মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র
জাতীয় পর্যায়ে মৌলিক অধিকার সংরক্ষনে সংবিধানের ব্যর্থতার পর এখন দেখা যাক এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা স্বীয় উদ্দেশ্যের দিক হতে কতটা সফল হয়।
সম্মিলিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট যে মহাসনদ ঘোষণা করেছিল তা যেন এই ক্ষেত্রে ছিল মানবীয় প্রচেষ্টার সর্বোচ্চ উত্থান। ৩০ দফা সম্বলিত এই মহাসনদ। নিম্নে তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হল।
মুখবন্ধ
যেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শান্তির ভিত্তি;
যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কার্যকলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা আকাংখার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব হতে নিষ্কৃতি ভোগ করবে;
যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য না করা হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত;
যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা আবশ্যক;
যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতায় উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ;
যেহেতু সদস্য রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধীকারসমূহের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ;
যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধীকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ;
এক্ষণে, তাই সাধারণ পরিষদ সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদন্ড হিসেবে জারি করছে এই মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র
এই লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সার্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এ সকল অধিকার ও স্বাধীকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলির সার্বজনীন ও কার্য্কর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে।
ধারা-১
বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সকল মানুষই জন্মগ্রহণ করে। বুদ্ধি ও বিবেক তাদের অর্পণ করা হয়েছে এবং ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত।
ধারা-২
যে কোন প্রকার পার্থক্য যথা জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, সম্পত্তি, জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সকল অধিকার ও স্বাধিকারে স্বত্ববান।
অধিকন্তু, কোন ব্যক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসী, তা স্বাধীণ, অছিভুক্ত এলাকা, অস্বায়ত্তশাসিত বা অন্য যে কোন প্রকার সীমিত সার্বভৌমত্বের মধ্যে থাকুক না কেন, তার রাজনৈতিক, সীমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য করা চলবে না।
ধারা-৩
প্রত্যেকেরই জীবন ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে।
ধারা-৪
কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বে রাখা চলবে না; সকল প্রকার দাসপ্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকবে।
ধারা-৫
কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না।
ধারা-৬
আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার রয়েছে।
ধারা-৭
আইনের কাছে সকলেই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সকলেরই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। এই ঘোষণাপত্র লংঘনকারী কোনরূপ বৈষম্য বা এই ধরনের বৈষম্যের কোন উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সকলেরই রয়েছে।
ধারা-৮
যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয় সে সবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্য্কর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
ধারা-৯
কাউকেই খেয়াল খুশীমত গ্রেফতার, আটক বা নির্বাসন করা যাবে না।
ধারা-১০
প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যে কোন ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানী লাভের অধিকার রয়েছে।
ধারা-১১ ক. যে কেউ কোন দন্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হলে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে এমন গণ-আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্য্ন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই কোন কাজ বা ত্রুটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা চলবে না যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দন্ডযোগ্য অপরাধ গণ্য না হয়ে থাকে। আবার দন্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনকালে যতটুকু শাস্তি প্রযোজ্য ছিল তার চেয়ে অধিক শাস্তি প্রয়োগ করা চলবে না।
ধারা-১২
কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশীমত হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান ও সুনামের উপর আক্রমণ করা চলবে না।
ধারা-১৩
ক. প্রত্যেক রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে চলাচল ও বসতি স্থাপনের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই নিজ দেশসহ যে কোন দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে।
ধারা-১৪
ক. নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই অপর দেশসমূহে আশ্রয় প্রার্থনা ও ভোগ করার অধিকার রয়েছে।
খ. অরাজনৈতিক অপরাধসমূহ অথবা জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি বিরোধী কার্য্কলাপ হতে সত্যিকারভাবে উদ্ভূত নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই অধিকার প্রার্থনা করা নাও যেতে পারে।
ধারা-১৫
ক. প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না।
ধারা-১৬
ক. পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের জাতিগত, জাতীয়তা অথবা ধর্মের কারণে কোন সীমাবদ্ধতা ব্যতিরেকে বিবাহ করা ও পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে। বিবাহের ব্যাপারে, বিবাহিত অবস্থায় এবং বিবাহ-বিচ্ছেদকালে তাদের সম-অধিকার রয়েছে।
খ. কেবল বিবাহ ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রীর অবাধ ও পূর্ণ সম্মতির দ্বারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে।
গ. পরিবার হচ্ছে সমাজের স্বাভাবিক ও মৌলিক একক গোষ্ঠী; সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক এর সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
ধারা-১৭
ক. প্রত্যেকেরেই একাকী এবং অপরের সহযোগীতায় সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই তার সম্পত্তি হতে খেয়ালখুশীমত বঞ্চিত করা চলবে না।
ধারা-১৮
প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের সাথে যোগসাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনে নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করা এই স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
ধারা-১৯
প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতামত প্রকাশের স্বাধীকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যে কোন উপায়াদির মাধ্যমে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষ তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
ধারা-২০
ক. প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই কোন সংঘভুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না।
ধারা-২১
ক. প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার সকলেরই রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই নিজ দেশের সরকারী চাকুরীতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে।
গ. জনগণের ইচ্ছাই সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি হবে; এই ইচ্ছা সার্বজনীন এবং সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে এবং প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে; গোপন ব্যালট অথবা অনুরূপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ধারা-২২
সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে; প্রত্যেকেই জাতীয় প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশে অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায় করার জন্য স্বত্ববান।
ধারা-২৩
ক. প্রত্যেকেরই কাজ করার, অবাধে চাকুরী নির্বাচনের, কাজের জন্য ন্যায্য ও অনুকূল অবস্থা লাভের এবং বেকারত্ব হতে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই কোন বৈষম্য ব্যতিরেকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
গ. প্রত্যেক কর্মীর তার নিজের এবং পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এমন ন্যায্য ও অনুকূল পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনবোধে সেইসঙ্গে সামাজিক সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থাদি সংযোজিত লাভের অধিকার রয়েছে।
ঘ. প্রত্যেকেরই নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকার রয়েছে।
ধারা-২৪
প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে। কাজের সময়ের যুক্তিসংগত সীমা এবং বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
ধারা-২৫
ক. নিজ ও নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবামূলক কার্যাদির সুযোগ এবং বেকারত্ব, পীড়া, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা অনিবার্য কারণে জীবন যাপনে অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
খ. মাতৃত্ব ও শৈশব অবস্থায় প্রত্যেকে বিশেষ যত্ন ও সহায়তা লাভের অধিকারী। বৈবাহিক বন্ধনের ফলে বা বৈবাহিক বন্ধনের বাইরের জন্ম হোক না কেন, সকল শিশুই অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে।
ধারা-২৬
ক. প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে। অন্ততঃপক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ের শিক্ষা অবৈতনিক হবে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সকলের জন্য সমভাবে উন্মুক্ত থাকবে।
খ. ব্যক্তিত্ত্বের পূর্ণ বিকাশ এবং মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরিচালিত হবে। সমঝোতা, সহিষ্ঞুতা ও সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধুত্ব উন্নয়ন এবং শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করবে।
গ. যে প্রকার শিক্ষা তাদের সন্তানদের দেওয়া হবে তা পূর্ব হতে বেছে নেওয়ার অধিকার পিতামাতার রয়েছে।
ধারা-২৭
ক. প্রত্যেকেরই গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশগ্রহণ, শিল্পকলা চর্চা করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও তার সুফলসমূহের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান, সাহিত্য অথবা শিল্পকলা ভিত্তিক সৃজনশীল কাজ হতে উদ্ভূত নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থসমূহ রক্ষণের অধিকার রয়েছে।
ধারা-২৮
প্রত্যেকেরই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে।
ধারা-২৯
ক. প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি কর্তব্যাদি রয়েছে কেবল যার অন্তর্গত হয়েই তার ব্যক্তিত্ত্বের অবাধ ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব।
খ. স্বীয় অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ প্রয়োগকালে প্রত্যেকেরই শুধু ঐ ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকবে যা কেবল অপরের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহের যথার্থ স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নৈতিকতা, গণশৃংখলা এবং সাধারণ কল্যাণের ন্যায্য প্রয়োজনসমূহ মিটানোর উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা নিরূপিত হয়।
গ. এই সকল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগকালে কোন ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি লংঘন করা চলবে না।
ধারা-৩০
এই ঘোষণায় উল্লেখিত কোন বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে, এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোন অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তি বিশেষের আত্মনিয়োগের অধিকার রয়েছে। (সনদের বাংলা অনুবাদ জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র ঢাকা-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত)।
এই সনদে যেসব অধিকার ও স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেগুলোকে পরে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। একটি সূচীতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ এবং অপরটিতে নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকারসমূহ একত্র করা হয়। সাধারণ পরিষদ ১৯৬৬ সালে এই দুটি চুক্তিপত্র অনুমোদন করে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উপর ছেড়ে দেয় যে, যে সব রাষ্ট্র স্বেচ্ছামূলকভাবে এসব অধিকার স্বীকার করে তারা এই দুটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এক্ষেত্রে আরও কিছু কাজ করেছে। তা ১৯৫৯ সালে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে এবং ১৯৬৩ সালে বর্ণবৈষম্য বিলোপের জন্য একটি ঘোষণা জারি করে। সাধারণ পরিষদ ১৯৪৮ সালে গণহত্যার বিলোপ সাধনের জন্য, ১৯৫১ সালে উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তার জন্য, ১৯৫২ সালে নারীদের রাজনৈতিক অধিকারের জন্য, ১৯৫৭ সালে বিবাহিত নারীদের জন্য, ১৯৬১ সালে দাসত্ব প্রথার উচ্ছেদ ও বিলোপ সাধনের জন্য এবং ১৯৬৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের সমালোচনার জন্য বিভিন্ন চুক্তিপত্র ও প্রস্তাব পাস করে।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা(ILO), ইউনেসকো(UNESCO), আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সংস্থা(IRO) এবং উদ্বাস্তু হাই কমিশনও নিজ নিজ কর্মপরিসরে মানবাধিকারের চিহ্নিতকরণ ও তার হেফাজতের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
কিন্তু মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্র এবং জাতিসংঘ ও তার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের এই গৌরবজনক প্রচেষ্টার ফল কি পাওয়া গেছে? বাস্তবিকই এই ঘোষণাপত্র কি মানবজাতিকে নির্যাতন, উৎপীড়ন, দমন, স্বৈরাচার, একনায়কত্ব ও ফ্যাসিবাদের হিংস্র ছোবল হতে মুক্তিদান করে স্বাধীন পরিবেশে নিঃশ্বাস নেওয়ার ও নিজেদের অধিকার ভোগের সুযোগ করে দিতে পেরেছে? এই ঘোষণাপত্রের বাস্তব অবস্থা এবং জাতিসংঘের অসহায় অবস্থার কথা স্বয়ং পাশ্চাত্য চিন্তাবিদ ও আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞের মুখেই শুনুনঃ
মানবাধিকার কমিশন ১৯৪৭ খৃস্টাব্দে ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিবেদন করে যার মধ্যে পূর্বেকার চিন্তাধারাকে সম্পূর্ণ উল্টে দেওয়া হয়েছে। তাতে এই সাধারণ নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে যে, “কমিশন স্বীকার করে যে, মানবাধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট অভিযোগসমূহের ক্ষেত্রে কোন প্রকারের কার্যক্রম গ্রহণের এখতিয়ার তার নেই।”(Gaius Ezejiofor, Protection of Human Rights under the Law, 1964, p. 80)।
অর্থাৎ ঘোষণাপত্র প্রচার করার এক বছরের মধ্যেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, এর কোন আইনগত মর্যাদা থাকবে না। কোন সদস্য রাষ্ট্র স্বেচ্ছায় এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করতে চাইলে করতে পারে অথবা ইচ্ছা করলে ময়লার ঝুড়িতেও নিক্ষেপ করতে পারে। হ্যান্স কেলসনের নিম্নোক্ত পর্যালোচনা দেখুনঃ
“নিরেট আইনগত দৃষ্টিকোণ হতে দেখলে-ঘোষণাপত্রের দফাগুলো কোনও সদস্য রাষ্ট্রের উপর তা মেনে নিতে এবং ঘোষণাপত্রের খসড়া অথবা তার উপক্রমণিকায় উল্লেখিত মানবাধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাধ্যবাধকতা আরোপ করে না। ঘোষণাপত্রের ভাষার এমন কোন ব্যাখ্যা সম্ভব নয় যা হতে এই অর্থ বের করা যেতে পারে যে, সংশ্লিষ্ট সদস্য রাষ্ট্র নিজ দেশের নাগরিকগণকে মানবাধিকার ও স্বাধীনতা দিতে আইনত বাধ্য।”(Hans Kelson, The Law of United Nations, London 1950, P. 29)।
ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রসমূহের স্বেচ্ছাচারিতার মুখোশ উন্মোচনের জন্য এক ব্যক্তিকে কি কি জিনিস দিয়েছে সে সম্পর্কে কার্ল মেনহেইম লিখেছেনঃ “ঘোষণাপত্র কোন ব্যক্তিকে এই আইনগত অধিকার দেয়নি যে, সে ঘোষণাপত্রে অধিকারসমূহ ও স্বাধীনতার মধ্যে কোন একটি হতে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালত বা সর্বোচ্চ ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী প্রতিষ্ঠান-আন্তর্জাতিক জাস্টিস আদালতে আপিল দায়ের করতে পারবে। উক্ত আদালতের আইনের ২৪ নং দফায় পরিষ্কার ভাষায় লেখা আছে যে, আদালতের সামনে কেবল রাষ্ট্রই একটি পক্ষ হিসাবে উপস্থিত হতে পারে।”(Karl Mannheim, Diagnosis of our Time, London 1947, P. 15)।
ঘোষণাপত্রে যেসব অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের উল্লেখ আছে তার আসল তাৎপর্য তুলে ধরতে গিয়ে ডক্টর রাফায়েল বলেনঃ “ এই নামমাত্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার কোন আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করেনা। এগুলো এমন অধিকার যার সম্পর্ক রয়েছে কোন জিনিস দেওয়ার সাথে। যেমন বুদ্ধিভিত্তির আমদানী, শিক্ষা ও সামাজিক সেবা ইত্যাদি। কিন্তু কোন্ ব্যক্তিকে বলা হয়েছে যে, সে এসব জিনিসের ব্যবস্থা করে দেবে? এই কর্তব্য অবশেষে কার সাথে সংশ্লিষ্ট? জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণার রচয়িতাগণ বলেন যে, “প্রত্যেক ব্যক্তি সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার লাভ করবে”, তার অর্থ কি এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি বিশ্বজনীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছু উপহার দেওয়া উচিত যার দ্বারা প্রয়োজনবোধে উপকৃত হওয়া যাবে? বাস্তবিকই যদি তার এই অর্থ হয়ে থাকে তবে ঐ চুক্তিপত্রের খসড়ায় যে উদ্দেশ্যে ঘোষণাপত্র জারি করা-ঐ প্রকারের ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কোন দফা নেই কেন? আর যদি ঐরূপ ব্যবস্থার অস্তিত্ব না থাকে তাহলে এ আবার কেমন দায়িত্ব ও কার অধিকার? মানুষের উপর এমন দায়িত্ব আরোপ করা যা পালন করার কোন সুয়োগই না থাকে তাহলে তা তো নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছুই নয়। তথাপি তা অতটা স্বৈরাচারী নয় যতটা এই নির্বুদ্ধিতা যে, জনগণকে এমন সব অধিকার দান করা হবে যা থেকে তারা কোনক্রমেই উপকৃত হতে পারে না।”(Raphael D.D., Political Theory and the Rights of Man, Indiana University Press, Bloomington 1967, P. 96)।
এসব অধিকার সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রখ্যাত আইনজ্ঞ এ.কে. ব্রোহী বলেন, “অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের সনদপত্রে প্রদত্ত অধিকারসমূহ মূলত ঐ পরিভাষার স্বীকৃত অর্থের আলোকে অধিকারই নয়। এতো কেবল সামাজিক ও অর্থনৈতিক পলিসিসমূহের মূলনীতি মাত্র এবং তা হতে ঘটনাক্রমে একথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, কমিশনকে একটির পরিবর্তে দুটি পৃথক চুক্তিনামা কেন রচনা করতে হয়েছে।” (Brohi, A.K., United Nations and The Human Rights, 1968, P.44)।
তিনি একথা বলে পৃথিবীর দুই মতাদর্শগত শিবিরের দিকে ইংগিত করেছেন-যা কেবল পরস্পর বিরোধী পলিসিরই অনুসারী নয়, বরং অধিকার সম্পর্কেও সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে।
ঘোষণাপত্রের বাস্তব অবস্থা এবং জাতিসংঘের অসহায়ত্বের চিত্র দেখে নেওয়ার পর এখন পাশ্চাত্যেরই একজন চিন্তাবিদের নিকট হতে ভবিষ্যত সম্ভাবনার হতাশাব্যঞ্জক অভিজ্ঞতার কথাও শুনে রাখুনঃ
“উল্লেখিত কারণসমূহের ভিত্তিতে এই দাবী করা যায় না যে, জাতিসংঘের আওতায় মানবাধিকারের আইনগত নিরাপত্তার কোন উজ্জ্বল ভবিষ্যত আছে। এই সংস্থা এমন সব রাষ্ট্রগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত যারা গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্র ও নাগরিকের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে সর্ম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ধারণা পোষণ করে। পাশ্চাত্য দেশসমূহের মতে কতিপয় অধিকার ও স্বাধীনতা সভ্য সমাজের জন্য মৌলিক মনে করা হয়। তাদের দাবী এই যে, প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তিসমূহ ঐসব অধিকারের মাধ্যমে শক্তিশালী ও মজবুত হয়। অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের ধারণা এই যে, কোন অধিকার ও স্বাধীনতাই মৌলিক নয়। সমস্ত অধিকারের উৎস হচ্ছে রাষ্ট্র এবং সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজের স্বার্থে এসব অধিকার ও স্বাধীনতার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার এখতিয়ার তার রয়েছে। পক্ষান্তরে আরো একটি রাষ্ট্রগোষ্ঠী রয়েছে যাদের বলা হয় উন্নয়নশীল দেশ যার উদ্দেশ্য দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধন। এসব রাষ্ট্রের মতে নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধাস্বরূপ। এসব মতবিরোধের কারণে, এটা কোন আশ্চর্যের কথা নয় যে, জাতিসংঘ মানবাধিকারের ময়দানে উত্তম ফল দেখাতে পারেনি এবং ভবিষ্যতে দেখাতে পারবে এমন আশা করাও বাস্তববাদী চিন্তাধারার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।”(Gaius Ezejiofor, পূ.গ্র. পৃ. ১৩৬)।
মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের অধ্যয়ন এবং তৎসম্পর্কিত পর্যালোচনায় এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবজাতির সমষ্টিগত প্রচেষ্টাও তার জন্য সম্মানজনক ও নিরাপদ জীবন যাপনের কোন গ্যারান্টি দিতে পারেনি। তারা আগেও নিজ নিজ দেশে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বৈরাচারের যতটা শিকার ছিল আজও তদ্রুপ রয়ে গেছে। বরং সরকারের কার্যক্ষেত্রের পরিসীমার প্রসার এবং তার এখতিয়ারের ক্রমবৃদ্ধি মৌলিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ অর্থহীন করে তুলেছে। মানবাধিকারের সনদ একটি চিত্তাকর্ষক দলীলের অতিরিক্ত কিছু নয়। এর মধ্যে অধিকারসমূহের একটি তালিকা ঠিকই সন্নিবেশ করা হয়েছে, কিন্তু এর কোন অধিকার কার্যকর করার মত শক্তি এর পেছনে নেই। তা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উপর আইনগত বিধিনিষেধ আরোপ করে তাদেরকে মৌলিক অধিকার আত্মসাৎ হতে বিরত রাখার না কোন ব্যবস্থা করেছে, আর না কোন ব্যক্তিকে অধিকার বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনরূপ আইগত প্রতিকার প্রার্থনার সুযোগ করে দিতে পেরেছে। এভাবে মানবাধিকারের হেফাজতের বেলায় উক্ত সনদ সম্পূর্ণ অকৃতকার্য ও অনির্ভরযোগ্য দলীলে পরিণত হয়েছে। তা থেকে সর্বাধিক উপকার এতটুকুই পাওয়া গেছে যে, তা মানবাধিকারের একটি মানদন্ড প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বিশ্বভ্রাতৃত্বকে নিজেদের অধিকার রক্ষার ক্রমবিকাশমান অনুভূতি ও চেতনা দান করেছে, সমাজে ব্যক্তির গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে এবং তার সাহায্যে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলো নিজেদের আইন কানুন রচনার সময় মৌলিক অধিকারের প্রথাগত অধ্যায়টি অনায়াসে সংযোজন করে নিচ্ছে।
উল্লেখিত ঘোষণাপত্রের মর্যাদা সম্পূর্ণ নৈতিক। আইনগত দৃষ্টিকোণ হতে তার কোন ওজন ও মর্যাদা নেই। মৌলিক অধিকারের রক্ষক হিসেবে উক্ত সনদপত্রের শক্তি ও গুরুত্ব এই বাস্তব সত্য হতে অনুমান করা যায় যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক বন্দীদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশ্ব মানবাধিকার কমিশন(Amnesty International) নামক আন্তর্জাতিক সংগঠনের ১৯৭৫-৭৬ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্মিলিত জাতিসংঘের ১৪২টি সদস্য দেশের মধ্যে ১১৩ টি দেশে মৌলিক অধিকার চরমভাবে পদদলিত হয়েছে এবং শক্তির অপব্যবহার, অবৈধ ধড়পাকড়, রাজনৈতিক আটক, নির্যাতন নিষ্পেষণ, মৃত্যুদন্ডের ঘটনা, প্রচার মাধ্যমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ, বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস, স্বৈরাচারী আইন জারি এবং মৌলিক অধিকারসমূহ বাতিল বা স্থগিত করার পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুঃখজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।