যাকাত, ছদকায়ে ফেতের, ওশর
যাকাত দারিদ্র দুর করার কার্যকর উপায়
(আরবী*****************)
৬১. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা ছদকা ফরজ করেছেন। যা ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদেরকে ফেরত দেয়া হবে। (বোখারী, মুসলিম)
ছদকা শব্দটা যাকাত অর্থেও ব্যবহৃত হয়, যা প্রদান করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। এখানে এটি যাকাত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে, এ ছাড়া মানুষ স্বেচ্ছায় যে সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাকেও ছদকা বলে। এ হাদীসে ফেরত দেয়া হবে শব্দটার প্রয়োগ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ধনীদের কাছ থেকে আদায়কৃত যাকাত মূলত সমাজের দরিদ্র-ক্লিষ্ট ও অভাবী লোকদেরই প্রাপ্য, যা ধনীদের কাছে গচ্ছিত ছিল এবং তা তার আসল পাওনাদারদের কাছে ফেরত দেয়া হবে।
যাকাত আদায় না করার শাস্তি
(আরবী***************************************)
৬২. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ধনসম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে সেই ধনসম্পদের যাকাত দেয়নি, তার এই ধনসম্পদ কেয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপের রূপ ধারণ করবে। যার মাথার ওপর দুটো কালো তিল থাকবে। (যা ঐ সাপের চরম বিষধর হওয়ার লক্ষণ) অতঃপর ঐ সাপ তার গলায় শেকল হয়ে ঝুলতে থাকবে এবং তার উভয় চোয়ালকে জাপটে ধরে সে বলতে থাকবে, আমি তোর ধনসম্পদ, আমি তোর পুঁজি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা) কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেনঃ যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে, তাদের এ কার্পণ্য তাদের জন্য কল্যাণকর হবে। বরং তা হবে তাদের জন্য ক্ষতিকর। তাদের এ সম্পদ কেয়ামতের দিন তাদের গলার শিকলে পরিণত হবে। অর্থাৎ তাদের জন্য ভয়াবহ সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। (বোখারী)
যাকাত না দিল ধনসম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়
(আরবী**********************************)
৬৩. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছিঃ যখন কোন ধনসম্পদের যাকাত আদায় করা হবে না এবং তা ধনসম্পদের সাথে মিলে থাকবে। তখন তা ধনসম্পদের বিনাশ না ঘটিয়ে ছাড়বে না। (মেশকাত)
বিনাশ ঘটানোর অর্থ এ নয় যে, কেউ যাকাত না দিয়ে যাকাতের অর্থ নিজে খেয়ে নিলে তার সমস্ত ধনসম্পদ সর্বাবস্থায় অবশ্য অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। বিনাশ ঘটার অর্থ এই যে, যে সম্পদ ভোগ করার কোন অধিকার তার ছিল না এবং যা গরীবদেরই প্রাপ্য ছিল, তা আত্নসাত করে সে নিজের দ্বীন ও ঈমানকে ধ্বংস করে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল থেকে এই ব্যাখ্যাই বর্ণিত হয়েছে। তবে এমনও দেখা গেছে যে, যে ব্যক্তি যাকাতের অর্থ খেয়ে ফেলেছে, তার সমস্ত ধনসম্পদ আক্ষরিক অর্থেই মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হেয়ে গেছে।
ফেতরার দুটো উদ্দেশ্য
(আরবী**************************)
৬৪. রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মাতের ওপর ফেতরা ধার্য করেছেন এই উদ্দেশ্যে, যাতে রোযা রাখা অবস্থায় যেসব বেহুদা ও অশালীন কার্যকলাপ রোজাদারের দ্বারা সংঘটিত হয়, তার কাফফারা হয়ে যায় এবং দরিদ্রের খানাপিনার ব্যবস্থাও হয়ে যায়। (আবু দাউদ)
অর্থাৎ শরীয়তে যে ছদকায়ে ফেতের বা ফেতরা ওয়াজিব করা হয়েছে, তার দুটো উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমতঃ রোজাদার যথাসাধ্য সতর্কতা অবলম্বন করা সত্বেও তার দ্বারা যে সকল ত্রুটি বিচ্যুতি রোযা রাখা অবস্থায় সংঘটিত হয়ে যায়। ফেতরা দ্বারা তার ক্ষতি পূরণ হয়ে যায়। দ্বিতীয়তঃ যে দিন সকল মুসলমান খুশীর ঈদ উদযাপন করে, সেদিন সমাজের দরিদ্র লোকেরা যেন অনাহারে না থাকে। বরং তাদের খাবার দাবারের কিছু ব্যবস্থা হয়ে যায়। সম্ভবত এ উদ্দেশ্যেই পরিবারের সকল সদস্যের ওপর ফেতরা ওয়াজিব করা হয়েছে এবং তা ঈদের নামাযের আগেই দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
ওশর বা ফসলের যাকাত
(আরবী************************)
৬৫.রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে সব ভূমি বৃষ্টির পানি ও বহমান নদী বা খালের পানি দ্বারা সিঞ্চিত হয়, অথবা নদীর নিকটবর্তী হওয়ার কারণে সেচের প্রয়োজনই হয়না, তার উৎপন্ন ফসলের দশভাগের এক ভাগ এবং যে ভুমিতে শ্রমিক নিয়োগ করে সেচ দেয়া হয়, তার ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত(ওশর) দিতে হবে। (বোখারী)