বিয়ের প্রস্তাব
ইসলামের উপস্থাপিত পারিবারিক রীতি-নীতি ও নিয়ম-কানুনের দৃষ্টিতে বিয়ের প্রস্তাব বর কনে যে কারো পক্ষ থেকেই প্রস্তাব পেশ করতে কোনো লজ্জা-শরম বা মান-অপমানের কোনো কারণ হতে পারে না। এমন কি ছেলে কিংবা মেয়ের পক্ষও স্বীয় মনোনীত বর বা কনের নিকট সরাসরিভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে, ইসলামী শরীয়তে এ ব্যাপারে কোনো বাধা তো নেই-ই উপরন্তু হাদীসে এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা থেকে এ কাজ যে সঙ্গত তা সুস্পষ্টরূ প্রমাণিত হয়।
নবী করীম (স) জুলাইবাব নামক এক সাহাবীর জন্যে এক আনসারী কন্যার বিয়ের প্রস্তাব কন্যার পিতার নিকট পেশ করেন। কন্যার পিতা তার স্ত্রী অর্থাৎ কন্যার মা’র মতামত জেনে এর জবাব দেবেন বলে ওয়াদা করেন। লোকটি তার স্ত্রীর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে এ বিয়েতে স্পষ্ট অমত জানিয়ে দেয়। কন্যাটি আড়াল থেকে পিতামাতার কথোপকথন শুনতে পায়। তার পিতা যখন রাসূলের নিকট এ বিয়েতে মত নেই বলে জানাতে রওয়ানা হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মেয়েটি পিতামাতাকে লক্ষ্য করে বললঃ
(আরবী**************************************************)
তোমরা কি রাসূলে করীম (স)-এর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতে চাও? তিনি যদি বরকে তোমাদের জন্য পছন্দ করে থাকেন তবে তোমরা এ বিয়ে সম্পন্ন করো।
এ ঘটনা থেকে জানা গেল যে, মেয়ে নিজে তার বিয়ের প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সম্মত ছিল এবং পিতামাতার নিকট তার মতামত যা গোপন ও অজ্ঞাত ছিল, যথাসময়ে সে তা জানিয়ে দিতে এবং নিজের পিতামাতার সামনে প্রস্তাবকে গ্রহণ করার জন্যে স্পষ্ট ভাষায় অনুমতি দিতে কোনো দ্বিধাবোধ করেনি। আর এতে বস্তুতই কোনো লজ্জা-শরমের অবকাশ নেই।
হযরত উমরের কন্যা হাফসা (রা) বিধবা হলে পরে তাঁর পূনর্বিবাহের জন্যে তিনি [হযরত উমর (রা)] প্রথমে হযরত উসমানের সাথে সাক্ষাত করেন এবং হাফসাকে বিয়ে করার জন্যে তাঁর নিকট সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন। তখন হযরত উসমান (রা) বললেনঃ এ সম্পর্কে আমার মতামত শীগঘীরই জানিয়ে দেবো। কয়েকদিন পর তিনি বললেনঃ আমি বর্তমানে বিয়ে করা সম্পর্কে চিন্তা করছি না। অতঃপর হযরত উমর (রা) হযরত আবূ বকর (রা)-এর নিকট এই প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে মতামত জানানো থেকে বিরত থাকলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর হযরত নবী করীম (স) নিজেই নিজের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব হযরত উমরের নিকট প্রেরণ করেন।
(বুখারী, ২য় খণ্ড, ৭৬৮ পৃঃ; মুসনাদে আহমাদ, ১৬ খণ্ড, ১৪৮ পৃঃ)
এ ঘটনা থেকে জানা গেল, মেয়ে পক্ষও প্রথমেই বিয়ের প্রস্তাব পেশ করতে পারে –এতে কোনো দোষ নেই। আর ছেলে পক্ষও –কিংবা ছেলে নিজেও বিয়ের প্রস্তাব প্রথমত কন্যা পক্ষের নিকট পেশ করতে পারে। শরীয়তে এতে কোনো আপত্তি নেই কিংবা কারো পক্ষেই কোনো লজ্জা-শরমেরও কারণ নেই।
হযরত আনাস (রা) বলেনঃ একদা একটি মেয়েলোক –সম্ভবত তার নাম লায়লা বিনতে কয়স ইবনুল খাতীম –রাসূলে করীম (স)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে নিজেকে বিয়ের প্রস্তাব সরাসরিভাবে পেশ করেন। সে বলেঃ
(আরবী*******************************************)
হে রাসূল! আপনি আমাকে বিয়ে করার কোনো প্রয়োজন মনে করেন?
হযরত আনাস যখন এ কথাটি বর্ণনা করছিলেন, তখন সেখানে তাঁর কন্যা উপস্থিত ছিলেন। তিনি পিতাকে সম্বোধন করে বললেনঃ (আরবী********************************) –“মেয়েলোকটি কতইনা নির্লজ্জ ছিল!”
অর্থঅৎ একটি মেয়েলোক নিজে নিজেকে রাসূলের নিকট বিয়ে দেয়ার জন্যে পেশ করেছে শুনে আনাস-তনায়া উমাইনার বিশেষ বিস্ময় বোধ হয়েছে এবং এ কাজকে তিনি নির্লজ্জতার চরম বলে মনে করেছেন। তখন হযরত আনাস (রা) কন্যাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ
(আরবী**********************************************************)
সে তোমার তুলনায় অনেক ভালো ছিল। সে রাসূলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং সে নিজেই নিজেকে রাসূলের নিকট বিয়ের জন্যে পেশ করেছিল।
হযরত সহল ইবনে সায়াদ সায়েদী বলেনঃ
(আরবী**************************************************)
একটি মেয়েলোক রাসূলের নিকট এসে বললঃ আমি আপনার খেদমতে এসেছি এজন্যে যে, আমি নিজেকে আপনার নিকট সোপর্দ করব।
তখন নবী করীম (স) তার প্রতি উদার দৃষ্টিতে তাকালেন, পা থেকে মাথার দিকে দেখলেন। অনেক সময় ধরে তিনি নির্বাক হয়ে থাকলেন –কোন জবাব দিলেন না। তখন উপস্থিত একজন সাহাবী বুঝতে পারলেন যে, নবী করীম (স) স্ত্রীলোকটিকে বিয়ে করতে রাজি নহেন। তাই তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে রাসূল! এ মেয়েলোকটিতে আপনার যদি কোনো প্রয়োজন না থাকে তবে আমাকে অনুমতি দিন তাকে বিয়ে করার। (বুখারী, মুসলিম)
এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, কোনো মেয়ে যদি বিশেষ কোনো পুরুষের প্রতি মনের আকর্ষণ বোধ করে তবে সে নিজেই ছেলের নিকট বিয়ের প্রস্তাব পেশ করতে পারে। এতে না আছে কোনো দোষ, না লজ্জা-শরমের কোনো অবকাশ।
বিয়ের এক প্রস্তাবের ওপর নতুন প্রস্তাব দেয়া।
তবে এ ব্যাপারে একটি বিশেষ সুস্পষ্ট নিষেধবাণী উচ্চারিত হয়েছে। আর তা হচ্ছে, বিয়ের প্রস্তাবের ওপর আর একটি নতুন প্রস্তাব দেয়া। কোনো মেয়ে বা ছেলে সম্পর্কে যদি জানা যায় যে, কোথাও তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে বা কেউ বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেছে, তাহলে সে প্রস্তাব সম্পূর্ণ ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় কোনো প্রস্তাবই এক্ষেত্রে উত্থাপন করা যেতে পারে না। কেননা এতে করে সমাজে অবাঞ্ছনীয় প্রতিযোগিতার মনোভাব এবং পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব সহজেই জেগে উঠতে পারে। আর তা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলার দৃষ্টিতে খুবই মারাত্মক। এমনকি এতে করে ছেলে বা মেয়ের এমন ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে, যার ফলে তার বিয়েই চিরদিনের তরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এজন্যে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে। রাসূলে করীম (স) এ সম্পর্কে বলেছেনঃ
(আরবী***************************************************)
তোমাদের কেউ যেন অপর ভাইয়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাবের ওপর নতুন প্রস্তাব পেশ না করে, -যতক্ষণ না সে নিজেই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে কিংবা তাকে নতুন প্রস্তাব পেশ করার অনুমতি দেবে।
হাদীসটির উপরোদ্ধৃত ভাষা মুসলিম শরীফের। আর বুখারী শরীফে এ হাদীসের ভাষা নিম্নরূপঃ
(আরবী**************************************************)
কেউই তার ভাইয়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাবের ওপর নতুন প্রস্তাব দেবে না –যতক্ষণ না সে বিয়ে করে ফেলে অথবা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে।
হযরত উকবা ইবনে আমের (রা) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ
(আরবী********************************************************)
মু’মিন মু’মিনের ভাই। অতএব এক মু’মিনের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর অপর মু’মিনের ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করা হালাল হতে পারে না। অনুরূপভাবে এক ভাইয়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাব চূড়ান্ত না হতেই অপরের প্রস্তাব দেয়াও সঙ্গত নয়।
আল্লামা শাওকানী এ পর্যায়ে লিখেছেনঃ
(আরবী**********************************************)
হাদীসের শুরুতে ‘হালাল হবে না’ বলার কারণে বিয়ের প্রস্তাবের ওপর নতুন প্রস্তাব দেয়া হালাল হবেনা বলে এ হাদীসকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে।
বিয়ের এক প্রস্তাবের ওপর নতুন অপর একটি প্রস্তাব দেয়া –এক প্রস্তাব সম্পর্কে চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পূর্বেই আর একটি প্রস্তাব পেশ করা যে ইসলামে জায়েয নয় বরং হারাম, এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের ইজমা –পরিপূর্ণ ঐকমত্য স্থাপিত হয়েছে। (আরবী**********************)
অবশ্য ইমাম খাত্তাবী বলেছেনঃ এ নিষেধ শুধু নৈতিক শিক্ষা, শালীনতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মাত্র। অন্যথায় এ এমন হারাম কাজ নয়, যাতে করে বিয়েই বাতিল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দাউদ জাহেরী বলেছেনঃ এরূপ করে দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি বিয়ে করে ফেলে তবে সে বিয়েই বাতিল হয়ে যাবে। (আরবী*****************)
কিন্তু এ উক্তিতে যে বাড়াবাড়ি রয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বিয়ের প্রস্তাবের ওপর প্রস্তাব দেয়ার অপকারিতা এবং তা নিষেধ হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ
(আরবী**************************************************)
এর কারণ এই যে, এক ব্যক্তি যখন কোনো মেয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়, তখন সেই মেয়ের মনেও তার প্রতি ঝোঁক ও আকর্ষণ স্বাভাবিকভাবেই জাগ্রত হয় এবং এর ফলে এই উভয়ের ঘর-সংসার গড়ে ওঠার উপক্রম দেখা দেয়। এ সময় যদি সে মেয়ের জন্যে অপর কোনো ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব পেশ করে, তাহলে প্রথম প্রস্তাবককে তার মনের বাসনার ব্যর্থ মনোরথ করে দেয়া হয়, তার অধিকার থেকে তাকে করে দেয়া হয় বঞ্চিত। আর এতে করে তার প্রতি বড়ই অবিচার ও জুলুম করা হয়, তার জীবনকে করে দেয়া হয় সংকীর্ণ।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ আরো লিখেছেনঃ “বিয়ের প্রস্তাবের ওপর প্রস্তাব করা” সম্পর্কিত উপরিউক্ত হাদীসের ভিত্তিতেই আমাদের মত হচ্ছে যে, এ কাজ হারাম। ইমাম আবূ হানীফা ও হানাফী মাযহাবের সব ফিকাহবিদেরই এ মত। ‘আল-মিনহাজ’ কিতাবে বলা হয়েছেঃ
(আরবী***********************************************************)
বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর তা যদি কবুল হয়ে গিয়ে থাকে, তবে তার ওপর অপর কারো প্রস্তাব দেয়া সম্পূর্ণ হারাম। তবে উভয় পক্ষের অনুমতি নিয়ে নতুন প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। কিংবা সে প্রস্তাব যদি প্রত্যাহার করে, তাহলেও দেয়া যায়। আর যদি প্রথম প্রস্তাবের কোনো জবাব না দেয়া হয়ে থাকে, না প্রত্যাখ্যান করা হয়, তখন নতুন প্রস্তাব দেয়া বাহ্যত হারাম হবে না।
তবে ফিকাহর দৃষ্টিতে এখানে একটি ব্যতিক্রম রয়েছে। তা হচ্ছে এই যে, প্রথম ও দ্বিতীয় এই উভয় প্রস্তাবকারীই যদি নেক চরিত্রের লোক হয় তবেই উপরিউক্ত নিষেধ প্রযোজ্য। আর প্রথম প্রস্তাবকারী যদি অসচ্চরিত্রের লোক হয় এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবকারী হয় দ্বীনদার ও নেক চরিত্রের তবে দ্বিতীয় প্রস্তাবকারীর প্রস্তাব সম্পূর্ণ বৈধ ও সঙ্গত। (আরবী**************)
ইবনে কাসেম মালিকী বলেছেনঃ
(আরবী***********************************************)
ফাসিক ব্যক্তির বিয়ের প্রস্তাবের ওপর নতুন প্রস্তাব দেয়া সম্পূর্ণ জায়েয।
আমীর হুসাইন আশ-শিফা কিতাবে লিখেছেনঃ
(আরবী***********************************************)
প্রথম প্রস্তাবকারী যদি ফাসিক হয় তাহলে তার প্রস্তাবের ওপর নতুন প্রস্তাব দেয়া সম্পূর্ণ জায়েয।
বিয়ের পূর্বে কনে দেখা
দাম্পত্য জীবনে মিল-মিশ, প্রেম-ভালোবাসা ও সতীত্ব-পবিত্রতার পরিশুদ্ধ পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং পারিবারিক জীবনের মাধুর্য ও সুখ-সমৃদ্ধির জন্যে বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া উচিত বলে ইসলামে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম দলীল হচ্ছে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত বাণীঃ
(আরবী*************************************************)
তোমরা বিয়ে করো সেই মেয়েলোক, যাকে তোমার ভালো লাগে –যে তোমার পক্ষে ভালো হবে।
ইমা সুয়ূতী এ আয়াতের ভিত্তিতে দাবি করে বলেছেনঃ
(আরবী***********************************************************)
এ আয়াতে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া সম্পূর্ণ হালাল। কেননা কোন্ মেয়ে পছন্দ কিংবা কোন্ মেয়ে ভালো হবে তা নিজের চোখে দেখেই আন্দাজ করা যেতে পারে।
এ পর্যায়ে নবী করীম (স) বলেনঃ
(আরবী**********************************)
তোমাদের কেউ যখন কোনো মেয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেবে তখন তাকে নিজ চোখে দেখে তার গুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা করে নিতে অবশ্যই চেষ্টা করবে, যেন তাকে ঠিক কোন আকর্ষণে বিয়ে করতে তা সে স্পষ্ট বুঝতে পারে।
এ হাদীসটি বর্ণনাকারী হযতর জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) অতঃপর বলেনঃ
(আরবী********************************************)
রাসূলের উক্ত কথা শুনে আমি একটি মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলাম। তারপর তাকে গোপনে দেখে নেয়ার জন্যে আমি চেষ্টা চালাতে শুরু করি। শেষ পর্যন্ত আমি তার মধ্যে এমন কিছু দেখতে পাই, যা আমাকে আকৃষ্ট ও উদ্ধুদ্ধ করে তাকে বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে বরণ করে নিতে। অতঃপর তাকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করি।
ইমাম আহমাদ বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে, হযরত জাবির একটি গাছের ডালে গোপনে বসে থেকে প্রস্তাবিত কনেকে দেখে নিয়েছিলেন। (আরবী**********)
হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমা থেকে রাসূলে করীমের নিম্নোদ্ধৃত কথাটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ
(আরবী*************************************************************)
যখন কোনো পুরুষের মনে কোনো বিশেষ মেয়ে বিয়ে করার বাসনা জাগবে, তখন তাকে নিজ চোখে দেখে নেয়ায় কোনোই দোষ নেই।
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, সভ্যতাত-ভব্যতা ও শালীনতা সহকারে এবং শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে কনেকে বিয়ের পূর্বেই দেখে নেয়া বাঞ্ছনীয়। তাতে করে তার ভাবী স্ত্রী সম্পর্কে মনের খুঁতখুঁত ভাব ও সন্দেহ দূর হয়ে যাবে, থাকবে না কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে ভাবী বধুর প্রতি আকর্ষণ জাগবে এবং সেই স্ত্রীকে পেয়ে সে সুখী হতে পারবে।
হযরত মুগীরা ইবন শুবাহ (রা) তাঁর নিজের বিয়ের প্রসঙ্গে রাসূল করীমের সামনে পেশ করলে তখন রাসূলে করীম (স) আদেশ করলেনঃ
(আরবী*************************************)
তাহলে কনেকে দেখে নাও। কেননা তাকে বিয়ের পূর্বে দেখে নিলে তা তোমাদের মাঝে স্থায়ী প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টির অনুকূল হবে।
এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীসটিও উল্লেখযোগ্য। রাসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেনঃ
(আরবী********************************************************)
তোমাদের কেউ যখন কোনো মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় তখন তার এমন কোনো কিছু দেখা যদি তার পক্ষে সম্ভব হয় যা তাকে বিয়ে করতে উদ্ধুদ্ধ করবে, তবে তা তার অবশ্যই দেখে নেয়া কর্তব্য।
এভাবে বহু সংখ্যক রেওয়ায়াতের হাদীসের কিতাবসমূহে উদ্ধৃতি পাওয়া যায়, যা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, একজন পুরুষ যে মেয়ৈকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক, সে তাকে বিয়ের পূর্বেই দেখে নিতে পারে। শুধু তাই নয়, রাসূলে করীম (স) এ সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এবং না দেখে বিয়ে করাকে তিনি অপছন্দ করেছেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রা)অ বর্ণনা করেছেনঃ
(আরবী*************************************)
নবী করীম (স) বিবাহেচ্ছুক এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি মেয়েটিকে দেখেছ? সে বললঃ না, দেখিনি। তখন রাসূলে করীম (স) বললেনঃ যাও তাকে দেখে নাও।
এসব হাদীসকে ভিত্তি করে আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ
*(আরবী***************************************************)
এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, একজন পুরুষ যে মেয়েটিকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক, সে তাকে (বিয়ের পূর্বেই) দেখতে পারে –তাতে কোনো দোষ নেই।
তাউস, জুহরী, হাসানুল বাসরী, আওজায়ী, ইমাম আবূ হানীফা, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ, শাফিয়ী, মালিক, আহমাদ ইবনে হাম্বাল প্রমুখ মনীষী বলেছেনঃ
(আরবী*******************************************************)
পুরুষ যে মেয়েলোকটিকে বিয়ে করতে চায়, সে তাকে দেখতে পারে।
এ পর্যন্ত যা বলা হলো তা সর্বাবদীসম্মত। এতে মনীষীদের মধ্যে কারো কোনো মতবিরোধ নেই –সকলেই এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত।
কিন্তু এর পর প্রশ্ন থেকে যায়, কনেকে কতদূর দেখা যেতে পারে? অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় দেখা যেতে পারে এজন্যে যে, মুখমণ্ডল দেখলেই মনের রূপ-সৌন্দর্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা করা সম্ভব। আর হস্তদ্বয় গোটা শরীরের গঠন ও আকৃতি বুঝিয়ে দেয়। কাজেই এর বেশী দেখা উচিত নয়। ইমাম আওজায়ী বলেছেনঃ
(আরবী***********************************************)
তার প্রতি তাকানো যাবে, খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখা যাবে এবং তার মাংসপেশীসমূহ দেখা যাবে।
আর দাউদ জাহেরী বলেছেনঃ (আরবী***********************) –‘তার সর্বশরীর দেখা যাবে’।
ইবনে হাজম তো এতদূর বলেছেনঃ (আরবী*********************) –‘তার যৌন অঙ্গকেও দেখে নেয়া যেতে পারে’।
কিন্তু অপরাপর মনীষীর মতেঃ
(আরবী******************************************************)
প্রস্তাবিত মেয়েটির লজ্জাস্থানসমূহ বিয়ের পূর্বে দেখা জায়েয নয়।
এভাবে বিষয়টি নিয়ে মনীষীদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ার একটি কারণ রয়েছে, আর তা এই যে, এই পর্যায়ের হাদীসসমূহ শুদু দেখার অনুমতি অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবে দেয় বটে, কিন্তু তার কোনো পরিমাণ, মাত্রা বা সীমা নির্দেশ করে না। তবে কনে সম্পর্কে সম্যক ধারনা করা যায় এবং বিয়ে করা না করা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় যতখানি এবং যেভাবে দেখলে, ততখানি এবং সেভাবে দেখা অবশ্যই জায়েয হবে, সন্দেহ নেই।
হাদীসে উল্লেক করা হয়েছে, হযরত উমর ফারূক (রা) হযরত আলী তনয়া উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন হযরত আলী কন্যাকে তাঁর নিকট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, যেন তারা তাকে দেখে নিতে পারেন। তখন এই ‘দেখার’ উদ্দেশ্যেই হযরত উমর উম্মে কুলসুমের পায়ের দিকের কাপড় তুলে ফেলে দিয়েছিলেন।
তার পরের প্রশ্ন, কনের অনুমতি ও জ্ঞাতসারে দেখা উচিত, কি অনুমতি ব্যতিরেকে ও অজ্ঞাতসারেই? এ সম্পর্কেও বিভিন্ন মত দেখা যায়। ইমাম মালিক বলেছেনঃ
(আরবী************************************)
কনের অনুমতি ব্যতিরেকে তাকে দেখা যাবে না, তার প্রতি তাকানো যাবে না। কেননা তাকে দেখার জন্যে তার অনুমতি নেয়া তার অধিকার বিশেষ (বিনানুমতিতে দেখলে সে অধিকার ক্ষুণ্ন হয়)।
ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেছেনঃ
(আরবী***************************************************)
কনে যদি বস্ত্রাচ্ছাদিতাই থাকে, তবে তার অনুমতি নিয়েই দেখা হোক কি বিনানুমতিতে, তার দুটিই সমান।
তবে এ সম্পর্কে রাসূলে করীমের একটি কথা স্পষ্ট পথ-নির্দেশ করে এবং তার দ্বারা মতবিরোধের অবসান হয়ে যায়। আবূ হুমাইন সায়েদী বর্ণনা করেছেন, রাসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেনঃ
(আরবী*************************************)
তোমাদের কেউ যখন কোনো মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে, তখন তাকে দেখা তার পক্ষে দুষণীয় নয়। কেননা সে কেবলমাত্র এই বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার কারণেই তাকে দেখছে (অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়) যদিও সে স্ত্রীলোকটি কিছুই জানে না।
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, কনেকে যদি দেখা হয় শুধু এজন্যে যে, তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং এ দেখার মূল ও একমাত্র উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, পছন্দ হলেই তাকে বিয়ে করতে রাজি হবে, তবে সে দেখা যদি কনের অজ্ঞাতসারেও হয়, তবুও তাতে কোনো দোষ হবে না।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা পরিস্কার বলে দেয়া ভালো। যদি কারো নিত্য নতুন যুবতী মেয়ে দেখা শুধু দর্শনসুখ লাভের বদরুচি হয়ে থাকে, তবে তাকে কোনো মেয়েকে দেখানো জায়েয নয়। এ সম্পর্কে ইসলামবিদদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেইঃ
(আরবী***********************************************)
কোনো মেয়েলোকের প্রতি যৌনসুখ লাভ, যৌন উত্তেজনার দরুন কিংবা কোনো সন্দেহ সংশয় মনে পোষণ করে দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয়।
এজন্যে ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ
(আরবী*********************************************)
কনের চেহারা ও মুখমণ্ডলের দিকে দেখা যাবে, তবে যৌনসুখ লাভের জন্যে নয়। এমন কি তার সৌন্দর্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা করার উদ্দেশ্যে তার প্রতি বারবার তাকানো যেতে পারে।
কোনো কোনা মনীষীর মতে কনের অজ্ঞাতসারেই তাকে দেখা উচিত, যেমন হযরত যাবির (রা) দেখেছিলেন। ইমাম শাফিয়ীর মতে বিয়ের প্রস্তাব রীতিমত পেশ করার পূবেই কনেকে দেখে নেয়া বাঞ্ছনীয়, যেন প্রস্তাব কোনো কারণে ভেঙ্গে গেলে কোন পক্ষের জন্যেই লজ্জা বা অপমানের কারণ না ঘটে। (আরবী********************)
আর বরের নিজের পক্ষে যদি কনেকে দেখা আদৌ সম্ভব না হয়, তাহলেও অন্তত নির্ভরযোগ্য সূত্রে তার সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়ে সম্যক খোঁজ-খবর লওয়া বরের পক্ষে একান্তই আবশ্যক। এ উদ্দেশ্যে আপন আত্মীয়া স্ত্রীলোককে পাঠানো যেতে পারে তাকে দেখার জন্যে। হযরত আনাস (রা) বর্ণিত একটি হাদীস থেকে এ সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়। নবী করীম (স) একটি মেয়েকে বিয়ে করার মনস্থ করেন। তখন তাকে দেখার জন্যে অপর একটি স্ত্রীলোককে পাঠিয়ে দেন এবং তাকে বলে দেনঃ
(আরবী******************************)
কনের মাড়ির দাঁত পরীক্ষা করবে এবং কোমরের উপরিভাগ পিছন দিক থেকে ভালোকরে দেখবে।
বলা বাহুল্য, দেহের এ দুটি দিক একজন নারীর বিশেষ আকর্ষনীয় দিক। দাঁত দেখলে তার বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান-প্রতিভা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা চলে। তার মুখের গন্ধ মিষ্টি না ঘৃণ্য তাও বোঝা যায়। আর পেছন দিক দিয়ে কোমরের উপরিভাগ একটি নারীর বিশেষ আকর্ষনীয় হয়ে থাকে। এ সব দিক দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যে রাসূলে করীম (স) তাগিদ করেছেন। তার অর্থ বিয়ের পূর্বে কনের এসব দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা করে নেয়া ভালো।
এ পর্যায়ে একটি কথা বিশেষভাবে মনে করাখা আবশ্যক যে, কনে দেখার কাজ আনুষ্ঠানিক বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পূর্বে সম্পন্ন করাই যুক্তিযুক্ত। আল্লামা আ-লুসী বলেছেনঃ
(আরবী***********************************************)
মনীষীগণ আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পূর্বেই কনে দেখার এই কাজটি সম্পন্ন করা উচিত বলে মনে করেছেন। দেখার পর পছন্দ না হলে তা প্রত্যাহার করবে। তাতে কারো মনে কষ্ট লাগবে না বা অসুবিধা হবে না। কিন্তু রীতিমত প্রস্তাব দেয়ার পর দেখে অপছন্দ হওয়ার কারণে প্রত্যাখ্যান করা হলে তার পরিণাম যে ভালো নয় তা সুস্পষ্ট।
বিয়ের পূর্বে কনে দেখার অনুমতির সুযোগ নিয়ে কনের সাথে প্রেম চর্চা করা, নারী বন্ধু কিংবা পুরুষ বন্ধু সংগ্রহের অভিযান চালানো, আর দিনে রাতে ভাবী স্ত্রী (?) –কে নিয়ে যত্রতত্র নিরিবিলিতে পরিভ্রমণ করেবেড়ানো ও যুবতী নারীর সঙ্গ সন্ধানে মেতে ওঠা ইসলামে শুধু যে সমর্থনীয় নয় তাই নয়; নিতান্ত ব্যভিচারের পথ উন্মুক্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা হচ্ছে ইউরোপের আধুনিক বিজ্ঞান গঠিত বর্বর সমাজের ব্যভিচার প্রথা। ইউরোপীয় সভ্যতার দৃষ্টিতে বিয়ের পূর্বে শুধু কনে দেখাই হয় না, স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রেমের আদান-প্রদানও একান্তই জরুরী। বরং তা আধুনিক সভ্যতার একটা অংশও বটে। এ সব না হলে বিয়ে হওয়ার কথাটাই সেখানে অকল্পনীয়। এ না হলে নাকি বিবাহোত্তর দাম্পত্য জীবনও মধুময় হতে পারে না। পাশ্চাত্য সমাজের এ বিকৃতি যুবক-যুবতীদের কোনো রসাতলে ভাসিয়ে নিচ্ছে, তার কল্পনাও লোমহর্ষণের সৃষ্টি করে।
কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ব্যভিচার –ব্যভিচারের এক আধুনিকতম সংস্করণ। শুধু তাই নয়। বিয়ে পূর্বকালীন প্রেম ও যৌন মিলন মূল বিয়েকেই অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ করে দেয়। বিবাহোত্তর মিলন হয় বাসি ফুলের ন্যায় গন্ধহীন। কৌতুহলশূন্য। বস্তুত বিয়ে পূর্বকালীন প্রেম ও যৌন মিলন একটা মোহ –একটা উদ্বেলিত আবেগের বিষক্রিয়া। বিয়ের কঠিন বাস্তবতা সে মোহ ও উচ্ছ্বাসকে নিমেষে নিঃশেষ করে দেয় ঠুনকো কাঁচ পাত্রের মতো। এ সম্পর্কে একটি আরবী রূপকথার যথার্থতা অস্বীকার করা যায় না। তাতে বলা হয়েছেঃ
(আরবী********************************************)
বিয়ে বিয়ে-পূর্ব প্রেম-ভালোবাসাকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয় –ধ্বংস করে ফেলে।
বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখার এই অনুমতি, এই আদেশ –যে কোন দৃষ্টিতেই বিচার করা হোক, সুষ্ঠু পারিবারিক জীবনের জন্যে ইসলামের এক মহা অবদান, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মনে রাখা আবশ্যক যে, এই অনুমতি বা আদেশ কেবল মাত্র বিবাহেচ্ছু বরের জন্যেই নয়, এই অনুমতি প্রস্তাবিত কনের জন্যেও সমানভাবেই প্রযোজ্য। তারও অধিকার রয়েছে যে পুরুষটি তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক তাকে দেখার। কেননা যে প্রয়োজনের দরুন এই অনুমতি, তা কনের ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ সমানভাবে সত্য ও বাস্তব। হযরত উমর (রা) বলেছেনঃ
(আরবী*******************************************************)
তোমরা তোমাদের কন্যাদের কুৎসিৎ অপ্রীতিকর পুরুষের নিকট বিয়ে দিও না। কেননা নারীর যেসব অংশ পুরুষের জন্যে আকর্ষনীয়, পুরুষের সে সব অংশই আকর্ষনীয় হয় কন্যাদের জন্যে। অতএব তাদেরও অধিকার রয়েছে বিয়ের পূর্বে ভাবী-বরকে দেখার।
পরে প্রকাশিত ত্রুটির কারণে বিয়ে প্রত্যাহার
যথারীতি বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর স্বামী যদি নিশ্চিতরূপে জানতে পারে কিংবা প্রত্যক্ষ করতে পারে স্ত্রীর শারীরিক বা স্বাস্থ্যগত এমন কোনো দোষ, যা বর্তমান থাকায় সে কিছুতেই স্ত্রীকে খুশী মনে গ্রহণ করতে রাজি হতে পারে না, তাহলে স্বামী কেবল এই অবস্থায় বিয়েকে প্রত্যাহার করতে পারে –শরীয়তে তাকে এ অধিকার দেয়া হয়েছে। চিরদিনের তরে এক দুর্বহ বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নেয়ার ও চাপিয়ে রাখার পরিবর্তে প্রথম অবস্থায়ই তা প্রত্যাহার করা বাঞ্ছনীয়। হযরত জায়েদ ইবনে কায়াব (রা) বর্ণনা করেছেনঃ
(আরবী*******************************************)
রাসূলে করীম (স) বনী গিফার গোত্রের একটি মহিলাকে বিয়ে করে ফুলশয্যার সশয় যখন তার কাছে উপস্থিত হলৈন এবং তার কাপড় উত্তোলন করে শয্যার ওপর বসলেন, তখন তিনি স্ত্রীলোকটি পাঁজরে শ্বেত রোগ দেখতে পেলেন। তিনি তখনই শয্যা থেকে উঠে গেরেন এবং বললেনঃ ‘তোমার কাপড় সামলাও’। অতঃপর তিনি তার থেকে নিজের দেয়া কোনো কিছুই গ্রহণ করলেন না।
এ হাদীসের ভিত্তিতে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, শ্বেত, কুষ্ঠ, পাগল ও মতিচ্ছিন্ন হওয়া এমন সব প্রচ্ছন্ন রোগ, যা স্বামী-স্ত্রী কারোর পক্ষেই তার নিকট সাহচর্যে আসার পূর্বে জানতে পারা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। কাজেই বিয়ের পরই এসব রোগ কারো মধ্যে উদঘাটিত হলে তাদের বিয়ে আপনা থেকেই ভেঙ্গে যাবে।
হযরত আলী (রা) ও অন্যান্য সাহাবীদের থেকে এ সম্পর্কে যে কথাটি বর্ণিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছেঃ
(আরবী******************************************************)
স্ত্রীদের চারটি দোষে বিয়ে ফেরত যেতে পারে –তা হচ্ছে পাগলামী, মতিচ্ছিন্ন হওয়া, কুষ্ঠ রোগ, শ্বেত রোগ এবং যৌন অঙ্গের কোনো রোগ।
বলা বাহুল্য, এ যেমন স্ত্রীর ব্যাপারে প্রযোজ্য, তেমনি স্বামীর ব্যাপারেও। যারই মধ্যে তা দেখা দিক না কেন, অপরজনের পক্ষে সে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া শরীয়তে জায়েয।
শাফিয়ী ফিকাহবিদদের কারো কারো মতে যে-কোনো পরে-প্রকাশিত ত্রুটির কারণে বিয়ে প্রত্যাহার করা ও স্ত্রীকে ফেরত দেয়া যেতে পারে। আল্লামা ইব কাইয়্যিম এই মতই সমর্থন করেছেন।
অবশ্য ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসুফ বলেছেনঃ
(আরবী**********************************************)
স্বামী কোনো কারণেই স্ত্রীকে প্রত্যাহার করতে পারে না। কেননা তার হাতেই রয়েছে তালাক দেয়ার ক্ষমতা। (সে ইচ্ছা করলে যে কোন সময় তালাক দিতে পারে বলে স্ত্রীকে প্রত্যাহার বা প্রত্যাখ্যানের কোনো মানে হয় না।) আর স্ত্রী স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে কেবলমাত্র কোন সংক্রামক রোগ ও সহবাসে অক্ষমতা, নপুংসতার দরুন। ইমাম মুহাম্মাদের মতে কুষ্ঠু ও শ্বেত রোগের কারণেও প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
আল্লামা ইবনে রুশদ লিখেছেনঃ
(আরবী*********************************************************)
উপরিউক্ত চার ধরনের ত্রুটির কারণে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে –এ সম্পর্কে ইমাম মালিক ও শাফিয়ী সম্পূর্ণ একমত।