ঊনবিংশতম অধ্যায়
বৃটিশ দূতাবাস সম্পর্কে আমি ইতিপূর্বেক উল্লেখ করেছি যে, ইখওয়ান সরকারের পরামর্শক্রমেই বৃটিশদের সরে যাওয়অর বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে জামাল আবদুন নারেস ইখওয়ানের ওপর হস্তক্ষেপ করার জন্য আলোচনাকেই অজুহাত হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু তার এই চক্রান্ত আদৌ সফলকাম হয়নি। তারপর নাসের একটা অত্যন্ত জঘন্য নাটক রচনা করে অর্থাৎ সে নিজেই তার অনুচরদের সাহায্যে নিজের ওপর আক্রমণ রচনা করায় এবং এই ষড়যন্ত্রের জন্য ইখওয়ানকেই সম্পূর্ণরূপে দায়ী করে। আমরা সকল প্রচার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র থেকে সর্বদা মুক্ত। এই সত্য এখন সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এই তথাকথিত আক্রমণ সম্পর্কে নিন্মে বর্ণিত বিষয়গুলো বিশেষভাবে ভেবে দেখার বিষয়:
১-মুহাম্মাদ নাজীবতার সামরিক পদমর্যাদা ও সম্মানের শপথ করে এই সাক্ষ্য প্রদান করেছিল যে, “আল মানশিয়ার” ঘটনা একটা বানোয়াট ও মিথ্যা নাটক।
২-সাইয়েদ মুহাম্মাদ আল তিহামীর সাক্ষ্য রোজ আল ইউসুফ সাময়িকীতে ছাপা হয়েছিলো। উল্লেখিত সামযিকীর মে ১৯৭৮ সংখ্যা রেফারেন্স হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই নিবন্ধে লেখক দ্ব্যার্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই নাটক মঞ্চস্ত করার জন্য সি, আই,িএ-এর একজন বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছিল।
নাসেরের প্রথম দিকের দু’জন অন্তরংগ সহচর হোসাইন ইসাফেয়ী ও আনোয়ারুস সাদাত মরহুমের সাক্ষ্য ও রেকর্ড বিদ্যমান রয়েছে। এই দুই ব্যক্তির ভাষ্য অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, নাসের তার পরিকল্পনাকে গোপন রাখতো। এমনকি তার ঘনিস্ট সহযোগীদেরও বাতাস পর্যন্ত লাগতে দিতো না। আবদুল লতিফ বাদদাদী তার “আল সামেতুনা ইয়াতাকাল্লামূন” (নীরবরা ক থা বলছে) গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। হোসাইন আল শাফেয়ীর এই কথাই ছিল যথার্থ যে, জনগণের সম্মুখে যে ভাবে ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে তার প্রতি লক্ষ্য করলে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, ইখওয়ান জামাল আবদুন নাসেরের ওপর গুলি বর্ষণ করেছিলো। আলণ মানশিয়ার সুবিশাল প্রান্তরে এই গুলি চালানো হয় এবং সরকারী প্রভাবাধীন প্রচার মাধ্যম প্রচারণার জোরে মানুষকে একথা বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, গুলি পরিচালনাকারী ছিল ইখওয়ান।
হোসাইন শাফেয়ীর িএই উক্তি আবদুল লতীফ বাগদাদীর বিশ্লেষণকে সমর্থন করে যে, অব্যাহগতভাবে যদি এক তরফা প্রচারণা চালানো হয় তাহলে একটা ডাহা মিথ্যাও সত্য বলে প্রতিয়মান হতে থাকে।
৩-মুহতারাম মুর্শিদে আ’ম জানতে পারেন যে, ইখওয়ানের কোন কোন যুবক এমন সব সভায় অংশগ্রহণ করেছে। যেখানে আবদুন নাসেরে বক্তৃতা করার কথা থাকে। তিনি আরো অবহিত হন যে, এই যুবকগণ নাসের সম্পর্কে তীব্র ঘৃণা ও ক্রোধ প্রকাশ করে থাকে। এমনকি নাসেরের ওপর সময় সুযোগ বুঝে আক্রমণ করে বসারও সম্ভাবনা রয়েছে। মুর্শিদে আ’ম তৎক্ষণাৎ ইউসুফ তালাত শহীদকে ডেকে পাঠান এবং এই পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে কঠোরভাবে সাবধান করে দেন। ইউসুফ তালাত শহীদ ছিলেন ইখওয়ানের সামরিক শাখার ইনচার্য। মুর্শিদে আ’ম বলেন- আমি এই ধরনের প্রশিক্ষণের ঘোর বিরোধী যার উদ্দেশ্য থাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা। আমি কোন অবস্থাতেই হিংসাত্মক কার্যকলাপের ও ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারি না। এরূপ কার্যকলাপের ফলে যদি বিরোধীদের কিংবা নিজেদের যুবকদের রক্তপাতের মত অবস্থা সৃষ্টি হয় তাহলে জেনে রাখুন, সকল প্রকার রক্তপাতের দায় দায়িত্ব থেকে আমি সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থাকবো। পর্যালোচনা কালে এসব বিষয় জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল।
৪-এরূপ অভিযোগ আরোপ করা হয়েছিল যে, আমরা মাহমুদ আবদুল লতীফ শহীদকে এই তথাকথিত হামলা পরিচালনার জন্য আলেকজান্দ্রিয়ায় প্রেরণ করেছিলাম। এটা একেবারেই অযৌক্তিক কথা। মাহমুদ শহীদ আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তা ঘাট সম্বন্ধে সম্পূর্ণ না-ওয়াকিফ চিলেন এবং এ ঘটনা সম্পর্কেও ছিলেন একেবারে অনবহিত। যদি আমাদেরকে িএরূপ কিছু করতে হতো তাহলে আলেকজান্দ্রিয়ার কোন লোককে নিযুক্ত করতাম না কেন। কিংবা যদি মাহমুদ আবদুল লতীফকে দিয়েই এ কাজ করাতে হতো তবে কি কায়রোতে এই কাজ করার সুযোগ পাওয়া যেতো না? কায়রোতেই তো বিস্তর জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। সেখানে সহজেই নাসেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা যেতো।
৫-কোন্ জ্ঞানান্ধ এ ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারে যে, একজন মাত্র নিঃসংগ আক্রমণকারীকে পাঠিয়ে দেয়া হবে এবং তার পশ্চাতে বিকল্প লোক থাকবে না। এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে হামলাকারীর পেছনে মজবুত সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েথাকে। এর উদ্দেশ্য থাকে হত্যাকারীর নিরাপত্তা বিধান করা এবং ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অর্পিত দায়িত্ব সুসম্পন্ন করা।
৬-পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র সংগে নিয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্জ ও সিকিউরিটির লোকদের দৃষ্টি এড়িয়ে তিনি কি করে আলেকজান্দ্রিয়ায় গিয়ে পৌঁছতে সক্ষম হলেন? তারা কি মনে করেছিল যে, আলেকজান্দ্রিয়ায় গিয়ে পৌঁছতে সক্ষম হলেন? তারা কি মনে করেছিল যে, আলেকজান্দ্রিয়ায় গিয়ে পৌঁছতে সক্ষম হলেন? তারা কি মনে করেছিল যে, আলেকজান্দ্রিয়ায় তারা বিভিন্ন উপায়ে সামরিক ব্যারাক এবং নৌবহরের ওপর কবজা করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থান ছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার সামরিক ব্রবস্থা ও নৌবহর সম্পর্কে সরকারের ধারণা ছিল এই যে, কোন বিদেশী শক্তিও তা পদানত করতে পারবে না।
৭-এটা কি অধিকতর বাস্তবসম্মত এবং সহজ হতো না যে, আলেকজান্দ্রিয়ায় এ করার জন্য সেখানকার স্থানীয় সুযোগ-সুবিধাকে ব্যবহার করা হতো। কেননা, তারাইতো তাদের শহর সম্পর্কে অধিকতর অবগত ছিল। এবং তারাই ভালভাবে জানতো কোন অঘটন ঘটানোর পর পশ্চাদ্ধাবনকারীদের কিভাবে ধোঁকা দেয়া যেতে পারে।
৮-এই অভিনয়ের পরদিন আবদুন নাসের প্রত্যুষে কায়রো অভিমুখে প্রত্যাবর্তন করার ইচ্ছা পোষণ করছিলো। নিরাপত্তা বিভাগের লোকজন বুলেট প্রুপ কোর্ট তার খেদমতে এনে হাজির করলে তা দেখে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো এবং বলতে লাগলো এখনতো এই ব্যাপারটি সমাপ্ত হয়ে গেছে। যেন তার জানা ছিল যে, আগের দিন যে নাটক মঞ্চস্ত করা হয়েছে তার সময় ফুরিয়ে গেছে।
৯- আবদুর রহমান সিন্ধীর কতিপয় অনুসারী যখন মুর্শিদে আ’ম-এর বাড়ীতে আক্রমণ চালায় এবং তাকে পদত্যাগ করতে চাপ দেয় তখন এই ঘটনা ইখওয়ানের জন্যে অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইখওয়ান মুহাম্মাদ ফারাগলী শহীদ ও সাইদ রামাদানকে আবদুন নাসেরের নিকট প্রেরণ করে। তারা উভয়ে যুগপৎ আবদুন নাসেরের নিকট আবেদন জানায় যে, এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদপত্রে বিবৃতি প্রকাশ করার অনুমতি যেন সে ইখওয়ানকে দিয়ে দেয়। নাসের এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, যা হোক এরপর ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যায়। হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণের কোন কারণ বাকী থাকলো না। কেননা তখন আমাদের ও নাসেরের মাঝে কোন টানাপোড়েন ও ভুল বুঝাবুঝি ছিল না। এর কিছুদিন পরই তখন আমরা এই বানোয়াট হামলার খবর শুনতে পাই তখন খুব উদ্বগ্ন হয়ে পড়ি।
১০- প্রচার মাধ্যমগুলোর সাহায্যে জনগণকে অত্যন্ত হাস্যকর সংবাদ শুনানো হয়। পরিবেশিত খবর অনুযায়ী আদম ফৌজি নামক এক ব্যক্তি আলেকজান্দ্রিয়া থেকে রেল সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে কায়রো পৌঁছে। এবার সে জামাল আবদুন নাসেরের খেদমতে সেই রিভলভারটি পেশ করে যা এই ঘটনার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। খবরের বিবরণ অনুযায়ী উল্লেখিত আদম ব্যবহৃত সেই পিস্তলটি কোথাও পড়ে থাকা অবস্থায় পেয়ে যায। নাসের সাহেব খুশী হয়ে তাকে একশত পাউন্ড পুরস্কার প্রদান করেন। এ খবর শুনেই কি আপনি তা বিশ্বাস করতে পারবেন নাকি একে একটা সাজানো নাটক মনে করে হাসবেন? প্রশ্ন হলো আক্রমণকারী ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বিভাগের লোকেরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় কিন্তু এই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সন্ধান কেন করেনি? এটা একটা অদ্ভূত ব্যাপার যা নিজে বুঝা কিংবা অপরকে বুঝানো সম্ভব নয়।
১১- আদালত এই অভিযোগ তো আরোপ করে যে, সংশ্লিষ্ট পিস্তল থেকে আটটি গুলি চালানো হয়েছিল যা দেযালের ওপর গিয়ে লেগেছিল। কিন্তু তারা না দেয়ালের ওপর এসব গুলির কোন চিহ্ন দেখায় আর না প্রেসিডেন্টের মঞ্চে-এর কোন লক্ষণ ছিল। এমনকি আশেপাশের কোথাও এমন কোন প্রমাণ পেশ করা যায়নি।
১২-সুদানের জনৈক মন্ত্রী এবং আইনবিদ মিষ্টার বদর যিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তার শরীরে কোন গুলিবিদ্ধ হয়ে ছিল না। বরং তা ছিল ব্যালকুনির কাঁচ যা তাঁর শরীরে গিয়ে লেগেছিলো।
১৩- এই মোকদ্দমার তদন্ত চ লাকালে এও প্রমাণিত হয় যে, হিন্দাভী দুওয়াইর একবার পিস্তল পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন যে কারণে মাহমুদ আর হাওয়াতীকে তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, মুর্শিদে আ’ম যখন কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন যেন কোন অস্ত্র কারো ওপর অন্যায় হামলা করার জন্য সংগ্রহ না করা হয়। তথাপি তোমরা পিস্তল কেন চাচ্ছো? প্রত্যুত্তেরে সে জানায় যে, আমি অনুশীলনের জন্য পিস্তল চাচ্ছি। মামহুদ হাওয়াতীকে জবাব দিলেন না এই ব্যাপারে আমি তোমাকে কোন প্রকার সহযোগিতা করতে পারছিনে।
১৪-শূন্যে আটবার গুলির আওয়াজ শুনা যায়, যে ব্যক্তিকে এই গুলি চালাতে দেখা গিয়েছিলো সে আজও বেঁচে আছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত রয়েছে। গুলি বর্ষিত হওয়ার সময় এক ব্যক্তি চিৎকার করে বলেছিলো তুমি যেখানে আঘাত হানছো তা তোমার লক্ষ্য বস্তু নয়। তারপর সেই চিৎকারকারী এমনভাবে গা ঢাকা দেয় যে, আজ পর্যন্তও আর তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। যদি সে আত্মপ্রকাশ করতো তাহলে হয়তো এই ষড়যন্ত্রের রহস্য উদঘাটিত হতো।
১৫-নাসের সাহেবের পকেটে একটা বিশেষ কলম ছিল।যাতে রক্ত বর্ণের কালি ভর্তি ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, সে কলমটিকে ভেংগে ফেলেছিল? নাসের সাহেবকে কেউ স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। তথাপি জনসাধারণ দেখতে পেয়েছিল যেন নাসেরের বক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আজ পর্যন্তও এই প্রশ্নের কোন জবাব দেওয়া হয়নি যে, কোন আধাহ ছাড়াই রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কারণ কি ছিল?
১৬- এই নাটক চলাকালে হিন্দাভীর দুওয়াইরকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে মৃত্যু দন্ড প্রদান করা হয়। যখন তাকে ফাঁসির মঞ্চে উঠানো হচ্ছিলো তখন সেখানে উপস্থিত সরকারী কর্মকর্তাদের সামনে সে বলেছিল যে, এই কৌতুকপ্রদ অভিনয়ের পরিসমাপ্তি আমার ঘাড়ের ওপর দিয়ে পূর্ণ পরিণতি লাভ করলো।
১৭- সামরিক বিপ্লবী কাউন্সিলের প্রধানের ওপর প্রণালী আক্রমণ পরিচালিতম হলো অথচ আক্রমণকারী সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণের এ সম্পর্কে কিছুই জানা থাকবে না তা কি করে সম্ভব? এই আক্রমণের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া মোকাবিলার কোন প্রকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ইখওয়ানের পক্ষথেকে গৃহীত হয়নি। সুস্থ্য বিবেক বুদ্ধি কি একথা মেনে নিতে পারে যে, কোন সংগঠন এতটা অসংগঠিত ও বুদ্ধি-বিবেক শূন্য হবে? তদন্তকালীন সময়ে একথাও প্রমাণিত হয়েছে যে, ইউসুফ তালাত শহীদ, ইনচার্জ স্পেশাল ব্রাঞ্চ, কায়রো শাখা-এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে ছিল একেবারেই অনবহিত। তারা এই ঘটনার খবর রেডিওর মাধ্যমে জানতে পারেন।
১৮-হিন্দাভী দুওয়াইর এই মিথ্যা মামলার বলির পাঁঠা হন। এই জালিমরা নাসেরের সর্বজন স্বীকৃত ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্রে এই হ তভাগাকে ফাঁসির কাষ্ঠে চড়িয়ে দেয়। মিসরীয় জনগণের অভ্যাস হলো তার এমন ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে যার সম্বন্ধে তারা বুঝতে পারে যে, তার পর জুলুম হয়েছে। এই নাটকের মাধ্যমে জনসাধারণকে এই বিশ্বাস সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল যে, জামাল আবদুন নাসেরের প্রাণনাশের জন্য সুগভীর চক্রান্তের জাল বিস্তার করা হচ্ছে।
ইংরেজদের প্রতি আমাদের ঘৃণার কারণ
মানুষের মধ্যে ইখওয়ানের বড় দুশমন ইংরেজ। ইখওয়ানও তাদেরকে নিজেদের বড় শত্রু মনে করে। এই বিষয়টি শুধু কোন আবেগ অনুভূতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ বনয়। বরং বিভিন্ন জাতির জীবনে নানা প্রকার কার্যকারণ কোন সিদ্ধান্তে উপনীতি হওয়ার উপলক্ষ হয়ে থঅকে। ইখওয়ান ও ইংরেজদের মধ্যেকার এই পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ বিনা কারণে নয়। ইখওয়ানকে যদি কোন বিপ্লবী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় এবং তজ্জন্য কোথাও থেকে সাহায্য সহযোগিতা চাওয়ার প্রশ্ন দেখা দেয় তাহলে ইংরেজই হবে সর্বশেষ জাতি যাদের সম্পর্কে আমরা চিন্তা করে দেখবো। বরং আমি বলতে চাই যে, ইংরেজদের নিকট থেকে কোন সাহায্য-সহায়তা লাভের প্রত্যাশা করাটা প্রসংগটা আদৌ কোন আলোচনার ব্যাপার নয়। আমার এই মনোভাব পোষণ করার কয়েকটি কারণ আছে:
১- এ জাতি আমাদের দেশের ওপর প্রায় সত্তর বছর ধরে তাদের ঔপনিবেশিক নীতি চাপিয়ে রেখেছে। এই সময়ে তারা অত্যন্ত কঠোরভাবে ইসলামের বাহ্যিক দিকগুলোকে আঘাতের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে রেখেছে। এই ঔপনিবেশিক শক্তি মিসরের দ্বীনি পরিবেশকে অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে আল্লাহর শোকর এবং এই কৃতিত্ব তারই যে, তিনি ইখওয়ানের আন্দোলনের সাহায্যে এ মুসলিম রাষ্ট্রটিকে গভীর পঙ্গে নিমজ্জিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করছেন যা ইংরেজরা খনন করে রেখেছিল। অন্যথায় অলসতা ও উদাসীনতার ব্যাধিতে আক্রান্ত মুসলিমরা সেই গর্তে পতিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছিল।
২- এই ইংরেজ জাতিই কুখ্যাত বেলফুর চুক্তির সাহায্যে ফিলিস্তিনকে ইহুদীদের পিতৃভূমি বলে ঘোষণা করে। এ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বিশ্বে বিশাল ভূখণ্ড ছিল। কিন্তু এ জাতির ইসলাম বৈরিতা এবং মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাবই ছিল মূল কারণ, যে জন্য তারা ফিলিস্তিনকে এই উদ্দেশ্য হাসিলের উপযুক্ত স্থান বলে নির্বাচিত করে।
৩- তারাই ফিলিস্তিনের মুসলিমদেরকে সকল প্রকার অস্ত্রশস্ত্র থেকে বঞ্চিত করে ইহুদীদেরকে পুরোপুরি সশস্ত্র বানিয়ে দেয়। ফলে ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদীদের হাতে বার বার ব্যাপক মুসলিম নিধনযজ্ঞ সংঘটিত হয়। দীর ইয়ামিনে মর্মান্তিক গণহত্যার কথা কেউ কি ভুলে যেতে পারে? এই জঘন্য ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডে ইংরেজদের পর আমেরিকানরা তাদের থেকেও অধিক নির্লজ্জ ভূমিকা গ্রহণ করে। মানুষের ক্ষমতা কতটুকু? সে তো বাতাসের একটি প্রবাহ বরং পানির একটি বুদ্বুদ মাত্র। তথাপি জুলুম-নির্যাতন চালাতে উদ্যত হলে আল্লাহ তায়ালার ভয়ভীতি থকে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন হয়েই তা করতে প্রয়াস পেয়ে থাকে।
শহীদ ইবরাহীম আত তীব
শহীদ ইবরাহীম আত তীব পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবি। অত্যন্ত চরিত্রবান, মহাপ্রাণ এবং দ্বীনের একনিষ্ঠ সৈনিক। তিনি ইখওয়ানের কায়রোস্থ সামরিক শাখার দায়িত্বশীল ছিলেন। আমরা এই সংগঠন স্থাপন করে ছিলাম ইংরেজ আধিপত্য ও ইহুদী সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলা করার জন্য। এটা কোন গোপনীয় বিষয় নয় বরং আমরা আজও বলে থাকি যে, ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেয়ার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত। আর ইহা জীবনের এমন এক মহৎ উদ্দেশ্য যা থেকে অধিকতর গৌরবজনক অপর কোন লক্ষ্য হতে পারে না। আমি ইবরাহীম আত তীব শহীদকে খুব ভাল করেই জানি। তিনি কোন অপরাধে জড়িত কিংবা কোন হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আদৌ কোন চিন্তাই করেননি। এটা ছিল তার ভাগ্যলিপি যে, নাসের কর্তৃক তার বিরুদ্ধে সাজানো এই মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়ে তিনি শাহাদাতের অমৃত সুধা পান করবেন। আমরা ইতিপূর্বে যে নাটকের উল্লেখ করে এসেছি তারই প্রেক্ষিতে শহীদকে মৃত্যুর শাস্তি প্রদান করা হয়। অন্যান্য শহদিদের ন্যায় এই নিষ্পাপ রক্তপাতের সম্পূর্ণ দায় দায়িত্বও নাসের এবং তার অন্যান্য সহযোগীদের ওপরই বর্তায়। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ হাশরের দিন তার ন্যায় ও পক্ষপাত মুক্ত ফায়সালা ঘোষণা করবেন।
শহীদ হিন্দাভী দুওয়াইর
শহীদ হিন্দাভী দুওয়াইরের ব্যাপারে বলতে হয়- তিনি ছিলেন অত্যন্ত আবেগ প্রবণ যুবক। কোন ঘটনা শোনা মাত্রই তিনি আবেগ আপ্লুত ও উত্তেজিত হয়ে উঠতেন। তাকেও এই ষড়যন্ত্রের জালে আটকানো হয়েছিল। বেচারার সরলতার সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে নিশ্চয়তা প্রদান করেছিলো যে, ইখওয়ানের হাই কমান্ড এ ব্যাপারে ফায়সালা দিয়েছেন। এমন সব লোক যাদের ব্যাপারে হিন্দাভী দাওয়াইর-এর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তারা ইখওয়ানের নিবেদিত প্রাণ কর্মী তাদেরকেও এই ষড়যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। হিন্দাভী দুওয়াইরকে সাথে নিয়ে এক ব্যক্তি এই ঘটনার একদিন পূর্বে নাসেরের বাড়ীতে গিয়ে উপনীত হন। সে ব্যক্তি আজও জীবিত আছে। যদিও সুদীর্ঘ দিনর ব্যধি তাকে তার ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই গৃহবন্দী করে রেখেছে। হিন্দাভী দুওয়াইর ঘুণাক্ষরেও জানতো না যে, এটা একটা সাজানো নাটক।
আমার নিকট যদি আরো অতিরিক্ত কিছু তথ্য প্রমাণ থাকতো তাহলে আমি আরও কয়েকটা নাম পেশ করতে পারতাম। যাদের সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, তারাও এই চক্রান্তের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু আমি উপযুক্ত দলীল প্রমাণ ব্যতীত কারো বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন কোন অভিযোগ পেশ করার পক্ষপাতি নই। শোনা থার ওপর না আমি বিশ্বাসও করি আ না তার ভিত্তিতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করাও সমীচিন মনে করি।
শহীদ আবদুল কাদের আওদার চিঠি
কোন কোন লোক জিজ্ঞেস করে থাকে যে, এমন কি অজুহাদ ছিল যার ভিত্তিতে আবদুর কাদের আওদা শহীদ এই মর্মে আবদুন নাসেরের নিকট চিঠি লিখেছিলেন যাতে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে, সে যেন ইখওয়ানের বিশেষ ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করে দিক এবং ইখওয়ানের নিকট যে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে তাও নিয়ে নিক—- আমি আমার পক্ষ থেকে এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চাই। এমন কোন পত্র সম্বন্ধে আমার কিছুই জানা নেই। এ সম্পর্কে অন্যরা যেমন রেডিও মারফত খবর শুনতে পেয়েছিল আমিও তেমনি রেডিও মারফতই জানতে পেরেছিলাম। ধরা যাক শহীদ বাস্তবিকই এরূপ চিঠি লিখেছিলেন। সে ক্ষেত্রে আমার নিকট এর মর্মার্থ এই যে, তিনি ইখওয়ানের পক্ষ থেকে সার্বিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন এবং নাসেরকে এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করতে চাচ্ছিলেন যে, ইখওয়ানের পক্ষথেকে তার জীবনের জন্র কোন আশংকা নেই। আর কোন্ পরিস্থিতিতে কেন এই পত্র লিখা হয়েছিল, তাও তো কেউ জানে না। আবদুল কাদের আওদা শহীদ সকল উত্তেজনা ও অসন্তোষ দূর করে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করেছিলেন।
সামরিক কারাগারে ইখওয়ানের ওপর যে অমানবিক অত্যাচার চালানো হচ্ছিলো জামাল আবদুন নাসের সে সম্পর্কে সম্যকরূপে জ্ঞাত ছিলেন। সে সি আই ডি এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের ওপরও তার একান্ত গুপ্তচর নিয়োগ করে রেখেছিলো। তাই এই গোয়েন্দা সংস্থা মিসরের আনাচে কানাচে ঘরে ঘরে সকল ছোট বড় কথা তার সমীপে এনে উপস্থাপন করতে থাকতো।
হে দিব্য দৃষ্টির অধিকারীগণ!
শক্তির নেশা বিপজ্জনক
সামরিক কয়েদখানায় যা কিছু ঘটতো মিলিটারী পুলিশের প্রধান আহমদ আনোয়অর তা নিজে চোখে দেখতেন। বিপ্লবী কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য আবদুল হাকিম আমেরও বার বার সেই কয়েদখানার পরিদর্শনে যেতেন। আমরা আজ পর্যন্তও ভুলতে পারিনি যে, একবার আহমদ আনোয়ার জঙ্গী কয়েদখানার দারোগা হামজা আল বুয়ুনিকে হাজার হাজার ইখওয়ান ও সরকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বলেন হে হামজা! এদেরকে খুব শিক্ষা দাও ওদরে হাড্ডি গোশত একাকার করে দাও এবং এ কাজ ঢোল পিটিয়ে করো। হামজা আল বুয়ুনি অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে কুর্ণিশ করে জবাব দেন। জনাব! তাই হবে!
সামরিক বন্দীশালায় আমাদের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল তার উদ্দেশ্য শুধু শাস্তি পদ্রানই ছিল না। বরং আমাদেরকে অপমান ও লাঞ্ছিত করার ওপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হতো। কারা কর্মকর্তাদের মনে অপমান ও লাঞ্ছনা চিন্তা আপনা থেকে আসেনি। তারা হয়তো কঠোরতা আরোপ করাকেই যথেষ্ট মনে করতো কিন্তু এই ভেবে যে স্বীয় প্রতিপক্ষকে অপমানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে হবে। এটা এমন এক ব্যক্তির উর্বর মস্তিষ্কের সৃষ্টি যে স্বয়ং অপমান ভোগ করেছিল। ফলে সে আমাদের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। এটা একটা মনস্তাত্বিক বিষয় যে অপমাণিত ব্যক্তি প্রতিটি সম্মানিত মানুষ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চায়, এরূপ নীচাশয় মানুষের হাতে ক্ষমতা ও প্রভাব কুক্ষিগত হলে তার প্রতিশোধ দাবানল থেকে কোন সম্মানিত ব্যক্তি বাঁচতে পারে না। তার অহং সম্মানিতদের লাঞ্ছিত করে তৃপ্তি পায়। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না যে, যে আচরণ আমাদের সাথে করা হয়েছে তা কোন অদৃশ্য হস্ত পুরস্কার ও সম্মানী দিয়ে করিয়েছিল না এর পশ্চাতে অন্যকোন কারণ লুকায়িত ছিল। বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। কিন্তু আমার কলম তা লিপিবদ্ধ করতে অক্ষম।
ইখওয়ানের ওপর নির্যাতন চালানোর পুরস্কার
কেউ কেউ বলে, জেলখানায় যা কিছু করা হয়েছে আবদুন নাসের সে ব্যাপারে একেবারেই অনবহিত। আমি একথা মেনে নিতে প্রস্তুত নিই। যে ব্যক্তি আবদুন নাসেরকে জানে তার খুব ভালভাবেই জানা থাকার কথা যে, মিসরে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে সে উত্তমরূপে অবগতছিল। সামরিক কয়েদখানায় সে যা কিছু করিয়েছে তা সে বুঝে শুনে ও সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায়িই করিয়েছে এবং এ কারণেই সে আবদুর নাসের হয়েছে। একথা মনে রাখা দরকার যে, ইকওয়ানকে নির্যাতনের শিকার ও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা আইনের দৃষ্টিতে ছিল বড় রকমের অপরাধ এবং যেসব অফিসার এই অপরাধের পরিণাম ও পরিণতি সম্বন্ধে অবহিত তারা এ ধরনের কাজের দুঃসাহস করতে পারে না। কিন্তু এখানে অবস্থা ছিল এই যে, এসব অফিসারকে পাকা পোক্ত নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছিল যে, এই অপরাধে তাদেরকে কিছুই বলা হবে না শুধু তাই নয় তাদেরকে অনেক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত করা হবে। এই গ্যারান্টিও দেওয়া হয়েছিল স্বয়ং নাসের সাহেবের পক্ষ থেকেই। এমনকি কার্যত সেই লোকদের পুরস্কার প্রদান করাও হয়েছিল।
এই ব্যক্তিদেরকে যেসব আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হতো তার বিশেষ নাম দেওয়া হয়েছিল, সেই নাম ছিল “শাস্তিদানের বিনিময়”। এসব টাকা কড়ি কে খরচ করতো? এবং সামরিক বাজেটের কোন খাতে তা দেখানো হতো। জামাল আবদুন নাসের নির্যাতনের বিষদ বিবরণ সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত ছিলেন। তিনি তো ছিলেন রাষ্ট্রের কর্ণধার। সামরিক কয়েদখানা সম্পর্কে তো মিসরের সর্বস্তরের জনসাধারণ সম্যকরূপে ওয়াকিফহাল ছিল। এই জেলখানার নাম শুনা মাত্রই সকল মিসরবাসীর অন্তরে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার ঝড় বয়ে যেতো। এমনকি নাসেরের নিকটতম সাথীও এ কারাগারের নাম শুনে কেঁপে উঠতো যে, যদি কখনো তাকে এরূপ ভাগ্য বরণ করতে হয় এবং এই জিন্দাখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তার জীবনের কি করুন ও মর্মান্তিক পরিণতি হবে। সাথে সাথে একথাও মনে রাখা আবশ্যক যে, এসব নির্যাতনের টেপ ও ফিল্ম তৈরী করা হতো যা নাসেরের খেদমতে পেশ করতে হতো। এসব সে অতীব আগ্রহ ভরে শুনতো ও দেখতো এবং মহা উল্লাসে ফেটে পড়তো।
বাদী নিজেই বিচারক
ইখওয়ানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার মধ্যে সর্বপ্রথম মিথ্যা ছিল এই যে, তারা সরকার উৎখাত করতে চায়। যার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, বিচার প্রার্থী এবং বিচারক ছিল স্বয়ং সরকার আর অভিযুক্ত ও আসামী ইখওয়ান। প্রচলিত মানব রচিত কিংবা আসমানী কোন আইনের মধ্রে এমন কথার স্বীকৃতি রয়েছে যে, বাদী নিজেই বিবাদীর ওপর ফয়সালা প্রদান ও ডিক্রী জারী করবে? এই প্রশ্নের জবাব তো সর্বজনবিদিত। সাথে সাথে আইনের একটা সাধারণ মূলনীতি ইহাও যে, অপরাধীর নিকট থেকে জবান বন্দী গ্রহণ করা হবে তা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এবং কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ না করেই তার ইচ্ছানুযায়ী লাভ করতে হবে।
আপনি বিস্ময়ে হতবাক হবেন যে, এই তথাকথিত আদালতের সম্মুখে ইখওয়ানকে পেশ করা হতো। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও পেশ করা হতো। আদালতে আনীত আহত ইখওয়ানদের ক্ষত স্থান থেকে তখনও রক্ত ঝরে পড়তে থাকতো। এবং নির্যাতনের সুস্পষ্ট চিহ্নসমূহ তাদের শরীরে দেখা যেতো। এমতাবস্থায় এইমনগড়া স্বীকারোক্তিসমূহকে ভিত্তি করে রায় প্রদান করা হতো। আফসোস! বিষয়টি যদি এখানেই শেষ হতো! একটু সাহস করে যদি কোন কয়েদীকে আদলতে আনয়নের পর স্বীকৃতি প্রদানে অসম্মতি প্রকাশ করতো তখন আদালত পুনরায় তাকে কারাগারে ফেরত পাঠাতো যেন আরো নির্যাতনের শিকার বানিয়ে স্বীকারোক্তিমূরক বিবৃতি সমর্থন করতে বাধ্য করা হতো।
জামাল সালেমের পরিণতি
জামাল সালেম যিনি তথাকথিত এসব আদালতের প্রধান ছিলেন। তিনি আসামীদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে ও কথায় কথায় তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আতালদের অপর দু’জন সদস্য এই বিচার প্রহসন চলাকালীন সময়ে সম্পূর্ণ চুপচাপ বসে থাকতেন। এই জামাল সালেমের পরিণতিও হয়েছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর। সামরিক উর্দি খুলে এখন তিনি সাদা বেসামরক পোশাক পরিধান করেছেন। পরেছেন গেরুয়া রংগের আবা ও আলখেল্লা। দিনের অধিকাংশ সময় মসজিদে ও সাইয়ৈদা যয়নাবে অতিবাহিত করেন।
সে কি সত্যই তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ছিল। তিনি কি তার কৃত পাপরাশী থেকে তওবা করে নিয়েছিলেন। নিসন্দে আল্লাহর রহমত অতিব সুবিস্তৃত। যে কেউ তার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করতে চাইবে সে কোন সংকীর্ণতার শিকার হবে না। অবশ্য তার তওবা হতে হবে খাঁটি ও অকৃত্রিম। এরূপ তওবাতে অসংখ্য কবিরা গুনাহও মাফ হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালার ক্ষমার তুলনায় কোন গুনাহই বড় নয়। আমি এ ব্যক্তির ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণীর পুনরাবৃত্তি করছি। তিনি বলেছেন: তোমরা তোমাদের মৃতদের গুণাবলী বর্ণনা করে তাদেরকে স্মরণ করো। আমাদের উচিত তাদেরকে আল্লাহর ইনসাফের ওপর ছেড়ে দেয়া। কারণ তিনি সর্বাপেক্ষা অধিক ন্যায় ও সুবিচারের নিশ্চয়তা বিধানকারী।
বিংশতম অধ্যায়
ইখওয়ানের প্রথম ও দ্বিতীয মুর্শিদে আ’ম উভয়েই অতীব সৎ ও মহৎ গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। দ্বিতীয় মুর্শিদে আ’ম তো অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। উস্তাদ হাসান আল হুদাইবি ইখওয়ানের নেতৃত্বের হক আদায় করার পর আল্লাহর রহমতের ছায়ায় চলে যান। গুরুদায়িত্বসমূহ সামাল দেয়া, আমানত আদায় করা, ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করা, বিশ্বস্তততা, ধৈর্য ও স্থৈর্যের প্রদর্শন করা এবং সকল বিপদাপদকে উত্তম প্রতিদান লাভের প্রত্যাশায়অসীম সাহসের সাথে বরদাশত করার সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। দ্বিতীয় মুর্শিদে আ’ম মরহুমের জীবনে প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে প্রিয়তম বান্দাগণের সারিতে শামিল করুন এবং উত্তম মর্যাদায় বিভূষিত করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিদায় হজ্জের ভাষণে মু’মিনদের সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি অতীব গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাষণের মর্মার্থত ছিল এই যে, মু’মিন বান্দার ইজ্জাত ও সম্মান আলআহ তায়ালার নিকট কা’বা শরীফ এবং মসজিদে হারাম-এর গুরুত্ব অপেক্ষাও বেশী। ইখওয়ান নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেসর আহকামের পুরোপুরি অনুসারী। ইখওয়ানের দৃষ্টিতে কোন মুসলিমের ইজ্জাত আবরু হালাল করা কিংবা তাকে কোন প্রকার কষ্ট দেয়া মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও নির্যাতনের হাত থেকে নিরাপদ রেখেছেন। কেননা আমরা প্রকৃতপক্ষে সালফে সালেহীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলি আর সালফে সালেহীন কোন মুসলিমের রক্তপাত বৈধ বলে স্বীকার করেননি। এমনকি সে চুরি কিংবা মদ্যপান করলেও না। ইখওয়ানে নিকট তাদের দ্বীনের ব্যাপারে দৃষ্টিভংগী অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আর তা হচ্ছে এই যে, ইসলাম একাধারে দ্বীন ও এ রাষ্ট্র ব্যবস্থা উভয়টিই। আমাদের এই মনোভাব দ্বীনের দুশমনদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে রেখেছে। তারা আমাদরে ওপর এমন সব ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপ করে থাকে যা কোন সম্ভ্রান্ত লোকের কল্পনর জগতেও কখনো স্থান লাভ করতে পারে না। দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রচার যন্ত্র ও গণমাধ্যমগুলো এই শ্রেণীর লোকদেরই কুক্ষিগত। এগুলো সদা সর্বদাই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ইখওয়ানের নেতৃত্ব
মুর্শিদে আ’ম হাসান আল হুদাইবি মৃত্যু বরণ করলেন। ইখওয়ান আইনগতভাবে ছিল নিষিদ্ধ। ইখওয়ান আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে থাকে এবং নিজেদের বুনিয়াদী আকীদা-বিশ্বাসের অনুসরণও করে থাকে। এই ইখওয়ানের সবাই মিলে নতুন মুর্শিদে আ’ম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলো। এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, কর্মপরিষদের সদস্যগণের মধ্যে যিনি সর্বাপেক্ষা বায়োজ্যেষ্ঠ তাকেই মুর্শিদে আ’ম বানানো হোক। সংগঠন করা যদিও আইনগতভাবে নিষিদ্ধ কিন্তু ইখওয়ান তো তাদের ছোট বড় সকল ব্যাপারেই মুর্শিদে আ’মের শরনাপন্ন হয়ে থাকে।
ঘটনাক্রমে তখন কর্মপরিষদের সমস্ত সদস্যের মধ্যে আমিই ছিলাম বয়োজ্যেষ্ঠ। অতএব এই গুরু দায়িত্ব স্বীকার করে না। কিন্তু কার্যত সরকারও আমাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। সরকারও আমাকে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতা বলে মনে করে এবং এই পর্যায়ে রেখেই আমার সাথে দেখা সাক্ষাত করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনাও করে। আমরা তাদেরকে এমন সুযোগ কখনো দেইনি যাতে তারা আমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করার আইনগত বৈধতা পেতে পারে। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আজও যদি তাদের হাতে এমন কোন সুযোগ এসে যায় তাহলে তারা আমাদেরকে মোকদ্দমায় ফাঁসিয়ে দেবে। সংবাদপত্রের কোন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি মাঝে মধ্যে এরূপ অনেক কথা বলাবলী করে যে, কার্যত ইখওয়ান মিসরে এখনও বিদ্যমান। এই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু পত্রিকা আমার সৌজন্য সাক্ষাতকার গ্রহণের ব্যবস্থাও করে।
কাকে বিশ্বাস করবেন
এই পরিস্থিতিকে আমরাও মেনে নিয়েছি এবং অনেক ক্ষেত্রে আমি দেশ ও জাতির স্বার্থে কোন কোন ব্যাপারে সরকারের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এই অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে সন্তব্য করা যেতে পারে যে, বাহ্যিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইখওয়ানের সংগঠন এখনো রয়েছে এবং দেশে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ প্রায়ই আমার মাথে মত বিনিময় করতে আসেন। যখনই আমার সহিত কোন প্রকার যোগাযোগ করার প্রয়োজন পড়ে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের ছোট বড় সর্বস্তরের কর্মচারীদের জানা আছে যে, তখনই আমি সাক্ষাতকার প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করি না। আমি কখনো এমন হঠকারিতাও প্রদর্শন করিনি যে, তাদেরকেই আমার নিকট আসতে হবে এবং আমি তাদেরকে আগাম জানিয়ে রেখেছি। দেশ ও জাতির কল্যাণ জাড়িত রয়েছে এমন বিষয়ে আমি নিজেই তাদের নিকট যাওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছি। আমাকে শুধু টেলিফোন মারফত অবগত করলেই চলবে, আমি মন্ত্রণালয়োর দপ্তরে এসে পৌঁছে যাব। অবশ্য মাঝে মধ্যে আমার শারীকিক দুর্বলতার কারণে কিংবা কোন বিশেষ দিবস উপলক্ষে কোন কোন কর্মকর্তা আমার এখানেও এসে যান। তাদের এই আগমনে আমি যারপরনেই কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকি। আমার ওপর আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ যে আমি কখনো কোন হাংগামা করার মত অবস্থানে গিয়ে উপনিত হইনি। তবে হাঁ যদি আমি কখনো কাউকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকি এবং তা পূরণ করার জন্য আমাকে যেতে হয়। আমি সবসময় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বর্তমান কর্মচারীবৃন্দ এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করে থাকেন। যাদিয়াতুহুল হামরা নামক স্থানে সংঘটিত দুর্ঘটনার ব্যাপারে হাসান আবু পাশা নিজে আমার ভূমিকার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে যে বিবৃতি প্রদান করেছিলেন তাতে তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে, সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মাক কোন অপতৎপরতার সাথে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের কোন সম্পর্কই নেই। তাছাড়া সন্ত্রাসী কোন সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমুনের পৃষ্ঠপোষকাতায় কখনো বেড়ে উঠতে পারে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আভ্যন্তরীন শন্তি-শৃংখলা বিধানকারী এক নম্বর দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তার মুখ থেকেই এই সত্য প্রকাশিত হয়েছে। অথচ ইখওয়ানের দুশমনদের হাতে তাদের ছবি অতিরঞ্জিত হয়ে বড় ভয়ানকভাবে উপস্থাপিত হয়ে থাকে। এক্ষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত, না প্রচার মাধ্যমগুলোর ওপর?
আবেগের ওপর যুক্তির বিজয়
এ ব্যাপারে আমার স্থির সংকল্প ছিল যে, যখনই “আদ দাওয়া” সাময়িকীতে সম্পাদকীয় লিখবো তখন কোন লোকের ওপর ব্যক্তিগতভাবে কিছুতেই আক্রমণ করবো না। এই নীতি অদ্যাবধি বহাল রয়েছে। লিখনী পরিচালনার সময় আমি বাস্তবসম্মত ও তথ্য সমৃদ্ধ লেখার প্রতি পুরোপুরি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আমি জনসাধারণের নিকট আবেদন জানিয়ে থাকি যেন তারা তাদের আবেগ অনুভুতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হয়। ১৯৮১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দী করা হয় তখন সেখানে আমরা পরস্পরের একান্ত সান্নিধ্যে আসার সুযোগ লাভ করি। এক দলের একজন সদস্য আমাকে বললো যে, আপনি আমাদের দেশের যুব সমাজকে একেবারে নিস্তেজ ও বলবীর্যহীন বানিয়ে ফেলেছেন এবং শৌর্যবীর্য ও আগ্রহ উদ্দীপনাকে ফ্রিজের মধ্যে ফেলে একেবারে বরফ বানিয়ে ছেড়েছেন।
আমি জানতাম না যে, একথাগুলো দ্বারা ভদ্রলোক আমার সুনাম বর্ণনা করছিল, না দুর্ণাম। যা হোক আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম এবং শুধুমাত্র এতটুকু বললাম যে, এর অর্থ এই যে আমার কথার কিছুটা প্রভাব রয়েছে। এত কিছুর পরও এবং এই দুর্দিনেও সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের হামলা থেকে আমি নিরাপদ থাকতে পরিনি। সেই সন্ত্রাসবাদিতার অভিযোগ যদিও তখন এই হামলা ছিল কিছুটা নমনীয়। তথাপি ইনসাফের দাবী হচ্ছে, সাদাতের বাড়াবাড়ি সত্ত্বেও এ বিষয়টি বর্ণনা করা দরকার যে, তিনি ইখওয়ানকে কিছুটা স্বাধীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আমাদের সাময়িকী “আদ দাওয়া” ও এই আমলে নতুন করে প্রকাশিত হতে থাকে। এমনকি দ্বীনি পরিবেশে আমরা সারা দেশে কিছু কিছু সভা-সমিতি অনুষ্ঠানের সুযোগ লাভ করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর রহম করুন এবং সাদাতের ওপরও। তাকেও ক্ষমা করে দিন আর আমাকেও ক্ষমা করে দিন।
আপন বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত
সম্মানিত উস্তাদ আল হুদাইবির জীবদ্দশায় এবং তার ইনতিকালের পর কিছু কিছু ইসলামী সংগঠন ইখওয়ানের ওপর কাঠোর হামলা করতো। মনে হতো যে, ইখওয়ানের ওপর হামলা করা তাদের উদ্দেশ্য। তার আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, আমরা জিহাদ ছেড়ে দিয়েছি এবং শুধু মাত্র কুরআন নিয়ে বসে গিয়েছি। একবার যখন কোন এক ইখওয়ানী ভাই আমার সম্মুখে এরূপ নিষ্ঠুর হামলার অভিযোগ করে তখন আমি অত্যন্ত ধরিস্থির ও শ্বান্তবাভে জবাব দিলাম যে, আল্লাহ তায়ালার শোকর যে, আমাদের এই ভাইয়েরা আমাদের প্রতি ইনসাফ করেছেন। তারা বলে যে, আমরা শুধু কুরআন অবলম্বন করেছি। খুবই বাল কথা কুরআনের মধ্যে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ই রয়েছে। শান্তির কথাও আছে আবার জিহাদের কথাও। তারা সম্ববত দোষারোপ করার জন্যই এ মন্তব্য করেছে। কিন্তু তারা যদি তাদের কথার অর্থ হৃদয়ংগম করতে পারতো তাহলে দেখতো যে, এটা আমাদের জন্য একটা সনদ। আমরা এ কথা অস্বীকার করি না যে, আমরা কুরআন মজিদকে খুব মজবুত ভাবে ধারণ করেছি। আর সার্থকতা এতেই নিহিত। যদি সমালোচকদের মুখেই মহৎ কর্মের স্বীকৃতি পাওয়া যায়। আমাদের তুখো্ড় সমালোচকগণ এটা মেনে নিয়েছেন যে, আমরা কুরআনকেই আমাদের বুকে ধারণ করে রেখেছি।
আপনাদের আনন্দদানের জন্য এও জানিয়ে দিতে চাই যে, আমদের এসব ভাই যারা আমাদের ওপর কুফরের অভিযোগ আরোপ করেন এবং জিহাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অপবাদ দেন তাদের মামলা মোকদ্দমা ইখওয়ানী আইজীবিগণই আদালতে লড়েছেন এবং বিনা পারিশ্রমিকেই এই খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। কারো নিকট থেকে আমরা প্রতিদানের আশা যেমন করি না তেমনি বাহবাও পেতে চাই না। আমরা আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে যাবো।
আমাদের সামনে রয়েছে একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যপানেই আমরা সর্বদা এগিয়ে চলি। পথিমধ্যে যদি কোন কাঁটা আমাদের পায়ে বিধেঁ কিংবা কোন পাথরের চাঁই আমাদের গতিরোধ করে বসে তাতে আমরা থমকে দাঁড়িয়ে যাই না। আমরা কোন না কোন পন্থা উদ্ভাবন করে আমাদের লক্ষ্যপানে অবিরাম চলতে থাকি। ওপরে যে সমস্ত দলের কথা আলোচনা করা হয়েছে তাদেরকে নিকট থেকে দেখেছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই বলতে পারে যে, এসব দল একটা উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই গঠন করা হয়েছিল। আর সেই উদ্দেশ্যও এছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, ইখওয়ানের ওপর একটি নতুন ফ্রন্ট থেকে নতুনভাবে আক্রমণ করতে হবে।
তারা চক্রন্ত করে আর আল্লাহ্ তাদের চক্রন্ত ব্যর্থ করেন
অমুসলিমদের সহযোগিতায় এবং অ-ইসলামী পন্থায় ইখওয়ানের ওপর হামলা করানোর পর আর একটা পন্থাই অবশিষ্ট ছিল অর্থাৎ ইসলামী নামে ইখওয়ানের বিরুদ্ধাচরণ করতে হবে। সুতরাং একটা অদ্ভুত প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। মুসলিমদের ওপর মুসলিমরাই আক্রমণ করছিল। আর দুশমনরা উল্লাসিত ছিল এই ভেবে যে, যে পক্ষই পরাজিত হোক না কেন তাতে আমাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফীক দিয়েছেন যে, পাল্টা আক্রমণ করার পরিবর্তে আমরা নীরবতা অবলম্বন করেছি। এত দুশমনবা ছটফট করেছে এবং পরিণামে ইসলামের মুখোশ ধারণ করে আমাদের ওপর আক্রমণ রচনাকারী এসব পরিদৃষ্ট হয়েছে যে, তাদের দলের সমস্যগণ একে অপরের বিরুদ্ধে মারমুখি হয়ে উঠেছে। আর এভাবে প্রত্যেক মানুষ তার আপন কর্মফল ভোগ করে থাকে।