বাইশতম অধ্যায়
পরিবার সংগঠন ও তার বাস্তবরূপ
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের পরিবার সংগঠন কর্মসূচী শুরু করলে তাতে সফলতা লাভ করে। শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানকারী সংস্থাগুলো অকারণে এই ব্যবস্থার ওপর অত্যন্ত ক্ষ্যাপা ছিল। সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে এই ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন দায়িত্বশীল পর্যায়ের লোক যখনই আমার সাথে সাক্ষাত করেছেন সর্বদাই আমাকে পারিবারিক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবশ্যই প্রশ্ন করেছেন। তার সর্বদাই এরূপ সন্দেহ পোষণ করেছেন যে, ইখওয়ানুল মুসলিমুন এই ব্যবস্থা পুনরায় শুরু করেছে। আমি বার বার তাদেরকে নিশ্চয়তা প্রদান করি যে, এ ব্যবস্থা চালু করা হয়নি। তথাপি তারা কিছুতেই একথা মেনে নিতে প্রস্তুত হয়নি। বিষয়টি যখন তিক্ততার সৃষ্টি করে তখন আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলতে হয় “যদি তোমরা এই ব্যবস্থা কার্যকরী দেখতে পাও তাহলে তাতে অংশগ্রহণকারী ইখওয়ানের ঘাড় মটকে দাও।”
প্রকৃত ব্যাপার হলো, পরিবার সংগঠনের ব্যাপারে সিকিউরিটিওয়ালাদের উদ্বেগ ও সংশয়ের কোন কারণ আজ পর্যন্তও আমি জানতে পরিনি। সিকিউরিটির জনৈক ব্যাক্তি একবার আমাকে বলেছিল যে, বাহ্যিকভাবে এই ব্যবস্থা বিপদজ্জনক বলে মনে হয় না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা এতই বিপদজ্জনক যে, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এর সাহায্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেকে সশস্ত্র করে তোলা যেতে পারে- আমি এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বলতে চাই যে, যদি দল ও সংগঠনের মধ্যে ইসলামী প্রশিক্ষণের জন্য এ ব্যবস্থা চালূ করা যায় তাহলে সুদূর প্রসারী সুফল পরিদৃষ্ট হবে।
এই ব্যবস্থার পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে তা হবে উত্তম। বিভিন্ন পরিবারের যুবক- যারা আত্মীয়তা কিংবা প্রতিবেশী হওয়ার দিক দিয়ে ঘনিষ্টতার দাবী রাখে কোন এক জায়গায় একত্রিত হয়ে বসতো যেখানে কুরআন পাঠ হাদীস মুখস্ত করা রাসূলের জীবনী ফিকাহ্ এবং তাফসীর চর্চা করা তাদের কর্মসূচীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। উপস্থিত লোকদের প্রত্যেককে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হওয়ার মত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। সাথে সাথে যুব সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ককে ইসলামী নীতির ওপর মজবুত করে দেয়া হতো। নিজে নিজের পরিবারের সদস্য, নিজের সমাজ এবং সামগ্রিকভাবে নিজের জাতি সম্পর্কে তার ওপর বর্তানো দায়িত্বের অনুভূতি তাদের অন্তরে জাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হতো। কোন কোন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কলেও এ ধরনের ব্যবস্থা চালু ছিল। অতএব আমি বুঝতে পাডির না যে, শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলো কেন ইখওয়ানুল মুসলিমুনের এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করে থাকে?
মুসলিম এবং খৃষ্টান নির্বিশেষে আমি মিসরের সকল যুব সমাজ এবং তাদের সকল প্রকার সংগঠন ও দলগুলোকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি যেন তারা এই ব্যবস্থা অধ্যয়ন করে দেখে এবং নিজ নিজ সাংগঠনিক নেতৃত্বের অধীন এবং তাদের সক্রিয় তত্বাবধানে এই অভিজ্ঞতা থেকে লাভবান হতে চেষ্টা করেন। ইখওয়ানের ওপর নিষেধজ্ঞা থাকার কারণে আমি ইখওয়ানকে বলবো, যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ্র ইচ্ছায় এই নিষেধাজ্ঞা উঠে না যায় ততদিন তারা যেন এই ব্যবস্থা থেকে বিরত থাকে। অতপর যখন আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা হয় এবং এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় তাহলে তারা যেন এই অনুপম প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচী সোৎসাহে শুরু করে দেয়। আমার ধারণা যদি এ সময় ইখওয়ানের কোন পর্যায় এই পদ্ধতি চালু থাকতো তাহলে আইন শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ নিশ্চিতই তাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতো। আমার ভাবতেও অবাক লাগে যে, একদিকে শান্তি ও নিরাপত্তার দায়িতে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ পরিবার সংগঠনকে খতম করে বসে আছে। অপর দিকে সরকার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দলের যুব শাখা প্রতিষ্ঠাকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখছে এবং তাদেরকে সাহায্যও করছে। এ ধরনের গ্রুপ সৃষ্টি করায় মারাত্মক ক্ষতিও আছে। কেননা এভবে ছাত্র সমাজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নৈরাজ্য ও সন্ত্রসী তৎপরতাও। এসর গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্রগণ তাদের শিক্ষা জীবন সমাপনের পর কর্মজীবনেও একে অন্যের বিরুদ্ধে খড়গ হস্ত ও মারমুখী ভূমিকা পালন করে থকে। যে কাজ অন্যদের জন্য অনুমোদনযোগ্য তাই আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। আমরা (আমাদের সরকার) কবে নাগাদ যাবতীয় টালবাহানা বাদ দিয়ে সোজা সরল পথ অবলম্বনের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
বলে দিন যে, সেই সুদিন হয়তো খুব বেশী দূরে নয়!
গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের পার্থক্য
আমরা আল্লাহ্ তায়ালার নিকট সর্বদা এই মর্মে দোয়া করছি যেন তিনি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সরকার প্রধানদেরকে সিরাতুল মুসতাকিমের ওপর সর্বদা অবিচলভাবে চলার প্রয়োজনীয় হোদায়াত দান করেন। আজ পরিস্থিতি এমন পর্যয়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে যে, আমাদের দেশগুলোতে সংবাদপত্রগুলোকে লাল ব্যানার হেডে এই সচিত্র সংবাদ ছাপাতে হয় যে, অমুক রাষ্ট্র প্রধান কিংবা সরকারী কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যাক্তিত্ব খোলা গাড়ীতে করে অমুক জায়গায় পরিদর্শনে গিয়েছেন। যেন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। যে সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা জরুরী। মূলত এ শাসকগোষ্ঠী তাদের গৃহীত আচরণ ও কর্মকান্ডের ফলে জনগণের বিরাগভাজন হয়ে পড়েছে। ফলে তার সর্বদা তাদের জীবন বিপন্ন দেখতে পায়। মিথ্যা ধারণা দেয়ার জন্য কখনো কখানো এমন প্রদর্শনীর মহড়া দেয়া হয়ে থাকে যা অত্যন্ত হাস্যকর এবং কৃত্রিমতার নমুনা বলে মনে হয়। যদি কোন শাসনকর্তা তার দেশবাসীর নিকট নিরাপদ থাকতে না পারে তবে তার জন্য নিরাপত্তার জায়গা কোথায় পাওয়া যাবে?
উন্নত বিশ্বির রাষ্ট্রগুলোতে বড় বড় অফিসার ও রাজকর্মচারীগণ এমন কি রাষ্ট্র প্রধানগণও খোলা গাড়ীতে চড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান অথচ কোন ব্যক্তি তাদের প্রতি একটুখানি বিম্ময় বিস্ফরিত নেত্রে ফিরেও তাকায় না। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপতিদের ব্যাপারেতো এতদূর সুখ্যাতি রয়েছে যে, তারা তদের দেশের রাজপথে সাধারণ মানুষের ন্যায় নিশ্চিন্ত মনে মোটর সাইকেলে আরোহণ করে দিবারাত্র ঘোরাফেরা করে থাকেন। যদি কখনো কোন দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ও তাহলে বলা যায় যে, যতদিন দুনিলা টিকে থাকবে ততদিন এরূপ দুর্ঘটনা ঘটতে থাকবে। রিগানের ওপর প্রাণ নাশী হামলা করা হয়েছিল। বর্তমান রোমান ক্যাথলিক পোপের ওপরও অনুরূপ আক্রমণ করা হয়ছিল এবং জন কেনেডিকে হত্যঅ পর্যন্ত করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ঐসব দেশের সংবাদপত্রে লাল ব্যানার হেডে কখনো এ খবর প্রকাশিত হয় না যে, অমুক রাষ্ট্র প্রধান খোলা গাড়ীতে করে অমুক শহরে গিয়েছিলেন।
ইখওয়ানুল মুসলিমুন ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ
ইখওয়ানুল মুসলিমুন ইয়ামান অথবা জার্মানীতে অস্ত্র ব্যবহারের ট্রেনিং নিচ্ছে এ ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরনের অপবাদ আরোপকারীদের বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। আমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলতে চাই যে, এ অপরাধ থেকে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত। ধরা যাক তর্কের খাতিরে আমরা না হয় মেনেই নিলাম যে, ইখওয়ানুল মুসলিমুন অস্ত্র ব্যবহারের ট্রেনিং গ্রহণ করেছে। এই অভিযোগ আরোপকারীরা কি জানে না যে, ইয়ামানে প্রত্যেক ব্যক্তি প্রকাশ্যে তার অস্ত্র নিয়ে চলা ফেরা করে এবং প্রত্যেক ইয়ামানী নিজের কাছে তলোয়ার রাখা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে। যদি কোন ইয়ামানবাসী ইখওয়ানীকে তার দেশের অন্যান্য অধিবাসীদের মত অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতে দেখা যায় তাহলে এরূপ মন্তব্য করা কি সমীচিন হবে যে, আমরা এসব অস্ত্রশস্ত্রকে মিসরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নামান্তর বলে অভিহিত করবো? আল্লাহই ভাল জানেন এসব লোক এ ধরনের অবান্তর কথাবার্তা বলে বেড়ানোতে কি ধরনের আনন্দ বোধ করে? যদি দশ বিশ একশ জন ইখওয়ানের নিকট অস্ত্রশস্ত্র থেকেও থাকে তাহলে তা লক্ষ লক্ষ সশস্ত্র সেনা, পুলিশ এবং সিকিউুরিটির বিরুদ্ধে মিসরে কি করতে পারবে? যদি কোন মিসরীয় ইখওয়ানী জীবিকার সন্ধানে ইয়ামানে চলে যায় তাহলে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তার সাথে অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক আচরণের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা হয়। অথচ বেচারা সেখানে অতি কষ্টে তার জীবিকা আহরণেল জন্য সময় বের করে। অস্ত্রের ট্রেনিং যার জন্য পর্যপ্ত অবকাশের প্রয়োজন তা কি করে তার জন্য এত সুলভ হতে পারে? আজ পর্যন্ত এরা কোন ইখওয়ানীর বিরুদ্ধে অস্ত্রের ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে একটা প্রমাণও কোন আদালতে পেশ করতে সমর্থ হয়নি। তথাপি ঢোল অনবরত বাজিয়ে চলেছেন।
আমি কয়েক বার জার্মানীতে গিয়েছি। আমি সেখানকার সিকিউরিটি অফিসারদেরকে কোনে কোন সময় প্রশ্ন করেছি যে, জার্মানীর জংগলে কি মানুষকে অস্ত্রের ট্রেনিং দেয়ার অনুমতি আছে?” প্রত্যুত্তরে তারা বলেছে কখখনো নয়। কেননা জার্মানীর আইন এটা অপরাধ এবং এ অপরাধের জন্য অত্যন্ত কঠোর মাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
ভিন্ন ভিন্ন মানদন্ড
মুসলিম জাহানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণের জন্য কি সেই সময় আসেনি যখন তারা চোখ খুলে বাস্তবতাকে মেনে নেবে। ইখওয়ানুল মুসলিমুন এ ধরনের কাজ থেকে বহু দূরে থাকে এবং আল্লাহ তাদেরকে এমন বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন যে তারা অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয় না। নিবাপত্তা বিভাগের লোকেরা ইখওয়ান ব্যতীত আর কারো পক্ষ থেকে বিপদ দেখতে পায় না। এমনকি একটি আরব দেশের জনৈক দায়িত্বশীল ব্যক্তি এরূপ মন্তব্য করতেও দ্বিধা করেননি যে, ইখওয়ান ইহুদীবাদীদের চেয়েও অধিক বিপজ্জনক। একটু অনুমান করুন যে, এই লোকদের বিবেক-বুদ্ধি কোন্ পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে? দুনিয়ার কোন প্রত্যন্ত এলাকায়ও যদি কোন মানুষকে কষ্ট দেয়া হয় তাহলে পাশ্চাত্যের তথাকথিত সভ্য জগতে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু মুসলমান এবং বিশেষ করে ইখওয়ানের ব্যাপারে সভ্যতার ঝান্ডবাহীদের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদেরকে জঘন্যতম নির্যাতনের শিকার বানানো হলেও কেউ টু শব্দ পর্যন্ত করে না। “ আল আহরার” পত্রিকায় আমি উস্তাদ আল ফারুক আবদুস সালামের একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম যাতে তিনি আমাদের সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন যে, আমরা কারো কোন সাহায্যের মুখাপেক্ষী নই। বরং আমাদের জন্য মহীয়ান গরীয়ান সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্যই যথেস্ট।
তাঁরই সম্মুখে আনুগত্যের মস্তক রয়েছে অবনত
গণপ্রজাতন্ত্রী সুদানের প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ জাফর নিমেরী তাঁর দেশে ইসলামী শরীয়াত কার্যতরী করার ঘোষণা দিলে আমরা যারপরনেই উল্লসিত হই। দৈনিক ‘আল আখবারের’ কর্মকর্তাদের একজন আমাকে অনুরোধ জানয় যে, আমি যেন সুদানী পার্লামেন্টের মুখপত্রে প্রকাশ করার জন্য এই বিষয়ে প্রতিবেদন লিখে পাঠাই। সেই সময় কতিপয় লোক এরূপ প্রপাগান্ডা চালাচ্ছিলো যে, নিমেরী সাহেবের নিয়াত পরিষ্কার নয়। তিনি শুধু তার পতনোম্মুখ রাজনৈতিক প্রভাব পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরুপ প্রচারণায় আমার অন্তরে বিন্দুমাত্র প্রভাব সৃষ্টি হয়নি। আমি ধারণা করেছিলাম, যদি এই ঘোষণায় কিছু দুর্বলতা থেকেও থাকে তবুও পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করে নেয়া যেতে পারে। অন্ততপক্ষে সঠিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা তো প্রদান করা হয়েছে…………..সেই সময়েই প্রেসিডেন্ট জাফর নিমেরীর সাক্ষাতকার কোন কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যা দেখে আমি বিম্ময় বিমূঢ় হয়ে পড়ি। আমাদের সুনাম সুখ্যাতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করতে কসুর করেননি যে, “ইখওয়ানুল মুসলিমুন” প্রকৃতপক্ষে শয়তানের ভাই। আমি এই খবর পড়ে মনে মনে বলেছিলামঃ
দেখ সে-ও বলছে যে, এরা সম্পূর্ণ চরিত্রহীন। এই যদি আমার জানা থাকতো। তাহলে আমি আমার বাড়ী ঘর বিলিয়ে দিতাম না।
আমাদের ইখওয়ানী ভাইয়েরা সুদানে নিমেরী সাহেবের হাতে বাইয়াত করেছেন এবং সুদানের ইখওয়ানের প্রধান ডাক্তার হাসান আল তুরাবী সদর নিমেরীর উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন। এরপরও আপনার তার বিবৃতি লক্ষ্য করেছেন যেন তাতে কি ধরনের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আহ! আমাদের শাসকরা যদি নিজেদের এই আচরণের পূর্ণমূল্যায়ন করতো! এই ভারসাম্যহীন কর্মতৎপরতা আর কতদিন অব্যাহত থাকবে। নিয়াতের অবস্থা তো আল্লাহই ভাল জনেন। আর উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, আমরা নিয়াতের ফায়সালা সেই মহান সত্তার ওপরই ছেড়ে দেবো যিনি মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যে আছেন এবং যার নিকট কোন নিষয়ই গোপন নেই। আর আমার ব্যাপার হলো, আমি কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করি না।
আল আহরাম পত্রিকা আমার সম্পর্কেও একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই সময় মিসর ও সুদানের মধ্যে ঐক্যের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা চলছিল। প্রতিবেদক আমার সাথে সম্পর্কিত করে লিখেছিল যে, আমি মিসর ও সুদানের পূর্ণাঙ্গ ঐক্যের দাবীদার। আমি বলতে চাই, এই মন্তব্য যথার্থ। দু’টি দেশের সামগ্রিক কল্যাণ-এর মধ্যেই নিহিত যে, তারা একই জাতি ও একই রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাক। এতে সমগ্র মুসলিম জাহানই লাভবান হবে। এ একটা প্রত্যাশা মাত্র। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার জন্য কিছুই অসম্বব নয়। এই আকাংখাকে তিনি অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবে রুপায়িত করে দেবেন।
মিসরেও শরীয়াতেকে সব আইনের উৎস নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে সুদান সরকারও এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। নিঃসেন্দেহে দু’টি দেশেই শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থাকে শরীয়াতের আলোকে ঢেলে সাজালে ঐক্য ও সংহতির পক্ষে তা হবে শুভ পদক্ষেপ। আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করছি তিনি যেন আমার এই মনোবাঞ্চা পূর্ণ করে দেন।
তোমার বাহুতো তাওহীদের শক্তিতে শক্তিশালী
ইসলামই তোমার দেশ আর তুমি মোস্তফারই অনুসারী।
আমেরিকান দূতাবাসের যোগাযোগ
১৯৭৯,১৯৮০ এবং ১৯৮১ সালে কায়রোস্থ আমেরিকান দূতাবাসের প্রেস এটাচি মিষ্টার জোশেফ লরেন্স আমার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে মিলিত হন। “আদ দাওয়া” পত্রিকার মাধ্যমে তিনি যকন সর্বপ্রথম আমার সহিত মিলিত হন তখন খুবই ভাল আবেগ অনুভুতি প্রকাশ করেন। তাঁর সাথে ছিলেন তারই দোভাষী সিরানাদিয়াতুল কিলানী। এসব সাক্ষাতকার সম্পর্কে আমি তাৎক্ষণিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে ছিলাম। কেননা মিষ্টার ইভান্সের ব্যাপারটি আমার তখনো পর্যন্ত মনে ছিল। (ইতিপূর্বে আমিস এই বিষয়ের উল্লেখ করে এসেছি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব সাক্ষাতকারের কোন বিরোধিতা করেনি। যদি তারা আপত্তি উত্থাপন করতো তাহলে আমি সাথে সাথে মিষ্টার জোশেফের ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয়- সন্দেহ সৃষ্টি হতে দেয়ার পক্ষপাতি ছিলাম না।
১৯৮০ সালের জুন মাসে কায়রোস্থ বৃটিশ দূতাবাসের লোকজন আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং আমাকে এই মর্মে অবহিত করে যে, বৃটিনের প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী “আদ দাওয়া” পত্রিকার অফিসে আসতে চান। আমি বললামঃ এই আগমনের উদ্দেশ্য যদি পারস্পরিক পরিচিতি এবং অফিসের কাজকর্ম সম্পর্কে অবগতি লাভ করা ও অন্যান্য প্রশাসনিক বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে স্বগতম আর যদি সাক্ষাতের উদ্দেশ্যেই হয় রাজনৈতিক আলোচনা করা তাহলে আমি আমার অক্ষমতা প্রকাশ করছি।” ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আমাদের দপ্তরে আগমনের প্রোগ্রাম বাতিল করে দেয়। তৎকালে পার্লামেন্টের নির্দলীয় সদস্য এবং বিরোধীদলের রাজনৈতিক দলগুলো অধিকাংশ সময় প্রেম কনফারেন্সে মিলিত হতেন এবং সরকারের ওপর এলোপাথাড়ী আক্রমণ চালাতেন। আমরা ছিলাম সম্পূর্ণ নীরব। তা সত্ত্বেও আমাদের ওপর কঠোর প্রহরা লাগানো হয়েছিল। এই কর্মপদ্ধতির কি কোন ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব? সম্ভবত বিষয়টি এতই সুস্পষ্ট যে তা কোন প্রকার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে না।….-এমনিতেই আমরা সকল কঠোরতাকে সহ্য করতাম। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সেদিনটি অবশ্যই আসবে যেদিন কোন রকম কম বেশী ছাড়াই আমাদের সকল কর্মকান্ডের চুলচেরা হিসেবে হবে এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে সীমারেখা টেনে দেয়া হবে।
“আদ দাওয়া” অফিসে ইহুদী বুদ্ধিজীবিদের আগমন
সুধী পাঠক বৃন্দ নিশ্চয়ই বিস্মিত হবেন না যে, তেল আবিব ইউনিভারসিটির চারজন শিক্ষক “আদ দাওয়া” সাময়িকীর দপ্তরে আগমন করেন। তখন আমি ছিলাম দেশের বাইরে। সম্মনিত ও মহামান্য ভ্রাতা মোস্তফা মাশহুরের সাথে তাদের আলাপ হয়। মোস্তফা মশহুর অত্যন্ত বুদ্ধিমাত্তা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে এবং ইসলামী শিষ্টাচার ও শালীনতা সৌজন্যের সাথে এই মেহমানদের সাথে কথা বলেন। আলোচনার ফাঁকে ইহুদী অধ্যাপকগণের একজন বলেন “মিসরে শান্তি চুক্তির যে বিরোধিতা করা হচ্ছে তা আমাদের নিকট কোন বিস্ময় উদ্রেককারী ব্যাপার নয়। কেননা ইস্রাঈলেও এই চুক্তির বিরোধিতাকারীঃ “আামদের এখানে এই চুক্তির বিরোধিতা করা হচ্ছে এ জন্যে যে, এ চুক্তির সাহায্যে ফিলিস্তিন জাতির সমস্ত অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে আপনাদের ওখানে এর বিরুদ্ধাচরণ করা হচ্ছে এ জন্য যে, আরো অধিকার কেন কেড়ে নেয়া হলো না? আগত অতিথিগণ পত্যুত্তরে মৃদু হাসির রেখা মুখে ফুটিয়ে তোলা ছাড়া আর কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে সমর্থ হয়নি।
তারা যখন আমাদের দফতরে এসে উপস্থিত হন তখন দপ্তরে উপস্থিত ইখওয়ান ইসলামী রীতি পদ্ধতি অনুযায়ী মার্জিতভাবে তাদেরকে সাদর অর্ভ্যথনা জ্ঞাপন করেন। এবং অনুরূপভাবে তাদের বিদায় অভিবাদনও জানিয়ে বিদায় করেন। কিন্তু এভাবে ইহুদীদের আমাদের দেশে আগমন তাদের উগ্র ও একরোখা মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তাদের সশরীরের আগমন যেন বাস্তবে একথাই বলছে যে, “আমরা এসে গেছি তোমাদের সরকার সরকারীভাবে ফিলিস্তিনে আমাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধাচরণ ও স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা করে তোমরা আমাদের কি কেড়ে নিতে পেরেছো?
তাদের গর্বিত আচরণ এবং আমাদের দেশে বুক টান করে বেড়ানো আমাদের কাছে বিষসদৃশ্য মনে হয়। তা সত্ত্বেও যখনই তারা আমাদের অফিসে এসে যায় তখন আমরা তাদের সাথে ইসলামী নৈতিক চরিত্র ও শিষ্টাচারের প্রদর্শনী করাকে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মানে করি। এরূপ পরিস্থিতিতে আমরা কখনো তাদের অপমান করার চেষ্টা করিনি। তবে এটাও ধ্রুব সত্য যে, ইখওয়ানুল মুসলিমুনের প্রতি যে পরিমাণ বিদ্বেষ ঘৃণা ইস্রাঈলের রয়েছে তেমনটি সারা দুনিয়ায় আর কারো নেই।
ইখওয়ানকে সন্ত্রাসী, রক্ত পিপাসু গোঁড়া এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভংগীর অধিকারী প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। ইস্রাঈলী রাশিয়ান ও আমেরিকান থেকে প্রতিদিন আমাদের এসব উপাধি প্রচারিত হয়ে থাকে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের আতিথেয়তা
এখানে গণপ্রজাতন্ত্রী পকিস্তানের পেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হকের কিছু কীর্তিগাথা আলোচনা করাটা জরুরী বলে মনে করি। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমন্ত্রণক্রমে তাদের মেহমান হিসেবে আমি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। জেনারেল জিয়াউল হক যখন বিষয়টি জানতে পারেন তখন তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আমি যতদিন পাকিস্তানে অবস্থান করবো ততদিন যেন তার আতিথেয়তা গ্রহণ করি। আমার জন্য তিনি একটা বিশেষ গাড়ী ও একজন দেহরক্ষী পাঠিয়ে দেন। প্রেসিডেন্ট ভবনে তিনি নিজে আমাকে সাদর অর্ভ্যথনা জ্ঞাপন করেন। আমি যখন তার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য যাই তখন জনাব মিয়া তোফায়েল মুহাম্মাদ (আমীর জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান), জনাব খলীল হামেদী এবং দু’জন ইখওয়ানী সাথী জনাব মোস্তফা মাশহুর ও জনাব ইবরাহীম শারফ আমার সাথে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট সাহেব আমাদের সাথে আন্তরিকতা এবং সৌভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ করেন। পাকিস্তানের অনেক মূল্যবান পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করলেন যার উদ্দেশ্য ইসলামী পুণর্জাগরণ যেমন প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্তব পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে আরবী ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যে মহামান্য প্রেসিডেন্টকে তার যেসব নিষ্ঠাপূর্ণ প্রয়াস প্রচেষ্টা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ সাধন করতে উদ্যোগী হয়েছেন তা যেন সফলতা লাভ করে এবং স্বীয় দেশ মাতৃকার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির জন্য তাঁর মহৎ আকাংখাগুলোকে বাস্তবরূপ দান করেন।
আফগান জিহাদ এবং ইখওয়ানুল মুসলিমুন
আফগানিস্তানে উদ্ভূত বেদনাদায়ক পরিস্থিতির উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম এই পাশবিক হামলা রাশিয়া এবং আমেরিকার মুসলিম জাহানের বিরুদ্ধে সম্মিলিত চক্রান্তের ফল মাত্র। আফগানিস্তানকে জবর দখল করার এ দু’টি দেশের পূর্ণাংগ ঐকমত্যে হয়েছেল। আমেরিকার পক্ষ থেকে মৌখিক জমাখরচ আর মাঝেমধ্যে রাশিয়ার নিন্দায় দু’য়েকটি করে বিবৃতি প্রদান দুনিয়াবাসীর চোখে ধূলা নিক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছু নয়। আমার আফসোস যে, মিসিরীয় জাতি সামষ্টিকভাবে এই নাজুক সমস্যার ব্যাপারে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কথা তা করেনে। এই জবর দখলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনী মুক্তি সংস্থার ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ নেতিবাচক। তারা জবরদখলকারী রুশ একনায়কত্বকে খোলাখুলি সমর্থন করেছে। যতদূর পর্যন্ত ইখওয়ানুল মুসলিমুন আফগানিস্তানের সমস্যাকে তাদের নিজেদের সমস্যা বলে মনে করে। সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আমাদের ভূমিকা সর্বদাই ইতিবাচক এবং বাস্তবসম্মত। এই সমস্যার বিশদ আলোচনা-পর্যালোচনার জন্য আমরা আল আযহারে এক কনফারেন্সের আয়োজন করি। এতে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ইখওয়ানুল মুসলিমুন আফগানিস্তানের জিহাদে কার্যত যোগদান করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে আবেদন করেন। যার ফলে যুবকরা উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে “আদ দাওয়া” পত্রিকার অফিসে এসে নিজ নিজ নাম ও ঠিকানা তালিকাভুক্ত করে। জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিত এসব যুবক তাদের আফগান ভাইদের কাঁধ মিলিয়ে রাশিয়ান সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত মিসর সরকার তাদেরকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। ওপরে যে কনফারেন্সের উল্লেক করা হয়েছে তাতে আমি উপস্থিত লোকদেরকে একটা কতা বলেছিলাম, তাহলো মিসর সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণের ভাষ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের মুজাহিদদেরকে মিসর থেকে অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হচ্ছিলো। কর্তা ব্যক্তিদের মুখে যখন আমি এই খবর শুনতে পাই তখন স্বভাবগতভাবেই খুবই আনন্দ বোধ হয়। কিন্তু আমার এটা জানা নেই যে, বাস্তবিকই কথিত এই অস্ত্রশস্ত্র মুজাহিদদের হাতে গিয়ে পৌছছে নাকি মাত্র পাবলিসিটির স্বার্থে আমার নিকট এই বিবৃতি প্রদান করানো হয়েছে।
একথা বলতে আমার কোন বাধা নেই যে, মিসর থেকে অন্যান্য দেশে চলে যাওয়া ইখওয়ান কথায় ও কাজে সকল প্রকারে তাদের আফগান ভাইদেরকে সাধ্যনুযায়ী সাহায্য করছে। তারা ঔষধপত্রও সংগ্রহ করে এবং চিকিৎসকদেরকেও সেখানে প্রেরণ করতে থাকে। এতদ্ব্যতীত তারা বেশ কিছু সংখ্যক ভ্রাম্যমান চিকিৎসা কেন্দ্র ও আফগান মুজাহিদ ও মুহাজিরগণের জন্য খুলেছে………এসব খিদমত প্রশংসনীয় ও মূল্যবান। কিন্তু একটা সুপার পাওয়ারের সামনে বাঁধা বাঁধার জন্য এসব প্রচেষ্টা মহাসমুদ্রের বিপুল জলরাশির মধ্যে বারি কণা অপেক্ষা বেশি কিছু নয়। এ বিষয়ের অধিক কিছু বলা উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন আফগানিস্তানের জিহাদের ব্যাপারে ইখওয়ানের আবেগ ও অনুভূতি কেমন।
হয়তো আমার কথা তোমার ভাল লাগবে
প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ হোসনী মোবারক কিছু ভাল পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তার প্রেসিডেন্টশীপের শুরু করেন। রাজনৈতিক বন্দী এবং নজরবন্দীদের মুক্তি প্রদান করেন। এবং সংবাদপত্র সাময়িকীকে সমালোচনা করার অধিকার প্রদান করা হয়।
এই মহতি উদ্যেগের সাথে সাথে এমন কতিপয় বিষয় রয়েছে যাতে সংস্কার আনয়ন করা আবশ্যক। উদাহরণ স্বরূপ প্রেসিডেন্ট একই সাথে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলেরও প্রধান। তাঁকে এই দু’টির মধ্যে যে কোন একটা পদই রাখা উচিত।
মানুষ আমাকে একথাও জিজ্ঞেস করে যে, তোমরা রাষ্ট্রপতি হোসনী মোবারকের সাথে এখনো পর্যন্ত সাক্ষাত করতে যাওনি কেন? যেভাবে মেলামেশা করতে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টগণের সাথে। এর জবাব হচ্ছে, সাক্ষাতের এ বিষয়টি প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারাধীন কারো সাথে মিলিত হওয়া না হওয়ায় আমাদের মান-সম্মানের কোন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে না। তথাপি প্রেসিডেন্ট যদি আমার সাথে সাক্ষাত করতে চান তাহলে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
নির্বাচনী ময়দানে
১৯৮১ সাথে যখন আমি জেলখানা থেকে মুক্তি লাভ করি তখন ইখওয়ানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার কারণে আমাদের কর্মতৎপরতা কিভাবে গতিদান করতে পারি। ইত্যবসরে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য রাস্তা খুলে দেন। দেখতে দেখতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা হয়ে যায়। আমরা এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য পথও সুগম করে ফেলি।
প্রথম প্রথম আমাদের ধারণা ছিল যে, পৃথক নির্বাচনী এলাকার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা একদিক থেকে আমাদের জন্য ছিল একটা কঠিন অবস্থা। কেননা এই পদ্ধতিতে নির্বাচনী যুদ্ধে খরচ পড়ে অনেক বেশী। যা বহন করার শক্তি ও সামর্থ আমাদের ছিল না। সরকারী দল তাদের নিজেদের স্বার্থে সারা দেশে এমনভাবে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করে যেন তাতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্যের সাহয্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এরূপ নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুরূপ প্রতিনিধিত্বের মূলনীতি থেকেও ছিল সুস্পষ্ট পদঙ্খলন। কেননা এটা ছিল দুনিয়াতে এ ধরনের একমাত্র নির্বাচন পদ্ধতি। সে যাই হোক এই পদ্ধতির নির্বাচনে বহু কম খরচ নির্বাচনী যুদ্ধে মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল। সরকারী দল বহু প্রপাহান্ডা চালায় যে, বাহির থেকে ইখওয়ানের জন্য লক্ষ লক্ষ পাউন্ড সাহায্য আসছে। আমাদের জানা নেই এই সাহায্য কোথায় চলে গেছে? আমাদের হাতে পর্যন্ত তো এসে পৌছায়নি। নতুন এই নিয়মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যদিও খরচ হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম। তথাপি আমরা আজ পর্যন্ত নির্বাচনী খরচের জন্য গৃহীত ঋণের বোঝা টেনে যাচ্ছি।
ইখওয়ানের বাজেট সদস্য ও কর্মীদের এয়ানত দ্বারা পুরো হয়ে থাকে। আমরা কখনো কোন সরকার কিংবা ইখওয়ানী ব্যক্তি এবং সংস্থার নিকট সাহায্যের হস্ত প্রসারিত করিনি। কিংবা গ্রহণ করিনি। নির্বাচনী ঋণও পর্যায়ক্রমে আমরা আমাদের কর্মী ও সদস্যগণের আর্থিক কুরবানীর সাহায্যে ইনশাআল্লাহ পরিশোধ করেত সক্ষম হবো।