এতীমের হক বা অধিকার
এতীমের লালন পালনের ফযিলত
(আরবী*****************)
১৭২.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন আমি ও এতীমের পৃষ্ঠপোষক এবং অন্যান্য অসহায় মানুষের পৃষ্ঠপোষক বেহেশতে এভাবে এক সাথে থাকবো। এ কথা বলে তিনি লাগোয়া দুটো আঙ্গুলকে দেখালেন এবং উভয়ের মাঝখানে সামান্য ফাঁকা রাখলেন।
অর্থাৎ এতীমদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীরা বেহেশতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য অবস্থান করবে। আর এ সুসংবাদ শুধু এতীমের পৃষ্ঠপোষকের জন্য নয়, বরং অসহায় ও পরমুখাপেক্ষী লোকদের পৃষ্ঠপোষকদের জন্যও বটে।
এতীমের প্রতি সদ্ব্যবহার ও অসদ্ব্যবহার
(আরবী*******)
১৭৩. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে বাড়ীতে এতীমের প্রতি সদ্ব্যবহার করা হয়, তা সর্বোত্তম বাড়ী। আর যে বাড়ীতে এতীমের প্রতি খারাপ ব্যবহার করা হয়, তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট বাড়ী।
এতীম মিসকিনের প্রতি সদয় আচরণে হৃদয়ের নিষ্ঠুরতা দূর হয়
(আরবী*************)
১৭৪.এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ(সা) কে জানালো যে, তার মন অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও কঠোর। তিনি বলেন এতীমের মাথায় স্নেহের হাত বুলাও এবং মিসকিন (দরিদ্র) দেরকে খানা খাওয়াও।
এ হাদীসের শিক্ষা এই যে, কেউ যদি নিজের হৃদয়ের নিষ্ঠুরতার চিকিৎসা করাতে চায়, তবে তার অবিলম্বে স্নেহ ও দয়ার কাজ শুরু করে দেয়া উচিত। অভাবী ও অসহায় লোকদের প্রয়োজন পূরণ করলে এবং তাদেরকে সাহায্য ও উপকার করলে পাষাণ মন দয়ালু মনে পরিণত হয়ে যাবে।
এতীম ও নারীর অধিকার সম্মানার্হ
(আরবী********)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন হে আল্লাহ, আমি এতীম ও নারীর অধিকারকে সম্মানার্হ বলে ঘোষণা করছি।
রাসূল(সা) এর এই বাচনভঙ্গি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও প্রেরণাদায়ক। এ দ্বারা প্রকারান্তরে তিনি সকলকে আদেশ দিচ্ছেন যে, এতীম ও নারীদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্বে এই দুটি শ্রেণী আরবে সবচেয়ে বেশী নিপীড়িত ও মজলুম ছিল। এতীমদের সাথে ব্যাপকভাবে খারাপ ও নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হতো এবং তাদের অধিকার হরণ করা হতো। নারীদেরও সমাজে কোনই মর্যাদা ছিল না।
দরিদ্র হলে পালিত এতীমের সম্পদ সীমিত পরিমাণে ভোগ করা যায়
(আরবী********)
১৭৬. রাসূল (সা) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললোঃ আমি দরিদ্র ও নিঃস্ব। আমার পালিত একজন এতীমের বিপুল সম্পত্তি আছে। (আমি কি তার সম্পত্তি থেকে কিছু ভোগ করত পারি?) তিনি বললেন হাঁ তুমি তোমার পালিত এতীমের সম্পত্তি থেকে কিছু ভোগ করতে পার, যদি অপচয় ও অব্যয় না কর, তাড়াহুড়ো না কর এবং তার সম্পত্তিকে স্থায়ীভাবে নিজের সম্পত্তিতে পরিণত না কর।
অর্থাৎ যদি কোন এতীমের অভিভাবক ধনী হয়, তবে কোরআনের বিধান অনুসারে তার কিছুই গ্রহণ করা উচিত নয়। কিন্তু সে যদি দরিদ্র হয় এবং এতীম সম্পদশালী হয়, তবে সে তার সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করবে, তা যাতে বৃদ্ধি পায় সে জন্য চেষ্টা করবে এবং তা থেকে নিজের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে। তবে এমনভাবে গ্রাস করবে না, যাতে তার যৌবন প্রাপ্তির আগেই তার সম্পত্তি নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তা থেকে নিজের স্থায়ী সম্পত্তিও বানাতে পারবে না। যারা আল্লাহকে ভয় করে না, তারা নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে এতীমদের সম্পত্তিকে নিজের সম্পত্তি বায়ে ফেলে অথবা তার বড় হওয়ার আগে তার সম্পত্তি খেয়ে উড়িয়ে দেয়।
সূরা নিসায় আল্লাহ তায়ালা এতীমদের সম্পত্তি সম্পর্কে এই আদেশই দিয়েছেন, যা এ হাদীসে রয়েছে। আল্লাহ বলেছেনঃ(আরবী****)
অপচয় ও অব্যয়ের মাধ্যমে এতীমের সম্পত্তি ভোগ করো না এবং তাদের বড় হওয়ার আশংকায় তাড়াহুড়ো করে খেও না। আর যে সম্পদশালী, তার এতীমের সম্পত্তি খাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকা উচিত। আর যে দারিদ্র, সে যেন প্রচলিত ন্যায্য রীতি অনুসারে তা থেকে খায়।
এতীমকে প্রহার করা সম্পর্কে
(আরবী**********)
১৭৭.হযরত জাবের (রা) বলেন, আমি বললামঃ হে রাসূলুল্লাহ, আমার পালিত এতীমকে কী কী কারণে প্রহার করতে পারি? রাসূল (সা) বললেনঃ যে যে কারণে তোমার নিজ সন্তানকে প্রহার করতে পার। সাবধান, নিজের সম্পত্তি রক্ষার্থে তার সম্পত্তি নষ্ট করো না এবং তার সম্পত্তি দিয়ে নিজের সম্পত্তি বানিও না।
নিজের সন্তানকে যেমন লেখাপড়া শেখানো ও চরিত্র সংশোধনের উদ্দেশ্যে মারধর করা যায়। তেমনি এতীমকেও দ্বীনদারী ও সততা শেখানোর জন্য মারধর করা যায়। বিনা কারণে কথায় কথায় শিশুদেরকে মারপিট করা রাসূল(সা) এর নীতির বিরোধী। আর এতীমকে অকারণে প্রহার করা তো মহাপাপ।