ইসলামে মৌলিক অধিকারের গ্যারান্টিসমূহ
মৌলিক অধিকারের বাস্তব প্রয়োগ এবং তা অর্জনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ইসলাম যেসব গ্যারান্টি দিয়ে সে সম্পর্কে পূর্বের পৃষ্ঠাগুলোতে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু এই পৃথক শিরোনামের অধীনে কেবল তার সংক্ষিপ্ত পুনরাবৃত্তিই যথেষ্ট নয়, বরং এই প্রসঙ্গে অন্য সব কার্যকারণও একত্র করে দেখা সমীচীন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মানুষের মৌলিক অধিকার সমূহ ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপ এবং তাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশ থেকে কিভাবে নিরাপদ থাকে।
আজ বিশ্ব মানবতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসব অধিকার নির্ধারণ, এর আকর্ষনীয় তালিকা প্রণয়ন, দেশের সংবিধানে এসবের অন্তর্ভূক্তি, আন্তর্জাতিক সনদ ও ঘোষণাপত্র জারীকরণ এবং “মানবাধিকার দিবস পালন” ইত্যাদি নয়, বরং প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, যেসব অধিকারকে মানবাধিকার হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে এবং স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে সমকালীন শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা আত্মসাত এবং পদদলিত হওয়া থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায়।
ইসলাম তার রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই বাস্তব দিকটির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে এবং মানবাধিকার রক্ষাকল্পে এমন কার্যকরী ও সুদৃঢ় রক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে- যা একদিকে শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে একনায়কত্ব ও ফ্যাসীবাদের জীবাণু লালনের সুযোগ এবং তাদেরকে অন্যায়-অত্যাচার, কঠোরতা ও বল প্রয়োগের রাস্তায় ধাবিত করার কারণ ও উপায়-উপকরণের মুলোৎপাটন করে। অন্যদিকে তা সাধারণ নাগরিকদেরকে মানবীয় ক্ষমতায় প্রভাবিত হওয়া, ভীত সন্ত্রস্ত হওয়া এবং তাদের মোকাবিলায় নিজেদের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতার মত নেতিবাচক অনুভূতি থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, উদ্যম-উৎসাহ, বীরত্ব ও নির্ভীকতার মত চমৎকার বৈশিষ্ট্যাবলীর উন্মেষ ঘটিয়ে এমন এক জবরদস্ত প্রতিরোধ শক্তি পয়দা করে দেয় যে, তার উপর কোন ব্যক্তির একনায়ক সুলভ শাসন চাপিয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট থাকে না।
পবিত্র কুরআন একটি ক্ষুদ্র আয়াতে একনায়কত্বের চরিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে আসল কারণ কি এবং সে তার প্রভুত্ব বিস্তারে কিভাবে সফল হয় তা বর্ণনা করেছে। আল্লাহ তাআলা ফেরাউনকে একনায়কত্বের নিকৃষ্টতম নমুনা হিসেবে আমাদের সামনে পেশ করেছেন এবং তার নিকৃষ্ট কার্যকলাপ এক এক করে তুলে ধরেছেন। তন্মধ্যে একটি বরং সবগুলোর মূল হচ্ছে এই যে:
(আরবী***)
অর্থ: “সে তার সম্প্রদায়কে হালকা ভাবলো” ( সূরা যুখরুফ:৫৪)।
অর্থাত ফেরাউন তার সম্প্রদায়ের লোকদের নিজের তুলনায় নিকৃষ্ট মর্যাদাহীন ও দূর্বল মনে করেছিল এবং তার এই অহমিকাপূর্ণ চিন্তাধারাই ছিল তার খোদায়ী দাবী, ফ্যাসীবাদী মনোভাব ও একনায়কত্বের মূল কারণ। এর পরপরই ইরশাদ হচ্ছে:
(আরবী***)
অর্থ: “অতএব তারা (তার সম্প্রদায়) তার অধীনতা মেনে নিল। মূলত তারা ছিল এক ফাসেক সম্প্রদায়” (সূরা যুখরুফ: ৫৪)।
এটাই ছিল প্রকৃত কারণ যার ভিত্তিতে ফেরাউনের একনায়কত্বের রাজত্ব চলছিল। তার অপরাধ তো এই ছিল যে, সে তার সম্প্রদায়কে হালকা ও দূর্বল ভেবে তাদের উপর সর্ব প্রকার নির্যাতন চালাচ্ছিল এবং তাদেরকে নিজের সামনে অধপাত ও লাঞ্ছনায় নিমজ্জিত দেখে তার আত্মম্বরিতায় প্রশান্তি খুঁজে পেত। ইরশাদ হচ্ছে:
(আরবী***)
অর্থ: “তাদের মধ্যে একটি দলকে সে হীনবল করেছিল” ( সূরা কাসাস: ৪)।
কিন্তু সেই সম্প্রদায়ের লোকেরা আল্লাহর কাছেও কম ঘৃণার যোগ্য ছিল না, যারা ফেরাউনের খোদায়ীর সামনে মাথা নত করছিল এবং সন্তুষ্টচিত্তে এই অপমান ও লাঞ্ছনাকে মেনে নিয়েছিল। পবিত্র কুরআন এই অপরাধে লিপ্ত সম্প্রদায়কে ফাসেক ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘনকারী। আল্লাহ তাআলার প্রতিষ্ঠিত সীমারেখার মধ্যে প্রথম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সীমা হচ্ছে: “তাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজেদের উপাস্য ও বিধানদাতা স্বীকার কর না”। যে সম্প্রদায় এহেন জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হবে তাদেরকে ফেরাউন সম্প্রদায়ের অনুরূপ পরিণতির শিকার হতে হবে।
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের অপমান ও লাঞ্ছনার এই দূর্ভোগ থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর দেওয়া জীবন বিধানে একদিকে একনায়কত্বের মূলোৎপাটন করার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা রেখেছেন এবং অপর দিকে সাধারণ লোকদের একনায়কত্বের জাল ছিন্ন করার মনোবল দান করেছেন। এই প্রসঙ্গে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যেসব রক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আমরা সেগুলোকে চার ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
ক. সার্বভৌমত্বের ধারণার পরিশুদ্ধি,
খ. নেতৃত্বের পরিশুদ্ধি,
গ. কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সীমানির্দেশ,
ঘ. নেতৃত্বের পর্যালোচনা ( বা জবাবদিহি)।
ক. সার্ব ভৌমত্বের ধারণার পরিশুদ্ধি: