রোযা
রমযান মাসের ফযিলত
(আরবী*******************************************)
৬৬.হযরত সালমান ফারসী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন শাবান মাসের শেষ দিন রাসুল (সা) আমাদের সামনে এরূপ ভাষণ দেন হে জনগণ, অত্যন্ত মর্যাদাবান ও কল্যাণময় একটা মাস তোমাদের কাছে সমাগত। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এই মাসে রোযা রাখাকে ফরয করেছেন এবং এ মাসের রাতে তারাবীহ পড়াকে নফল করেছেন। (অর্থাৎ ফরয নয়, বরং সুন্নাত যা আল্লাহর কাছে প্রিয়) যে ব্যক্তি এ মাসে কোন একটা নফল কাজ স্বেচ্ছায় করলো সে যেন রমযান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসে একটা ফরয কাজ করলো। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন একটা ফরয কাজ করলো, যেন অন্য মাসে সত্তরটা ফরয আদায় করলো। এ মাস ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার মাস। আর ধৈর্য সহিঞ্চুতার প্রতিদান হচ্ছে বেহেশত। এ মাস সমাজের দরিদ্র ও অভাব অনটনে জর্জরিত লোকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। (মেশকাত)
ধৈর্য মাস অর্থ হলো, রোযার মাধ্যমে মুমিনকে আল্লাহর পথে অটল ও অবিচল থাকা এবং প্রবৃত্তির লালসা কামনা বাসনাকে নিয়ন্ত্রণের ট্রেনিং দেয়া ও অভ্যাস গড়ে তোলা হয়। মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে অন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আল্লাহ হুকুম মোতাবেক পানাহার থেকেও বিরত থাকে। স্ত্রীর কাছে যাওয়া থেকেও বিরত থাকে। এ দ্বারা তার ভেতরে আল্লাহর আনুগত্য করার মনোভাব সৃষ্টি হয়। প্রয়োজনের সময় সে নিজের আবেগ অনুভূতি ও কামনা বাসনাকে কতখানি সংযত রাখতে পারে, এ দ্বারা এই ব্যাপারে ট্রেনিং দেয়া হয়। পৃথিবীতে মুমিনের অবস্থান যুদ্ধের ময়দানের সৈনিকের মত। তাকে প্রতিনিয়ত শয়তানী কামনা বাসনার বিরুদ্ধে এবং অন্যায় ও পাপাচারী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। তার ভেতরে যদি ধৈর্য গুন সৃষ্টি না হয়। তা হলে শত্রুর আক্রমণের প্রথম আঘাতেই সে ধরাশায়ী হয়ে যাবে এবং নিজেকে শত্রুর কাছে সপে দেবে।
সহানুভূতির মাস এর মর্মার্থ হলো, যে সব রোযাদারকে আল্লাহ তায়ালা সচ্ছল বানিয়েছেন, তাদের উচিত স্থানীয় দরিদ্র ও অভাবী লোকদেরকে আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের অংশীদার করা এবং তাদের জন্য সাহরী ও ইফতারের ব্যবস্থা করা। মূল হাদীসে মুয়াসাত শব্দটা ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ আর্থিক সহানুভূতি প্রকাশ করা। মৌখিক সহানুভূতি প্রকাশও মুয়াসাতের আওতাভুক্ত।
রোযা ও তারাবীর প্রতিদান গুনাহ মুক্তি
(আরবী***********************************)
৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমানদার সুলভ মানসিকতা সহকারে এবং পরকালের পুরস্কার লাভের আশা আকাংখা নিয়ে রমযানের রোযা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানদার সুলভ মানসিকতা ও আখিরাতের পুরস্কার প্রাপ্তির আকাংখা নিয়ে (তারাবির) নামায পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। (বোখারী ও মুসলিম)
রোযার নৈতিক শিক্ষা
(আরবী*****************************************)
৬৮.রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ রোযা ঢালস্বরুপ। তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে, তখন সে যেন মুখ দিয়ে কোন অশ্লীল কথা উচ্চারণ না করে এবং হৈচৈ ও চিৎকার না করে। কেউ যদি তাকে গালি গালাজ করে কিংবা তার সাথে মারামারি করতে উদ্যত হয়, তাহলে সেই রোজাদারের চিন্তা ও স্মরণ করা উচিত যে, আমি তো রোজাদার। (কাজেই আমি কিভাবে গালির জবাবে গালি দিতে পারি বা মারামারিতে শরীক হতে পারি?) (বোখারী, মুসলিম)
রোজাদারের পক্ষে রোযার সুপারিশ
(আরবী*************************************)
৬৯. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ রোযা ও কোরআন বান্দার পক্ষে সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে আমার মনিব, এই ব্যক্তিকে আমি দিনের বেলায় খাওয়া দাওয়া ও অন্যান্য লালসা চরিতার্থ করা থেকে বিরত রেখেছি এবং সে বিরত থেকেছে। হে আমার মনিব, এই ব্যক্তি সম্পর্কে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আর কোরআন বলবে, আমি এই ব্যক্তিকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি(এবং সে মজার ঘুম ছেড়ে নামাযে কোরআন পড়েছে। ) এই ব্যক্তি সম্পর্কে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। তৎক্ষণাৎ তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে। (বায়হাকী, মেশকাত, আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত)
পাপাচার ত্যাগ না করলে রোযা নিষ্ফল উপবাসে পরিণত হয়
(আরবী************************************)
৭০. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (রোযা রাখা সত্ত্বেও) মিথ্যা বলা ও মিথ্যা অনুযায়ী আমল করা ত্যাগ করেনি, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বোখারী)
অর্থাৎ রোযা ফরয করা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য মানুষকে সৎ বানানো। যদি রোযা রেখেও সৎ না হয়, হক ও ন্যায়ের ভিত্তিতে জীবন গড়ে না তোলে, রমযান মাসেও বাতিল ও অন্যায় কথা বলা ও কাজ করা অব্যাহত রাখে এবং রমযানের বাইরেও তার জীবনে সত্যবাদিতা ও সততা পরিলক্ষিত না হয়, তাহলে এ ধরনের লোকের আত্নসমালোচনা করা উচিত যে, সে কি কারণ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকেছে এবং এতে তার লাভই বা কি?এ হাদীসের লক্ষ্য এই যে, রোযা রাখার উদ্দেশ্য এবং আসল প্রাণশক্তি ও প্রেরণা সম্পর্কে রোজাদারের অবহিত থাকা উচিত এবং কি কারণে সে দানাপানি ত্যাগ করছে, তা তার সব সময় হৃদয়ে জাগরূক রাখা উচিত।
(আরবী**********************************)
৭১. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ এমন বহু (হতভাগা) রোজাদার রয়েছে যার রোযা থেকে ক্ষুধা ও পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কোন লাভ হয় না। আর (রমযানের রাতের) নামায (তারাবীহ) পড়ুয়াদের মধ্যেও অনেকে এমন রয়েছে যাদের তারাবীহ থেকে বিনিদ্র রাত কাটানো ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না। এ হাদিসও পূর্ববর্তী হাদীসের ন্যায় এ শিক্ষা দেয় যে, রোজা রাখা অবস্থায় রোজাদারের রোযার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি তা মনে রাখা উচিত।
নামায, রোযা ও যাকাত গুনাহের কাফফারা
(আরবী************************************)
৭২.হযরত হুযাইফা (রা) বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি যে, মানুষ নিজের পরিবার পরিজন, ধন সম্পদ ও পাড়া প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ভুলত্রুটি করে, নামায রোযা ও যাকাত সে সব ভুলত্রুটির কাফফারা হয়ে যায়। (বোখারী)
অর্থাৎ মানুষ সাধারণত নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারণে গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে ব্যবসায় বাণিজ্য ও পাড়া পড়শিদের ব্যাপারেও সচরাচর ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে যায়। এসব ত্রুটিবিচ্যুতি আল্লাহ তায়ালা নামায রোযা ও যাকাতের কারণে ক্ষমা করে দেন। (তবে এইসব গুনাহ বা ভুলত্রুটি যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত হয়ে যায় কেবল তখনই এ কথা প্রযোজ্য, ইচ্ছাকৃতভাবে করলে প্রযোজ্য নয়। )
রোযার ব্যাপারে রিয়া থেকে হুশিয়ারী
(আরবী********************************)
৭৩.হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। যখন কেউ রোযা রাখে তখন তার তেল লাগানো উচিত, যাতে তার মধ্যে রোযার লক্ষণ পরিদৃষ্ট না হয়। (আল আদাবুল মুফরাদ)।
অর্থাৎ রোজাদারের উচিত যেন লোক দেখানো রোযা না রাখে, গোসল করে যথারীতি শরীরে তেল লাগায়, যাতে রোযার কারণে শরীরে যে অবসাদ ও আড়ষ্টতার সৃষ্টি হয় তা দূর হয়ে যায় এবং রিয়াকারীর পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সাহরীর বরকত
(আরবী**************************************)
৭৪. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমরা সাহরী খেও। কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে। (বোখারী)
অর্থাৎ সাহরী খেয়ে রোযা রাখলে দিনটা সহজে কেটে যাবে, আল্লাহর এবাদাতে ও দৈনন্দিন অন্যান্য কাজে দুর্বলতা ও অলসতা আসবে না। আর সাহরী না খেলে ক্ষুধার দরুন অবসাদ, অলসতা ও দুর্বলতা অনুভূত হবে ও এবাদতে মন বসবে না। এটা হবে খুবই বে বরকতীর ব্যাপার। অন্য হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন তোমরা দিনে রোযা রাকার জন্য সাহরীর সাহায্য নাও এবং রাতে তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য দিনের বেলা ঘুমের সাহায্য নাও।
তাড়াতাড়ি ইফতার করার আদেশ
(আরবী************************************)
৭৫.হযরত সাহল বিন সাদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ মুসলমানরা যত দিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন ভালো থাকবে। (বোখারী)
এর মর্ম এই যে, তোমরা ইফতারে ইহুদীদের নিয়মের বিরোধিতা করবে। তারা অন্ধকারে চারিদিক
আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার পর ইফতার করে। তোমরা যদি সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার কর এবং ইহুদীদের নিয়ম অনুসরণ না করো, তাহলে প্রমাণিত হবে যে তোমরা ধর্মীয় দিক দিয়ে ভালো অবস্থায় আছ।
মুসাফিরের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি
(আরবী************************************)
৭৬. হযরত আনাস বিন মালেক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা (রমযান মাসে) রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাথে সফরে যেতাম। তখন কেউবা রোযা রাখতো, কেউবা রাখতো না। কিন্তু রোজাদার কখনো অরোযাদারের বিরুদ্ধে এবং অরোযাদার কখনও রোজাদারের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলতো না। (বোখারী)
মুসাফিরকে কোরআনে রোযা না রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে যে ব্যক্তি সফর অবস্থায় সহজে রোযা রাখতে পারবে তার পক্ষে রোযা রাখা উত্তম। আর যার পক্ষে কষ্টকর হবে তার রোযা না রাখা উত্তম। কারো ওপর কারো আপত্তি তোলা উচিত নয়।
নফল এবাদতে বাড়াবাড়ি ভালো নয়
(আরবী************************************)
৭৭. রাসুলুল্লাহ (সা) আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আসকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমার সম্পর্কে আমি শুনেছি যে, তুমি প্রতিদিন রোযা রাখ এবং রাতভর নফল নামায পড়ে থাক। এটা কি সত্য? তিনি বললেন, হে রাসুলুল্লাহ, এ কথা সত্য। রাসূল (সা) বললেনঃ এরূপ করোনা। কখনো ঘুমাও। কখনো তাহাজ্জুদ পড়। কেননা তোমার কাছে তোমার দেহেরে প্রাপ্য আছে, তোমার চোখের প্রাপ্য আছে, তোমার কাছে তোমার দেহের প্রাপ্য আছে, তোমার চোখের প্রাপ্য আছে, তোমার স্ত্রীর প্রাপ্য আচে এবং তোমার সাক্ষাৎ প্রার্থী ও অতিথিদেরও প্রাপ্য আছে। তুমি প্রতি মাসে মাত্র তিনদিন রোযা রাখ। এতটুকুই তোমার জন্য যথেষ্ট। (বোখারী)
অবিরাম রোযা রাখা ও রাতভর নামায পড়ায় স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায়। বিশেষত বেশী রোযা রাখলে ও রাত জাগলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) তা থেকে নিষেধ করেছেন। মুমিনকে সব কিছুতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন ও ভারসাম্য রক্ষা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
(আরবী***************************************)
৭৮.হযরত আবু জুহায়ফা (রা) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) সালমান ও আবু দারদা (রা) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একদিন সালমান আবু দারদার বাড়ীতে বেড়াতে গেলেন। তিনি উম্মে দারদাকে (আবু দারদার স্ত্রী) অত্যন্ত নিম্নমানের বেশভূষায় দেখে (অর্থাৎ বিধবা মহিলার উপযোগী সাজসজ্জা বিহীন দেখে) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার একি অবস্থা? (অর্থাৎ এমন বিধবা সুলভ সাজসজ্জা অবলম্বন করছ কেন?) উম্মে দারদা বললেন, তোমার ভাই আবু দারদার তো দুনিয়ার প্রতি আর কোন আসক্তি নেই। (সুতরাং সাজসজ্জা আর কার জন্য করবো?) এরপর আবু দারদা এলেন এবং মেহমান ভাই এর জন্য খাবার তৈরী করালেন। তারপর বললেন, তুমি খাও। আমি রোযা রেখেছি। সালমান বললেন, তুমি না খেলে আমি কাব না। অগত্যা আবু দারদা রোযা ভেঙ্গে তার সাথে খানা খেলেন। আবার যখন রাত হলো, তখন আবু দারদা নফল নামায পড়ার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। সালমান বললেন, শুয়ে পড়। আবু দারদা (ঘরে গিয়ে) শুলেন। কিছুক্ষণ পর আবার উঠলে সালমান বললেন ঘুমাও। তারপর রাতের শেষভাগে সালমান বললেন, এখন ওঠ। অতঃপর দুজনে একত্রে নামায পড়লেন। তারপর সালমান বললেন, জান তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকেরও প্রাপ্য আছে, (যেমন নামায, রোযা ইত্যাদি) আবার তোমার নিজেরও প্রাপ্য আছে(যথা পার্থিব জীবনের স্বাদ আনন্দ উপভোগ করা) এবং তোমার স্ত্রীরও প্রাপ্য আছে। অতএব সকলের প্রাপ্য পরিশোধ কর। অতঃপর রাসূল (সা) এর কাছে এলেন এবং পুরো ঘটনা জানালেন। ঘটনা শুনে রাসুল (সা) বললেন, সালমান সঠিক কথাই বলেছেন।
(এই হাদীসে সালমান (রা) কর্ক আবু দারদার স্ত্রীর সাথে যে ধরনের সাক্ষাত ও কথাবার্তার উল্লেখ রয়েছে, তা থেকে মনে হয় তখনো পর্দার কড়া হুকুম নাযিল হয়নি। নচেৎ সালমান ও আবু দারদার মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তা পর্দার কড়াকড়ি শিথিল করার জন্য যথেষ্ট নয়। অবশ্য সালমান কুবই বয়োবৃদ্ধ সাহাবী ছিলেন বিধায় কিছুটা শৈথিল্যের অবকাশ থাকতে পারে। (অনুবাদক)
(আরবী**************************************************)
৭৯.হযরত মুজীবা বাহেলীয়া (রা) বাহেলা গোত্রের জনৈকা মহিলা সাহাবী। তাঁর বাবা বা চাচা সম্পর্কে তিনি বলেন যে, তাঁর বাবা (ইসলামের শিক্ষা গ্রহনের উদ্দেশ্যে) রাসূল (সা) এর নিকট গেলেন। অতঃপর ফিরে এলেন। এক বছর পর পুনরায় রাসূল(সা) এর নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তার (শারীরিক) অবস্থা ও আকৃতি বদলে গিয়েছিল। তিনি বললেন, হে রাসূলুল্লাহ, আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন না? রাসুল (সা) বললেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আমি বাহেলী গোত্রের লোক। গত বছর আপনার কাছে এসেছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমার এ অবস্থা কেন? গত বছর যখন এসেছিলে তখন তোমার চেহারা ও স্বাস্থ্য খুবই সুদর্শন ছিল। তিনি বললেন, আমি আপনার কাছ থেকে যাওয়ার পর থেকে অবিরাম রোযা রেখে যাচ্ছি। রাতে ছাড়া কিছুই খাই না। রাসুল(সা) বললেন, তুমি নিজের ওপর নির্যাতন চালিয়েছ। (অর্থাৎ ক্রমাগত রোযা রেখে শরীরকে দুর্বল করে ফেলেছ) তারপর তিনি তাকে উপদেশ দিলেন যে, ধৈর্য মাস রমযানের রোযা রেখ, আর তা ছাড়া প্রত্যেক মাসে একটা করে রোযা রেখ। বাহেলী বললেন, আমার ওপর আরো কিছু রোযা বাড়িয়ে দিন। কেননা আমার (প্রতি মাসে একাধিক রোযা রাখার) সামর্থ্য আছে। রাসূল (সা) বললেন, বেশ তাহলে প্রতি মাসে দুদিন রোযা রাখ। বাহেলী গোত্রের লোকটি বললেন, আরো কিছু বাড়িয়ে দিন। রাসূল (সা) বললেন, ঠিক আছে। তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখ। তিনি বললেন, আরো কিছু বাড়িয়ে দিন। রাসূল (সা) বললেন, ঠিক আছে তুমি প্রত্যেক বছর সম্মানিত মাসগুলোতে রোযা রাখ, আবার বাদ দাও। এভাবে প্রতি বছর কর। এ কথা বলার সময় তিনি তিন আঙ্গুল একত্র করলেন, আবার ছেড়ে দিলেন। (এ দ্বারা ইংগিত দিলেন যে, সম্মানিত মাস রজব, যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহাররমে রোযা রাখ। আবার কোন কোন বছর রেখ না। ) (আবু দাউদ)
ইতিকাফ
ইতিকাফ কয় দিন?
(আরবী********************************)
৮০. হযরত ইবনে উমার (রা) বলেন, রাসূল (সা) রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। (বোখারী, মুসলিম)
রাসুল (সা) সাধারনভাবে সর্বদাই আল্লাহর এবাদত ও বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকতেন। কিন্তু রমযান মাসে তাঁর আগ্রহ আরো বেড়ে যেত। বিশেষত শেষ দশ দিন পুরোপুরি আল্লাহর এবাদতে কাটাতেন। মসজিদে গিয়ে অবস্থান করতেন। নফল নামায, কোরআন তেলাওয়াত, যিকর ও দোয়ায় মশগুল হয়ে যেতেন। কেননা রমযান মাস মোমেনের প্রস্তুতির মাস যাতে সে অবশিষ্ট এগারো মাসে শয়তান ও শয়তানী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি সঞ্চয় করতে পারে।
রমযানের শেষ দশ দিনে রাসূলের ব্যস্ততার চিত্র
(আরবী********************************************)
৮১.হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, রমযানের শেষ দশদিন উপস্থিত হলেই রাসূল (সা) এর অবস্থা এ রকম হতো যে, রাতের বেশীর ভাগ জেগে এবাদত করতেন। নিজের স্ত্রীদেরকে জাগাতেন (যাতে তারাও বেশী করে রাত্র জাগে এবং নফল ও তাহাজ্জুদ পড়ে। ) এবং আল্লাহর এবাদতের জন্য পোশাককে শক্তভাবে এঁটে বেঁধে নিতেন। (পোশাককে এঁটে বেঁধে নেয়ার অর্থ হলো, সর্বাত্মক আবেগ ও উদ্দীপনা সহকারে এবাদতে নিয়োজিত হতেন। )