অবৈধ ওসিয়ত
অবৈধ ওসিয়ত
অবৈধ ওসিয়ত ষাট বছরের এবাদত বিনষ্ট করে দেয়
(আরবী********************************************)
১২২.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কোন পুরুষ ও নারী একাধারে ষাট বছর আল্লাহর এবাদতে কাটিয়ে দেয়ার পরও যদি মৃত্যুর সময়ে এমন ওসিয়ত করে যাতে উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি হয়, তবে সেই পুরুষ ও নারীর জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়। এরপর হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরায়রা হাদীসের সমর্থনে সূরা নিসার (আরবী******) থেকে (আরবী*****) পর্যন্ত আয়াতাংশ পাঠ করে শোনান। (মুসনাদে আহমদ)
কখনো কখনো একজন সৎ লোকও নিজের আত্নীয় ও ঘনিষ্টজনদের ওপর ক্ষিপ্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং কামনা করে যেন তারা তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন অংশ না পায়। এ ধরনের লোকেরা মৃত্যুর সময় তার সমস্ত পরিত্যক্ত সম্পত্তি সম্পর্কে এমন ওসিয়ত করে যায়, যার কারণে এক বা একাধিক উত্তরাধিকারী সেই সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। অথচ কোরআন ও হাদীসের আলোকে তাদের অংশ পাওয়া অপরিহার্য ও অখণ্ডনীয়। এ ধরনের পুরুষ ও নারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, তারা একাধারে ষাট বছর আল্লাহর এবাদত করেও শেষ পর্যন্ত জাহান্নামের যোগ্য হয়।
হযরত আবু হুরায়রা হাদিসটির সমর্থনে যে আয়াত পড়লেন, তা সূরা নিসার ২য় রুকুতে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা উত্তরাধিকারীদের অংশ নির্ধারণ করার পর আয়াতে বলেছেন যে, এই অংশগুলো উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত ও ঋণ পরিশোধ করার পর। তারপর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সাবধান। ওসিয়তের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি করবে না। এটা আল্লাহর কঠোর নির্দেশ, তিনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। তাঁর রচিত এ আইন অজ্ঞতাপ্রসূত নয় বরং জ্ঞান ও বিজ্ঞান ভিত্তিক। এতে যুলুম ও বে ইনসাফীর লেশমাত্র নেই। সুতরাং এ আইনকে সানন্দে মেনে নাও। এর পরের দুটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ এগুলো হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সীমানা। যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ নিষেধ মেনে চলবে, তাদেরকে আল্লাহ এমন মনোরম উদ্যানে তথা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে এবং এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হবে এবং তার নির্দিষ্ট সীমাগুলো লঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে এবং তাদেরকে ভোগ করতে হবে অবমাননা কর শাস্তি।
উত্তরাধিকারীকে প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করলে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হতে হবে
(আরবী********************************************)
১২৩.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি তার উত্তরাধিকারীকে প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন। (ইবনে মাজা)
সকল উত্তরাধিকারীর অনুমতি ছাড়া কোন বিশেষ উত্তরাধিকারীর পক্ষে ওসিয়ত করা যাবে না
(আরবী******************************************************)
১২৪.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন কোন উত্তরাধিকারীর পক্ষে ওসিয়ত করা জায়েয হবে কেবল তখনই, যখন অন্যান্য উত্তরাধিকারী তাতে সম্মতি দেবে। (মেশকাত)
এক তৃতীয়াংশের বেশী ওসিয়ত করা যাবে না
(আরবী**********************************************************)
১২৫.হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) বলেনঃ আমি রুগ্ন থাকা অবস্থায় রাসূল(সা) আমাকে দেখতে এলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি ওসিয়ত করেছ? আমি বললাম, হাঁ করেছি। তিনি বললেন কতটুকু? আমি বললামঃ তারা ধনী সচ্ছল। না, এক দশমাংশ ওসিয়ত কর। এরপর আমি ক্রমাগত বলতে লাগলাম যে, এতো খুবই কম। আরো বেশী ওসিয়ত করার অনুমতি দিন। অবশেষে রাসূল (সা) বললেনঃ বেশ তুমি নিজের সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ ওসিয়ত কর। এক তৃতীয়াংশ একটি বিরাট অংশ। (তিরমিযি)
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, মৃত ব্যক্তি নিজের সম্পত্তির মাত্র এক তৃতীয়াংশের ভেতরে ওসিয়ত করতে পারে, এর বেশী নয়। এর মধ্যে সে কোন মাদ্রাসা কিংবা মসজিদের জন্য যতটুকু ইচ্ছা ওয়াকফ করে দিতে পারে অথবা যে কোন অভাবী মুসলমানের পক্ষে ওসিয়ত অর্থাৎ দান করতে পারে। এ ব্যাপারে সে স্বাধীন। তবে সর্বপ্রথম তার এটা খতিয়ে দেখা বাঞ্ছনীয় যে, নিজের আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ প্রিয়জনদের কেউ উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে কিনা এবং তার আর্থিক অবস্থা কেমন। যদি কেউ এমন থেকে থাকে, যে আইনগতভাবে উত্তরাধিকারের কোন অংশ পায়নি (যেমন তার জীবদ্দশায় তার ছেলে বা মেয়ে মারা গেছে এবং নাতি নাতনী ও পৌত্র পৌত্রীরা বাবার উত্তরাধিকার পায়নি। – অনুবাদক) তার সন্তান সন্ততি আচে এবং আর্থিক অবস্থাও সচ্ছল নয়, তাহলে তার জন্য ওসিয়ত করা অধিকতর সওয়াবের কাজ হবে।