাকারীর। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
“মুমিন নর নারী একে অপরের বন্ধু; তারা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে” ( সূরা তওবা: ৭১)।
এখন কোন শাসকের সীমাতিরিক্ত ক্ষমতালিপ্সা কলহ বিবাদ ও সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করলেও সাধারণ নাগরিকদের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর এই নির্দেশ বিদ্যমান রয়েছে: “সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে তোমরা পরষ্পরের সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না” ( সূরা মাইদা: ২)
শাসক পাপাচার ও বাড়াবাড়ির দিকে অগ্রসর হলেই উম্মাত অসহযোগিতার ( Non-Cooperation) বৈধ অধিকার লাভ করবে এবং সে আনুগত্যের অধিকার হারিয়ে ফেলবে।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের এই ঐক্য শাসন কর্তৃত্বের ধারণাকে সাম্য ও ভাতৃত্বের ভাবধারায় পরিবর্তিত করে দেয়। শাসকের পদস্খলনের শাস্তি “শাসকের আনুগত্যের অধিকার হারানো” মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের একটা অত্যন্ত কার্যকর মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।

৫. ব্যক্তির মর্যাদা

মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়টি মূলত: মনুষ্যত্বের মর্যাদার বিষয়। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ প্রায়ই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং নিজের ক্ষমতা, এখতিয়ার ও উপায় উপকরণের প্রাচুর্যের প্রদর্শনীয় দেখে এই ভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন যে, তিনি যেন কোন অতি মানবীয় সত্তা এবং এমন কতগুলো উচ্চতর বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দরুন তিনি নিরংকুশ ক্ষমতা ও শাসন দন্ডের অধিকারী হয়েছেন এবং অন্যদের কাজ হচ্ছে কেবল তারই আনুগত্য করে যাওয়া। এই চিন্তাধারা যথারীতি মতবাদ ও দর্শনের রূপ ধারণ করেছে। এই চিন্তাধারাই মানবীয় রাষ্ট্রের সূচনার জন্য “ঐশ্বরিক উতপত্তি মতবাদ” (Theory of Divine Origin)রচনা করেছে। এই চিন্তাধারা থেকেই রাজা-বাদশাদের ক্ষমতা-এখতিয়ারের জন্য রাজার ঐশ্বরিক অধিকার (Divine Rights of Kings)এর পরিভাষা গড়ে তোলা হয়। এই ভ্রান্ত মতবাদই রাজার জন্য “আলমপানাহ” (জগতের আশ্রয়) ‘যিলুল্লাহ’ ( আল্লাহর প্রতিচ্ছায়া)-এর মত শেরেকী উপাধিসমূহ আবিষ্কার করিয়েছে এবং শাসক গোষ্ঠীকে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত দূত বানিয়ে সাধারণ মানুষকে অপমান ও অবমাননার সুযোগ এনে দেয়। এই ঐশ্বরিক অধিকার এবং আল্লাহর প্রতিচ্ছায়া মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাড়ায় এবং এই বিপদ থেকে নাজাত লাভের জন্য তাকে মৌলিক অধিকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে।
ইসলাম মানবতার মর্যাদার উপর অস্বাভাবিক গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং এই বিশ্ব চরাচরে আল্লাহর পরেই তাকে সর্বাধিক সম্মানিত ও মর্যাদাশীল ঘোষণা করেছে। আদি পিতা হযরত আদম আ: এর সৃষ্টির ঘটনায় পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা এই মাটির পুতুলের মধ্যে নিজের রূহ প্রাণ সঞ্চার করেন এবং তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা সিজদা করিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
(আরবী***)
অর্থ: “যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব তখন তোমরা সকলে তার সামনে সিজদাবনত হবে” ( সূরা হিজর: ২৯)।
উক্ত আয়াত থেকে এ কথাও সুষ্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহ তাআলা কুন (হও) শব্দের নির্দেশ দ্বারা যেসব ‍মাখলুক সৃষ্টি করেছেন মানুষ তাদের মধ্যে শামিল নয়, বরং সে সর্বশক্তিমান আল্লাহর এক স্বতন্ত্র ও বিশেষ সৃষ্টি। তাকে অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টির তুলনায় উত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে।
(আরবী***)
অর্থ: “আমরা মানুষকে (দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে) সুন্দরতম ‍কাঠামোয় সৃষ্টি করেছি” (সূরা তীন : ৪)
শুধু তাই নয়, বরং তাকে সম্মান ও মর্যাদা দান করা হয়েছে এবং জগতের সমস্ত নিয়ামতরাজি ও শক্তিসমূহ তার নিয়ন্ত্রণাধীন এনে তার সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
(আরবী***)
অর্থ: “আমরা আদম সন্তানদের মর্যাদাদান করেছি, জলে স্থলে তাদেরকে চলাচলের
বাহন দিয়েছি; তাদেরকে পবিত্র বস্তুর রিযিক দান করেছি এবং আমার অসংখ্য সৃষ্টির উপর তাদেরকে উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি” ( সূরা বনী ‌ইসরাঈল : ২০)
এই মহত্ত ও মর্যাদা শুধুমাত্র মানুষ হিসাবেই সে লাভ করেছে।
এতে সাদা -কালো, আরব -অনারব, প্রাচ্য-প্রতীচ্য, উঁচু-নিচুর কোন ভেদাভেদ নেই। কেননা একই আত্মা থেকে সকলের সৃষ্টি। মহানবী সা: মানুষের এই মহত্ত্ব ও মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করে তাওয়াফকালীন পবিত্র কাবা ঘরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন:
“কতই না পবিত্র তুমি! তোমার পরিবেশ কতই না মনোমুগ্ধকর, কত মহান তুমি এবং কতই না মহান তোমার মর্যাদা। যে আল্লাহর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, একজন মুসলমানের জান-মাল ও রক্তের মর্যাদা আল্লাহর নিকটে তোমার চাইতেও বেশি” (ইবনে মাজা, হাদীস নং ৩৯৩২,মুসনাদে আহমাদ)।
এতো ছিল মানব জাতির মর্যাদার একটি দিক। এবার দেখুন কুরআনুল করীম মানুষের অহংকার, দম্ভ ও গর্বের অপশক্তি নির্মূল করার জন্য, বিশেষ করে ক্ষমতা, এখতিয়ার ও উপায় উপকরণের অধিকারী ব্যক্তিবর্গের সৎপথে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য তাদেরকে নিজেদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে কিরূপ বাচনভঙ্গীতে সজাগ করে দিচ্ছে:
“মানুষের ভেবে দেখা উচিত কি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে! তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে স্ববেগে নির্গত পানি থেকে, তা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও পাঁজরের অস্থির মধ্য থেকে” (সূরা তরিক : ৫-৭)
“আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, তারপর শুক্র থেকে, অত:পর জমাট রক্তবিন্দু থেকে, অত:পর পূর্ণাকৃতি কিংবা অপূর্ণাকৃতি গোশ পিন্ড থেকে, তোমাদের সামনে আমাদের বাস্তব সত্য তুলে ধরার জন্য আমরা তা বর্ণনা করছি” (সূরা হজ্জ :৫)।
“হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করল- যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অত:পর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং সুসামঞ্জস্য করেছেন, যে আকৃতিতে চেয়েছেন তিনি তোমাকে গঠন করেছেন” ( সূরা ইনফিতার : ৬-৮)
মানব সৃষ্টির এই রহস্য উন্মোচন করার সাথে সাথে তাকে একথাও বলা হয়েছে যে,
“জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, অত:পর তোমাদেরকে আমাদের নিকটই ফিরে আসতে হবে”( সূরা আনকাবুত: ৫৭)
“তোমরা যেখানেই থাক মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ ও সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান করলেও” (সূরা নিসা: ৭৮)।
অর্থাত নিজেদের যাবতীয় মর্যাদা ও মহত্ব সত্ত্বেও এই ‍মানুষের না আছে তার জীবনের উপর নিজের কোন এখতিয়ার,আর না আছে মৃত্যুর উপর কোন আধিপত্য। অতএব গর্ব ও অহংকারের আর কি আছে?
কুরআন মজীদের বহু আয়াত এবং মহানবী সা: এর অসংখ্য হাদীসের সাহায্যে মানুষ চিন্তা চেতনার মর্মমূলে এই দুটো বাস্তবতাকে (জীবন ও মরণ) সুকৌশলে বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়েছে- যেন সে তার স্বজাতিকে মর্যাদাদানে মনোযোগী হয়, আনন্দচিত্তে তাদের অধিকার আদায় করে, অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকে এবং স্বয়ং নিজের সম্পর্কে কোন ভ্রান্তির শিকার না হয়।
এ হলো সেই মৌলিক চিন্তাধারা যা রাষ্ট্র দর্শনের পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে ইসলাম মানুষের মানসপটে অংকিত করেছে এবং ‍রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মাধ্যমে কাউকে নিজের গোলামে পরিণত করার আকাংখা অথবা কারো গোলামে পরিণত হওয়ার রুগ্ন প্রবণতা থেকে মুক্তি দিয়ে আল্লাহর বিশ্বজনীন সার্বভৌমত্বের করুণাসিক্ত ছায়ায়সাম্য ও ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে সম্মানজনক জীবন যাপনের পথ দেখিয়েছে। এখন রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের বাস্তব বিষয় সম্পর্কে ইসলামের পথ নির্দেশ ও কর্মপন্থার মূল্যায়ন করে দেখা যাক।

Page 14 of 22
Prev1...131415...22Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South