ঊনত্রিশতম অধ্যায়
ইসলামী ঐক্যের আহবায়ক
ইমাম হামানুল বান্না শহীদ ছিলেন উম্মাহর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রনায়ক। পারস্পরিক মতোবিরোধের প্রতি ছিল তাঁর প্রবল ঘৃণা। তাঁর বক্তৃতা বিবৃতি মুমলিম উম্মাহর সাঝে সস্পৃতি ও সৌহার্দ সৃষ্টি করার লক্ষে কেন্দ্রীভূত থাকতো। তিনি কখনো তাঁর কথা ও লিখনীতে এমন কোন শব্দ বের হতে দিতেন না যাতে করো মনে কষ্ট হতে পারে। ইখওয়ানুল মুসিলিমুনের কর্মনীতিই হচ্ছে এই যে, সকল বিরোধ ও অনৈক্যের অবসান ঘটিয়ে সব মুসলিমকে বুনিয়াদী নীতিমালার ওপর ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কুরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ (আরবী *******) “আর নিশ্চিয়ই তোমাদের এই উম্মাত একই উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত।”
এই শতাব্দীর চতুর্থ দশকে শিয়া মাযহাবের একজন আলেম সাইয়েদ আল কুমাই ইখওয়ানের মেহমান হয়ে কেন্দ্রীয় অফিসে অবস্থান করছিরেন। সে আমলে ইমাম এ প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন যে, বিভিন্ন ইসলামী মাযহাবসমূহের মধ্যে সকল সতপার্থক্যের মূলোৎপাটন করে ফেলতে হবে যাতে ইসলামের শত্রুদের জন্য ইসলামী উম্মাহর মধ্যে মতভেদ ও কলহ সৃষ্টি করে দলে উপদলে শতধা বিভক্ত করার সুযোগ লাভ করতে না পারে। এটা সেই সময়ের কথা যখন আমরা তাঁর নিকট জানতে চাইলাম যে, সুন্নী ও শিয়াদের মধ্যে পার্থক্য কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, এ ধরনের বিতর্কে জড়িত হওয়া একেবারেই নিরর্থক। এরূপ আলোচনা সমালোচনা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের করার মত আরো অনেক সমালোচনা রয়েছে। আমাদের দুশমনরা সরিষার পাহাড় বানিয়ে আমাদের সাঝে আগুনের লেলিহান শিখা প্রজ্জলিত করতে থাকে। এ কারণে আমাদের গতিবিধি ও আচার আচরণ অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। আমরা পুনরায় আরজ করলাম “আমাদের উদ্দেশ্য তো মতাপার্থক্যকে উৎসাহিত করা নয় বরং আমরা শুধু আমাদের জ্ঞানের জগতকে আরো সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে আপনার নিকট এ প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করছি। নিসন্দেহে শিয়া ও সুন্নী মাযহাবগুলোর ওপর অসংখ্য বই-পুস্তক বর্তমান রয়েছে। কিন্তু আমাদের হাতে এত অবসর কোথায় যে, আমরা সেগুলোর চর্চায় সময় দিতে পারি।”
ইমাম শহীদ জবাব দিলেনঃ “সংক্ষেপে এতটুকু জেনে রাখুন যে, সুন্নী ও শিয়া সকলেই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর’ ওপর ঈমান পোষণ করে থাকে। আর এই কালেমাই আমাদের আকীদা-বিশ্বাসের মৌলিক ভিত্তি। অতএব সুন্নী ও শিয়া সকলেই নির্বিশেষে মুসলিম; নীতিগতভাবে এদর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। অবশ্য খুঁটিনাটি ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তথাপি সেসব মতভেদ এমন নয় যে, তা দূর করা যায় না।”
আমরা আবারো আরজ করলাম, “একথাটাকে একটা উদাহরণের সাহায্যে আমাদের সম্মুখে স্পষ্ট করে দিন।” তিনি জবাবে বললেনঃ আহলে সুন্নাতের নিকট চার ইমামের দিক থেকে চার মাসলাকে পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে শিয়াদের মাঝেও বহু ফেরকা লক্ষ্য করা যায়। যেমন শিয়া ইমামিয়া- বলা হয়ে থাকে যে, ইমাম ইসলামে বাধ্যতামূলক। এমনকি ইমাম ব্যতীত ইসলামের অস্তিত্বই কায়েম হতে পারে না। তারা বারজন ইমামের প্রবক্ত; আর এ জন্যই তাদেরকে “ইসনা আশারী” ও বলা হয়ে থাকে। তাদের মতে দ্বাদশ ইমাম গায়েব ও অদৃশ্য হয়ে গেছেন। যার পুনরামনের জন্য তারা প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। সেই ইমামের আগমনের পর তার নেতৃত্বে এসব লোক জিহাদের প্রক্ষপাতি। তাদের নিকট শরীয়াতের হিফাজত করা ইমামের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাঁর ফরমান ও দিকনির্দেশনা কোন প্রকার ওজর আপত্তি ছাড়াই মেনে চলা বাধ্যতামূলক এবং তাঁর ফায়সালাই চূড়ান্ত। নিসন্দেহে এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভংগী তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। কিন্তু এ মতপার্থক্যকে ভিত্তি করে তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয়া আমাদের জন্য আদৌ শোভনীয় নয়…।”
তিনি আরো বলেনঃ “আরও কিছু মতবিরোধ রয়েছে এমন যেগুলোর অপনোদন ও মূলোৎপাটন সম্ভবপর। উদাহরণ স্বরূপ শিয়াদের কোন কোন ফিরকা মোতা’ বা সাময়িক বিবাহের পক্ষপাতি। অনুরূপ আরো কতিপয় মতবিরোধপূর্ণ কথাবার্তা রয়েছে। উভয় মাযহাব পরস্পরে সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার সাথে জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে প্রত্যেক প্রত্যেকের সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রেখে নিজ নিজ ফিকাহর ওপর আমল করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে দু’মাসলাকই সুদীর্ঘ কাল থেকে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক ঝগড়া বিবাদ ছাড়াই সহঅবস্থান করে আসছে এবং উত্তম প্রতিবেশীর ন্যায় শান্তিময় জীবন যাপন করছে। বেশীর ভাগ মতপার্থক্য কেবল কিতাবের পাতায়ই পাওয়া যায়।
আবু লাহাব নীতির বিদায় ও নবী মোস্তাফা (সা)- এর আগমন
ইরাক এবং ইরানের মধ্যেকার যুদ্ধকে শিয়া সুন্নীর রঙে রঙিন করার চেষ্টা চলছে। অথচ এ লড়াই দ্বীনের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে না। বরং উভয় দেশই নিজ নিজ মিথ্যা গর্ব ও বাহ্যিক শৌর্য বীর্য প্রদর্শনের জন্য নিরপরাধ মনব গোষ্ঠীকে মৃত্যুর ঘাটে পৌছিয়ে দিচ্ছে। এভাবে দু’সম্প্রদায়ই আপনাপন জিদ ও হঠকারিতার মহড়া দিয়ে চলেছে্। অথচ তাদের এ অপরিণামদর্শী আচরণের অপূরণীয় ক্ষতির দায়দায়িত্ব বর্তাচ্ছে সামগ্রিকভাবে সমস্ত মুসলিম উম্মাহর ওপর। ইসলাম বিরোধী শক্তিসমুহ এ অযৌক্তিক ও ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধ দীর্ঘস্থয়ী করার জন্য উস্কানি দিয়ে চলেছে। এদিকে বিবদমান উভয় সম্প্রদায়ই এর সাথে নিজেদের মান-সম্মানের প্রশ্ন জড়িত বলে মনে করে। আমরা মনে করি যদি দু’গোত্রই নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে তাহলে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ও নিরাপত্তার দিগন্ত উন্মোচিত করতে পারে এবং ক্ষোভ ও ক্রোধ প্রশমিত করে ইনসাফ ও সুবিচারের পন্থা অবলম্বন করতে পারে। এতেই নিহিত রয়েছে উভয়ের কল্যাণ। সাস্প্রদায়িকতার বিদ্বেষে সংঘটিত এ সমর আত্মঘাতি হলাহল স্বরূপ। আফসোস! এ তিক্ত বাস্তবতা যদি যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলো উপলব্ধি করতে পারতো।
যাদের শৌর্য বীর্য
প্রাচ্যবিদ ও তাদের বিশ্বস্ত শাগরেদগণ অত্যন্ত নির্মমভাবে ইমাম হাসানুল বান্না ও তার সংগঠনের ওপর সন্ত্রাসের অভিযোগ আরোপ করে আসছে। আমরা বহবার তাদের এই অভিযোগের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছি। আল্লাহ সুবাহনাহু ওয়া তায়ালা কখনো কখনো এ দাওয়াতের পক্ষথেকে প্রতিরোধ করার জন্য কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে বেছে নেন। যেমন মিসরীয় টেলিভিশনে প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়ে থাকে, যার নাম দেয়া হয়েছে “নুদওয়াতুন লিরায়ী” (আলোচনা সভা)। এ অনুষ্ঠানের পরিচালক হচ্ছেন উস্তাদ হিলমী আল বালক। এতে আল আযহার ইত্যাদি স্থান থেকে বহু জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে থাকেন। ১৯৮৪ সানের ২৪শে আগষ্ট তারিখে আামি এ অনুষ্ঠান দেখে ছিলাম। অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে জাতীয় পরিষদগ সদস্য এবং স্বনাম ধন্য আলেম শাইখ আতিয়া সাকারও ছিলেন। শাইখ মুহাতারাম মিসরীয় ঐতিহাসিক ঘটনাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও দর্শকদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন। তিনি সন্তব্য করেন “আমি মিসরের উচ্চ ভূমি এলাকায় কর্মরত ছিলাম। ইত্যবসরে একবার ঘটনাক্রমে একজন ইসলামী দায়ীর সাথে আমরা সাক্ষাত হয়। তিনি অত্র এলাকায় প্রায়ই আগমন করতেন। এবং জনসাধারণকে ইসলামী রীতিনীতির প্রতি আহবান জানাতেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার দাওয়াতের কর্মপন্থা কি?” তখন তিনি জবাবে বললেন “আমাদের উদাহরণ একজন কৃষকেরই মত। যে কার্পাসের চাষ করে। বীজ বপন করার পূর্বে ভূমি উত্তমরূপে তৈরী করে নেয়। অম্কুর উদগমের পর ঘাস ও লতা-গুল্ম পরিষ্কার করে নেয়। আক্রমণকারী কীট-পতংগ থেকে সেগুলোকে রক্ষা করে। পাতা ও ফুলে লেগে যাওয়া পোকা মাকড় থেকেব তার নিরাপত্তা বিধান করা। চারাগুলো খুব হৃষ্ট পুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠে। তাতে ফুল আসে এবং ছঃয় বা সাত মাসের মধ্যে ফসল তৈরী হয়ে যায়। এ সুদীর্ঘ সময় চাষী ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে একের পর একটা দায়িত্ব পালন করে যেতে থাকে অব্যাহতভাবে। তারপর সে তার পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়। তখন সে তার ফসল নিয়ে যায় বড় বড় হাটে বাজারে। তদ্রূপ আমরাও আমাদের দাওয়াতী কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য সযত্ন প্রয়াস চালিয়ে থাকি। আমরা তাড়াহুড়া করা এবং কাঁচা ফল তোলার পক্ষপাতি নই।” উক্ত দায়ীয়ে ইসলাম সরহুমের কথায় আমি সীমাতিরিক্ত প্রভাবিত হয়ে পড়ি।” (শাইখ আতিয়া সাকারের কথা এখানেই শেষ হয়ে যায়।)। এটা ছিল হাসানুল বান্নারই যথার্থ চিত্রাম্কন। এ মনোবল ও কর্মনীতি ছিল তাঁরই উদ্ভাবিত।
এটা ছিল একজন মহাপ্রাণ শাইখের বলিষ্ঠ সাক্ষ্য। তিনি কোন প্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছাড়াই কেবলমাত্র সত্য বর্ণনা করার স্বার্থেই একথাগুলো উপস্থাপন করেন। রিপুর সেবাদাসদের এ সাক্ষ্যের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। অবশ্য এটা সত্য যে, শাইখ আতিয়া সাকার এ দায়ীর কথা বলতে গিয়ে তার নাম বর্ণনা করেননি। তথাপি সমগ্র দুনিয়া জানে যে, তিনি কে ছিলেন? যিনি মিসরের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দাওয়াতে হকের পয়গাম পৌছে দেয়ার জন্য থাকতেন সদা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দাওয়াতে হকের পয়গাম পৌঁছে দেয়ার জন্য থাকতেন সদা তৎপর। শাইখ আতিয়া এ দায়ীর পরিচয় যেভাবে তুলে ধরেন তারপর আর এতে কোন সংশয়-সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। তিনি আলোচ্য দায়ীর কথা বলতে গিয়ে রাহমাতুল্লাহও বলেন যার ফলে নাম না নিয়েই তিনি সেই মহাত্মার প্রতিই ইংগিত করেছেন।
হিকমাত ও কৌশল মুমিনের হারানো মিরাস
কতিপয় তথাকথিত মুসলিম দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে এরূপ অভিযোগ করে থাকেন যে, তা বর্তমান সময়ের সমস্যার সমাধান দিতে অক্ষম। হাসানুল বান্না শহীদ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বরে মনে করতেন এবং তা সর্বকালের জন্য সমভাবে কার্যকরী হওয়ার দৃঢ় বিশ্বস রাখতেন। সাথে সাথে তিনি যুব সমাজকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা করা এবং তাতে পরিপূর্ণ ব্যুৎপত্তি অর্জন করার জন্য উৎসাহিত করতেন। তিনি হাদীসে নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোতাবেক এ বিষয়ের ওপর খুবই গুরুত্ব দিতেন যে, হিকমাত ও প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা মুমিন ব্যক্তির হারানো সম্পদ। সে যেখানেই তা পায় লাভ করতে চেষ্টা করে। তিনি বলতেন, ইউরোপ এবং আমেরিকার বিজ্ঞানের ওপর কোন ঠিকাদারী নেই। ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণ এবং মংগলের জন্য অনুসন্ধান ও গবেষণা এবং অগণিত সৃষ্ট বস্তু নিয়ে পুরোপুরি চিন্তা-ভাবনা করা আমাদের কর্তব্য। তিনি প্রায়ই বলতেন যে, আমাদেরকে ময়দানে কাফেরদের মোকাবেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে। আইন প্রণয়নে, প্রকৃতি বিজ্ঞানে, রসায়ন শাস্ত্রে, জ্যোতির্বিজ্ঞানে, চিকিৎসাশাস্ত্রে এবং টেকনোলোজিতে আমাদের অগ্রজদের ন্যায় সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করতে হবে। জাবের বিন হাইয়ান, আল ফারাবী, ইবনে সিনা এবং অগণিত অন্যান্য মুসলিম মনীষী বৈজ্ঞানিক উন্নতি- অগ্রগতি এবং আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মৌলনীতি প্রণয়ন করেন। আর আজ আমরা কেন এসব ময়দানে পদচারনা করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়বো?
তিনি সংকীর্ণমনা, কুপমন্ডুক, সাম্প্রদায়িক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন না। কিন্তু পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের সর্বাধিক বিরোধী ছিলেন। তিনি পশ্চিমা স্যুট ও তুর্কী টুপি পরিধান করতেন, টেবিলে বসে খানা খেতেন। প্রয়োজনে ছুরি-কাঁটার ব্যবহারেও আপত্তি করতেন না। সুপরিচ্ছন্ন প্রিয়তা ও সূক্ষ্মদর্শিতা এতবেশী ছিল যে স্বীয় হাত ব্যাগে সবসময় আতরের শিশি পুরো রাখতেন। অইখওয়ানী মেহমান সৌজন্য সাক্ষাতকারের জন্য আগমন করলে তিনি দাঁড়িয়ে তাঁদের সাদর সম্ভাসন জানাতেন। মহৎ চারিত্রিক গুণাবলী এবং মৃদু হাসি তাঁর চেহারায় সদাসর্বদা প্রতিভাত হতো। পশ্চিমের কিছু সংখ্যক অন্ধ অনুসারী চিন্তাবিদকে পাশ্চাত্যের সকল সভ্যতা সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী এবং ইউরোপের সার্বিক ফ্যাশনের প্রতি আত্মভোলা বলে মনে হতো। কিন্তু ইমাম শহীদের অবস্থা ছিল এ থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। তিনি প্রায়ই বলতেন যে কল্যাণধর্মী ও প্রজ্ঞাময় কথাবার্তা অবলম্বন করো কিন্তু অনিষ্টকর ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সবকিছু একেবারেই দূর করে দাও।
যুগের বিপ্লব
ডক্টর ত্বাহা হোসাইন প্রণীত প্রন্থ “মিসরের ভবিষ্যত সংস্কৃতি”- এর ওপর তিনি যে সমালোচনা করেন তার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল এই যে, আমরা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ ও গেলামীর তীব্র প্রতিবাদ করছি। তিনি যদি এখন জীবিত থাকতেন তাহলে আমরা টেষ্টটিউবের সাহায্যে জন্মগ্রহণকারী শিশু এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের মত বিষয়গুলোর ওপর তার বিজ্ঞোচিত মতামত ও দৃষ্টিভংগির দ্বারা উপকৃত হতে পারতাম। এটা বড়ই বিস্ময়কর কথা যে, এখন কিছু কিছু মুসলিম পদবী ও গোত্রীয় পরিচিতির অন্ধ পূজায় আত্মতৃপ্তি খুঁজে পায়। অথচ পশ্চিমা পন্ডিতরা টেষ্টটিউবের শিশুদের ওপর অনুসন্ধান ও গবেষণা করে তাকে খুব ফলাও করে প্রচার করছে। বুঝে আসে না কেন স্বাভাবসম্মতভাবে ভুমিষ্ঠ ভাবী পজন্মকে এক দিকে প্রতিরোধ করা হচ্ছে। আর অপরদিকে অস্বাভাবিক উপয়ে টেষ্টটিউবের মধ্যে লালিত বংশধারার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে।
বিভিন্ন মানদন্ড ও পরস্পর বিরোধী আচরণ
আমার মনের কোণে অনেক সময় একটা প্রশ্ন উদিত হয়ে থাকে। সমগ্র দুনিয়ার সাহিত্যিক ও লেখকগণ ইখওয়ানুল মুসলিমুনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সাথে কেন অব্যাহতভাবে বিষোদগার করে আসছেন। খোদ মিসরে এমন কি মিসরের বাইরে আরো অনেক ইসলামী সংগঠন ও সংস্থা রয়েছে। একথা কি একান্ত বাস্তব সত্য নয় যে সকল সংগঠনই ব্যাপক ভাল কাজের সাথে সাথে কখনো কখনো কোন ভুল ক্রটিও করে বসে। সমালোচনা মুখর সাহিত্যিক সাংবাদকগণ অবশ্য কোন কোন সময় অন্যান্য দলের বিরুদ্ধেও কলম ধারণ করে থাকেন কিন্তু তারপর আবার চুপসে যান। কিন্তু ইখওয়ানের বিরুদ্ধে এ ধারা একেবারে বিরতিহীনভাবে ও অব্যাহত গতিতে কেন পরিচালিত হয়ে আসছে? আমাকে বলুন যে, ইখওয়ান কি কখানো কোন ভাল করেনি? এ সংগঠনটি আগাগোড়া ভুল-ভ্রান্তিতেই ভরা? ইখওয়ানের কোন গুণ কি এসব সমালোচকদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না? যে সম্পর্কে একটা প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে কিংবা কোন ভালও মন্তব্য করা যেতে পারে? আল্লাহ তায়ালা কি ইখওয়ানকেই সকল গোনহর আচরণের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন?
আল্লাহ তাঁর নূরকে (দ্বীনকে)পূর্ণতা দান করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে
এসব কাদা নিক্ষেপকারীদের আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, এরূপ আচরণ ও কর্মতৎপরতার দ্বারাই কি তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গিয়েছে? ইখওয়ানুল মুসলিমুনের দাওয়াত কি দুর্বল হয়ে পড়েছে? ইখওয়ানের অস্তিত্ব কি ধরাপৃষ্ঠ থেকে মুছে গেছে? এ আন্দোলনের গতি কি স্তব্দ হয়ে গেছে? না, কান পেতে শুনে নাও তোমাদের একান্ত প্রত্যাশা সত্ত্বেও ইখওয়ানের শক্তি ও দাওয়াতের বিস্তৃতিই ঘটেছে। এ মিথ্যা প্রচারক ও অপবাদ দানকারীদের মোকাবিলায় কখনো কখনো কোন কোন স্থান থেকে হকের আওয়াজই উত্থিত হয়ে থাকে। তথাপি আমাদের নিকট এমন কোন উপায় উপকরণ নেই যে, আমরা প্রত্যেকের জবাব দিতে পারি। আমাদের দুশমনদের সার্বিক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা তার অসীম দায় ও অনুগ্রহের বদৌলতে আমাদের পয়গামকে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত প্রসার লাভ করার সুব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। আমরা দুর্বল অক্ষম; কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কুদরাত ও ক্ষমতা অসীম।
৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শুরু হয় তখন ইখওয়ান পুরোপুরিভাবে ছিল সুসংগঠিত। যদি ইখওয়ান ইচ্ছা করতো তাহলে মিত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারতো। কিন্তু ইমাম শহীদ এ পরিস্থিতিতে তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা নিরাপদ রেখে কেবলমাত্র দাওয়াতী কাজের সম্প্রসারণের জন্য দৃষ্টিকে সীমাবদ্ধ করতে চাচ্ছিলেন।তিনি তার সংগঠনের সমস্ত কর্মী ও শাখাকে এ মর্মে নির্দেশ প্রদান করনে যেন তারা নীরবে নিজ কর্ম সম্পাদন করে যেতে থাকে। এবং মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে অক্ষ মক্তির সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ইতিবাচক কাজে আন্তরিকতা প্রদর্শনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ইমাম শহীদ সমীচীন মনে করেননি যে, দুই বাতিল শক্তির লড়াইয়ে কোন এক পক্ষক্যে সাহায্য প্রদান করা হোক। যদিও কোন কোন লোকের মনোভাব এরূপ ছিল যে, সাম্রজ্যবাদকে ঘায়েল করার জন্য জার্মানীকে সাহায্য করা উচিত। ইখওয়ানের নির্লিপ্ততা ও পক্ষপাতহীনতা মিত্র শক্তিগুলোর সফলতা ও বিজয়ের পথ সুগম করে দেয়। এতদসত্ত্বেও জনগণ ইমামকে ও ইখওয়ানকে খুবই খারাপ বিনিময় প্রদান করে। ইমামের বিরোধীতায় শত্রুদের ক্রোধ ও প্রতিহিংসা কোন ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে ছিল না। বরং ছির এ দা্ওয়াতের কারণেই যাকে দুশমন তাদের জন্য বিপজ্জনক মনে করতো। অলস নিদ্রায় বিভোর মুসলিম মিল্লাতকে এ দাওয়াত পুনরায় জাগিয়ে তোলে। সাথে সাথে তাদের মধ্যে এ অনুভূতিও সৃষ্টি করে যে, ইসলাম শুধু পূজাপার্বণের ধর্ম নয়। বরং একটা পূর্ণঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ কেবলামত্র আনুষ্ঠানিক ইবাদাতের নাম নয় বরং এগুলোর ওপর ইসলামী আদর্শের মজবুত ও আলীশান মহল নির্মিত হওয়া উচিত। মুসলিম জাতীর শক্তি, সম্মান, সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং উন্নতি ও অগ্রগতির রহস্য অইসলামী আদর্শকে খতম করে ইসলামী আদর্শ কায়েমের মধ্যেই নিহিত। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপরই ফরজ আইন পালন করা জরুরী। যদিও ফরজে কেফায়ার জন্য অন্ততপক্ষে একটা দল থাকাই যথেষ্ট। যদি এ দলই ফরজে কেফায়া আদায় করতে থাকে তাহলে সওয়াব তো তারাই লাভ করবে। কিন্তু গোনাহ থেকে পুরো উম্মাত বেঁচে যাবে।
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের আন্দোলন সমস্ত উম্মতের পক্ষ থেকে দাওয়াতে হকের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। অমুসলিমগণ কিছুতেই এ মহতী উদ্যোগকে পছন্দ করতে পারে না যে, মুসলিম জাতি পুনরায় তাদের হৃতগৌরব ফিরে পাক। আলহামদু লিল্লাহ এখন রোগ নির্ধারিত হয়ে গেছে। অতএব এর চিকিৎসা করার সম্ভব। রোগের জীবানু চিহ্নিত করা হয়ে গেছে সত্য কিন্তু জানা নেই যে, কেন উম্মতে মুসলিমাহ তার প্রতিকার করতে ব্রতী হচ্ছে না। এখন যদি এ ব্যাধি থেকে রক্ষা না পাওয়া যায় তাহলে শুধুমাত্র রোগীদের অনমনীয়তা এবং চিকিৎসা থেকে পলায়নী মনোভাবই হবে তার জন্য দায়ী।
ইখওয়ান শ্রমিক সংগঠনসমূহ
ইমাম শহীদ বহুদিন পূর্বেই ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন এবং এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এতে ইখওয়ানের অংশগ্রহণ করা উচিত। তার সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ছিল এই যে, ইখওয়ানের অংশগ্রণের ফলে একাধারে ইউনিয়ন ও ইউয়ন সদস্যগণের উপকার হবে। এ চিন্তা-ভাবনা কোন বিদায়াত ছিল না। ইসলামী সরকারসমূহের মধ্যে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিগণ আপনাপন সংগঠন কায়েম করছিল। যেমন তামার কর্মকার-কয়লা বিক্রেতা এবং অন্যান্য বাণিক ও ব্যবসায়ীগণ পথনির্দেশনা লাভের জন্য নিয়মিতভাবে কোন না কোন শাইখের সাথে সম্পর্ক রাখতো। তারা তার নিকট থেকে সামগ্রিক ব্যাপারেও লেন-দেনের সকল ক্ষেত্রে দিকনিদের্শনা লাভ করতো। বর্তমান কালে সম্পর্ণ নতুন ভংগীতে সেই প্রথা ও প্রচলনেরই সুবিন্যস্ত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিলো। অতএব ইমাম হাসানুল বান্না দ্বীনের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী যুবকদেরকে উপদেশ দেন যেন তারা এ দিকটির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টিপাত করে। বাহ্যত এ কাজটি বড়ই কঠিন বলে মনে হয়। কিন্তু নিয়মিতভাবে ও পরিকল্পিত উপায়ে উদ্যেগ প্রহণ করা হলে দ্বীনের প্রতি অনুরাগী ব্যক্তি ও শক্তি সকল ছোট বড় ট্রেড ইউনিয়নে কার্যকরী ও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও ইখওয়ান সকল ট্রেড ইউনিয়নে মজবুত শিকড় গেড়ে বসতে সক্ষম হয়।
ইমাম হাসানুল বান্না এ ময়দানে অত্যন্ত মূল্যবান খেদমত আঞ্জাম দিতে সমর্থ হন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও সুদূর প্রসারী দুষ্টিভংগির অধিকারী পথ প্রদর্শক। ছোট বড় সকল ব্যাপারে গভীর দূরদৃষ্ট ছিল। আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করুন যেন মানুষের সম্মুখে প্রকৃত সত্যের দ্বার উন্মোচিত হয়ে যায় এবং তারা মনে প্রাণে এ সত্য উপলব্ধি করতে পারে যে, ইখওয়ান কোন ব্যক্তি বিশেষের আনুগত্য করে না। কিংবা তাকে নিষ্পাপ প্রমাণ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে না। ইখওয়ান বরং তাওহীদী আকীদার পতাকাবাহী এবং আকীদা-বিশ্বাসই তাদের দিল ও দেমাগে দেখতে পাওয়া যায়। নেতৃত্ব হাসানুল বান্নার হাতে থাকুক কিংবা অপর কোন ব্যক্তি এ গুরু দায়িত্ব সামাল দিক তাতে কোন পার্থক্য সূচিত হয় না। যদিও ফুজলত ও মর্যাদা অগ্রগামীরাই লাভ করে।
সুস্পষ্ট ঘোষনা
আপনি কি জানেন ইখওয়ানুল মুসিলিমুন কি চায়? এ প্রশ্ন কত মানুষের মনে উদিত হয়ে থাকে। বিশষত সেই সব লোকদের মনে যারা বর্তমান বিজ্ঞানের উন্নতি অগ্রগতিতে প্রভাবিত হয়ে ইসলামকে অনগ্রসরতা ও পশ্চাদপদতার প্রতীক বলে মনে করে। তারা এ প্রশ্ন নানা ভংগীতে উত্থাপন করে। অথচ এর জবাব আমাদের নিকট খুবই সোজা ও সুস্পষ্ট। আমরা আজও তাই চাই যা ১৯২৮ সালে আমাদের প্রাণ প্রিয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠা লগ্নে বলেছিলাম।
১- জীবনের ছোট বড় সকল ব্যাপারেই আল্লাহর শরীয়াতের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন।
২- বিজ্ঞান এবং অন্যান্য সকল প্রকার জ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়া। এগুলোর উৎসমূল যাই হোক না কেন! এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন কথা যদি ইহুদীদের নিকট থেকেও পাওয়া যায় তা হলেও তা অকপটে গ্রহণ করতে হবে। তা নিসন্দেহে আমাদেরই হারানো সম্পদ।
৩- ইসলামী ঐক্য সংহতি ভৌগলিক সংকীর্ণতার পরিসমাপ্তি। এ কৃত্রিম সীমারেখাসমূহ উম্মতে মুসলিমার অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতার কারণ এবং সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী উৎস। আমরা একটি উম্মতের অন্তর্গত- যাদের দেশ ইসলাম এবং শ্লোগান কালেমায়ে তাউয়্যেবা।
৪- মুসলিমদের অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার তাদের শক্তি-সমর্থ, তাহযীব-তামদ্দুন এবং শাক্তি ও নিরাপত্তাকে পুরোপুরিভাবে সমস্ত মানবতার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া।
৫- পারস্পরিক বুঝাপড়া ও আলাপ আলোজনার মাধ্যমে বিশ্ব সমস্যাসমূহকে হকের ভিত্তিতে সমাধান করা। উপনিবেশবাদ দ্বাসত্য ও লুটতরাজের অবসান।
উপরুল্লিখিত দাফগুলোকে কেউ কেউ অযৌক্তিক ও অসম্ভব বলে মনে করে। কিন্তু এটা ভাবে না যে, এগুলোই ইতিহাসের পাতায় অংকিত রয়েছে। আমরা কল্পনাবিলাসী নই। বরং বাস্তববাদী। আমরা জীবনকে ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করে থাকি এবং একজন সভ্রান্ত, প্রবিত্র ধ্যান-ধারনা ও স্পষ্টভাষী মু’মিনের জীবন যাপন করে থাকি।
আমাদের বিরোধীরা কি আমাদের মনোভাব সম্বন্ধে সম্যকরূপে পরিজ্ঞাত হয়ে গেছেন? নাকি তাদের চিরাচরিত অভ্যাসকেই আকড়ে ধরে চলবে? আমি ইসলামী জাহানের সমস্ত দায়িত্বশীলের সমীপে আরজ করতে চাই যে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে ও ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাথে এ দাওয়াতের মূল্যায়ণ করুন এবং দেখুন যে এর মধ্যে তাদের জন্য এবং তাদের জাতিসমূহের জন্য কি পরিমাণ কল্যাণ ও মংগল নিহিত রয়েছে। তাদের গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করা উচিত যে, এ মহতী দাওয়াতের সাথে বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করে এবং বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তারা তাদেরই জাতি এমনকি স্বয়ং নিজেদের জন্যও কল্যাণকর কিছু করছে না। এ জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী এবং আগামীকালের আগমন নিশ্চিত। সে দিনের ব্যাপারে আল্লামূল গুয়ুব ইরশাদ করেনঃ(আরবী *************)
“(অতপর কি হবে তখন) যখন নভোমন্ডল দীর্ণ বিদীর্ণ হয়ে যাবে ও লাল চামড়ার মত রক্ত বর্ণ ধারণ করবে…………অপরাধী লোকেরা সেখানে নিজ নিজ চেহারা দ্বারাই পরিচিত হবে এবং তাদের কপালের চুল ও পা ধরে হেঁচড়ে টেনে নেয়া হবে। তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামত ও শক্তিকে অস্বীকার করবে?
বর্তমান আইনের সংশোধন কি সম্ভব নয়? অনুরূপভাবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, নৈতিক-চরিত্র এবং জীবনের অন্যান্য বিষয়ের সংস্কার কি করা যায় না? এসবই সম্ভব। তাহলে এড়িয়ে চলা এবং টালবাহানা কেন? মুসলিম শাসকদেরকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই যে, আমরা আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী রেখে তোমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমদের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই। আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যখনই মুখ খুলবো তখন তোমাদের কল্যাণ কামনা ও সদুপদেশের জন্যই খুলবো। আমাদের দৃষ্টিতে ক্ষমতার মসনদের সংস্কারই সকল সংশোধনের মূল উপায়্। ক্ষমতার মসনদের সংশোধন ও সৎকার যদি হয়ে যায় তাহলে সমগ্র পৃথিবীবাসী সংশোধিত হয়ে যাবে। পুলিশের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে প্রকৃত সত্য উদ্ধার করতে সচেষ্ট হও। তোমাদের সম্মান তোমাদের দেশ ও জাতির সাথে সম্পৃক্ত। একইভাবে তোমাদের জাতির সম্মন ও মর্যাদা নিবিড়ভাবে জড়িত তোমাদের সাথে। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ের তত্বাবধায়ক ও ব্যবস্থাপক। কবির ভাষায়ঃ
“তোমরা যদি মুহাম্মাদ (সা)- এর সাথে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে পারো তাহলে আমি তোমাদের এ দুনিয়া আর এমন কি লাওহ ও কলম পর্যন্ত তোমাদের হয়ে যাবে অধীন।”