ইসলামে নারীর মর্যাদা
ইসলামে নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হয়েছে। নারীকে প্রথম মর্যাদা দেয়া হয়েছে কন্যারূপে। দ্বিথীয় মর্যাদা দেয়া হয়েছে বধুরূপে, তৃতীয় মর্যাদা ‘মা’ রূপে এবং চতুর্থ সমাজ-সংস্থার সমান গুরুত্বপূর্ণ সদস্যারূপে।
কন্যা-রূপে নারী
পূর্বে যেমন বলা হয়েছে, কন্যারূপে নারীর বড়ই অমর্যাদা ছিল আরব জাহিলিয়াতের সমাজে। সেখানে কন্যা-সন্তানকে অকথ্যভাবে ঘৃণা করা হতো। তাকে জীবন্ত প্রোথিত করা হতো। কন্যা-সন্তানের মুখ দেখতেও রাযি হতো না স্বয়ং কন্যার পিতা। কুরআন মজীদে এ নারী অপমানের চিত্র অংকন করা হয়েছে নিম্নোক্ত ভাষায়ঃ
(আরবী************************************************************)
সে সমাজের কাউকে তার কন্যা-সন্তান জন্ম হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হলে সারাদিন তার মুখ কালো হয়ে থাকত। সে ক্ষুব্ধ হতো এবং মনে মনে দুঃখ অনুভব করত। এ সুসংবাদেরলজ্জার দরুন সে অন্য লোকদের থেকে মুখ লুকিয়ে চলত। সে চিন্তা করত, অপমান সহ্য করে মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখবে, না তাকে মাটির তলায় প্রোথিত করে ফেলবে! –কতই না খারাপ সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করত!
ইসলাম মানবতা-বিরোধী ভাবধারার প্রতিবাদ করেছে। এ কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং কন্যা সন্তানকে পুরুষ ছেলের মতো জীবনে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। আর কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা হলে কিয়ামতের দিন যে তার পিতাকে আল্লাহর দরবারে কঠোরভাবে জবাবাদিহি করতে হবে, তা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে। বলা হয়েছেঃ
(আরবী**********************************************)
জীবন্ত প্রোথিত কন্যা-সন্তানকে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে –কোন অপরাধে তোমাকে হত্যা করা হয়েছিল?
এ কারণে নবী করীম (স) বলেছেনঃ যে লোকের কোনো কন্যা-সন্তান রয়েছে এবং সে তাকে জীবন্ত প্রোথিত করেনি এবং তাকে ঘৃণার চোখেও দেখেনি, তার ওপর নিজের পুত্র সন্তানকে অগ্রাধিকারও দেয়নি, তাকে আল্লাহ তা’আলা বেহেশত দান করবেন। (আবূ দাউদ, কিতাবুল আদব)
আরব জাহিলিয়াতের সমাজে নারী ও কন্যাকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চরমভাবে পঙ্গু করে রাখা হতো। তাকে পিতার মীরাস লাভের অধিকার মনে করা হতো না। বরং সেখানে মীরাস দেয়া হতো সেসব পুত্র-সন্তানকে, যারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করতে পারত। নারীদের মীরাসের অংশ দেয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং এই নারীদেরও মীরাসের মাল মনে করা হতো এবং পুরুষরা তাদের নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিত। কন্যা-সন্তানের প্রতি চরম অমানবিক অবজ্ঞা এই বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও সভ্যতার চরম উন্নতির যুগেও যত্রতত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আধুনিক চীনের দুজন নারীকে আত্মহত্যঅ করতে হয়েছে শুধু এ অপরাধে যে, তারা কেবল কন্যা সন্তানই প্রসব করেছে, স্বামীকে কোনো পুত্র সন্তান উপহার দিতে পারেনি।
কিন্তু ইসলাম মানবতার পক্ষে এই চরম অবমাননাকর রীতি চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে। কুরআনে নারীকে –কন্যাকেও পুরুষদের মতোই মীরাসের অংশীদার করে দেয়া হয়েছে। যদিও পুরুষদের তুলনায় তাদের অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব কম বলে পুরুষদের অপেক্ষা তাদের অংশ অর্ধেক রাখা হয়েছে। কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ
(আরবী***************************************)
আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে তোমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক বিধান দিচ্ছেন। তিনি আদেশ করেছেন, একজন পুরুষ দুজন মেয়েলোকের সমান অংশ পাবে। কেবল মেয়ে-সন্তান দুজন কিংবা ততোধিক হলে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি মাত্র একজন কন্যা হয়, তাহলে সে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে।
এ আয়াতে মেয়েদেরকেও পুরুষ ছেলেদের সমান সম্পত্তির অংশীদার বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর সাধারণ লোক এ আইনকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। তারা বলল, এদের মধ্যে কেউ তো এমন নয় যে, যুদ্ধে গিয়ে শত্রুর মুকাবিলা করতে পারে। এ মনোভাবের প্রতিবাদ করে কুরআন উপরিউ্কত আয়াতে কন্যা-সন্তানকে বিয়ের পূর্বেই এমন পরিমাণ মীরাস লাভের অধিকার দেয়া হয়েছে, যা তার জন্যে যথেষ্ট হতে পারে।
পিতা জীবিত থাকলে ছেলের বালেগ হওয়া পর্যন্ত তার লালন-পালন করা যেমন পিতার কর্তব্য, মেয়ের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তার জন্যেও পিতার অনুরূপ কর্তব্য রয়েছে। উপরন্তু ছেলে বড় হলে পিতা তাকে কামাই-রোজগার করার জন্যে বাধ্য করতে পারে; কিন্তু কন্যা সন্তানকে তা পারে না।
স্ত্রী-রূপে নারী
তদানীন্তন আরব সমাজের স্ত্রী হিসেবেও নারীদের চরম অমর্যাদা ও অপমান ভোগ করতে হত। তাদেরকে স্বামীর ঘরে যথাযোগ্য মর্যাদা বা অধিকার দেয়া হতো না। তাদেরকে হীন, নগণ্য ও দয়ার পাত্রী মনে করা হতো। নিতান্ত দাসী-বাঁদীর মতো ব্যবহার করা হতো তাদের সাথে।
ইসলাম স্ত্রী হিসেবে নারীদের এ অপমান দূর করে তাদেরকে সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। প্রথমত ঘোষণা করা হয়েছে, তারা নারী বলে মৌল অধিকারের দিক দিয়ে পুরুষদের তুলনায় কিছুমাত্র কম নয়। বলা হয়েছেঃ
(আরবী************************************************************)
স্ত্রীদেরও তেমনি অধিকার রয়েছে যেমন স্বামীদের রয়েছে তাদের ওপর এবং তা যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
অন্য কথায়, স্ত্রী ও স্বামী উভয়েই আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণ সমান। তাদের অধিকারও অভিন্ন এবং দুয়ের মাঝে এক্ষেত্রে কোনোই পার্থক্য করা যেতে পারে না। মৌল অধিকারের দিক দিয়ে কেউ কম নয়, কেউ বেশী নয়।
আরব সমাজে স্ত্রীদের ওপর নানাভাবে অকথ্য জুলুম ও পীড়ন চালান হতো। কোনো কোনো স্বামী তাদের মাঝখানে ঝুলিয়ে রাখত, না পেত তারা স্ত্রীত্বের পূর্ণ অধিকার, না পেত তাদের কাছ থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতি। স্বামী একদিকে যেমন তাদের পুরাপুরি স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকার দিত না, অন্যদিকে তেমনি তালাক দিয়ে মুক্ত করে অন্য স্বামী গ্রহণের সুযোগও দিত না। বরং এভাবে আটকে রেখে তাদের নিকট থেকে নিজেদের দেয়া ধন-সম্পদ ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাত এবং সেজন্যে নানা কৌশল অবলম্বন করত। কুরআন মজীদ এর প্রতিবাদ করেছে তীব্র ভাষায়। বলেছেঃ
(আরবী**************************************************)
তোমরা –হে স্বামীরা –তাদের (স্ত্রীদের) বেঁধে আটকে রাখবৈ না এ উদ্দেশ্যে যে, তাদের নিকট থেকে তোমাদের দেয়া ধন-সম্পদের কিছু অংশ কেড়ে নেবে।
সেকালে স্ত্রীদের ঘরের অন্যান্য মাল-সামানের মতোই অস্থাবর সম্পত্তি বলে মনে করা হতো এবং স্বামী মরে গেলে তার স্ত্রীকেও পরিত্যক্ত মাল-সম্পত্তির ন্যায় উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হতো।এ প্রথা প্রথমকালে মুসলমানদের মধ্যেও চালু ছিল মনে হয়। কুরআন মজীদে এ সম্পর্কে ঈমানদার লোকদের সম্বোধন করে বলা হয়েছেঃ
(আরবী*******************************************)
হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা মেয়েদেরকে অন্যায় জবরদস্তি করে নিজেদের মীরাসের সম্পদ বানিয়ে নিও না-তা তোমাদের পক্ষে আদৌ হালাল হবে না।
নবী করীম (স) বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বলেছিলেনঃ
(আরবী*****************************************************)
তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে অবশ্যই ভয় করে চলবে। তোমাদের মনে রাখতে হবে যে তোমা তাদের গ্রহণ করেছ আল্লাহর নামে এবং এভাবেই তাদের হালাল মনে করেই তোমরা তাদের উপভোগ করেছ।
এই পর্যায়ে হযরত উমর ফারূক (রা)-এর একটি কথা উল্লেখ্য। তিনি বলেছিলেনঃ
(আরবী*****************************************************)
আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, জাহিলিয়াতের যুগে আমরা মেয়েলোকদের কিছুই মনে করতাম না –কোনোই গুরুত্ব দিতাম না। পরে যখন আল্লাহ তা’আলা তাদের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট অকাট্য বিধান নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে মীরাসের অংশ নির্দিষ্ট করে দিলেন, তখন আমাদের মনোভাব ও আচরণের আমূল পরিবর্তন সাধিত হলো।
মা-রূপে নারী
ইসলামে মা হিসেবে নারীকে যে উঁচু মর্যাদা ও সম্মান দেয়া হয়েছে, দুনিয়ার অপর কোনো সম্মানের সাথেই তার তুলনা হতে পারে না। নবী করীম (স) ঘোষণা করেছেনঃ
(আরবী***********************************************)
বেহেশত মা’দের পায়ের তলে অবস্থিত।
অর্থাৎ মাকে যথাযোগ্য সম্মান দিলে, তার উপযুক্ত খেদমত করলে এবং তার হক আদায় করলে সন্তান বেহেশত লাভ করতে পারে। অন্য কথায় সন্তানের বেহেশত লাভ মা’য়ের খেদমতের ওপর নির্ভরশীল। মা’য়ের খেদমত না করলে কিংবা মা’র প্রতি কোনোরূপ খারাপ ব্যবহার করলে, মা’কে কষ্ট ও দুঃখ দিলে সন্তান যত ইবাদত বন্দেগী আর নেকের কাজই করুক না কেন, তার পক্ষে বেহেশত লাভ করা সম্ভবপর হবে না।
হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেছেনঃ নবী করীম (স)-এর সময়ে আল-কামা নামক এক যুবক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। তার রোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শয্যাপার্শ্বে উপস্থিত সেবা-শুশ্রূষাকারীরা তাকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ কালেমা পাঠ করার উপদেশ দেয়। কিন্তু শথ চেষ্টা করেও সে তা উচ্চারণ করতে পারে না। রাসূলে করীম (স) এই আশ্চর্য ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে জিজ্ঞেস করলেনঃ তার মা কি জীবিত আছে? বলা হলো, তার পিতা মারা গেছে, মা জীবিত আছে, অবশ্য সে খুবই বয়োবৃদ্ধা। তখন তাকে রাসূল (স)-এর দরবারে উপস্থিত করা হলো। তার নিকট তার ছেলের এ অবস্থার উল্লেখ করে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। সে বলল, আল-কামা বড় নামাযী, বড় রোযাদার ব্যক্তি এবং বড়ই দানশীল। সে যে কত দান করে, তার পরিমাণ কারো জানা নেই। রাসূলে করীম (স) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার সাথে তার সম্পর্ক কিরূপ?’ উত্তরে বৃদ্ধা মা বলল, ‘আমি ওর প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট’। তার কারণ জিজ্ঞেস করায় সে বলল, ‘সে আমার তুলনায় তার স্ত্রীর মত যোগাত বেশী, আমার ওপর তাকেই বেশী অগ্রাধিকার দিত এবং তার কথামতোই কাজ করত’। তখন রাসূলে করীম (স) বললেন, ‘ঠিক এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা তার মুখে কালেমার উচ্চারণ বন্ধ করে দিয়েছেন’। অতঃপর রাসূলে করীম (স) হযরত বিলালকে আগুনের একটা কুণ্ডলি জ্বালাতে বললেন এবং তাতে আল-কামাকে নিক্ষেপ করার আদেশ করলেন।
আল-কামার মা একথা শুনে বলল, ‘আমি মা হয়ে তা কেমন করে হতে দিতে পারি! সে যে আমার সন্তান, আমার কলিজার টুকরা’।
রাসূলে করীম (স) বললেন, “তুমি যদি চাও যে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দিন তাহলে তুমি তার প্রতি খুশী হয়ে যাও। অন্যথায় আল্লাহর শপথ, তার নামায, রোযা ও দান-খয়রাতের কোনো মূল্যই হবে না আল্লাহর দরবারে।
অতঃপর আল-কামার জননী বললো, “আমি আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে মাফ করে দিলাম”। এরপর খবর নিয়ে জানা গেল যে, আল-কামা অতি সহজেই কালেমা উচ্চারণ করতে সমর্থ হয়েছে।
এ একটি ঘটনা এবং নির্ভুল বর্ণনাভিত্তিক বলে এর সত্যতায় কোনোই সন্দেহ নেই। যদিও বস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিতে এর সত্যতা স্বীকৃত নয় এবং এ সব ঘটনার কোনো মূল্যও নেই। কিন্তু ইসলাম যে নৈতিক ও আদর্শিক বিধান উপস্থাপিত করেছে, তাতে এ ধরনের ঘটনা মানুষের চোখ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
সমাজ-সংস্থার সদসা হিসেবে নারী
নারী কেবল কন্যা, বধু এবং মা’ই নয়, ইসলামের সমাজ-সংস্থায় সে সমাজ মর্যাদা সম্পন্না একজন সদস্যাও বটে। ইসলামে পুরুষের মর্যাদা যেমন স্বীকৃত, তেমনি তার ওপর অনেক গুরু দায়িত্বও অর্পিত। অনুরূপভাবে নারীকে সমাজ ক্ষেত্রে যেমন মর্যাদা দেয়া হয়েছে, তেমনি তারও রয়েছে অনেক মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। দ্বীনী আমল-আখলাকের নিয়ম-কানুন পালন করা যেমন পুরুষের কর্তব্য, তেমনি নারীরও এবং কর্তব্য পালনের ফল লাভের অধিকারও উভয়ের সম্পূর্ণ সমান। ইসলামে এ ব্যাপারে নারী-পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি।
কুরআন মজীদের ঘোষণা হলঃ
(আরবী*********************************************************)
পুরুষ বা স্ত্রী –যে লোকই নেক আমল করবে ঈমানদার হয়ে, সে-ই বেহেশতে দাখিল হতে পারবে এবং এদের কারো উপর একবিন্দু জুলুম করা হবে না।
বস্তুত ইসলামী শরীয়ত নারী-পুরুষ উভয়কেই সমান সামাজিক মর্যাদা এবং অধিকার দিয়েছে। অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, জ্ঞান অর্জন ও চর্চা –প্রভৃতি মানসিক, জ্ঞানগত ও বুদ্ধিগত, শারীরিক ও দ্বীনী কল্যাণ সম্পর্কিত যাবতীয় ক্ষেত্রেই উভয়ের মাঝে পূর্ণ সমতা স্থাপন করেছে। কোনো নারী যদি আশ্রয়হীন বা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে তাহলে সে তার জীবন-জীবিকার প্রয়োজন পূরণ ও স্বীয় সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে যে-কোন হালাল উপায়ে কামাই-রোজগার করতে পারে। এজন্যে সব রকমের বিধিসম্মত উপায়ও সে অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু তার এ দায়িত্ব খতম হয়ে যায় তখন, যখন তার এ দায়িত্ব পালনের জন্যে কোনো পুরুষ স্বামী হিসেবে তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তখন এ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোটা পারিবারিক দায়িত্ব ভাগ হয়ে যাবে। একটি গোটা পরিবারে একদিকে যেমন আয় করার ব্যবস্থা থাকতে হবে, তেমনি অপরদিকে সে আয়ের সুষ্ঠু বণ্টন ও বিলি-ব্যবস্থার প্রয়োজন। পরিবারে কর্মবণ্টন এভাবে হতে পারে যে, পুরুষ আয় করবে, স্ত্রী তা ব্যয় করে ঘরের ব্যবস্থাপনা চালাবে। এর ফলে উভয়ের সামাজিক মর্যাদা সমান ও অভিন্ন থাকে।
বস্তুত নারী জীবনের আবাহন, পুলকের সঙ্গীত, পবিত্র স্নেহ-মমতার প্রতীক, প্রতিমূর্তি, বিশ্ব নিখিলের প্রাণ-সম্পদ। আল্লামা ইকবাল নারীর প্রশংসায় বলেছেনঃ
(আরবী**********************************************)
বিশ্ব নিখিলের ছবিতে যা কিছু চাকচিক্য তা সবই কেবলমাত্র নারীর কারণেই।
সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধুত্ব, প্রেম-প্রীতি, সহানুভূতি আত্মদানই হচ্ছে নারীর ভূষণ-বৈশিষ্ট্য। অনন্তকাল পর্যন্ত নারীর এ ভূষণ স্থায়ী থাকবে। সে মৃত মনে নব জীবনের স্পন্দন জাগিয়েছে সতত –সর্বত্র। বিপদ-কাতর ব্যক্তিকে সে দিয়েছে জীবনের মন্ত্র, ভীরু কাপুরুষের মধ্যে জাগিয়েছে সাহস, বিক্রম ও বীরত্ব। বিপদের প্রচণ্ড ঞঞ্ঝা-বাত্যায় বৃক্ষের কচি শাখার মতোই সে রয়েছে অটুট স্থায়ী সামান্য আনন্দেই তার আননে খেলেছে হাসির উদ্বিতল লহরী, দুঃখ ভারাক্রান্ত মানসে জ্বালিয়েছে আশার আলো।
বিশ্বের বড় বড় ব্যক্তি, তারা সবাই নারীর গর্ভে অস্তিত্ব লাভ করেছে, নারী কর্তৃক প্রসবিত এবং নারীর ক্রোড়েই লালিত-পালিত হয়েছে। মানব জাতির মর্যাদা সে বাড়িয়েছে। পুরুষের মনোরাজ্যে সে স্থাপন করেছে স্বীয় সিংহাসন, বিস্তার করেছে রাজত্ব –পুরুষের সমগ্র জীবনব্যাপী। গোটা মানবতাই নারীর কাছে ঋণী। তাই নারীর গুরুত্ব ও মর্যাদা কেউ অস্বীকার করতে পারে না, পারেনি, পারবেও না কোনো দিন। জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ মূল্যমান নারীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। পবিত্রতা, সতীত্ব ও প্রেম-ভালোবাসা প্রভৃতি শব্দ তারই জন্যে হয়েছে রচিত। এ সব রক্ষা করার মাধ্যমে কন্যা, বধূ ও জননীর ভূমিকায় সার্থকভাবে দায়িত্ব পালন করবে সে, ইসলামী আদর্শের তাই একমাত্র লক্ষ্য।